User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম : এক্সোপ্ল্যানেট : বহিঃসৌর গ্রহের খোঁজে লেখক: ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরী মহাকাশ ও মহাবিশ্বের রহস্য যাদের খোঁজার আগ্রহ রয়েছে তাদের জন্য এক বিস্ময়কর বই পাঠকদের জন্য নিয়ে এসেছেন লেখক ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরী। শুধু বইটি বিস্ময়কর নয় বরং বইয়ের প্রতিটি পাতা ভরা বিস্ময়। মহাকাশে সূর্য থেকে সব গ্রহের দূরত্ব মাপা হয়। এদেরকে বলা হয় অ্যাস্ট্রোনোমিকাল ইউনিট। তা অনেক বড় হিসাব। তাই সংক্ষেপে এই পদ্ধতির কথা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন লেখক এই বইয়ে। কিভাবে আবিষ্কার হলো প্রথম বহিঃ সৌর গ্রহ? কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে? বহিঃ সৌর গ্রহ খোঁজার এক পদ্ধতির নাম ট্রানজিট পদ্ধতি। কিন্তু কিভাবে কাজ করে এই পদ্ধতি? এসব ব্যাখ্যা আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে দিয়েছেন, লেখক ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরী। সৌরজগৎ সম্পর্কে জানা খুবই কঠিন। তবে এই বইয়ের লেখক যেভাবে লিখেছেন তা থেকে নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, যেকোনো বয়সের কেউ মনোযোগ সহকারে বইটি পড়লে তাদের মনে থাকা সৌরজগৎ সম্পর্কে অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর জানতে পারবে। আরো জানতে পারবে ধুমকেতু কি ও তার রহস্য। মহাবিশ্বের পানির অস্তিত্ব এলো কিভাবে? গ্যাস দানবগ্রহ গুলোর জন্ম ও রহস্যই বা কি? তাছাড়া লেখক কিছু জটিল বিষয় গল্পের মাধ্যমে সহজে বুঝিয়েছেন। শুনতে চান নাকি সেই গল্প? তাহলে এই বইটি আপনার জন্য। বইটি পাওয়া যাবে প্রথমা ডট কম, রকমারি সহ অনলাইন ও অফলাইন বিভিন্ন বুক শপে। মো. নানজিব ফাহিম এপ্রিল ২০২৫
Was this review helpful to you?
or
এক্সোপ্ল্যানেট বা বাহ্যগ্রহ বলতে বোঝায় আমাদের সৌরজগতে আমরা যেসকল গ্রহদের চিনি তাদের বাইরের গ্রহ। অর্থাৎ সৌরজগতের বাইরের গ্রহ গুলোকেই বলা হয় এই এক্সোপ্ল্যানেট। লেখক ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরী তার অসাধারণ লেখনীর সাহায্যে এক্সোপ্ল্যানেট: বহিঃসৌরগ্রহের খোঁজে বইটি লিখেছেন। বইটি লিখতে তিনি সাহায্য নিয়েছেন এলিজাবেথ টাস্কারের লেখা দ্য প্ল্যানেট ফ্যাক্টরি বই থেকে। তবে এটা একদম লাইন ধরে ধরে অনুবাদ নয়। এতে রয়েছে একটা গ্রহের জন্ম থেকে শুরু করে তার জীবনের শেষ পর্যন্ত চলার কাহিনি। বইটি মূলত তিন ভাগে বিভক্ত। মানে এতে রয়েছে তিনটি মূল অধ্যায়। যথাক্রমে এক্সোপ্ল্যানেটের খোঁজে, মহাশূন্যে গ্রহদের জন্মরহস্য ও বিপজ্জনক গ্রহদের রাজ্যে। বর্তমান বিশ্বে মহাকাশ গবেষণার অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে বহিঃসৌরগ্রহ অনুসন্ধান। মহাবিশ্বের কোথাও আমাদের মতো আরেকটা পৃথিবী আছে কিনা এ নিয়ে মানুষের কৌতূহল অনেকদিনের। মহাকাশবিজ্ঞানীরা কি করে দূর মহাকাশে বহিঃসৌরগ্রহ খোঁজেন? এই বইয়ের প্রথমে