User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
'রংমহল ' বইটি লেখিকার অনবদ্য এক সৃষ্টি ।
Was this review helpful to you?
or
রংমহল • আফিফা পারভীন Among the broadswords of literary iron I wander like a foreign sailor, who does not know the streets, or their angles, and who sings because that's how it is, because if not for that what else is there? --------------Pablo Neruda. অনুভূতির পালে সত্যি হাওয়া লেগেছে, মুগ্ধ হয়ে পড়ে গেছি, ছুটে বেড়িয়েছি এক একটা শব্দে শেষ অবধি একই মুগ্ধতায়। এতো হৃদয়স্পর্শী অনুভূতিদের নিজের মাঝে দমিয়ে রাখাটা খুব অন্যায় হয়ে যাবে তাই চলুন আপনাদেরও নিমন্ত্রণ করতে এলাম মনকে আবিষ্ট করতে নিসর্গের এক চিরন্তন কথাশিল্পের মুগ্ধতায়। ◾সমারম্ভঃ গিয়েছেন কখনো সিলেটের সুনামগঞ্জে? থেকেছেন কখনো হাওরের বজরায়? বা আপনার বাড়ি কি সিলেটে আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে সিলেটের হাওর, জলে দাপিয়ে হয়তো বড় হয়েছেন আপনি। কিন্তু জানেন কি আজ এমন একটা বইয়ের কথা বলবো যা পড়লে আপনার প্রকৃতি দেখার দৃষ্টিটা বদলে যাবে বা বলা যায় চেনা পৃথিবী নতুন রূপে ধরা দিবে আপনার চোখে। এখন আপনি যদি সেখানে ঘুরে আসা কোন পর্যটক হন তো হয়তো ভাববেন এভাবে কেন আগে দেখলাম না? সৃষ্টিশীল লেখিকা আফিফা পারভীন কথা দিয়ে ছবি এঁকেছেন যে বইটাতে তার নাম হচ্ছে রংমহল। ◾ফ্ল্যাপঃ রংমহল হাওরের শতবর্ষী এক জমিদার বাড়ি। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে অনন্য সুনামগঞ্জে যার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জমিদার শাফায়াত আলী খান। কাগজপত্রে জমিদার না হয়েও হাওরের মানুষদের কাছে যার পরিবার জমিদার হিসেবে সমাদৃত হয় আজও। অনেক মানুষের, হরেক রকম অনুভূতির এক বর্ণাঢ্য আখ্যান এই উপন্যাস। ▪️আচ্ছা বিধাতা যে পরিবারের তালিকাভুক্ত করে পাঠান, সেখানে কি সবার হৃদয়ই ছোঁয়া যায়? নিজের সবটা বিলিয়েও কি রংমহলের মেজো জমিদার শেহজাদ পেরেছিল সবার হৃদয় জয় করতে? পাশাপাশি থেকেও হৃদয়ের কাছাকাছি ক'জনই বা যেতে পারে? জমিদার শরাফত আলী খান- হামিদা খানম কিংবা মাঈনুল হোসেন - শালিনী রেহমান ও কি পেরেছিলেন একে অপরের একান্ত কাছের মানুষটি হয়ে উঠতে? লাল লাহুর শক্ত বন্ধনের দোহাই দিয়ে একজন মায়ের হাসিমুখের মিথ্যে শঠ্তাই কি সব? নাকি সময়ের বাঁকে অসময়ে পরিচয় ঘটা রমিজ উদ্দিনের মতো কিছু না হয়েও একান্ত সুহৃদ হয়ে ওঠা কেউরা, নির্ভরতা আর ভরসায় এগিয়ে যাওয়ার যে পথ দেখায় সেখানেই বিশ্বাসের ভিত্তি? আবার অনাকাংখিত, দ্বিধার সম্পর্কে জড়িয়ে কে, কার বা কেন এই ছুটে চলা এ ভাবনায় বুঁদ হয়ে ঠিক কাকে খুঁজছে দিশেহারা মধুমিতা ? অনুভবে যে অজানা সুখের অনুরণন হচ্ছে সেখানে যে শুধু শেহজাদের ভালোবাসারই বিচরণ তাকি সত্যিই বুঝতে পারছেনা মধু? অভিশপ্ত রাজপুত্রের গল্পের সুখের সমাপ্তি টাকি রাজকন্যা করবে শেষ পর্যন্ত? এর উত্তর মিলবে আপনাদের রংমহলে। ◾ অনুভূতির ব্যবচ্ছেদঃ ▪️উপন্যাসের প্রতিটি পাতায় পাতায় যেসব ঘটনা বর্ণিত হয়েছে তার বেশির ভাগই খুব সাধারণ। পুরো উপন্যাসটি ছিলো সামাজিকতার মোড়কে জড়ানো। অথচ এর মাঝেই এক স্বপ্নালু বিমূর্ততা ও রোমান্টিক ভাবাবেগময় নৈসর্গিক অন্তর্জাল মূর্ত হয়ে ওঠেছে। প্রকৃতি ও জীবনের বর্ণনায় সংযোজিত হয়েছে যাপিত জীবনে টানাপোড়েন। বইটা পড়লেই এক জীবন্ত চলচ্চিত্র যেন চোখের সামনে ভেসে চলে। উপন্যাসে ছোট বড় অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে একের পর এক। একটি ঘটনার পর আরেকটি ঘটনা ঘটার মধ্যে সাহিত্যের পরিভাষায় যাকে উল্লম্ফন বলে, তার চমৎকার ভারসাম্য বজায় রাখতে দেখা গেছে। চরিত্রগুলো যখন পরপর সংলাপ বিনিময় করছে তখন তাদের পারিপার্শ্বিক আবহ, চোখের চাহনি, মুখের ভঙ্গিমা, আবেগের উচ্ছলতা, দুঃখের বিষণ্ণতা, ক্রোধের উন্মত্ততা কীভাবে ক্রিয়াশীল থেকেছে সে-সম্পর্কে লেখিকার বিবরণ, বিশ্লেষণ এবং বিশদ মন্তব্য, সংলাপ গুলোকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। ▪️লেখিকার চমৎকার মুনশিয়ানায় স্পর্শযোগ্য নব্য ও বাস্তব এক আরশি পেয়েছি যেন। যার মাঝে তিনি আপন অভিজ্ঞতার সারাৎসারই নয়, জগতে ভেসে চলা মানবীয় প্রেম, অনন্য সহমর্মিতার আলোক দিশা বইটির পরতে পরতে ছড়িয়ে দিয়েছেন। ◾চরিত্র কথনঃ শেহজাদ-মধুমিতা- হামিদা খানম- শাহাদাত- জোছনা সহ আরও অসংখ্য চরিত্র এক এক করে এসে হাজির হতে থাকে কাহিনির বাঁকে বাঁকে। কোনো চরিত্র দু-একবার উঁকি দিয়েই মিলিয়ে গিয়েছে , কোনো চরিত্র কিছুটা পথ চলার পর অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। তবে কারও ভূমিকাই অপ্রাসঙ্গিক ছিল না। একই সাথে প্রাসঙ্গিক এবং অনিবার্যভাবেই আরো কিছু আপাতবিচ্ছিন্ন ঘটনা সংযুক্ত হয়ে উপন্যাসের বৃত্ত- পরিধিকে বিস্তৃত করেছে। ◾শুরু থেকে শেষ অবধি টিকে থাকা মুগ্ধতারাঃ ▪️এখানকার হু হু করে বয়ে যাওয়া লিলুয়া বাতাস রক্তের মাঝে বিবাগী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগায়, বুকের মাঝে অকারণ হাহাকার তৈরি করে। দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশির হাওর, স্বচ্ছ সুনীল জলের লেক আর ছোট বড় নদী যেন জালের মতো বিছিয়ে আছে সর্বত্র। সেই জোলো হাওয়ায় ও ভেজা ভেজা রোদে মিশে আছে ঘর ছাড়ার নেশা, বাউল হওয়ার টান। বলছিলাম উত্তর দিকে নীলচে-সবুজ ধোঁয়ার মতো উঁচু উঁচু পাহাড়ের রাজ্য ভারতের মেঘালয়ের কোলে অবস্থিত ভূ-প্রকৃতির দিক থেকে বৈচিত্র্যময় ও অপরূপ সৌন্দর্য্যের অধিকারী সুনামগঞ্জের কথা। যার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের চিত্রকল্পে সুলেখিকা আফীফা পারভীন তার রংমহল উপন্যাস নির্মাণ করেছেন। যা পড়ে মনে হচ্ছিল কোন নিখাঁদ প্রকৃতিপ্রেমী তার তিমিরভেদী, স্বচ্ছ দৃষ্টিতে সবটা ইন্দ্রিয়গত করে প্রকৃতি ও সৌন্দর্যের মধ্যে সেতু বন্ধন করেছেন যাকে আমরা নান্দনিকতাবাদ বা সৌন্দর্যানুরাগের প্রয়োগ বলতে পারি। অনেকটা ইতালো ক্যালভিনোর স্থাপত্যকলা চিন্তার মতো। ভাষায় ভারীত্ব এনে বা অযথা শব্দের গাঁথুনিতে সবটা মুখরা করে তোলা হয়নি। কাহিনীর প্রয়োজনে যখন যেটার প্রয়োজন হয় তখন শুধু সেটুকুই দেখিয়েছেন। লোকগাঁথার প্রাচীন ঐতিহ্যমন্ডিত কৃতীমানের জীবনযাপন এবং বাউল সম্রাট হয়ে ওঠার অভিনব যাত্রাও এখানে এসেছে চমৎকার ভাবে। ▪ করিতে পারি না কাজ সদা ভয় সদা লাজ সংশয়ে সংকল্প সদা টলে – পাছে লোকে কিছু বলে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করার পরও উপন্যাসের নায়ক শেহজাদের দৃঢ় মনোবল নিয়ে লোকলজ্জা ও সমালোচনা উপেক্ষা করে গ্রহন করা পেশার কথা পড়ে মনে হচ্ছিল কামিনী রায়ের উপরোক্ত কবিতাটির যোগ্য জবাব। যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বহুমুখী কাজের বর্ণনাগুলো লেখিকার উপস্থাপনের মুন্সিয়ানায় আষাঢ়ে গল্প মনে হয়নি। শুধু তাই নয় সমাজ পরিবর্তনের জন্যও শেহজাদের অবদান গুলো মুগ্ধতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। হাওরের জমিদারের সফলতার গল্পটা দৃষ্টান্ত মূলক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে সেই সব শিক্ষিত বেকারদের জন্য যারা উদ্যোক্তা হতে ভয় পায়, কাজের মধ্যে বড় ছোটর বৈষম্য টেনে আনে। ▪️সবার মাঝে আমি ফিরি একেলা। কেমন করে কাটে সারাটা বেলা! ইঁটের ’পরে ইঁট, মাঝে মানুষ-কীট; নাইকো ভালোবাসা, নাইকো খেলা। কবিগুরুর বধূ কবিতার এই লাইন গুলো বার বার মনে হচ্ছিল মধুমিতার একাকী গুমরে কাঁদা আর্তনাদ গুলো দেখে। যখন নিত্য চাহিদার সীমানা গুলো মিথ্যে কোলাহলের মোহে পরে, ত্রাসের আঙুল ধরে বট বৃক্ষের ছায়া দেয়া পরিবারের অবহেলা, অনাদর অযত্ন, হেঁয়ালিপনায় ভয়ংকরের কোলে পাঠাচ্ছে হাজারো মধুমিতাদের। উপন্যাসে হয়তো চোরাবালিতে ডুবতে যাওয়া মানুষটা মধুমিতার নাম হয়ে এসেছে। কিন্তু বাস্তবেও কি এমনটা হচ্ছে না? ঐশির কথা ভুলে গিয়েছেন সবাই? মধু হয়তো ঐশির মতো কিছু করেনি কিন্তু রেইনড্রপ রেস্টুরেন্টের লোমহর্ষক অভিজ্ঞতা বা নষ্ট সময়ের কাছে নতজানু হয়ে পা হড়কানো নাম না জানা হাজারো মধুমিতারা নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছে প্রতিদিন। রংমহল যেন সমাজের কাছে প্রশ্ন রেখে গেছে চোখে মায়া আর মুখে স্নেহ নিয়ে জন্ম নেয়া সন্তানদের ফেলে এগিয়ে চলা তথাকথিত সফল যে মানুষটাকে রোজ দেখছেন ভেবেছেন কখনো তার ঘরেই কি হেরে যাওয়া ধ্রুবতারার বাস কিনা? ▪ আসবার কালে কি জাত ছিলে এসে তুমি কি জাত নিলে, কি জাত হবা যাবার কালে সে কথা ভেবে বল না.. সুকর্মের মাধ্যমে মানুষ গৌরব ও মর্যদার আসনে আসীন হতে পারে। রংমহলে কখনো জোছনা, কখনো আনন্দী, কখনো বাদল আবার কখনওবা... টুইস্টে ঘেরা কারও পরিচয় বার বার মনে করাচ্ছিল জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো। ◾প্রচ্ছদ, সম্পাদনা ও অন্যান্যঃ ▪️প্রোডাকশন কোয়ালিটি খুব ভালো ছিল। এতো বড় বই হাতে নিয়ে পড়তে কোন অসুবিধা হয়নি। কিছু বানানের ভুল পড়ার গতি কমিয়ে দিচ্ছিল বার বার। যেমন আয়োজনের - আছোজন হয়ে যাওয়া বা জানালার - জানালো হওয়া। এবং পুরো বইয়ে আয়োজন শব্দটা প্রতিবারই আছোজন হয়ে এসেছে। আশা করছি ভবিষ্যতে এসবের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা হবে। ▪️প্রচ্ছদ হচ্ছে একটি লেখার অন্তর্গত ভাষা। কথায় আছে, A picture is worth than a thousand words. প্রচ্ছদের সঙ্গে বইয়ের একটি আত্মিক সম্পর্ক থাকে। সেই দৃষ্টিকোন থেকে বলতে গেলে রংমহল উপন্যাসের প্রচ্ছদটি এসকল দাবি নির্বাহ করতে সক্ষম হয়েছে পরিপূর্ণ ভাবে। মূল উপন্যাস পড়ার পরই এই নয়নাভিরাম মহলের রহস্য ভেদ করা সম্ভব হয়েছে এবং একই সাথে যা গল্পে উল্লেখিত বর্ণনার সাথে পুরোপুরি মিলে গেছে। ঠিক যেন লেখিকার বর্ণনাকৃত এক বাস্তবিক দৃশ্যপটের সাথে তার পাঠকদের বাস্তবিক দর্শন ঘটিয়ে গল্পের নিগূঢ়ে পৌছুতে অভূতপূর্ব ভূমিকা রেখেছে প্রচ্ছটি। ◾পরিশেষে বলবো, লেখিকার রচনাশৈলীর অনবদ্যতা ভালো লাগার একটি আবেশ নিবিড়ভাবে ছুঁয়ে যাবে পাঠকের ইন্দ্রিয়কে। এই আবেশ নিয়েই পাঠক অগ্রসর হতে থাকবেন উপন্যাসের কাহিনি ও গতিপথের সহযাত্রী হয়ে। নি:সন্দেহে বই প্রেমীদের জন্য দারুণ উপভোগ্য হবে রংমহলের যাত্রা। ............................................................................ ▪️এক নজরে বইটি— বইয়ের নাম: রংমহল লেখিকাঃ আফিফা পারভীন জনরাঃ সমকালীন উপন্যাস প্রকাশনীঃ ছাপাখানা প্রকাশনী ব্যাক্তিগত রেটিং : ৪.৫/৫ _______________________________________________
Was this review helpful to you?
or
রংমহল নিয়ে অনুভূতিকথন ❤️ রংমহল পড়া শেষ হয়েছে এক অসুস্থ রোগী অবস্থায়। আপুর লেখা বরাবরই পছন্দ। তাই অসুস্থ অবস্থায় পড়া শুরু করেছিলাম। মন খারাপ থাকত, তাই চাইতাম বইগুলো যাতে তাড়াতাড়ি চলে আসে। আসার পরেই পড়া শুরু। আমি প্রথমে ভাবছিলাম যে এটা মনে হয় অনেক আগের কাহিনী। আই মিন যখন জমিদার, রাজা দের রাজত্ব ছিল। তারপর বুঝলাম আমি ভুল। টিকটকার প্রিন্স ও প্রিন্সেস মুনলাইটের কাহিনি নিয়ে এক দফা হাসলাম। মানে ওই পেইজ টা নিয়ে আমি আর আমার ফ্রেন্ড ও মজা করলাম। শেহজাদের এন্ট্রি পাইলাম। তারপর ধীরে ধীরে মাম্মির হানির জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। এক সময় আগুন ফুলের দেখা পাইলাম। আস্তে আস্তে পড়া শেষ হলো। আসলে লেখার একটা ধারা থাকা উচিত যেইটার কারণে রয়েল সাইজের বই পড়তে বোরিং ফিল না হয়। এটা অবশ্য আপুর সব বইয়েই থাকে। এক পেজ পড়লে আরেক পেজ পড়ার জন্য মন কেমন করে।রংমহলের সাথে আমার দিন খুব ভালো কেটেছে। ২-৩ দিনে ঘোর কাটেনি।আপুর বইয়ে বরাবরই শিক্ষনীয় বিষয় থাকে।এই বিষয়টা আমার খুব পছন্দের। আমি তো পড়া শেষে আগুন ফুলের খোঁজ চালিয়েছিলাম। কিন্তু যখন আমি খুজতে ছিলাম তখন পাইনি। কিন্তু তার ২দিন পর দেখি জায়গায় জায়গায় ফুল। কিন্তু আমি লেট লতিফ ,এমনিতেই লেট হয়ে গিয়েছিল, তাই রিকশাও থামাতে পারিনি আর ফুলও কিনতে পারিনি। সামনের দিন পাইলে, নিব। আপুর লেখায় বরাবরই মুগ্ধ হয়েছি। আফিফা পারভীন আপুর জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভকামনা রইলো। নতুন বইয়ের অপেক্ষায় আছি।
Was this review helpful to you?
or
#রংমহল_নিয়ে_অনুভূতি #আফিফা_পারভীন গল্পটি শুরু হয় রংমহলের বর্ণনা ও সিলেটের দুইজন বিখ্যাত মানুষ ও প্রকৃতির রূপের বর্ণনা দিয়ে। এখানে সুনামগঞ্জের প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের বিশ্লেষণ যেমন ছিল তেমনি ছিল সুনামগঞ্জের হাওর,দিরাই ও বিভিন্ন লেকের সৌন্দর্য সম্পর্কে। এই বইটির মাধ্যমে সুনামগঞ্জের সৌন্দর্য আমি, আমার ঘরে বসে উপভোগ করেছি। বইটি পড়ার সময় আমার মনে হয়েছে, এইতো আমি দিরাই ঘুরছি, নীলাদ্রি লেকের সৌন্দর্য অনুভব করছি।আপু বইতে এতো কিছু এতো সুন্দর করে বর্ণনা করেছে তা আমার পক্ষে বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। লেখিকার লেখায় আমি একবার ঘোরে ডুবেছি তো আবার তার লেখন শক্তিতে মুগ্ধ হয়েছি। গল্পটি ছিল একজন জমিদারিবিহীন জমিদার ও শহুরে আরাম আয়েশে বড় হওয়া একজন রাজ্যবিহীন রাজকন্যার সম্পর্কে। এছাড়া আরও অনেক চরিত্র ছিলো, যা আমাকে এক মূহুর্তে অবাক করেছে তো পর মূহুর্তেই ভাবনায় বিভোর করেছে। লেখিকা, তার লেখার মাধ্যমে প্রত্যেকটা চরিত্র এতো সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে, যা আমার মনের গভীরে দাগ কেটেছে। লেখিকার লেখাতে নেই কোনো অশ্লীলতা, যা আমাকে তার লেখাতে আকর্ষণ করেছে। শেহজাদ - এই সেই জমিদারিবিহীন জমিদার, যে একজন দায়িত্ববান ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ। যিনি একটি সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করেও পেশা হিসেবে জেলে পেশাকে বেছে নেন। তিনি চাইলেই পারতেন কর্পোরেট সেক্টরে কাজ করতে ও আরাম আয়েশে জীবন যাপন করতে। কিন্তু তিনি তার পরিবার ও পরিজনের জন্য নিজের স্বপ্নকে বির্সজন দিয়েছে। রংমহল ও সুনামগঞ্জের সবার চোখে সম্মানের ও শ্রদ্ধার পাত্র হলেন শেহজাদ। যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যাই। মায়ের কাছে আদরের শেহজাদা, ছোট ভাই বোনের কাছে সম্মানের ভাইজান। মধুমিতা - রাজ্যবিহীন একজন রাজকন্যা। যিনি শহুরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত। ইতালির একটি বড় র্যাম্প সো তে যার র্যাম্প ওয়াক করার কথা, ভাগ্যের ফেরে একরাতের ঘটনায় তাকেঁ নিয়ে দাঁড় করাই রংমহলের সামনে।শহুরে আধুনিকতায় বড় হওয়া একজন মানুষ হিসেবে মধুমিতার জীবনে অপার পরিবর্তন ঘটে রংমহল ও শেহজাদের সংস্পর্শে এসে। প্রথমে রংমহলে থাকতে না চাওয়া মেয়েটি সময়ের ব্যবধানে নিষ্প্রাণ রংমহলের প্রাণ ফিরিয়ে আনে এবং নিজে হয়ে ওঠে রংমহলের প্রাণকেন্দ্র। যে ধীরে ধীরে মাম্মির হানি থেকে হয়ে ওঠে জমিদার বাড়ির যোগ্য গিন্নি ও জমিদার সাহেবের আগুন ফুল। হামিদা খানম- রংমহলের জমিদার গিন্নি। যিনি শক্ত হাতে রংমহলের সবকিছু দেখাশুনা করেছেন। নারী মানেই যে সবসময় নরম তা কিন্তু নয়, প্রয়োজনে তারা শক্তও হতে পারে তিনি তাই দেখিয়েছেন ।তিনি একজন নারী হয়েও রংমহল ও ব্যবসা সবকিছু পরিচালনা করেছেন। জোছনা - জোছনা নামটি শুনলেই সবার আগে 'বেদের মেয়ে জোছনা আমায় ' গানটি মাথায় আসে তাই না। এই জোছনাও কিন্তু বেদের মেয়ে ছিল। বেদের মেয়ে হলেও তার আত্মাসম্মান ও বিবেক বুদ্ধি ছিলো প্রখর। রংমহলের সব চরিত্রের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র হলো জোছনা। জোছনার অংশ টুকু আমি খুব আনন্দ নিয়ে উপভোগ করেছি। শাহাদাত - রংমহলের ছোট্ট জমিদার। টিকটিক করা ও ঘুরে বেড়ানো ছিল যার কাজ। জোছনার সংস্পর্শে যে হয়ে ওঠে একজন দায়িত্ববান পুরুষ ও প্রিয় ভাইজানের সহযোগী। কল্লোল - আমার প্রিয় চরিত্রের মধ্যে একজন কল্লোল। রংমহল বইতে যার স্থায়িত্ব ছিল সবচেয়ে কম কিন্তু চরিত্রের গভীরতা ছিল সবচেয়ে বেশি। তিনি ছিলেন শেহজাদের বিপরীত। যিনি তার স্বপ্নের জন্য পরিবার ও পরিজন ত্যাগ করেছেন। রজিম উদ্দিন - তিনি হলেন একজন আর্দশ মানুষ। মনের মধ্যে কারো জন্য সূক্ষ্ম অনুভুতি নিয়েও যে পৃথিবীতে সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকা যায়, তিনি সেটাই প্রমাণ করেছেন। রামিসা - এই মেয়েটার জন্য আমার এক আকাশ সমান কষ্ট লাগে। মেয়েরা সবসময় শুধু ভালো খাবার ও ভালো পোশাকই চায় না। তারা একটু যত্ন ও একটু ভালোবাসা চায়, যা রামিসা চেয়েও পায়নি। না বাবা-মার থেকে না স্বামীর থেকে। রংমহল পড়ে আমি দুইটা বিষয় খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করেছি- ১. জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো।জন্ম আমাদের যেখানে যেভাবেই হোক না কেন আমরা বেঁচে থাকি আমাদের কাজের মাধ্যমে। আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে সবার কাজে সম্মানিত হয়। ২. জন্ম দিলেই আর্দশ মা হওয়া যায় না,আবার জন্ম না দিয়েও একজন আর্দশ মা হওয়া যায়। জন্ম না দিয়েও নিঃস্বার্থভাবে অন্যের সন্তানকে ভালোবাসে আগলে রাখা যায়। রংমহল বইটি আমাকে এক সময় কাঁদতে বাধ্য করেছে তো পরক্ষণেই হাঁসতে বাধ্য করেছে।সুখ,দুঃখ, হাসি, কান্না, বিস্ময় ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিয়ে অনেক সুন্দর সময় কেটেছে রংমহলের সাথে। রংমহল বইটি কিনে আমার মনে হয়নি আমার টাকা নষ্ট হয়েছে। বরং বইটি পড়ার পর মনে হয়েছে টাকা দিয়ে বই কিনা টা সার্থক হয়েছে। এই যে, আমাদের দুলাভাইয়ের মিসেস ( আপু ☺️) অনেক অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা বই আমাদের পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য❤️❤️❤️ রংমহল বইটা আমার জন্য অনেক স্পেশাল। কারণটা অন্যদিন বলবো।জীবনের প্রথম নিজের অনুভূতি লিখেছি। ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন আপাগণ। অনেক কিছু লিখে ফেলছি, আজকের জন্য টা টা।
Was this review helpful to you?
or
#অনুভূতিকথন: বইটা তিনটা রাত পড়ে শেষ করেছি যেহেতু দিনে খুব ব্যাস্ত সময় যাচ্ছে।এবং শেষ করার পর এখন পর্যন্ত রংমহলের রং এ ডুবে আছি। বইয়ের প্রতিটি চরিত্র, দিরাইয়ের হাওর, শেহজাদের ঘের ছাতিমের ঘ্রান, শেহজাদ মধুমিতার সম্পর্কের পালা বদল,শাহাদাত ধমকের মাঝে প্রচ্ছন্ন স্নেহ, শেহজাদের আম্মা, রিনির বাবা,আনন্দী ডাক্তার তাসরিফ এর হাসিখুশি চরিত্র, বাদলের জীবনে স্থির হওয়া সবকিছুই যেন চোখে দেখেছি। সবথেকে ভালো লাগছে এত বড় কলেবরের উপন্যাস অথচ কোথাও এতটুকু আরোপিত লাগেনি। আমি এম্নিতেই বপ্পার লেখার ফ্যান সেই শুরু থেকেই কিন্তু দিন দিন আরো বেশি ডুবে যাচ্ছি ভালোলাগায়।মেয়ের এক্সাম শেষে এটা আবার পড়ব ধীরে সুস্থে।জাস্ট থাকতে পারছিলাম না বলেই খুব দ্রুত একটু পড়ে গেলাম।এত ভালো লাগছে বইটা ???
