User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#কেন_মেঘ_আসে_হৃদয়_আকাশে ?️ জীবনের আকাশ কখনো ঝলমলে, কখনো মেঘাচ্ছন্ন। সম্পর্কের উষ্ণতা, বিচ্ছেদ, আত্মশুদ্ধি। এসবই কখনো হালকা বাতাসের মতো, কখনো বজ্রবিদ্যুৎ হয়ে আকাশে নেমে আসে। সেই আবেগের নানা রঙ লেখক মেহেরীন নকীব তার প্রথম একক গল্পগ্রন্থ 'কেন মেঘ আসে হৃদয় আকাশে'-তে ফুটিয়ে তুলেছেন।" বইটির তিনটি ভিন্ন গল্প পাঠকের মনের গভীরে আবেগের ঢেউ তুলবে, ভাবাবে, কাঁদাবে, আবার নতুন স্বপ্ন দেখার সাহস দেবে। প্রতিটি শব্দ হৃদয়ের অনুভূতিগুলোকে জীবন্ত করে তুলবে, আর প্রতিটি গল্প এক নতুন প্রশ্নের জন্ম দেবে—'কেন মেঘ আসে হৃদয়ে আকাশে?' ১. স্পর্শের অনুরণন : "শেষ পর্যন্ত মেয়েটির সাক্ষাৎকার আর নেয়া হলো না। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে মেয়েটির ক্ষতবিক্ষত শরীর। " ( পৃ: ৪৩) ?️ গল্পটি তনুর, একইসাথে সুমন ও সোহেলেরও। ভালোবাসার নামে প্রতারণার শিকার হয়ে তনুর জীবন তছনছ হয়ে যায়। একদিন পথের ধারে তনুকে করুণ অবস্থায় দেখে সুমন হতবাক হয়ে যায়। বন্ধুর প্রতি অসহায়ত্ব আর তনুর ডায়রির পাতায় তার অতীত জানা,এই দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় গল্প। ❌ গল্পের মূল উপজীব্য তনুর ডায়রি হলেও, তা তনুর ভাষায় না হয়ে নামপুরুষে লেখা হয়েছে, যা পাঠকের অনুভূতির সাথে পুরোপুরি সংযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ। তনুর কষ্ট, ভাবনা ও অভিজ্ঞতা তার নিজস্ব ভাষায় উত্তম পুরুষে লেখা থাকলে গল্পের সাথে পাঠক আরও কানেক্ট করতে পারত। অপর দিকে নিজের একটা ভুলের জন্য একমাত্র মেয়ে হয়ে বাবা মাকে ছেড়ে তনুর এমন সিন্ধান্ত নেয়াটাও যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। সোহেলের একটা পরিনতি দেখার ইচ্ছে ছিলো। ২১ পৃষ্ঠায় একটা টাইপো আছে। ২. নিঃসঙ্গ গোধূলি : "বাইরে থেকে কাউকে ভালো মনে হলেও তার ভেতরটা তো এত সহজে জানা যায় না। " ( পৃ: ৬৭) ?️ নীরা এবং তুষারের কিশোর বয়সের প্রেম পরিণতি পায় বিয়েতে। কিন্তু দাম্পত্য জীবনে সুখের বদলে নীরা ধীরে ধীরে তুষারের পরিবর্তিত রূপের মুখোমুখি হয়। কঠিন বাস্তবতার আঘাতে সে ঋজুকে নিয়ে নতুন জীবনের পথে এগোয়। এসময় জাহিদের আগমন তার জীবনে নতুন মোড় আনে, যা সুখকর নাকি দুঃখের, সেটাই গল্পের মূল প্রশ্ন। ❌ গল্পের অসংগতি ও দুর্বল দিক: উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও মেধাবী নীরার এসএসসির পরপরই বিয়ে দেয়ার জন্য ওর বাবা মা উঠেপড়ে লাগে। এটার সঠিক কোন কারণ দেখানো হয়নি। নীরার বাবা-মা তুষার সম্পর্কে কোনো খোঁজ না নিয়ে বিয়েতে রাজি হয়ে যান, যা অযৌক্তিক মনে হয়েছে। যেখানে প্রেমের বিয়েতে বাবা মা ছেলের একশটা খুত বের করে। তুষারের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি দুই জায়গায় দুইভাবে বর্ণিত হয়েছে। একজায়গায় লিখেছে ছোটো ভাই, আরেক জায়গায় বড়ো ভাই-ভাবি। বিয়ের পর তুষারের সো কলড পরিবারেরও কোন হদিস পাওয়া যায়নি। নীরা ও তুষারের ডিভোর্সের পর , নীরাকে তার অপেক্ষায় দেখানো হয় মাঝে দিয়ে,যা চরিত্রের মনস্তত্ত্বের সাথে মেলে না। জাহিদের বাবা "প্রপ্রোজ করেছে" এর পরিবর্তে "প্রস্তাব দিয়েছেন" ব্যবহার করা মানানসই হতো। ঋজুর খালা-মামার প্রসঙ্গ এলেও আগে বলা হয়েছিল নীরার শুধু এক ভাই ছিল, কোনো বোন ছিল না। তাহলে খালা মামা ভালোবাসে কথাটা ভুল মনে হয়েছে। পৃষ্ঠা ৬১ ও ৬২-তে কিছু টাইপো রয়েছে। ৩. অবেলায় অবগাহন : "জীবনটাকে খুব সহজসরল ভাবে দেখতাম আমি। অথচ সেই আমার জীবনেই কী এক ঝড় বয়ে গেল! মনে হয় আমি যেন ডানাভাঙ্গা কোন পাখি। উড়তে গিয়ে বারবার পড়ে যাচ্ছি। ক্রমশ হেরে যাচ্ছি নিজেরই কাছে। " ( পৃ: ৯৫) ?