আছে সেই কাহিনী। কিভাবে আবিষ্কার হলো প্রথম এক্সোপ্ল্যানেট। সৌরজতের বাইরে কোনো নক্ষত্রকে ঘুরতে থাকা কোনো গ্রহ প্রথম আবিষ্কার করেন জ্যোতিঃপদার্থবিদ মাইকেল মায়োর। তিনি যে পদ্ধতিতে এই গ্রহ খুঁজে পান তার নাম হলো রেডিয়াল ভেলোসিটি ম্যাথোড। আমরা জানি, এই মহাবিশ্বে দুটি বস্তু একে অপরকে আকর্ষণ করে। একে বলে মহাকর্ষ। এই মহাকর্ষের কারণে কম ভরে বস্তু বেশি ভরের বস্তুকে কেন্দ্র করে ঘুরে। আসলে ব্যাপারটা তা নয়। এরা ঘুরে এদের ভরকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে। আমাদের সৌরজতের সব গ্রহের ভর সূর্যের চেয়ে কম তাই এই ভরকেন্দ্র সূর্যের মধ্যেই পড়ে। যা দেখে মনে হয় গ্রহ গুলো সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। আর গ্রহের ভর যদি অনেক হয় তাহলে তার ভরকেন্দ্র নক্ষত্র থেকে বাইরে চলে আসে। যা ঐ নক্ষত্রের ঘূর্ণনে পরিবর্তন আনে। এই পরিবর্তন থেকেই বলা যায় গ্রহটা কেমন। এটাই রেডিয়াল ভেলোসিটি ম্যাথোড যা মাইকেল মায়োর ব্যবহার করেছিলেন গ্রহ অনুসন্ধানে। এই পদ্ধতির আবিষ্কারে একটা ইতিহাস আছে যা লেখক চমৎকার ভাবে বলেছেন। গ্রহ খুঁজতে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো ট্রানজিট ম্যাথোড। এছাড়া আরো নানা পদ্ধতির বর্ণনা পাবেন এই বইতে। এই রকম বাংলা ভাষায় আর নেই বলা যায়। খেয়াল করবেন এক্সোপ্ল্যানেটের নামগুলো একটু অদ্ভুতরে হয়। বইয়ে সুন্দর করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এরকম অদ্ভুত নামকরণের কারণ। সঙ্গে উল্লেখ আছে কোন নামের কি মানে। যা জানলে আপনি সামনে আর কোনো এক্সোপ্ল্যানেটের নাম দেখে চমকে যাবেন না। এর পরের অধ্যায়ে আছে গ্রহদের জন্মকথা। এটা নিয়ে আমি বেশি কিছু বলবো না। এই অংশটা একটা আশ্চর্য জায়গা। পাঠক এই অংশ পড়ার সময় একদম সৌরজগতের জন্মের সময়ে চলে যাবেন। কারণ বাইরের গ্রহ বা অন্য সৌরজগতের জন্ম জানতে হলে আমাদের সৌরজগতের জন্মরহস্য উন্মোচন জরুরি। এই অংশে লেখক কীভাবে গ্যাস থেকে গ্রহ গুলো হলো তা বিস্তারিত বলেছেন। নানা রকমের থিওরি তারা কোন কোন অংশে ব্যর্থ আবার সেই ব্যর্থতা ঢাকতে অন্য থিওরির উদ্ভোব। এভাবেই এগিয়েছে এই অংশ যা পাঠককে অনেক অজানা জিনিস জানাবে। তবে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে পৃথিবীতে পানি রহস্যের ব্যাপারটা। পৃথিবীতে পানি কীভাবে এলো এটা ব্যাখা করতে গিয়ে লেখক চলে গেছেন ধূমকেতুর কাছে। যা তাকে নিয়ে গেছে ওরট ক্লাউড ও কুইপার বেল্টের জগতে। এসমস্ত কিছু নিয়েই বিস্তরে জানা যাবে বইটি পাঠ করে। ধূমকেতু সম্পর্কে বলতে গিয়ে দুটো সাম্প্রতিক ঘটনা ওঠে এসেছে। একটা হলো রোসেটা মহাকাশযানের ধুমকেতু 67P এর কাছাকাছি পৌঁছা ও ২০১৪ সালে তা থেকে এটা রোভার ফিলেই প্রথমবারের মতো কোনো ধুমকেতুর কক্ষপথে নামা। আর অন্য ঘটনা হলো ২০১৪ সালে জাপানের পাঠানো হায়াবোসা-২ ও ২০১৬ সালে পাঠানো নাসার মিশন OSIRIX-REX। যা আলাদা আলাদা ধুমকেতুতে নেমে সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে নিয়ে