User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা #অক্টোবর : ১৮ বই : ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল লেখক : চিত্রা দেব মূল্য : ৪৫০ টাকা পৃষ্ঠা : ৪৪৭ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠাকুরমা দিগম্বরী দেবী ছিলেন ভয়ানক রাগী মহিলা। কঠিন হাতে তিনি নিয়ন্ত্রন করতেন পুরো ঠাকুর বাড়িকে। ঠাকুর বাড়ির অন্দরমহলের কর্ত্রী তিনি। পুজো কার্যে তার জুড়ি মেলা ভার। ভগবানের উপর তার অগাধ বিশ্বাস। এর মধ্যেই ঘটে গেল এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। তার স্বামী অর্থাৎ রবি ঠাকুরের ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ধর্ম কার্য ভুলতে শুরু করলেন। মিশতে লাগলেন ইংরেজদের সাথে। তাদের সাথে ভোগ বিলাস আর আনন্দে জীবন কাটাতে লাগলেন। সে কথা দিগম্বরী দেবীর কানে যেতে বেশি সময় লাগল না। তিনি স্বচক্ষে দেখার জন্য এমন এক কান্ড করে বসলেন, যা ঠাকুরবাড়ি তে আগে কেউ কখনো করেননি। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর তখন অন্য স্থানে বাগান বাড়ি কিনেছেন। সেখানেই তার দিন রাত কাটে। প্রতি রাতেই পার্টি হয় সেখানে। যেই বাড়ির মেয়েদের গঙ্গা স্নানের ইচ্ছে হলে পালকি সুদ্ধ নদীতে চুবিয়ে আনা হয়, সেই বাড়িরই দিগম্বরী দেবী একদম চৌকাঠ পেরিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। গেলেন প্রিন্স দ্বারকানাথের বাগান বাড়িতে। সে সময় সেখানে পার্টি চলছিল। নৈশ ভোজে মুসলমান বার্বুচী খাবার পরিবেশন করছে, খ্রিষ্টান ব্যাক্তিদের সাথে এক টেবিলে বসে খাচ্ছে দ্বারকানাথ ঠাকুর। দিগম্বরী দেবীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। আর সহ্য করতে পারলেন না। নারী হয়েও তিনি ভিষণ এক সিদ্ধান্ত নিলেন। পুরোহিত ও ধর্মীয় বিশিষ্ট জনদের ডেকে পাঠালেন। বললেন, কিভাবে এই পাপ লাঘব করা যায়? ধর্মীয় নীতি ভেঙে এই জীবন যাপন তিনি সহ্য করবেন না। নিজের মহাপাপ হতে তিনি দিবেন না। সকলে পরামর্শ দিল, স্বামী সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। দিগম্বরী দেবী তাই করলেন। ঘরদোর, বিছানা পত্র আলাদা করলেন, তার সাথে সহবাস ত্যাগ করলেন। তবে স্বামী সেবা শুশ্রূষার ব্যবস্থা করতে তার কোন ত্রুটি ছিল না। কিন্তু নিজে তার সামনে যেতেন না। একলা নারী, স্বামী ছাড়া চলবেনই বা কিভাবে? স্বামী কে কোন না কোন কাজে তো দরকার। সংসারের একান্ত দরকারে যদিও স্বামীর সাথে কথা বলতেন, তবে সাথে সাথে সাত বার গঙ্গা জল দিয়ে স্নান করতেন শুদ্ধ হওয়ার জন্য। কি অদ্ভুত না? এই জাঁদরেল নারীরই পুত্রবধূ হয়ে আসেন সারদা দেবী। দিগম্বরী দেবী নিজ হাতে গড়ে তুলেছিলেন তাকে। কিন্তু কেমন ছিল সারদা দেবী? কেমনই বা ছিল তার সংসার? তিনি কি হতে পেরেছিলেন শাশুড়ির মত? কাদম্বরী দেবী কেমন ছিল তা কি জানা আছে? এই ঠাকুরবাড়ি থেকেই উত্থান ঘটে আধুনিকতার কিন্তু কিভাবে? জানতে হলে পড়ে ফেলুন চিত্রা দেবের ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল। পাঠ প্রতিক্রিয়া : রবীন্দ্রনাথের সাথে প্রেম আমার বেশি দিনের নয়। শরৎ, তারাশঙ্কর,বিভূতিভূষণ, জহির রায়হান, আমার বেশ প্রিয় হলেও, রবীন্দ্রনাথের লেখনীশৈলী কেমন যেন কঠিনবোধ হত। এই রকমই রবীন্দ্র গদ্যের এক ক্লাসে ম্যাডামের সামনে বেফাঁস বলে ফেললাম, রবীন্দ্রনাথ আমাকে টানে না। ম্যাডাম সেদিন পুরো ক্লাসের সামনে ভৎসনা করে বললেন, সেটা তোমার ব্যর্থতা। রবীন্দ্রনাথের