Was this review helpful to you?
or
#রংমহল #পাঠ_প্রতিক্রিয়া 'রংমহল' - বিশাল বড় উপন্যাস। এতো বড় একটা বইয়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠকের মনোযোগ আর পাঠককে তৃপ্তি দেয়ার জন্য লেখককে কি পরিমাণ নিপুণতার সহিত কাজ করে যেতে হয়েছে, তা আপনি বই হাতে নেয়ার পর আর পড়তে শুরু করার পরই টের পেতে থাকবেন। আপনার মনে হতে পারে, রংমহল তো পড়েছিই তাহলে আবার বইতে কেন? আরে নারে ভাই, যখন আপনি বই পড়া ধরবেন এবং ধীরে ধীরে গভীরে যাবেন তখনই বুঝবেন আপনি তো কিছুই পড়েননি। বইয়ের রূপ, রস আপনার কাছে এতোটাই মোহনীয় লাগবে যে আপনার মনে হবে এই বই আগে কেন পড়লাম না। ভাবা যায়, ফেসবুকে এতো বড় একটা উপন্যাস পড়ার পর সেটা বইয়ে পড়তে গেলে মনে হচ্ছে আগে কিছুই পড়িনি টাইপ অনুভূতি হওয়ার পেছনে লেখক কতটা কারিশমা করেছে। তারপর আপনার কি মনে হয়,আমি শেহজাদ স্পেশালি মধুমিতাকে আগে একটু কম অনুভব করেছি? বা ওদের দুজনকে আরো বেশি পড়তে চেয়েছি? সেটা তো লেখক বইয়ে পূরণ করেছেই, তার উপরিপাওনাও লিখে গেছে। এতোটাই পরিশ্রম, ধ্যান-জ্ঞান, সময় নিয়ে লেখক লিখে গেছেন যে আপনার মন আর মননে একেবারে গেথে থাকবে বইয়ের পুরো জার্নিটা।প্রিয় মিষ্টি আপুকে বারবার লেখক বলতে গিয়ে মনে হচ্ছে আপুকে দূরের কেউ লাগছে। আমার আপু তো আমার আপুই। আবার বলি, আপনি জানেন বইয়ের এন্ডিং-এ চেঞ্জ আসবে। আসলেই কি তাই? আরে ভাই বইয়ের প্রথম থেকে লাস্ট সর্বক্ষেত্রেই আপু খুবই দক্ষতার সাথে আর আকর্ষণীয় করে সংযোজন আর বিয়োজন করেছেন যে আমি বারবার চমকে গেছি, আবার সীমাহীন আনন্দে বিগলিত হয়েছি। বারবার মন বলেছে ইশ এতো সুন্দর কেন! আর প্রচ্ছদ! সেখানে কি বলবেন? প্রথম দর্শনেই প্রচ্ছদ কি আপনার নজর কেড়েছে না? যখন বইটা পড়বেন, স্পেশালি বই পড়ার সময় যখন আপনি আরেকবার "রংমহল" দেখবেন এবং প্রচ্ছদের পিছনের কারনটা জানবেন, তখন সেই পেইজে এসে আপনি বইটা বারবার বন্ধ করে প্রচ্ছদ টা দেখবেন। আর ভাববেন লেখিকা আপু কতই না দুরদর্শিতা দেখিয়েছেন! বইয়ের বাইন্ডিং, লেখকের লেখনী, শব্দগুচ্ছ, বাক্যশৈলী, গদ্যশৈলী সবকিছুর কথা কি বলবেন? সবকিছুই একদম পার্ফেক্ট। কোথাও কম বা বেশি পাবেন না, অতিরঞ্জিত কিছু নাই। আপনি এতো বড় বইটির শেষ পর্যন্ত কখন পৌঁছে গেছেন বুঝতেই পারবেন। আপনাকে বইই টেনে নিয়ে যাবে। যতপড়বেন তত তৃষ্ণা বাড়বেই.. "রংমহল" - তার নামের মতোই সুন্দর। শুধু সুন্দর না ভয়ংকর সুন্দর। আমি গতকাল পড়ে শেষ করেছি, কিন্তু আমার মন-মনযোগ সব রংমহলে ডুবে আছে, ডুবে আছে দীঘির ওই টলটলে পানিতে, ডুবে আছে হাওরের শীতল বাতাসে, ডুবে আছে শেহজাদ-মধুমিতার ভালোবাসায়। আপনি বইটা পড়বেন আর আপনার মনে (!!!!!) বারবার এমন অবাকতার চিহ্ন অংকিত হবে। আর মুগ্ধতা! ভাই আপনি মুগ্ধতার সাগরে হাবুডুবু খাবেন। বেশি বলছি মনে হচ্ছে? আপনি আরো বেশি বলবেন তার গ্যারান্টি দিতে পারি। আপনি বই পড়তে শুরু করে কতরকম অনুভূতিতে যে বিভোর হবেন আপনি টেরই পাবেন না। এখনই আপনার খিলখিল করে হাসি আসবে, তো এখনইই আবার দিরাইয়ের আকাশ কালো করে মন খারাপ হবে। আবার চরিত্রগুলোর আনন্দে আপনি রংমহলের আকাশে ভেসে বেড়াবেন। কখনও তো সুখের আর আনন্দের কান্নাও কাঁদবেন। তখন আপনার মন বলবে, ইশ! এই আনন্দে কারো নজর না লাগুক! চরিত্রগুলোর কথা কি বলবেন? প্রথম পেইজে আপনার মনে হবে এ কোন নাট্যখানায় চলে আসলাম। অথচ দুই পেইজ পরেই আপনি টের পাবেন কি পরিমান এঙ্গেলে যে কাহিনী প্যাটার্ন চেঞ্জ হয়ে গেছে। আপনি তো সবার প্রথমেই শেহজাদে ডুবে যাবেন। "শেহজাদ"- ইশ সেতো তার নামের মতই শেহজাদা। বাহ্যিক সৌন্দর্যে বলেন আর অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য। দুদিক দিয়েই সে কানায় কানায় ভয়ংকর সুন্দর। তারপর তার 'আম্মা'- হামিদা খানম ওনার জন্য সম্মান, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় আপনার মন বারবার বিগলিত হবে। ওনার দুরদর্শিতা আর জ্ঞান আপনি বলতে বাধ্য মা শা আল্লাহ। আর 'মধুমিতা' পুরো বইটা জুড়ে তাকে অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছি। সবসময়ই বাবা-মায়ের ভালোবাসার কাঙাল এই মেয়েটি তাদের ভালোবাসা আর প্রাইরেটি পাওয়ার জন্য তরপেছে। যার কারনে নিজেকে চিনতেই ভুলে যাচ্ছিল। একটা শহুরে আর আধুনিক মানসিকতায় বড় হওয়া মেয়ের জন্য রংমহলে মানিয়ে নেয়া শুধু কষ্টকরই না দুঃসাধ্যও। পুরো বইটা জুড়ে কাউকে ছোট না করা, অপমান না করা সহ বিভিন্ন কাজে সে একটু বেশিই প্রিয় হয়ে ওঠেছে। তার যত রাগ, অভিমান, চাওয়া সব যেন শেহজাদেই শুরু শেহজাদেই শেষ। আর তার ভালোবাসাটা বই পড়েই ফিল করুন আপনারা! মধুমিতার জায়গায় দাড়িয়ে তার মত এমন পদক্ষেপ নিতে সবাই পারবেনা। আমি বারবার মধুমিতায় মুগ্ধ হয়েছি। "জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভালো"- এই মতবাদ আর "ধৈর্য্য আর পরিশ্রমই সফলতার মাপকাঠি" - এই কথাগুলো যেন উপন্যাসের এপিঠ ওপিঠ। চেষ্টা, ধৈর্য্য,চাওয়া, পরিশ্রম মন থেকে করলে সফলতা আসবেই। 'জন্ম আর কর্ম' দুইটি মানব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জমিদারের ঘরে জন্ম নিয়েও শাফকাত, শেহজাদ, শাহাদাতের মধ্যে কাজ-কর্মে,মানষিকতার যেমন বিস্তর ফারাক, তেমনি বেদের ঘরে জন্ম নিয়ে জোছনা যেন উজ্জ্বল একটা দৃষ্টান্ত। শাফকাত আমার কাছে যে মিচকে শয়তান, এই বেটার পান খাওয়া আর মাথা ব্যাথার অযুহাতে বউকে বিছানায় নেয়ার কথা পড়লেই আমার বমি আসে। তেমনি শাহাদাত আর জোছনা এই দম্পতি দেখিয়ে দিয়েছে ভালোবাসা কি না পারে। একটা নারীর কাছে সবচেয়ে বড় সম্পদ মাতৃত্ব। সেখানে আঘাত পরার পর শাহাদাতের জোছনাকে আগলে ধরা, শেহজাদের জন্য শাহাদাতের ভালোবাসা সবকিছু ভীষণ ভালো লাগার। এই দম্পতি আমার একটু বেশিই পছন্দের। এই বইটার একেকটা চরিত্র একেকটা রত্ন। দু-তিনটা বাদে। বইটা পড়ে শাফকাত, শালিনী,..., দের যেমন দেখিছি, তেমনি দেখেছি রামিসা, রিনি, মাইনুল হোসেন, সোহাগীর মত অভগাদেরও। তাশরিফ, বাদল, জান্নাত, ফাতেমা খালা, মজনু কাকা,সাজিদ, কল্লোল আরও নতুন কিছুচরিত্র তাদের জীবনবোধ, জীবনের গতিপথ নিয়ে রংমহল রঙে রঙিন। শেহজাদ- ভাই তুমি এতো সুন্দর কেন? তোমার মনটা তার চেয়েও বেশি সুন্দর কেন? তুমি এতো ভালো কেন? তোমার এতো ধৈর্য্য কেন? তোমার ভালোবাসার ধরন এতো মোহনীয় কেন?এই পুরো তুমিটাই সম্মানীয় ও ভালোবাসার একটা মানুষ। চরিত্রকথন পরে কোনো একসময় করবো। এই বইটা নিয়ে বলতে গিয়ে বলতেই মন চাইবে। আমার তো এখনি আবারও পড়তে মন চাইছে। আফিফা পারভীন আপু রংমহলে আপনি এতো জাদু কেমনে করেছেন বলেন তো? এতো সুন্দর করে লিখে গেছেন আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। মহান আল্লাহ আপনার লেখায় বারাকাহ্ দিন। সমস্ত বদনজর থেকে হেফাজত করুন। ভালোবাসা রইলো আপু ?
Was this review helpful to you?
or
✨রংমহল অনুভূতিকথন রংমহল এখানে হাজারো রঙের মানুষ তাদের রঙ/বেরঙ্গের গল্প মহলের আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়ায়।মানুষ এমন প্রাণী যে রাজার ঘরের জন্মেও রাজা হতে পারেনা আবার ভিখারিনীর ঘরে জন্মেই বড় কিছু হয়ে যায়।জন্মে মানুষের হাত না থাকলেও কর্মে আছে তাই কর্মগুনেই তারা হয় গুনী। একটা বই সেখানে একজন নায়ক হলেও পুরো বই জুড়ে অসংখ্য নায়ক থাকে।নায়ক আমরা তাকেই বলি যিনি সবার মন কর্মগুনে, চরিত্রগুনে জয় করে নিতে পারে দুষ্চরিত্র কাউকে নায়ক কেউ বলে না।এখানে রমিজ উদ্দিন, বাদল,তাশরিফ, শাহাদাত,সাজিদ আর কল্লোল তাদের জীবনের নায়ক।যদিও কল্লোল অল্প সময় ছিল তবুও তার রেশ বইজুড়ে ছিল।অসাধারণ বন্ধু এমন চরিত্র সচরাচর কমই দেখা যায়। প্রেম-অপ্রেমের দোলাচড়ে অনেকগুলো জীবন দুলেছে।অনেক মানুষ অপ্রেম নিয়েও সংসার করে যাচ্ছে তবে কাউকে মনে রেখে কেউ কোনদিন সুখী হতে পারেনি ভাগ্যের এক অমোঘ সত্য ভালোবাসলেই সবাই পায় না আর পেয়ে হারালে দুঃখ যায়না। মানুষ বলে সুখ আর দুঃখ সবসময় একরকম থাকে না শুধু হামিদা খানম আর রামিশার বেলায়ই বুঝি এমন হওয়ার ছিল।জোসনা সেতো নিজ কর্মে জোসনার আলো ছড়িয়ে দিয়েছে।মধুমিতা ভীষণ বুদ্ধিমতী আবার বোকা সুন্দরী যে সরল মনে অন্যের মনের গরল ধরতে না পেরে সহজেই প্রভাবিত হয়ে যায়।ওর প্রতি রাগ আসার কথা হলেও আসে না, কিছু চরিত্র এমনই হয়। শেহজাদ সেতো এক প্রহেলিকা যাকে যায়না ধরা যায়না ছোঁয়া কিন্তু ভালোবাসার মানুষের জন্য সহজলভ্য। ওর শেষ কথাগুলো, কষ্টগুলো মনটা পোড়ায়। পরিশেষে তৃপ্তিজনক সমাপ্তি। রঙে বেরঙের রংমহলে সবাইকে স্বাগতম। ?
Was this review helpful to you?
or
#অনুভুতি আপুর বই আমি এক বসাতে শেষ করি সবসময়।এবার রংমহল পড়ার সময় কিছুটা অসুস্থ থাকায় এই বইটা বেশ সময় নিয়ে পড়েছি আমি।শেষ করার পর মনে হয়েছে এই সময় নিয়ে পড়ে আমার বেশ লাভ হয়েছে।আমি আরো বেশি অনুভব করতে পেরেছি বইটা। বইটার প্রথম পৃষ্ঠা থেকে সমাপ্ত পর্যন্ত কি যে এক অদ্ভুত নেশা ছিলো যার ঘোর থেকে বার হওয়া সম্ভব না এটা রংমহল শেষ করা প্রতিটি পাঠক মানতে বাধ্য।আমি রংমহলের বসবাসরত মানুষগুলোর দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িয়ে গিয়েছি।হুট করে মনে হয় ওই তো ফাতেমা বিবি রান্নার তোরজোর করছে, জোছনা মজার ভর্তা বানাচ্ছে, বাচ্চারা ছোটাছুটি করছে,হামিদা খানম বসে আছেন। প্রতিটা ঘটনা আমার চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ধরা দিচ্ছিলো। বেশ কয়েকদিন হলো আমি রংমহল শেষ করেছি কিন্তু আমি এখনো আটকে আছি সেই রং ওঠা ,সিমেন্ট খয়ে যাওয়া রংমহলের ভিতরে। আমি এখনো সেই বজরায় করে হাওরে ঘুরে বেড়াচ্ছি।আমি আমার কল্পনায় ঘুরে বেড়াচ্ছি রংমহলে বর্ণিত প্রতিটি জায়গায়।আমি এখনো আছি শেহজাদ সেই ছোট্ট কুটিরের বারান্দার আগুন রঙা ফুলগুলোর সামনে।আমি এখনো চোখ বন্ধ করলে ছাতিম ফুলের ঘ্রাণে বিভোর হয়ে যাচ্ছি । রংমহলের ভিতরের প্রতিটি চরিত্রের সাথে আমার মন অতোপ্রতো ভাবে মিশে আছে। রংমহল আমি ফেসবুকে পড়েছি।সেই ক্ষেত্রে বইটার প্রথম পাতা থেকে শুরু করার পর আমার একবার ও মনে হয়নি আগে পড়া বরং প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই আমি নতুনত্ব খুঁজে পেয়েছি।আস্তে আস্তে এই নতুনত্বের ধারা এক নতুন রংমহল এর স্বাদ দিয়েছে আমাকে।চরিত্রগুলোর জীবনের জোয়ার,ভাটা,প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি সবমিলিয়ে পুরো বইটা ছিলো ভীষণ তৃপ্তিদায়ক আলহামদুলিল্লাহ। আফিফা পারভীন আপু এভাবেই আপনার হাতের ছোঁয়ায় প্রতিটি পাঠকের মন তৃপ্তিতে ভরে উঠুক।দোয়া ও শুভকামনা সবসময়। এভাবেই সারাজীবন লিখে যান।ভালোবাসা নিবেন আপু ? (মনের মধ্যে থাকা অনুভূতি গুলো আমার স্বল্প শব্দভাণ্ডার থেকে লেখার চেষ্টা মাত্র। ভুল ত্রুটি মাফ করবেন সবাই)
Was this review helpful to you?
or
#রংমহল #আফিফা_পারভীন #অনুভূতিকথন আলাহামদুলিল্লাহ, অবশেষে সম্পূর্ন রূপে রংমহল পড়ে শেষ করতে পেরেছি, রেশ কাটছে-ই না। “পাঠের পরেও থেকে যায় পাঠের রেশ"এতদিন কথাটি চর্চা হতেই দেখে এসেছি, কিন্তু রংমহল পড়ার পর তা উপলব্ধি করতে পারছি। আমি অনুভূতিকথন লেখার বেলায় একদম কাঁচা, গুঁছিয়ে লিখতে পারি না বলে কখনো লেখার সাহস করিনি, কিন্তু রংমহল এর জন্য মনে হচ্ছে দুঃসাহস টা করাই যায়।প্রতিটি শব্দ, একেকটা দৃশ্যপট কিংবা কাহিনীর গতিপথ এমন ছিলো যেন আমি অদৃশ্য হয়ে আসলেই দেউলিয়া হওয়া জমিদার বাড়ি তথা রংমহলে আছি। রক্তের সম্পর্ক কিংবা নামহীন বিভিন্ন সম্পর্কের চরিত্রের আনাগোনায় এতটুকু তো স্পষ্ট ছিলোই যে মনুষত্ব বা বিবেকবোধ একজন মানুষ এর প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার হাতিয়ার। আবেগ বর্জন করে প্রতিকুল অবস্থায় উঠে দাড়ানোর একেকটা দৃশ্যপঠ আমাকে ভীষনভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।সবশেষে সুখ -দুঃখ, হাসি-আনন্দের রংমহল আমি ভীষন ভাবে উপভোগ করেছি। অনুভূতির যথার্থ প্রকাশ করতে না পারা আমার ব্যার্থতা, খেলবো না আমি!? লেখিকা মানে প্রিয় আফিফা পারভীন আপুর কথা না বললেই নয়, এত এত সুন্দর করে বাস্তবতার সহজ-কঠিন দিক গুলো তুলে ধরার জন্য এত্তগুলা ভালোবাসা। মা শা আল্লাহ!আপনার লিখনি, ব্যাক্তিত্ব বরাবর ই আমায় মুগ্ধ করে। শুভকামনা রইলো আপুুুউ!
Was this review helpful to you?
or
#পাঠ অনুভূতি #বই: রংমহল। রংমহল হাতে পাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রচ্ছদটা চোখে লেগেছিল। কিন্তু আমি বেকুবের বেবুক আমার চিন্তার দৌড় ওই চোখে লাগাতেই আটকে রেখে রংমহল পড়া শুরু করে দিয়েছিলাম। তারপর.... বলব না। আপনারা সবাই নিজেরাই দেখে পড়ে নিন। ? রংমহল নামটা দেখেই মনে হয় শিল্পীর রং তুলির আঁচড়ে আঁকা রঙে রঙে ভরপুর রংমহল। ভরপুর তো বটেই। তবে তা একটু ভিন্নভাবে। এই রংমহলে লেখিকা তার নিখুঁত কলমের কালিতে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের জীবন ভিন্ন ভিন্ন রঙে রচিত করেছেন। রংমহলের এই গল্পে কেউ সব পেয়েও ভাগ্যের ফেরে হারিয়ে ফেলার রঙে রঙিন তো কেউ না পেয়ে বেদনার নীল রঙে রঙিন। আবার কেউ ভালোবাসার রঙে রঙিন তো কেউ সেই ভালোবাসা ত্যাগ করে তার ভালোবাসার ভালো থাকার রঙে রঙিন। এই রংমহল একইসাথে ভালোবাসা, ত্যাগ, বিশ্বাসঘাতকতা, সুখ-দুঃখ, আনন্দ - বেদনা সবকিছুর সাথেই খুব সুন্দরভাবে পরিচিত করেছে। আপাতত আমি নিজেও এখন এই রংমহলের রঙে রঙিন হয়ে আছি। আর আফিফা পারভীন আপুর লেখা মানেই প্রকৃতির নিত্যনতুন রূপের সাথে পরিচয়।মানুষকে সরাসরি ভ্রমণ না করিয়েও কিভাবে তার লেখার মাধ্যমে ভ্রমণ করানো যায়,প্রকৃতির নতুন নতুন রূপ অনুভব করানো যায় এটা বোধহয় তার চেয়ে ভালো আর কেউ বলতে পারবে না। এখন এই বইটা পড়ে মনে হচ্ছে আপুকে জোরছে ধরে একটা ঝাপ্পি উইদ পাপ্পি দিই।তাহলেই মনে হয় আমার মনের সব ফিলিংস একবারে সব বুঝিয়ে দিতে পারব।?? (বি. দ্র.: সবাই ভুলএুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি আসলে যা ফিল করি তা লিখে কখনোই পুরোপুরিভাবে বুঝাতে পারি না। তবে রংমহল পড়ার পর মনে হচ্ছে এতটুকু অনুভুতিও যদি আপুকে জানাতে না পারি তাহলে আপুর লেখার প্রতি অন্যায় হবে। তাই আমার আনাড়ি হাতে অনুভুতি জানানোর ছোট খাটো এই প্রচেষ্টা।)
Was this review helpful to you?
or
রংমহল: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের এক জাদুকরী জগৎ: সুনামগঞ্জ—প্রকৃতি, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির অপার মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা এক মায়াবী ভূমি। এই জেলার প্রতিটি কোণ যেন এক অমলিন কবিতার মতো। হাওরের বিস্তীর্ণ নীল জলরাশি, পাহাড়ের সবুজ গালিচা, আর নদীর স্রোতের সঙ্গমে এ জেলাকে মনে হয় প্রকৃতির হাতে আঁকা এক জীবন্ত চিত্রকর্ম। এই অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝেই লুকিয়ে আছে এক বিস্ময়কর অতীত—রহস্যময় "রংমহল"। রংমহল: ইতিহাস ও অনুভূতির স্থাপত্য: "রংমহল" কোনো সাধারণ স্থাপনা নয়। এটি ইট, পাথর, মার্বেলের কাঠামোর বাইরেও এক জীবন্ত ইতিহাস, যা প্রেম, ভালোবাসা, বিশ্বাসঘাতকতা, আশা এবং হতাশার এক চিরকালীন অধ্যায়কে ধারণ করে। উপন্যাসে বর্ণিত রংমহল শুধু সময়ের সাক্ষী নয়; এটি মানবিক অনুভূতির এক নিঃশব্দ উপাখ্যান। লেখক তাঁর অসাধারণ চিত্রকল্প সৃষ্টির মাধ্যমে রংমহলকে এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যে, মনে হয় পাঠক নিজের চোখেই দেখছেন এর প্রতিটি পাথর, প্রতিটি অলঙ্করণ। রহস্যের কুয়াশায় আচ্ছন্ন রংমহল পাঠকদের এমন এক জগতে টেনে নিয়ে যায়, যেখানে বাস্তবতা আর কল্পনার সীমারেখা মিলেমিশে এক হয়ে যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে রংমহলের একাত্মতা: "রংমহল" উপন্যাসে সুনামগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে এক নতুন মাত্রায় উপস্থাপন করা হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের নীল জলরাশি, নীলাদ্রি লেকের গভীর নীলাভ শোভা এবং দিরাইয়ের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ রংমহলের বর্ণনার সঙ্গে এমনভাবে জুড়ে আছে যে, মনে হয় প্রতিটি স্থানই উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। লেখকের বর্ণনায় এই জায়গাগুলো শুধু ভৌগোলিক স্থান নয়, বরং অনুভূতির এক অভূতপূর্ব আধার। আমার আরো বেশি ভালোলাগা কাজ করেছে যখন দেখলাম, উপন্যাসের পাতায় নিজ জেলা "নেত্রকোনাকে" দেখতে পেয়েছি। মাম্মির হানি থেকে জমিদার বাড়ির গিন্নি: প্রতীকী রূপান্তর: উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র, যার যাত্রা শহুরে মায়ের আদরের "হানি" থেকে জমিদার বাড়ির পরিপূর্ণ গিন্নি হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে এক প্রতীকী রূপান্তর ফুটে ওঠে। এটি শুধু তার নামের পরিবর্তন নয়, বরং তার জীবনের, দৃষ্টিভঙ্গির এবং পরিচয়েরও একটি গভীর পরিবর্তন। লেখক এমনভাবে এই রূপান্তর চিত্রিত করেছেন যে, তা পাঠকদের মুগ্ধ করে। বাউল গান ও লালন সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি: রংমহল উপন্যাসে শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, হারিয়ে যেতে বসা লোকসংস্কৃতি এবং সঙ্গীতের গভীর প্রভাবও স্পষ্ট। বাউল গান ও লালন সংগীত, যেগুলো সময়ের বিবর্তনে অনেকটাই ম্লান হয়ে যাচ্ছে, সেগুলোকে লেখক যেন নতুন জীবন দিয়েছেন। গল্পে প্রতিটি গানের উপস্থিতি শুধু ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা নয়, বরং মানবতার প্রতি ভালোবাসারও প্রতিফলন। উপন্যাসের প্রভাব: রংমহল উপন্যাস আমার কাছে কেবল একটি গল্প নয়; এটি একটি অনুভূতি। আগে সুনামগঞ্জ আমার জন্য শুধু একটি জেলা ছিল, কিন্তু এই উপন্যাস পড়ার পর থেকে সুনামগঞ্জের প্রতিটি স্থান যেন আমার প্রিয় হয়ে উঠেছে। টাঙ্গুয়ার হাওর, নীলাদ্রি লেক, দিরাই—এই সবকিছু এখন শুধু ভ্রমণের স্থান নয়, বরং আমার কল্পনার এক সুন্দর জগৎ। রংমহল মানেই সুনামগঞ্জ। রংমহল মানেই ইতিহাস, প্রকৃতি, এবং সংস্কৃতির এক অমর কাব্য। এটি বাস্তব আর কল্পনার এক অপূর্ব মিশ্রণ, যা পাঠকদের হৃদয়ে চিরস্থায়ীভাবে ছাপ রেখে যায়। আফিফা পারভীন আপু, রংমহল লেখার আগে গল্পে উল্লিখিত নানান বিষয়ে কতটুকু স্টাডি করেছেন, শ্রম দিয়েছেন, তা উনার লিখনশৈলী দেখলেই অনায়াসে বুঝে ফেলবেন যেকোনো পাঠক। সবমিলিয়ে,বরাবরের মতোই চমৎকার লিখেন তিনি। তবে এবারের রংমহলে আলাদা কিছু ছিল, যা আমাকে পরিপূর্ণভাবে তৃপ্তি দিয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
#পাঠ্যানুভূতি বই: রংমহল লেখিকা : আফিফা পারভীন প্রচ্ছদ : ফাইজা ইসলাম ' রংমহল ' যার প্রত্যেক ধাপে ধাপে নানা রকম রংয়ের সমাহার।শতবর্ষীয় এক পুরাতন জমিদার বাড়ি রংমহল। যার বাহিরে থেকে দেখতে জরা-জীর্ণ হলেও ভেতরের মানুষ গুলোর জীবন ততটাই রঙিন। এই পুরনো আমলের জমিদার বাড়িটি সেই অঞ্চলের ঐতিহ্য বহন করে। মানুষের জীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয়। রংমহলের প্রতিটি চরিত্র এর জ্বলন্ত প্রমাণ বহন করে। ভালোবাসার রং, বন্ধুত্বের রং, শোকের রং মানবজীবনের এমন অনুভূতির রঙে রঙ্গিন চমৎকার উপন্যাস এই রংমহল। বইটা পড়ার সময় এমন এক ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম যে আশেপাশের কিছু খেয়াল ছিল না। যারা বাস্তবসম্মত সময়োপযোগী সুন্দর সামাজিক রোমান্টিক জনরার লেখা পছন্দ করেন তাদের এই বইটা অবশ্যই পড়া উচিত। এই উপন্যাসের আমার কিছু প্রিয় চরিত্র : হামিদা খানম : মানুষের জীবনের পরিস্থিতি সবসময় অনূকূলে থাকে না। সময়ের পরিক্রমায় মানুষ কে তার অবস্থান অনুযায়ী মানিয়ে নিতে হয়। এমন একটি চরিত্র হামিদা খানম। যিনি নিজের জীবনে সমস্ত প্রতিকূলতা ডিঙিয়েও একজন আদর্শ মা, আদর্শ গৃহকর্ত্রী এবং আদর্শ শাশুড়ী হয়ে উঠেছিলেন। শেহজাদ আলী খান:এই উপন্যাসে আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র শেহজাদ আলী খান। যে সবসময় তার আপনজনদের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে এসেছে। যার জীবনের মূল উদ্দেশ্য নিজের কথা না ভেবে নিজের প্রিয় মানুষদের ভালো রাখা। এই উপন্যাসে সে একজন আদর্শ পুত্র, স্বামী, ভাই এবং বাবা। খেটে খাওয়া, পরিশ্রমী মানুষের মূর্তপ্রতীক। মধুমিতা হোসেন : এই নামটা মনে পড়লেই একটা জেদি, রাগী কিন্তু সরল মনের নিষ্পাপ সুন্দর চেহারার একটা মেয়ের ছবি মনের আঙিনায় ভেসে ওঠে। এই মেয়েটিকে জানলে তার প্রতি একটা তীব্র মায়া মনের মধ্যে উথলে ওঠে। অপরিনামদর্শী এই মধুমিতা ছিলো শুধুই পরিস্থিতির শিকার। যার জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল ভালোবাসার মানুষের সাহচর্য ও সঠিক দিকনির্দেশনার। রিনি মেহজাবিন: রংমহলের বিষন্ন সুন্দর একটি চরিত্র। সে সবসময় তার ভালোবাসার মানুষের মঙ্গলকামনা করে এসেছে। কিন্তু মানুষের মন, তাকে তো সবসময় নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। রংমহল মানুষের জীবনের বিভিন্ন উত্থান-পতনের গল্প। কিছু জীবন্ত অনূভুতির এক রঙিন ক্যানভাস। এই বইটার প্রত্যেকটা লাইন আমার মন ছুঁয়েছে। বইটা শেষ করার পর আমি কতক্ষণ হাতে নিয়ে বসে ছিলাম মনে নেই। আমার পড়া বেস্ট একটা বই লেখিকা আফিফা পারভীন রচিত ' রংমহল '। সবশেষে আসি লেখিকা আপুর কাছে। আপু, আমার খুব ইচ্ছা যদি কোনদিন দেখা হয় তাহলে আপনার মিষ্টি হাতে একটা চুমু খাব❤️। আপনার জন্য অনেক অনেক দোয়া, ভালোবাসা ও শুভকামনা রইল আপু। আপনি আরও এগিয়ে যান আর আমাদের এমন সুন্দর সুন্দর বই উপহার দিন ইনশাআল্লাহ। (অনেক কিছু লিখলাম। আমি অনুভূতি কখনো গুছিয়ে লিখতে পারি না, প্রকাশও করতে পারি না। অপরিপক্ক হাতে লিখলাম। সমস্ত ভুল - ত্রুটি নিজ গুনে ক্ষমা করবেন।)
Was this review helpful to you?