আসে। এই সম্প্রতি হওয়া ঘটনার বিবরণ বইটাকে আরো আপডেটেড করে তুলেছে। এই বইতে বর্তমান সময়ে চলমান অনেক ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। এরের পরের অংশে রয়েছে নানারকম গ্রহদের গল্প। হরেক রকম গ্রহের মেলা বলা যায়। এদের মধ্যে আছে হট জুপিটারদের কথা। আছে সুপার আর্থদের কথা। শুধু তা-ই না এরা কেন এমন তারও ব্যাখা রয়েছে এই বইতে। এগুলো কেমন তা জানতে আপনাকে বইটি পড়তে হবে। আপনি জানবেন নানা থিওরি সম্পর্কে। আর মজার ব্যাপার হলো লেখক এসবের ব্যাখা দিতে আমাদের এদেশের নানা জিনিসের উদাহরণ দিয়েছেন। নানা সিনেমা আর বইয়েরও সাহায্য নিয়েছেন। আপনি “ফরেস্ট গাম্প” সিনেমার লাইন যেমন পাবেন তেমনি পাবেন “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেনি”- বই থেকেও উদাহরণ। ফলে মাঝেমধ্যে খানিকটা রসবোধের যোগানও হয়ে যাবে। এই বইয়ে আপনি পাবেন জোসেলিন বেলের গল্প। যিনি আবিষ্কার করেছিলেন পালসার। কিন্তু নারী হওয়ার কারনে তাকে নোবেল দেয়া হয়নি। নিশ্চয় প্রশ্ন জাগছে এক্সোপ্ল্যানেটের বইয়ে পালসার কেন? কারণ প্রথম যে এক্সোপ্লানেট আবিষ্কার হয়েছিলো তা একটি পালসারকে কেন্দ্র করে ঘুরছিলো। এইটা প্রথম আবিষ্কার করেন অ্যালেক্স ওলসম্যান ১৯৯২ সালে। কিন্তু তাকে কৃতিত্ব না দিয়ে দেয়া হয় মায়োরকে যিনি ১৯৯৫ সালে আবিষ্কার করেন। এই বৈষম্যের কারণ হলো মায়োরের প্ল্যানেট ছিলো আমাদের মতো নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরা। এসব বৈষম্যের কাহিনি আছে এই বইয়ে। এছাড়া আছে মঙ্গলগ্রহের অদ্ভূত সব আচরণের কথা। এছাড়া জানা যাবে এক্সোমুন নিয়ে। সৌরজগতের বাইরে যেসব গ্রহ আছে তাদেরও অবশ্যই চাঁদ আছে। বিজ্ঞানীরা এখন সেই চাঁদ খোঁজার চেষ্টায় আছেন। তাঁরা এ জন্য ট্রানজিট টাইমিং ভেরিয়েশন বা TTV নামক একটা পদ্ধতির ব্যবহার করছেন যার কথাও এই বইতে পাবেন। এই বই আপনাকে নতুন এক জগতের সাথে পরিচয় করাবে। কোনো কিছুই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। তেমনি এই বইয়ের কিছু বিষয় নিয়েও একটু সমালোচনা করাই যায়। প্রথমেই আমার মনে হয়েছে পর্যাপ্ত ছবির অভাব। যেমন বিজ্ঞানীদের নামের সাথে তাদের ছবি দেয়া উচিত ছিলো। বইটাতে নানা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আছে যেমন ভ্যানডার ওয়ালস বল বা আরো অনেক যা এটা ইন্টারমিডিয়েট লেভেলের মতো করেছে। এগুলোর আলাদা ব্যাখা বইয়ের শেষে দিলে ভালো হতো। এককথায় বলা যায় এমন বইয়েরই এখন বেশি দরকার। যা পাঠককে অনেকটা গভীরে নিয়ে যেতে ও আপডেট রাখতে সাহায্য করবে। বইটা আপনাকে এক্সোপ্ল্যানেটের সব তথ্যের সঙ্গে একটু হলেও পরিচিত করাবে। যা আপনার মনের জানালা খুলে দেবে আর ভাবতে বাধ্য করবে কত বিচিত্র আমাদের এই মহাবিশ্ব। ‘এক্সোপ্ল্যানেটঃ বহিঃসৌর গ্রহের খোঁজে’ বইয়ের এই রিভিউটি লিখেছেন অনিক কুমার সাহা। জনপ্রিয় অনলাইন প্লাটফর্ম ‘বিজ্ঞান ব্লগ’-এ ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে এটি।
Was this review helpful to you?
