User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
গাছপালায় আচ্ছাদিত সাধারণ মানুষের শান্তির নীড় রসুলপুর গ্রাম। খেটে খাওয়া মানুষ দুই বেলা মুখে অন্ন জুটলে তারা খুশি চাহিদা তাদের সীমিত। শান্তিপূর্ণ জীবনে হঠাৎ যেন কালবৈশাখী ঝড়ে মতো আসলো পাকিস্তানি বাহিনী। চারদিকে যেন আগুন -আগুন খেলা। পুড়ছে ঘর, পুড়ছে সংসার। পুড়ছে জীবন, পুড়ছে স্বপ্ন। রাজাকারের সহযোগিতায় তারা শ'য়ে শ'য়ে মারছে মানুষ। কিন্তু ইয়াহিয়া বুঝতে পারেনি যেই মানুষগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাঠিয়েছেন সেগুলো মানুষ নয়, বারুদ! তাদের চিহ্নি মুছে দেওয়া সহজ নয়। আমরা যদি কখনো হারিয়ে যায় তুমি দাড়িওয়ালা কাউকে বাবা ডেকে নিও। দাড়িওয়ালা মানুষেরা ভালো হোন। ছোট একটা শিশু সব হারিয়ে একা। তখন যেন দাড়িওয়ালা মানুষ টা তার নতুন করে বাঁচার শক্তি। আকাশ বিশাল। কোথা না কোথাও যেন মাথা রাখার ঠাঁই হয়।খুকুকে তিনি পেয়েছিলেন রাস্তায়! মানুষ হারায় মেলায়, খুকু হারিয়েছিলেন পথে। পথের একটি মেয়েকে এনে তিনি কলিজায় ঠাঁই দিয়েছেন। ফ্ল্যাপ থেকেঃ রমিজউদ্দিনকে ধরে আনা হয়েছে। ধরে এনেছেন খোদ ক্যাপ্টেন ইমরান। তিনি পাক আর্মির বাঙ্কারে হাতলওয়ালা চেয়ারে বসে আছেন। জয়নবুন্নেছা নৌকা নিয়ে রওনা হয়েছেন। পথিমধ্যে দুই খালের পানির ঘূর্ণিতে নৌকা আটকে আছে। রমিজউদ্দিনের চোখের কোণেও হালকা পানি। কাল সকালে তাকে ফায়ার করা হবে। হয়তো কঠিন আযাবের মত্যু শেষে তার দেহ থুথুর জন্য জনসম্মুখে রাখা হবে। হয়তো তার কবরে লেখা রইবে, ইধার শো রাহা হ্যাঁ এক গাদ্দার! হোক। তার ধর্ম ন্যায়ের ধর্ম। এটাই তার ধর্মের নীতি। মজলুমকে সাহায্য করা, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, এই হিম্মতগুলো লাগে। নাহলে পরকালে মহান রব আল্লাহর কাছে আমরা কী জবাব দেবো? ইসলাম শান্তির ধর্ম, যুদ্ধের ধর্ম নয়। যারা যুদ্ধের খাতিরে, জমির খাতিরে ইসলামকে ব্যবহার করে চলে তারা কখনো খাঁটি মুসলমান নয়। অত্যাচারীর বিরুদ্ধে মজলুমের জয় একদিন নিশ্চিত ইনশাআল্লাহ। রমিজউদ্দিনের চোখের সামনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। সেখানে তিনি খুকু এবং কবিরকে দেখছেন। আর গাইছেন, বিজয় নিশান উড়ছে ঐ উড়ছে ঐ, উড়ছে ঐ। তার কণ্ঠ ম্রিয় থেকে ম্রিয়মাণ হয়। চরিত্র বিশ্লেষণঃ গল্পের অন্যতম প্রধান তিনটি চরিত্র হচ্ছে রমিজউদ্দিন, খুকু, কবির । তিনটি চরিত্রের সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য ছিলো সবটা গল্পজুড়ে। তিনটি চরিত্র তাদের অবস্থান থেকে ঠিকঠাক ছিলো এবং সব জায়গায় সমানভাবে আবর্তিত হয়েছে। রমিজউদ্দিন মুয়াযযিন আবার পিতার চরিত্রে। খুকু মেয়ের চরিত্রে কবির সাহসী মনোভাব চরিত্রকেই সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।