or
বই পরিচিতি বই: রংমহল লেখক: আফিফা পারভীন প্রচ্ছদ: ফাইজা ইসলাম প্রকাশনী: ছাপাখানা প্রকাশনী বই পরবর্তী পাঠ প্রতিক্রিয়া আমি যে ব্যাপারগুলো পেয়েছি সেগুলো হলো-- ১৷ ভীষণ রাজসিক এক অভিযাত্রার ভ্রমণকারী হয়েছি আমি। চলতি পথের বাঁক গুলো কখনো সরল, কখনো সবুজ, কখনো হাওরের উদাসী লিলুয়া বাতাস, কখনো পিচ্ছিল, কখনো দোনামনো, কখনো সূর্যের লালিমা ভরা মায়াবী আবার কখনো অমাবস্যার মাঝ রাত্তিরের মতো সর্ব/গ্রাসী অন্ধ/কার। এই অন্ধকার চিরে যখন ভোরের পুণ্যস্নান করা সূর্যের আলো পড়ে তখন 'রংমহল ' সত্যিই সোনা ঝলমলে ইতিহাস হয়ে যায়। রংমহল আসলে একটি emotional rollercoaster ride. ২৷ এই গল্পের মূল উপজীব্য বিষয় হলো কর্ম। ঐ যে কথায় বলে না যেমন কর্ম তেমন ফল। এখানে কিছু চরিত্র তার কর্মের জন্য বেশি গ্রহণ যোগ্যতা পেয়েছে। আমি এখানে একজন জাত কূল হীন মানুষের 'ভক্তি' বিষয়ক ভাবনা পড়ে ভীষণ অবাক হয়েছি। সত্যই তো বলে, যে বলে পূজা করতে কোনো ভক্তের পাথুরে মূর্তি এবং পূজা বেদি প্রয়োজন পরে না। ঈশ্বর তার ভক্তের মনের পবিত্রতায় ঠিকই আপন বিভায় উজ্জ্বল থাকে। আমিও লালন দর্শন গেয়ে উঠি-- ব্রাহ্মণ চন্ডাল চামার মুচি এক জলেই সব হয় গো শুচি দেখে শুনে হয় না রুচি যমে তো কাকেও ছাড়বে না। ৩৷পুরো গল্পে 'ভাগ্য' শব্দটি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। 'বিয়ে' যে আল্লাহ্ তাআলার মর্জিতে হয় এটা সর্বক্ষেত্রে লক্ষণীয়। যদি থাকে নসিবে আপনা হতে আসিবে। আর ভাগ্য এবং লুঙ্গি যেকোনো সময় খুলে যেতে পারে। নিয়তির লিখন, না যায় খন্ডন। একজন যোগ্য জীবনসঙ্গী, আপনার জীবনের আসল স্বাদ-রুপ-গন্ধ-অনুভূতি-লক্ষ্য পেতে সাহায্য করে। আপনাকে আপনার পরিচয় পেতে সাহায্য করে। ৪৷ বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ উপজেলার কৃতিসন্তানদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। প্রথমেই হাসন রাজা ও বাউল সুর সম্রাট শাহ্ আবদুল করিমের পরিচয় দেওয়া হলো। সিলেটের কৃতি সন্তান তো তাঁরাই। বর্তমান সিলেটের পরিচয় তাদের ঘিরেই। 'কি ঘর বানাইবে হাসন শূন্যেরও উপর' 'পাড়া-পড়শী বাদী আমার, বাদী কালনী নদী' সুনামগঞ্জসহ পুরো সিলেট জুড়ে হাওয়ায় ভেসে বেড়ায় মরমী ও বিরহী বিভিন্ন লোককবিদের মনমাতানো ভাইওয়া সুর। আমি সিলেটে দুইবার দুটো বিয়ে এটেন্ড করেছিলাম। দেখেছি ফুপীরা ভাবিরা সবাই মিলে কি সুন্দর বিয়ের গীত গায়। আমিও অংশ নিয়েছি। আমি তাই বইটার কিছু অংশ বাস্তবিকভাবে রিলেট করতে পেরেছি। এই বইয়ে আমার প্রিয় চরিত্র সমূহ শেহজাদ আলী খান এক রাজ্যহীন নিঃস্ব রাজার গল্প বলি শুনুন। তার উপখ্যানের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে নিঃস্বার্থ ভালবাসা, অতল গহ্বরের ত্যাগী মানসিকতা, অদম্য দুর্জ্ঞে/য় জেদ মেশানো আত্মবিশ্বাস, মন জয় করা ব্যক্তিত্ব। এ যেন তার নিজের গড়া আপন গরিমা। গালিবের একটা শের আছে-- 'আমাকে আমার আপনজনেরা, বি/ষ*ধর সাপের মতো কামড় ত দেয়, কিন্তু বি/ষ ছাড়ে ধীরে ধীরে। কিছু লেহাজ রাখে আমার কোলে বসে খাওয়া, আমার দেওয়া খাবারের' কিছু মানুষের জন্মই হয় 'Born to rule'. নিজস্ব ব্যক্তিত্বের প্রভাব বিস্তারের জন্য তাদের ঢাল তলো/য়ার, সৈন্য-সামন্ত দরকার পড়ে না। মাঝে মধ্যে তো তারা পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া ঊষর ভূমিতে নিজ কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় দিয়ে নিজস্ব রাজ্য গড়ে তোলে। জি, তিনি শেহজাদ আলী খান। একটা মানুষ খুব সাধারণ সাজে সজ্জিত থেকেও কি পরিমাণ আভরণীয় চারিত্রিক সৌন্দর্যে ঐশ্বরিক হতে পারে রংমহল যেন প্রতিনিয়ত সেই তৃপ্তি দিয়ে যায়। কতটা ভালবাসা লুকিয়ে বাসা যায়, তড়পানো যায়, রীতিমতো ধ্যানে বসা মহাদেব যেন। তবুও কোনো লম্ফঝম্প নেই। শুধু প্রার্থনা করে-- khuda kare zindagi mein yeh maqam aaye tujhe bhulne ki dua karun aur Dua mein tera naam aaye.. হামিদা খানম এই মহিলাকে যদি নেপোলিয়ান বোনাপার্ট পেতেন তবে, তৎকালীন ফ্রান্সের সমস্ত ব্যাটালিয়নের সেনাপতি নিযুক্ত করে নিজে দায়িত্ব থেকে ছুটি নিয়ে, কোনো দূর দ্বীপে গিয়ে ছুটি কাটাতেন। এতো দূরদর্শী আর বিচক্ষণ মা হামিদা খানম। আবার তিনিই কিশোরীর মতো আহলাদী। সকলকে শাসন আর মমতাস্নেহ দিয়ে আগলে রাখেন। ওনার ব্যক্তিত্ব অনেক অভিজাত আর শিক্ষণীয়। তিনি আ/স্তাকুড়কে আগলে বাগান গড়তে জানেন। জোছনা এই মেয়ে পুরোই একটা প্যাকেজ। এ যেন 'কর্ম' ফলে আবদ্ধ জীবন' এর পূর্ণ প্রতিরুপ। নারী যে সংসার এবং একজন পুরুষের ভাগ্য পরিবর্তকিকা হতে পারে তার প্রমাণ। আমি শ্রদ্ধা করি মেয়েটাকে। শাহাদাত আলী খান একটি কর্ম দিয়ে যেন পুরো জীবনের পূন্যশুচি। এই ভবঘুরে, দিশাহীন, হিরো আলম লাইট ভার্সন লোকটা একটা পর্যায়ে এসে দিল জিত লিয়া। রংমহলে উল্লেখিত প্রকৃতি আমি আমার শৈশব, কৈশোর এবং তারুণ্যের প্রারম্ভিকটা সম্পূর্ণ প্রকৃতিতে কাটিয়েছি। প্রকৃতি আমার বাল্যকালের নেংটিপরা বন্ধু। একজন 'চরিত্র'। আচ্ছা প্রকৃতি'কে কি প্রিয় চরিত্রের তালিকায় রাখা যায় না, যদি বইটিতে প্রকৃতি অনুষঙ্গ হয়ে অনুভূতিকে আরো বাঙ্ময় করে ?? এমনটা কিন্তু বিবেচনা করা ই যায়। যেমনটা করেছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বুদ্ধদেব গুহ। কবি নির্মলেন্দু গুণ তো 'আকাশ' নিয়ে একটা গোটা সিরিজই লিখেছেন। যদি তাই হয়, তবে রংমহল বইয়ে 'প্রকৃতি' একটি চরিত্র। ইশ্ ! প্রকৃতির বর্ণনার কথা কি বলি বলেন তো ? আমি তো লেখক নই। আমার তো শব্দভাণ্ডারও যৎসামান্য। বৃষ্টিস্নাত স্পাইডার লিলি, গন্ধরাজ, ছাতিম ফুলের ঘ্রাণ, দিরাই এর হাওর, ছোট্ট নীল ঘাসফুল, যেখানে আকাশ আর হাওরের পানি এক হয়ে মিশে যায়, হাঁসের পাল, মাছের ঘের ও মাছের কিলবিলানি, রাতে লাকড়িতে আগুন জ্বালানো অবস্থায় মনোমুগ্ধকর গান, জমিদারি বজরা করে আদিগন্ত স্বচ্ছ হাওর দেখা, তীব্র বর্ষণের রাতে বাজ পড়া আওয়াজে মোম জ্বালানো, শিল পড়া ঝুম ঝুম বৃষ্টি, ভোরের মসজিদ থেকে ভেসে আসা আজানের ধ্বনি, এক যুবকের অসংখ্য স্বপ্ন -- আমি এই অনুভূতি গুলোর কি করে বর্ণনা দিবো। আমি তো পারি না। আপনিই না হয় পড়ে উপলব্ধি করুন। একটু ত্রুটির কথা বলি ? কিছু বানান প্রিন্টিং মিস্টেক ছিল। যেমন আয়োজন হয়ে গেছে আছজন, জানালা হয়ে গেছে জানালো। এগুলো বিরিয়ানিতে এলাচের স্বাদ দিয়েছে। আর রইলো কেন পড়বেন বইটি ? কিছু বই আমরা শিক্ষার জন্য পড়ি আবার কিছু বই পড়ি হুদাই। কিন্তু এই বইটি আপনি প্রতি পৃষ্ঠাতে উপভোগ করবেন। প্রতি পৃষ্ঠাতে না হলেও কিছু জায়গায় আপনি টুইস্ট দেখে 'হা' হতে বাধ্য। এতো বিপুল শব্দ সংখ্যা (১৭০৬০০) সমৃদ্ধ বই নিয়ে আমি এরচেয়ে ছোট করে আর কিছু বলতে পারলাম না। পড়ে দেখুন বই - রংমহল , কথা দিচ্ছি, উপভোগ করবেন ! হ্যাপি রিডিং ❤
Was this review helpful to you?
or
বই: রংমহল লেখক:আফিফা পারভীন প্রকাশনী:ছাপাখানা প্রচ্ছদ শিল্পী: ফাইজা ইসলাম পাঠ প্রতিক্রিয়া: 'রংমহল' একটা আকাঙ্ক্ষার নাম ছিল আমার কাছে।অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম, কবে আসবে রংমহল নতুন রূপে? অবশেষে যখন সেই অপেক্ষার পালা শেষ হলো,রংমহল আসল তার রং নিয়ে নতুন রূপে, তখন কেমন যেন একটা অদ্ভূত অনুভূতিতে পেয়ে বসেছিল আমাকে। হাতে পাওয়ার পরই নির্ঘুম রাতে পড়া শুরু করেছিলাম। নিশুতি রাতে নিভৃতে একটু একটু করে হারিয়ে গিয়েছিলাম রংমহল নামক রঙিন এক ভূবনে। যে ভূবনের আকাশটা ছিল কখনো শরতের আকাশের মতোই ঘন কালো মেঘে ঢাকা, কখনো নির্মল সোনালী ভোরের কমলা রঙা অরুণের আলোয় আলোকিত, আবার কখনো কখনো কাল বৈশাখের কালগ্রাসী ঝড়ের মতোই বিধ্বস্ত। নিস্তব্ধ গভীর রাতের নিরবতা খন্ডন করে উপন্যাসের প্রতিটা পাতা উল্টানোর সাথে সাথে উন্মোচিত হয়েছে 'রংমহলের নতুন রূপ। সেই নতুন রূপের সারথী হয়ে নিজেও মিনিটে মিনিটে হারিয়েছি ভিন্ন ভিন্ন জগতে।প্রথমে কিছু সুখ সুখ অনুভূতি, অন্যরকম একটা ভালো লাগা, এরপর! হুট করেই কিছুটা বিষাদ এসে ভীড় জমালো মনের কোণে। এক মুহূর্তের জন্য নিজেকে দিরাইয়ের সেই জমিদার বাড়ি 'রংমহলের' একজন সদস্য ভেবেই খুব করে উপলব্ধি করেছিলাম প্রতিটা শব্দ, প্রতিটা বর্ণনা। আর ভেবেছিলাম উপন্যাসের নামের যথার্থতা। সাথে বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে ভেবেছিলাম একজন লেখকের কলমে ঠিক কতটা জোর থাকলে তার লেখা দিয়ে পাঠকের হৃদয়ে এভাবে ঝড় তুলতে পারে? "রংমহল" আমায় ক্ষণেক্ষণে হাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে, ভালোবাসা-ভালো লাগার নতুন সংজ্ঞা শিখিয়েছে।শিখিয়েছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার জাদুমন্ত্র। উপন্যাসের পাতায় লেখক নিজের দক্ষ হাতের জাদুতে অত্যন্ত নিপুণভাবে সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা ফুটিয়ে তুলেছে। তুলে ধরেছে সুনামগঞ্জের দুই কৃতি সন্তানের জীবনী। বিজ্ঞান ভিত্তিক বর্তমান যান্ত্রিক জীবনের আধুনিকতার আড়ালে হারিয়ে ফেলা বাঙালির ঐতিহ্য, বাংলার প্রাণ লোকসঙ্গীতের কথা স্মরণ হতেই মনের কোথাও যেন একটা বিষাদের সুর বেজে উঠেছিল। এই রংমহলের প্রতিটা ভাজে ভাজে যেমন লুকিয়ে আছে এক জমিদার বাড়ির অতীত, বর্তমানের রহস্য, তেমনভাবেই লুকিয়ে আছে গ্রাম বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য। 'রংমহল' পড়ে আমি তথাকথিত উপন্যাস পড়ার অনুভূতিই পাইনি শুধু। সাথে গভীরভাবে অনুভব করেছি সবুজে ঢাকা পাহাড়, প্রকৃতির অপার্থিব সৌন্দর্য, হাওরের এলোমেলো হাওয়া, বৃষ্টি শেষে সোঁদা মাটির গন্ধ, কনকনে শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন মিষ্টি ভোর। প্রিয় চরিত্র: মানব জীবনের অদ্ভুত লিলাখেলার রূপ, রঙে রঙিন 'রংমহল' নামক বিশাল এই উপন্যাস জুড়ে কাহিনীর পরিপ্রেক্ষিতে একে একে অনেক গুলো চরিত্র উঠে এসেছে। সব গুলো চরিত্র নিয়ে বলা সম্ভব না হলেও উপন্যাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রিয় চরিত্র নিয়ে কিছু কথা তুলে ধরছি, ~হামিদা খানম: পুরো উপন্যাস জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সব গুলো চরিত্রের ভীড়ে এই চরিত্রটা আমার মনে পাকাপোক্ত জায়গা করে নিয়েছে।হামিদা খানম মানেই আমার কাছে জীবন নামক যুদ্ধক্ষেত্রে বারবার পা পিছলে মুখ থুবড়ে পরেও আবার উঠে দাঁড়িয়ে শক্ত হাতে অস্ত্র ধরা সেই বিরাঙ্গনা। এই চরিত্রটা পাঠককে শিখাবে কিভাবে হার না মেনে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অবধি লড়ে যেতে হয়। এই সমাজের অনেকেই ভাবে, 'নারী"দুই অক্ষরের ছোট্ট একটা বিশেষ্য। অথচ এই ছোট্ট শব্দটার যে কতটা অলৌকিক ক্ষমতা সেটা অনেকেরই ধারণাতীত। নারী মানেই জননী, নারী মানেই জায়া, নারী মানেই জয়ীতা। এক নারী চাইলেই পারে তার নরম কোমল হাতের ছোঁয়া আর বুদ্ধিদীপ্ত কাজেকর্মে একটা সংসারকে সুখ রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে। আবার সেই এক নারী চাইলেই পারে গোটা একটা সংসারকে তার মনের কুটিল বি ষ ছড়িয়ে বি ষা ক্ত করে দিতে। আমার মতে হামিদা খানম সেই শুকনো গোলাপ। যে গোলাপ শুকিয়ে গেলেও তার মিষ্টি ঘ্রাণ নিঃশেষ হয়না সহজে। ~রমিজ মাস্টার: কিছু মানুষ থাকে, যাদের প্রতি কারণে,অকারণে মনের কোণে বিনম্র সম্মান, শ্রদ্ধার জন্ম হয়। ঠিক তেমনই একজন মানুষ রমিজ মাস্টার। এই চরিত্র আমাকে অভিভূত করেছে তার নিঃস্বার্থ, উদার মনোভাবের কারণে। কোনো রক্তের টান নেই, কোনো সম্পর্কের বাঁধন নেই, নেই কোনো দায়বদ্ধতা। এরপরও কিসের টানে সম্পর্কহীন একটা মানুষের জীবন যুদ্ধে তার পাশে থাকা যায়? সেই টানের নামটা বোধহয় মায়ার টান। যে মায়ার টানে থাকেনা কোনো লোভ-লালসা, থাকেনা কোনো স্বার্থপরতা। ~শেহজাদ আলী খান: ধ্বসে পরা এক রাজ্য 'রংমহল' এর রাজপুত্র সে। মায়ের শেহজাদা, গোটা জমিদার বাড়ির একমাত্র ভরসাদাতা।তুখোড় আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন,গম্ভীর, স্বল্পভাষী, বিচক্ষণ,কঠোর পরিশ্রমী আর অত্যন্ত যত্নশীল এই চরিত্র পুরো উপন্যাস জুড়ে আমাকে অদ্ভূত এক ঘোরে ডুবিয়ে রেখেছে। তার সাহসীকতা, আপন মানুষের প্রতি উজার করা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, ধৈর্য্য- সহসশীলতা আমাকে বারবার অভিভূত করেছে। এই চরিত্র আমাকে শিখিয়েছে,কিভাবে বুকে এক সমুদ্র কষ্ট চেপে রেখেও পাওয়া না পাওয়ার হিসেব ভুলে বেহিসেবি ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখতে হয় পরিবার-পরিজনকে।এই চরিত্র পাঠককে এটাও উপলব্ধি করাবে, কোনো কর্মই ছোট হয়না। উচ্চ শিক্ষিত হলেই যে সরকারি চাকরি কিংবা কর্পোরেট জগতের বাসিন্দা হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। সৎ পথ অবলম্বন করে যেকোন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করাটাও অধিক সম্মানের। ~শাহাদাত আলী খান: সুখ-দুঃখের চাদোয়া দিয়ে মোড়ানো পুরো উপন্যাস জুড়ে অল্পস্বল্প বিনোদনের জন্য এই চরিত্রটা আমার কাছে চমৎকার লেগেছে।পড়াশোনার প্রতি পূর্ব পুরুষদের মতোই ভীষণ অনিহা তার। নায়ক হওয়াটাই বলা চলে তার স্বপ্ন। টিকটক নামক রঙিন দুনিয়ায় দিন-রাত বেমালুম ভুলে মজে থাকাই তার নিত্যকর্ম। এই চরিত্রের এক একটা সংলাপ পড়ে আমি একা একাই প্রফুল্লচিত্তে হেসেছি। ~জোসনা: জোসনা নামটা শুনলেই কালজয়ী সেই বাংলা সিনেমা 'বেদের মেয়ে জোসনা'র কথা মনে পরে যায়। ঠিক তেমনই বেদে সর্দারের মেয়ে জোসনা ওরফে টিকটক জগতের প্রিন্সেস মুনলাইট। শাহাদাত আলী খানের থেকেও একটু বেশি বিনোদনে ভরপুর আর ভীষণ আদুরে ছিল এই জোসনা চরিত্রটা। ~মধুমিতা হোসেন: কি নামে ডাকব এই চরিত্রকে? মাম্মির হানি, তার ব্যক্তিগত পুরুষের আগুন ফুল না কি শুধুই মধুমিতা! এই এতো এতো আদুরে নামের ভীড়ে বাস্তবিকই ভীষণ আদুরে ছিল এই চরিত্রটা। প্রথম দিকে তার আচরণে হয়তো যে কেউ তাকে শহরের বকে যাওয়া উশৃঙ্খল, অহংকারী, নাক উচু মেয়ে ভেবে শ-খানেক গা লি দিয়ে ফেলবে মনে মনে। কিন্তু যারা এই কাজটা করবে তারাই গল্পের একটু গভীরে গিয়ে পূণরায় নিজেকে গা ল ম ন্দ করতে বাধ্য হবে এমন একটা আদুরে, মিষ্টি চরিত্রকে নিয়ে নেগেটিভ ভাবার কারণে। প্রতিটা মানুষের বিকাশ ঘটে তার পরিবার এবং আশেপাশের পরিবেশ থেকেই। সেই হিসেবে মধুমিতা যে পরিবেশে আর যে মানুষের সহচর্যায় বেড়ে উঠেছে, তার মাঝে উপন্যাসে উল্লেখিত ঐটুকু আচরণ খুব বেশি বেমামান নই। বরং এটুকু না থাকলেই বেমামান মনে হতো। উপন্যাসের শেষ অবধি ভীষণ মিষ্টি একটা আবেশ ছড়িয়েছে এই চরিত্র। বইটি কেন পড়া দরকার: আমার মতে রংমহল শুধু একটা উপন্যাস নই,বরং এক টুকরো জীবন।যেখানে হাসি-কান্নার সুর, সম্পর্কের টানাপোড়েন, আর জীবনের গভীর মর্মবাণী লুকিয়ে আছে। লেখক আফিফা পারভীন পুরো উপন্যাস জুড়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সুনামগঞ্জের লোকালয়, গ্রামীণ ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা ফুটিয়ে তুলেছে।এছাড়াও গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক জীবনের দ্বন্দ্ব এবং পারিবারিক মূল্যবোধকে লেখক এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যা একটু হলেও পাঠকের সুস্থ মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়তা করবে। মূল কথা, সুস্থ্য, সুন্দর একটা সাহিত্যের রূপ-রস আচ্ছাদন করার জন্য হলেও পাঠকদের এই 'রংমহল' উপন্যাসটা পড়া প্রয়োজন।
Was this review helpful to you?
