User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
It was nice.
Was this review helpful to you?
or
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের 'গতি' উপন্যাসটি খুবই আধুনিক আর সমকালীন। শুধু যে উপন্যাসের পাত্র-পাত্রীদের মুখে ইংরেজি কথার আধিক্যের কারণেই এই উপন্যাসকে আধুনিক বলছি, তা না। আক্ষরিক অর্থেই এই উপন্যাস খুবই আধুনিক এর বিষয়বস্তুর কারণে। কাহিনীর গভীরতা দারুণ, পাশাপাশি অসাধারণ গতিশীল আর সোজাসাপ্টা ধরণের ঋজু ও শক্তিশালী। ২০ বছর আগের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও এই উপন্যাসের বক্তব্য বর্তমানের সমসাময়িকতার সাথেও আশ্চর্যজনকভাবে সম্পর্কযুক্ত। ১৯৯৪ সালের সময়কালের প্রতিনিধিত্বকারী এই উপন্যাস তাই ২০১৪'কে প্রতিনিধিত্ব করতেও সমান রকমের সক্ষম। শীর্ষেন্দুর উপন্যাসের প্রধান যে দিক তা হল বর্ণনা আর সংলাপের ব্যবহার, উভয় ক্ষেত্রেই তিনি প্রচন্ড সামর্থের অধিকারী। এই উপন্যাসে তাঁর বর্ণনার যে ভাষা, তা এক কোথায় অসাধারণ। সে ব্যাপারে বেশি কিছু বলতে যাওয়া হবে নেহাতই আমার ছেলেমানুষি ধৃষ্টতা। তবে সংলাপের ব্যবহার নিয়ে কিছু বলাই যায়। শীর্ষেন্দুর সংলাপের গভীরতা দারুণ। চরিত্রদের মুখনিঃসৃত সংলাপের মাধ্যমেই কাহিনী ঘনীভূত হতে থাকে, সামনের দিকে এগিয়ে যায় এবং একটা পর্যায়ে নতুন মাত্রায় অধিষ্ঠিত হয়। তবু এই কথা না মেনে উপায় নেই, তাঁর চরিত্ররা বড্ড বাচাল। একবার কথা শুরু করলে আর থামতেই চায় না! পাঠকেরা হয়ত পড়তে পড়তে এমনই বিমোহিত হয়ে পড়ে সে জন্য এই ব্যাপারটা তাদের চোখ এড়িয়ে যায়। কিন্তু ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, চরিত্রদের পারস্পরিক আলাপচারিতার দৃশ্যগুলো একটু বেশিই লম্বা। সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। তাছাড়া প্রতিটি চরিত্রই যেভাবে কথার পিঠে কথা বলে কাহিনী এগিয়ে নিতে সক্ষম, সেটাও বাস্তবের সাথে সাংঘর্ষিক। আর ঠিক এই কারণেই এই উপন্যাসের তিনটি চরিত্র - ধিঙ্গি, রাতুল আর রাতুলের বাবার মুখের সংলাপে মুগ্ধ হলেও আমি কিছুটা কনফিউজডও হয়েছি। এক উপন্যাসে এরকম একাধিক চরিত্রকে শক্তিশালী সংলাপের মাধ্যমে গড়ে তোলার ব্যাপারটিতে লেখকের সচেতনতার চেয়ে অবচেতনতারই বেশি প্রভাব থাকতে পারে। কিন্তু তবু সে সব পাশে সরিয়ে আলাদা আলাদাভাবে যদি চরিত্রদের কথা বলতে হয়, তবে আমি অবশ্যই বলব প্রধানত ধিঙ্গি চরিত্রটি মাল্টি-ডাইমেনশনাল। এই চরিত্রদের মাধ্যমে লেখক যেভাবে আধুনিক টিনেজারদের তুলে ধরেছেন তা প্রশংসাযোগ্য। অন্যদিকে রাতুলের বাবার চরিত্রটিও স্রেফ সংলাপ আর তার বিচিত্র স্বভাবের কারণেই বিশেষত্ব লাভ করেছে। তবে চরিত্রটি একটু নাটকীয়ও বটে। আর রাতুল চরিত্রকে আপাতদৃষ্টে সাদামাটা মনে হলেও বাবার সাথে তার আলাপচারিতার সময় তাকে বেশ ব্যক্তিত্ববান মনে হয়। অবশ্য সেটা হয় বাবা-ছেলের দৃশ্য ও সম্পর্ককে গভীরতা প্রদান করতেই করা হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয়, রাতুল চরিত্রটি সব সময়ই একইভাবে চিত্রায়িত করা হত, তাহলে হয়ত বেশি ভাল হত। যাইহোক, এই উপন্যাসের কাহিনীকে সংক্ষিপ্ত করে বলা একটু কঠিন। শুধু এটুকুই বলা যায়, উচ্চবিত্ত সমাজের সম্পর্কের চড়াই-উতড়াইগুলো তাড়া করে বেরিয়েছে এই উপন্যাসকে শুরু থেকে শেষ অবধি। বাংলা সাহিত্যে প্রেম ভালোবাসাকে নয়, স্রেফ মানব-মানবির সম্পর্ককে উপজীব্য করে জটিল একটা থিমকে এত সহজবোধ্য করে উপস্থাপনের বিষয়টি বেশ বিরল। শীর্ষেন্দুর মত করে এই কাজটা এতটা সফলতার সাথে আর কেউ করতে পারত কিনা জানি না। এই বইকে কোন নির্দিষ্ট শ্রেণির পাঠকের জন্য 'অবশ্যপাঠ্য' বলে দাবি করব না। তবে এটুকু অন্তত বলতে পারি, কাহিনীর অতলতার কিছুটা গভীরেও যদি যাওয়া যায়, তাহলে যে কোন প্রাপ্যমনস্ক পাঠকই এই উপন্যাসের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে।