User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
দুশ্চিন্তা থেকে ছুটি নিতে আমি শীর্ষেন্দুর বই নিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে যাই। প্রচণ্ড তৃষ্ণা পেলে মানুষ যেমন এক চুমুকে গ্লাসের শেষ বিন্দুটা শেষ করে ঠিক তেমনি যাও পাখি আমার তৃষ্ণা মেটালো। লম্বা সময় ধরে পরিবারের সাথে ইট পাথরের শহর কলকাতায় বাস করেও ভর ভরান্ত সংসার জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরিবার ছেড়ে মাটির টানে বহেরুর গাঁয়ে বাস করতে শুরু করেন ব্রাহ্মণ কর্তা ব্রজগোপাল। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে বহেরু, গন্ধ বিশ্বাসদের সাথে বাস করতে শুরু করেন তিনি।এতে করে তৈরি হয় দূরত্ব পরিবার সন্তান ও স্ত্রীর সাথে। সেকেলে বাবার মন পড়ে থাকে মাটির ঘ্রাণে, গাছের পাতায়,লোকের উপকারে দিন যায় - আসে। শহরের সংকীর্ণ জীবনে স্বার্থপরের মতো শুধুমাত্র নিজের টা আগলে বেচেঁ থাকার মধ্যে কোনো স্বার্থকতা খুঁজে পান না ব্রজগোপাল। লোককে দুহাত ভরে দেওয়া থওয়া , প্রকৃতির মাঝে নিজেকে নিমজ্জিত করে সবকিছু সকলকে দিলেও যে কখনো ফুরিয়ে যায় না বরং উপচে পড়ে তার প্রমাণ করে দেন তিনি। সবটাই যেন নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া মানবিক মূল্যবোধ থেকে উত্তরণের পথ বলে দিলেন ব্রজগোপাল।অন্যদিকে ব্রজগোপালের স্ত্রী ননীবালা, দুই ছেলে রণেন সোমেন আর দুই মেয়ে শীলা ইলা শুদ্ধু গোটা পরিবারটি যেন সময়ের স্রোতে শুধু শান্তি আর পরম নির্ভরতার খোঁজে তৎপর। শীর্ষেন্দুর লেখার বিশেষত্ব কাহিনীতে প্রত্যেকটি চরিত্র সুনিপুণ হাতে গড়ে তোলেন তিনি। একজন ছাপোষা ব্যক্তির ঘটনাবহুল জীবনকে মনস্তাত্বিক দিকসহ অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলার অসীম ক্ষমতা নিয়েই তিনি উপন্যাস উপহার দিয়ে গেছেন জীবনভর। প্রত্যেকটি চরিত্রের আলাদা মনমানসিকতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাখ্যা পাঠককে ভাবতে বাধ্য করবে যে সবার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্তিভেদে আলাদা আলাদা হওয়া খুব স্বাভাবিক।অনেক গভীর অর্থবহুল বার্তা পুরো বই জুড়ে যে কাউকে মোহাচ্ছন্ন করবে।রক্তের সম্পর্কের দুটি প্রজন্মের মধ্যকার চড়াই উৎরাই, দূরত্ব আর মনের টান স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে উপন্যাসে। যাও পাখি গল্পের মূল বক্তব্য কে একনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করলে একজন সৎ পরিশুদ্ধ বাবা তার পরিবার ও সন্তানদের দূর থেকে আগাগোড়া মঙ্গল কামনা করে গেছেন,সম্পর্কের সীমারেখা ও বাস্তবতার ইতিবৃত্ত মিলিয়ে বস্তুত সুখ নামক পাখির সংজ্ঞা কি তা ই বুঝিয়ে গেছেন লেখক। রেখার দুই প্রান্ত গ্রাম ও কলকাতা কে একযোগে মিলিয়ে মানবজীবনের ইতিবৃত্ত নিয়ে সামাজিক উপন্যাস যাও পাখির বিশেষ করে সমাপ্তিটা এক কথায় কতটা পরিপূর্ণ তা লিখে বোঝানো কঠিন।
Was this review helpful to you?
or
গল্পটা অনেকের। গল্পটা সোমেনের। গল্পটা ব্রজগোপালের। গল্পটা বহেরুর। গল্পটা ননীবালা দেবীর। গল্পটা রণেনের। গল্পটা শীলার। গল্পটা অজিতের। কিন্তু তার থেকে বড় বিষয়, গল্পটা সম্পর্কের। গল্পটা ভালোবাসার। গল্পটা দায়িত্ববোধের। আর সর্বপরি, মানবতার। লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অন্যতম সেরা বইখ্যাত "যাও পাখি" অনেক কিছুর কথা বলে। অনেক কিছু জানায়। অনেক কিছু শেখায়। মজার ব্যাপার হলো এই শেখা, জানার মধ্যে কোথাও একটুকুও একঘেয়েমীতা নেই। গল্পটা শুরুর পরপরই এক ধরণের ঘোর শুরু হয়ে যায়, যা পাঠককে টেনে নিয়ে যায় বইয়ের শেষ পাতা অব্দি! পড়ে দেখবেন। ভালো লাগবে। ধন্যবাদ! ? প্রকাশনীঃ আনন্দ পাবলিশার্স
Was this review helpful to you?
or
বাস্তব জীবনের এক অদ্ভুত চিত্র উঠে আসে চোখের সামনে এই বইটি পড়লে।প্রতিদিনকার পারিবারিক নানান ব্যাপার উঠে এসেছে এই উপন্যাসে আর তার সাথে সাবলীল উপস্থাপনা একে এক অন্য মাত্রা দেয়।সব মিলিয়ে অসাধারণ। যারা পড়েছেন জানাবেন কেমন লাগল আর যারা পড়েননি পড়ে দেখবেন....ধন্যবাদ।
Was this review helpful to you?
