User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#ডিভোর্স_লেটার " আজ থেকে আটাশ বছর আগে কয়েকটা কাগুজে স্বাক্ষর করে আমাদের মধ্যে একটা কাগজে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কাগুজে সম্পর্কের সাথে সাথে যে মনের একটা পবিত্র বন্ধন সৃষ্টি হয়, সেটা আমাদের হয়নি। হয়তো বিধাতা চাননি। আর কাগজের সম্পর্কগুলো তো কাগজের মতোই হালকা হয়,তাই না? বারবার ছিঁড়েখুঁড়ে যায়, বারবার জোড়া দিতে হয়। একটা সময় এসে এই জোড়া দেওয়ার জায়গাটা আর থাকে না। তাই আজ আমি সেই কাগজেই আবার স্বাক্ষর দিয়ে এই সম্মানহীন সম্পর্কের ইতি টানতে চাচ্ছি। " ✍️ ডিভোর্স লেটার’ সৈয়দা কানিজ ফাতেমার লেখা একটি সামাজিক উপন্যাস সংকলন, যেখানে দুটি স্বতন্ত্র নভেলেট সংযোজিত হয়েছে—ডিভোর্স লেটার এবং অদৃশ্য দেয়াল। প্রথমটি শহুরে প্রেক্ষাপটে, দ্বিতীয়টি গ্রামবাংলার আবহে লেখা। বইটি দাম্পত্যজীবনের টানাপোড়েন, সম্পর্কের সংকট, সামাজিক বাধা ও আত্মপরিচয়ের সংগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে তুলে এনেছে। ১. ডিভোর্স লেটার : আটাশ বছরের দাম্পত্যজীবনের পর একদিন আচমকাই আজাদ সাহেবের কাছে আসে তার স্ত্রী মোনার পাঠানো "ডিভোর্স লেটার"। এই আকস্মিক বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত আজাদকে তীব্রভাবে নাড়া দেয়। আজাদ মোনার সাথে পুনরায় যোগাযোগের চেষ্টা করে, কিন্তু এটা কি ভালোবাসা ফেরানোর প্রয়াস, নাকি আত্মসম্মান রক্ষার এক মরিয়া প্রচেষ্টা? দাম্পত্যের বাঁধন ধীরে ধীরে কীভাবে শীতল ও শূন্যতায় পরিণত হয়, সেটারই এক মর্মস্পর্শী চিত্র এঁকেছেন লেখক। মোনা অনেক অপমান, অবহেলা সহ্য করেও সংসার টিকিয়ে রেখেছিল, শুধুমাত্র সন্তানদের কথা ভেবে, সমাজের চোখ রাঙানির ভয়ে। কিন্তু একসময় সে অনুভব করে, তারও মুক্তির প্রয়োজন। সে নিজের জন্য ভাবতে শেখে, সাহস সঞ্চয় করে এবং সম্পর্কের এই বোঝা নামিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। "আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমার জীবনে একটা অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। যে ভুল সংশোধনের রাস্তা থাকলেও তার মূল্য অনেক বেশি। " ✍️পাঠ প্রতিক্রিয়া: গল্পের সূচনা চমকপ্রদ এবং বাস্তবধর্মী। আজাদের চরিত্রায়ণও দারুণ, যেখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিনিধিত্ব ফুটে উঠেছে। আতিক চরিত্রটি ভালো লেগেছে ভীষণ। মোনা চরিত্রটি শক্তিশালী হলেও, গল্পের শেষ পর্ব কিছুটা দুর্বল এবং তাড়াহুড়ো করা মনে হয়েছে। মোনার সিদ্ধান্ত দৃঢ় হলেও