User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
"এই নিশাচর শহরের পেঁচাদের আতিথ্য দেয় নিশাচর নকল চন্দ্রিমা। আসল জোছনার সাথে তার পার্থক্য করা যায় না।" আচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে আপনার বা আমার প্রথম কাজ কী হবে? উত্তরটা খুব সোজা, তাই না? চাকরি বাজারে ছোটা, ইন্টারভিউ টেবিলে ঘেমে নেয়ে অস্থির হয়ে ওঠা, আর এগুলোকে টেক্কা দিতে এত বছর ধরে যে বিষয়কে করায়ত্ত করলাম সেই জ্ঞান সিঁকেয় তুলে ভারত উপমহাদেশ থেকে শুরু করে সূদুর আফ্রিকা পর্যন্ত দেশে কবে কোথায় কী ঘটেছে, কোন দেশ স্বাধীনতার স্বাদ কবে নিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি মাল মসলা নিজের দেড় কেজি ভরের মস্তিষ্কে ঠাঁই দিতে হবে। কষ্টে শিষ্টে সেই কাজ যদিওবা করা যায় তবুও নিশ্চিত নই সেই "চাকরি" বা বাংলাদেশিদের স্বপ্নের বিসিএস তথা সরকারি চাকরির মতো সোনার হরিণ পাবো কিনা। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আজ আমি যে বইটি নিয়ে লিখবো সেটির জনরা রহস্য ও গোয়েন্দা হলেও বইটির প্রথমাংশ পড়ার পর আপনি বা আমি ধরে নিতে বাধ্য হব এটা হয়তো কোন টিপিক্যাল মিডল ক্লাস যুবকের তারুন্যময় দিনগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়ে চাকরির বাজারে ছোটার এবং তদ্বসম্পর্কিয় নিত্যদিনের ঘটনা প্রবাহের সংকলন। কিন্তু না, মাঝখানে প্রবল ঝড়েই সব কিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় তার, এখানে লণ্ডভণ্ড শব্দটা উচ্চারণ করে একটু ভুলই হয়তো করে ফেললাম কারণ লণ্ডভণ্ড না বলে "নতুন মাত্রা পায় তার জীবন" এইটুকু বলে মনে হয় আরো বেশি ভালো শোনাতো। বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে বড় হয়ে গোয়েন্দা হবে, সেই ইচ্ছা কি বুকে লালন করে, ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কেস স্টাডি করতেন, অনেক ধরনের গোয়েন্দা গল্পের বইয়েও কিনে দিয়েছিলেন ছেলেকে। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে পা রাখা মাত্রই- রুদ্ধদ্বার গল্পের নায়ক ঈশান রায়ের বাবা অবিনাশ রায় বুঝেছিলেন, এখানেই হয়তো তার স্বপ্নের ইতি ঘটবে। কিন্তু না ওই যে বললাম ঈশানের জীবনের এক চরম ঝড় আসে, সেই ঝড়েই দর্শনের শিক্ষার্থী,চাকরির আশায় মত্ত এই ঈশান লেগে পড়ে নিজের বাবার স্বপ্ন তথা এক প্রকার নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে। অত্যন্ত প্রাণবন্ত করে একটি ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দিতে বলা যায় লেখক সিদ্ধ হস্ত। আগেই বলেছি এই বই হাতে নিয়ে প্রথম ১৩ কি ১৪ পর্ব পড়ার পর অনেকেই হয়তো ভেবে বসবেন এতো বাঙালি কোন যুবকের বায়োগ্রাফি চলছে। কিন্তু এরপরই শুরু হয় আসল কাহিনী। গুলশানের এক অভিজাত