or
"যাও পাখি",শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর সেরা উপন্যাসগুলোর একটি। এর কাহিনী শুরু হয়েছে কলকাতা থেকে কিছু দূরের একটা গ্রামে। সেখানে ২২-২৩ বছরের যুবক সোমেন এসেছে তার পিতা ব্রজগোপালের কাছে। ব্রজগোপাল কলকাতায় ছেলেদেরকে ছেড়ে গ্রামে এসে থাকেন বহেরু নামের এক গেরস্ত চাষার কাছে। স্ত্রী-ছেলে-মেয়েদের সাথে ব্রজগোপালের সম্পর্ক ভালো নয়। সম্পর্ক ভালো না হওয়ার কারণ তেমন গুরুতর কিছু নয়। কিছুটা ব্যক্তিত্বের সংঘাত, কিছুটা বা ব্রজগোপালের 'বাতিল' চিন্তাধারা। তিনি কলকাতায় থাকতে চান না, চাকুরী করা পছন্দ করেন না। তিনি চান ছেলেরা গ্রামে চলে এসে চাষাবাদ করুক। ছেলে-মেয়েরা পিতাকে জানে সংসারের প্রতি উদাসীন, দায়িত্বহীন হিসাবে। তার প্রতি তাদের কোন মায়া মমতাও নেই। কলকাতায় ভাড়া বাড়ীতে থাকে ব্রজগোপালের স্ত্রী ননীবালা, বড় ছেলে রনেন ও তার পরিবার এবং ছোট ছেলে সোমেন। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তাদেরও বাপের প্রতি কোন টান নেই। বৃদ্ধ বাপ দূর গ্রামে একজন অনাত্মীয়ের কাছে একা পড়ে থাকেন। ব্রজগোপাল একটা নোটবুকে ডায়েরীর মত লিখেছেন। সোমেন সেটা পড়ে দেখে। এক পাতায় তিনি লিখে রেখেছেন, 'ভগবান, উহারা যেন ভালো থাকে।' এই লেখাটা পড়ে সোমেনের মনে হলো, পিতা তাদেরকে যে ভালোবাসে না - এ কথা সম্ভবত: ঠিক নয়। বড় ছেলে রনেন ফুড ইন্সপেক্টরের চাকুরী করে। অঢেল উপরি আয়। সংসার সেই চালায়। ফলে তার স্ত্রীর সাথে ননীবালার খুটখাট লেগেই থাকে। তবে তিনি ছেলেদেরকে খুব বেশী ভালোবাসেন। ঠিক তেমনি অপছন্দ করেন স্বামীকে। এর মধ্যে বড় জামাই একটা জমির খোজ আনে। ননীবালা চান জমিটা কিনে ছেলেরা সেখানে বাড়ী করুক। সে জন্য তিনি স্বামীর ইন্সুরেন্সের টাকাটা নিতে চান। সবাই ভাবে ব্রজগোপাল তার সারা জীবনের সঞ্চয়টা দিবেন না। এই টাকা নেয়ার জন্যই ছেলেরা ব্রজগোপালের কাছে মাঝে মাঝে যায়। ব্রজগোপাল নিজেও আসেন কলকাতায় ছেলেদের বাড়ীতে। নিতান্ত অপরিচিত মানুষের মত বাইরের ঘরে বসে দুই একটা কথা বলেই বিদায় নেন। সোমেন বিএ পাশ করে আর পড়াশোনায় উৎসাহ পায় না। বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিয়ে বেড়ায়। চাকুরীর চেষ্টা করে কিন্তু হয় না। পৃথিবীর প্রতি তার বিতৃষ্ণা বাড়তে থাকে। সে পছন্দ করতো তার এক সহপাঠীকে, তারও বিয়ে হয়ে যায়। হঠাৎ রনেনের পাগলামী দেখা দেয়। সে ছোট বাচ্চার মত বাবা বাবা করে। সোমেন মায়ের প্রতি খুব রুক্ষ আচরণ শুরু করে। তার ধারণা মায়ের কারেনই বাবাকে এই বুড়ো বয়সে দূরে গ্রামে পড়ে থাকতে হচ্ছে। বাবার ভালোবাসা সে উপলব্ধি করতে থাকে। একদিন গ্রামে এসে বাবার সাথে দেখা করে যাবার সময়: - যাচ্ছি। বলে একটু ইত:স্তত করে বলে - আমাকে কোন দরকার হলে - ব্রজগোপাল অন্ধকারে একটু অবাক গলায় বললেন - দরকার ! সে তেমন কিছু নয়। সোমের প্রত্যাশা নিয়ে দাড়িয়ে থাকে। ব্রজগোপাল মাথা নেড়ে লাজুক গলায় বললেন - তুমি ভেবো না। দরকারটা বাপ ছাড়া কেউ বোঝে না। -কী দরকার বাবা? -তোমার গায়ের গন্ধটা আমার দরকার ছিল। আর কিছু নয়। এর মধ্যে অন্যদের অনেক ঘটনাও আছে। বহেরুর জীবন। ব্রজগোপালের বড় মেয়ে লীলার বাচ্চা হয় না। তার সাথে সুভদ্র নামে এক সহকর্মীর সম্পর্ক নিয়ে তার স্বামী অজিতের সন্দেহ। অবশেষে তাদের বাচ্চা হয়। সোমেনের পরিচয় হয় তার মায়ের স্কুল জীবনের বান্ধবীর মেয়ে রাখিয়ার সাথে। তারা অনেক ধনী। সোমেন তাকে পছন্দ করে। কিন্তু সামাজিক পার্থক্যের কারণে পছন্দটা গোপন রাখে। রাখিয়া এমন কিছু বলে তাতে মনে হয় সেও হয়তো তাকে পছন্দ করে। এর মধ্যে ব্রজগোপাল তার ইন্সুরেন্সের পুরো টাকাটা স্ত্রীকে দিয়ে দেন জমি কিনে বাড়ী করার জন্য। জমি কেনা হয়। বাড়ীর কাজও শুরু করা হয়। ননীবালার সাথে রনেনের স্ত্রীর দূরত্ব পাড়তে থাকে। এক দিন ব্রজগোপাল যখন তাদের বাসায় আসলেন তখন বাসায় কেউ ছিল না। ননীবালা হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি স্বামীর সাথে গ্রামে চলে যাবেন। ব্রজগোপাল অসংসারী মানুষ। কিন্তু গ্রামে এসে ননীবালা দেখলেন এই ভবঘুরে মানুষটিকে আশ-পাশের গ্রামের লোকেরা ব্রাম্মন হিসাবে খুব শ্রদ্ধা করে, গুরু হিসাবে দেখে। তিনি গ্রামে বেশ কিছু জমি কিনেছিলেন। বহেরু তাতে নিজের খরচে পাকা বাড়ী তুলে দিল। তার ভক্তরা তাকে কেউ কাঠ, কেউ রড়, কেউ বালু দিয়ে গেলো। সব সময় ভক্তরা আসে, নানা উপহার দিয়ে যায়, পায়ের কাছে বসে তার কথা শুনতে চায়। কলকাতার বাড়ীতে নিতান্ত অপাংতেয় ব্রজগোপাল এখানে পরম শ্রদ্ধার। নতুন বাড়ীতে ওঠা নিয়ে বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করলো গ্রামের মানুষ। ব্রজগোপালের ছেলে, মেয়ে, নাতী, নাতনী সবাই আসলো সে অনুষ্ঠানে। এর মধ্যে সোমেন সুন্দরবনের কাছের একটা গ্রামে চাকুরী নিয়ে চলে গেলো। গিয়ে কাউকে তার ঠিকানা জানালো না। বাবার মত অভিমানে সে নিরুদ্দেশ হয়ে থাকলো। অবশেষে একদিন পত্রিকায় 'সোমেন তুমি ফিরে এসো' বিজ্ঞাপন দেখে সে কলকাতায় আসলো। এসে দেখে রিখিয়া তাকে চিঠি দিয়েছে। কয়েকদিন পর রিখিয়ার মা-বাবা বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন। তাদের বিয়ে হয়ে গেলো। যাও পাখির লেখার স্টাইলটা বেশী আয়েসী ধরণের। পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে যেন অনেকগুলো চরিত্র রয়েছে একটা রঙ্গমঙ্গে। একেক সময় মঞ্চের আলোটা একেকজনের উপর পড়ছে। তখন তাকে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। উপন্যাসে একজন নায়ক থাকলেও অনেকগুলো মানুষকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে তার চারপাশের প্রকৃতি, সময় ও সামজকে। কলকাতার রাস্তায় বৃষ্টি শুরু হচ্ছে, কিংবা গ্রামের মাছে শীত আসছে - তার যে বিস্তারিত বর্ণনা লেখক দিয়েছেন, তাতে মনে হয় সবকিছু চোখের সামনে দেখতে পারছি। ঘটনা এগিয়ে নেয়ার জন্য লেখক বার বার ছোট খাটো সাসপেন্স তৈরী করেছেন আবার কিছুদূর ধরে রেখে তা অনেকটা গোপনে অবমুক্ত করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের অন্য অনেক লেখকের মত লেখক সেখানকার ধর্মবিশ্বাসকে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। বই: যাও পাখি; লেখক: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়; ধরন: পশ্চিমবঙ্গেরর উপন্যাস; প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার্স (ভারত)
Was this review helpful to you?