or
বুক রিভিউ উপন্যাস- রংমহল। লেখক: আফিফা পারভীন প্রকাশনী: ছাপাখানা। প্রচ্ছদ: ফাইজা ইসলাম #পাঠ_প্রতিক্রিয়া অফটপিক: প্রায় অনেকগুলো বছর আগে আমার আব্বা সুনামগঞ্জের দিরাই গিয়েছিলেন আমার এক মামার সাথে। আব্বা আসার পর যে বর্ণনা পেয়েছিলাম তা অনেকটা এরকম- হাওর পাড়ের দিরাইয়ে চারিদিকে শুধু থৈ থৈ পানি। পানি আর পানি। নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন উপায় নাই। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যেতেও তাদের নৌকা লাগে। আর আছে তাদের অঢেল মাছ। জেলেরা মাছ ধরে বিক্রির জন্য বাড়ি বাড়ি নিয়ে আসে নৌকায়। বাড়ির বউয়েরা মাছ কিনে ধান দিয়ে। টাকার চাইতে ধানই এখানে বিনিময় মাধ্যম হয় বেশি। এত এত বৈচিত্র্যময় গল্প শুনে শুনে খুব ইচ্ছে ছিল দিরাইয়ে ঘুরতে যাওয়ার। মামাও নিয়ে যেতেন কিন্তু আব্বা মানলেন না। এত পানির মাঝে তার বাচ্চাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সেখানে যাওয়া হয়নি আর। এত্তগুলো দিনের অপেক্ষার পর এবার দিরাই ঘুরা হলো আফিফা আপুর কল্যাণে। সাথে ছিল শেহজাদ, মধুমিতা আর রংমহলে থাকা তাদের পরিবার। এখন শোনাই সেই গল্প। ?প্রচ্ছদ ও বাইন্ডিং: রংমহলের প্রচ্ছদ ভীষণ সুন্দর। আহসান মঞ্জিলের আদলে তৈরি জমিদার বাড়ি, সাথে পুকুরঘাট সবমিলিয়ে রাজকীয় একটা ভাব। কিন্তু এই প্রচ্ছদের আসল সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে হলে ধৈর্য ধরে বইয়ের ৪৪০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত যেতে হবে। পাঠক হিসেবে আমার অনেক অনেকগুলো বই পড়া হলেও এমন ঘটনার সাক্ষী এই প্রথম হলাম। এই ব্যাপারটা এত চমকপ্রদ, এত্ত ইউনিক, পড়তে পড়তে অভিভূত মন নিয়ে বই বন্ধ করে প্রচ্ছদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। অসাধারণ অনুভূতি। আর প্রকাশনার কাজও খুবই চমৎকার হয়েছে। চমৎকার বাইন্ডিং, কাগজের মান উন্নত।এত বড় বই, পড়তে গিয়ে ছিড়ে ফেটে যাওয়ার ভয় লাগেনি। ?রংমহল ৪৮৮ পৃষ্ঠার বিশাল কলেবরের বই। এটা শুধু সাইজেই নয়, বরং কাহিনির ব্যাপ্তি, অনেকগুলো চরিত্রের উপস্থিতি, মানব সম্পর্কের বর্ণনা ও বহুমাত্রিক অনুভুতির মিশ্রণ এবং শান শওকতেও রয়েল একটা বই। লেখকের অনেক পরিশ্রমের ফসল এই বই। একদম প্রথম পাতা থেকে শুরু তার পরিশ্রমের নমুনা। বিশাল ব্যাপ্তির এই বইয়ের সম্পূর্ণ নিখাদ প্রতিক্রিয়া দেখানো তাই যে কারো জন্যই দু:সাধ্য। আবার রিভিউয়ের ব্যাপ্তি বেশি বড় আকার ধারণ করলে সেটা পড়তেও আলসেমি বা অনীহা তৈরি হয়। তাই আমি শুধু নিজের অনুভুতিটাই এখানে শেয়ার করছি। ?গল্পটা মূলত জমিদারিবিহীন জমিদার শেহজাদ আলী খান ও তার পরিবার কেন্দ্রিক। রংমহল তাদের পূর্বপুরুষের তৈরি রং জ্বলা, পলেস্তারা খসে পড়া, আপাত দৃষ্টিতে ভগ্নপ্রায় পৈতৃক ভিটা। তার অবস্থান বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার মধুপুর গ্রামে। আপাতদৃষ্টিতে এই অবস্থান বর্ণনাটা সাধারণ লাগলেও লেখক সুনামগঞ্জ সম্পর্কে এত নিখুঁত, তথ্যবহুল ও বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন যে সিলেটবাসী হয়েও আমিই এতকিছু জনতাম না। সহজেই অনুমেয় লেখক এ বিষয়ে অনেক ঘাটাঘাটি করেই সঠিক তথ্য উপাত্ত খুঁজে নিয়েছেন। এখানে সুনামগঞ্জ ও এর আশপাশের প্রসিদ্ধ জায়গার পাশাপাশি বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এবং তাদের উপর পরিবেশগত যে প্রভাব সেটাও উঠে এসেছে। ?নদী ও হাওর বেষ্টিত দিরাইয়ের টাংগুয়ার হাওর, নীলাদ্রি লেক, শিমুল বাগান, যাদুকাটা নদী, টেকার হাট প্রভৃতির এত সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন যে, প্রতিটি জায়গাই চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। বিশেষভাবে টাংগুয়ার হাওর সম্পর্কে এত ডিটেইলস বর্ণনা ছিল, ভীষণ চমকপ্রদ। আগে শুধু ভরা বর্ষায় টাংগুয়ার হাওর দেখার শখ ছিল আমার এখন সেটা শুকনো মৌসুমে দেখার ইচ্ছেটাও প্রবল হয়ে গেছে। আর এটা আফিফা পারভীন আপুর লেখার শক্তিশালী একটা দিক বলে আমি মনে করি যা তার লিখনশৈলী মনকে পর্যটক বানিয়ে তুলে। ?রংমহল একটা বাড়ির নাম হলেও এটা মূলত হরেক রকম মানুষের মিলনস্থলও বলা যায়।অলস জমিদার শরাফত আলি খান তার পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া সম্পত্তি ভোগ বিলাসে ব্যয় করেছেন। অকাল মৃত্যু ঘটে তার। কিন্তু তার মৃত্যুতে অকূল পাথারে ভাসতে থাকে তার স্ত্রী ও সন্তানেরা। হামিদা খানম অলস ও লম্পট জমিদারের স্ত্রী হিসেবে তার জীবনও একটা আলাদা ইতিহাস। তবে শেষ পর্যন্ত তার প্রজ্ঞা ও মেধার গুণে শেষ সম্বলটুকু আকড়ে ধরেন শুভাকাঙ্ক্ষীর সহায়তায়। তিন ছেলে শাফকাত, শেহজাদ ও শাহাদাত এবং একমাত্র মেয়ে জান্নাত। এরাই রংমহলের আসল বাসিন্দা, কিন্তু তাদের সাথে বসবাস করে বিভিন্ন সময়ে আশ্রিত আরও জনা পঞ্চাশেক মানুষ। #চরিত্র_বিশ্লেষণ ?রংমহল হলেও হতে পারত পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া সম্পত্তি ভোগ বিলাসে উড়িয়ে দিয়ে লম্পট জমিদার শরাফত আলি খানের স্ত্রী সন্তানের টিকে থাকার গল্প। কিন্তু,,,,, ?এখানে একজন হামিদা খানম আছেন, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেও ভাইয়ের বউয়ের আক্রোশের শিকার হয়ে মাতাল, লম্পট জমিদারের স্ত্রী হয়ে অজঁপাড়া গাঁয়ের বউ হিসেবে টিকে থাকার লড়াই করে গেছেন আজীবন। এটা তার অভিযোজনের গল্প হতে পারত। কিন্তু ?এখানে একজন শাফকাত আলী খান আছে,শ্রাফত আলী খানের বড় পুত্র। যে কিনা তার বাবার কার্বন কপি। অলস, লোভী, হিংসুক, লম্পট, বউ পেটানো স্বভাব কোনটা রেখে কোনটা বলা উচিত সেটাও ঝমেলার ব্যাপার। ?এখানে আছে একজন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়ানো টিকটক প্রিন্স শাহাদাত আলি খান। জমিদারের ছোট পুত্র, কিন্তু তার রক্তে ছিল হামিদা খানমের প্রভাব বেশি মাত্রায়, তাইতো তার স্ত্রীর সাহচর্যে নিজেকে বদলাতে তার বেগ পেতে হয়নি। ?আছে একজন জোছনা, যে বেদের মেয়ে হয়েও তার চিন্তা চেতনা ও পরিশ্রমী সত্ত্বা দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ দিতে পেরেছিল। ?আছে একজন রামিসা। ভাগ্যবিড়ম্বিত এক নারী যার স্বামী শাফকাত আলী খান। এরচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর বোধহয় হতেই পারে না। ?আছে হামিদা খানমের মিষ্টি মেয়ে জান্নাত। সেও রংমহলের বিশাল এক অনুষঙ্গ। পড়শোনা আর সাজগোজ নিয়েই ছিল তার জগত। ?এখানে হাওরপাড়ে আছে গ্রামের বাইরের একজন বিশেষ মানুষ, ডা: তাসরিফ। মা বাবাহীন এতিম, যার অসুস্থতায়ও দুমুঠো ভাত নিজেই রান্না করে খেতে হয়। দুষ্টুমির আড়ালে তার গোপন অশ্রুকণা নিয়েও হতে পারত একটা গল্প। ?এখানে একজন বাদল আছে, হাওরের পেটে সহায় সম্পত্তি, বাবা-মা সব হারিয়েও যে নি:স্ব ছিল না কখনো। ?কিংবা জমিদার গিন্নির সবচাইতে বিশ্বস্ত মানুষ রমিজউদ্দিন। হাইস্কুলের শিক্ষক উনি। শেহজাদ তার মানসপুত্র। বড় অসময়ের বন্ধু তিনি, গল্পটা তার সঠিক সময়ে হলে কিন্তু অনেকের প্রতিই ইনসাফ করা হত। ?বলা হয়নি রিনির কথা। মধুপুরের মতো গহীন গ্রামেও হরেক রকমের গোলাপের বাগান আছে তার। আগুলফুলটা তার বাগানেই পাওয়া। রমিজ উদ্দিনের মাস্টারের কন্যা সে।কিন্তু বাবার শিক্ষা মানসপুত্র এবং আপনকন্যা কে কতটুকু নিজের মধ্যে ধারণ করতে পেরেছে- এ এক বিশাল ধাঁধা। ?আছেন ফাতেমা বিবির মতো নি:সার্থ মানুষ। একজন বিশ্বস্ত ড্রাইভার মজনু কাকা যে নিজের পরিবার ভুলে আঁকড়ে আছে রংমহল। আরো আছে সোহাগী, রহস্যময়ী আনন্দী রংমহলের ছোট্ট দুই সদস্য শাকের শাহেদ। তাছাড়াও ছড়ানো ছিটানো বহু জাত ও মতের মানুষ। ?রংমহলের বাসিন্দা না হয়েও এই বইয়ের বিশাল জায়গা জুড়ে আছে আরেকটি পরিবার।। হামিদা খানমের ভাই মাইনুল হোসেন। যে কিনা নিজেকে টাকা রোজগারের মেশিন বানিয়ে রেখেছে। আর তা উড়ানোর দায়িত্ব তার স্ত্রী শালিনী রেহমানের। এরা অভিজাত পাড়ার বাসিন্দা হিসেবে আপাত নিরীহ মনে হলেও মূলত এরাই রংমহলের অনেক ঘটনার চড়াই উৎরাইয়ের ঘটি। তাদেরই একমাত্র মেয়ে মধুমিতা হোসেন। ?রংমলের মূল আকর্ষণ, প্রাণপুরুষ জমিদার শেহজাদ আলী খান। মায়ের শেহজাদা, সুদর্শন, সুপুরুষ। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও নিজেকে জেলে পরিচয় দিতেই সে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এমন অনেক পরিবারেই হয়ে থাকে যে, কোন একজন ব্যক্তির উপর নির্ভর করে পুরো পরিবারই নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করে। শেহজাদ আলী খান এমনই এক নির্ভরতার প্রতীক। মাছের ঘের, হাঁসের খামার, গরুর খামার এগুলোই তার পরিবার সামলানোর উপকরণ। নিশ্চিত নির্ভরতায় বয়ে চলা এক নদী। যার প্লাবনেও মাটি উর্বর হয়। ভার বইতে বইতে ক্লান্ত হয় না, কিন্তু মাঝে মাঝে যখন তার আক্ষেপ মাখা স্বরে বলে উঠে - "সবসময় শুধু আমিই কেন আম্মা?" তার সেই কণ্ঠে হামিদা খানমের সাথে সাথে পাঠকমনও ভারাক্রান্ত হয় নিশ্চিত। ?রংমহলের অনাকাঙ্ক্ষিত কিন্তু পরম প্রিয় অতিথি জমিদার শেহজাদ আলী খানের মামাত বোন মধুমিতা হোসেন। মধুমিতা অপরূপ সুন্দরী। কিন্তু উড়নচণ্ডী স্বভাবের কারণে শেহজাদ আলী খান তাকে সহ্যি করতে পারে না। কিন্তু মধুমিতার সৌন্দর্য যতটা বাইরে প্রকাশ্য এরচাইতেও বেশি নির্মল সুন্দর তার মন মনন। যতটা সহজে সে ভুল করে, ভুল স্বীকার করেও সে অনায়াসে। আর এটা তো সর্বজন স্বীকৃত যে মানুষের ভেতরের সৌন্দর্য তার বাইরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে বহুগুণে। তার উপচে পড়া রূপের ছটা আগুন ফুলের স্নিগ্ধতা দেয়। কিন্তু তার জার্নিটা বরং অন্যান্য সবার চাইতে একটু বেশিই কঠিন। বাবা মায়ের সান্নিধ্য ছাড়াই বেড়ে উঠা স্নেহলোভী সন্তান সে। মায়ের স্বপ্ন মডেল হবে। সেই স্বপ্নের পথে হাটতে গিয়ে যে হোঁচট খায়। এরপর থেকেই বদলে যায় তার জীবনের গতিপথ। বিশ্বমঞ্চে ক্যাটওয়াকের স্বপ্ন ভুলে হাঁটা শুরু হয় তার দিরাইয়ের কাঁদামাখা পথে। সেই কঠিন যাত্রার সরল বর্ণনা মিলে রংমহলে। শেষ পর্যন্ত সে কি টিকে ছিল সেখানে নাকি অনুসরণ করেছিল মায়ের দেখানো পথ জানতে হলে রংমহলে যেতেই হবে। ?পাঠ_প্রতিক্রিয়া: ফ্ল্যাপের কথা অনুযায়ী রংমহল মানব জীবনের মতোই বিশাল, বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময়। হরেক রকম অনুভুতির এক বর্ণাঢ্য আখ্যান। বইটা পড়ার পর আমার অনুভুতিও এমন বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য ছিল। একটা ঘোরের মত অবস্থা বলা যায়। বিশেষ ভাবে এখানে শেহজাদ ও তার স্ত্রীর কথোপকথনের অংশগুলো খুবই মিষ্টি আবহের ছিল। শেহজাদের অকপট সব অনুভুতির প্রকাশ, দিরাইয়ের হাওর, আগুন ফুল, স্থানীয় সংস্কৃতির ধামাইল ও বিভিন্ন সংগীতের ব্যবহার, জোছনার মজাদার ভর্তা, শাহাদাতের দিগদারি, শাকের শাহেদের দুষ্টু মিষ্টি স্মৃতি, মধুমিতার স্নিগ্ধ কিছু আচরণ সবমিলিয়ে মাথায় খেলছিল মিষ্টি একটা আবহ। কিন্তু রংমহল আমাকে একটা জায়গায় আটকে রেখেছিল বেশ শক্ত করে। এর মূল বক্তব্য কী? পড়া শেষে প্রায় সপ্তাহ খানেক এই বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতে অবশেষে মন সুরাহা করে। রংমহল ইট কাঠের নোনাধরা, স্যাঁতলা পড়া ভগ্নপ্রায় ভবনকে ঘিরে গল্প হলেও এর মূল বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ মনোস্তাত্তিক। কারণ সব ছাপিয়ে এখানে মূল আলোচ্য হয়ে উঠেছে মানুষ, মনুষ্যত্ব ও মানব আচরণ। এই মানব আচরণের মূলে কী আছে? পুরো উপন্যাসেই প্রচ্ছন্নভাবে এই ইঙ্গিতই পাওয়া যায়। রক্ত বা জিনগত প্রভাব, বংশের কৌলিন্য, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, শিক্ষার প্রভাব, টাকা-পয়সা না কি লালন পালনগতভাবে পাওয়া শিক্ষা ও আরচণ - কোন বিষয়টা ব্যক্তিকে মনুষ্যত্ববোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে? এই বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিটি মানুষের উপস্থিতি আছে এই রংমহলে। শেহজাদ, মধুমিতা, শাফকাত, শাহাদাত, জোছনা, রামিসা, ডা: তাসরিফ, রিনি এমনকি সর্বস্ব হারানো বাদলও এর অন্তর্ভুক্ত। এদের প্রত্যেকেরই চরিত্র গঠনে সবগুলো উপকরণের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কারো রয়েছে একটি, কারো একাধিক কিংবা কারো কোনটাই নেই। আমার মতে মানব আচরণ বিকাশে শিশুকে তার মা, বাবা, অভিভাবক কিংবা শিক্ষক শুধু পথ প্রদর্শকই হিসেবে থাকে। কিন্তু তার মনুষ্যত্ববোধটা সম্পুর্ণরূপে ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তাভাবনার উপর নির্ভরশীল। শেহজাদ,রিনি কিংবা শাফকাত এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ বলা যায়। হয়তো আমার কথাগুলো এলোমেলো লাগছে, পুরোটা বুঝতে ও উপলব্ধি করতে পড়তে হবে রংমহল। #কেন_বা_কারা_পড়তে_পারবে_বইটি ?যারা সামাজিক রোমান্টিক উপন্যাস পছন্দ করেন এই বইটা নিশ্চিত তাদের ভালো লাগবে। কিন্তু লুতুপুতু প্রেম খুঁজতে গেলে বলব এই বইটা না পড়তে। আবার আমার মতো যারা সিলেটের পাঠক আছেন, তাদেরকে বলব বইটা অবশ্যই পড়বেন। নিজ মাতৃভূমিকে অন্যের দৃষ্টিতে দেখতে যে কী শান্তি আলহামদুলিল্লাহ। আবার যারা ভ্রমণপিপাসু পাঠক আছেন, এই বইটা তাদের জন্য খুবই উপকারী হবে। সুনামগঞ্জের প্রতিটি দর্শনীয় স্থানের চমৎকার বর্ণনা আছে এতে। ?নেতিবাচক কিছু আসলে বলার নেই। কোন প্লটহোল ছাড়াই প্রতিটি চরিত্রের পূর্ণ পরিণতিসহ বইটা শেষ হয়েছে। বলা যায় কোন আক্ষেপ নেই এতে। তবে একটা বিষয় আছে যা মুদ্রণের ত্রুটি বলা যায়। দুই তিনটা খুবই সাধারণ শব্দ ভুল বানানে এসেছে। আমরা যারা লেখক আফিফা পারভীনকে চিনি তারা জানি তিনি বানানের ব্যাপারে কতটা সতর্ক। তাই আশা করব এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বানান পরবর্তী এডিশনে ঠিক হয়েই আসবে। ?পরিশেষে বলা যায়, রংমহল আফিফা পারভীন আপুর অনেক যত্নের সৃষ্টি। তার সহজ সাবলীল লিখনশৈলী নিয়ে যতই বলব কম হয়ে যাবে। সম্পূর্ণ গ্রাম্য পরিবেশ অনুযায়ী হাওর পারের মানুষের জীবন মান পরিপূর্ণভাবে উঠে এসেছে। প্রতিটি ছোটখাট বিষয়ে নিখুঁত বর্ণনা বইয়ের সাথে চমৎকার মেলবন্ধন তৈরি করে দেয়। রংমহল পড়াকালীন তো বটেই বই শেষ করেও এর রেশ থেকে যায় মনে। এককথায় যাকে বলে পয়সা উসুল বই। লেখকের জন্য শুভকামনা। এভাবেই আপনি আমাদের জন্য লিখে যান, আপনার স্বপ্নসারথি হতে আমরা আছি পাঠকের বেশে।
Was this review helpful to you?
or
বই: রংমহল লেখক: আফিফা পারভীন প্রকাশনী: ছাপাখানা প্রচ্ছদ: ফাইজা ইসলাম রিভিউতে: ফাহারিয়া লিজা ★পাঠ-প্রতিক্রিয়া: মানবজীবন বিভিন্ন রঙের সমষ্টি। ঠিক তেমনি হরেক রঙের মতো রঙিন বই "রংমহল"; যে রংমহলের সাথে জড়িয়ে আছে কিছু মানুষের রং-বেরঙের নানা ঘটনা। লেখক আফিফা পারভীনের বই পড়লে লেখাগুলো ভীষণ অনুভব করি। কাহিনীগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠে। সুনামগঞ্জের প্রকৃতি সৌন্দর্য্য না দেখেও তা অনুভব করেছি। বার বার মনে হয়, দিরাইয়ের হাওরে ছুটে যাই। বইটিতে যেমন সুনামগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বর্ণনা রয়েছে ঠিক তেমনি আছে নানা ইতিহাস ও ঐতিহ্য।সুনামগঞ্জের এই চমৎকার প্রকৃতিতে লুকিয়ে আছে রংমহলের নানা ঘটনা। রংমহলে একাধারে ফুটে উঠেছে প্রেম-অপ্রেম, ভালোবাসা, হিংসা-বিদ্বেষ, সুখ-দুঃখ, পাওয়া-না পাওয়া সহ নানা রহস্যময় ঘটনা। রংমহল ধারণ করেছে এক নিকৃষ্ট অতীত, যা কিছু মানুষের জীবনকে এলোমেলো করে দেয়। রংমহল পড়ে কখনো কেঁদেছি, কখনো না হেসেছি। বইয়ের কিছু কিছু কাহিনী সাদামাটা হলেও লেখকের লিখনশৈলী থেকে শুরু করে চরিত্র বিশ্লেষণ সব কিছু চমৎকার। শেহজাদের রংমহল যেমন রঙিন ঠিক তেমনি রঙিন তার আ*গুন ফুল। শেহজাদের প্রেম, ভালোবাসা সবই ভীষণ মনোমুগ্ধকর। বইটি পড়ে সুখ সুখ অনুভূতিতে ডুবে ছিলাম। ভালোবেসেছি শেহজাদের মতো রংমহলকে। ৪৮৮ পৃষ্ঠার এই বইটি, যত পড়বেন তত ভালো লাগছে। একঘেয়েমি লাগবে না। অল্প একটু পড়লে পুরো বই না পড়ে শান্তি পাবেন না। বইটি বড় হওয়ায় অল্প কিছু টাইপি মিস্টেক চোখে পড়েছে। কয়েকটা শব্দে বাড়তি (কার) যোগ হয়েছে। ১৯৬ পৃষ্ঠায় একটা জায়গায় মধুমিতা আর রামিসা আছে, ওখানে মধুমিতা আর জোছনা* হবে। বইটিতে আমাদের সবার জন্য কিছু মেসেজ রয়েছে, যা আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।রংমহল বইয়ের সাথে সবারই রঙিন সময় কাটবে আশা করি। ★প্রিয় চরিত্র: রংমহল বইয়ের বেশিরভাগ চরিত্র আমার ভালো লেগেছে। বিশাল এই উপন্যাসের প্রয়োজনের তাগিদে নানা চরিত্রের সন্নিবেশ ঘটেছে। প্রতিটি চরিত্রে রয়েছে নানা গল্প। রংমহলের কেন্দ্রীয় চরিত্র শেহজাদ আর মধুমিতা। তাদের ছাড়া এই "রংমহল" অসম্পূর্ণ। শেহজাদ: এই মানুষটা তার পরিবারের ঢাল। নিজের চিন্তা না করে, পরিবারের প্রতিটি সদস্যের হাসি-খুশির চিন্তায় সে মগ্ন থাকে। শেহজাদ নিঃসন্দেহে সেরা সন্তান, সেরা ভাই, সেরা স্বামী কিংবা সেরা বাবা। যার মতো একজন মানুষ প্রতিটি নারীর স্বপ্নের পুরুষ হয়; কিন্তু তার হৃদয় জুড়ে রয়েছে একজন নারীর জন্য অগাধ ভালোবাসা, সম্মান। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই চরিত্রটি তার জায়গায় স্থির থেকেছে। গাম্ভীর্য ধরে রেখেও সকলের মনে নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছে। এই চরিত্রের তুলনা হয় না। মধুমিতা: মাম্মির হানি থেকে সে জমিদার গিন্নি হওয়ার গল্পটা অন্যরকম। একসময় শেহজাদের মতোই পরিবারের ঢাল হয়েছে। প্রথম প্রথম মাম্মির হানির কিছু বিষয় ন্যাকামি মনে হবে, কিন্তু জমিদার গিন্নি হিসেবে সেই অসাধারণ। হুট করে মধুমিতার কিছু সাহসী পদক্ষেপ ভীষণ সুন্দর ছিল। হামিদা খানম: মায়ের ভালোবাসার কোনো তুলনা হয় না। জন্ম না দিলেও ভালো একজন মা হওয়ায় যায়। যার জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে রংমহল আর তার মানুষদের ঘিরে। তার সমস্ত অপ্রাপ্তিগুলো মুছে যায় পুত্রের মুখ দেখে। জমিদার গিন্নি কিংবা মা হওয়া এই চরিত্রটি অন্যরকম সুন্দর। শাহাদাত আর জোছনা: প্রথম প্রথম এই দুইজনের কিছু আচার-আচরণ বাচ্চা সুলভ মনে হলেও এরা রংমহলকে ভীষণ ভালোবাসে। আস্তে আস্তে এই দুইটা চরিত্র সুন্দরভাবে উন্মোচিত হয়েছে। এই দুই চরিত্রকে পড়ে ভীষণ হেসেছি। শাহাদাতের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ একটু অন্যরকম। প্রথম ভেবেছিলাম জোছনা ভালো হবে না, কিন্তু আস্তে আস্তে এই চরিত্রটা আমাকে মুগ্ধ করেছে। পরিবারকে ভালোবেসে আগলে রেখেছে। কল্লোল: এই উপন্যাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া চরিত্র। মানুষের জীবনে একজন বিশস্ত বন্ধু খুবই প্রয়োজন। অল্প সময়ের উপস্থিতিতেও এই চরিত্রটি অনন্য। এছাড়াও রমিজ উদ্দিন, জান্নাত, তাসরিফ বাদল, আনন্দী সহ আরও বেশ কয়েকটা চরিত্র বেশ ভালো লেগেছে। ★কেন বইটা পড়বেন: বর্তমান সময়ে আমি যাদের রোমান্টিক কিংবা সমকালীন জনরার লেখা পড়ি তাদের মধ্যে সবচেয়ে শালীন, মার্জিত, মনোমুগ্ধকর আফিফা পারভীনের লেখাকেই মনে হয়৷ তার লেখা একবার পড়লে বার বার পড়তে ইচ্ছে করে। প্রতিটি উপন্যাসের কাহিনী, চরিত্র মন ছুঁয়ে যায়। রংমহল বইতে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের এক প্রাচীন জনপদ সুনামগঞ্জের আখ্যান। যা ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের দিক থেকে অনন্য। রংমহলের পাতায় পাতায় লেখা আছে, এইসব জানা-অজানা নানা গল্প। এইসব আমাদের দেশের ঐতিহ্য; যা সকলেই জানা দরকার। একটি পরিবার মানে আস্ত একটা ভালোবাসা। একটি পরিবারে হরেকরকমের মানুষ থাকে। তবুও তাদের সবাইকে ভালোবেসে একসাথে চলতে হয়৷ রংমহলের ভালোবাসাময় কিছু সম্পর্ক সত্যিই অসাধারণ। রক্তের সম্পর্ক না থেকেও কিছু মানুষের ভালোবাসা অনন্য। প্রতিটি বাবা-মায়ের উচিত তার সন্তানকে যথেষ্ট সময় দেওয়া। তাকে সুশাসনের মাধ্যমে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। বাবা-মা শাসনের অভাবে কিংবা তাদের অনাগ্রহের কারণে সন্তানরা বিপথে ধাবিত হয়। প্রতিটি মানুষের জীবনে একজন ভালো অভিভাবক প্রয়োজন। বইতে কিছু কিছু শিক্ষনীয় বার্তা রয়েছে। একজন মানুষ কোথায় জন্মগ্রহণ করেছে কিংবা কোন পরিবেশে বড় হয়েছে সেটা মুখ্য নয়। মানুষ তার কাজ-কর্মের মাধ্যমেই সবার ভালোবাসা পায়। এই জন্যই বলা হয়, "জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো।"
Was this review helpful to you?
