User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বুক রিভিউ। পুরো জীবনটাই একটা যুদ্ধের ময়দান। এই ময়দানে দাঁড়িয়েও জীবনকে উপভোগ করতে হয়। ~সুলতানা ইসলাম ছন্দা। বইয়ের নাম: আংটি। লেখিকা: সুলতানা ইসলাম ছন্দা। Sultana Islam Chanda প্রকাশনী: অনুজ প্রকাশন। প্রকাশক: আশরাফুল ইসলাম। প্রচ্ছদ: ফারিহা তাবাসসুম। জনরা: মিস্ট্রি থ্রিলার। প্রথম প্রকাশ: বইমেলা-২০২৫ পরিবেশক: এশিয়া পাবলিকেশন। অনলাইন পরিবেশক: রকমারি, বইফেরী, বইপরী, বইবাজার, দূরবীণ, হক বুকশপ। কলকাতা পরিবেশক: বই বাংলা। ব্যক্তিগত রেটিং: ৪/৫ রিভিউ দাতা: এম.আর.এ. আকিব। ভূমিকা: আপাতদৃষ্টিতে আমাদের কাছে যা তুচ্ছ এবং মূল্যহীন, আসলেই কি সেগুলো আমাদের কাছে মূল্যহীন থাকে? না কি সেগুলোই আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত? এমনই এক ঘটনা অবলম্বনে লেখা 'আংটি' উপন্যাসটি। যেখানে একটিমাত্র 'আংটি'-কে কেন্দ্র করে ঘটে যায় ভিন্ন ভিন্ন অনেক ঘটনা। পাঠ প্রতিক্রিয়া: চলছে শীতকাল! সেই সাথে ফাইনাল পরীক্ষাও শেষ হয়েছে দুইদিন আগে। বলা যায় এখন পুরোদমে ফ্রি আছি। এই অবসর সময় কাটানোর জন্য বইয়ের চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে! তাই তো পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দিন থেকেই বসে পড়লাম সুলতানা ইসলাম ছন্দা আপুর 'আংটি' বইটি নিয়ে। ভৌতিক, রহস্যময় ও থ্রিলার জনরার বইগুলোর প্রতি আমার অন্যরকম ভালো লাগা আছে৷ এই জনরার বইগুলো আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ি। তাছাড়া শীতের আমেজে বই পড়ার যে আলাদা একটা মজা আছে তা শুধু যারা পড়েন, তারাই জানেন। আমি যে দুইদিন বইটি পড়েছি সে দুইদিন আকাশে সূর্যের দেখা মিলেনি। চারপাশে হালকা মৃদু বাতাস, ঠান্ডা পরিবেশে মিস্ট্রি থ্রিলার জনরার বই হাতে নিয়ে পড়তে কার না ভালো লাগে! বইটি পড়ার সময় আলাদা এক অনুভূতি কাজ করেছে, মনে হয়েছে উপন্যাসের ঘটনাগুলো উপন্যাসের চরিত্রের সঙ্গে নয়, বরং আমার সঙ্গেই ঘটছে। সে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। বইটি পড়তে পড়তে যখন দেখলাম আর মাত্র দুই পৃষ্ঠা রয়েছে তখন আফসোস হলো এই ভেবে যে এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাচ্ছে কেন! যদি আরো কিছু পৃষ্ঠা থাকতো... চরিত্র: উপন্যাসে বেশ কিছু চরিত্র রয়েছে। তবে আমি এখান থেকে কয়েকটি চরিত্র নিয়ে কথা বলছি। অর্পি: পুরো নাম অর্পিতা রহমান অর্পি। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সে। পুরো উপন্যাস জুড়েই তার বিচরণ রয়েছে। বললে ভুল হবে না যে তাকে ঘিরেই উপন্যাসটি রচিত হয়েছে। অর্পি বড়ো হয়েছে এতিমখানায়। বাবা-মায়ের কোনো পরিচয় জানে না। তবে এতিমখানার সবাই তাকে খুব পছন্দ করত। তবে এখন বড়ো হয়ে যাওয়ায় আর এতিমখানায় থাকে না, সে একটা কর্মজীবী হোস্টেলে থাকে এবং কুরিয়ার অফিসে চাকরি করে। ঈপ্সিতা: অর্পির বান্ধবী বলা যায়। হোস্টেলের মধ্যে অর্পির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হলো এই ঈপ্সিতা। তাদের মধ্যে তুইতোকারির সম্পর্ক। উপন্যাসের প্রথমে ঈপ্সিতা চরিত্রটি তেমন সক্রিয় না-থাকলেও শেষ দিকে ঈপ্সিতাকে বেশ সক্রিয় দেখা যায়। উপন্যাসের শেষাংসে অর্পি আর ঈপ্সিতা মিলে অনেক রহস্য উন্মোচন করে। মণি: অর্পি যে এতিমখানায় থাকত সেখানেই কাজ করেন মণি। বলা যায় মাতৃস্নেহেই অর্পিকে তিনি মানুষ করেছেন। এতিমখানার অন্যান্যদের চেয়ে অর্পিকে তিনি বেশি ভালোবাসতেন। সবাই তাকে মণি বলেই ডাকতো৷ তার আসল নাম উপন্যাসের প্রথম দিকে আমরা জানতে পারিনি। মণি যেন এক রহস্যময় চরিত্র। মালিহা আপু: এই উপন্যাসের সবচেয়ে রহস্যময় চরিত্র হলো মালিহা আপু। এই মালিহা আপুর সাথে আমরা উপন্যাসের মধ্যখানে এসে পরিচিত হই একটু সময়ের জন্য। কিন্তু এই একটু সময়ে মালিহা আপুকে দেখলেও পুরো কাহিনি যেন এই মালিহা আপুকে ঘিরেই। মালিহা আপুই যেন এ উপন্যাসের প্রাণ। অন্যভাবে যদি বলি, মালিহা আপু এ উপন্যাসের প্রাণ আর অর্পি হলো তার দেহ। মালিহা আপুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অর্পি যেন উপন্যাসটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে সাজিয়েগুছিয়ে। অনন্য: আরেক রহস্যময় চরিত্র এই অনন্য। যে অর্পিকে ভালোবাসে বলা যায়! আবার সে মালিহা আপুকেও ভালোবাসে! কিন্তু উপন্যাসে কিছু সময় থাকে দেখা গেলেও পরে আর তাকে তেমন দেখা যায়নি। তবে তাকে দেখা না-গেলেও সে ছিল, অবশ্যই ছিল। তবে প্রথম দেখায় মনে হতে পারে সে এই উপন্যাসের নায়ক চরিত্র। সার-সংক্ষেপ: উপন্যাসটি শুরু হয় অর্পির জীবন কাহিনি নিয়ে। এতিমখানায় বড়ো হওয়া এক সংগ্রামী চরিত্র এই অর্পি। সে তার জীবনের সমস্ত দুঃখ ভুলে তার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল নিজের মতো করে। কিন্তু একটি আংটি তার এই জীবনকে পরিবর্তন করে দেয়। ঈদের ছুটিতে সবাই যখন নিজের বাড়িতে ফিরে যায় তখন অর্পি হোস্টেলেই থেকে যায় কারণ তার যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। একা একা থাকায় মন খারাপ হয়ে যায় অর্পির। তখন হঠাৎ সেই হোস্টেলে মালিহা নামের এক নতুন বোর্ডার আসেন। তার সাথে বেশ ভালোই সময় কাটে অর্পির। সেই মালিহা আপুর কাছ থেকে সে একটি আংটি পায় এবং তিনি বলেন এই আংটি পরলে সে অতীতের অনেক কিছুই জানতে পারবে। এতটুকু পর্যন্ত সব স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ঘটনার সূত্রপাত ঘটে তখন থেকে যখন ঈদের ছুটি শেষে সবাই হোস্টেলে ফিরে। অর্পি হঠাৎ করে মালিহা আপুর কোনো খোঁজখবর পায় না। তাকে না-বলে চলে গেছেন কি না জানতে সে অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারে মালিহা নামে কেউ এখানে ছিলেনই না। তবে তিনদিন যে সে মালিহা নামের কারো সাথে ছিল সব কি তার হ্যালুসিনেশন? যদি হ্যালুসিনেশন হয় তবে তার হাতে আংটিটা এখনো রয়েছে কেন? এই আংটির মাধ্যমে সে অনেককিছু জানতে পারে। সে জানতে পারে মালিহা আপুর পরিচয়, জানতে পারে অনন্যকে, জানতে পারে এতিমখানার সেই মণি সম্পর্কে। এমনকি জানতে পারে তার নিজের পরিচয়ও। এই আংটিই তাকে অনেককিছুই জানিয়ে দেয়। কীভাবে সে এতকিছু বের করে তা জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে 'আংটি' বইটি। বইয়ের নামকরণ: শিল্পের নাম নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, "নামকে যারা নামমাত্র মনে করে, আমি তাদের দলে নেই।" অর্থাৎ শিল্পের