or
আচ্ছা একটি পরিবারে মা-বাবা, দাদা বৌদি, বোন জিজু, নাতি পুতি সবাই একত্রে থাকলে কেমন লাগে?? ভালো লাগে নিশ্চয়? বিষয়টা দেখতেও দারুণ তাই না। কিন্তু সোমেনদের পরিবারে বাবা তাদের সাথে থাকে না, তবে কি সোমেন এর বাবা তার পরিবারকে ভালোবাসে না?? কিন্তু বাবার ডায়েরিতে একদিন সোমেন আবিস্কার করেছিলো বাবার লেখা " ভগবান উহারা যেন সুখে থাকে "। বলছি, আজ বলতে যাচ্ছি ওপার বাংলার আমার প্রিয় কথা সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর "যাও পাখি" বইটির গল্প। তাহলে ধৈর্য ধরে বসুন সবে।। ব্রজগোপাল লাহড়ী, কলকাতায় তার পরিবারকে ছেড়ে গ্রামে তার এক ভিতৃর কাছে থাকা শুরু করেছেন। কিন্তু কেন তার কি সংসার জীবন ভালো লাগেনা? সংসারের মায়া ত্যাগ করেনি তাইতো সে সুযোগ পেলেই ছেলে সন্তানদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। ব্রজগোপাল এর সহধর্মিনী ননীবালা থাকেন পুত্র সন্তানদের কাছে। বড় ছেলে রনেন এর আয়ে চলে তাদের সংসার, ছোট ছেলে বেকার, রনোর বৌ এর খোটা শুনতে হয় ননীবালাকে, কিন্তু ধীরে ধীরে সব সহ্য হয়ে গেছে, তবে ননীবালা কেন থাকেনা স্বামীর কাছে, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কি তবে বুড়ো বয়সে ভাঙ্গলো হয়তো বা নয়। বজ্রগোপাল আর ননীর বড় ছেলে রনো, বড় ছেলে হওয়ার দায় একটাই যে অল্পতেই নিতে হবে সংসার এর ভার। সংসার এর ভার মানে অর্থ আয়ে শেষ নয় আরো অনেক কিছু, রনো এই ভারে ক্লান্ত হয়ে পড়ল তবে!? রনোর বউ বীনা, শাশুড়ি এর সাথে ঝগড়া আর সন্তান নিয়ে সংসার সামলানোই তার কাজ, কিন্তু সংসার এর সাথে তার যে একটা স্বামী আছে সে কতটুকু দেখেছে? সোমেন, এই গল্পে নায়ক চরিত্রে যদি আমরা সোমেন কে ধরি তবে কেমন হয়? ব্রজগোপাল এর দ্বিতীয় পুত্র সোমেন। গ্রাজুয়েশন শেষ করে বেকার, চাকরির জন্য ঘুরছে, কিন্তু চাকরী যে সোনার হরিন, মা পাঠালো পুরোনো বান্ধবির কাছে, কিন্তু সেখানে গিয়ে সোমেনের হলো আরেক দায়। সোমেন বিশ্বাস করে প্রেমের মূলেও আছে ভিটামিন, তাইতো তার মেয়ে ছেলে বন্ধুর অভাব নেই, কিন্তু তাতে কি সোমেন এর জন্য কে থাকবে দিন শেষ?? তার বন্ধু মহলের অপলা, পূর্বা, রাখিয়া, মধুমিতা কে কে থাকবে তবে?? শীলা ব্রজগোপাল এর মেয়ে। স্বামী অজিত এর সাথে দারুণ সংসার। স্বামী চাকুরীজীবী আর ছোট খাটো ম্যাজেশিয়ান অন্যদিকে শীলা স্কুল মাস্টার। খারাপ চলেনা তাদের সংসার। শেয়ারবাজার এর সূচক উঠানামার মতো তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক। বহেরু, একসময়ে বজ্রগোপাল এর কর্মচারী থাকলেও আঙ্গুলফুলে কলা গাছ হয়ে গ্রামে এখন সর্বেসর্বা, তবে বজ্রগোপালকে যথেষ্ট সম্মান করে। বহেরুর এক আলাদা বিতিক, সে মানুষ সংগ্রহ করে, হরেক রকমের মানুষ এনে নিজের ডোরায় কাজ কর্মের ব্যাবস্থা করে দেয়। যেন সে খুলে বসেছেন মানুষের চিড়িয়াখানা। প্রায় হাফ ডজন মুল চরিত্রের ভীরে আরো আছে হাফ ডজন অপ্রধান চরিত্র। গল্পটা শুরুই হয় বহেরুর নয়ানভিরাম গ্রাম এর মধ্য দিয়ে, যেখানে বজ্রগোপাল থাকেন। এই গল্পটা একটি পরিবার এর, পরিবার এর হাসি কান্না আনন্দ বেদনায় পাশে থাকা না থাকার গল্প। টুকরোটুকরো করা চরিত্র গুলোর মাধ্যমে দেখলাম যে প্রতিটা চরিত্রের ভিতর দিয়ে লেখক এগিয়ে নিয়েছেন গল্পকে। অর্থাৎ চরিত্র গল্পের গতিশীলতা দিয়েছেন। এটা শীর্ষেন্দুর স্টাইল। প্রতিটা চরিত্র তিনি এমন ভাবে তুলে এনেছেন যেন পাঠককে ভাবাবে যে এতো সুন্দর কিভাবে লিখা যায়। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর প্রতিটা গল্পই এই রকম চরিত্র নির্ভর, সাধারন মানুষের জীবনের গল্প গুলো বলে আমার দৃষ্টিতে তিনি হয়ে উঠেছেন প্রিয় থেকে প্রিয়তম লেখক। বুড়ো এই মানুষটির লেখা আমাকে কেন যেন এতো টানে? আমি তার লেখা নিছক কম পড়িনি। পার্থিব, মানবজমিন, চক্র,দূরবীন এর মতো বিশাল প্লট এ সামাজিক উপন্যাস কিংবা গুন্ডাদের গুন্ডা ইনেস্পেক্টর শবরদাশ গুপ্তের কোন রহস্যগল্প কোনটায় কম নয়। তারপর এবার যুক্ত হলো "যাও পাখি "। অন্যান্য বই এর মতো "যাও পাখি" কেও মাস্টারপিসই বলতে হয়। ৪২২ পেজের এই উপন্যাস টি আমার প্রিয় বইয়ের তালিকায় জায়গা করে নিলো। অতপর বলতেই হয় জোস একটি বই। অন্য দিকে খারাপ লাগার বিষয়টি হলো এন্ডিং ভালো লাগেনি। পুরো বই এতো আগ্রহ নিয়ে পরে যদি এন্ডিংটা ভালো না লাগে তাহলে কেমন লাগে বলুন তো। কিন্তু তবুও বইটি ছিলো দারুণ। এতো সুন্দর করে লেখক গুছিয়ে এনেছেন, সত্যি কিভাবে লিখেন তিনি? যাই হোক নানান কর্মব্যস্ততা লকডাউন ইত্যাদির মাঝে পড়া একদম স্লো হয়ে গিয়াছি, তাই বেশ কয়েকদিন লেগে গিয়াছে বইটি শেষ করতে। তাই দেরিতে হলেও শেষের তৃপ্তিটা নেয়াই ছিলো বড় লক্ষ্য। আমার সংগ্রহের যাও পাখি বইটির প্রচ্ছদ ছেঁড়া এবং অধিকাংশ সময়ই হার্ডকপি রেখে পিডিএফ পড়ার কারনে এডিট করা আলোকচিত্রই আপলোড দিলাম। কেননা বই এর সামঞ্জস্য একটি আলোকচিত্র হয়ত পাঠক বাড়াতে সাহায্য করবে। সর্বাপরি ভালো থাকবেন।। ফিরে দেখা বইয়ের নাম : যাও পাখি লেখক : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। জনরা : সামাজিক উপন্যাস। প্রকাশনী : আনন্দ পাবলিকেশন্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা। পৃষ্টা সংখ্যা : ৪২২ পেজ মূল্য : ৫০০ ভারতীয় রুপী। ধন্যবাদান্তে মিদুল চকবাজার ইসলামবাগ ঢাকা। বেলা ১০:০০। ১৬-০৬-২০২০।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃযাও পাখি লেখকঃশীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রকাশনীঃআনন্দ পাবলিশার্স মূল্যঃ ৬৩০টাকা যাও পাখি উপন্যাসটি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অন্যতম সেরা একটি উপন্যাস বলে মনে হয়েছে। উপন্যাসটি শেষ করে আমি অনেক্ষণ নির্বাক হয়েছিলাম।কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।পুরোপুরি ঘোরেরমধ্যে চলে গিয়েছিলাম।আমার পড়া এই লেখকের চতুর্থ উপন্যাস এটা।এটি আমার পড়া অদ্ভুত,অসাধারণ সুন্দর একটা উপন্যাস।সত্যিই অদ্ভুত।এরকম উপন্যাস আমি খুব কমই পড়েছি।খুব কমবলতে গেলে কি,আগে এরকম পড়েছি কিনামনে নেই।হয়তোবা লেখকের লেখার ধরনটাই এরকম।গল্পের গতিময়তা ছিল খুবই আকর্ষণীয়। একই সাথে শহুরে এবং গ্রামীণ জীবনের বর্ণনা আমাকে খুবই মুগ্ধ করেছে। সবচেয়ে দ্বিধায় ছিলাম একটা বিষয় নিয়ে। প্রথমে মনে হতো লেখক প্রতিটা চরিত্রকে আলাদা আলাদাভাবে প্রধান চরিত্র হিসেবে তৈরী করেছেন।সোমেন যে উপন্যাসের নায়ক সেটাতেসন্দেহ ছিল না।কিন্তু সোমেনের জোড়া কে হবে সেটা নিয়েযথেষ্ট চিন্তায় ছিলাম।(এইসব ক্ষেত্রে আমার চিন্তা একটু বেশীই বলা যায়)। নিজেকে সোমেনের জায়গায় দাঁড় করিয়ে উপন্যাসটি পড়েছি।সেই হিসেবে প্রথমথেকেই রিখিয়াকে আমি ভালবেসে ফেলেছিলাম।অণিমার প্রতিও আমার কম আকর্ষণ ছিল না।এটা নিয়েও আমি বেশ দ্বিধায় ভুগছিলাম।তবে আমার কাছে যেটা মনে হয়, সোমেনেরবাবা ব্রজগোপালই হলেন উপন্যাসের প্রধান ওমূল চরিত্র।ম্যাক্স নামক একজন সাহেবের চরিত্রটাও আমাকে নাড়া দিয়েছে খুব।অজিত আর লক্ষণের বন্ধুত্বের মধ্যেও আমি আমাকে খুঁজে পেয়েছি। লেখক প্রথমদিকে সোমেনের প্রতি একটু অবহেলা,নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছিলেন।কিন্তু গল্পের শেষে বলা যায়, সোমেনই সবচেয়ে সফল একজন মানুষ বলে মনে হয়েছে।আমার জ্ঞান এবং বোঝার ক্ষমতা খুবই কম তবুও উপন্যাসটা পড়ে যতটুকু বুঝেছি, জীবনে সুখী হতে বেশীকিছুর দরকার নেই।খালি নিজের জায়গা থেকে ভাবতে হবে আমি সুখী,আমি আনন্দে আছি।জীবনটা সত্যিই সুন্দর,সহজ।আমার জীবনে পড়া শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।
Was this review helpful to you?
or
খুবই ভাল একটা বই
Was this review helpful to you?
or
সোমেন তার বাবার খোঁজে আসে কলকাতা থেকে। সোমেন এর বাবা ব্রজগোপাল। কিছু লোক থাকে এমন, যারা হয় ঘর জ্বালানী কিন্তু পর ভূলানি। নাম শুনলেই, লোকেরা কপালে প্রনাম টেকে বলে, "সাক্ষাত দেবতা!" কিন্তু ঘরের লোক জানে তিনি কেমন জ্বালাময়ী। ঘরের মানুষ যেমন -মা ননীবালা, রমেন, সুমেন , মেয়েরা জানে ব্রজগোপালের মতো ওরকম খেয়ালী, নিষ্ঠুর সার্থপর মানুষ আর নেই। ব্রজগোপাল পরোপকারী মানুষ। বিনা স্বার্থে মানুষ কে সহায়তা করাই তার ধর্ম। দেশ ভাগের পর তিনি কোন দখল নিতে পারেন নি বলে, থাকার বা ঘর বাধার জায়গা টুকুও থাকলো না। ছেলে মেয়ে নিয়ে উঠলেন ভাড়া বাড়িতে। পরিবার বা সংসারের প্রতি কোন দায়িত্ববোধ না থাকায় স্ত্রী ননিবালার সাথে কিটমিট লেগেই থাকতো। বাইরে যে মানুষ টা বেশ বিনয়ী, বাড়ির ভেতরে সে একেবারে অন্য পুরুষ। পুরো সংসারের ঘানি টানতে হতো স্ত্রী ননীবালাকেই। হঠাৎ এক সময় ব্রজগোপাল বাস্তুত্যাগী হলেন। দেশ ভাগের পর ননীবালার গয়না দিয়ে গোবিন্দপুর কিছু জমি আর থাকার জন্য ভিটা করেছিলেন তাও ননীবালার নামে। কেরানীর চাকরি জুটেছিলো একটা। এক সময় ভাবতেন রিটায়ার্ডের পর এখানে বাড়ি তুলবেন। কিন্তু তত দিনে এরা কলকাতার টানে পরে গেছে। আর ব্রজগোপাল সংসার ত্যাগী