or
?বই - রংমহল ?লেখক - আফিফা পারভীন ?প্রকাশনী- ছাপাখানা ?প্রচ্ছদশিল্পী - ফাইজা ইসলাম ?পাঠ-পরবর্তী প্রতিক্রিয়াঃ রংমহল - সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে থাকা এক জমিদার বাড়ির গল্প, সেই বাড়ির মানুষ ও তাদের সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির গল্প, স্বপ্ন বোনার গল্প, কারো কারো স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখার গল্প, সর্বোপরি বৈচিত্র্যময় জীবনে ভাগ্যের লীলাখেলার বর্ণিল এক উপাখ্যান। প্রেম, প্রকৃতি আর সম্পর্কের নানান রুপ রংমহলের মূল বিষয়। বিচিত্র জীবন আর তার বৈচিত্র্যময় বাঁকের সাপেক্ষে রংমহলের গল্প এগিয়ে যায়৷ পাশাপাশি জীবনের নানান বাঁকে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা এবং সেগুলো প্রকাশের ক্ষেত্রে দারুণ ভারসাম্য বজায় রেখেছেন লেখক। যা উপন্যাসটি পড়ার সময় চরিত্রগুলোর মায়ায়, চরিত্রগুলোর আদলের সাথে পাঠককে জড়িয়ে রাখছিল। প্রতিটি সম্পর্ককে নিটোলভাবে জড়িয়ে কি যে সাবলীল আর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্ণনা করা হয়েছে বইটিতে। এক্ষেত্রে চরিত্রে মজে যাওয়া পাঠকমাত্রই উপন্যাসটির আসল স্বাদ আস্বাদন করতে পারবেন। আমি পুরোপুরি নিতে পেরেছি কিনা, সেটা তো জানি না। তবে যতটুকুই পেরেছি, রংমহলের সাথে সময়টা অসাধারণ কেটেছে। রংমহলের গল্প সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের মধুপুর গ্রামের জমিদার বাড়ি রংমহলকে নিয়ে শুরু হয়। হাসি-ঠাট্টা, আনন্দ-বেদনা, কুটিলতা- সরলতার পাশাপাশি অবস্থানের মাঝেই রংমহলের মানুষগুলোর জীবন নদী বাহিত হতে থাকে। এখানে লক্ষণীয় বিষয়, পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সেখানকার জীবনাচার, হাওর-বিলের সাথে রংমহলের মানুষগুলোর জীবনধারণের বৃত্তান্ত বেশ যৌক্তিক ও ভালো ছিল। উপন্যাসের আবহের সাথে সাথে সুনামগঞ্জের হাওরের টানে, ভাটির টানে যেন জড়িয়ে যাচ্ছিলাম। জমিদার বাড়ির ছেলের পেশা জেলে! ব্যাপারটায় অবাক হলেও কাহিনির আবহে তার পেছনের কারণ জানতে পেরে বলেই বসেছি - "ইন্টারেস্টিং"। আসলে কাহিনির শুরু থেকেই রংমহল তার বৈচিত্র্যময় রুপের ঢালি সাজিয়ে বসেছিল যেন! এই উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রের উপস্থিতি, তাদের আগমন-প্রস্থান এবং সংলাপ প্রদান এ বিষয়গুলোর কোথাও কোনো অপরিমিতবোধ নেই, কোনো অপ্রাসঙ্গিক আলাপ নেই। সাথে আরেকটি জিনিসও বলি। সব জায়গার একটি নির্দিষ্ট আবেশ থাকে। রংমহল বইয়ে প্লেস এন্ড সিচুয়েশন ডিমান্ড অনুযায়ী লেখক সুনামগঞ্জ ও সেখানকার ঐতিহ্যকে লালন করা বাউলগণকে এবং বাউল শিল্প ও বাউল গানকে গল্পের প্রবাহে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যা পাঠক নিঃসন্দেহে বই পড়ার সময় উপভোগ করবেন, নতুন করে জানবেন এবং কোথায় একটা গিয়ে এর অন্তঃনির্হিত তাৎপর্য পাঠককে ভাবুক করে তুলবে, আবেশিত করে রাখবে। সাথে সুনামগঞ্জের উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থানসমূহ যথা -টাঙ্গুয়ার হাওর, নীলাদ্রি লেক, জাদুকাটা নদী ইত্যাদির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্ণনা বইকে আরো আকষর্ণীয় করে তুলেছে। গল্পে শহুরে উচ্চশ্রেণীর মানুষের উন্নাসিক,বেপরোয়া জীবনধারনের সচিত্র বর্ণনা যেমন ছিল তেমনি ছিল নিচু চোখে দেখা বেদেদের জীবনযাত্রার কিঞ্চিৎ ঝলক। আবার জমিদার বংশের বর্তমান মধ্যবিত্ত জীবনের বর্ণনাও উঠে এসেছে। এক কথায় রংমহল উপন্যাসে জীবন যেন সমান্তরালে চলেছে। কালের আবর্তনে আস্তর খসে পড়া জমিদার বাড়ির আভিজাত্য, চার দেয়ালের মাঝে লুকানো কিছু গূঢ় সত্য, রহস্য, অন্তরালে চলা কুটিলতা - এ সমস্ত বিষয়কে নিয়ে মধুপুর গ্রামে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে থাকা রংমহলের গল্পটা আসলেই হরেক রঙে রঙিন। এই উপন্যাসে বৈচিত্র্যময় জীবনের অনেক বৈচিত্র্যময় সম্পর্ক উঠে এসেছে। যেমন - কিছু নামহীন তবুও মায়ায় ঘেরা সম্পর্ক, কিছু সম্পর্ক দায় মেটানোর আবার কিছু এমন সম্পর্কের গল্প যা সবকিছুর উর্ধ্বে এছাড়াও আরও নানান সম্পর্কের গল্প আছে বইটিতে। মোদ্দাকথা, পুরো রংমহলের উপন্যাসটা এতোটা বিশাল, বর্ণিল যে এর পাতায় পাতায় পাঠক আমি এক অন্য জগতে হারিয়েছি, এক অন্য আবেশে মজেছি। ?চরিত্রকথনঃ রংমহল বইয়ে চরিত্রের সংখ্যা অনেক। বৈচিত্র্যময় এই সফরে অনেক চরিত্রকেই জেনেছি। তন্মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য এবং আমার বিশেষ প্রিয় চরিত্রকে নিয়ে একটু বলি - ?শেহজাদ - রংমহলের সবচেয়ে নজরকাড়া, মায়াময় চরিত্রের নাম "শেহজাদ"। বইয়ের পাতায় যখনই তার উপস্থিতি ছিল তখনই সে দ্যুতি ছড়িয়েছে। চরিত্রটি পাঠককে এমন ভাবে একাত্ম করে নেয় যেন শেহজাদের খুশিতে পাঠক খুশি আবার শেহজাদের আত্নত্যাগ, ধৈর্য্য, কষ্ট, যন্ত্রণা সেসব অনুভূতিগুলোও পাঠকের নিজের বলে মনে হয়। জীবন সম্পর্কে তার মনোভাব, বৈচিত্র্যময় জীবনের নিষ্ঠুরতা, সৌন্দর্যতা নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি - সবকিছু মিলিয়ে নিঃসন্দেহে রংমহল বইয়ে আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র শেহজাদ। ?মধুমিতা - স্বচ্ছ মানসিকতা, পরিশুদ্ধ হৃদয়ের মিষ্টি এক মেয়ে মধুমিতা। অষ্টাদশী মধুমিতার বালখিল্যতা, বেপরোয়া জীবনযাপনের মধ্যে খুব সন্তর্পনে ফেলা দীর্ঘশ্বাসটা পাঠক মনকে আবেগি করে তুলবে। সাথে পরিস্থিতি অনুযায়ী, সময়ের ধারাবাহিকতায় তার আচরণ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে যে পরিবর্তন সে আনে সেটা যেন হওয়ার ছিল। মধুমিতার রুপ, গুন, কথা এবং কাজ সবমিলিয়ে সে সত্যিই আগুন সুন্দর! ?জোছনা - এই বইয়ে আমার ভীষণ পছন্দের চরিত্র 'জোছনা'। সে তার নামের মতোই স্নিগ্ধ, সুন্দর এবং সাধারণের মাঝে অসাধারণ কেউ। শুরুতেই তার হাস্যরসবোধ, চটুলতায় ভীষণ মজা পেয়েছি আমি। তবে ধীরে ধীরে কাহিনির গতিশীলতার সাপেক্ষে জোছনার ব্যক্তিত্ব যেন সূর্যের আলোর মতোই তীব্র হয়ে উঠেছে। জন্ম নয় বরং কর্মই মানুষের মূখ্য পরিচয় - এ কথার উৎকৃষ্ট উদাহরণ জোছনা। তার ছাপ দীর্ঘদিন আমার মনে থাকবে। ?রিনি - মানব মন বড়ই জটিল। ছাই চাপা আগুনের ন্যায় রিনি হয়তো আগুনের ন্যায় জ্বলে উঠতে পারতো তবে কোথাও গিয়ে তার আত্মবিধ্বংসী প্রবণতা তাকে ছাই করে রেখেছে। উপন্যাসের এই একটি চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক ভিন্নতার প্রকাশ, দোদুল্যমান অবস্থায় আমি সংশয়ে ছিলাম। তার মনস্তাত্ত্বিক চিন্তার ভিন্নতা লেখক বেশ ধাপে ধাপে দেখিয়েছেন। কিছু কিছু পরিস্থিতে রিনি উপন্যাসের সেই চরিত্র যে কিনা ঘটনার প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। ?আনন্দী - নামের মতোই "আনন্দ" তার পরিচয় হবে? এমনটা ভাবলে ভুল। আনন্দী সমস্ত আনন্দ, কষ্ট এসবের উর্ধ্বে। এক আধ্যাত্মিক জীবনাচার আর সেরকম চিন্তাভাবনা তাকে বইয়ের অন্য সব চরিত্র থেকে আলাদা করে তোলে। খুব পছন্দের একটা চরিত্র সে আমার। তাকে নিয়ে উপলব্ধি নাহয় মনেই থাকুক। ?বাদল - বইয়ের পাতার ভাজে ভীষণ নিভৃতে থাকা বাদল যে ঠিক কখন আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে আমি বুঝতেই পারি নি। জীবন আমাদের থেকে অনেক কিছু নেয় এবং ফিরিয়েও দেয়। আমাদের হেরে গেলে চলবে না বরং জীবনের সাথে ছায়ার মতো লেগে থাকতে হবে। বাদবাকি জীবন যা দেওয়ার দিবেই। বাদল চরিত্রের এই মনোভাব আমার বিশেষ পছন্দের। ?কল্লোল - দমকা হাওয়ার মতো উপন্যাসে তার আগমন। বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল সে। কিন্তু তার নির্ভেজাল, অমায়িক ব্যক্তিত্ব এবং স্বচ্ছ মানসিকতায় সে পাঠকমনকে জয় করে নিবেই। অল্প কিছুক্ষণের উপস্থিতিতেই কল্লোলে আমার পছন্দের একটি চরিত্র হয়ে গিয়েছে। ?শাহাদাত - এই উপন্যাসের সবচেয়ে বিনোদনমূলক চরিত্র। এমন চরিত্রকে কি না ভালো লেগে পারা যায়? তবে বিনোদন ছাড়াও যখন তার চরিত্রে, ব্যক্তিত্বে, কাজে আরও নানান অপ্রত্যাশিত তবে ভীষণ আকাঙ্ক্ষার কিছু খুঁজে পাই তখন ভালোলাগাটা আরো বেড়ে যায়। এই চরিত্রের টিকটকার প্রিন্স শাহাদাত থেকে শাহাদাত আলী খান হওয়ার যে জার্নি তা রংমহলকে আরো রঙিন করে তোলে। রংমহল আরো অনেক চরিত্রের উপস্থিতিতে সয়লাব একটি বই। হাসিখুশি ডাক্তার তাশরিফ, শ্রদ্ধেয় চরিত্র রমিজউদ্দীন, রংমহলের গিন্নিমা হামিদা খানম, কিশোরী জান্নাত, শালিনী রেহমান, মাঈনুল হোসেন, ইতিশা, ইফতি, মজনু কাকা, শাফাকাত, রামিসাসহ আরও অনেক চরিত্রের বৈচিত্র্যময় জীবনের উপাখ্যান রংমহল। ?বইটি যেজন্য পড়া দরকারঃ একটি উপন্যাসের বই সাধারণত বিনোদনের উদ্দেশ্যে পড়া হয়। তবে বিনোদনের সাথে যখন জীবনবোধ এবং ভাবনার অবকাশ পাওয়া যায় সে ধরনের বইগুলো পাঠক আমার পছন্দের। আর আমি মনে করি পাঠকদের এই ধরনের বইগুলো পড়া দরকারও। রংমহল বইটিতে পাঠক একইসাথে জীবনবোধ, বিনোদন এবং ভাবনার অবকাশ পাবে। সুনামগঞ্জ সম্পর্কে অনেক তথ্যাদি গল্পের বর্ণনার ছলে জানা যাবে। বিশেষ করে সে জায়গার মানুষ, হাওর-বিলের সৌন্দর্য এবং সেখানকার মানুষের জীবনধারণে হাওরের উপর নির্ভরশীলতার ব্যাপার - এসব বিষয়ে পাঠক জানতে পারবে। জন্ম মানুষের যেখানেই হোক না, জন্ম পরিচয় কখনো মানুষের কর্ম পরিচয় থেকে বড় হতে পারে না। বইয়ের কিছু চরিত্রের মাধ্যমে এই দিকটি ভীষণ ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। বইয়ে দুটো চরিত্রের কাজের বৈপরীত্যের মাধ্যমে মানব জীবনের বৈচিত্র্যতার এক অনন্য দিক দেখিয়েছেন লেখক। একটি চরিত্র যে কিনা নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে নিজেকে নতুন ছাঁচে গড়েছে পরিবারের জন্য অপরদিকে আরেকটি চরিত্র যে কিনা পরিবারকে ছেড়েছে নিজের স্বপ্ন, ইচ্ছেকে আলিঙ্গন করার তীব্র ইচ্ছে নিয়ে। দুটো চরিত্রের এই বৈশিষ্ট্যের বৈচিত্র্যতা এবং তাদের পরিণতির মাঝেই লেখক পাঠকদের ভাবার অবকাশ রেখে যান, নতুন করে আরেকটু নিরিখ করে পর্যবেক্ষণ করার ইচ্ছেকে জাগিয়ে তুলেন। এরকম আরো নানান বিষয় আছে বইটিতে যা পাঠকমনকে ভাবুক করে তুলবে। উপন্যাসটির জমিদার জেলে। কিন্তু তার নিজের পেশা নিয়ে যে মনোভাব সেটা অনেক পাঠককেই অনুপ্রাণিত করবে নিশ্চিত। কোনো পেশাই তো ছোট নয়। কোনো কাজের মাধ্যমে সমাজে যদি নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে তবে সেটা নিয়ে টিটকারি, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য করার মানসিকতা পরিহার করা উচিত। মোদ্দাকথা, সম্পূর্ণ বইটিতে লেখক বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে নানান জীবনবোধের প্রকাশ করে গিয়েছেন। যা পাঠক তথা ব্যক্তি জীবনেরই অংশ। তবে বইটি নতুন করে পাঠকদের ভাবনার দরজায় কড়া নাড়বে। মন ও মস্তিষ্ককে আবার একটু ঝালিয়ে নিতে এবং নানান ঘটনার ঘনঘটার সাক্ষী হতে হলেও বইটি পড়া দরকার। রংমহল বৈচিত্র্যময় জীবনের উত্থান-পতনের বাঁকে বাঁকে অনেকগুলো মানুষের হৃদয়ের গল্প বলে যায়। দেখিয়ে যায় মানুষের জীবন সম্পর্কে নানান মনোভাবের বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গি। রঙে রঙিন রংমহলের দুনিয়ায় সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। হ্যাপি রিডিং।
Was this review helpful to you?
or
বুক রিভিউ ⚫ বই সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য - * বই - রংমহল লেখক - আফিফা পারভীন প্রকাশনী - ছাপাখানা প্রচ্ছদ - ফাইজা ইসলাম প্রথম প্রকাশ - নভেম্বর ২০২৪ দ্বিতীয় মুদ্রণ - ডিসেম্বর ২০২৪ ⚫ পাঠপ্রতিক্রিয়া - একটা বই কত রং ও রূপের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে, 'রংমহল' না পড়লে উপলব্ধিই হতো না। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেখক নিজের মধ্যে থাকা প্রতিভা ও জাদুকরী শব্দের সাহায্যে রঙের যে বৈচিত্রতা দেখিয়েছেন, নিঃসন্দেহে প্রতিটা শব্দে ও বাক্যে পাঠক অন্যরকম একটা স্বাদ পেয়েছে। আমি নিজেই বারেবারে ডুবে যাচ্ছিলাম শব্দের মায়ায়। মিশে যাচ্ছিলাম প্রতিটা দৃশ্য ও চরিত্রের মধ্যে। একেকটা চরিত্রকে পড়তে গিয়ে কান্নাহাসির দোলাচালে ভাসতে ভাসতে কখন যে মনের সর্বত্রে রং ছড়িয়ে নিয়েছি টেরই পাইনি। মানুষের জীবনের কোন গল্পটা এখানে ছিল না? উঁচুনিচু থেকে শুরু করে ছোটো-বড়ো বিভিন্ন পেশার মানুষের জীবনের খণ্ডচিত্র তুলে ধরতে গিয়ে গ্রামবাংলার চিরচেনা দৃশ্য, সুখ-দুঃখে গাঁথা জীবন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, ত্যাগ ও স্বার্থপরতা, সবকিছু দিয়ে লেখক গোটা একটা উপন্যাস সাজিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, জীবনের বাঁকেবাঁকে নাম না অসংখ্য ফুলের ন্যায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নানাবিধ রং ও সৌন্দর্যের উপস্থিতি। ভাগ্যের বৈচিত্রতা আমরা আগে থেকেই টের পাই না, কিন্তু সময় ও পরিস্থিতি যখন আমাদের যে অবস্থায় নিয়ে দাঁড় করায়, আমরা সেইসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে কখনও কখনও অন্যকে সুখ দিতে নিজের সুখ ত্যাগ করি আবার কখনও কখনও নিজেকে সুখী দেখতে অন্যের সুখ কেড়ে নিই। এসব ছাড়াও আরও কতশত অনুভূতির সম্মুখীন হয়েছি, যেটুকুর রেশ কাটিয়ে ওঠা ভীষণই কঠিন আমার মতো একজন পাঠকের জন্য। আমি এখনও চোখ বন্ধ করলে নিজের অজান্তেই চলে যাই জমিদারবিহীন জমিদারের জীবনে। চলে যাই তার আগুনফুলের কাছে। সেখানে গিয়ে আমি দেখতে পাই, রিনি, আনন্দী, বাদল, তাসরিফ ও রমিজ উদ্দিন ও হামিদা খানমকে। আনমনেই তাদের নিয়ে ভাবতে শুরু করি। একেকজনকে ভাবতে গিয়ে ভালো লাগার আবেশে বুঁদ হতে থাকি। বইয়ের পরতে পরতে লেখক যে চমকগুলো দিয়ে গিয়েছেন, সেটুকু আমাকে প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে কাঁদিয়েছে, হাসিয়েছে, মায়ায় ডুবিয়েছে। বিরক্তি নামক শব্দটা এই বইয়ের ক্ষেত্রে একদম নেই বললেই চলে। শেষ পর্যন্ত পুরোটাই ছিল তৃপ্তি ও শান্তির। ⚫ প্রিয় চরিত্র - উপন্যাসের মূল দুই চরিত্র বাদে এই বইয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র, হামিদা খানম, রিনি মেহজাবিন, বাদল, জোছনা ও রমিজ উদ্দিন। আমি এই পাঁচজনকে নিয়েই সামান্য কিছু কথা বলব। * হামিদা খানম – কঠোর পরিশ্রমী, বাস্তববাদী ও ধৈর্য্যশীলা একজন নারী। যার ধৈর্যের গুণেই 'রংমহল' সগৌরবে দাঁড়িয়েছিল সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে। একজন শিক্ষিত মানুষের পক্ষে হুট করে গ্রামে এসে গ্রামীণ পরিবেশে খাপ খাইয়ে জীবন এগিয়ে নেয়া কখনওই সম্ভব নয়। আর সেই জীবন যদি হয়, অসম্মানের, অপমানের ও দারিদ্রতার, তাহলে নারীটির জীবনে দূর্গতির শেষ থাকে না। স্বভাবতই একজন মেয়ে জীবনে সঙ্গীর কাছ থেকে সম্মান চায়। জীবন যেমনই হোক, কঠিন থেকেও কঠিনতর হলেও, একজন জীবনসঙ্গী যদি তার সঙ্গিনীকে পরিপূর্ণ সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে অল্পতেই সন্তুষ্টি দিতে পারে, তাতেই মেয়েটি নিজেকে পরিপূর্ণ সুখী দাবী করতে পারে। কিন্তু কারও জীবনে এসব কিচ্ছু নেই, তা-ও হামিদা খানম ঘুণেধরা সমাজে যেভাবে সততা ও সাহসিকতার সাথে নিজেকে জিইয়ে রেখেছেন, সেটুকু প্রতিটা মেয়ের জন্য অনুপ্রেরণা। ভাগ্যে যা আছে, তা হবেই। ভাগ্যের লিখন খণ্ডানোর ক্ষমতা বান্দার হাতে নেই, কিন্তু জীবনটাকে সুন্দর করে গড়ে তোলার চেষ্টাটুকু যদি থাকে, সেটুকু দিয়ে বেঁচে থাকার তীব্র চেষ্টা বুকে নিয়ে এমন হাজারও নারী বেঁচে থাকে, অন্যের জন্য। সেই অন্য কেউটা হচ্ছে, সংসার, সন্তান, সমাজ ও সম্মান। বিবেকবান ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নারী কখনও ভুলে গড়া পথকে সাপোর্ট করে না। বরং নিজেকে ও অন্যকে ভুল থেকে বেঁচে থাকার জন্য উৎসাহ দিয়ে যেতে পারে। হামিদা খানম এমন একটা চরিত্র, যে চরিত্রের মধ্যে মানুষ হয়ে ওঠার সবগুলো গুণাবলী লুকিয়ে আছে। আমি বইয়ের যেখানে যেখানে হামিদা খানমকে পড়েছি, শুধু মুগ্ধ হয়েছি। আর ভেবেছি, একটা মানুষ ঠিক কতটা ধৈর্য্যশীলা হতে পারে। ঠিক কতটা কষ্ট ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করেও অন্যের জন্য বাঁচতে পারে। বাঁচাতে পারে সংসার ও সন্তানদের। * রিনি মেহজাবিন – কোনো মানুষই নিখুঁত হয় না, পারফেক্ট হয় না, সবদিক দিয়ে সুন্দর হয় না। ভালোমন্দ, দোষ-গুণ, ত্রুটি নিয়েই মানুষ। মন যেখানে দুর্বল, ভুল তো সেখানে থাকবেই। ভুল না করলে যেমন শুদ্ধ কি তা উপলব্ধি হয় না, তেমনই ভুল করে অনুতপ্ত না হলেও নিজের মধ্যকার ভুলটাকে শুধরানোর সুযোগ তৈরী হয় না। মানুষ মাত্রই যে ভুলের সৃষ্টি, এই এক চরিত্র তার মধ্যে থাকা দোষ-গুণ দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছে। তার কথাবার্তা, অনুভূতি, স্পষ্ট স্বীকারোক্তি ও কিছু স্বার্থপর কাজকর্মের পরও সে আমার ভীষণ পছন্দের একটা চরিত্র। পরিস্থিতির দিক বিবেচনা করলে, তার কাজটাকে আমার প্রথমদিকে ভুল মনে হলেও পরবর্তীতে উপলব্ধি হলো, ভালোবাসা নামক অনুভূতি অনেক সময় বোকাকে বুদ্ধিমান ও বুদ্ধিমানকে বোকা বানিয়ে ছাড়ে। জগতে সবাই সব সুখ পায় না। জীবন সবাইকে সুখী হতে দেয় না। কাউকে কাউকে একাকীত্বের মাঝে ডুবিয়ে রেখেও আমৃত্যু না পাওয়ার তীব্র যন্ত্রণা দিয়ে যায়। সেই একাকীত্বকে লালন করে বাঁচার মধ্যেও যে একটা আত্মতুষ্টি লুকিয়ে থাকতে পারে, সেটুকু এই চরিত্রের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে। * বাদল – একটা চমৎকার চরিত্র। ভালোবাসা চাওয়ার আকুতি জানিয়ে জান্নাত লাভ করার চমকটা আমাকে অভিভূত করেছে। ওই সময়টায় আমি পুরো ঘোরে ছিলাম। চরিত্রের সুখ দেখেও যে চোখে পানি আসতে পারে, সেটা শেহজাদার পর বাদলকে পড়তে গিয়ে অনুভব হয়েছিল। চোখের সামনে ভাসছিল তার একটুকরো সংসার। দোয়া এমন একটা জিনিস, কখন যে কোনদিক দিয়ে পূরণ হয়ে যায়, ব্যক্তি তা টেরও পায় না বোধহয়। তার ওই নিষ্পাপ চাওয়াটা যেভাবে হৃদয়ে ধাক্কা দিয়েছিল, সেভাবেই সুখও দিয়েছে তার পরিণতির দৃশ্যটাও। একজীবনে মানুষ যা চায়, তা পায় না। কিন্তু যা পায়, তা কখনও কখনও চাওয়ার থেকেও বেশি। বাদল চরিত্রটাকে পড়তে গেলে বারবার মনে হবে, নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে জানা এক পুরুষ। যে ভালোবাসার মানুষটাকে সুখী দেখতে নিজেকে একদম নিঃস্ব করে দিয়েছে। বিশুদ্ধ ভালোবাসা এমনই হয় বোধহয়। * জোছনা – জন্মই মানুষের আসল পরিচয় নয়, কর্ম ও সততাই মানুষকে পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। এবং বারবার বলিও। এজন্যই যে, সমাজের আনাচে-কানাচে টিকে থাকা বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষজন নিচুবংশে জন্মগ্রহণ করেছে বলেই কি তাদের জন্ম নিয়ে জীবনভর খোটা ও নিন্দে শুনতে হবে? একটা মানুষ নিজের কথাবার্তা, আচার-আচরণ, চলাফেরা, ব্যক্তিত্ব ও সুন্দর মানসিকতা দিয়েই মানুষ হয়ে উঠতে পারে। বেদের মেয়ে জোছনা নিচু জাতের মানুষ হলেও সে তার ব্যবহার, বুদ্ধিমত্তা ও সততা দিয়ে শুধু জমিদারগিন্নীর মন জয় করেনি, বরং প্রতিটা পাঠককে প্রতি পদে পদে শিখিয়ে দিয়ে গেছে, কীভাবে আত্মসম্মান বজায় রেখে নিজে বাঁচতে হয় এবং অন্যকেও বাঁচাতে হয়। * রমিজ উদ্দিন – ভালোবাসা নামক অনুভূতিকে সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে সারাজীবন বাঁচিয়ে রাখার সাধ্য, ধৈর্য্য ও সুন্দর মানসিকতা সবার থাকে না। ভালোবাসা না পেয়েও, না পাওয়ার বেদনা বুকে নিয়ে কীভাবে সেই মানুষটাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা দিয়ে তার সমস্ত বিপদে-আপদে নিঃস্বার্থভাবে পাশে দাঁড়াতে হয়, এই একটা চরিত্রের মাধ্যমেই সেইসব দিক ফুটে উঠেছে। আমরা সবসময় মনে করি, ভালোবেসে পেলেই বুঝি সুখী। অথচ, সমাজের গৎবাঁধা রীতিনীতির মাঝে আটকা পড়ে রমিজ উদ্দিন শিখিয়ে দিয়েছেন, কখনও কখনও প্রিয় মানুষটাকে সম্মানের একটা জীবন দেয়ার মাঝেও ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে। লোকচক্ষুর অন্তরালে ভালোবাসার মানুষটার ছায়া হয়ে থাকার মাঝেও ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে। ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে, তার প্রতিটা কথা, কাজ ও সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানোর মাধ্যমে। রমিজ উদ্দিনের মতো মানুষেরা কারও কাছে কোনোকিছু আশা না রেখেই বাঁচতে পারে। শিখাতে পারে ধৈর্য্য, সততা ও মনের জোর বাড়িয়ে কীভাবে সমাজের সবাইকে সাথে নিয়ে একটা সম্মানের জীবন উপভোগ করতে হয়। ⚫ বইটি কেন পড়তে হবে - আমি মনে করি, যেকোনো বয়সের ছেলে-মেয়ে, চাকরিজীবী কিংবা বেকার, ঘরের গিন্নী থেকে শুরু করে প্রতিটা পেশার মানুষের এই বইটি পড়া উচিত। কেন? কারণ হচ্ছে – এটা শুধু বই না, আস্তো একটা জীবনবোধ। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরূণী ও বেকার ছেলেমেয়েদের জন্য চমৎকার একটা উপলব্ধি হওয়ার পাশাপাশি মনের জোর বাড়ানোর অন্যতম একটা মাধ্যম। এখানে, প্রেম-ভালোবাসা, বিচ্ছেদ, ঘর-সংসার, বৈরাগী হয়ে যাওয়া, এসব নিয়ে আমি কিচ্ছু বলব না। আমি শুধু বলব, বেকারত্ব নিয়ে। বেকারত্ব এমন একটা সমস্যা, যে সমস্যায় ডুবে আছে আজকের সমাজের প্রত্যেকটা তরুণ-তরূণী। বেকারত্ব ও আপনার অবস্থান নিয়ে, আপনি যে হতাশায় আছেন, এই বইটি পড়ার পর সেটুকু আর থাকবে না। বহু শিক্ষিত ছেলেমেয়ে দিনরাত চাকরীর পিছনে ছুটছে, চাকরী না পেয়ে হতাশায় ডুবে থাকছে দিনের পর দিন। পরিবারের চোখে বোঝা, অকর্মা এমনকি শূণ্য পকেট নিয়ে ঘুরতে গিয়ে নিজেকে আপনার মনে হচ্ছে, একটা উচ্ছিষ্ট। আপনি কেউ না, কিচ্ছু না। সবার সব আছে, শুধু আপনারই নেই। চাকরী নেই, টাকা নেই, পরিবারে শান্তি নেই, এসবের কারণে ডিপ্রেশন হচ্ছে আপনার নিত্যদিনের সঙ্গী। চেষ্টার কোনো কমতি রাখছেন না, তবুও চাকরী হচ্ছে না। দ্যাটস্ ইনাফ... আপনি এখানেই থেমে যান। চাকরীর চিন্তা বাদ দিয়ে আপনি আপনার চিন্তাভাবনা ও দক্ষতাকে অন্যদিকে কাজে লাগান। কীভাবে? একজন উদ্যোক্তা হয়ে। অল্পকিছু ঋণ নিয়ে ছোট্ট একটা খামার দিতে পারেন। সেই খামারে গরু-ছাগল, হাঁস-মোরগ রাখতে পারেন। ছোট্ট একটা পুকুরে মাছচাষ শুরু করতে করেন। অথবা একটা জমিতে শাকসবজী চাষ করতে পারেন। এতে হয়তো দশজন আপনাকে দশ কথা বলবে, আপনার পেশা ও আপনাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে, আপনার শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, কিন্তু তারপরও আপনি নিজের কাজগুলো নিজের মতো করে যাবেন। দেখবেন, সফলতা কেবল হাত বাড়ানো দূরত্বে। দিন-রাত এই দরজায় থেকে ওই দরজায় ঘুরপাক খাওয়ার চেয়ে একজন উদ্যোক্তা হয়ে নিজে বাঁচা ও অন্যকে বাঁচানোর চেষ্টা করাটা কি খুব ছোটো দায়িত্ব? অথবা খুব ছোটো পেশা? উঁহু... আপনি একজন উদ্যোক্তা হয়ে দেখেন, এই সমাজের সব শ্রেণীর মানুষেরা আপনার কাছে আসবে। নির্ধারিত মূল্য দিয়ে এটা-সেটা কিনবে। এইযে একটা অর্থ আপনার পকেটে আসবে, এটুকুতেই আপনি ও আপনার পরিবার বাঁচবে। শূণ্য থেকে শুরু করার চেষ্টা যদি আপনার মধ্যে না থাকে, হুট করে কী অর্জন হবে বলুন তো? আমরা এমন একটা সমাজে বাস করি, যে সমাজের মানুষেরা একে-অন্যকে হেয় করে পৈশাচিক আনন্দ করতে ব্যস্ত সারাক্ষণ। কারও পেশা, কারও বংশ, কারও চেহারা নিয়ে খোঁচাখুঁচি করে কি নিজেকে উঁচু আসনে বসানো যায়? যায় না। বংশমর্যাদা, বাহ্যিক সৌন্দর্য, এগুলো কি মানুষের হাতে? কে, কোন পেশা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে, এটা নিয়ে না খুঁচিয়ে, তার আয়-রোজগারটা কতটা সৎ সেটা খুঁজলেই তো আত্মতুষ্টি মিলে। যেখানে একজন মানুষের পরিচয় তার কর্মের গুণে, সেখানে বংশ নিয়ে কেন এত প্রশ্ন উঠছে? এখন একদিনেই কি সমাজ পরিবর্তন সম্ভব? বৈষম্য দূর করা সম্ভব? একদমই সম্ভব নয়। সমাজের এই চিরচেনা নিয়ম ও প্রতিটা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বৈষম্যকে দূর করতে হলে, আগে নিজেকে বিশুদ্ধ মনের মানুষ হতে হবে। সৎ ও সাহসী হতে হবে। এরপর পরবর্তীতে, আশেপাশের মানুষের মধ্যে এই পরিবর্তন টেনে আনার চেষ্টায় নামতে হবে। এত কথা বলার কারণ হচ্ছে, গোটা এই বইটাতে ছোটো-বড়ো পেশা, উঁচিনিচু বংশ ও ধর্ম-অধর্মকে ঘিরে তৈরী হওয়া সমাজের নানামুখী উত্থান-পতনের দৃশ্যকে একেকটা চরিত্রের মাধ্যমে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখানো হয়েছে। হামিদা খানম, শেহজাদ, মধুমিতা, রমিজ উদ্দিন, জোছনা, তাসরিফ, জান্নাত, বাদল, কল্লোল, একের পর এক চরিত্র, সবাই-ই যেন নিজ নিজ জায়গা থেকে একেকটা শিক্ষা। এজন্য প্রতিটা চরিত্রকে জানতে, বুঝতে আপনাকে পড়তে হবে লেখক 'আফিফা পারভীন' আপুর নানারঙে রঙিন এই 'রংমহল' উপন্যাসটি। *** #তামান্নাবিনতেসোবহান
Was this review helpful to you?