এই চরিত্রগুলো ছাড়াও আরো কিছু চরিত্র রয়েছে যেমন - আনোয়ার শিকদার , ইকরাম, জসিম, পারভীন বেগম, শ্যামা জাদশেদ ইত্যাদি চরিত্র। প্রতিটি চরিত্রকেই নিজ নিজ জায়গায় যথার্থভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ মুয়াযযিন বইটি রচিত হয়েছে একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাহিনীর প্রেক্ষাপটে যেখানে গল্প তুলে ধরা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার খন্ড চিত্র পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচারের বর্বতার কাহিনী। এই গল্পে আরো ফুটে ওঠেছে জন্ম না দিলেএকজন ভালো বাবা হওয়া যায়। তরুণ দের সাহসীকতা মনোভাব দেশ স্বাধীন করতে যেন তারা প্রাণ দিতে ও প্রস্তুত। মুয়াযযিন যেন এক জটিল চরিত্র একদিকে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করলেন অন্য কে রিফুজিদের ও তিনি সহযোগিতা করলেন। তবে শেষ পর্যন্ত রমিজউদ্দিন কে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো হয়তো শাস্তি স্বরূপ ফায়ার করে মেরে ফেলা হবে তার পরিণতি দেখে মনে হয়েছে এমনটা না হলেও পারত। তবে এটাই গল্পের নিয়ম এবং এমনভাবে সমাপ্ত হয়েছে বলেই বোধহয় পড়ার পর রেশ রয়ে গেছে। পুরোটা গল্পই উপভোগ করেছি। কিছুটা মন খারাপ ও হয়ছে।সর্বোপরি ভালোই লেগেছে গল্পটা। কাহিনী সুন্দর ছিলো। পছন্দের উক্তিঃ "আকাশ বিশাল। সৃষ্টিকর্তার থাকার জায়গা। বিশাল জায়গায় থেকে তিনি মানুষের সংকীর্ণ কার্যকলাপ দেখেন।" বইটি কেন পড়বেনঃ কিছু ইতিহাস কিছু ঘটনা বারবার আমাদের বিবেক কে নাড়া দেয়। কিছু ইতিহাস আমাদের বারবার আমাদের পুরানো কথা মনে করিয়ে দেয়। কাহিনী আমাদের অনুধাবন করতে শেখাই। মুয়াযযিন মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা। শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত প্রচুর আগ্রহ নিয়ে শেষ করলাম। কোন রকম বিরক্তি আসেনি। যারা মুক্তিযোদ্ধ সম্পর্কে লেখা পড়তে পছন্দ করেন আমি বলবো এই বইটা আপনার প্রচণ্ড ভালো লাগবে। প্রচ্ছদ, প্রোডাকশনঃ প্রচ্ছদ টি দেখলে প্রথমে চোখে ভাসে সবুজ শ্যামলে আচ্ছাদিত একটা বাড়ির উঠানে একজন দাঁড়িটুপি ওয়া মুয়াযযিন কোরআন বুক জড়িয়ে মাথা ঝুঁকে বসে আছেন। সম্পূর্ণ বইটা তে কোন ভুল বানান চোখে পড়েনি। শুদ্ধ সাবলীল ভাষায় লেখা। কোথাও অসামঞ্জস্যতা চোখ পড়েনি। প্রোডাকশন ও ভালো । সর্বশেষঃ মুয়াযযিন গল্পে হয়তো সর্বশেষ মুয়াযযিনের চোখের সামনে ভেসে উঠবে নিজের দেশের মানুষের সাথে স্বার্থপরতা দেশের মানুষের সাথে বেঈমানি করার দৃশ্য। ফ্লাপ পড়াকালীন জেনেছি যাদের জন্য মুয়াযযিন নিজের দেশের মানুষের সাথে বেঈমানি করছে তারাই তাকে ধরে নিয়ে এসেছে । হয়তো ফায়ার করে মেরে ফেলবে। গল্পটা কিছু আক্ষেপ নিয়ে শেষ করলাম। কিছু জানার জন্য মনটা যেন ব্যাকুল হয়ে আছে খুকুরা কি তাদের গন্তব্য পৌঁছাতে পেরেছে। জুয়নবুন্নেছাপোঁছাতে পেরেছে স্বামীর কাছে। কিছু জানার আক্ষেপ যেন তার সৌন্দর্য কে বাড়িয়ে দেয়। মুয়াযযিন যেন তার ইতি টানলো আক্ষেপ নিয়ে। লেখক পরিচিতিঃ মানুষ বাঁচে তার কর্ম বা গুণে। কিছু ব্যক্তি থাকে তাদের কাজের মাধ্যমে আমরা তাদের চিনি। লেখকের পরিচয় ফুটে উঠে তার লেখনীতে। লেখক তার লেখনীর মাধ্যমেই জায়গা করে নেই হাজার হাজার পাঠকের অন্তরে। লেখকের আলাদা করে পিরিচিতি দিতে হয় তার তৈরি সৃষ্টি তিনি ফুটে উঠেন। বই পরিচিতিঃ বইঃ মুয়াযযিন লেখকঃ তানজিম তানিম উর্দু সংলাপঃ জুয়েল রানা প্রকাশনীঃ বইবাজার প্রকাশকঃ সৈয়দ রবিউজ্জামান (রেটিংঃ ৪.২\৫)