হয়ে এই গোবিন্দপুর এসে ঠায় নেয়। বহেরু একসময় তাদের চাকর ছিলো, তবে এখন সে জোতদার। জোরের উপর চলে। তারই আশ্রয় বা কর্মচারি বলা যায় ব্রজগোপালকে। চাকরির টাকায় একটা ইন্সুরেন্স করেছিলেন। এখন সেটা পাকাপোক্ত হয়েছে। বড় ছেলে রমেন ফুড ইন্সপেকটরের চাকরি করে। আয় যথেষ্ট, সাথে উপরি পাওনাও আছে। সেই সংসার চালায়। একসঙ্গে থাকতে পড়তে রমেনের স্ত্রীর সাথে ননীবালার খুটখাট লেগেই থাকে। কিন্তু তিনি ছেলেদের অনেক ভালবাসেন। আর ততটাই ঘৃনা করেন স্বামী ব্রজগোপালকে। সোমেনের দুই বোন কে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই । বড় মেয়ের জামাই একটা জমির খোজ এনেছেন, আর তা কেনার জন্যই ব্রজগোপাল এর টাকাটা চায় ননীবালা। তার কথায় জীবনে তো কিছু করেনি তাদের জন্য, কত কাল আর ভাড়া বাড়িতে থাকবে । ব্রজগোপাল যদি টাকাটা ওদের দেয় তবে, তারা জমি কিনে নিজেদের বাড়ি করবে। গতো একমাসে ব্রজগোপালের কোন খোজ নেই, বাড়ি ছাড়া হলেও তিনি মাঝে মাঝেই কলকাতায় খোজ খবর করতেন। ছেলেমেয়েদের মধ্যে রমেনের টান একটু বেশিই তার বাবার প্রতি, সেও বাবাকে দেখতে আসতো মাঝে মাঝে। গত মাসে দুইটা চিঠি দেওয়ার পরও, যখন কোন খোজ পাওয়া গেল না। তখন সোমেন কে এই গ্রামে গোবিন্দ পুরে, আসতে হয় তার বাবার খোজে। সাথে মায়ের দেওয়া বাবাকে একটা চিঠি। সোমেন বিএ পাশ করা যুবক। পড়াশোনায় তার আর কোন উৎসাহ নেই। চাকরির চেষ্টা চলছে, কিন্তু উপায় হচ্ছে না।তার ধারণা মায়ের কারেনই বাবাকে এই বুড়ো বয়সে দূরে গ্রামে পড়ে থাকতে হচ্ছে। গ্রামে এসে সে বাবার ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে থাকে।এর মধ্যে এবং পরেও অন্যদের আরও অনেক অনেক ঘটনাও আছে। বহেরুর কাহিনী, ব্রজগোপালের মেয়েদের কাহিনী, রিখিয়ার কাহীনি, আরও কতো জনের! যাও পাখি উপন্যাস টা শীর্ষেন্দুর অন্যতম উপন্যাস। নাম টা তেই কেমন উড়ো উড়ো টাইপ গন্ধ। কেউ কাউকে আটকে রাখার জন্য না। তোমার ইচ্ছা মতো ছুটো কোন বাধা নেই। আর এখানেই বাঁধতে চেয়েছিলেন ননীবালা ব্রজগোপালকে। আর তা নিয়েই দন্ধ। ব্রজগোপাল চান বিশ্বসংসার। আর ননীবালা চেয়েছেন তার ক্ষুদ্র সংসার। চার ছেলেমেয়ে নিয়ে ভালো ভাবে বেঁচে থাকা। শীর্ষেন্দু সম্পর্কে নতুন করে বলার মতো কিছু নেই। পার্থিব, দূরবীন, মানব জীবনের মতোই যাও পাখি তার অন্যতম সৃষ্টি। যা পড়ে ফেলার পরও পাঠকের মন কে আবিষ্ট করে রাখে। ভাবতে এবং ভাবাতে বাধ্য করে । লেখক অনেক গুলো চরিত্রের সংমিশ্রনে তৈরি করেছেন এই উপন্যাসের আকার। আর তাই সময়ের প্রয়োজনে ফুটে উঠেছে, একেক টা চরিত্র। তাছাড়া ধর্মবিশ্বাস, শান্তি, পরোপকার সব গুলোর যে একটা নৈতিক দিক আছে, তাও তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন বেশ ভালো ভাবেই।উপন্যাসে প্রথম বাক্য টা ছিলো , "প্রেমের মূলেও আছে ভিটামিন।""তুমি ঠিক ঠিক জেনো যে; তুমি তোমার, তোমার নিজ পরিবারের, দশের এবং দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য দায়ী। "মূলত এটা ছিলো মানব প্রেম।
Was this review helpful to you?
or
আচ্ছা,এই কলিযুগে কোন ব্যক্তি কি মিথ্যা,কপটতা ছাড়া শুধু সততা দিয়ে মানুষকে আপন করতে পারে?সমাজের নেতা হতে পারে?কিংবা সমাজকে শাসন করতে পারে? এই দূষিত সমাজে এমনই এক সততার প্রতিমূর্তি ছিলেন ব্রজগোপাল।এর ফলও খুব একটা সুখকর ছিল না।স্ত্রী,সন্তান থেকে দূরে ‘বহেরু গা’ নামক কোন এক অদ্ভূত অজপাড়াগায়ে তাকে একাকী থাকতে হয়।নিজের সন্তানদের কাছেও তিনি যেন কোন এক আগন্তুক!বড় ছেলে রনেন যা পিতৃসোহাগ কিছুটা পেয়েছে,কিন্তু ছোট ছেলে সোমেন বাবাকে যেন মনেই করতে পারে না।যেবার মা সোমেনের হাতে চিঠি দিয়ে ব্রজগোপালের কাছে পাঠায়,সেবারই সোমেন প্রথম বাবাকে পরিপূর্নভাবে দেখতে পারে।দেখে কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে যায়।আর ব্রজগোপাল এক বুক তৃষ্ণা নিয়ে ছোট ছেলের মুখে তাকিয়ে কি যেন ভাবে।কক্ষনো বা নিজের দায়িত্বহীনতার জন্য গ্লানিবোধ করে।অস্বস্তিকর নিরবতার মধ্যেও টেবিলে পড়ে থাকা খাতায় বাবার লেখা লাইনটি বারবার সোমেনের মানসচক্ষে ভেসে ওঠে “ভগবান,ইহারা যেন সুখে থাকে!” হ্যা,সেই সুখের সন্ধানেই কলকাতার ঘিঞ্জি গলিতে স্ত্রী,পুত্ররা অশান্তির সংসার পাতে।সুখের জন্য টাকার দরকার,টাকার জন্য চাই শহরে থাকা;হোক না ঘিঞ্জি,শহর তো!চাকরি আছে,টাকা আছে।সুতরাং সুখও আসবে।সুখের জন্য নিজের একটা জায়গা লাগে;তার জন্য টালিগঞ্জে মেয়ে শীলার বাসার পাশে একটা জায়গা নেয়ার কথা হচ্ছে।