or
◾বই-রংমহল ◾লেখক-আফিফা পারভীন ◾প্রকাশনী-ছাপাখানা প্রকাশনী ◾প্রচ্ছদ শিল্পী-ফাইজা ইসলাম ◾পাঠ প্রতিক্রিয়া◾ রংমহলের যাত্রা শুরু শ্রাবণের মেঘ-বৃষ্টিহীন এক দুপুরে জমিদার বাড়ির হুলুস্থুল অবস্থা দিয়ে। জমিদার বাড়ির ছোট পুত্র শাহাদাত আলি খান ভালোবেসে বিয়ে করে আনে এক বেদের মেয়েকে যা জমিদার বাড়ির জন্য এক অসম্মানজনক ব্যাপারই বটে। ঘটনাক্রমে জমিদার বাড়ির বউ হয়ে আসা বেদের মেয়ে জোছনার ভাগ্যে কী ঘটেছিলো? জমিদার গিন্নি হামিদা খানম তার মেজ পুত্র শেহজাদ আলী খানের বিয়ে ঠিক করেন রিনির সাথে। রিনির সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ায় পর শেহজাদ যখন রিনিকে বললো "সব জেনেও...!" দুটো শব্দের অসম্পূর্ণ বাক্যটায় একরাশ কৌতূহল সৃষ্টি হলো, শেহজাদের জীবনে এমন কী অতীত আছে যেটা জেনেও তাকে বিয়ে করতে চাওয়া এক আশ্চর্যজনক ব্যাপার?এরপর এক ঝুম বৃষ্টির রাতে রংমহলে মধুমিতার আগমণ যেন সরল পথে চলতে থাকা গল্পটার মোড় সম্পূর্ণ পাল্টে দিলো। অর্থ প্রাচুর্যের মাঝে বড় হওয়া মধুমিতার রংমহলে জীবনটা কেমন হবে? শেহজাদ,রিনি আর মধুমিতার জীবনের জটিল সমিকরণের সমাধান কোথায়? শালিনি রেহমানের নিকৃ*ষ্ট পরিকল্পনায় হস্তক্ষেপ করায় তার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে? নিরবে সবার আদেশ মেনে নেওয়া জান্নাতের জীবনটা কেমন হবে? প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজতে খুঁজতে হারিয়ে গিয়েছিলাম রংমহলে। শব্দের জাদুতে, জমিদারদের সমৃদ্ধ ইতিহাসের মাধ্যমে প্রথমেই আভাস দিয়েছে রংমহল একটি দুর্দান্ত উপন্যাস হতে যাচ্ছে। রংমহল ক্ষণে ক্ষণে তার টুইস্ট দিয়ে, বিশেষত্ব দিয়ে আমায় বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ করেছে আর বুঝিয়ে দিয়েছে উপন্যাস টা আমার প্রত্যাশার চেয়েও অনন্য। পড়তে পড়তে সেই উপন্যাসের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে একটি সুখ সুখ অনুভুতি। রংমহল যেন মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ এক ভুলভুলাইয়া যেখানে একবার ঢুকে গেলে বের হওয়া কষ্টকর বা বের হওয়ার ইচ্ছেই জাগে না। মন চায় ওখানেই থেকে যাই।আহসান মঞ্জিলের আদলে তৈরী লাল ইটের জমিদারবাড়ি 'রংমহলের' প্রতিটা ইট যেন অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত ঘটে যাওয়া এক একটি রং বেরঙের গল্প, কত শত মিষ্টি মধুর স্মৃতি আর কারো দুঃখ প্রকাশের নিরব ও বিশ্বস্ত সঙ্গী। সময়ের পরিক্রমায় রংমহল পুরোনো হয়ে গেলেও পর্বতের মতো অটল থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে যেনো সে খুব ভালোভাবেই জানে তার ছায়াতলই অনেক মানুষের স্বস্তির আশ্রয়। রংমহল, রংমহলের প্রতিটা সদস্যের গুঞ্জন, হামিদা খানমের কঠোর নজরদারি, ফাতেমা বিবির মুখরোচক রান্নার প্রস্তুতি, জোছনার হাতে মাখানো ভর্তা আর তার ছুটে বেড়ানো, শাহাদাতের জোছনার প্রতি ভালোবাসা, শাহেদ, শাকেরের ছুটোছুটি, রামিসার ধম*কাধম*কি, মধুমিতার রংমহলের পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলার প্রচেষ্টা, শেহজাদের সবাইকে সুখে রাখার জন্য নিজের সুখ ত্যাগ করে নিরলস পরিশ্রম করে যাওয়া, জান্নাতের হাসি মুখের নিরবতা, হামিদা খানম একটু অসুস্থ হলেই তাসরিফের ছুটে আসা, বাদলের বিশ্বস্ততা, রামিজ উদ্দিনের আদর্শ, রিনির অনুভূতির যাতাকলে পি*ষ্ট হওয়া, মাইনুল হোসেনের অপারগতা, শালিনি রেহমানের কুকর্ম, শাফকাতের ফুটানি আর হিং*স্রতা, কল্লোলের ছন্নছাড়া ভাব, আনন্দীর শেহজাদের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা সবটা যেনো হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে দেওয়া যায়, চোখ মেলে তাকালেই অবলোকন করা যায় প্রতিটা দৃশ্য। চোখ বন্ধ করলেই যেনো উপলব্ধি করা যায় আগুন ফুলের সৌন্দর্য, ছাতিম ফুলের সুবাস, হাওরের লিলুয়া বাতাস, হাঁসেদের ঝাঁক বেধে ছুটে চলা। কল্পনায় বিভোর হয়ে ঘুরে বেড়ানো যায় মধুপুর গ্রাম আর সুনামগঞ্জ জেলার আনাচে কানাচে, ভেসে বেড়ানো যায় নিলাদ্রী লেক আর জাদুকাটা নদীতে। সুনামগঞ্জ জেলা আর সেই জেলার প্রকৃতিকে কী অবলীলায় এখানে বইয়ের পাতায় বন্দি করা হয়েছে! রংমহলে সবকিছু থাকলেও একঘেয়েমি আর বিরক্তি আসার অবকাশ নেই, আমার আসে নি। প্রতিটা ঘটনা এমন ভাবে গুছিয়ে, রহস্যের ছোঁয়া দিয়ে, মার্জিতভাবে সাজানো যে শেষ না করে বই রেখে দেওয়া ভীষণ কষ্টকর। আবার কখনো কখনো মনে হয়েছে এই মুহূর্তে বইটা বন্ধ না করলে হয়তো দমবন্ধ হয়ে যাবে। রংমহল আমাকে হাসিয়েছে প্রচুর, সুন্দর সুন্দর মুহূর্তে প্রশান্তি দিয়েছে অনেক, প্রকৃতির অপার মহিমায় হারিয়ে যেতে দিয়েছে অবলিলায়। এতো কিছুর পরেও রংমহল আমাকে কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে কাঁদাতে, দহনে পুড়িয়ে যন্ত্রণা দিতে ভুলে নি। রং বেরঙের অনুভূতি দেওয়ার সাথে সাথে রংমহল আমাকে উপলব্ধি করিয়েছে- ▪️এই পৃথিবীতে অনেক কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে তার মধ্যে ভাগ্য হলো অন্যতম। ভাগ্যটা আমার, আমার ভাগ্যে থাকা সুখ দুঃখ গুলো আমার হলেও ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে নেই। জীবন নিয়ে আমাদের কতো শত জল্পনা-কল্পনা থাকে অথচ সেটাই হয় যা সৃষ্টি কর্তা আমাদের ভাগ্যে লিখে রেখেছেন। ফলস্বরূপ আমাদের জীবনের গল্পটা কখনো আমাদের মন মতো হয় কখনো বা আমরা যা চাই ঠিক তার বিপরীত টা ঘটে। এরপর যেন মনে হয় সব শেষ, জীবনটা ওখানেই থমকে গেছে। সত্যিই কী থেমে যায়? মানুষ মরণশীল আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের জীবন গতিশীল। আর এই গতিশীল জীবনে সব কিছু শেষ হয়ে গেছে ভেবে থেমে গিয়ে হেরে যাওয়ার চেয়ে ভাগ্যের সাথে যুদ্ধ করাটা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। আর এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারাটা জীবনের সর্বোচ্চ সফলতা। ▪️জটিল এই পৃথিবীতে সবচেয়ে জটিলতম ব্যাপার হলো মানুষ চিনতে পারা। আমরা আমাদের আশেপাশের মানুষ সম্পর্কে অনেক কিছু অতি সহজেই জানতে পারি কিন্তু মাঝে মাঝে মানুষ চিনতে গোটা একটা জীবন শেষ হয়ে যায় তবুও যেন চেনা যায় না। তাই কাউকে বিশ্বাস করলেও অন্ধবিশ্বাস করা অনুচিত। ▪️জন্ম, ধর্ম, জাত ভেদে মানুষ ভিন্ন রকম হলেও তারা মহান সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।তবে মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েও যারা মনুষ্যত্বহীন তাদের ক্ষেত্রে আবার সম্মান, মর্যাদা, ভালোবাসার বিষয়গুলো যায় না, ঘৃ*ণাটাই ঠিক আছে। ▪️মৃ*ত্যু নিশ্চিত বলেই মানবজীবন অনিশ্চিত। প্রতিটা মানুষ একটি নির্দিষ্ট হায়াত নিয়ে পৃথিবীতে আসে, যখন তার আয়ু শেষ হয়ে যায় তখন সে চলে যায়। অথচ কুসংস্কারে ডুবে থাকা বোকা মূর্খ মানুষগুলো খুব সহজেই কারো মৃ*ত্যুর জন্য অপর একজনকে দায়ী করে তাকে অ*পয়া, অ*লক্ষি বানিয়ে দিতে দুইবার ভাবে না। তারা বুঝতেই পারে না বা বুঝতে চায়ই না যে কুসংস্কার কে ধর্ম বানিয়ে তাদের করা এসকল কার্যকলাপ কাউকে ভেতর থেকে ভে*ঙে চুরমার করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যুগের পর যুগ চলে যাবে কিন্তু সমাজের মানুষের এই মনোভাবগুলো হয়তো কখনোই বদলাবে না। ▪️একজনের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অপরজনের নির্লিপ্ততায় হারিয়ে যেতে পারে অনায়াসেই তাই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন উভয় পক্ষ থেকে সমান প্রচেষ্টা। প্রতিটা সম্পর্ক স্বচ্ছ ও সুন্দর রাখার জন্য সম্মান আর বিশ্বাসটা ভীষণ প্রয়োজন। আর সম্পর্কটাকে জীবন্ত করে তোলার জন্য ভালোবাসা থাকা আবশ্যক। ভালোবাসাহীন শুধুই দায়িত্বের খাতিরে বয়ে নেওয়া সম্পর্ক গুলো কেমন যেন প্রাণহীন। ▪️মন কখনো কখনো লাগামহীন ঘোড়ার মতো অবাধ্য হয়ে ছুটে চলে। অনেক করে চাইলেও সেই লাগাম টানা যায় না। তবে চাইলেই অবাধ্য মনের কোনো সৃষ্টি হওয়া অনুভূতিদের আবার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অনুভূতি প্রকাশ করে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পরিবর্তে সহনশীলতা আর সম্মান বজায় রেখে একটি স্বস্তিদায়ক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাই ভালো। ▪️সময় ও স্রোত কারো অপেক্ষায় থাকে না জেনেও আমরা সময়ের অপেক্ষায় থাকি, একটা সঠিক সময়ের জন্য আমাদের কতো অপেক্ষা। অথচ কখনো কখনো সেই সঠিক সময়টাই আমাদের ভাগ্যে জোটে না এরপর শুধু আফসোস আর দীর্ঘশ্বাস। ▪️মাঝে মাঝে নিশ্চুপ না থেকে নিজের মত প্রকাশ করার মতো সাহস আর মনোবল থাকা টা ভীষণ প্রয়োজন। নিরবতা যেন আমার ভালো থাকা কেড়ে নিতে না পারে। ▪️এই কুটিল দুনিয়ায় একজন ভালো মনের মানুষ হতে পারাটা নিঃসন্দেহে একটি সুন্দর গুণ। তবে ততটাও ভালো হওয়া উচিত না যতটা ভালো হতে গেলে অপরের ভালো থাকা নিয়ে চিন্তা করতে করতে নিজের আর ভালো থাকা হয়ে উঠে না। ▪️মিথ্যে প্রশংসা করে মন খুশি করার চেয়ে ভুল ধরিয়ে দিয়ে যোগ্য আর দক্ষ হওয়ার সুযোগ করে দেওয়াটা উত্তম কাজ। রংমহল পড়তে গিয়ে বিষয় গুলো উপলব্ধি করার পর আমার মনে হয়েছে রংমহল একটা কাল্পনিক উপন্যাস হলেও এটা পুরোটাই জীবন্ত। আমাদের আশেপাশে ঘটে চলা অনেক জানা অজানা গল্পই যেন এখানে খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লেখা হয়েছে। খুব সুক্ষ্ম ভাবে গল্প আর চরিত্রদের ভাঁজে ভাঁজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সমাজের বাস্তবতা আর মানব জীবনের মনস্তাত্ত্বিক বিষয় গুলো। আমার মনে হয় কী, রংমহল একটা ম্যাজিকাল উপন্যাস। একটু গভীর ভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লে, সুক্ষ্মভাবে উপন্যাসটা নিয়ে চিন্তা করলে আরো অনেক অনেক বিষয় উপলব্ধি করা যাবে যা উপন্যাসটার শব্দের ভাজে কাল্পনিক গল্পের আড়ালে লুকিয়ে আছে। বইটা ভালো লাগার কারণ- ▪️উপন্যাসের কাহিনী, পড়তে গিয়ে সৃষ্ট অনুভূতি, উপন্যাস থেকে আমার উপলব্ধি এক কথায় বলতে গেলে সম্পূর্ণ রংমহল টাই আমার ভালোলাগার কারণ। ▪️শেহজাদ মধুমিতার মানেই ভালো লাগা আর ভালোবাসা। তাদের সম্পর্কের রসায়নটা আমায় ভীষণ মুগ্ধ করেছে। তারা যখন একে অপরকে তুই তোকারি ঝগড়া করে তখন বেশ লাগে। রংমহলে এসে খাঁচায় বন্দি পাখির মতো অবস্থা ছিলো মধুমিতার অথচ য*ন্ত্রণায় ছটফট করেছে শেহজাদ। মাম্মার হানি নাকি শেহজাদের মধুমিতা কোন পরিচয়টাকে আগলে নিবে তা নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত মধুমিতাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে শেহজাদ কেমন গুমরে ম*রেছে। মধুমিতার প্রতি শেহজাদের ভালোবাসা ছিলো সীমাহীন, বিপরীতে ভালোবাসা পাওয়ার আকুলতাও ছিলো অন্তহীন কিন্তু কোনো প্রকার জোরজবরদস্তি ছিলো না, আদর্শ আর সম্মানের সীমাবদ্ধতায় গুটিয়ে রাখতো নিজেকে।এটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। ▪️শেহজাদ আর হামিদা খানমের মা ছেলের সম্পর্কটা ছিলো সব ভালো লাগার উর্ধ্বে। শেহজাদের মায়ের প্রতি ভালোবাসা, আস্থা, মায়ের সব কথা মেনে চলা, আহ্লাদে প্রশ্রয় দেওয়া কথা পড়ে আমার মনে হতো কোনো রাজা তার রাজকন্যাকে ভীষণ যত্ন আর আদর দিয়ে বড় করছে। আবার প্রস্তরের মতো কঠিন শেহজাদ যেনো হামিদা খানমের কোলে মাথা রেখে হয়ে যেতো নির্মল নিষ্পাপ কোনো এক শিশু। এই একটা জায়গায় গিয়ে মনে হতো শেহজাদ নিঃস্ব না, তাকে বোঝার মতো তার কথা চিন্তা করার মতো, দুঃখে প্রলেপ দেওয়ার মতো কেউ একজন আছে। শেহজাদের আম্মা আর হামিদা খানমের শেহজাদা একে অপরের সুখ দুঃখের সঙ্গী, রংমহলকে টিকিয়ে রাখার জন্য একে অপরের সহযোগী যোদ্ধা। ▪️জোছনা, শাহাদাত আর তাদের দিগদারি ভালো না লেগে যাবে কোথায়? তারা যেমন হাসাতে জানে তেমন মুগ্ধ করতেও জানে। ▪️একটি উপন্যাস কতটা সুন্দর হবে, পাঠক মনে কতটা গভীর ভাবে জায়গা করে নিবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে লেখিকার লেখনশৈলী ও পাঠকের কাছে নিপুণ ভাবে প্লট উপস্থাপনার উপর। লেখিকার গোছানো পরিপক্ব লেখনশৈলী, সুন্দর শব্দচয়ন আর শালীন ও সাবলীলভাবে সব বিষয়বস্তুর উপস্থাপনা উপন্যাসটাকে দান করেছে এক অনন্য মাত্রা। জটিল বিষয়গুলোও খুব সুন্দর ও স্বচ্ছ ভাবে লেখা হয়েছে যেন পাঠক একটু মনযোগ দিয়ে পড়লেই সবটা সহজেই উপলব্ধি করতে পারে। মায়া দিয়ে যত্ন করে লেখা উপন্যাসটায় দক্ষ লেখনশৈলীরও কোনো কমতি ছিলো না যার জন্য বইটা পড়তে ভালো লেগেছে। ▪️রংমহলের উৎসর্গটাও উপন্যাসের প্রতি ভালো লাগা সৃষ্টির আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ। উৎসর্গের জন্যই আমি সুনামগঞ্জের দুজন কৃতী পুরুষ বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম এবং মরমী কবি ও বাউল শিল্পী হাছন রাজার সম্পর্কে জানতে পেরেছি আর নতুন কিছু জানতে পারা সর্বদাই আমার কাছে চমৎকার একটা ব্যাপার। লেখিকা তাদের ভীষণ শ্রদ্ধার সাথে যোগ্য মর্যাদা দিয়েছেন, তার বইয়ের মাধ্যমে তাদের বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছেন সম্মানীয় ভাবে, বুঝিয়েছেন এই দুজন ব্যক্তির সাথে সুনামগঞ্জের সুনাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর এটা নিঃসন্দেহে লেখিকার একটি সুন্দর মন ও সুন্দর চিন্তাধারার পরিচয়। ▪️বইটা ভালো লাগার আরো একটা কারণ হলো প্রচ্ছদ। রংমহলের প্রচ্ছদ প্রথমে আমার কাছে ছিলো নজরকাড়া সুন্দর, ভীষণ আকর্ষণীয়। ছিলো বললাম কারণ উপন্যাস পড়াতে গিয়ে ৪৪০ পৃষ্ঠা যখন আমাকে বাধ্য করলো প্রচ্ছদটা আবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে, জানিয়ে দিলো প্রচ্ছদের রহস্য তখন আকর্ষণীয় প্রচ্ছদটাই আমার কাছে হয়ে উঠলো অর্থবহ, বিশেষ কোনো মুহূর্তের এক টুকরো মন কেমন করা স্মৃতি। পরিশেষে আমি খুব সহজেই দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি আমার পড়া এক অন্যরকম সুন্দর উপন্যাস রংমহল। ◾চরিত্র বিশ্লেষণ◾ ▪️শেহজাদ আলি খান- মুগ্ধতা আর শেহজাদ যেনো একে অপরের পরিপূরক। শেহজাদের উপস্থিতি হাওরের লিলুয়া বাতাসের মতো প্রশান্তি নিয়ে আসে। তার কার্যকলাপ ছাতিম ফুলের সুবাসের মতো মন মাতিয়ে রাখে। আগুন ফুল যতটা সুন্দর, হাওর যতটা বিশাল শেহজাদের ততটা সুন্দর আর বিশাল মনের অধিকারী। শেওলা পড়া সিমেন্ট খসে যাওয়া জমিদার বাড়িটা যেমন নিজেকে নিঃশেষ করে হলেও আশ্রয় দেয় জমিদার বাড়ির প্রতিটা সদস্যদের শেহজাদও তেমন নিজেকে নিঃশেষ করে তার সাধ্যমতো যত্ন করে, খেয়াল রাখে সকলের। শান্ত গম্ভীর জমিদার শেহজাদ আলী খান এক বুক ভালোবাসা আর ভীষণ সম্মানের নাম। পরিবারের জন্য স্বপ্ন ত্যাগ করা ত্যাগী একটা চরিত্র। স্বপ্ন ত্যাগ করলেও নিরলস পরিশ্রম, বিচক্ষণতা দিয়ে কর্মজীবনে সফলতা অর্জন করা হতে পিছুপা হয় নি। তার স্বচ্ছ টলটলে গভীর চোখে কতশত বিষাদ আর হাহাকার, মন ভাঙার যন্ত্রণা তবুও সে সর্বদা অটল পরিবারের সুরক্ষায়।এতো কিছুর পরেও শেহজাদ কোথাও গিয়ে নিষ্পাপ এক শিশু, মায়ের শেহজাদা। ▪️মধুমিতা- নামের মতোই মিষ্টি, আকর্ষণীয় রূপের সাথে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব বহনকারী সুন্দর ও স্বচ্ছ মনের একটা আদুরে চরিত্র, মধুমিতা।অতিরিক্ত আদরে তৈরী হওয়া বাদড় মধুমিতাকে প্রথম প্রথম একটু অন্যরকম, অহংকারী মনে হলেও আদতে সে ভীষণ সুন্দর মন আর নিরহংকারী একটা চরিত্র। মধুমিতার সুন্দর ব্যক্তিত্ব চাপা পড়ে ছিলো তার মাম্মির কুটিলতার আড়ালে যা শেহজাদের সান্নিধ্যে দারুণভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে। মধুমিতা যেনো রংমহলের সেই রং যার সান্নিধ্যে রংমহলের উজ্জ্বলতা প্রকাশ পায়, প্রাণহীন রংমহল হয়ে উঠে প্রাণোচ্ছ্বল বিষাদ রাজ্যের রাজা শেহজাদের জীবনে নেমে আসে সুখের রং বেরঙের প্রজাপতি। মধুমিতা সত্যিই একটা আগুন ফুল যাকে ধীরে ধীরে যত্ন নিয়ে তৈরী করা হচ্ছিল ফুলদানিতে সাজিয়ে তার সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য। অথচ আগুন ফুল তো গাছেই সুন্দর। ▪️হামিদা খানম- ঠিক কোন কোন বৈশিষ্ট্য থাকলে তাদের মহীয়সী নারী বলে আমি জানি না কিন্তু আমার কাছে হামিদা খানম অমায়িক এক মহীয়সী নারী। ভঙ্গুর অবস্থায় রংমহলের হাল ধরা, পদে পদে দলিত মথিত হয়েও অসীম সাহসিকতা নিয়ে লড়াই করে টিকে থাকা চরিত্রটা যেনো রংমহলের বটগাছ। শেহজাদ যদি হয় রং মহলের স্তম্ভ হামিদা খানম তাহলে রংমহলের ভিত্তি। একটু অসুস্থ হলেই তার ডাক্তার দেখানোর রোগটা আমার কাছে ভীষণ আদুরে লেগেছে। ▪️জোছনা- জোছনা, উপন্যাসে আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র। রংমহল পড়ার আগে ভেবেই নিয়েছিলাম টিকটকার প্রিন্সেস মুনলাইট বা বেদের মেয়ের জোছনা হবে হয়তো আস্ত এক কমেডি। অথচ জোছনার সাহসিকতা, বিচক্ষণতা, শাশুড়ি মায়ের একটু আদর পাওয়ার বাসনা আর অলসতাপ্রিয়, অকর্মণ্য, দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বামীকে কর্মঠ করে তোলার প্রচেষ্টা সবটা যেন আমায় উপলব্ধি করায় তাকে নিয়ে আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আসলে সে তো তার হাতে মাখানো সেই মুখরোচক ভর্তা গুলোর মতোই টক ঝাল মিষ্টি একটা চরিত্র। প্রকৃতির জোছনা যেমন চাঁদকে আলোকিত করে রাখে, দ্যুতি ছড়ায় মানব জোছনাও তেমন রংমহল কে মাতিয়ে রাখে হাসি খুশিতে, মুগ্ধতা ছড়ায় পাঠক মনে। ▪️শাহাদাত আলি খান- শাহাদাত এক অন্যরকম চরিত্র। উপন্যাসের সূচনায় যে শাহাদাত অকর্মণ্য, দায়িত্বজ্ঞানহীন, হম্বিতম্বি করা এক অলসতাপ্রিয় জমিদারপুত্র সমাপ্তি লগ্নে সেই শাহাদাতই কর্তব্যপরায়ণ, দায়িত্ববান, কর্মঠ এক চরিত্র, যত্নশীল স্বামী যে তার স্ত্রীকে তার সবটা দিয়ে ভালোবাসতে পারে ভালোবেসে দুঃখ ভুলিয়ে দিতে পারে, শুরুতে ভাইয়ের ভরসায় চলা শাহাদাত একটা সময় পর ভাইয়ের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সাহায্য করাটা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। আর এই যে এতো এতো পরিবর্তন পড়েও কখনো মনে হয় নি শাহাদাত চরিত্রটা পাল্টে যাচ্ছে, প্রথমদিকে যে শাহাদাত কে পড়েছি এটা সেই শাহাদাত নয়। সেই হম্বিতম্বি করা, কথায় কথায় 'বেশি দিগদারি কইরো না' বলা শাহাদাতের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হলেও নিজস্ব ব্যক্তিত্বের সামান্যতম পরিবর্তনও হয় নি। লেখকিকা এখানে ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট টা খুব দক্ষতার সাথেই করেছেন। ▪️রামিস উদ্দিন- শেহজাদ আলী খান যার সুশিক্ষা গ্রহণ করে বড় হয়েছে সেই চরিত্রটা ঠিক কতখানি সুন্দর আর মনোমুগ্ধকর তা পরিমাপ করার মাপকাঠি আমার কাছে নেই। শান্ত, নির্মল, স্বচ্ছ, বুদ্ধিমান, অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে সর্বদা তৎপর সব মিলিয়ে চরিত্রটা ভীষণ সুন্দর ছিলো। কোনো প্রকার অভিযোগ না রেখে, বিনিময়ে কোনো কিছু পাওয়ার দাবি না করে তার নিরবে সবসময় পাশে থাকাটা তার শুভ্র ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করার পাশাপাশি পাঠক মনের একটা বিশাল জায়গা দখল করে নিরবে নিভৃতে। ▪️কল্লোল- অল্পতেই হৃদয় হরণ করে নেওয়া একটা চরিত্র। উপন্যাসে তার উপস্থিতি অল্প সময়ের জন্য অথচ অল্প সময়ের মধ্যেই সে একদম মনে গেঁথে গেছে। আমার কাছে কল্লোল রূপকথার সেই সোনার কাঠির মতো যার অসাধারণ ব্যক্তিত্বের ছোঁয়ায় সবটা ঠিক হয়ে যায়, স্বস্তি আর শান্তি আসে। ▪️শাফকাত আলি খান- আমি শাফকাত চরিত্রটা বিশ্লেষণ করার মতো রুচিই পাচ্ছি না। তবুও তার সম্পর্কে অল্প বিস্তর ধারণা দেওয়ার জন্য আমার মনে হয় এই একটা বাক্যই যথেষ্ট, " শাফকাত সে তো মানুষ হয়ে জন্ম নেওয়া পরেও এমন এক পুরুষ যে তার পুরুষত্ব বজায় রাখার নিমিত্তে মনুষ্যত্ব বর্জন করে পশুত্বকে আগলে নিয়েছে।" ▪️শালিনি রেহমান- একজন নারী হওয়ার সুবাদে শালিনির মতো এক নারী চরিত্র আমার কাছে প্রথমত সবচেয়ে অস্বস্তির কারণ। যেখানে নারী তার সম্ভ্রম হারানোর আতঙ্কে সর্বদা আতঙ্কিত থাকে, প্রাণ দিয়ে প্রচেষ্টা চালায় সম্মান রক্ষার জন্য সেখানে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য ঘৃণিত, লজ্জাজনক খেলায় মেতে উঠা সেলিনা রহমান ওরফে শালিনি রেহমানকে নিয়ে আমার প্রশ্ন জাগে সে সত্যিই নারী তো?আমার কাছে ভদ্র সমাজের শালিনি রেহমান আর রাতের আঁধারে জমিদারের মনরোঞ্জন করা সোহাগির মাঝে কোনো পার্থক্যই নেই। শুধু শালিনিরা তবুও মাথা উঁচু করে সম্মান নিয়ে বাঁচে আর সোহাগিরা উপাধি পায় বে*শ্যা। ▪️মাইনুল হোসেন- আমার শ'খানেক আফসোস আর দীর্ঘশ্বাস আমি মাইনুল হোসেনের নামেই লিখে দিলাম। চরিত্রটা না ভালো ভাই হতে পেরেছে, না ভালো স্বামী আর না ভালো বাবা। তার সফলতার পাতায় হাত ভর্তি টাকা উপার্জন করা ছাড়া আর বিশেষ কিছু আমার চোখে পড়লো না। ওহ্ হ্যাঁ একটা সময় বোনকে ভীষণ ভালোবাসা তার সফলতার খাতায় ছিলো কিন্তু সেই ভালোবাসা আর স্নেহের প্রতিদানের কাছে সে সেটা বিক্রি করে দিয়েছে। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নির্লিপ্ত থাকার পর যখন সে উপলব্ধি করলো সব কিছু তার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে মহাকালের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে সব কিছু তখন যেন তার টনক নড়ে। তাতেও বেশ লাভ হয় নি, সেই তো দায়িত্ব অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে সে চিন্তামুক্ত হলো! সে একটা দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বার্থপর চরিত্র। সে চিন্তামুক্ত আর ভারমুক্ত থাকতে চায় হয়তো নির্লিপ্ত থেকে নয়তো দায়িত্ব অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে। ▪️রিনি- রিনি চরিত্রটা শুরুতে আমার ভীষণ প্রিয় ছিলো। বিচক্ষণ, সুন্দর মনের মেয়েটা ছিলো ভালোলাগার একটা চরিত্র। তার পেয়েও না পাওয়ার যন্ত্রণা আমায় ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। তার সাথে যা হয়েছে তা হয়তো ঠিক হয় নি কিন্তু ক্রোধ ও হিংসার বশবর্তী হয়ে তার করা কাজ গুলোও ঠিক ছিলো না। তার কথাগুলো যেমন যেমন শেহজাদের আত্মগ্লানি মুছে দিয়েছিলো তেমন আমার মুগ্ধতাও কাটিয়ে দিয়েছে। সবকিছু পেয়েও না পাওয়ার যন্ত্রণা আর শয়তানের কুমন্ত্রণার যাঁতাকলে পিষ্ট রিনি আমার কাছে একটু বেশি অপ্রিয়, অল্প স্বল্প প্রিয় আর অভাগী একটা চরিত্র। উপন্যাসে প্রতিটা চরিত্র আমায় বলছে তাদের নিয়ে একটু হলেও কিছু লিখতে। আমি লিখতে না চাইলে তাদের সে কী অভিমান! অভিমান ভাঙাতে গিয়ে অনেকজনকেই নিয়ে বলা হলো এরপরে আমি সত্যিই অপরাগ। রংমহল কে রঙে রঙিন করার জন্য, পরিপূর্ণ একটা উপন্যাসে রূপ দানের জন্য সবগুলো চরিত্রকে খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ◾বইটি আপনি কেন পড়বেন◾ সাহিত্য পিপাসু পাঠক সবসময়ই সন্ধানে থাকে কোনো এক উপন্যাস গল্প কিংবা কবিতার যা হবে মানসম্মত, রুচিশীল, পরিপক্ক লেখশৈলীতে সাজানো গোছানো যা তার সাহিত্যের তৃষ্ণা মেটাবে এবং পরিপূর্ণ মুগ্ধতার ঘোরে আচ্ছন্ন করে রাখবে। আমার মনে হয় রংমহল হয়তো তার সেই তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম। উপন্যাস টা পড়লেই বোঝা যায় এটা খুব যত্ন নিয়ে লেখা হয়েছে, প্রতিটা শব্দে মিশে আছে মায়া আর বাস্তবতার হাতছানি। সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য, দার্শনিক স্থান গুলো সম্পর্কে খুব সুন্দর সাজানো গোছানো তথ্য দেওয়া আছে যা সুনামগঞ্জ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেছে, সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি স্থানের প্রতি মুগ্ধতা সৃষ্টি করেছে। উপন্যাসের লেখনশৈলী চমৎকার, সাবলিল আর শালীন। সব মিলিয়ে বইটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। তবে হ্যাঁ ব্যক্তিভেদে পছন্দের অনেক পার্থক্য আছে। আমার ভালো লেগেছে বলেই যে সবার ভালো লাগবে এটা আমি কখনোই মানি না। শুধু নিশ্চয়তা দিতে পারি একটি সুন্দর সাহিত্যের স্বাদ আস্বাদন করতে রংমহল বইটি নির্দ্বিধায় পড়তে পারেন। লেখা-সাবিহা আক্তার
Was this review helpful to you?