or
এক্সোপ্ল্যানেট বা বাহ্যগ্রহ বলতে বোঝায় আমাদের সৌরজগতে আমরা যেসকল গ্রহদের চিনি তাদের বাইরের গ্রহ। অর্থাৎ সৌরজগতের বাইরের গ্রহ গুলোকেই বলা হয় এই এক্সোপ্ল্যানেট। লেখক ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরী তার অসাধারণ লেখনীর সাহায্যে এক্সোপ্ল্যানেট: বহিঃসৌরগ্রহের খোঁজে বইটি লিখেছেন। বইটি লিখতে তিনি সাহায্য নিয়েছেন এলিজাবেথ টাস্কারের লেখা দ্য প্ল্যানেট ফ্যাক্টরি বই থেকে। তবে এটা একদম লাইন ধরে ধরে অনুবাদ নয়। এতে রয়েছে একটা গ্রহের জন্ম থেকে শুরু করে তার জীবনের শেষ পর্যন্ত চলার কাহিনি। বইটি মূলত তিন ভাগে বিভক্ত। মানে এতে রয়েছে তিনটি মূল অধ্যায়। যথাক্রমে এক্সোপ্ল্যানেটের খোঁজে, মহাশূন্যে গ্রহদের জন্মরহস্য ও বিপজ্জনক গ্রহদের রাজ্যে। বর্তমান বিশ্বে মহাকাশ গবেষণার অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে বহিঃসৌরগ্রহ অনুসন্ধান। মহাবিশ্বের কোথাও আমাদের মতো আরেকটা পৃথিবী আছে কিনা এ নিয়ে মানুষের কৌতূহল অনেকদিনের। মহাকাশবিজ্ঞানীরা কি করে দূর মহাকাশে বহিঃসৌরগ্রহ খোঁজেন? এই বইয়ের প্রথমে আছে সেই কাহিনী। কিভাবে আবিষ্কার হলো প্রথম এক্সোপ্ল্যানেট। সৌরজতের বাইরে কোনো নক্ষত্রকে ঘুরতে থাকা কোনো গ্রহ প্রথম আবিষ্কার করেন জ্যোতিঃপদার্থবিদ মাইকেল মায়োর। তিনি যে পদ্ধতিতে এই গ্রহ খুঁজে পান তার নাম হলো রেডিয়াল ভেলোসিটি ম্যাথোড। আমরা জানি, এই মহাবিশ্বে দুটি বস্তু একে অপরকে আকর্ষণ করে। একে বলে মহাকর্ষ। এই মহাকর্ষের কারণে কম ভরে বস্তু বেশি ভরের বস্তুকে কেন্দ্র করে ঘুরে। আসলে ব্যাপারটা তা নয়। এরা ঘুরে এদের ভরকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে। আমাদের সৌরজতের সব গ্রহের ভর সূর্যের চেয়ে কম তাই এই ভরকেন্দ্র সূর্যের মধ্যেই পড়ে। যা দেখে মনে হয় গ্রহ গুলো সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। আর গ্রহের ভর যদি অনেক হয় তাহলে তার ভরকেন্দ্র নক্ষত্র থেকে বাইরে চলে আসে। যা ঐ নক্ষত্রের ঘূর্ণনে পরিবর্তন আনে। এই পরিবর্তন থেকেই বলা যায় গ্রহটা কেমন। এটাই রেডিয়াল ভেলোসিটি ম্যাথোড যা মাইকেল মায়োর ব্যবহার করেছিলেন গ্রহ অনুসন্ধানে। এই পদ্ধতির আবিষ্কারে একটা ইতিহাস আছে যা লেখক চমৎকার ভাবে বলেছেন। গ্রহ খুঁজতে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো ট্রানজিট ম্যাথোড। এছাড়া আরো নানা পদ্ধতির বর্ণনা পাবেন এই বইতে। এই রকম বাংলা ভাষায় আর নেই বলা যায়। খেয়াল করবেন এক্সোপ্ল্যানেটের নামগুলো একটু অদ্ভুতরে হয়। বইয়ে সুন্দর করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এরকম অদ্ভুত নামকরণের কারণ। সঙ্গে উল্লেখ আছে কোন নামের কি মানে। যা জানলে আপনি সামনে আর কোনো এক্সোপ্ল্যানেটের নাম দেখে চমকে যাবেন না। এর পরের অধ্যায়ে আছে গ্রহদের জন্মকথা। এটা নিয়ে আমি বেশি কিছু বলবো না। এই অংশটা একটা আশ্চর্য জায়গা। পাঠক এই অংশ পড়ার সময় একদম সৌরজগতের জন্মের সময়ে চলে যাবেন। কারণ বাইরের গ্রহ বা অন্য সৌরজগতের জন্ম জানতে হলে আমাদের সৌরজগতের জন্মরহস্য উন্মোচন জরুরি। এই অংশে লেখক কীভাবে গ্যাস থেকে গ্রহ গুলো হলো তা বিস্তারিত বলেছেন। নানা রকমের থিওরি তারা কোন কোন অংশে ব্যর্থ আবার সেই ব্যর্থতা ঢাকতে অন্য থিওরির উদ্ভোব। এভাবেই এগিয়েছে এই অংশ যা পাঠককে অনেক অজানা জিনিস জানাবে। তবে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে পৃথিবীতে পানি রহস্যের ব্যাপারটা। পৃথিবীতে পানি কীভাবে এলো এটা ব্যাখা করতে গিয়ে লেখক চলে গেছেন ধূমকেতুর কাছে। যা তাকে নিয়ে গেছে ওরট ক্লাউড ও কুইপার