বাড়ির বুড়োকে জীবনের শেষ দিনগুলোতে কী তাড়া করছে? কেন কোনো কারণ ছাড়াই তিনি করে বসলেন আত্মহত্যা? অভিজাতদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা হিসাবে সেই সাধারণ তদন্তও নেমে এলো সিআইডির কাঁধে। ঘটনাচক্রে সেই কেসটি আসে আমাদের নায়ক ঈশানের কাঁধে। ঈশান কি পারবে এই কেস সমাধান করে নিজের সুপ্ত মেধাকে মেলে ধরতে? সে কি পারবে তার বাবার স্বপ্নকে পূরণ করতে? এ সমস্ত কিছুর উত্তর জানতে হলে অবশ্যই বইটা পড়তে হবে। স্পয়লার দিয়ে দেব নাকি সেই ভয়ে আর বেশি কথা আমি বলছি না। এবার আসা যাক লেখক 'দিবাকর দাস'-এর লিখন শৈলীতে। বর্তমানে সাহিত্য বলতে অথবা কোন বই লেখা বলতে আমাদের নতুন লেখকদের মাঝে কেন যেন একটা বদ্ধমূল ধারনাই হয়ে গেছে, সাহিত্য মানে এমন কিছু লেখা যা সাধারন মানুষের পক্ষে বোধগম্য হবে না। আমরা সাধারণ মানুষ তাদের লেখা সেই অসাধারণ শব্দ যুগলের অর্থ উদঘাটন করতে অপারগ থেকে যাব। মূলত এ ধরনের লেখাতেই বর্তমান যুগের লেখকগণ সাহিত্য নামে সংজ্ঞায়িত করেছেন। অবশ্য তাদের সেই বদ্ধমূল ধারণারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিবাকর দাসের মতো আরো কিছু লেখক যাদের নাম- আমি এখন তুলে ধরছি না, থ্রিলার লিখছেন কেউ কেউ লিখছেন রোমান্টিক উপন্যাস। তাদেরকে ছাপিয়ে দিবাকর দাস নিজের লেখার মাধ্যমে একটি অনন্য জায়গা মেলে ধরেছেন আমাদের মত পাঠকদের মাঝে যাদের কাছে সাহিত্য মানে কোন জটিল শব্দ যুগল নয়, এমন কিছু যা সহজ-সরল হবে, কোন অশ্লীলতা থাকবে না, ঘটনা প্রবাহ এগিয়ে যাবে নিজের মতো করে, মূলত কোথাও থমকে থাকবে না। বইটিতে ঈশান রায় চরিত্রটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হলেও, বইটির অন্যান্য চরিত্রগুলো কেউ কিন্তু লেখক নিজেদের মতো করে বেড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। সবগুলো চরিত্র, উপন্যাসটির প্লট, সবকিছুই নিয়ে আমার কাছে 'বইটি জমে ক্ষীর' মনে হয়েছে। আবার বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, চাকরির বাজারে একজন মানুষকে পেট চালানোর দায়ে কীভাবে নিজের প্রতিভাকে ছেড়ে দিতে হয়, নিজের মতো করে তা দেখিয়েছেন এই উপন্যাসে। লেখক লিখেছেন, "ঈশানের স্বপ্ন বদলে গেল, আর মলিন মুখে অবিনাশ রায় দেখতে লাগলেন কীভাবে তার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। প্রতিভার পিঠে বারবার ছুরি মারতে থাকা সমাজ কিভাবে কেড়ে নেয় সকল সম্ভাবনার আলো।" আচ্ছা চোখ বন্ধ করে একবার ভাবুন তো আমাদের আশেপাশে কত শত প্রতিভা লুকিয়ে আছে। কিন্তু অনেকের অবিনাশ রায়ের মতো বাবা-মা না থাকার জন্য নিজেদের প্রতিভা মিলতে পারেনা, আবার কেউ কেউ মানসিকভাবে বড় হয়ে যাওয়ার পর সমাজের চোখে যা সাফল্য, যা সুন্দর, সেই সাফল্য এবং সুন্দরকে বরণ করে