User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
?ফ্ল্যাপ থেকে: শিল্প বিপ্লবের ফলে মানুষের জীবন যাত্রায় আমূল পরিবর্তন এসেছে, একথা যেমন সত্যি, তেমনি পৃথিবী প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মাটির নিচে জমে থাকা তেল, গ্যাস, কয়লা বা অন্য কোনো খনিজ পদার্থ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, কার্বন নিঃসরণের ফলে ওজনস্তর ক্ষয়ে যাচ্ছে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, উত্তর মহাসাগরের বরফ আগের তুলনায় দ্রুত হারে গলে যাচ্ছে। ফলে সমুদ্রের পানির স্তর ফুলে উঠছে এবং পৃথিবীর দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহ, এমনকি বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলও ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জলবায়ুর এই পরিবর্তনের ফলে পুরো পৃথিবী এখন ধ্বংসের মুখে...... ?কাহিনী সংক্ষেপ: জলবায়ু কন্যা নাম শুনেই খানিকটা আঁচ করতে পারা যায় বইটা কি সম্পর্কে হতে পারে। বইটিতে তরু ও লতা জমজ ভাইবোনের খুঁনসুটি দিয়ে শুরু হয়। দুজনই পড়াশোনায় ভালো। উপন্যাসের প্রায় শুরুতেই আমরা গার্লস স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষককে দেখতে পাই, যিনি দায়িত্ব পান বিতর্ক প্রতিযোগিতার। স্কুলে তিনি বিষয়টি জানান এবং বাছাই করেন কে কে থাকতে পারবে বিতর্ক প্রতিযোগিতায়। বিতর্কের বিষয় নির্ধারিত হয়, 'জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে করতে পারি শুধু আমরাই।' শিক্ষার্থীরা জলবায়ু বিষয় শুনে পিঁছিয়ে গেলেও কয়েকজন আগ্রহী নাম লিখায় তাদের। তারা দশম শ্রেণির লতা, ছন্দা ও মালা। প্রতিদিন টিফিন পিরিয়ডে ও ক্লাস শেষে ওরা জলবায়ু নিয়ে আলোচনা করতে থাকে, বই-নোটস দেয় এবং সর্বোপরি একে অপরকে মনোবল যোগাতে থাকে। লতা তার নানুভাই সাঈদ সাহেবের কাছেও কথা বলে জলবায়ু বিষয়ে জানবার জন্য। এভাবে সে জানা-অজানা অনেক তথ্য পেয়ে যায়। উপন্যাসের শেষ অংশে দেখতে পাই, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলে। অবশেষে তথ্যবহুল বক্তব্য উপস্থাপন, যুক্তি প্রদর্শন ও খণ্ডণ, ভাষার দক্ষতা, উচ্চারণ, বাচনভঙ্গি দেখে লতাকে শ্রেষ্ঠ বক্তা ঘোঘণা করে এবং ওরা জয়লাভ করে। ?চরিত্রায়ন: ?লতা: কিশোরি লতা দশম শ্রেণির ছাত্রী। অজানাকে জানার, শেখার অদম্য একটা ইচ্ছাশক্তি রয়েছে তার। পুরো উপন্যাস জুড়ে তার মেধা, বাচনভঙ্গি, চঞ্চলতা, সাহসিকতা, ধৈর্য্যশীলতা, বন্ধুত্বপরায়নতা বজায় রেখেছে। ?তরু: উপন্যাসের শুরুতে খুঁনসুটিতে মেতে থাকলেও পরবর্তীতে তাকে দায়িত্বশীল ভাই হিসেবেই দেখা যায়। ?সাঈদ সাহেব: তরু ও লতার নানা হচ্ছেন সাঈদ সাহেব। তিনি লতার বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেবার কথা শুনে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। ?ফয়জুল ও নাজমা: তরু ও লতার বাবা-মা এনারা। অন্যান্য বাবা-মায়ের মতনই ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনায় ছাড় দিতে রাজী নন। ?ছন্দা ও মালা: ছন্দা কিছুটা ভিতু স্বভাবের হলেও একদিন রিহার্সেল করেই সে আর ততোটা ভয় পায়না। আর মালাকে প্রথম থেকেই কিছুটা আশাবাদী দেখা যায়। ?পাঠ প্রতিক্রিয়া: উপন্যাসটি পড়া শুরু করি আমি শিখবার প্রত্যয়ে। ধরেই নিয়েছিলাম জলবায়ু সম্পর্কিত খুঁটিনাটি প্রয়োজনীয় সকল তথ্য জানতে পারবো, আর হয়েছেও তাই। চমৎকার একটি কিশোর উপন্যাস। প্রতিটি চরিত্র এতো গোছালোভাবে সাজানো। নিঃসন্দেহে শিশু-কিশোর-বয়ঃবৃদ্ধ সকলে পছন্দ করবে পড়তে। কেনোনা কোনো চরিত্রই অপ্রয়োজনীয় মনে হবেনা বা পড়তে একঘেঁয়ে লাগবেনা আপনার। এছাড়াও বিতর্ক প্রতিযোগিতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছি আর ভেবেছি আমার কৈশোরে যদি এমন বান্ধবী পেতাম, যারা সাহস দিবে, বই দিয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবে। এমন টিচার যদি পেতাম, গর্ব করবার মত কাজ অবশ্যই আমিও করতে