শেষ পর্যন্ত সে কীভাবে তা বাস্তবায়ন করে, সেটির আরও বিস্তৃত ব্যাখ্যা থাকলে ভালো লাগত। ১৩ এবং ৪২ পৃষ্ঠায় কিছু টাইপো আছে। ২. অদৃশ্য দেয়াল : গ্রামবাংলার পটভূমিতে লেখা এই গল্পটি মূলত মেহের নামের এক নারীর জীবনের গল্প। সমাজের নিয়মকানুন, পরিবারের চাপ এবং নিজের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই নিয়েই গড়ে উঠেছে কাহিনি। মেহেরের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা তাকে এক অদৃশ্য দেয়ালে বন্দি করে ফেলে। সমাজের নিয়মে বাঁধা পড়ে সে কীভাবে নিজের পরিচয় খুঁজে পাবে, সেটাই গল্পের মূল উপজীব্য। তবে এখানে শেফুর জীবনের প্রতিবন্ধকতাগুলোকেও তুচ্ছ করার উপায় নেই। মেহের তার স্বামী এবং শেফু যেন একই বিন্দুর মাঝে থেকেও তিনজনের মাঝে অদৃশ্য দেয়াল গড়ে উঠেছে। " ইট-পাথরের দেয়াল যত সহজে ভেঙে ফেলা যায়, মানুষের সম্পর্ক গুলোর মাঝখানে একবার যদি দেয়াল তৈরি হয় সেটা ততো সহজে ভেঙে ফেলা যায় না। এটাই জীবন। " ✍️পাঠ প্রতিক্রিয়া: এই গল্পটি তুলনামূলকভাবে ভিন্ন স্বাদের এবং প্লটের দিক থেকে বেশ শক্তিশালী। গল্পের মোড় ও সমাপ্তি অনেকটাই অননুমেয়, যা পাঠককে ভাবনার খোরাক দিবে। তবে, শেষের দিকে লেখকের কিছুটা অতিরিক্ত স্পষ্ট বার্তা দেয়ার প্রবণতা গল্পের স্বাভাবিক গতি কিছুটা ব্যাহত করেছে। শুরুর দিকেও লেখাটি একটু মেদবহুল মনে হয়েছে আমার কাছে। ৬০ এবং ৮১ পৃষ্ঠায় বাক্য বিন্যাসে একটু খটকা লেগেছে। তবে এতে গল্প পড়তে কোনরকম অসামঞ্জস্যতা মনে হয়নি। ✍️সর্বশেষ মূল্যায়ন: ‘ডিভোর্স লেটার’ কেবল বিচ্ছেদ নয়, বরং সম্পর্কের জটিলতা, আত্মমর্যাদা, ভালোবাসার বিবর্তন এবং দাম্পত্যের দ্বন্দ্ব নিয়ে লেখা একটি বই। এটি কেবল বিবাহ বিচ্ছেদের কাহিনি নয়, বরং নারী-পুরুষের সম্পর্কের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতাকে তুলে ধরেছে। প্রথম গল্পের সমাপ্তি একটু তাড়াহুড়ো করলেও, দ্বিতীয় গল্পটি বেশ শক্তিশালী ও প্রভাব বিস্তারকারী। লেখার ভাষা সহজ, সাবলীল এবং ঝরঝরে। বাস্তবধর্মী প্লট, যা পাঠকের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে পারে। চরিত্রায়ণ জীবন্ত এবং মানসিক দ্বন্দ্ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দক্ষতার সাথে। লেখকের প্রথম বই হলেও পরিপক্ব লেখনশৈলী লক্ষণীয়। তার গল্প বলার ক্ষমতা প্রশংসনীয়। সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণা এবং সম্পর্কের টানাপোড়েনকে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলতে তিনি সফল হয়েছেন।
Was this review helpful to you?