️ সুন্দরী ও শিক্ষিত জেবিন ভালোবেসে বিয়ে করে রাসেলকে। কিন্তু বিয়ের পরই জানতে পারে, রাসেলের জীবনে এমন এক লুকানো অধ্যায় আছে, যা তার পুরো বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দেয়। কী সেই গোপন সত্য? রাসেল কেনই বা তা আড়াল করে বিয়ে করেছিল জেবিনকে? যখন জেবিন সব সত্য জানতে পারে, তখন সে এক কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়। তার ভালোবাসা, আত্মসম্মান ও ভবিষ্যতের মধ্যে সমন্বয় করা তার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এ পরিস্থিতিতে শিবলীর ভূমিকাই বা কী? সে কি জেবিনের পথপ্রদর্শক, নাকি আরও কোনো জটিলতার কারণ? ❌ গল্পে রাসেলের পরিবারের প্রসঙ্গে একটি অসংগতি লক্ষ্য করা যায়। শুরু থেকেই বলা হয়েছে যে রাসেলরা দুই ভাই, অথচ এক জায়গায় উল্লেখ আছে যে তাদের তিনজন ছেলের মুসলমানি একসঙ্গে হয়েছে। এটি একটি স্পষ্ট গড়মিল। এছাড়াও, ১০৪ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি টাইপো রয়েছে। আরেকটি দিক হলো, জেবিন যখন সত্য জানতে পারে, তখন রাসেলের পরিবারের আর কোনো সক্রিয় ভূমিকা দেখা যায় না। সবকিছু যেন শুধুমাত্র ফোনালাপের মাধ্যমেই শেষ হয়ে যায়। গল্পের স্বার্থে এ অংশটি আরও বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা প্রয়োজন ছিল, যাতে পাঠকের কাছে বিষয়টি আরও গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়। ?️ পাঠ প্রতিক্রিয়া : প্রথম একক বই হিসেবে লেখকের প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়। বইটিতে তিনটি গল্প রয়েছে, এবং প্রতিটির প্লটই বেশ আকর্ষণীয়। লেখকের ভাষা সাবলীল, যা পাঠকের জন্য পড়তে সুবিধাজনক করে তোলে। গল্পের ধরণ ও উপস্থাপনার ভিন্নতা বইটিকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। তবে গল্পগুলোতে বেশকিছু অসংলগ্নতা লক্ষ্য করা গেছে, বিশেষ করে বাক্যের দৈর্ঘ্য ও গঠনগত দিক নিয়ে আরও একটু যত্নশীল হলে প্রতিটি গল্প আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠত। তবু, এটি লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই হওয়ায় এ ধরনের ছোটখাটো ত্রুটিগুলো স্বাভাবিক। ভবিষ্যতে আরও অনুশীলনের মাধ্যমে লেখক নিঃসন্দেহে তার লেখনশৈলীকে আরও নিখুঁত করে তুলতে পারবেন। বইটির প্রচ্ছদ অত্যন্ত চমৎকার। বইয়ের নামের সাথে প্রচ্ছদ এতটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, এটি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য। সব মিলিয়ে, গল্পগুলোতে আবেগের গভীরতা আছে, যা পাঠকের মনে দাগ কাটবে। কিছু জায়গায় উন্নতির সুযোগ থাকলেও, লেখকের ভবিষ্যৎ লেখনী নিঃসন্দেহে আরও শাণিত হবে। তার আগামীর সাহিত্যযাত্রা সফল ও সমৃদ্ধ হোক, এই কামনা রইল।