User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#অবেলায় "ও কোন কফিই পছন্দ করে না। এমনকি চা-ও-না। এদিকে আমি আবার প্রচণ্ড চা- কফি খেতে ভালোবাসি। কিন্তু ওর সাথে বসে কখনো খাওয়া হয়নি, এই এক আক্ষেপ। ওকে সুন্দর মত চা কফি বানিয়ে দিব, ও তৃপ্তি করে খাবে, খেয়ে আমার প্রশংসা করবে_ আমার এই আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণই রয়ে গেল আজীবন। " ?একটি সম্পর্কের সৌন্দর্য কখনো কখনো সময়ের কাছে হার মানে। সৌপ্তিক ও মোহিনীর গল্প তেমনই এক অবেলায় দেখা হওয়া অনুভূতির প্রতিচিত্র। লেখক সিজনাল সোহাগের প্রথম উপন্যাস "অবেলায়" এমনই এক অসময়ের ভালোবাসার গল্প। সেইসাথে আছে সমসাময়িক কিছু ঘটনার মিশেল। ? অবেলায় যে গল্পটা শুরু হয়েছিলো : সৌপ্তিক এক সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে, যার জীবন সংগ্রাম টিউশনি করে নিজের খরচ চালানো পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে, মোহিনী সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত, বিবাহিত এবং এক কন্যাসন্তানের মা। সৌপ্তিক মুসলিম এবং মোহিনী হিন্দু ধর্মের। বাইরের দৃষ্টিতে মোহিনীর সংসার সুখের মনে হলেও, ভেতরে লুকিয়ে আছে জটিল বাস্তবতা। তুখোড় পুলিশ অফিসার কিষাণের স্ত্রী হিসাবে সমাজে মোহিনীর পরিচয়। "সুখ কিন্তু সবাই চায়। কারো কাছে দিন শেষে দু মুঠো ভাতটাই সুখ, কারো কাছে হাজারো অভাব অনটনে প্রিয় মানুষটার সাথে সারা জীবন থাকাটাই সুখ। নেশা আর সুখ কিন্তু দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। " ( কিষাণ, পৃ: ৬০) অবেলায় সৌপ্তিক আর মোহিনীর যে সম্পর্কের শুরু হয়েছিলো তার শেষটা কোন বেলায়? এর মাঝেই গল্পে উঠে আসে গুলশানের অভিজাত এক হোটেলের নাশকতার কাহিনি আবার জুলাইয়ের গনঅভ্যুত্থান। ছাত্র হিসেবে সৌপ্তিকও আন্দোলনে অংশ নিতে পিছ পা হয় না। কিষাণের মতো ধূর্ত লোক যখন জানবে তারই বউয়ের পরকীয়ার খবর তখন মোহিনীর পরিণাম কী হবে? সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে কোন এক বইয়ের অবেলার পাতায়। ? অবেলার অনুভূতি : এই উপন্যাস কেবল প্রেমের নয়, বরং সামাজিক ও ব্যক্তিগত সংকটের গল্প। চরিত্রগুলোর আবেগ, মানসিক টানাপোড়েন, এবং জীবনের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি লেখক নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। বিশেষ করে সৌপ্তিক ও মোহিনীর একে অপরের প্রতি আকর্ষণ, তাদের ভাঙা হৃদয় জোড়া দেওয়ার প্রয়াস পাঠককে ভাবতে বাধ্য করবে—সব সম্পর্ক কি সত্যিই প্রকৃতি মেনে নেয়? "নামহীন বলে কোন সম্পর্ক নেই। সব সম্পর্কেরই একটা নাম আছে আমাদের সম্পর্কটার নাম ভালোবাসা। " ( মোহিনী, পৃ: ১২২) গল্পের পটভূমি শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সাম্প্রতিক কিছু বাস্তব ঘটনার ছোঁয়া রয়েছে। গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ, কিংবা শেষ দিকে গণঅভ্যুত্থান ও কোটা আন্দোলনের আভাস গল্পকে আরও সময়োপযোগী ও বাস্তবধর্মী করে তুলেছে। তবে এই বিষয়গুলো আরও বিস্তারিতরূপে আসলে ভালো লাগত। কারণ এগুলো গল্পের সমাপ্তিতে প্রভাব ফেলেছে। শেষটা কেন জানি একটু তাড়াহুড়োতেই শেষ হলো মনে হচ্ছে। শুরুটা যতটা মসৃণ তালে হয়েছিলো শেষটা ততটা ছিলো না। "কিছু ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় প্রকৃতি সেই ঘটনাকে উল্টো করে পুনরাবৃত্তি করে। হায় রে প্রকৃতির খেয়াল, বড়ই অদ্ভুত। " ( পৃ:১২৬) ? কিছু অপূর্নতা অবেলায় : গল্পের ভাষা সহজ ও সাবলীল, তবে কিছু জায়গায় বাক্যবিন্যাস আরও মসৃণ হতে পারত। কিছু গুরুগম্ভীর শব্দ ব্যবহারের কারণে বাক্যের স্বাভাবিক গতি মাঝে মাঝে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কিছু জায়গায় টাইপো থাকলেও তা পাঠের স্বাভাবিক প্রবাহে বড় কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে নি। বইতে সৌপ্তিক ও মোহিনীর শিক্ষাজীবন নিয়ে বিস্তর আলোচনা থাকলেও, তাদের পড়াশোনার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়নি, যা পাঠকের কাছে আরও তথ্যবহুল হতে পারত। এটা আপাতত দৃষ্টিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও আমার নজরে কমতি। কিষাণের পরিনতি স্পষ্ট হলেও মোহিনীর বিষয়টা ধোঁয়াশাই রয়ে গেলো। তিতিরকেও আর দেখা হলো না। উপন্যাসে এই বিষয়গুলো শেষে সমাধান করা দরকার ছিল বলে মনে করি। কিষাণের অপরাধগুলো অল্পতেই মিলিয়ে গেলো যেন। বইয়ের ১৭,২২, ২৬, ৩৬,৭১,১২৪ এই পৃষ্ঠাগুলোতে টাইপো ছিলো বেশকিছু। ? প্রথম বই হিসেবে লেখকের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। গল্পের আবেগময়তা এবং বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলার দক্ষতা ভবিষ্যতে আরও উন্নত হবে বলে আশা করা যায়। যারা সম্পর্কের জটিলতা ও বাস্তবতার সংমিশ্রণ নিয়ে লেখা উপন্যাস পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি একটি ভালো পাঠ্য হতে পারে।সবচেয়ে ভালো লেগেছে একটি অন্যায়কে দেখাতে গিয়ে মোহিনী আর সৌপ্তিক যে অনৈতিক সম্পর্কে জরিয়ে ছিলো তাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়নি। "অবলায়ের যে সন্ধ্যা নামল, তার রঙ ছিল বিচ্ছেদের মত ধূসর। তোমার ছায়া আজও পড়ে থাকে জানালার ফ্রেমে,ভালোবাসা কি তবে সময়মতো ফুরিয়ে যায়, নাকি শুধু আমাদেরই হলো দেরি? "