বেল্টের জগতে। এসমস্ত কিছু নিয়েই বিস্তরে জানা যাবে বইটি পাঠ করে। ধূমকেতু সম্পর্কে বলতে গিয়ে দুটো সাম্প্রতিক ঘটনা ওঠে এসেছে। একটা হলো রোসেটা মহাকাশযানের ধুমকেতু 67P এর কাছাকাছি পৌঁছা ও ২০১৪ সালে তা থেকে এটা রোভার ফিলেই প্রথমবারের মতো কোনো ধুমকেতুর কক্ষপথে নামা। আর অন্য ঘটনা হলো ২০১৪ সালে জাপানের পাঠানো হায়াবোসা-২ ও ২০১৬ সালে পাঠানো নাসার মিশন OSIRIX-REX। যা আলাদা আলাদা ধুমকেতুতে নেমে সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে নিয়ে আসে। এই সম্প্রতি হওয়া ঘটনার বিবরণ বইটাকে আরো আপডেটেড করে তুলেছে। এই বইতে বর্তমান সময়ে চলমান অনেক ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। এরের পরের অংশে রয়েছে নানারকম গ্রহদের গল্প। হরেক রকম গ্রহের মেলা বলা যায়। এদের মধ্যে আছে হট জুপিটারদের কথা। আছে সুপার আর্থদের কথা। শুধু তা-ই না এরা কেন এমন তারও ব্যাখা রয়েছে এই বইতে। এগুলো কেমন তা জানতে আপনাকে বইটি পড়তে হবে। আপনি জানবেন নানা থিওরি সম্পর্কে। আর মজার ব্যাপার হলো লেখক এসবের ব্যাখা দিতে আমাদের এদেশের নানা জিনিসের উদাহরণ দিয়েছেন। নানা সিনেমা আর বইয়েরও সাহায্য নিয়েছেন। আপনি “ফরেস্ট গাম্প” সিনেমার লাইন যেমন পাবেন তেমনি পাবেন “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেনি”- বই থেকেও উদাহরণ। ফলে মাঝেমধ্যে খানিকটা রসবোধের যোগানও হয়ে যাবে। এই বইয়ে আপনি পাবেন জোসেলিন বেলের গল্প। যিনি আবিষ্কার করেছিলেন পালসার। কিন্তু নারী হওয়ার কারনে তাকে নোবেল দেয়া হয়নি। নিশ্চয় প্রশ্ন জাগছে এক্সোপ্ল্যানেটের বইয়ে পালসার কেন? কারণ প্রথম যে এক্সোপ্লানেট আবিষ্কার হয়েছিলো তা একটি পালসারকে কেন্দ্র করে ঘুরছিলো। এইটা প্রথম আবিষ্কার করেন অ্যালেক্স ওলসম্যান ১৯৯২ সালে। কিন্তু তাকে কৃতিত্ব না দিয়ে দেয়া হয় মায়োরকে যিনি ১৯৯৫ সালে আবিষ্কার করেন। এই বৈষম্যের কারণ হলো মায়োরের প্ল্যানেট ছিলো আমাদের মতো নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরা। এসব বৈষম্যের কাহিনি আছে এই বইয়ে। এছাড়া আছে মঙ্গলগ্রহের অদ্ভূত সব আচরণের কথা। এছাড়া জানা যাবে এক্সোমুন নিয়ে। সৌরজগতের বাইরে যেসব গ্রহ আছে তাদেরও অবশ্যই চাঁদ আছে। বিজ্ঞানীরা এখন সেই চাঁদ খোঁজার চেষ্টায় আছেন। তাঁরা এ জন্য ট্রানজিট টাইমিং ভেরিয়েশন বা TTV নামক একটা পদ্ধতির ব্যবহার করছেন যার কথাও এই বইতে পাবেন। এই বই আপনাকে নতুন এক জগতের সাথে পরিচয় করাবে। কোনো কিছুই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। তেমনি এই বইয়ের কিছু বিষয় নিয়েও একটু সমালোচনা করাই যায়। প্রথমেই আমার মনে হয়েছে পর্যাপ্ত ছবির অভাব। যেমন বিজ্ঞানীদের নামের সাথে তাদের ছবি দেয়া উচিত ছিলো। বইটাতে নানা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আছে যেমন ভ্যানডার ওয়ালস বল বা আরো অনেক যা এটা ইন্টারমিডিয়েট লেভেলের মতো করেছে। এগুলোর আলাদা ব্যাখা বইয়ের শেষে দিলে ভালো হতো। এককথায় বলা যায় এমন বইয়েরই এখন বেশি দরকার। যা পাঠককে অনেকটা গভীরে নিয়ে যেতে ও আপডেট রাখতে সাহায্য করবে। বইটা আপনাকে এক্সোপ্ল্যানেটের সব তথ্যের সঙ্গে একটু হলেও পরিচিত করাবে। যা আপনার মনের জানালা খুলে দেবে আর ভাবতে বাধ্য করবে কত বিচিত্র আমাদের এই মহাবিশ্ব। দেশের জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘বিজ্ঞান ব্লগ’-এ এক্সোপ্ল্যানেট: বহিঃসৌরগ্রহের খোঁজে বইয়ের এই রিভিউটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে। লিখেছেন অনিক কুমার সাহা।
Was this review helpful to you?
