User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
স্মল থিংস লাইক থিজ - ক্লেয়ার কিগান। (Small Things Like These by Claire Keegan) আকারে ক্ষুদ্র কিন্তু এর পরিধি ব্যাপক।এই উপন্যাসটি একজন ব্যক্তির নীরব সাহসের এক অপূর্ব অনুপম দলিল। এই ক্ষুদ্র অথচ হৃদয়ছোঁয়া উপন্যাসটির পটভূমি ১৯৮৫ সালের শীতার্ত আয়ারল্যান্ড। বিল ফারলং, প্রায় চল্লিশ বছর বয়সী, একজন পরিশ্রমী কয়লা ব্যবসায়ী। তার রয়েছে এক স্নেহময় স্ত্রী ও পাঁচটি কন্যাসন্তান। সে জানে, তার জীবনটি যথেষ্ট ভালো — আর এই সুখ যেকোনো সময়েই হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। সে জানে, একজন অবিবাহিত গৃহপরিচারিকার সন্তান হিসেবে, তার ভবিষ্যৎ ছিল অনিশ্চিত। সহজেই সে হয়তো অন্ধকার কোনো গলিতে হারিয়ে যেতে পারত। কিন্তু ভাগ্যের ইশারায় সে পেয়েছিল এক ধনী বিধবার করুণা এবং তার পরিচারক নেডের স্নেহশীল দৃষ্টি। সেই দয়ার ছোঁয়ায়, মায়ের মৃত্যুর পরও বিল পেয়েছিল এক নিরাপদ শৈশব, এবং গড়ে উঠেছিল এক সুশৃঙ্খল জীবন। তবুও, বিলের মনে জন্ম নিচ্ছে এক গভীর অস্থিরতা। তার সুখের নানা কারণ থাকা সত্ত্বেও, তার মনে প্রশ্ন জাগে—সব কিছু কি অন্যরকম হতে পারত না? হয়তো আরও ভালো? সে তার ভবিষ্যৎকে দেখতে পায় এক নিরন্তর পুনরাবৃত্তির ঘূর্ণিপাকে—প্রতিদিনই একই কাজ, একই চিন্তা। সপ্তাহে ছয় দিন কঠোর পরিশ্রম আর রোববারগুলোও যেন আগের রোববারের প্রতিচ্ছবি। যেন জীবনে নেই কোনো ছুটির স্বস্তি, নেই অবসরের প্রশান্তি। তার মাথায় সারাক্ষণ কাজ আর উদ্বেগ ঘুরপাক খায়। এমন একঘেয়ে, চিন্তায় ভারাক্রান্ত জীবন কি সত্যিই সার্থক? তাছাড়া বিল যথেষ্ট ভালো একজন মানুষ এবং তার জীবন নিয়ে এমন সন্দেহে ভরা অবস্থায় তাকে দেখা খুব কষ্টকর। এরপর সে এমন কিছু দেখে, এমন কিছু প্রেক্ষাপটের মুখোমুখি হয়, যা তার মন থেকে সরানো সম্ভব নয়। সে যা দেখে, তা হলো তার জীবনের যে দিকে অগ্রসর হচ্ছিল—তার এক ধরনের পূর্বাভাস। সে খুচরো টাকা দিত গরিবদের, যাদের প্রয়োজন ছিল তাদের জন্য উদার ছিল, অন্যদের ভালোভাবে আচরণ করার ইচ্ছা রাখত, যদিও তার স্ত্রী এ নিয়ে হরহামেশাই ঠাট্টা এবং অভিযোগ করত। এই উপন্যাস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ছোট ছোট কাজ, ছোট ছোট সিদ্ধান্তই একজন মানুষকে মহান করে তোলে। কোনো কিছু না করাও একধরনের পছন্দ, আর কিগান সেটাই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখান। গল্পের শেষে, আমরা বুঝতে পারি - বিলের জীবনে সামনে অনেক সংগ্রাম ও কষ্ট আসবে, কিন্তু পাশাপাশি এমন এক শান্তিও থাকবে যা কেবল একজন সহানুভূতিশীল হৃদয় মানুষকে এনে দিতে পারে। এই গল্পটি যেকোনো সময়ে পড়ার মতো সুন্দর একটি গল্প এবং অবসর সময়ের নিতান্ত এক পাথেয়... স্পেশালি ধন্যবাদ Ahnaf Tahmid Ratul ভাইকে। এতো সুন্দর একটি গল্প অনুবাদের মাধ্যমে আমাদের মতো পাঠকদের উপহার দেওয়ার জন্য...