নিতে নিজেদের সেই ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষকে বিসর্জন দিয়ে দেয়। এখানেই আমার কাছে দিবাকর রায়ের সাথে অন্যান্য লেখকদের পার্থক্য ধরা দিয়েছে। লেখক বর্তমান সময়ের অনেক ভুলভ্রান্ত ধারণাকে, সামাজিক অসুখকে নিজের মতো করে উপস্থাপন করেছেন। এখানেই লেখকের সার্থকতা। এবার যদি বইয়ের বাইন্ডিং নিয়ে বা বইটির সম্পাদনা নিয়ে বলতে হয় তাহলে আমার মতে, আমি পড়েছি বইটির ২০২১ সালের সংস্করণ, যার বাইন্ডিং আমার কাছে খুব একটা ভালো লাগেনি তবে ২০২৪ সালে যে দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয়েছে তার বাইন্ডিং মোটামুটি ভালো বলা চলে। আর সম্পাদনা নিয়ে বলবো প্রতিটি বই আসলে কিছু না কিছু বানান ভুল থাকেই। এ বইটি ও তার ব্যতিক্রম নয় তাই সেই বানান ভুলকে আমি ধর্তব্যের মধ্যে আনছি না। বইটি পড়ে যে মানসিক শান্তি পেয়েছি। সময় শ্রম এবং টাকা সবগুলোই যে বেঁচে গেছে এর জন্য মানসিক শান্তির পরিমাণটা আরো বেশি। বই : রুদ্ধদ্বার লেখক : দিবাকর রায় প্রচ্ছদ : সজল চৌধুরী পৃষ্ঠা : ১৭৬ প্রথম প্রকাশ : মার্চ, ২০২১ প্রকাশনা : ভূমিপ্রকাশ দ্বিতীয় প্রকাশ: ২০২৪ প্রকাশনা : প্রিমিয়াম পাবলিকেশন্স
Was this review helpful to you?
or
ছোট থেকে আমাদের অন্তরে লালন করা স্বপ্ন হঠাৎই আমাদের কাছে অবাস্তব ঠেকে। সমাজ মেনে নিবে না, টিটকারি করবে বলে আমরা নতুন এক স্বপ্নের পথে হাঁটা শুরু করি। অথচ সেই ছোটবেলা থেকে, যে সময়টাতেই মানুষ নিজের আনন্দের বিষয়কে খুঁজে পায়, যে স্বপ্নের পথে চলেছি তা একদমই ভুলে যাই। কেন জানেন? ঈশান রায়। সরকারী চাকরির পড়া পড়তে পড়তে মাথার সব চুল উঠে যাবার মতো যোগাড়। দিন নেই, রাত নেই শুধুমাত্র বইয়ের পাতার তথ্য গেলা। কখনো কখনো তিতিবিরক্ত হয়ে চুপচাপ বসে থাকে, জীবন নিয়ে ভাবে। এটাই কি ওর স্বপ্ন ছিল? সরকারি চাকরির পেছনে কুকুরের মতো খাটার! এই স্বপ্ন তো ঈশান লালন করেনি। তার বাবা তাকে দেখিয়েছিল অন্যরকম স্বপ্ন। সেখানে জীবন আলাদা। কিন্তু সমাজের কটুকথার ভয় তাকে সেই স্বপ্নের কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। ঈশানের বাবা অবিনাশ রায়। গোয়েন্দা বিভাগের নিম্নপদের একজন কর্মকর্তা। কাগজপত্র, নথিপত্র ইত্যাদি ঘাটাই যার প্রধান কাজ। বিভিন্ন জিনিসের প্রতি ছেলের আগ্রহ দেখে তার মনে একটা স্বপ্ন চাষ করতে শুরু করে। যদিও এই স্বপ্ন একজন পিতার জন্য নিন্দনীয়। সমাজের মানুষ কোনোভাবেই এটা সহজ চোখে দেখবে না। একদিন ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করেই ফেলল ঈশানকে, সে বড় হয়ে গোয়েন্দা হবে কিনা। ঈশানও সায় জানাল। ব্যস! সেই শৈশব থেকেই শুরু হলো ঈশানের ট্রেনিং! ঈশানের বাবার এই স্বপ্নে, যে স্বপ্ন একসময় ঈশানেরও ছিল, সেটায় ভাটা পড়ে