or
বই: ডিভোর্স লেটার লেখক: সৈয়দা কানিজ ফাতেমা জনরা: সমকালীন উপন্যাস কখনো কখনো কিছু বই আমাদের শুধু পাঠক হয়ে থাকতে দেয় না—সেটি আমাদের ভেতরে কোথাও গিয়ে আঘাত করে, আমাদের ভাবতে বাধ্য করে, আমাদের অস্থির করে তোলে। সৈয়দা কানিজ ফাতেমার প্রথম উপন্যাস *ডিভোর্স লেটার* ঠিক তেমনই একটি বই। এটি শুধু দুটি গল্প নয়, দুটি বাস্তবতা, যা যুগের পর যুগ অসংখ্য নারী বয়ে চলেছেন, কিন্তু কজনই বা সেটি শব্দে প্রকাশ করতে পারেন? বইটিতে দুটি গল্প আছে—*ডিভোর্স লেটার* এবং *অদৃশ্য দেয়াল*। দুটি গল্পই আমাকে মুগ্ধ করেছে, আবার একইসঙ্গে ব্যথিতও করেছে। সমাজ আমাদের শিখিয়েছে, নারীর জীবনের পূর্ণতা আসে কেবল সংসারের মাঝে। স্বামী, সন্তান, ঘরসংসার—এই নিয়েই তার জগৎ গড়ে ওঠে। যেন এই জীবনে দুঃখ বলে কিছু নেই, যেন নারীর জন্য সবকিছুই আনন্দময়! কিন্তু যখনই কেউ এই কাঠামোর বাইরে বের হতে চায়, তখনই সমাজ তার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তাকে কলঙ্কিত করে, তার জীবন বিষিয়ে তোলে। *ডিভোর্স লেটার* গল্পটি এমনই এক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় আমাদের। কাগজের এক টুকরো চিঠির মতো ঠুনকো হয়ে যায় বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা সম্পর্ক, অথচ সেই সম্পর্ক টেনে নেওয়ার দায়ভারটা যেন শুধু নারীরই! এই বোঝা বইতে গিয়ে কতজন যে নিজের অস্তিত্বকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন, তার হিসেব কেউ রাখেনি। অন্যদিকে, *অদৃশ্য দেয়াল* গল্পটি আমাদের এমন এক প্রচলিত ধারণার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়, যা সমাজ যুগ যুগ ধরে লালন করে আসছে—সন্তান ছাড়া সংসার কি পূর্ণ হয়? একজন নারী স্বামীকে ভালোবেসে সুখের সংসার গড়লেও, যদি সন্তান না আসে, তবে সেই সংসার কি আসলেই সুখের? সমাজের চাপে, পারিবারিক লাঞ্ছনায়, কত নারী যে নিজেদের স্বামীকে অন্য কারো সঙ্গে ভাগ করে নিতে বাধ্য হন! কিন্তু এর ফলে যে তিনটি মানুষের জীবনে এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়, তার দায়ভার কাকে দেওয়া যায়? সন্তান আসতে পারে, কিন্তু সেই শূন্যতা কি আসলেই কোনোদিন পূরণ হয়? এই দুই গল্প কেবল গল্প নয়, এ আমাদের আশেপাশের নারীদের বাস্তবতা। আমরা চুপচাপ দেখে গেছি, শুনেছি, অনুভব করেছি, কিন্তু কখনো হয়তো শব্দ খুঁজে পাইনি। লেখক সেই শব্দগুলোকে কাগজে তুলে এনেছেন, অসাধারণভাবে। তার লেখনী এতটাই পরিপক্ব, এতটাই হৃদয়স্পর্শী, যে একবারও মনে হয়নি এটি তার প্রথম উপন্যাস। চরিত্রগুলো বাস্তব, সংলাপগুলো জীবন্ত, আর আবেগগুলো একদম মনের গভীরে গিয়ে আঘাত করে। বইটি পড়ার পর ফ্ল্যাপে জানতে পারি, এটি ওনার প্রথম উপন্যাস। সেই হিসেবে আমি বইমেলার প্রথম দিনে তার প্রথম পাঠক কাস্টমার! তার কাছ থেকে নেওয়া অটোগ্রাফ এখন আমার কাছে আরও বেশি মূল্যবান মনে হচ্ছে, কারণ এই লেখা একদিন অনেক দূর যাবে। যারা সমকালীন সমাজের বাস্তবতা নিয়ে লেখা শক্তিশালী গল্প পড়তে চান, তাদের জন্য *ডিভোর্স লেটার* অবশ্যই একটি মাস্ট-রিড। এটি শুধু একটি বই নয়, এটি সমাজের বুকে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলোর প্রতিবিম্ব।