or
বই: রংমহল লেখক: আফিফা পারভীন প্রচ্ছদ: ফাইজা ইসলাম প্রকাশনী: ছাপাখানা জনরা: সমকালীন উপন্যাস সময়ের তালে তাল মিলিয়ে চলা, জীবনযু দ্ধে টিকে থাকা এক আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মায়ের গল্প শুনতে চান? নাটকীয় ভঙ্গিতে যে গল্পের শুরু হয়েছিল সে গল্প শেষ হয়েছে এক রাশ স্নিগ্ধতা দিয়ে। সমকালীন গল্পগুলো কি বরাবর ই এমন হয়? আজ্ঞে না, সমকালীন গল্পের মাধুর্যতা নির্ভর করে লেখকের লেখার ধরণের উপর। যে যতোটা সময় দিয়ে লিখে সে ততোটা ভাবার সময় পায়। গল্পের মধ্যে প্রতিটি অনুভূতি ফুটিয়ে তোলার সময় পায়। এরপর তা পাঠকের পড়ার চোখে ভাসে না, তা পাঠকের মনের চোখে ভেসে উঠে। তখন মনে হয় সে গল্পের ই একটি অংশ যে অদৃশ্যে থেকেও সবটা দেখছে। যেমন ভাবে দেখিয়েছেন লেখক আফিফা পারভীন তার লেখা 'রংমহলে'..... ? কাহিনী সংক্ষেপ: পুরোনো শ্যাওলা পরা এক জমিদার বাড়ি। নদী, হাওর ও পাহাড় বেষ্টিত দিরাইয়ের মধুপুরে অবস্থিত জমিদার বাড়িটির নাম 'রংমহল'। দেয়ালের রং চটে গেলেও এর ভেতরে বসবাস করা মানুষগুলোর জীবন এখনো রঙিন। জমিদারত্ব নেই কিন্তু জমিদার পুত্র রয়ে গেছে। এক পরিবারের মধ্যে কতগুলো সম্পর্ক। বদলে যাওয়া রূপ রঙ। একেকজনের মনে একেক রকম খোয়াব। কে জানে কার খবর? একই সময়ে কেউ কেউ হাসছে কেউ বা কাঁদছে, কারো বা জন্মান্তরের হাহাকার। সেই হাহাকারের মাঝেও দেখা মিলেছে জীবন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা হামিদা খানমের। কিসের টানে পড়ে ছিলেন এই জমিদার বাড়ি আঁকড়ে ধরে? সন্তান নাকি সংসার? মায়ের পর ছেলেও এমন একটা জায়গায় আঁটকে ছিল, কে জানে তার মনে কি আছে? সাদামাটা এক গল্প মনে হলেও এই গল্পে আসতে থাকে একের পর এক চরিত্র। সেইসব চরিত্র কিছু কিছু থাকে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে; কিছু হয়ে যায় অদৃশ্য। কিছু চরিত্র বিরক্তি দিয়ে শুরু হলেও শেষ হয় একরাশ ভালোবাসা নিয়ে। যেমন মধুমিতা। গল্পের প্রধান আরেক চরিত্র। কিন্তু পড়তে পড়তে দ্বিধায় ছিলাম সবসময় রিনিদের মতো ভালোদের সাথে এমনটা হবার কথা লেখা থাকে কেন? ভালো চরিত্রের ভিড়ে ছিল মুদ্রার অপর পিঠের মতো কিছু দুষ্টু চরিত্র। যাকে বলা চলে খলনায়ক। কিন্তু এরা না থাকলে হয়ত ভালোর কদর অতোটা বোঝা যেত না। হয়ত সুখ আর দুঃখ আর ভালো খারাপ একই পথের পথিক। যাদের রঙ বেরঙের সামিলে এক পরিপূর্ণ গল্পের দেখা মিলেছে রংমহলের আঙিনায়। ? চরিত্রায়ন: ১। হামিদা খানম - শেহজাদের মা। অন্যভাবে বললে ইনি নিজেই একটা পরিচয় বহন করে। একজন আদর্শ মা, স্ত্রী এবং শ্বাশুড়ি। ঝড়ের মধ্যেও সংসার আর সন্তান আগলে রেখে এগিয়েছেন। চাইলেই পারতেন সব ফেলে নতুন করে একটা শুরু করতে। কিন্তু করেননি। তার এই অতীতটুকু আমাকে মুগ্ধ করেছে। শুরুতে কঠোর মনে হলেও মাঝে মনে হয়েছে পরিস্থিতি মানুষটাকে শক্ত বানিয়েছে। কিন্তু মেয়েরা কি না পারে? হামিদা খানম সব মায়েদের জন্য একজন আদর্শ। এক নারীর অপরাজিতা হয়ে লড়াইয়ের গল্প। আমি বলব মূল চরিত্র থেকেও কম নয় কোনো অংশে। ২। শেহজাদ - ভালো নাম শেহজাদ আলী খান; আমার কাছে শেহজাদ। নামে নয় কাজেও সে শেহজাদ। একজন পার্ফেক্ট ছেলে, জীবনসঙ্গী, একজন ভাই। অলরাউন্ডার কথাটা শুনেছেন? শেহজাদ হলো অলরাউন্ডার। অপছন্দের এক সম্পর্কে থেকেও জীবনসঙ্গীর পছন্দের খেয়ালটুকু রাখা থেকে সম্মান দিয়ে চলা এইটুকু তো সব মেয়েই আশা করে। এমন একজনের প্রেমে না পড়ে পারা যায়? ৩। মধুমিতা - উৎশৃঙ্খল একটা চরিত্র, জেদি, বদমেজাজি আর? শহরে বড় হলে যেমন হয় তেমনি। শুরুতে অনেকেই বিরক্ত হতে পারেন আমার মতো। অথচ এই চরিত্র টা উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। ধীরে ধীরে এগুতে লাগলাম। এরপল বুঝলাম সমস্যা মধুতে নয় সমস্যা আমার বোঝার মধ্যে। কারো অতীত না জেনে তাকে জাজ করার মধ্যে। মধুমিতার তো সব থেকেও ছিল না। মাম্মির হানি হয়েও আদৌ কি সে সেই ভালোবাসাটুকু পেয়েছিল? ভালোবাসার অভাবী এক ছোট্ট মেয়ে বড় হয়ে হয়ে যায় বদমেজাজি। এ যেন কারো জীবন থেকে তুলে আনা চরিত্র। ৪। রিনি - এই চরিত্র নিয়ে কি লিখব? যাই লিখি হয়ত কম হবে নয়ত স্পয়লার আসবে। শুরুতে আমার মনে হয়েছিল আমি প্রধান চরিত্রের দেখা পেয়ে গিয়েছি, সেটা হয়ত রিনি। খুব সাধারণ একটা মেয়ে, অহংকার নেই। শুধুই ভালো চেয়ে বেড়ায় নিজের কাছের মানুষদের। কিন্তু..ভালোদের কপালে যে ভালোবাসা নামক শব্দটা জুটে না। রিনির ভালোবাসায় কমতি ছিল? না, কমতি আমি দেখিনি। কিন্তু ভাগ্য? ভাগ্যের লিখন খন্ডাতে কে পারে? রিনি পারলে কেমন হতো? সেটা ভাবলে মনে হয় তখন বেজার হয়ে লাভ হতো না। সবাই ই এখানে শিকার। ৫। শাফকাত - রংমহল গল্পের খলনায়ক বলে পরিচয় করালে খুব একটা ভুল হবে না। আমার জন্য দ্বিতীয় বিরক্তিকর চরিত্র। ধূর্ত এবং আত্মভুগি একজন মানুষ। ৬। শাহাদাত - শেহজাদের পর দ্বিতীয় পছন্দের আরেক চরিত্র। একজন আদর্শ সন্তান কিনা বলব না তবে একজন আদর্শ স্বামী। স্বামী হিসেবে জোছনার জাতপাত না দেখে তাকে সবসময় আগলে আগলে রাখার মতো সাহসিকতা আমাকে শুরু থেকেই মুগ্ধ করেছে। এছাড়াও আরো অনেক পার্শ্বচরিত্র ছিল। যেমন শরাফত আলী খান (কপাল মন্দ হলেই এমন একটা মানুষ জীবনসঙ্গী হিসেবে জুটে), শালিনী (বিরক্তিকর একটা চরিত্র), রামিসা (হামিদা খানমের মতোই কপাল মন্দ এই চরিত্রের জন্যও কিছুটা খারাপ লেগেছে), রমিজ উদ্দিন (প্রিয় আরেকটা পার্শ্ব চরিত্র, যে আপন গুণেই শেষ পর্যন্ত প্রশংসিত ছিল), সাজিদ, বাদল, জান্নাত, মাঈনুল, সোহাগী, ফাতেমা বিবি প্রমুখ। চরিত্র গুলো খুব বেশি না। আবার কমও না। সবাই গল্পের স্রোতে এসেছে আপন কার্য সিদ্ধি করে আবার স্থান ত্যাগ করেছে। ?পাঠ প্রতিক্রিয়া: রঙে রঙে ভরপুর মানুষের জীবনের এক আখ্যান 'রংমহল'। জীবনের গতিবেগ কখনো এক ভাবে চলে না। গাছের শেকড়ের মতো এদিক সেদিক চলে যায়। বেড়ে উঠে আপন গতিতে। সেখানেও বেড়ে উঠে নতুন শেকড়। রঙহীন শেকড়ের মতোই রংমহলেও বেড়ে উঠে একের পর এক সম্পর্ক। অনেকে ভাবেন গল্প তো গল্পই; এর সাথে বাস্তবতার মিল আর কতটুকু? সমকালীন জনরায় এই দিকটাই সবার আগে। এখানে লেখক গল্প বলে যান জীবনের। জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখে যান কারো আখ্যান। চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলেন সেইসব মানুষদের যাদের অস্তিত্ত্ব কেবল বইয়ের পাতাতে স্থান পেলেও তারা ফেলে রেখে যায় একরাশ অনুভূতি। আমি সমকালীন জনরাটা খুব বেশি জমিয়ে পড়তে পছন্দ করি। কারণ এখানে টানটান মা র মা র টুইস্ট থাকে না। এখানে যা থাকে তা আমাদের বাস্তব জীবনের একটা অংশ। তাই ধীরে ধীরে পড়ার একটা স্বভাব আমার রয়েছে। কিন্তু মোটা বইগুলো স্বভাবত কারণেই আমি আরো ঝিমিয়ে পড়ি। কারণ সাইজ দেখলে ভয় লাগে। কিন্তু এই প্রথম তার ব্যতিক্রম। পড়তে পড়তে কখন যে গল্পে মজে গিয়েছিলাম টের ই পাইনি। গল্পে আসা একের পর এক চরিত্র, একের পর এক পেছনের গল্প জানতে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টেছি কেবল ঝড়ের গতিতে। বই পড়তে গিয়ে নিজেকেই আবিষ্কার করেছি দিরাইয়ের ভেতর। শেহজাদের চোখ দিয়ে যেন ঘুরে বেরিয়েছি স্বপ্নের রংমহলে। রংমহলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা লেখক এভাবে দিয়েছে যে আপনি সেখানে ডুবতে বাধ্য। মানে লেখক গল্প শুধু বলে যাননি বরং চোখে ভাসিয়েছেন। জায়গা বুঝে ব্যবহার করেছেন উপমা। কিছু জায়গায় রেখেছেন হাস্যরস। এর বাইরেও লেখক দেখিয়েছেন বিয়ের মতো একটা বন্ধনে সম্মান বজায় রাখতে পারলেই সেটা কতদূর এগিয়ে যেতে পারে। দুজন বিপরীতধর্মী মানুষ, দুজনের স্বভাব পুরোই উল্টো তাও তারা এক বন্ধনে আবদ্ধ। মানে সমকালীনের মধ্যে রোমান্টিকতার হাওয়া। এছাড়াও লেখক জোছনার মাধ্যমে প্রমাণ করিয়েছেন,'জন্ম হোক যথাতথ, কর্ম হোক ভালো।' নিচু ঘরে জন্ম নিলেই মানুষের মন নিচু হয়ে যায় না। শেহজাদের চোখ দিয়ে দেখিয়েছেন ছোট হোক বা বড় হোক কোনো কাজ ই ছোট না। মেহনত দিয়ে পরিশ্রম দিয়ে করা যেকোনো পেশাই সম্মানের। শুধু দরকার কদরের। শেহজাদ চাইলে পারত সব ছেড়ে শহরের বাবুয়ানা জীবন বেছে নিত। পারত তার পরিবারকে ফেলে নতুন করে শুরু করতে। কিন্তু করেনি। পারিবারিক শিক্ষা তাকে শিখিয়েছে পরিবারকে এক সুতোয় বেঁধে রাখতে হলে আগে নিজে সেই সুতোটায় আটকাতে হয়। তাইতো মধুমিতার মতো জেদী মেয়েটাও তার কাছে হার মেনেছিল। ভালোবাসার কাঙাল ছিল বলে নাকি শেহজাদের জাদুতে তা পাঠকের ধারণার উপর ই ছেড়ে দিলাম। ?কারা পড়বেন? আপনি যদি সমকালীন জনরা পড়তে পছন্দ করেন বা একদম নতুন হয়ে থাকেন; ভেবে পাচ্ছেন না কি দিয়ে শুরু করলে ভালো হয় তাদের জন্য রেকমন্ডেড। সাথে আপনি অশালীন কিছু না চাইলে এটা অবশ্যই আপনার জন্য। একটা উপন্যাস যেখানে আপনি হাসবেন, কাঁদবেন, প্রেমে পড়বেন আবার সামনের পরিস্থিতি জানার জন্য ছটফট করবেন এমন কিছু আশা করলে অবশ্যই এটি আপনার জন্য পার্ফেক্ট। দুঃখ কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য্য ধারণ করে যে জীবনে সফল হওয়া যায় তার এক মিষ্টি গল্পের স্বাদ ই পাবেন রংমহলে। ?কাদের ভালো নাও লাগতে পারে? আপনি খুব বেশি থ্রিলার প্রেমী হলে আমি বলব দশহাত দূরে থাকাই শ্রেয়। এখানে মা র মা র কা ট কা ট একশন বা টুইস্টের পর টুইস্ট নেই। কিন্তু একটা সুন্দর গল্প আছে। গল্পের ভেতর গল্প আছে। সেখানে সম্পর্কের টানাপোড়েন আছে। একটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচার মতো আর্তনাদ থেকে এই গল্পের সমাপ্তি দীর্ঘদিন মনে গেঁথে থাকার মতোই সুন্দর। ?প্রচ্ছদ, সম্পাদনা, প্রোডাকশন ও অন্যান্য: প্রচ্ছদকার ফাইজা ইসলাম আপুকে শুরুতেই বিশেষ ধন্যবাদ দিব। রংমহলের প্রচ্ছদ যখন প্রথম চোখে পড়ে তখন থেকেই একটা অদ্ভুত আকর্ষণ কাজ করত। কারণ এই মহলটা আমি আগেও কোথাও দেখেছি এমন একটা কল্পনা মাথায় ঘুরঘুর করত। আমি দেখেছিলাম। আসলেই। আহসান মঞ্জিলের আদলে তৈরি সেই মহলের রহস্য গল্পের ভেতরেই আছে। কিন্তু ধরতে গিয়ে দেরী করে ফেলেছি। এই আর কি। আর শুরুতেই বলেছি পুরো বইটা একদমে শেষ করতে পেরেছি। পুরো বইতে তেমন কোনো বানান ভুল আমার চোখে পড়েনি। লাইনের অসামঞ্জস্যপূর্ণতাও ছিল না। লেখনী যে পরিপূর্ণ তা এরই আরেকটা লক্ষণ। তবে ৪৮৮ পেজের মোটাসোটা একটা বইয়ের চারকোনা বাইন্ডিং নিয়ে আমার কিঞ্চিত ভ্রুক্ষেপ আছে। মোটা বলেই খুলে পড়তে আমাকে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। রাউন্ড বাইন্ডিং দিলে হয়ত সুবিধা হতো। কিন্তু পড়া শেষে প্রচ্ছদটা দেখে এসব কমতি আর মনে থাকেনি। পরিশেষে, খুব সাধারণ একটা প্লট; অতিসাধারণ বিষয় যা চক্ষু আড়ালে থাকে সেসব দিক ও এড়াতে পারেনি এখানে। লেখকের ঝরঝরে বর্ণনা আর মেদহীন লেখনী এটিকে করে তুলেছে আরো প্রাণবন্ত। যদিও রিভিউটা বেশ বড় হয়ে গিয়েছে। লিখতে লিখতে খেয়াল করিনি। অনেকে হয়ত বড় বলে স্কিপ করে যাবেন। তবে আমি চেষ্টা করেছি স্পয়লার বাদে আনুসাঙ্গিক দিক তুলে ধরার। আশা করি আমার মতো পাঠক ও ডুব দিতে পারবেন রঙের রংমহলে.....
Was this review helpful to you?
or
#বুক_রিভিউ উপন্যাসঃ রংমহল লেখিকাঃ আফিফা পারভীন জনরাঃ সমকালীন উপন্যাস প্রচ্ছদ শিল্পীঃ ফাইজা ইসলাম প্রকাশনীঃ ছাপাখানা প্রকাশনী মুদ্রিত মূল্যঃ ১২০০ টাকা ▪️ফ্ল্যাপঃ নদী, হাওর ও পাহাড় বেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি প্রাচীন জনপদ সুনামগঞ্জ। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে অনন্য সুনামগঞ্জের শতবর্ষী এক জমিদার বাড়ি রংমহল। কয়েক প্রজন্ম ধরে এই রংমহলে বয়ে চলেছে নিয়ম-অনিয়ম, সুখ-দুঃ খ, প্রেম-অপ্রেম, হ তা শা - স্বপ্ন ভঙ্গ, মায়া-ঘৃ ণা, আশা-নি রা শা ও প্রাপ্তি -অ প্রাপ্তির স্রোতধারা। অনেক মানুষের হরেক রকম অনুভূতির এক বর্ণাঢ্য আখ্যান এই উপন্যাস। রংমহল — মানব জীবনের মতোই বিশাল, বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময়। ▪️পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ যা বাস্তব নিয়ে রচিত, তার জন্য নির্দিষ্ট কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা খুবই কঠিন। প্রতিনিয়ত বদলানো জীবনের রঙের যেমন বিভিন্ন বৈচিত্র্য, তেমনই সেই রঙের সাথে পাল্লা দিয়ে বদলায় অনুভূতি। তবুও আমার মনে উপন্যাসটি কয়েকটি মাত্রায় রং ছড়িয়েছে। প্রথমত, উপন্যাসটিতে একটি জনপদ, একটি শহরের গোড়াপত্তনের ইতিহাসকে ব্যক্ত করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের ভৌগোলিক অবস্থান, নামকরণ, ভূ-প্রকৃতি, সংস্কৃতি, অঞ্চলটির সূচনালগ্ন থেকে বর্তমানের দিকে যাত্রার কিয়দংশ সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে। উঠে এসেছে লোকগাঁথার প্রাচীন ঐতিহ্যমন্ডিত ব্যাক্তিত্বের জীবনযাপন এবং বাউল সম্রাট হয়ে ওঠার অভিনব এক যাত্রা। ভাটি অঞ্চলের মানুষদের জীবন বৈচিত্র্য কিংবা বলা যায় জীবনযুদ্ধের কয়েক ঝলক দেখেই জীবন সম্পর্কিত ধারণার আমূল পরিবর্তন এসেছে আমার মধ্যে। গোড়াপত্তনের ইতিহাসের মধ্যে আরো রয়েছে মধুপুর জমিদার বাড়ির ইতিহাস। কালের বিবর্তনে জৌলুশ হারিয়েও যেন কত কি বলে যায় ক্ষয়ে যাওয়া ইট পাথরগুলো, বলে যায় জমিদারদের নি কৃষ্ট আচরণ, স্বে চ্ছা চা রিতা ও ষড় য ন্ত্রের গল্প। চাপা পড়ে থাকে ভুক্তভোগী নারীদের হা হা কার, অসহায়তার নিরব কান্না। দ্বিতীয়ত, উপন্যাসটি মূলত গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে রচিত। এখানে একটা ঝটকা আছে নায়কের প্রফেশন নিয়ে। পুরোপুরি অন্যরকম এক জীবনযাপনের দৃশ্যপট এখানে রচিত হয়েছে। সচরাচর গ্রামীণ প্লটে যেমন মূল চরিত্রের জীবন, কাজ জড়িত থাকে এখানে তেমনটা হয় নি। আমি এখানেই বিশেষভাবে আকর্ষিত হয়েছি। এখানে পুরো একটা এলাকা, এলাকার মানুষ, তাদের জীবিকা এবং পারিপার্শ্বিক মানুষদের কাজ এবং কথা একটা পরিবারের মানুষদের উপর কিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, তা দেখানো হয়েছে। শুধু সুখ বা শুধু দুঃ খ নিয়ে জীবনের গল্প রচিত হয় না, এখানেও তেমনটি হয় নি। জীবনবোধে শ্রদ্ধায় আকন্ঠ যুবে থাকা যায় এমন অসাধারণ ব্যাক্তির দেখাও মেলে এখানে। জমিদার বাড়িতে জীবনযাপন নিখুঁত বর্ণনায় দেখানো হয়েছে প্রতিটি পরতে পরতে। অভ্যন্তরীণ বি বা দ, ষড় যন্ত্র, বি চ্ছেদ, কর্মফল, হ তা শা, কু সংস্কার, উৎসাহ আর বেশ কিছু মিষ্টি সম্পর্ক যেন বাতাসে ভেসে বেড়ায় সর্বত্র। যা পড়তে পড়তে আমি নিজেও যেন সবকিছুর ভাগিদার হয়ে গিয়েছি, কেঁদেছি, মনের আয়নায় দৃশ্যপট এঁকেছি। তৃতীয়ত, উপন্যাসটিকে এক সেগমেন্টের ভ্রমণকাহিনী ও বলা যায়। সেগমেন্ট বলার কারণ এখানে শুধুমাত্র একটা অঞ্চলের ভ্রমণকাহিনী ও সেখানকার অপার সৌন্দর্য এবং ভ্রমণরত অবস্থায় উৎপন্ন অনুভূতির বর্ণনা করা হয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের দেশ। সেই দেশের অন্যতম জেলা সুনামগঞ্জের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান, সেই স্থানের ইতিহাস, নামকরণ, প্রচলিত নাম সম্পর্কে বহু এবং বিস্তারিত তথ্য ভ্রমণপিয়াসীদের মনের আকুলতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করবে নিশ্চিত। সেই সাথে দিনের কোন আলোয়, কোন পরিবেশে সেই স্থানের সৌন্দর্য কিভাবে বদলায় সেটাও বলা হয়েছে। বৃষ্টির মুখরতা, শরতের কাশফুল, বসন্তের কলতান, শীতের শিশির ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা যোগ করে সেখানকার বৈচিত্র্যের। সবকিছু জেনে সুনামগঞ্জ ভ্রমণের জন্য উচাটন বেড়েই চলেছে আমার। ▪️চরিত্র পর্যালোচনাঃ বিশাল কলেবরের এই উপন্যাসটিতে অনেক চরিত্র সমাগম রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া চরিত্রগুলো সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করলাম। ?শেহজাদ আলী খানঃ অন্যতম মূখ্য চরিত্র শেহজাদ। স্নেহময়ী মায়ের শেহজাদা। রহস্যে ঘেরা এই চরিত্রটিকে আমি শামুকের সাথে তুলনা করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবো কিংবা গোবরে ফোঁটা পদ্মফুল। সমস্ত অনুভূতি খোলসের মধ্যে আবদ্ধ রেখে নি র্বিকার হয়ে থাকাটা এই চরিত্রের থেকে শেখা উচিত। আসলেই সে জমিদার বংশের সুযোগ্য সন্তান। তবে এত ভালো হওয়া উচিত নয়। এই প্রেমময়, সুচিন্তক, তী ক্ষ্ণ ধী, ধারালো ব্যাক্তিত্বের মানুষটার ভাগ্য দেখে আমার অভ্যন্তরে ঝ ড় উঠেছিল বেশ কয়েকবার। এত অসীম ধৈর্য ও হয়!! ?মধুমিতা হোসেনঃ মূখ্য এই নারী চরিত্রটি সম্পূর্ণ একা বেড়ে উঠেছে, বাবা-মা থেকেও তার কেউ ছিল না। আদর, শাসন না পাওয়া মেয়েটি ভেতর থেকে ভালো বলেই হয়তো মায়ের প্ররোচনায় পা হড়কালেও ভে ঙে পড়েনি। ভালবাসার কা ঙা ল মেয়েটি মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য চাতকের ন্যায় থাকতো। কিন্তু... মধুমিতার জন্য আমার বেশ খারাপ লেগেছিল। আমরা সবাই কম বেশি প্র তা র ণার শিকার হই। কিন্তু নিজের মায়ের থেকে এমন ব্যবহার আমরা কল্পনাতেও আনতে পারি না। মেয়েটি আসলেই একটা বা ঘি নী। মানুষ চাইলে কি না পারে! পরিবর্তন হয়তো একেই বলে। ?হামিদা খানমঃ পোড়খাওয়া এই নারীটি শেহজাদের আম্মা। যার দূরদর্শিতা প্রখর। যুগের পর যুগ জীবন যু দ্ধে অটল থাকা এক বটগাছ, যে বারংবার হেলে গেলেও কখনোই ভে ঙে পড়েনি। সুখের মুখ না দেখা এই নারীটির আত্মমর্যাদাও প্রবল। শহুরে, শিক্ষিত এই নারীটি যেভাবে একা হাতে জমিদার গিন্নী হয়ে সবকিছুর হাল ধরেছিল, তাতে চমকিত হতে হয়। ?শাফকাত আলী খানঃ প্রাচীন জমিদারি প্রথা বজায় রাখার বাহানায় নি কৃ ষ্টতম কাজে গা ভাসানো এক জ ঘ ন্যতম, নেমক হা রা ম চরিত্র এই শাফকাত। সূচনালগ্নের ভোলাভালা চরিত্রটির যত বেশি গভীরে যাওয়া যায়, ততই তার অ ন্ধ কার চরিত্রের দেখা মেলে। তবে পরিণতিটা সন্তোষজনক ছিল। এই চরিত্রটির পরিণতি জেনে আমি সর্বাধিক শান্তি পেয়েছি। ?রামিসা আনজুমঃ সাধারণ গ্রাম্য নারী, শাফকাতের স্ত্রী। জমিদার কুটুম হওয়ার লোভে বাবা-মায়ের থেকেও পেয়েছে অব হে লা। অনা কাঙ্ক্ষিত আচরণের জন্য অব হেলার ভাগও বেড়েছে তার কপালে। কিন্তু তবুও মেয়েটি জীবনে কিছুই পেল না। সুখ-দুঃ খ নিয়ে জীবন হলেও মেয়েটির ক্ষেত্রে তা সত্যি হয় নি। তবে তার শেষ পদক্ষেপটা প্রশংসার দাবিদার। এই পদক্ষেপ তার আরো আগেই নেয়া উচিত ছিল। এই চরিত্রটি শিক্ষা দেয় যে, মুখ বুঁজে সব কিছু মেনে নিতে নেই। ?শাহাদাত আলী খানঃ ছোট জমিদার পুত্র। নি ষ্ক র্মা এই মানুষটির প্রতিভা প্রথমে ছাই চাপা ছিল। মনে ছিল অপার প্রেম কিন্তু প্রকাশ করতেই তার যত অনীহা। জীবনের তাগিদে, জীয়নকাঠির ছোঁয়ায় সেই ছেলেটিই একসময় শক্ত মেরুদণ্ডের দায়িত্বশীল এক সুপুরুষে রূপান্তরিত হয়। ?জোছনাঃ বাংলা সিনেমার বেদের মেয়ে জোছনা ছবির মতো এই জোছনাও কাকতালীয়ভাবে বেদের মেয়ে। তার আরো এক পরিচয় হলো, জমিদার বাড়ির ছোট বউ এবং শাহাদাতের জীয়নকাঠি। প্রাণোচ্ছ্বল, স্বচ্ছ মনের অধিকারী এই কর্মঠ নারীটি হারতে শেখেনি কিন্তু কাছের মানুষের বিশ্বাস ঘা ত কতায় হারিয়ে ফেলে অমূল্য রত্ন। তবুও স্বামীসহ পরিবারের সিংহভাগ মানুষ তার পাশে থেকেছে বলে আমি নিজেও শান্তি পেয়েছি। ?