গেল সময়ের সাথে সাথে। ঈশানও বুঝল, এই কর্ম সমাজের চোখে নিন্দনীয়। কিন্তু জোর করে নতুন এক স্বপ্ন নিয়ে কতদিন বেঁচে থাকা যায়? সময়ই ঈশানকে আবার সেই পুরনো স্বপ্নের পথে নিয়ে গেল। ◼️ পাঠপ্রতিক্রিয়া (কিঞ্চিৎ স্পয়লার হতে পারে) — প্রায় ১৭০ পৃষ্ঠার একটা মাঝারি আকারের বই। তবে পৃষ্ঠা হিসেবে একদম কমও নয়৷ গল্পের কনসেপ্টও ভালো লেগেছে। সচরাচর গল্পে গোয়েন্দাদের যেমন শখ থেকে গোয়েন্দা হতে দেখা যায়, এই গল্প তার ব্যতিক্রম। তবে লেখক বেশিরভাগ জায়গাই ঈশানের গোয়েন্দা হওয়ার পেছনের কথায় দিয়ে ফেলেছেন। যেহেতু বইটাকে ডিটেকটিভ উপন্যাস বলেই জানানো হচ্ছে, সেহেতু কোনো তদন্ত বা কেসের উপরেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। তবে হ্যাঁ, লেখকের এই আইডিয়াকে অবশ্যই এপ্রিশিয়েট করি। তিনি সচরাচর ধারার বাইরে গিয়ে গল্পে আরেকটা স্বাদ ঢোকানোর চেষ্টা করেছেন। সেটাতে তিনি সফল, এটা বলাই যায়। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, লেখক একটু বেশি সময়ই ব্যয় করে ফেলেছেন ঈশানকে গোয়েন্দা বানাতে গিয়ে। যার কারণে গল্পের ফ্লোটা অনেক কমে গিয়েছে। বিরক্তও লাগছিল বটে। আবার, সম্ভবত এদিকে বেশি সময় দেওয়ার কারণে এই বইয়ে ঈশানের তদন্ত বা কেসকেও ওতোটা রহস্যময় করতে পারেননি। মোটামুটি প্রেডিক্টেবল ছিল। এককথায়, লেখক মূল চরিত্রকে গোয়েন্দা বানাতে গিয়ে সেখানে বেশি সময় খরচ করে মূল তদন্তটাকে ওতোটা ভালো করতে পারেননি। অথচ মূল চরিত্রের এত কাঠখড় পুরিয়ে এই লাইনে এসে একটা চমৎকার তদন্তের গল্প শুনতেই পাঠকরা চাইবে। লেখক চাইলে আশেপাশের আরো দুয়েকটি চরিত্রকে বিল্ডআপ করতে পারতেন। এতে গল্পটায় হয়তো কিছু আগ্রহের বিষয় আসত। ঈশান চরিত্রটাকেই লেখক বিল্ডআপ করেছেন ভালোমত। পাশাপাশি অবিনাশ রায়কে অল্পসময় প্লে করেছেন। আমার মনে হয়, অবিনাশ রায়কে আরেকটু বিল্ডআপ করা যেত তার পেছনের সময় নিয়ে। লেখকের বর্ণনাশৈলি অত্যন্ত চমৎকার। গল্পের ফ্লো কমে গেলেও বর্ণনার কারণে গল্পটাকে চালিয়ে যেতে পেরেছি৷ টাইপিং মিস্টেক দুয়েকটা চোখে পড়েছিল হয়ত। প্রচ্ছদটাও চমৎকার। প্রচ্ছদের কথায় মনে পড়ল, এইরকম প্রচ্ছদ দেখলে শুরুতে একটা কথাই মনে হয়, এই প্রচ্ছদ নিশ্চয়ই পরাগ ওয়াহিদ ভাইই করেছে! হাহা! পরিশেষে, সচরাচর ধারার বাইরে গিয়ে লেখক চমৎকার একটা গল্প উপহার দিতে চেয়েছেন। পাঠক নতুন জিনিসের স্বাদ নিতেই পারেন। আর যারা লেখকের মহাকাল ট্রিলজি পড়েছেন, তারা হয়তো নাম শুনেই এই বই পড়ে ফেলবেন। আমিও অপেক্ষায় আছি, দেখা যাক, কোন যুগে মহাকাল ট্রিলজি আমার ঘরে ঢোকে। ব্যক্তিগত রেটিং : ৩.৮/৫ বই : রুদ্ধদ্বার লেখক : দিবাকর দাস প্রকাশনী : প্রিমিয়াম পাবলিকেশন্স পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৭৬