Was this review helpful to you?
or
ইদানীং তেমন অবসর মেলে না। যদি মেলে, তাহলে অল্প সময়ে দেখা সম্ভব এমন কোনো সিনেমা বা সিরিজ বেছে নিই। এইতো কিছুদিন আগের ঘটনা, পছন্দের একজন অভিনেতা কিলিয়ান মারফি’র একটি সিনেমা দেখব বলে মনস্থির করলাম। নাম- ‘স্মল থিংস লাইক দিজ’। তখন হঠাৎ মনে পড়ল, এই নামে তো একটি উপন্যাসিকা রয়েছে নিজের সংগ্রহে। আর সিনেমা এবং বইয়ের মাঝে তুলনা করলে, বরাবরই আমি বইকে এগিয়ে রাখি। তাই বৃষ্টিমুখর এক দিনে বইটা তুলে নিলাম হাতে। সাল ১৯৮৫। আয়ারল্যান্ডের ছোট্ট একটি গ্রাম। শীতের মৌসুম, ক্রিসমাসের উৎসবমুখর সময়। একজন সাধারণ কয়লা ব্যবসায়ী বিল ফারলং; স্ত্রী ও পাঁচ কন্যা নিয়ে তার সুখের সংসার। বিল মূলত পরিশ্রমী মানুষ। তার দৈনন্দিন জীবন নির্দিষ্ট ছকে আবদ্ধ। সহকর্মীদের সঙ্গে কর্মব্যস্তময় দিন যাপন, প্রতিবেশি ও নিকটাত্মীয়দের প্রতি দায়বদ্ধতা, অবসরে পরিবারের সঙ্গে সময় যাপন; এটাই তার রোজকার জীবন। কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই, নিজের আবেগ অনুভূতি প্রকাশের কোনো চেষ্টাও তার মাঝে দেখা যায় না। শহর, শহরের পরিবেশ, আশপাশ অত্যন্ত শান্ত; ঘটনাবিহীন। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে- তাহলে উপন্যাসে কী এমন রয়েছে, যা একজন পাঠককে আকর্ষিত করবে? সংক্ষেপে, স্পয়লার ছাড়া এর জবাব দেওয়াটা বেশ কঠিন। তবে এতটুকু বলতে পারি, শুধুমাত্র এর লিখনশৈলী ও পরিমিত ঘটনাপ্রবাহ বইটিকে একবসায় শেষ করার জন্য যথেষ্ট। “স্মল থিংস লাইক দিজ” উপন্যাসিকার শুরুটা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট চরিত্রের নির্মাণ ও তার জগতটাকে বর্ণমার মধ্য দিয়ে। ধীরে ধীরে তা একটি বিশেষ ঘটনার দিকে ধাবিত হয়েছে। আর একদম শেষ মুহূর্তে গিয়ে উন্মোচিত হয়েছে এমন এক কাহিনি, যা যেকোনো পাঠকের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিতে বাধ্য। বইটি ইতিহাসের একটি দীর্ঘতম কালো অধ্যায়ের প্রতি আলোকপাত করেছে। যা এটিকে হিস্টোরিক্যাল ফিকশন ও স্লাইস অব লাইফ উভয় জনরাতেই অন্তর্ভুক্ত করে। স্পয়লারের কারণে বিস্তারিত বলতে চাইছি না। তবে কেউ যদি একান্তই ইতিহাসের সেই অধ্যায়টি সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে ‘ম্যাগডালেন লন্ড্রি’ লিখে গুগলে সার্চ দিতে পারেন। আইরিশ লেখিকা ক্লেয়ার কিগানের এই উপন্যাসিকাটি ২০২১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। পরের