নয়। লজ্জা পেয়েছিলাম খুব। সেদিন বাসায় এসেই টেনে নিয়ে বসলাম রবীন্দ্র সমগ্র। জোর করে পড়তে গিয়ে এক সময় তলিয়ে গেলাম। হুড়মুড় করে পড়ে গেলাম রবীর প্রেমে। প্রেমে পড়লে প্রেমিক মানুষটির প্রতি জানার আগ্রহ বেড়ে যায়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো। মনে হলো, ঠাকুর বাড়ি সম্পর্কে জানা দরকার। কিন্তু অথেনটিক বই কোথায় পাই? সবই তো সত্য- অসত্যের মিশেল। এইবার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো। ভাগ্যই বটে। একটি প্রতিযোগিতায় গল্প লেখায় সেরা হওয়ার সুবাদে পুরস্কার পেলাম। মোড়ক খুলে দেখি বেশ কয়েকটি বইয়ের সাথে ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল। চিত্রা দেবের পুরোপুরি অথেনটিক গ্রন্থ। কোন মিথ্যে নেই। তিনি ঠাকুরবাড়ির বর্তমান উত্তরাধিকারীদের সাক্ষাৎকার থেকেই লিখেছেন বইটি। তৎকালীন পেপার পত্রিকা থেকে খবরাখবর নিয়েছেন। একসময় ঠাকুরবাড়ি ছিল রহস্যে মোড়া। পুরো কলকাতার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু কেউ তাদের ভেতরের কথা জানতে পারত না। বইটি পড়তে গিয়ে সেই ঠাকুরবাড়ির অন্দরে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম আমি। সুন্দরী, শিক্ষিকা, চৌকস জ্ঞানদানন্দিনী, শিক্ষিকা স্বর্ণকুমারী, কবি বিহারীলালের আগ্রহের মূলে থাকা রবি ঠাকুরের নতুন বৌঠান, ছোট ভবতারিণী। তার বড় হয়ে ওঠা, অন্দরের পালা পার্বণ আর অনন্দ উৎসবে মিশে গিয়ে কখন যে নিজেকেই নিজে ঠাকুরবাড়ির সদস্য ভাবতে বসে গেছি, খেয়ালই নেই। ঘোর ভাঙল বই শেষ করার পর। চিত্রা দেবের লেখনীর সৌন্দর্যও অতুলনীয়। যারা পড়েননি, পড়ে ফেলুন। নিশ্চিত মুগ্ধ হবেন।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা নাম: ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল লেখিকা: চিত্রা দেব প্রকাশনা: আনন্দ পাবলিশার্স মূল্য: ৭২০৳(হার্ড কভার) লেখক পরিচিতি: নাম দেখেই আমি কি নিয়ে রিভিউ লিখেছি তা পাঠক নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন।হ্যাঁ,আমি ঠাকুরবাড়ির সে সকল নায়িকাদের নিয়ে লিখছি যাঁরা বাংলা সাহিত্য,সংস্কৃতিকে আমূল বদলে দিতে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। বইয়ের বর্ণনা দেওয়ার আগে লেখিকা সম্পর্কে একটু বলে নিচ্ছি: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য এম.এ এবং পি.এইচ.ডি করা এই লেখিকার প্রিয় গবেষণার বিষয় বাংলা সাহিত্যে ও সংস্কৃতিতে নারীদের ভূমিকা।তারই পছন্দের ফলাফল আজকের গবেষণামূলক প্রবন্ধ "ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল"। ফ্ল্যাপে লিখা কথা: পশ্চিম দিগন্তের একটুখানি আলো এসে পড়ল পুবের আকাশে। সেই নবজাগরণ ।তার আকস্মিক সম্পাতে যখন অনেকে দিগভ্রান্ত, কেউ পথচ্যুত কিংবা বিদ্রোহী, তখন প্রথম উষার সবটুকু উষ্ণতা গ্রহণ করে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি যেন সারা দেশের ঘুম ভাঙাবার ভার নিয়েছিল। নবজাগরণের সেই পর্বে নারীজাগৃতির যে আয়োজন শুরু হয়েছিল, এই বাড়ির মহিলারা সেই কাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। সামাজিক বিধিনিষেধ আর ঘেরাটোপের রহস্য ছিন্ন করে তাঁরা ঘরের সহসা ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন। অন্ধকার ঘরে সহসা প্রদীপ জ্বলে ওঠার মতো তাঁদের সেই আত্নপ্রকাশ আজও অবিশ্বাস্য। স্মৃতি-বিস্মৃতির অন্তরালে লুকিয়ে থাকা