পারতাম হয়তো। এমন সাপোর্টিভ বড় ভাই যদি পেতাম। আর শিক্ষকতুল্য নানুকে পেতাম, যিনি এতোটা ফ্রেন্ডলি মানুষ, ধৈর্য্য ধরে দক্ষতার সাথে তৈরি করলেন নাতনীকে বিতর্ক প্রতিযোগিতার জন্য। সত্যিই ধন্য হতাম, আর পড়বার সময় লতার জায়গায় নিজেকে দেখছিলাম যেনো আমি, একজন সফল কিশোরি বিতার্কিক রুপে। যে পরিবেশ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখে, পরিবেশকে ভালোবাসে এবং পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। মানতেই হবে এই কিশোর-কিশোরীদের হাত ধরেই আমরা সফলতার দাঁড় প্রান্তে পৌঁছাতে পারবো ইনশাআল্লাহ। ?বইয়ের কিছু উল্লেখযোগ্য লাইন: ?গল্পবাজ, গল্পবাজ বলছিস, যেদিন আমি থাকব না সেদিন বুঝবি গল্পবাজের কদর। ?আমার সারাজীবনের সঞ্চিত সম্পদ দিয়ে আশেপাশের দশটি গ্রামে দশটি নলকূপ স্থাপন করে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করার জন্য দান করে গেলাম। ?তোকে কেউ হারাতে পারবে না, বয়েজ স্কুল জিতলে বলবি আমাদের স্কুল জিতেছে আর গার্লস স্কুল জিতলে বলবি আমার বোন জিতেছে। তোর তো দুদিকেই জেতা। ?পৃথিবীর উপরিভাগের পানি যাকে আমরা সারফেস ওয়াটার বলি। মানুষকে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে পৃথিবীর উপরিভাগের পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। ?দেশের সব নদী গভীর করতে হবে, দু'পার উঁচু করে বাঁধ দিতে হবে, কিছুদূর পর পর নদী থেকে কৃত্রিম শাখা বের করে ড্রেন, সাব ড্রেন করে সেই পানি দিয়ে কৃষিকাজ করতে হবে। ?মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ধারণের একটা সীমা আছে, সেই সীমা অতিক্রম করলে তো মানুষ মারা যাবেই। এটা আগে ছিল না। ইদানীং শোনা যাচ্ছে হিটস্ট্রোকে মানুষ মারা যাচ্ছে। এটাও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে। ?সময় এসেছে সন্তানদের অ্যাকাডেমিক শিক্ষার বাইরেও যে বিশাল জ্ঞানভান্ডার আছে, সন্তান লালন-পালনের উদ্দেশ্য যে শুধু সরকারি চাকরি করার জন্য নয় সেটা অনুধাবন করার। সন্তানদের শেখানোর সময় এসেছে লেখাপড়া শিখে মানুষ হওয়ার। ?দেশে অ্যাকাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের অভাব নেই কিন্তু অ্যাকাডেমিক শিক্ষা আর প্রকৃত মানুষ বানানোর শিক্ষায় তফাত আছে তাই তো এখন প্রয়োজন মানুষ বানানোর শিক্ষা। ?যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, কিউবা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে যে ঝড় হয় সেগুলোর নাম হারিকেন আর চীন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন ও জাপানে যে ঝড় হয় সেগুলো বলা হয় টাইফুন। ?প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই। ?ফুটপ্রিন্ট হলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে কার্বন নিঃসরণ যেমন- আমরা অপ্রয়োজনীয়ভাবে ফ্যান চালাই, পানির অপচয় করি, বিনা কারণে গাড়িতে চড়ে বেড়াই এতে করে কার্বন নিঃসরণ হয়। ?আমরা তো কার্বন নিঃসরণ করি মাত্র শতকরা জিরো পয়েন্ট ফোর সেভেন পার্সেন্ট। ?যদি মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরি না করে বিকল্প হিসেবে পাথরের ঢালাই সিমেন্টের ব্লক তৈরি করে বাড়ি-ঘর তৈরি করা হয় তবে কার্বন নিঃসরণ অনেক কম হবে। ?খুচরা আলাপ: উপরোক্ত রিভিউটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। তরুলতা ভাইবোনকে আমার ভালো লেগেছে। একটা সুন্দর শৈশব-কৈশোর দেখতে পেয়েছি ওদের মধ্যে। বইটির চরিত্রায়ন শব্দচয়ন বেশ ভালো লেগেছে। লতা একটি অন্যতম প্রধান সৃষ্টি জিল্লুর রহমানের। লতার মত মেয়েদের হাত ধরেই দেশ এগিয়ে যাবে একদিন। সময় নিয়ে পড়বার জন্য ধন্যবাদ। কোনো ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভুল হয়ে থাকলে কমেন্টে জানানোর অনুরোধ রইলো। পৃথিবী হোক বইময়। ?সংক্ষিপ্ত বই পরিচিতি: বই: জলবায়ু কন্যা লেখক: জিল্লুর রহমান জনরা: কিশোর উপন্যাস প্রকাশক: অন্বেষা প্রকাশন পৃষ্ঠা: ১১২ লেখা: উম্মে হাবিবা কনা