বছর বইটির জন্য তিনি অরওয়েল প্রাইজ অর্জন করেন। ২০২৪ সালে আদী প্রকাশন থেকে এটার অনুবাদ নিয়ে এসেছেন বর্তমান সময়কার পাঠকপ্রিয় অনুবাদক আহনাফ তাহমিদ। পাহাড়, বটবৃক্ষ ও প্রকৃতির মিশেলে তৈরি নান্দনিক প্রচ্ছদটির মতোন বইয়ের প্রতিটি শব্দ, বাক্য ও বর্ণনা বেশ উপভোগ্য ছিল। ঝরঝরে ও সাবলীল অনুবাদ। সম্পাদনাও বেশ মার্জিত লেগেছে। বিদেশি বইয়ের অনুবাদ হলেও সেটাকে বাংলা ভাষাভাষী পাঠক উপযোগী করে তোলার বিষয়টি সম্পূর্ণ অনুবাদকের হাতে থাকে। আর এ বিষয়ে অনুবাদক দারুণ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। কাহিনির পটভূমি অতীতের সময়কার, আবার চরিত্রও স্বদেশি নয়; কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রধান চরিত্র ও তৎকালীন পরিবেশ যেন বর্তমান সময়ের সমাজ ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি এবং দেশের মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনকে তুলে ধরে। একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তার কর্মজীবন ও পরিবারের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে। আশপাশে ঘটে যাওয়া অন্যায়, অবিচার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তার করার মতোন তেমন কিছুই থাকে না। অথচ সামান্য একটি পদক্ষেপ, একটু সাহস, একটু সদিচ্ছা এবং চেষ্টা কতবড় পরিবর্তন আনতে পারে; বিল ফারলং চরিত্রের দ্বারা সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। দিনশেষে আসলে আমরাও বিল ফারলং এর মতোনই একজন সাধারণ মানুষ। একটু শান্তির আশায় আমরাও সংগ্রাম চালিয়ে যাই। উক্ত চরিত্রের মাধ্যমে মনুষ্যত্ব, মানবিকতা ও জীবনবোধের যে অনন্য উদাহরণ এ বইতে রয়েছে, খুব করে চাই- সেটা বাকিদের মাঝেও ছড়িয়ে যাক। “স্মল থিংস লাইক দিজ” মাত্র ৮৮ পৃষ্ঠার ছোট্ট একটি উপন্যাসিকা। তবে বিষয়বস্তু বিচারে এর গভীরতা ব্যাপক। যারা ভিন্ন ধাচের অনুবাদ বই পড়তে ভালোবাসেন, তাদের জন্য মাস্ট রিড। তবে আমার ব্যক্তিগত অনুরোধ থাকবে, শুরুর দিকে ‘অনুবাদকের কথা’ অংশটি বইটি শেষ করে পড়বেন। এটা ভূমিকার বদলে বইয়ের পরিশিষ্ট অংশ হিসেবে ভালো মানাতো। পুরোটা বইজুড়ে যে কৌতুহল আপনাকে তাড়নায় রাখবে, সেটা অনুবাদকের কথা পর্বটি পড়লে অনেকটাই কমে যেতে পারে। . বই: স্মল থিংস লাইক দিস লেখক: ক্লেয়ার কিগান অনুবাদক: আহনাফ তাহমিদ প্রচ্ছদ: আদনান আহমেদ রিজন প্রকাশনী: আদী প্রকাশন