ঠাকুরবাড়ির সেইসব অঙ্গনাদের গৌরবময় ভূমিকা কখনওই হারিয়ে যাওয়ার নয়। চিত্রা সেব এই গ্রন্থে ঠাকুরবাড়ির ভিতরমহলে আলো ফেলে উদ্ভাসিত করেছেন সেদিনের চমকপ্রদ ইতিহাস। ইতিমধ্যে বিপুল জনপ্রিয় এই গ্রন্থ এবার আরও পরিবর্ধিত কলেবরে, আরও চিত্র সমাহারে। ঠাকুরবাড়ির অন্তঃপুরের এমন অন্তর্মুখী কথা এর আগে আর লেখা হয়নি। বই পরিচিতি : বইটি শুরুর কিছু লাইন-" ভোরের আলো আকাশের সীমা ছাড়িয়ে সবে নেমে এসে পড়েছে বাড়ির ছাদে,অন্ধকারের আবছা ওড়নাটা তখনও একেবারে সরে যায়নি,এমন সময় শিশিরভেজা ঘাস মাড়িয়ে রুক্ষ পথের বুকে এসে নামে দুটো আরবি ঘোড়া।সদর ছাড়িয়ে জোর কদমে এগিয়ে চলে গড়ের মাঠের দিকে।দারোয়ান কাজ ভুলে যায়।প্রতিবেশীরা হতভম্ব।" ঐ দুটো আরবি ঘোড়ার একটিতে ছিলেন এক আরোহিনী।সেই আরোহিনীই ছিলেন কাদম্বরী দেবী,রবীন্দ্রনাথের নতুন বৌঠান। প্রথম ঊষার সবটুকু লালিমা নিজের গায়ে মেখে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িই সারা দেশের ঘুম ভাঙাবার দ্বায়িত্ব নিয়েছিল।এই ঘটনাটি ছোট্ট একটি নজির মাত্র। এমন আরো অনেক ছোট বড় ঘটনাবলী নিয়ে এই বইটি রচিত। আমরা তো সবাই জানি যে রবীন্দ্রনাথের সূর্য হয়ে উঠার পিছনে কাদম্বরী নামক নক্ষত্রের অনেক বড় ভূমিকা ছিল।যেমন-কাদম্বরী বলেছিলেন," কোনোকালে বিহারী চক্রবর্তীর মতো লিখতে পারবে না।" এই এক উপহাস রবীন্দ্রনাথের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।কেন এই উপহাস,কেন এই ছলনা?তা সুন্দর করে গুছিয়ে দেওয়া আছে চিত্রা দেবের এই বইটিতে। রবী আর কাদম্বরী এই দুইজনে মিলে যে গান,কবিতা,রাগের যে সম্ভার ঘটিয়েছিলেন তাও আমরা কতটুকুই বা জানি? কয়জনই আমরা জ্ঞানদানন্দিনী বা স্বর্ণকুমারী দেবী বা প্রজ্ঞাকে জানি?স্বর্ণকুমারি দেবী যে অজস্র নাটক,গান,প্রহসনের স্রষ্টা ছাড়াও ফার্ণ-পর্ণীতরু,ইউনিভার্স-বিশ্বাকাশ এমন আরো অনেক পরিভাষার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন তাও আমাদের অনেকের অজানা। অথবা প্রথম রান্নার বই যে এই ঠাকুরবাড়ির মেয়ে প্রজ্ঞা লিখেছিলেন তাও বা আমরা কয়জন জানি?বাখরা অর্থ পাপড়ি বা ছুঁকা অর্থ ফোড়ন দেওয়া এই সব শব্দ যে প্রজ্ঞারই সৃষ্টি। রবীন্দ্রনাথের জীবনে মৃণালিনীর কি বা কতটুকু ভূমিকা অথবা তাঁদের বৈবাহিত সম্পর্ক কেমন ছিল তা লেখিকা পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে এবং কিছু চিঠি অন্তর্ভুক্ত করে আমাদের কৌতুহল মিটানোর চেষ্টা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ বা অন্য পুরুষ সদস্যরা ছাড়াও আমরা সাহিত্য বা সংস্কৃতিতে ঠাকুরবাড়ি নারী সদস্যদের কাছে কতটা ঋণী তা লেখিকা বিস্তারিত প্রমাণের সহিত তুলে ধরেছেন। বইয়ের শেষের অংশে মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদুর সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের বংশ লতিকা দেওয়া আছে,ফলে পাঠকের এক নজরে অনেক কিছু জানা হবে। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ বইয়ের আর কি প্রতিক্রিয়া দিব!!বই পড়েই তো আমার মাথা ঘুরছিল।এতো বড় বংশ আর এতো অজানা তথ্য!! এই বইয়ের রিভিউ লেখা অনেক কঠিন কাজ।আমি যা লিখলাম তা হয়তো কিছুই হয়নি,কিন্তু চেষ্টা করেছি মাত্র যাতে পাঠকের মনে বইটা পড়ার আগ্রহ জন্মে। সত্যি বলতে কি,এতো তথ্যবহুল বই লেখার জন্য লেখিকাকে অভিনন্দন না জানিয়ে উপায় নেই। সকল কৌতুহলী পাঠককে এই অসাধারণ বইটি পড়ার আমন্ত্রণ রইল।