or
আমি মূলত নতুন বই মাসখানেক ঘরে ফেলে রাখি। মাঝে মধ্যে পড়তে পড়তে দু-চার মিনিট ফাকা পেলে সেসব বই উল্টে পাল্টে দেখি। কয়েক লাইন পড়ে বোঝার চেষ্টা করি বইটা কেমন। যদিও এই বইটা ওভাবে পড়িনি। হাতে পেয়েই পড়া শুরু করি। মাঝে অসুস্থতার জন্য পড়া বন্ধ ছিলো। নয়তো আরো আগেই শেষ করতে পারবো বলে আশা করেছিলাম। যাইহোক, যারা এক্সোপ্ল্যানেট বা বহিঃসৌরগ্রহের প্রতি আগ্রহ বোধ করেন তাদের জন্য বইটা দারুণ কিছু। নামের মধ্যে শুধু এক্সোপ্ল্যানেট থাকলেও বইয়ের একটা বড় অংশ লেখা হয়েছে গ্রহদের জন্ম প্রক্রিয়া নিয়ে। যেই জ্ঞানটা সরাসরি এক্সোপ্ল্যানেটের সায়েন্স বুঝতে সহায়ক। এটা কোনো কাঠখোট্টা বিজ্ঞানের বই নয়। এর ভাষা এতটাই সরল যে স্পিড রিডিংয়েও বেধে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। এক্সোপ্ল্যানেটের আবিষ্কার, তার জন্ম নিয়ে নানান রকমের রহস্য ও সেসবের সমাধান নিয়েই বইটা লেখা। কত সব অভিনব উপায়ে যে বহিঃসৌরগ্রহগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে তা পড়ে অবশ্যই অবাক হবেন। আর তারপরেই রাজ্যের সমস্যা উঁকি দেয়। প্রচলিত জ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না নতুন আবিষ্কৃত এসব গ্রহদের জন্মরহস্য। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে কিছু রহস্যের সমাধান করা গেলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা আর সম্ভব হয় না। পূর্ণাঙ্গ সেসব সমাধানের পাশাপাশি সম্ভাব্য সমাধান ও তার ব্যর্থতা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বইয়ে। কলেবরে বইটা খুব বড় নয়। একটু হতাশার ব্যাপার হলো এর মূল্য। প্রথমার বইয়ের দাম আমার কাছে বেশি মনে হয়। তবে এই বইটা এলজাবেথ টাস্করের দ্য প্ল্যানেট ফ্যাক্টরি বইয়ের অবলম্বনে লেখা হয়েছে। সেক্ষেত্র অনুবাদ স্বত্ত বা ঐ জাতীয় কিছু ব্যাপার থাকতে পারে যার কারনে বইয়ের দাম বেড়েছে। তাছাড়া আরেকটা সমস্যার কথা বলা যায়। কিছু অধ্যায় থেকে পরেরটায় যাওয়ার ট্রান্জিশনটা স্মুথ না। মনে হয়, দীর্ঘ সময় পর লেখা হয়েছে। তবে রিভিউর এই অংশটুকু শুধুই লেখকের উদ্দেশ্যে বলা। এইটা এমন কোনো সমস্যা না যার কারনে পাঠক বিরক্ত বোধ করবে বা মূল বিষয়বস্তু বুঝতে পারবে না। বরং আমি এই বইকে বাজারের আর দশটা জ্যোতির্বিজ্ঞানের বই থেকে উচু মানেরই বলবো, এর সাবলীল ব্যাখ্যা এবং ধারাবাহিকতার জন্য। সবশেষে, আমাদের চিরচেনা পৃথিবীর বাইরের বহু দূরের ভয়ঙ্কর সুন্দর সব গল্পে মুগ্ধ হতে চাইলে পড়ে ফেলুন চমৎকার এই বইটা। পুনশ্চ: প্রচ্ছদটা জোস!
Was this review helpful to you?
or
আমার কাছে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং লেগেছে মৃত নক্ষত্রদের ঘিরে প্ল্যানেটারি সিস্টেম অস্তিত্ব থাকার বিষয়টি। নক্ষত্রখেকো মিলিসেকেন্ড পালসারদের জন্মের গল্পটাও অসাধারণ। বাংলায় এমন বই আরও থাকা প্রয়োজন।
Was this review helpful to you?
