User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
সুন্দর ও দরকারী বই
Was this review helpful to you?
or
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। নবুয়্যতের সুদীর্ঘ তেইশ বছরে রাসূল ﷺ এই জীবনব্যবস্থাকে বাস্তব রূপদান করেন। শাসন-প্রশাসন, আইন প্রনয়ন, সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা, বিচারকার্য, রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা বিধান ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ তিনি করেছেন এই জীবনব্যবস্থার আলোকে। এভাবে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার একটি স্থায়ী বুনিয়াদ তিনি স্থাপন করে গিয়েছেন, যার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে ইসলামের আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থা "খিলাফতে রাশেদা"। আবু বকর, উমর, উসমান, আলী রা. - মহানবী ﷺ এর এই চারজন ঘনিষ্ট সহচর পরম যত্নে ও মমতায় নবুয়্যতী ধারার এই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বিন্যস্ত ও বিকশিত করে তুলেছেন। মুসলিমদের সকল রাজনৈতিক ব্যাধির নিরাময় যে এই নবুয়্যতী ধারার খিলাফত, অন্য কোন তন্ত্র নয়, এই সত্যকে উদ্ভাসিত করার তাগিদে মহান ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ.) এই গ্রন্থটি রচনা করেন। বিগত শতাব্দীতে যে কজন মনিষী ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন, মওলানা আবদুর রহীম (রহ.) তাঁদের অন্যতম। তিনি ১৯১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি পিরোজপুর জেলার কাউখালী থানার অন্তর্গত শিয়ালকাঠি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৩৮ সালে শর্ষীনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম এবং ১৯৪০ ও ১৯৪২ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল ও কামিল ডিগ্রি লাভ করে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত অত্র মাদ্রাসায় কুরআন ও হাদীস নিয়ে উচ্চতর গবেষণায় নিরত থাকেন। বাংলাভাষায় তাঁর ৬০ এর অধিক অতুলনীয় গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি প্রায় ৬০ টির অধিক গ্রন্থ অনুবাদ করেন। তিনি বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা ওআইসির অন্তর্গত ফিকাহ একাডেমির একমাত্র সদস্য ছিলেন। ১৯৭৭ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা সম্মেলন ও রাবেতা আলমে ইসলামীর সম্মেলন, ১৯৭৮ সালে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত প্রথম দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ইসলামী দাওয়াত সম্মেলন, একই বছর করাচিতে অনুষ্ঠিত প্রথম এশীয় ইসলামী সম্মেলন, ১৯৮০ সালে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত আন্ত:পার্লামেন্টারি সম্মেলন এবং ১৯৮২ সালে তেহরানে অনুষ্ঠিত ইসলামী বিপ্লবের তৃতীয় বার্ষিকী উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। এই মনিষী ১৯৮৭ সালের ১লা অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। রহিমাহুল্লাহ। লেখক গ্রন্থটিতে যেসব বিষয়ের অবতারণা করেন, সেগুলো হল:- • ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা • খিলাফতে রাশেদা • খিলাফতে রাশেদার রাষ্ট্ররূপ • খিলাফতে রাশেদার অভ্যন্তরীণ ব্যাবস্থাপনা • খলিফাগণকে নিয়ে স্বতন্ত্র আলোচনা শুরুতে লেখক একটি আধুনিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে তার আলোকে, যে নববী রাষ্ট্রব্যবস্থার বুনিয়াদের উপর খিলাফতে রাশেদা গড়ে উঠেছিল, তার আলোচনা করেন। মক্কার জুলুম-নির্যাতন থেকে শুরু করে আকাবার বাইয়াত হয়ে মদিনায় হিজরত ও মদিনা সনদ প্রতিষ্ঠা করে যেসব ঘাত প্রতিঘাত মোকাবেলায় এই নববী রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল, তার সুন্দর চিত্র তুলে ধরেন। এরপরের অংশে লেখক 'খিলাফতে রাশেদা'র বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করেন। কুরআন সুন্নাহর আলোকে "খিলাফত" শব্দের ব্যাখ্যা করে খলিফাদের গুণাবলী ও কারা খিলাফতের যোগ্য, তার আলোচনা করেন। খলিফা নির্বাচনের সময় যেসব গুণাবলীর প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত তার উল্লেখ করে খিলাফতে রাশেদার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য সমূহ বর্ণনা করেন। এরপর লেখক খিলাফতে রাশেদার রাষ্ট্ররূপ নিয়ে আলোচনা করেন। এই অংশে লেখক অন্যান্য রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে আলোচনা করে তাদের সাথে খলিফায়ে রাশেদার সুস্পষ্ট পার্থক্য নিরূপণ করেন। এছাড়াও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, খলিফা ও জনগণের মাঝে সম্পর্ক, আনুগত্য, বিজিত জাতির প্রতি ব্যাবহার ইত্যাদি বিষয়ের অবতারণা করেন। খিলাফতে রাশেদার অভ্যন্তরীণ ব্যাবস্থাপনা নিয়ে আলোচনায় লেখক বিচার বিভাগ, দেশরক্ষা বিভাগ, রাজস্ব বিভাগ, খারাজ, উশর, জিজিয়া, যাকাত, শুল্ক, মুদ্রা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেন। এসব নীতিমালার ভিত্তি দ্বীন-ইসলামের উপরই স্থাপিত ছিল, যার একমাত্র লক্ষ্য ছিল মানবতার কল্যাণ সাধন। গ্রন্থের শেষে লেখক চারজন খলিফা নিয়ে আলাদা আলাদা আলোচনা করেন। তাঁদের ব্যাক্তিগত জীবন, চরিত্র বৈশিষ্ট্য, রাসূল ﷺ এর সাথে তাঁদের সম্পর্ক, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, খলিফা হিসেবে তাঁদের কর্মকাণ্ড এসবই এই আলোচনায় স্থান পায়। এছাড়াও এই অংশে লেখক চার খলিফার শাসনামলের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলেন। খিলাফতে রাশেদা মানব ইতিহাসে এক স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছে। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগন যত চমকপ্রদ তন্ত্রই আবিষ্কার করুক না কেন, মানবতার কল্যাণে এই নবুয়্যতী ধারার খিলাফতের ন্যায় বিপুল সাফল্য কোন পদ্ধতিই অর্জন করতে পারে নাই। মুসলিমরা তাদের গৌরবোজ্জল সোনালী যুগের দিনগুলো ফিরে পেতে চাইলে এই নবুয়্যতী ধারার খিলাফতই একমাত্র সমাধান। এই গ্রন্থটি বাংলাভাষায় রচিত খিলাফতে রাশেদা নিয়ে মৌলিক অথচ সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ। সাধু ভাষায় রচিত হলেও সহজ সরল শব্দ চয়নের কারণে গ্রন্থটি দুর্বোধ্য অনুভূত হয় না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ভূমিকা রাখার কারণে গ্রন্থটিতে লেখকের একটা বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে। এরফলে পাঠকগণ বর্তমান ও পূর্বের সময়ের একটি তুলনামূলক চিত্র খুঁজে পাবেন যা গ্রন্থটির পরিপূর্ণ অনুধাবনে সহায়ক হবে।