রমিজ উদ্দিনঃ আগাগোড়া ভদ্রতা, শৃঙ্খলায় মোড়ানো আর্দশবান এক শিক্ষক। মানুষ হিসেবেও যার মানসিকতা ও মানবিকতার প্রশংসার বুলি আমার কাছে নেই। নিরবতার ভাষা বেশ ভালোভাবেই রপ্ত তার। কখনো তিনি কিছু না বলেও অনেক কিছু বলে দেন, কখনো আবার দুই একটা কথাতেই অপরপাশের ব্যাক্তির বলা থামিয়ে দেন। এই চরিত্রের সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ করা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানানো ছাড়া আর কিছু বলারও নেই আমার। ?রিনি মেহজাবিনঃ সুশীলা রমনী বলতে যা বোঝায়, রিনি তাই। নিজের আবেগকে এত দারুণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি বোধ হয় পিতার থেকেই পেয়েছে। শুধুমাত্র একবার একটামাত্র ভুলের জন্য নিজেকেই নিজে শাস্তি দিয়ে হয়ে উঠেছে অনন্য। মানুষ ফেরেশতা নয়, অ ন্যায় বা ভুল হবেই। কিন্তু সেই ভুল স্বীকার করার মানসিকতা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি রিনি চরিত্রটিকে একটুও দোষ দেবো না। তার পরিস্থিতিই নাজুক ছিল। ?মাঈনুল হোসেনঃ মধুমিতার পিতা, যার সমগ্র জীবনই ভুলে ভরা। চোখে কালো কাপড় বেঁধেই যেন সে তার জীবন কাটিয়ে ফেলেছে। যতদিনে সেই কাপড়টা খুলে গেল, ততদিনে তার হাতে সামান্য কিছুই অবশিষ্ট ছিল। সেটুকু তিনি ঠিকভাবে সামলালেও আগে করা ভুলের কু প্রভাব থেকে বাঁচতে পারেন নি৷ তার পরিণতি ক ষ্ট দায়ক। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা তার ভাগ্যে ছিল ই না বলা যায়। ?শালিনী রেহমানঃ সেলিনা রহমান থেকে শালিনী রেহমান হওয়ার যেই যাত্রা তিনি করেছেন, তারচেয়ে ঘৃ ণ্য, ব র্ব রো চিত যাত্রা সম্ভবত আর হয় না। কথায় বলে, "কু সন্তান যদিও হয় কু মাতা কদাপি নয়"। তিনি এই ধারণাকে সমূলে উৎপাটন করে দেখিয়েছেন। আধুনিকতার নামে নিজের মেয়েকেও বানাতে চেয়েছিলেন আপডেট যুগের দেহ প সা রি ণী। একটা মুরগি ও নিজের ছানাদের ডানার ছায়াতলে সুরক্ষিত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে কিন্তু এই মহিলা...! সত্যি বলতে এই চরিত্রতা শা স্তির যোগ্য ছিল, আমার হাত নিশ পিশ করছিল পড়ার সময়। কিন্তু এটাও একটা শিক্ষা যে, যার শা স্তি দুনিয়ার বুকে হয় না তার শা স্তি মূলত আরো বেশি ভ য়া বহ হয়। ?সোহাগীঃ এই চরিত্রটি প্রথমদিকে হাসিয়ে ছেড়েছে কিন্তু খা রাপ কাজের কর্মফল খা রাপ ই হয়। তবুও পরিণতিটা গা শিউরে ওঠার মতো। সমাজের উচ্চবর্গের ক্ষমতাসীন মানুষদের কাছে কোনো আশ্রয়হীনের অধিকার চাওয়ার ফলাফল হয়তো বা এমনটাই হয়। ?ডা. তাসরিফঃ আমার খুব খুব খুব পছন্দের চরিত্র এটি। শেহজাদের পর এই চরিত্রটিই বেশি টেনেছে আমায়। হাসি, মজায় মাতিয়ে রাখা একটি প্রাণ। পড়ার সময় এই প্রাণোচ্ছ্বল মানুষটার অংশ আসলেই হেসে গড়াগড়ি খেয়েছি আমি। একবার তো হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গিয়েছিল। মানুষটা এত দুষ্টু! এই চরিত্রের জন্য আমি অনেক খুশি। তবে লেখিকা আপু বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছিল একবার। ?জান্নাতঃ উপন্যাসটিতে এই নির্মল, অল্পভাষী চরিত্রকে নিয়ে আছে সবচেয়ে বড় টুইস্ট। মায়ের নির্ণয়ে ভাগ্য নির্ধারণ হবে নাকি তার জীবনেও বসন্ত আসবে? বসন্ত কি আদৌও আসবে? যদি আসেও, তবে সেই বসন্ত আসার পথ সুগম হবে কি? নাকি মাঝ সমুদ্রে যেয়ে দোদুল্যমান হয়ে উঠবে তার ভাগ্যরেখা? কোন পুরুষের সাথে জুড়তে চলেছে সে? তার নামের মতো সুখের জীবনের দেখা মিলবে তো? এমনই বহু রহস্য রয়েছে এই নারী চরিত্রকে ঘিরে। তবে এই চরিত্রের চারিত্রিক দৃঢ়তা বিশেষভাবে লক্ষনীয়। ?বাদলঃ এই চরিত্রের উপস্থিতি খুব একটা না থাকলেও তার মর্ম বেদনা হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো ছিল। সে জান্নাত চেয়েছিল রবের কাছে। সে সত্যিই জান্নাত পেয়েছিল, তবে অন্যরকম ভাবে, অন্যরূপে। মহান আল্লাহর পরিকল্পনা বোঝা কার সাধ্যি! ?সাজিদঃ খুবই অল্প সময়ে কাঁদিয়ে ছেড়েছে এই ধৈর্যবান চরিত্রটি। ভাগ্যের উপর আমরা সবাই বড্ড অসহায়। ভালো মানুষগুলো কেন বেশিদিন আমাদের মাঝে থাকে না? এছাড়াও নানাবিধ চরিত্রের আনাগোনা আছে সমগ্র উপন্যাস জুড়ে। তন্মধ্যে আনন্দী, কল্লোল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একজন টালমাটাল অবস্থায় বিশ্বাস, ভরসা জুগিয়েছে তো অন্যজন নিজের বুকে পাথর চাপা দিয়ে ভুল ভাঙিয়েছে, মিলিয়ে দিয়েছে দুই আত্মাকে। মুগ্ধতা যেন পুরো উপন্যাসটাকে মুড়ে রেখেছে নিজের চাদরে। এমন আবহ তৈরি হয়েছে যে শুধু তাদের নিয়েই ভাবতে ইচ্ছে হয়। আরো কত চরিত্রের কথা তো বাদ ই রয়ে গেল। ▪️আত্ম-উপলব্ধিঃ ১. স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষা কখনোই থেমে থাকে না৷ উত্তরোত্তর বাড়তেই থাকে। ফলশ্রুতিতে সুখী থাকাটা আর হয়ে ওঠে না। অথচ চাহিদাকে যদি একটা সীমার মধ্যে বেঁধে ফেলা যায়, তাহলে সুখী হওয়াটা খুব একটা কঠিন নয়। ২. পরিপূর্ণ সুখী কখনোই হওয়া যায় না। টাকা কখনোই সুখ কিনতে পারে না। এই সত্য মেনে নিলেই জীবনে টিকে থাকাটা একটু হলেও সহজ হয়ে যায়। ৩. পৃথিবীর মানুষগুলো বড্ড স্বার্থপর হয়। দায়িত্ব নিতে পারা মানুষগুলোকে তারা মানুষ ই মনে করে না, বরং টাকা কামানোর মেশিন মনে করে। এজন্য দায়িত্বশীলতার পাশাপাশি নিজের ভবিষ্যৎ ভাবনাও করে রাখা উচিত। ৪. অর্থ অনর্থের মূল। এক্ষেত্রে অন্ধ বিশ্বাস ম র ণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। বেশিরভাগ সময় কাছের মানুষই জানের দু শ মন হয়ে যায়। সতর্কতা এবং সাবধানতা অবলম্বন সর্বক্ষেত্রে প্রয়োজন। ৫. হাসি মজা করা মানুষগুলোকে আমরা বেশিরভাগ সময় ভুল বুঝি। সবসময় হাসি সুখী হওয়ার প্রতীক হয় না। বরং দুঃখ লুকানোর হাতিয়ার ও হয়। "ওপারেতে সর্বসুখ" এমন ভ্রমে থাকা কখনোই উচিত নয়। ৬. বদ নজর থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত। নিজের ব্যাক্তিগত বিষয় যা অন্যরা জানলে হিং সা ত্মক মনোভাব পোষণ করতে পারে, তা আড়ালে রাখা উচিত। যতটুকু না জানালেই নয়, ঠিক ততটুকুই জানানো উচিত। বিশেষভাবে খেয়াল রাখা উচিত যেন সম্পর্কের মাঝে তৃতীয় ব্যাক্তি না আসে। কখনো ভুলক্রমে চলে আসলেও সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার দৃঢ়তা যেন আমাদের মধ্যে থাকে। বাকিটা আল্লাহ ভরসা। ▪️বইটি পড়ার প্রয়োজনীয়তাঃ উপন্যাসটি সামাজিক ঘরানার। অর্থাৎ এখানে পুরো একটা সমাজ ব্যবস্থা, রীতিনীতি, মূল্যবোধ, পর নিন্দা ও পর চর্চার কু প্রভাব এবং কাছের মানুষের বিশ্বাস ঘাতকতা ও এর কারণ সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আমরা খবরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনা হরহামেশাই শুনে থাকি কিন্তু পুরো ঘটনার মাঝে আরো অনেক ক্ষুদ্র ঘটনা থাকে, যা অদেখা করার কারণেই বড়সড় বি প র্যয় সামনে আসে৷ এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনার সূক্ষ্ম বুনন দেখানো হয়েছে বইটিতে। বর্তমান প্রেক্ষাপট এমন যে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা খুবই জরুরী। বই পড়া আমার কাছে বিনোদনের একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম। আমি আগেই উল্লেখ করেছি, এটা এক সেগমেন্টের ভ্রমণ উপন্যাস ও বটে। ভ্রমণ পিপাসুদের বইটি অবশ্যই পড়া উচিত। এছাড়াও রোমান্টিক উপন্যাস পছন্দ যাদের, তাদের এই উপন্যাসটিকে সবার আগে পড়া উচিত। আজকালকার যুবসমাজ ভালোবাসা আর ভালোলাগাকে গুলিয়ে ফেলে। ভালোবাসা আদতে কি.. এটা জানার জন্য হলেও বইটি পড়া উচিত। মোটকথা, বিনোদন বা শিক্ষা, অবসর যাপন বা জ্ঞানার্জন যেটাই বই পড়ার কারণ হোক না কেন, সবক্ষেত্রেই বইটি নিজের স্থান দখল করবে। কোনো কমতি বইতে আপনি খুঁজে পাবেন না। ▪️ভালো লাগার দিকঃ পুরো উপন্যাসটিই ভালোলাগার একটা খনি। আলাদা করে যদিও বলার কিছু নেই তবুও বলি, কিছু মুগ্ধতা ভাষায় প্রকাশ করা ক ষ্ট সাধ্য হয়। অনুভূতি মূলত অনুভব করে বুঝতে পারলেই তা নৈসর্গিক হয়ে ওঠে। আর লেখিকা আপু এই অনুভূতি অনুভব করতে পারার আবহ সৃষ্টিতে পুরোপুরি সফল। আর এটাই আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। ▪️প্রোডাকশন কোয়ালিটিঃ বইটি হাতে নিয়েই এক দফা ক্রাশ খেয়েছি বলা যায়। মোটা বই পড়ার সময় একটা কমন সমস্যা দেখা যায় যে, বইটি খোলা রাখতে গেলে একভাবে ধরে রাখতে হয়। হাত সরালেই পৃষ্ঠা উলোটপালোট হয়ে যায়। অবাক বিস্ময়ে দেখলাম, এত্তো বড় বইটিতে এই সমস্যা নেই! সত্যি বলতে সমগ্র বইতে কোনো খুঁত আমি খুঁজে পাই নি। এই রয়্যাল সাইজের বইটির আকর্ষণ ক্ষমতা আসলেই প্রবল।
Was this review helpful to you?
or
বই : রংমহল লেখক : আফিফা পারভীন প্রকাশনী : ছাপাখানা প্রচ্ছদ : ফাইজা ইসলাম রঙিন এই পৃথিবীকে আরেকটু রাঙাতে জনপ্রিয় লেখক আফিফা পারভীন এবার রঙের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। জ্বী তার নতুন বইয়ের নাম রংমহল। এই বইটার নাম শুনলে প্রথম প্রহরেই সবার মনে যেই কথাগুলো আসবে তা হলো- রাজা,রাণী,বিশাল রাজমহল আর রাজ্য নিয়ে কোনো বই হয়ত। কিন্তু না এটি কোনো আদি যুগের রাজামহলের কাহিনি না। এটি পাঠকের মনের রংমহল। যেখানে রাজা তো নেই কিন্তু একজন শেহজাদ আলি খান আছেন আর আছে মধুর মতো মিষ্টি তার মধুমিতা। ★ রংমহলের রঙিন অনুভূতি : গল্পটি পড়তে পড়তে আমি হারিয়ে গিয়েছি দিরাইয়ের মুক্ত বাতাসে,চঞ্চল হাওরে, শেহজাদের আগুন ফুলের সৌরভে। লেখকের চমৎকার লিখনশৈলী আমাকে মুগ্ধ করেছে একইসাথে অবাকও। ছটফট করে চলা এই আমি এত বড়ো একটি বই কেমন করে একটানে পড়ে গেলাম এবং শেষ করার পরও রংমহলের রং আমাকে রঙিন করে রাখলো সারাটাক্ষ?। এই বইটিতে মধুপুর, দিরাইয়ের হাওর,সুনামগঞ্জের বর্ননা, ওখানের প্রাকৃতিক পরিবেশ, মানুষের জীবনযাত্রার ধরন,সবকিছু চমৎকার করে লেখক তুলে ধরেছেন। পড়ার সাথে সাথে মন ছুটে গেছে সেই হাওরের পানে। যারা কখনো হাওর দেখেনি বা সুনামগঞ্জ যায়নি, তারাও মনে মনে ঠিক করে নিবে জীবনে একবার হলেও ঘুরে আসবে। পড়তে পড়তে ৪৪০ পৃষ্ঠায় এসে আমি থমকে গেছি, বইটি বন্ধ করে প্রচ্ছদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম বহুক্ষণ, প্রচ্ছদের এত চমৎকার বিশ্লেষণ বইটিতে রয়েছে। আমি মুগ্ধ, স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ। তারপর ৪৪৪ পেজ উফফ এত বড়ো ধাক্কা আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো চিন্তাও করিনি। আমি পুরাই স্ট্যাচু হয়ে ছিলাম কিছুসময়। কিন্তু পরিস্থিতি এত চমৎকার মোড় নেয়ার পরও গল্পের ফ্লো নষ্ট হয়নি একদমই। অতীত, বর্তমান,সুখ,দুঃখ, হাসি,কান্না সবকিছু মিলিয়ে এত সুন্দর সাজানো একটি কাহিনি, যে পাঠক বলতে বাধ্য রংমহল সত্যি রঙে রঙিন হয়ে ঝলমল করছে। ★প্রিয় চরিত্র : রংমহলের প্রতিটা চরিত্র তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে একদম পার্ফেক্ট। আমার সবগুলো চরিত্রই ভীষণ পছন্দের। এমন কি শাফকাত আর শালিনী রেহমানকেও । জ্বী মানে খলনায়ক চরিত্র হিসাবে তারাও পার্ফেক্ট ছিলো আরকি। শেহজাদ আর মধুমিতা তো মনে হয় সবারই পছন্দের লিস্টে উপরে থাকবে। এত এত চরিত্রের ভীড়ে আমার দুটো চরিত্র একদম মনে দাগ কেটে গেছে। তারা হলেন_ ❤️ হামিদা খানম : এই চরিত্রটি আমার ভীষণ প্রিয়। শুধু যে তিনি শেহজাদের মমতাময়ী মা,বা রংমহল ও মধুপুরের আদর্শ গিন্নীমা এ কারণে নয়। বরং সে নিজেই নিজের পরিচয় তৈরি করেছেন এই রংমহলে, সকলের হৃদয়ে। তার ব্যক্তিত্ব,বুদ্ধিমত্তা,সাহস এবং যেকোনো সিন্ধান্ত দ্রুত এবং সঠিক নেয়ার যে গুণ সেটিতে আমি মুগ্ধ। বিয়ের পর একজন দুশ্চরিত্র স্বামী এবং ওরকম বৈরী পরিবেশে তিনি যেভাবে লড়াই করে নিজের অবস্থান মজবুত করেছেন তা নারী হিসাবে অকল্পনীয়। সবচেয়ে অবাক হয়েছি অতীতে তার নেয়া সেই সিন্ধান্তটি জেনে, একজন নারী,স্ত্রী বা মায়ের পক্ষে যা অসম্ভব ছিলো তিনি তাই ই বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। এমন একজন ব্যক্তিত্ব্যকে স্যালুট জানাই। ❤️ জোছনা : আমার প্রিয়র তালিকায় এই নামটি তখনই চলে এসেছে যখন তাকে জেনেছি। শুরুতে চরিত্রটি বেশ মজার মনে হয়েছে। ধীরে ধীরে তার জন্য মায়া হয়েছে কিন্তু এক পর্যায়ে তার সাহস,ব্যক্তিত্ব, কথা বলার ঢং,এবং স্ত্রী হিসাবে তার দৃঢ়তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। গল্পের সাথে সাথে জোছনা যেন তার জোছনার আলোই ছড়িয়ে গেছে পুরো রংমহলে। ★ বইটির বিশেষত্ব : যারা বইপ্রেমী, সামাজিক, পারিবারিক এবং রোমান্টিক জনরার বই পড়তে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই বইটি মাস্ট রিড আমি বলব। কেন? কারণ এই বইটিতে পারিবারিক শিষ্টাচার যেমন আছে,তেমনি অনাচারের উদাহরণও আছে। একজন দায়িত্বশীল মা এবং ছেলে যেমন আছে, একজন ব্যভিচারী মা এবং কুসন্তানও আছে। এক বইতে শত চরিত্র দেখার জন্য হলেও বইটা পড়া উচিত। আরও আছে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার শিক্ষা। জাতপাতের বিভেদ ভুলে সত্যিকার মানুষ হবার শিক্ষা। যারা দেশে থেকেও দেশের আসল সৌন্দর্য নিজ চোখে কখনো দেখতে পারেননি, তারা এই বইটি পড়লে একবার হলেও সুনামগঞ্জের সেই হাওরে,নীলাদ্রি লেকে, বজরার সে কামড়ায়, বাউল সঙ্গীতের টান উপলব্ধি করতে পারবে। চমৎকার প্রোডাকশন, অদ্ভুত সুন্দর প্রচ্ছদ, মার্জিত লিখনশৈলী, দারুণ শব্দচয়ন ও গল্প লেখার অসাধারণ ধরন দেখতে হলেও বইটি নেয়া উচিত। যেখানে এক বইতে এতকিছু পেয়ে যাচ্ছেন, সেখানে মিস করার তো প্রশ্নই আসে না, তাই না? ★সবশেষে বলব, রংমহলের আসল নায়ক হচ্ছে ভাগ্য বিধাতা। যে তার নিজের গতিতে রঙিন কালিতে লিখে চলেছে সকলের ভাগ্য। সকল চরিত্র হুটোপুটি খেলেছে তারই ইশারায়। কেউ সব দিয়ে হয়েছে সকলের মনের শেহজাদা। কেউ আবার কিছু হারিয়ে কাঙাল আবার কেউ হেরে গিয়েও জিতে যাওয়ার পুরষ্কার হিসেবে পেয়েছে মনের মানুষের ভালোবাসা। সবমিলিয়ে দারুণ উপভোগ্য একটি বই রংমহল।
Was this review helpful to you?
or
#রিভিউ বইয়ের নাম : রংমহল লেখকের নাম : আফিফা পারভীন প্রকাশনী : ছাপাখানা প্রচ্ছদ শিল্পী : ফাইজা ইসলাম পাঠ পরবর্তী প্রতিক্রিয়া: জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আফিফা পারভীন এর বারোতম বই "রংমহল"। সমকালীন জনরার বিশাল কলেবরের বইটি পড়তে গিয়ে বেশ ভালো সময় কেটেছে আমার। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো জমিদার বাড়িগুলো দেখলে এতোদিন শুধু আমার মাথায় সবার আগে একটা কথাই ঘুরপাক খেতো তা হলো এতো সুন্দর সুন্দর স্থাপত্যের অধিকারী গুলো কোথায়? উত্তরটা রংমহল পড়েই ক্লিয়ার হয়েছি, জমিদার বাবুরা তাদের চাকচিক্যময় জীবনযাপন ও আভিজাত্যময় ঠাটবাটেই পূর্বপুরুষের উপার্জিত অর্থ গলাধঃকরণ করেছেন ।ফলে একসময় ইটপাথরের স্থাপনাগুলো ভঙ্গুর অবস্থায় রয়ে গেলেও জমিদারের পরবর্তী প্রজন্ম আজ বিলুপ্ত। "বসে থেকে খেলে যে একসময় রাজার ভান্ডারও শেষ হয়ে যায় " এই প্রবাদ বাক্যের মাহাত্ম্য রংমহল বইতে স্পষ্ট ভাবে উপলব্ধি করা যায়। বইটি পড়ার পর সুনামগঞ্জের প্রতি অদ্ভুত এক টান অনুভব করেছি।ঋতুভেদে সুনামগঞ্জের বৈচিত্র্যময় ও অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। একবারের জন্য হলেও সেই সৌন্দর্য উপভোগের তৃষ্ণা বাড়িয়েছে। এতো কিছু যে সুনামগঞ্জে আছে আমার জানা ছিল না। বইটি পড়ে সুনামগঞ্জের ইতিহাস,ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনেছি গভীর ভাবে। শহুরে জীবনে অভ্যস্ত শিক্ষিত হামিদা খানম বলুন আর বর্তমানের মধুমিতা,গ্ৰাম্য জীবনে অভ্যস্ত মেধাবী -পরিশ্রমী শেহজাদ খান,স্নিগ্ধতায় মোড়ানো রিনি ,টিকটক খ্যাত প্রিন্স শাহাদাত বা প্রিন্সেস মুনলাইট, চঞ্চল শাকের_শাহেদ,অলস ও বাউন্ডুলে শাফকাত,একটু ডিফারেন্ট রামিসা আন্জুম,হাস্যোজ্জ্বল তাসরিফ, বিশ্বস্ত বাদল, জ্বীন ভক্ত মজনু,আদুরে-মেধাবী জান্নাত, শুভাকাঙ্ক্ষী রমিজ উদ্দিন,অতি আধুনিকা শালিনী রেহমান, ছাপোষা মাঈনুল হোসেন সহ আরো অনেকের জীবনের ছোট-বড় গল্পগুলো পড়তে পড়তে বেশ ভালো-খারাপ দুটোই লেগেছে।কারো জন্য বুকফাটা আর্তনাদ এসেছে তো কারো পরিনতি জেনে মনে শান্তি লেগেছে।কারো জন্য চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন এসেছে তো কারো কুরুচিপূর্ণ চিন্তা ভাবনায় হতবুদ্ধি হয়েছি। মোটকথা বইটিতে বিচিত্র সব মানুষের বৈচিত্র্যময় চরিত্র নজর কেড়েছে। প্রিয় চরিত্র : জোছনা : বেদের মেয়ে জোছনা।যার সমাজে গ্ৰহণযোগ্যতা নেই। কিন্তু ছোটঘরের জোছনার মধ্যে আত্মসম্মানবোধ ও অন্যকে শ্রদ্ধা নিবেদন করার মানসিকতা প্রখর। মা হীনা জোছনা ছোট থেকেই ঝুটঝামেলাহীন জীবনে অভ্যস্ত ।সে পরিশ্রমী , অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকে,তার মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ নেই।আছে শুধু অন্যকে সহজেই আপন করে নেয়ার প্রবণতা।তার বিচার বুদ্ধি ও চিন্তাধারা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। বইটি কেন পড়বেন? ফেসবুকে যখন আপু "রংমহল" দিয়েছিলেন তখন নিঃসন্দেহে তা মন কেড়েছিল সকল পাঠকের।তবে বইতে "রংমহল" আপনার মন,প্রাণ, চিন্তা, চেতনা, ধ্যান,ধারণা সব কেড়ে নেবে নিশ্চিত।সেজন্য আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে বইটি। সুন্দর, সাবলীল, মার্জিত লেখা। মোটা বইগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায় লেখক লিখতে লিখতে খেই হারিয়ে ফেলছেন। অযোথায় চুইনগামের মতো টেনে টেনেই বইয়ের ওজন বাড়িয়ে দেন। এক্ষেত্রে রংমহল ভীষণভাবে ব্যতিক্রম। এত মোটা একটি বই পড়তে গিয়ে কখনো একঘেয়েমি আসেনি। লেখার গুণগুলো মান বেশ ভালো। তার শব্দচয়ন,লেখার দক্ষতা সংযোজন ও বিয়োজনের পরিমিত বোধ আপনাকে উপন্যাসের শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত সন্তুষ্ট করবে। অতিরিক্ত বা অতিরঞ্জিত কোন শব্দ বা বাক্য ছিল না বইটিতে বরং ছোট থেকে ছোট চরিত্রগুলো লেখার দক্ষতার কারণে বেশ সক্রিয় ছিল পুরোটা সময়। শতবর্ষী পুরনো রংমহলে পূর্ব পূরুষ থেকেই আভিজাত্য, শৌখিনতা, অহংকার,কুসংস্কার এসব যেমন চলে এসেছে ঠিক তেমনি এসেছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, মন উজাড় করা পরোপকারী মননশীলতা, শ্রদ্ধা,ত্যাগ ইত্যাদির নিদর্শনও। সব ধরনের অনুভূতির সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে রংমহল। রংমহলে প্রতিটি মানুষের জীবনের আলাদা আলাদা গল্প আছে, আলাদা আলাদা সুখ, দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, পাওয়া না পাওয়ার সমীকরণ আছে। আর এই সমীকরণের গোলক ধাঁধায় পাঠককে আটকে রাখে রংমহল। রংমহলের প্রচ্ছদ হাতে পাবার পরে যতটা সুন্দর লেগেছে বইটি শেষ করার পরে তার সৌন্দর্য আরো নিখুঁত ভাবে ধরা দেবে পাঠকের কাছে।পুরো বইটাই আসলে তার রঙে রঙিন করবে আপনাকে। ধন্যবাদ আপু রংমহলের জন্য, রংমহলের কিছু কিছু কথা এতো বেশি মায়াময় ও গভীর যে আমি পুরো হাবুডুবু খেয়েছি। বিশাল কলেবরের বইটি বেশ তথ্যবহুল, পাশাপাশি আপনাকে বিনোদনও যেমন দিবে তেমন দিবে অনুপ্রেরণা। "রংমহল" পড়া শুরু করলেই মাথার মধ্যে যে ঘুনোপোকাগুলো কুটকুট করবে তার উত্তরগুলো ঠিক সময়ে ঠিকভাবে তামঝাম ছাড়াই পেয়ে যাবেন।তাই নিশ্চিন্তে পড়তে পারেন।আমার অনুভূতির চেয়েও শত সহস্রগুণ বেশি ভালো "রংমহল" ।