কিন্তু বউ শ্বাশুড়ির চিরন্তন দ্বন্দ্বে শান্তি পক্রিয়া হুমকির মুখে পড়ে। তাই হয়তো সংসারের বাইরে আরেকটি জগতে শান্তি খুজে বেড়ায় সোমেন।কক্ষনো অনিমার স্পর্শ,কক্ষনো মৃত্যুপথযাত্রী মধুমিতার উদ্দামতা কক্ষনো বা একটি অন্ধ কুকুরের হাতছানি বারবার তাকে মোহে জড়ায়।পূর্বা,শ্যামল,ম্যাক্স,অপালা অনিল রায়দের মাঝে যেন অন্য এক পৃথিবী খুজে পায় সে।পশ্চিমা দেশ থেকে আসা মাদকাসক্ত ম্যাক্সের স্বপ্নালু নীল চোখের দৃষ্টি যেন তাকে কোন এক আলোর সন্ধান দিতে চায়।এর আগে সে নিজেও কখনো এত কাছ থেকে ভারতবর্ষকে পর্যবেক্ষন করেনি,কাউকে করতেও দেখেনি।জানার অদম্য ক্ষুধা তাকে পশ্চিমের আনন্দের জীবন ত্যাগ করে এই গরীব দেশের সরল বঞ্চিত জীবন গ্রহনে অনুপ্রানিত করেছে।মাদার তেরেসার ফান্ডে অর্থ যোগানের জন্য সে অনায়াসে ভিক্ষাও করতে পারে।তার মাঝে নিজের বাবার ছায়াও কিছুটা চোখে পড়ে কি? মা ও স্ত্রীর টানাপোড়েনে সংসার হতে মুক্তির পথ খুজে রনেন।অনেকদিন পর বাবার কোলে মাথা রেখে শিশুর মত অস্ফুটে বলে ওঠে,বাবা সংসারে সুখ নেই!যে সুখের খোজে বাবার অজপাড়াগা ছেড়ে এই শহরে থাকা সেই গ্রামে গিয়ে কি আকুলতায় যেন সুখ খুজে ফেরে!দিন শেষে মানুষ বুঝতে পারে অর্থ-প্রাচুর্যের সুখ এক মস্ত অশান্তি।নাহলে এত প্রাচুর্যে থেকেও কেন শীলা-অজিতের এই নিস্তরঙ্গ সংসারজীবন এত অসহ্য ঠেকে?সব পেয়েও কেন মানুষের চিত্ত এত উতলা হয়?এত প্রাপ্তির পরও কেন লক্ষনকে আবার দেশে ফিরে আসতে হয়?কিংবা কেনই বা এত ক্ষমতাধর হয়েও বহেরু অসহায়বোধ করে? তাইতো ব্রজগোপালের অজপাড়াগায়ের ক্ষুদ্র কুটিরে বারে বারে একটি শিশুর কন্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়ঃ- “মানুষ আপন,টাকা পর; যত পারিস মানুষ ধর। ধর্মে সবাই বাচে বাড়ে, সম্প্রদায়টা ধর্ম নয় রে।” সেই কুটিরেই একদিন সুখের আসর বসে।ননীবালা,রনেনের সংসার,শীলা-অজিত,সোমেন সকলে এই বহেরু গায়ে তাদের আপন ঠিকানা খুজে পায়।এই গ্রামে নেই কোন অর্থের প্রাচুর্য,তবে কোন অভাবও নেই!আমাদের যা নেই তা অভাব নয় বরং আমরা যা চাই তাই অভাব। অবশেষে সোমেনও কি সেই সুখের সন্ধান পেল?নাহলে রিখিয়ার বন্ধনে জড়িয়েও কিসের টানে সুন্দরবনের নিভৃত পল্লীতে ফিরে যায়?তার মাঝে বাবার প্রতিচ্ছবি দেখে আতংকিত হয় ননীবালা।কলিযুগেও ব্রজগোপালের মত কিছু লোক তো থাকবেই যারা মানুষের সুখের সন্ধান দিয়ে বেড়াবে।এক ব্রজগোপাল গেলে তিনিই আবার সন্তানের প্রতিচ্ছবি হয়ে ফিরে আসবেন।এভাবে ব্রজগোপালরা প্রজম্ম থেকে প্রজম্মে,জম্ম থেকে জম্মান্তরে মানুষের আলোকবর্তিকা হয়ে থাকেন।আর তাদের যোগ্য সহধর্মিনীগন নিঃস্বার্থ হয়ে বিশ্বসংসারের মঙ্গল কামনা করেন-‘ঠাকুর,বিশ্বসংসারের সবাই যেন সুখে থাকে!’
Was this review helpful to you?
or
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বড় উপন্যাসের বইগুলোতে সাধারনত তিন প্রজন্মের পটভূমি নিয়ে লিখেন। এক প্রজন্ম থেকে শুরু করে অন্য প্রজন্মে এনে শেষ করেন। কলকাতার পরিবেশ থেকে গ্রামের পরিবেশে সমাপ্তি। সময়ের ব্যবধানে জীবনের প্রকাশ। উপন্যাসের চরিত্রগুলোর কিছু নাম উল্লেখ করতে ইচ্ছে করছে- সৌমেন, অনিমা , রাইমা, ব্রজগোপাল, বহেরু, অজিত,নয়নতারা, শৈলীমাসি, রিখিয়া, ম্যাক্স, পুর্বা, অপলা, অনিল রায়, ননীবালা, রণেন, বীণা, বুবাই, টুবাই, লক্ষ্মণ, শীলা,কোকা ইত্যাদি। খুনে ডাকাত বহেরু একখানা গাঁ তৈরি করেছিল। নিজেই তার নাম রেখেছিল বহেরু গাঁ। সেখানে মানুষের চিড়িয়াখানা তৈরি করেছে সে। যত কিম্ভূত মানুষ ধরে এনে আশ্রয় দিত সেই বহেরু গাঁয়ে। সংসারে বনিবনার অভাবে একদা এই গাঁয়ে চলে এলেন বজ্রগোপাল । এ সংসারে কিছু চাওয়ার নেই তাঁর। ডায়েরির সাদা পাতায় তবু তিনি লিখে রেখেছিলেন -ভগবান, উহারা যেন সুখে থাকে। নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া মানবিক মূল্যবোধ ও দিশাহীনতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ব্রজগোপাল কি এক অসংশয়িত উত্তরণের স্বপ্ন দেখেছিলেন? সংসার-উদাসী বাবার খোঁজে বহেরুতে এসেছিল সোমেন। বাবর রোজনামচায় লেখা ওই পঙ্ক্তি রহস্য বুকে নিয়ে সে কলকাতায় ফিরে গেল। বহেরু গাঁ থেকে ফিরে তাকে যেতে হইল, কেননা প্রত্যেক মানুষেরই একটা ফেরার জায়গা চাই। যদিও সেই কলাকাতায়, সেখানে অন্যরকম জীবন, হাজার রকম মানুষ। সোমেনকে ঘিরে এক সৃষ্টিছাড়া সমাজ। তারপর? রিখিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কোথায় পৌঁছেছে? গ্রাম ও