User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
এটি একট কপি পেস্ট রিভিউ:: লেখার লিংক লেখার নিচে। আমার একজন আত্মীয় কলেজের ছাত্র। সে নাকি সম্প্রতি এক লাখ ২০ হাজার ইয়েন দিয়ে একটি কঙ্কাল কিনেছে গবেষণার কাজে সহায়ক হবে বলে। কথাটা শুনে আমার কেন যেন ভালো লাগছিল না। পরে জানা গেল, কঙ্কালটি এক বাঙালি মহিলার, যেমনটি আমি দুশ্চিন্তা করেছিলাম। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ২০ বছরের মতো। ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় নয় মাস বাংলাদেশে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর হাতে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। দুই কোটি মানুষ হয়েছিল গৃহহারা। এই ছোট্ট দেশের অধিকাংশ এলাকা পরিণত হয়েছিল ধ্বংসস্তূপে। আমি আমার দায়িত্বের অংশ হিসেবে ঢাকায় এবং না না জানা এক ছোট্ট গ্রামে মোট ৪০০টি মৃতদেহ যথাস্থানে পৌঁছানোর কাজ করেছিলাম। তাদের উপর নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। নোয়াখালী জেলা শহরের মাইজদী কোর্টে ছিল রেডক্রস হাসপাতাল। হাসপাতালটি বিদ্রোহী গেরিলাদের চিকিৎসা করেছে বলে অভিযোগ এনে পাকিস্তানি সেনারা ১৯৭১ সালের ১৯ আগস্ট ডাক্তার, নার্স ও রোগীদের মোট ৫৯ জনকে গুলি করে হত্যা করে। ডিসেম্বরে মুক্তিবাহিনী এই হাসপাতালকে মুক্ত করার পর আমি সেখানে গিয়ে দেখলাম, এখানে-সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে মানুষের হাড়। তাতে ছড়িয়ে রয়েছে মানুষের হাড়। তাতে জড়িয়ে আছে ওদের বাঁধার জন্য ব্যবহৃত দড়ির সঙ্গে হাতের বালা ও ফুলের নকশা করা শাড়ির টুকরো। যুদ্ধের অবসানের পরপরই ঢাকার একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের মাটি খুঁড়ে ১২ থেকে ১৭ বছরের মেয়েদের ২৫০টি মৃতদেহ উদ্ধার করলাম। যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্দশ ডিভিশনের একটি কোম্পানি বিদ্যালয়টিকে ঘাঁটি করেছিল। মৃতদেহগুলোর একটিকে হাত দিয়ে তুলতে গিয়ে চমকে উঠলাম, তার মুখের চামড়া হঠাৎ খুলে গেল। মুখ থেকে উঠে এল লম্বা চুল। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নয় মাসে দুই লাখ মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়। তাঁদের মধ্যে অনেককে হত্যাও করা হয়। শুনেছি, কঙ্কাল ব্যবসায়ীরা ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে এক হাজার কঙ্কাল জাপানে আমদানি করেছে। আমার আত্বীয় যে কঙ্কালটি কিনেছে, সেটিও সম্ভবত ওইভাবে চলে এসেছে। বাংলাদেশ কি এতই কষ্টে আছে যে কঙ্কাল পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়! এই অংশটুকু একটি বইয়ের লেখার ভূমিকা মাত্র। বইটির নাম ‘চিতো-দুরোতো’। বাংলা করলে দাঁড়ায় অর্থাৎ ‘রক্ত ও কাদা’। এর লেখক তাদামাসা হুকিউরা। জাপানী নাগরিক তাদামাসা হুকিউরা আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের কর্মী হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশটিতে অবস্থান করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ঢাকায় পৌঁছান। ততদিনে বাংলাদেশ সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। হুকিউরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ১৬ই ডিসেম্বরের বিজয় পরবর্তী তৎকালীন বহু ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি এমন অত্যন্ত কম সংখ্যক বিদেশিদের একজন যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বিজয় পরবর্তী পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখেছেন। বাংলাদেশে আট মাস থাকার বিরল অভিজ্ঞতা নিয়েই এই বই। বইটির অনুবাদ করেছেন আরেক জাপানি, কাজুহিরো ওয়াতানাবে। বইটিতে অসংখ্য আগ্রহ উদ্দীপক কথাবার্তা আছে, আছে অনেক ঘটনার বিবরণ। বিদেশি একজনের নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উল্লেখযোগ্য একটি বই রক্ত ও কাদা ১৯৭১। ভয়াবহ একটা অংশ এখানে বলি। লেখক লিখেছেন-'গত ৫ মে (১৯৭২) আমি নেপালের কাঠমান্ডু গিয়েছিলাম। সেখানে অপ্রত্যাশিতভাবে এক ব্যক্তির সংগে দেখা হলো। হাতিয়া দ্বীপের রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার সৈয়দ সেখানে দাঁড়িয়ে। বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে উত্তরে বললো, 'কাঠমান্ডুর পাকিস্তান দূতাবাস থেকে দিনে তিন নেপালি রুপি করে দেয়।' তাদের উদ্দেশ্য জানতে চাইলে উত্তরে সৈয়দ বলল, 'আমাদের লক্ষ্য পূর্ব পাকিস্তানে কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর আদর্শে একটি মুসলিম রাষ্ট্র কায়েম করা। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য আমরা অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবো না। লোভী ভারতের সংগে জোট বেঁধে পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু ও আওয়ামী লীগ আমাদের ওপর যে সামরিক অত্যাচার চালিয়েছিল, আমরা অবশ্যই তার প্রতিশোধ নেব।' এই বলে সৈয়দ কোমরে বাঁধা রিভলবার আমাকে দেখাল। ততক্ষণে আমরা কথা বলছি দেখে সৈয়দের সাত-আটজন সহযোগী আমাদের ঘিরে ধরেছে। তারা সবাই তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আমাকে দেখছিল। ২. চারপাশে তাকিয়ে দেখলে রাজাকার কমান্ডার সৈয়দদের এখনো দেখা যায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। এখন তারা কিন্তু আবার সামনে আসতে চাচ্ছে। আর একারণেই বইটির প্রাসঙ্গিকতা আছে। লেখার লিংক: http://www.amrabondhu.com/masum/4965
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ প্রত্যক্ষকারী বিরল ভিনদেশি নাগরিকদের মধ্যে জাপানের তাদামাসা হুকিউরা একজন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ঢাকায় আসেন। ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ত্রাণ সাহায্য দেওয়ার কাজে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রতিনিধি হিসেবে জাপান সরকার তাঁকে ঢাকায় পাঠায়। নভেম্বরের ওই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লাখ লাখ লোক মারা যায় এবং আরও অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের আশ্চর্য নিস্পৃহতা বাঙালিদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভকে আরও জোরদার করে তোলে। অথচ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ত্রাণ সাহায্য দেওয়ার জন্য তাদের সে তৎপরতাকে অচিরেই চিহ্নিত করা হয় ‘ত্রাণ সাহায্যের অলিম্পিক প্রতিযোগিতা’ নামে। তাদামাসা হুকিউরা আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে অবস্থান করেন আট মাস। যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা নিয়ে জাপানি ভাষায় তিনি লেখেন চি-তো দেরো-তো। বাংলা ভাষায় যার অর্থ রক্ত ও কাদা। ১৯৭৩ সালে জাপানে প্রকাশিত হয় বইটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের একটি বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনা এ বইটি। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসেন হুকিউরা। স্বাভাবিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক সময়গুলো তিনি দেখেননি। তাই সে সময়ে এই ভূখণ্ডে অবস্থানকারী জাপানি কূটনীতিবিদ ও জাপানি পরিবহন জাহাজের কর্মীদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা অন্তর্ভুক্ত করেন রক্ত ও কাদা ১৯৭১ বইতে। মূলত ১২ নভেম্বর ১৯৭০, অর্থাৎ প্রলয়ংকরী সেই ঘূর্ণিঝড়ের দিনটি থেকে আরম্ভ হয় বইটির ঘটনাপ্রবাহ। ছয় মিটারের বেশি উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্রায় নয় ঘণ্টা পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে কোনো কোনো অঞ্চল। ভয়েস অব আমেরিকার তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১০ লাখ লোকের প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অন্যান্য অনেক কারণের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের সাহায্য প্রদানে পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অনীহা। পূর্ব পাকিস্তানে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ১০ মাস পর সেখানে আন্তর্জাতিক রেডক্রসকে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর নিষ্ঠুরতা, তাদের সীমাহীন স্বৈরাচারী মনোভাব, পূর্ব পাকিস্তানিদের সম্পর্কে যথাযথ ধারণা না থাকা ইত্যাদি উঠে এসেছে রক্ত ও কাদা ১৯৭১ বইটিতে। একজন বিদেশি নাগরিক হিসেবে তাদামাসা হুকিউরার বর্ণনায় পক্ষপাত নেই বললেই চলে। নিরপেক্ষ একটি অবস্থান থেকে তিনি বর্ণনা করে গেছেন ঘটমান সময়প্রবাহকে। হুকিউরা বলেছেন, যে সৈন্যরা হাজার হাজার নিরস্ত্র নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করছে, তারা তাদের সম্পর্কে খুব অল্পই জানত, আর যতটুকু তারা জানত তার পুরোটাই প্রায় ভুল। তারা মনে করত, আওয়ামী লীগ ভারতের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে ভারতের অংশ হতে চায়। কেননা, উঁচু পর্যায় থেকে তাদের তেমনই বোঝানো হয়েছিল। মোট পাঁচটি অধ্যায়ে বিভক্ত এ বইটির প্রথম অধ্যায় হলো অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা। ২৬ মার্চের ঘটনার বর্ণনা আছে শাহজাহান ও রফিক নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্রের জবানিতে, যাঁরা তখন হলের দোতলায় অবস্থান করছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের সব আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই নেতৃত্ব দিত তখন। সেই দিন ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনী প্রবেশ করে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের নির্বিচারে হত্যা করে। এমনকি আত্মসমর্পণেরও কোনো সুযোগ তারা দেয়নি। বাংলা বিভাগের ছাত্র রফিক দোতলা থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরবর্তী সময় এই রফিক মুক্তিবাহিনীর হাতিয়া অঞ্চলের কমান্ডার হয়েছিলেন। জাপানের বিভিন্ন ব্যক্তি, যাঁরা ওই সময় পূর্ব পাকিস্তানে ছিলেন, যেমন সাংবাদিক মি. তাকোদা, মি. কে, কনসাল জেনারেল হিগাকি এবং বিভিন্ন বাংলাদেশি প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা রয়েছে প্রথম অধ্যায়ে। দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে হুকিউরা নিজের জবানে লিখেছেন সমস্ত ঘটনা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল পরিভ্রমণের কারণে লেখক একের পর এক তাঁর সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা করেছেন। চট্টগ্রাম, ঢাকা, হাতিয়া বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিরোধ স্থান পেয়েছে তাঁর বর্ণনায়। হাতিয়া হলো বাংলাদেশের প্রথম মুক্ত থানা। হাতিয়া মুক্তির দিন লেখক সেখানেই অবস্থান করছিলেন। রেডক্রসের সদস্য হওয়ার কারণে হুকিউরা মোটামুটি নির্বিঘ্নে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যেমন তাঁর যোগাযোগ ঘটেছে, তেমনি পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। মোট পাঁচটি অধ্যায়ে বিভক্ত রক্ত ও কাদা ১৯৭১ বইটিতে উঠে এসেছে ইতিহাসের অনেক না-জানা তথ্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধের কারণে বিপন্ন মানুষ, যারা যেকোনো পক্ষেরই হতে পারে, তাদের সবাইকে রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায় রেডক্রস। এ কারণে হুকিউরাকে বন্দী রাজাকার ও বিহারিদের প্রাণ বাঁচানোর জন্যও কাজ করতে হয়েছিল। বইটি জাপানি ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন রেডিও জাপান এনএইচকে ওয়ার্ল্ডের বাংলা বিভাগের প্রধান কাজুহিরো ওয়াতানাবে।