or
Twinkle, twinkle, little star, How I wonder what you are! Up above the world so high, Like a diamond in the sky. ছোটোবেলায় গুনগুনিয়ে আবৃতি করা সেই ছড়াটিই যেন বলে দেয় অসীম আকাশে উদীয়মান নক্ষত্রবীথি আর গ্রহরাজি নিয়ে মানুষের আগ্রহ ঠিক কতখানি! সেই আগ্রহ থেকেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বিজ্ঞানীরা নেমে পড়েছেন গবেষণায়। দূর আকাশের বিশালতার মাঝে হীরার মত জাজ্বল্যমান সব নক্ষত্রদের গতিবিধি পর্ববেক্ষন করেছেন, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি দাঁড় করিয়ে জন্ম দিয়েছেন ‘প্লানেটারি সায়েন্স’ নামে জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক অনবদ্য শাখা। এক্সোপ্লানেট কি? সোজা ভাষায় বলতে গেলে সৌরজগতে আমাদের প্রতিবেশি গ্রহগুলো পেরিয়ে আরো অনেক অনেক আলোকবর্ষ দূরে যেসব নক্ষত্রদের অবস্থান-সেগুলোর গ্রহদের সাধারন নাম-এক্সোপ্লানেট। দূরবর্তী এই নক্ষত্র আর গ্রহদের গতিবিধি আর গঠনপ্রণালী পর্যবেক্ষন করা মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। কঠিন কঠিন সব বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সূক্ষ্ণানাতিসূক্ষ্ণ পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এক্সোপ্লানেটদের বৈশিষ্ঠ্য উন্মোচন করেছেন। প্রখ্যাত ব্রিটিশ জ্যোতিপদার্থবিদ এলিজাবেথ টাস্কারের ‘দ্য প্লানেট ফ্যাক্টরি’ অবলম্বনে সহকর্মী ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরি রচিত ‘এক্সোপ্লানেট’ বইটিতে এসব জটিল বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াগুলোর বর্ণনা সাবলীল ভাষায় সাধারণ পাঠকের উপযোগী করে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে আবিষ্কৃত রেডিয়াল ভেলোসিটি টেকনিক ও ট্রানজিট পদ্ধতির মত জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানের জটিল সব তত্ত্ব আর বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার বর্ননা দেয়া হয়েছে সাবলীল ভাষায়। বইটিতে আরো রয়েছে ধুলো আর গ্যাস থেকে জন্ম নেয়া গ্রহদের জন্মরহস্য, বিভিন্ন গবেষণায় উন্মোচিত হওয়া এক্সোপ্লানেটদের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ঠ্য। রয়েছে ব্যাখ্যাতীত গ্যাসদানব ও মৃত নক্ষত্রদের অদ্ভুত সব গল্প। এক কথায় বলতে গেলে, ড্রয়িংরুমে বসেই মহাকাশচারী হওয়ার সুযোগ করে দেবে ‘এক্সোপ্লানেট’ বইটি নিঃসন্দেহে!
Was this review helpful to you?
or
Happy Reading?
Was this review helpful to you?
or
?
Was this review helpful to you?
or
এক্সোপ্ল্যানেট নিয়ে লেখা এখন পর্যন্ত সেরা বই। লেখন অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল ভাবে মহাকাশের বিভিন্ন নক্ষত্র ও প্ল্যানেটের জন্মরহস্য তুলে ধরেছেন। মহাকাশ নিয়ে যাদের জানার খুব আগ্রহ তাদের জন্যে বইটি খুবই উপভোগ্য হবে।
Was this review helpful to you?
or
চোখের সামনে যেন সৌরজগতের জন্মদৃশ্য মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে মানুষই কি একা? পৃথিবী কি একমাত্র গ্রহ, যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে? এসব প্রশ্ন বহুদিনের। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে মহাবিশ্বে নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করেছে। গ্রহ হিসেবে পৃথিবী বেশ ছোট। ব্যাস প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কিলোমিটার। এটাই আমাদের জন্ম ও বসবাসের গ্রহ। মহাবিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর আকার ভীষণ ছোট। রাতের আকাশজুড়ে মিটিমিটি আলো হয়ে জ্বলতে দেখা যায় আরও লাখো নক্ষত্র। সেগুলো রয়েছে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে। আমাদের সূর্যের মতো সেসব নক্ষত্রের চারপাশেও কি গ্রহ আছে? এ প্রশ্নের উত্তর মিলেছে গত শতকে। শুধু সূর্যের চারপাশে নয়, বরং দূরের নক্ষত্রের চারপাশেও ঘুরছে গ্রহ। এগুলোকে বলা হয় এক্সোপ্ল্যানেট বা বহিঃসৌরগ্রহ। বিজ্ঞানীরা দুরবিনে চোখ রেখে দিনের পর দিন ক্ষুদ্র