User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#বই_রিভিউ পান্থনিবাস: এক নিপুণ সাহিত্যকর্মের পর্যালোচনা ▪️বই: পান্থনিবাস ▪️লেখক: আহমেদ যুবায়ের ▪️প্রচ্ছদশিল্পী: পরাগ ওয়াহিদ ▪️প্রকাশনী: দূরবীণ ▪️প্রকাশকাল: অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ বইয়ের উৎসর্গ: লেখক বইটি উৎসর্গ করেছেন তার আদরের উমাইজা এবং ভালোবাসার গোল্লা-কে। লেখক পরিচিতি: আহমেদ যুবায়েরের জন্ম নওগাঁয়, অক্টোবরের দুই তারিখে। বেড়ে উঠা ঢাকায় হলেও বাবার চাকরির সুবাদে শৈশবের কিছু সময় কেটেছে যশোরে। বই পড়ার প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকেই তার লেখালেখির শুরু। যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর শেষ করে তিনি বর্তমানে সেখানেই কর্মরত। গল্পের সারসংক্ষেপ: এক পুরনো বাড়ি, নাম ‘পান্থনিবাস’ এবং এর বাসিন্দাদের জীবনের কাহিনি নিয়ে রচিত একটি উপন্যাস। পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গার কূলেই অবস্থিত পান্থনিবাসের অবস্থান। বাড়িটির দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন খালেক মুন্সী নামক এক ব্যক্তি, যিনি এই উপন্যাসের অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র। যে একসময় সহায়-সম্বলহীন ছিলেন তাকে গণি সাহেবের অশেষ কৃপায় পান্থনিবাসে ঠাঁই পেয়েছিলেন। খালেক মুন্সীর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করেছেন এই বাড়িতে। দুই সন্তান সেঁজুতি ও অপালা এবং স্ত্রী জাহানারা বেগমকে নিয়েই তার ছোট্ট সংসার। তার বড় মেয়ে সেঁজুতির জীবনের ঘটনাপ্রবাহও গল্পের মূল সুর গড়ে তুলেছে। আনিস নামে এক যুবকের আগমনে পান্থনিবাসে এক অন্য রকম পরিবেশ তৈরি করে। দু'তলা বিশিষ্ট বাড়িটির প্রকৃত মালিক গণি সাহেব নন, কিন্তু বাড়িটির দায়িত্বভার তার উপরই দেওয়া হয়েছিল। একটা পর্যায়ে গনি সাহেব এই বাড়িতে নতুন ভাড়াটিয়া হিসেবে নিমাই চক্রবর্তীকে নিয়ে আসেন, যিনি জমিজমার দলিলপত্র লিখে দেন। নিমাই চক্রবর্তীর সঙ্গে খালেক মুন্সীর সম্পর্কের জটিলতা এবং বাড়ির কেয়ারটেকার কাদেরের সঙ্গে তার সম্পর্কের উত্থান-পতন গল্পকে জীবন্ত করে তোলে। ইতিপূর্বে উল্লেখিত গল্পের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো আনিস, যে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায়, একসময় সে পুলিশের সন্দেহভাজন হয়ে ওঠে এবং রহস্যময়ভাবে গুম হয়ে যায়। যা কিনা তার খনিকের বন্ধু লোকমান হাকিমের দ্বারাই ঘটেছিল। যিনি একসময় ইংরেজ সরকারের হয়ে কাজ করতেন। গল্পে ব্রিটিশ শাসন শেষে পাকিস্তান গঠনের প্রেক্ষাপটও উঠে এসেছে। গল্পের মাঝে একটা পর্যায়ে মনে হবে সেঁজুতি ও আনিসের মধ্যে প্রেমের ঘাণ পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত তা সত্যি হয়নি। গল্পের শেষে সেঁজুতির কণ্ঠে ভেসে আসে এক করুণ গান—‘ভ্রমর কইয়ো গিয়া শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে...। এই গান যেন গল্পের সমাপ্তিকে আরও হৃদয়স্পর্শী করে তোলে। মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ: ‘পান্থনিবাস’ মূলত সমকালীন জীবন ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে এক সুদৃঢ় আঙ্গিকে প্রকাশ করেছে। লেখক আহমেদ যুবায়েরের বর্ণনাশৈলী অত্যন্ত সংবেদনশীল ও দৃশ্যমান, যা পাঠককে চরিত্রগুলোর অনুভূতি গভীরভাবে অনুধাবন করতে সহায়তা করে। চরিত্রগুলোর জটিলতা এবং বাস্তবধর্মী উপস্থাপন পাঠককে আবেগে আচ্ছন্ন করে রাখে। গল্পে সমাজ, রাজনীতি এবং পারিবারিক টানাপোড়েনের একটি অনন্য সংমিশ্রণ রয়েছে। চরিত্রগুলোর দ্বন্দ্ব, সংকট এবং মানবিক সম্পর্কের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ গল্পটিকে আরও গভীরতা দিয়েছে। বিশেষত, গল্পের শেষাংশে সেঁজুতির কান্না এবং তার হৃদয়ভাঙা গান পাঠকের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। পাঠপ্রতিক্রিয়া: লেখক এত সুন্দরভাবে উপন্যাসের কাহিনি ও উপকাহিনি বিন্যস্ত করেছেন যে তা এক কথায় অনবদ্য। প্রতিটি অধ্যায় পরিপাটি গাঁথুনিতে সাজানো, যা পাঠককে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত টেনে রাখে। উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ এত নিখুঁতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যে পাঠক সহজেই তাদের অনুভূতির সঙ্গে একাত্ম হতে পারে। পান্থনিবাসের প্রতিটি ঘটনার বিবরণ এত বাস্তবসম্মত যে মনে হয় যেন তা চোখের সামনে ঘটছে। সবল ভাষাশৈলী, সুচারু বর্ণনা ও নিখুঁত শব্দচয়ন গল্পটিকে আরও উপভোগ্য করে তুলেছে। বিশেষ করে, খালেক মুন্সী ও কাদেরের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল। এছাড়াও, পুরো গল্পজুড়ে সাহিত্যরস গভীরভাবে প্রবাহিত হয়েছে। প্রোডাকশন ও প্রচ্ছদ যথেষ্ট ভালো লাগলেও বানানে কিছু ভুল চোখে পড়েছে, যা সামান্য অসুবিধা সৃষ্টি করলেও কাহিনির আকর্ষণ কমাতে পারেনি। উপসংহার: ‘পান্থনিবাস’ কেবল একটি গল্প নয়, এটি জীবনের নানা বাঁক ও বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। এটি অতীতের এক টুকরো ছবি, যেখানে বেঁচে থাকার সংগ্রাম, সামাজিক পরিবর্তন এবং মানবিক সম্পর্কের গভীরতা ফুটে উঠেছে। আহমেদ যুবায়েরের নিপুণ লেখনী এই বইকে পাঠকের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে দিতে সক্ষম। যারা সমকালীন প্রেক্ষাপটে রচিত সাহিত্য পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি অবশ্যপাঠ্য বই। ব্যক্তিগত রেটিং: ৪.৫/৫ রিভিউ দাতা: নুরুজ্জামান হোসাইন হ্যাপি রিডিং।