User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বই:পত্রলেখা তোমার জন্য লেখিকা:পাপিয়া দত্ত প্রকাশনা:ছাপাখানা একাকিত্ব সে তো অহর্নিশি গুমড়ে গুমড়ে ওঠা কান্নার নাম,নিজের মনকে ক্রমশ নিস্তেজ করে মেরে ফেলা,নিজের অনুভূতিকে চাপা দিয়ে যন্ত্রের ন্যায় যাপিত জীবন।বুক ভরা ভালোবাসা নিয়ে প্রিয় মানুষটির জন্য ক্রমাগত অপেক্ষা করে যাওয়া,অন্তরের তৃষ্ণা নিবারণ না হওয়া,দুটি চোখের প্রশান্তি না ফিরে পাওয়াই কি একাকিত্বের আর্তনাদ? গল্পের শুরুতে দেখা যায় চা বাগানের একটি মিশনারি হাসপাতালে যোগ দিতে আসে সদ্য ইন্টার্নি শেষ করা ডাক্তার সৌমি।মিশনারি হাসপাতালের ডাক্তার নীলেশের ঋজু ব্যাক্তিত্ব আর আত্বভোলা চরিত্রে সৌমির অন্তর যে আটকে গেলো।ভিন্ন ধর্মের দুটি মানুষের সম্পর্কের বিভেদ যে সহস্র।ঋষি চরিত্রের এই ডাক্তার বাবুর মনে কি কোনো অপ্সরীর বসবাস? গল্পটা পড়তে গিয়ে আমার সমরেশ মজুমদারের সাতকাহনের কথা বারংবার মনে পড়েছে।মনে পড়ার অন্যতম কারণ চা বাগান।বাঙালিকে চা বাগান ভালোবাসতে শিখিয়েছে সমরেশ বাবু।দীপালির বেড়ে ওঠার সময়টাতে চা বাগানের যে নিঁখুত বর্ণনা দেয়া,চা বাগানে প্রকৃতির যে অপরূপ সৌন্দর্য্যমন্ডিত তা যেন পুনরায় মনে করিয়ে দিলো এই গল্পটি।ঝিরির আপন মনে বয়ে চলার মাঝেই তার প্রকৃত সুষমা।গল্পটি পড়তে গিয়ে আমি মানসচক্ষে কখনো পাহাড়ি রাস্তায় হেঁটে চলেছি,কখনো বা হারিয়েছি সবুজ সমুদ্রের ফেনিলে।গল্পটি পড়তে গিয়ে বুঝতে পেরেছি চা বাগানে কর্মরত কামিন কুলিরা যে কতোটা নিগৃহিত,কতোটা সহজ সরল।তাই তো মহুয়ার মতো কতো মানুষকে নির্যাতিত হতে হয়।গল্পের মানিক বাবু,রঘু চরিত্রগুলোর মধ্যে দিয়ে লেখিকা চমৎকারভাবে ষড়রিপুর তাড়নায় মানুষ কতোটা বিবেক বর্জিত হতে পারে তাই দেখিয়েছেন।মুদ্রার ওপিঠের ন্যায় এপিঠ ও যে আছে,ষড়রিপুর তাড়না যেমন আছে তেমনি নি:স্বার্থ হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও আছে তার প্রকৃষ্ট উদাহারণ রাখাল,সুশীলা।গল্পের মূল যে প্রোটাগনিস্ট ডাক্তার নীলেশ একজন ঋষি পুরুষ যার মহাদেবের ন্যায় একবুক মমতা,কর্তব্যপরায়ণতা।শিবের ন্যায় সেও আপন দুনিয়াতে মত্ত,কিন্তু আসলেই কি তাই? শিবের মতো সেও যে সতীকে হারিয়ে আজ রিক্ত।তাই তো অন্তরের ব্যাথা ভুলতে সে মানব সেবায় ব্যস্ত। গল্পের অন্যতম মূল আকর্ষণ পত্রলেখা যে রাধার ন্যায় প্রচন্ড আত্বাভিমানী কিন্তু প্রেমরাগে অনুরক্ত তার হৃদয়।কৃষ্ণ রুপী প্রিয় প্রেমিক পুরুষকে হারিয়ে আজ যে রাধার অন্তর রক্তাক্ত।সন্দেহ যে কতোটা মারাত্বক হয় তার প্রমাণ নীলাদ্রির পিতার স্নেহবিহীন শৈশব।হৃদয়কে পরিপূর্ণ সমর্পণের জন্য প্রয়োজন বিশ্বাসের,যেখানে প্রশ্ন বিহীন বিশ্বাস আছে সেখানেই পরিপূর্ণ সমর্পণ হয়।গল্পের নীলেশের চরিত্র নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে বুদ্ধদেব গুহর অন্যতম পছন্দের উপন্যাস অভিলাষের কথা মনে পড়েছে।অভিলাষ গল্পের মূল প্রোটাগনিস্টের সাথে নীলেশের বেশ মিল লক্ষ্য করেছি। গল্পে চিকিৎসা খাতে চলমান বিভিন্ন অরাজকতা ও উঠে এসেছে।চা বাগান গুলোতে চলমান নানা অপরাধ ও উঠে এসেছে।গল্লের শেষ অংশে যেখানে প্রকৃতি আর পুরুষ পরস্পরের মাঝে বিলীন সেখানে পাঠকের আত্বা এক পরিতৃপ্তি পায়।সৌমির জন্যই বুঝি মানিক বন্ধোপাধ্যায় রচনা করেছিলেন,"প্রেমের অকাল মূত্যু নেই বলে শোকের মধ্যে প্রেম চিরন্তন হয়ে যায়"।সমাপ্তিতে বলতে চাই,হংসজোড়ার একজন আরেকজনকে হারিয়ে একাকি কাটিয়ে দেয় জীবন,দুরত্বের অনলেই পুড়ে খাঁটি হয় প্রেমে বিধুর দুটি হৃদয়, প্রেম প্রস্ফুটিত হয় স্বমহিমায়।