কলকাতা- এই দুই বৃত্তের টানাপোড়েন এবং সংলগ্নতায় সৃষ্ট এই কাহিনী নিষ্ঠুর সময়ের অভিঘাতে পীড়িত ব্যক্তিসত্তার সম্পূর্ণ অ্যালবাম। এর বর্ণাঢ্য বিস্তারে, ঘাত-প্রতিঘাতে,বিরহ-মিলনে অসংখ্য ছবির মধ্যে জগৎ ও জীবন উৎকীর্ণ হয়ে আছে। এক মহৎ উপন্যাসের নাম ‘যাও পাখি’। লেখক আদর্শের চাঁদর বিছিয়ে দিয়েছেন পুরো উপন্যাস জুড়ে। চরিত্রের শরীর থেকে অবিরত আদর্শের সুবাস ছড়াচ্ছে। পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে আবার পড়ার শক্তি খুঁজে পেয়েছি বারবার। উপন্যাসে ব্রজগেপালের তত্ত্বকথা শুনতে ভালো লাগে গ্রাম্য বহেরুর। আমিও কি কম যাই। মাথায় সবসময় ঘুরপাক খাচ্ছে বজ্রগোপালের হাজারো উক্তি- 'আমি বাপের চোখে জগৎ দেখি না, একটা আদর্শের চোখ দিয়ে দেখি। আমাকে দেখতে হবে যেন তোমাকে (ছেলে সোমেন) দিয়ে পারিপার্শ্বিকের কল্যান আসে।' 'বাবা(বড় ছেলে) পৃথিবী জোড়া ভিড় দেখেছ; কিন্তু লক্ষ্য করে দেখ, মানুষ কত কমে গেছে। কাজের মানুষ, চরিত্রবান মানুষ, ব্রাহ্মী মানুষ আর চোখে পড়ে না।' 'স্নেহ নিম্নগামী।' আদর্শ- সত্তার প্রতিফলন। কোন বাহ্যিক প্রলোভন নয়। এই সহজ সংজ্ঞাটাই আজ বহু বছর পর বইটা পড়ে শিখেছি। মানুষ যে আদর্শের দৃঢ় ভীত গড়ে খুব দাপটের সাথে নিজের জীবন অতিবাহিত করতে পারে তার সুন্দর উদাহরণ এই বই। সেই সাথে শহর আর গ্রামের মানুষের জীবনে প্রাত্যহিক পরিবর্তনগুলোও খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। যৌবনের নির্দিষ্ট কিছু সময়, বার্ধ্যকের অফুরন্ত সময়, সাংসারিক আবহ, জীবনের ঢেউ তাল-লয় সমুদ্র, জীবনের মানে, জীবনের সংস্করণ, ব্যক্তিগত টানাপোড়েন এরকম হাজারো শব্দের বলয় তুলে ধরেছেন এই বইটিতে। যাও পাখির লেখার স্টাইলটা বেশী আয়েসী ধরণের। পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে যেন অনেকগুলো চরিত্র রয়েছে একটা রঙ্গমঙ্গে। একেক সময় মঞ্চের আলোটা একেকজনের উপর পড়ছে। তখন তাকে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। উপন্যাসে একজন নায়ক থাকলেও অনেকগুলো মানুষকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে তার চারপাশের প্রকৃতি, সময় ও সামজকে। কলকাতার রাস্তায় বৃষ্টি শুরু হচ্ছে, কিংবা গ্রামের মাছে শীত আসছে - তার যে বিস্তারিত বর্ণনা লেখক দিয়েছেন, তাতে মনে হয় সবকিছু চোখের সামনে দেখতে পারছি। ঘটনা এগিয়ে নেয়ার জন্য লেখক বার বার ছোট খাটো সাসপেন্স তৈরী করেছেন আবার কিছুদূর ধরে রেখে তা অনেকটা গোপনে অবমুক্ত করেছেন।
Was this review helpful to you?
or
উপন্যাসটা শেষ করে অনেহ্মণ নির্বাক হয়েছিলাম। কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।পুরোপুরি ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম।আমার পড়া এই লেখকের প্রথম উপন্যাস এটাই। এটি আমার পড়া অদ্ভুত,অসাধারণ সুন্দর একটা উপন্যাস।সত্যিই অদ্ভুত। এরকম উপন্যাস আমি খুব কমই পড়েছি।খুব কম বলতে গেলে কি,আগে এরকম পড়েছি কিনা মনে নেই।হয়তোবা লেখকের লেখার ধরনটাই এরকম। গল্পের গতিময়তা ছিল খুবই আকর্ষণীয়। একই সাথে শহুরে এবং গ্রামীণ জীবনের বর্ণনা আমাকে খুবই মুগ্ধ করেছে। সবচেয়ে দ্বিধায় ছিলাম একটা বিষয় নিয়ে। প্রথমে মনে হতো লেখক প্রতিটা চরিত্রকে আলাদা আলাদাভাবে প্রধান চরিত্র হিসেবে তৈরী করেছেন। সোমেন যে উপন্যাসের নায়ক সেটাতে সন্দেহ ছিল না। কিন্তু সোমেনের জোড়া কে হবে সেটা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় ছিলাম।(এইসব ক্ষেত্রে আমার চিন্তা একটু বেশীই বলা যায়)। নিজেকে সোমেনের জায়গায় দাঁড় করিয়ে উপন্যাসটি পড়েছি। সেই হিসেবে প্রথমথেকেই রিখিয়াকে আমি ভালবেসে ফেলেছিলাম।অণিমার প্রতিও আমার কম আকর্ষণ ছিল না।এটা নিয়েও আমি বেশ দ্বিধায় ভুগছিলাম। তবে আমার কাছে যেটা মনে হয়, সোমেনের বাবা ব্রজগোপালই হলেন উপন্যাসের প্রধান মূল চরিত্র। ম্যাক্স নামক একজন সাহেবের চরিত্রটাও আমাকে নাড়া দিয়েছে খুব। অজিত আর লক্ষণের বন্ধুত্বের মধ্যেও আমি আমাকে খুঁজে পেয়েছি। লেখক প্রথমদিকে সোমেনের প্রতি একটু অবহেলা,নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছিলেন।কিন্তু গল্পের শেষে বলা যায়, সোমেনই সবচেয়ে সফল একজন মানুষ। আমার জ্ঞান এবং বোঝার ক্ষমতা খুবই কম। উপন্যাসটা পড়ে যতটুকু বুঝেছি, জীবনে সুখী হতে বেশীকিছুর দরকার নেই।খালি নিজের জায়গা থেকে ভাবতে হবে আমি সুখী,আমি আনন্দে আছি।জীবনটা সত্যিই সুন্দর,সহজ।
Was this review helpful to you?