নামের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। এই উপন্যাসে একটা আংটিই সব ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছে আবার অন্যভাবে বললে একটি আংটিই সব ধোঁয়াশা পরিস্কার করেছে। একটা আংটিকে ঘিরেই কিন্তু উপন্যাসটি রচিত হয়েছে। এই আংটির মধ্যেই রয়েছে অর্পির মনের মধ্যে জমে থাকা হাজারো প্রশ্নের উত্তর। তাই এই উপন্যাসের নাম 'আংটি' রাখাটি যৌক্তিক বলেই আমি মনে করি। প্রচ্ছদ: প্রচ্ছদ যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমি খুবই কাঁচা। আমার কাছে সব প্রচ্ছদই ভালো লাগে। তাও যদি সাধারণভাবে এই প্রচ্ছদটা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাচ্ছি একটা আংটি, তার পাশে একজন নারীর মুখচ্ছবি। আর পেছনে রয়েছে এক অশরীরী আত্মা। অতএব, উপন্যাসের অনেককিছুই এখানে ফুটে ওঠেছে। সেই রহস্যময় আংটি, একজন নারীর যে মুখচ্ছবি দেখা যাচ্ছে সে হয়তো অর্পি আর তার পিছনে অশরীরী আত্মাটা কে তা আপনারা উপন্যাস পড়েই জানতে পারবেন। তবে সবমিলিয়ে আমার কাছে প্রচ্ছদটা ভালো লেগেছে। বইয়ে পছন্দের কয়েকটি উক্তি: বইয়ের বেশ কয়েকটি উক্তি আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি উক্তি নিচে তুলে ধরলাম। ১. মানুষের কল্পনা জগৎ আর বাস্তবতার মাঝে বিস্তর ফারাক। চোখের রঙিন ভুবনে নিজের পথচলা ভাবলেও বাস্তব জীবনের প্রচুর বাঁধা, হোঁচট খেতে হয় মাঝেমধ্যেই। ২. সবার জীবনে কমবেশি ঝড় আসে। এই ঝড়কে যে শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে জানে, সে-ই সত্যিকারের আসল মানুষ। ৩. পুরো জীবনটাই একটা যুদ্ধের ময়দান। এই ময়দানে দাঁড়িয়েও জীবনকে উপভোগ করতে হয়। ৪. কেবল মন্দ দিকগুলো আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকলে বিষাদের পাল্লাই ভারী হবে। ৫. শুদ্ধ প্রেম জীবনকে পরিপূর্ণ করে তুলে আর অশুদ্ধ প্রেম জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। বই নিয়ে সমালোচনা: লেখিকার পূর্ববর্তী বইগুলোও আমি পড়েছি। পূর্ববর্তী বইয়ের চেয়ে এবারের বইটা বেশ ভালো হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। তারপরেও আরো বেশি করে শব্দ, বাক্যচয়ন ও কাহিনিবিন্যাসে মনোযোগী হতে হবে। এছাড়া যে বিষয়টা নিয়ে বলতে চাই তা হলো উপন্যাসের এক জায়গায় আমরা জানতে পারি অনন্য অর্পিকে একটা মোবাইল দিয়েছে, কিন্তু সেই মোবাইলের কথা পরে আর বলা হয় না। এরপরেও দেখা যায় অর্পির হাতে তার সেই ভাঙা মোবাইলটা। তবে কি মোবাইল দেওয়ার বিষয়টাও হ্যালুসিনেশন ছিল? না কি লেখিকা ভুলে গিয়েছিলেন এটা আমি বুঝতে পারিনি! এছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় প্রচলিত ভুল কিছু বানান লক্ষ করা যায়। নিচে কয়েকটি তুলে ধরা হলো- রিচার্জ সহ- রিচার্জ-সহ ('সহ' শব্দের সাথে সেঁটে বসে।) গ্রহন- গ্রহণ। বিল্ডিং এ- বিল্ডিংয়ে/বিল্ডিং-এ ভূতুড়ে- ভুতুড়ে। ফল সহ- ফল-সহ অথৈ এর- অথৈ-এর কপাল পড়ে থাকা- কপালে পড়ে থাকা। দূর্ঘটনায়- দুর্ঘটনায়। পুনশ্চ: চলছে অমর একুশে বইমেলা। বইমেলায় গিয়ে এশিয়া পাবলিকেশনে পেয়ে যাবে সুলতানা ইসলাম ছন্দা আপুর 'আংটি' বইটি। পড়ে দেখতে পারেন এই মিস্ট্রি থ্রিলার বইটি। আশা করি ভালো লাগবে।