আলোর তরঙ্গ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এগুলোর অস্তিত্ব শনাক্ত করেছেন। সেই রহস্যময় জগতের গল্প উঠে এসেছে ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরীর এক্সোপ্ল্যানেট: বহিঃসৌরগ্রহের খোঁজে বইটিতে। মূলত তিনটি ভাগে এ বইয়ের আলোচনা সাজানো হয়েছে। শুরুতে এসেছে এক্সোপ্ল্যানেট কীভাবে আবিষ্কৃত হয়। এরপরের ভাগে বলা হয়েছে গ্রহের জন্ম কীভাবে হয়। গত শতকে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছিল ‘অ্যালেন ডে’ নামে এক উল্কা বা মহাজাগতিক পাথর। সেই পাথরের তেজস্ক্রিয় উপাদানগুলো কী হারে ক্ষয় হচ্ছে, তা পরিমাপ করে বিজ্ঞানীরা দেখলেন, পাথরটির বয়স কম করে হলেও ৪৫৬ কোটি বছর। এভাবে পৃথিবীর বয়স সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কীভাবে তৈরি হয়েছিল পৃথিবী? এর উত্তরও মিলবে বইয়ের আরও কিছু পাতা ওলটালেই। ধুলোমেঘের প্ল্যানেটারি ডিস্ক থেকে কীভাবে গ্রহের জন্ম হলো, একটু একটু করে জানা যাবে সে গল্প। অনেকটা গল্পের ছলে মহাজগতের জটিল এক প্রক্রিয়ার চমৎকার বৈজ্ঞানিক বর্ণনা দিয়েছেন লেখক। পড়তে পড়তে চোখের সামনে যেন সৌরজগতের জন্মদৃশ্য ভেসে ওঠে। আমরা জানতে পারি, এই সৌরজগতের বুধ থেকে মঙ্গলের কক্ষপথে ৩০ থেকে ৫০টি গ্যাসীয় ভ্রূণ তৈরি হয়েছিল। বৃহস্পতি ও শনির মতো গ্যাসদানবের টানে সংঘর্ষে জড়িয়ে সেগুলো চারটি পাথুরে গ্রহে পরিণত হয়। এই চার গ্রহই আজকের বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল। পাথুরে গ্রহের জন্মের ঘটনা জানার পর এবার জানা যাবে গ্যাসদানবগুলোর কীভাবে সৃষ্টি হয় মহাকাশে। মহাকাশ ছেড়ে এবার পৃথিবীতে নামা যাক। ভয়ংকর উত্তপ্ত টালমাটাল থাকা পৃথিবীতে পানি কোথা থেকে এসেছিল, তা নিয়ে দুটি চমৎকার তত্ত্ব বর্ণনা করেছেন লেখক। এভাবে দ্বিতীয় অধ্যায় শেষে পাঠক প্রবেশ করবেন বিপজ্জনক গ্রহদের রাজ্যে। পরের অধ্যয়গুলোয় জানা যায়, সৌরজগৎ কেন মহাবিশ্বের মধ্যে অদ্ভুত এক জায়গা, বহিঃসৌরগ্রহগুলো কেন হট জুপিটার থেকে সুপার আর্থে পরিণত হয়, নক্ষত্রকে ঘিরে গ্রহের জীবনযাপনের স্বরূপটা আসলে কী? পড়া শুরু করলে পাঠক কখন যে নিজেকে আবিষ্কার করবেন বইয়ের শেষ পাতায়, বলা কঠিন। মহাকাশের গ্রহ–নক্ষত্রের ভিড়ে ভ্রমণ করতে করতে মনে জেগে ওঠা অনেক প্রশ্নের উত্তরও পেয়ে যাবেন। তবে ঘোর লাগা সেই তৃপ্ত মনে তখন আবার তৈরি হবে নতুন প্রশ্ন। বিজ্ঞানের মজাটা এখানেই। কৌতূহল কখনো শেষ হয় না। প্রশ্ন চলতে থাকে, আসে নতুন উত্তর। এক্সোপ্ল্যানেট: বহিঃসৌরজগতের খোঁজে লেখা হয়েছে ২০১৭ সালে প্রকাশিত এলিজাবেথ টাস্কারের দ্য প্ল্যানেট ফ্যাক্টরি বইকে উপজীব্য করে। এখানে লেখক ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরী মুনশিয়ানা দেখিছেন। গ্রহ–নক্ষত্রের জীবনরহস্য, দীর্ঘ গবেষণার গল্প, গবেষণার তত্ত্ব খুব সহজ–সরল ভাষায় বর্ণনা করেছেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। যুক্ত করেছেন দেশীয় প্রেক্ষাপটের নানা উদাহরণ এবং সবশেষ তথ্য, যা বইটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। এ বই কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমায় বাঁধা নয়। ছোট–বড় সবাই–ই পড়ে আনন্দ পাবেন। এ জন্য আগে থেকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনারও দরকার নেই। বইটি সবার কাছেই বোধগম্য হবে। তবে এ কাজ করতে গিয়ে বিজ্ঞানের কিছু বিষয়কে অতি সরলীকরণ করা হয়েছে। সিরিয়াস বিজ্ঞানপাঠকদের জন্য এটা পীড়াদায়ক হতে পারে। এ ছাড়া বইটি নিয়ে সত্যিকার অর্থে তেমন কোনো ত্রুটি নেই। অবশ্য এটি যে বিজ্ঞানগল্পের বই, সে কথা লেখক শুরতেই তাঁর ভূমিকায় খোলাসা করেছেন। তাই এখানে সমীকরণের জটিল বিজ্ঞান খোঁজার চেষ্টা না করাই ভালো। বইয়ের রিভিউটি প্রথম আলো পত্রিকার অন্য আলো পাতায় ছাপা হয়েছিল ০১ নভেম্বর, ২০২৪। লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল মাকসুদ।
Was this review helpful to you?
or
খুব সম্ভবত এক্সোপ্ল্যানেট নিয়ে বাংলা ভাষায় লেখা একমাত্র বই। দারুন উপভোগ্য।