or
'যাও পাখি' - আহা, নামের মধ্যেই কি অসামান্য ব্যঞ্জনা। আবার একটা করুণ হাস্যরসও কি লুকিয়ে নেই? বনের পাখি তার আপন খুশিতে ঘুরে বেড়াবে, উড়ে বেড়াবে আকাশে। তার তো কোন পিছুটান নেই, কোন পরাধীনতার নিগড়ে তার বন্দিত্ব লাভের কথা নয়। কোন মানুষের তো তার ওপর প্রভুত্ব জারির কথা নয়। তবে কেন তাকে এই যেতে বলার কথা? মানুষের কি আসলেই নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা মুক্ত পাখির ওপর? না, মোটেই না। কিন্তু তবু সে পাখিকে খাঁচায় পুরে রেখে বশ মানাতে চায়। এ মানুষের নিতান্তই মতিভ্রম। কারো হয়ত এ মতিভ্রম আজন্ম রয়ে যায়, কখনোই ছাড়ে না। আবার কারো বা একসময় শুভ বুদ্ধির উদয় হয়। খাঁচা খুলে উড়িয়ে দেয় পাখিকে। বলে, "যাও পাখি।" এভাবে শুধু পাখিকেই তারা মুক্ত করে না। মুক্ত করে নিজেকেও, মনের কোণে লুকিয়ে থাকা কোন এক পশুর হাত থেকে। শীর্ষেন্দুর রাজসিক রচনা 'যাও পাখি'তে মানুষের সেই মানসিক মুক্তির আখ্যানই অতি চমৎকারভাবে, অনায়াসে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। 'যাও পাখি' এক নাগরিক জীবনের গল্প। সেই ভীষণরকম যান্ত্রিক, একপেশে, আত্মকেন্দ্রিক নাগরিক জীবন - যা আজন্ম তাড়া করে বেড়ায় মানুষকে, আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে রেখে নিয়ে চলে অমোঘ নিয়তির পানে। খুব কম মানুষই পারে এই শিকল ভাঙতে, বেরিয়ে আসতে নগরসভ্যতার কারাবাস থেকে। যারা পারে না তারাও কিন্তু ছটফট করতে থাকে। তাদের শিকলভাঙার ছলে ছলছল করে প্রবাহমান নদীর মত এগিয়ে চলে জীবন। আবার তাদের ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে ওঠে বাতাস। জীবন নামের অসীম নদীটা হঠাৎ করেই সীমাবদ্ধ জলাশয়ে রূপ নেয়, আর তাতে জমে স্যাতস্যাতে কচুরিপানা। এভাবেই নাগরিক জীবন ক্রমান্বয়ে দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। তবু জীবন তো এবারও থেমে রয় না। ঘড়ির কাটা এগিয়ে চলে। দুঃখ যন্ত্রনা আর তার ওপর সাময়িক সুখের প্রলেপ লাগিয়ে মানুষ একটু একটু করে এগিয়ে চলে সেই অমোঘ নিয়তির পানেই। কিন্তু কেমন হয় যদি এই শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনে একটু বদলের ছোঁয়া লাগে? স্বেচ্ছাচারী মানুষও যদি খাঁচার পরাধীন পাখিটার জন্য বেদনা অনুভব করে? পাখিটাকে উড়িয়ে দিয়ে স্বপ্ন দেখে তার মুক্ত ডানায় ভর করে নিজেও কোন এক সুখের দেশে পাড়ি দেওয়ার? হয়ত এ কেবলই বিলাসী সুখস্বপ্ন মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তববাদী লেখক শীর্ষেন্দু পাঠককে নিয়ে বাস্তবতার আনাচে কানাচেই ঘুরে বেরিয়েছেন। নিজেই পাখিকে খাঁচাবদ্ধ করে, বিশাল এক ক্যানভাসে খুঁজে বেরিয়েছেন তাকে ফের মুক্ত করার সম্ভাব্যতা। শেষ পর্যন্ত কি তিনি পেয়েছেন কোন পথ? পেরেছেন কি পাখিকে দুহাতে মেলে ধরে বলতে, "যাও পাখি?" এ উত্তর বড় কঠিন, বড় গোলমেলে। তবু পাঠক হয়তবা উত্তর খুঁজে পাবে 'যাও পাখি' উপন্যাসে। পাক বা না পাক, পাঠশেষে স্বীকার করবেই, এটি শীর্ষেন্দুর অন্যতম শ্রেষ্ঠতম রচনা।
Was this review helpful to you?
or
কুঞ্জকুঠিরে, অবেলা সৌর্য্য বিধিত যৌবনে জাগিল রৌদ্র । কেউ কঠিন কোন কথা বললে সব সময়ই মনে হয় আমার মাঝে সরলের বোবা স্রোত বইছে। অকারণ দ্বন্দ্ব, এসব কথার সাথে উপন্যাসের কোন সাদৃশ্য নেই। তবুও যে জীবন তোমার আমার সবার তরে, সে জীবনে কিছু লঘুভাব আসবেই। এখন উপন্যাসের চরিত্র গুলোতে হানা দেই। চরিত্রের দায়ভার লেখকের উপর থাকতেই পারে। তারপরেও পারিপার্শ্বিকতার নিবিড় আলিঙ্গন দূরে ঠেলে রাখা কি সম্ভব? সেই সম্ভাবনার উদারতা নিয়েই বলছি, লেখক আদর্শের চাঁদর বিছিয়ে দিয়েছেন পুরো উপন্যাস জুড়ে। চরিত্রের শরীর থেকে অবিরত আদর্শের সুবাস ছড়াচ্ছে। পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে আবার পড়ার শক্তি খুঁজে পেয়েছি বারবার। উপন্যাসে ব্রজগেপালের তত্ত্বকথা শুনতে ভালো লাগে গ্রাম্য বহেরুর। আমিও কি কম যাই। মাথায় সবসময় ঘুরপাক খাচ্ছে বজ্রগোপালের হাজারো উক্তি- 'আমি বাপের চোখে জগৎ দেখি না, একটা আদর্শের চোখ দিয়ে দেখি। আমাকে দেখতে হবে যেন তোমাকে (ছেলে সোমেন) দিয়ে পারিপার্শ্বিকের কল্যান আসে।' 'বাবা(বড় ছেলে) পৃথিবী জোড়া ভিড় দেখেছ; কিন্তু লক্ষ্য করে দেখ, মানুষ কত কমে গেছে। কাজের মানুষ, চরিত্রবান মানুষ, ব্রাহ্মী মানুষ আর চোখে পড়ে না।' 'স্নেহ নিম্নগামী।' আদর্শ- সত্তার প্রতিফলন। কোন বাহ্যিক প্রলোভন নয়। এই সহজ সংজ্ঞাটাই আজ বহু বছর পর বইটা পড়ে শিখেছি। মানুষ যে আদর্শের দৃঢ় ভীত গড়ে খুব দাপটের সাথে নিজের জীবন অতিবাহিত করতে পারে তার সুন্দর উদাহরণ এই বই। সেই সাথে শহর আর গ্রামের মানুষের জীবনে প্রাত্যহিক পরিবর্তনগুলোও খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। যৌবনের নির্দিষ্ট কিছু সময়, বার্ধ্যকের অফুরন্ত সময়, সাংসারিক আবহ, জীবনের ঢেউ তাল-লয় সমুদ্র, জীবনের মানে, জীবনের সংস্করণ, ব্যক্তিগত টানাপোড়েন এরকম হাজারো শব্দের বলয় তুলে ধরেছেন এই বইটিতে। লেখকের বেশ কিছু বই আমি পড়েছি যার দরুন লেখক সম্পর্কে ক্ষুদ্র ধারণা জন্মেছে। লেখক বড় উপন্যাসের বইগুলোতে সাধারনত তিন প্রজন্মের পটভূমি নিয়ে লিখেন। এক প্রজন্ম থেকে শুরু করে অন্য প্রজন্মে এনে শেষ করেন। কলকাতার পরিবেশ থেকে গ্রামের পরিবেশে সমাপ্তি। সময়ের ব্যবধানে জীবনের প্রকাশ। উপন্যাসের চরিত্রগুলোর কিছু নাম উল্লেখ করতে ইচ্ছে করছে- সৌমেন, অনিমা , রাইমা, ব্রজগোপাল, বহেরু, অজিত,নয়নতারা, শৈলীমাসি, রিখিয়া, ম্যাক্স, পুর্বা, অপলা, অনিল রায়, ননীবালা, রণেন, বীণা, বুবাই, টুবাই, লক্ষ্মণ, শীলা,কোকা ইত্যাদি। আমি তৃপ্ত, দৃপ্ত আশায় উন্মেলিত আমার মন। কবিতা লেখার ইচ্ছা নয়, লিখি মনের তাড়নায়- সময়ের জল অসময়ে বয়, বিদিশার কোল জুড়ে স্মৃতিরা অভয়।