User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
আমার পড়া 'অর্জুন' সিরিজের প্রথম উপন্যাস হল 'দেড়দিন'। যারা অর্জুন সম্পর্কে জানেন না তাদেরকে বলছি, অর্জুন হল তেইশ বছর বয়সী এক তরুণ 'সত্যসন্ধানী' যে সব ঘটনা ও রহস্যের অন্তরাল থেকে সত্য উদ্ঘাটন করতে চায় এবং এ কাজে দেশ বিদেশে অ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়ে প্রাণের ঝুঁকি নিতেও পিছপা হয় না। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, বাংলা সাহিত্যে অর্জুন আরও একটি গোয়েন্দা চরিত্র। অর্জুনকে সেরা গোয়েন্দাদের একজন হয়ত বলা যাবে না কিন্তু তবু সমরেশ মজুমদারের লেখনীর মাধ্যমে অর্জুন বেশ শক্তিশালী চরিত্রে পরিণত হয়েছে। এমনকি সাম্প্রতিক সময় অর্জুনের জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়েছে যে ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কাকাবাবুর মত চরিত্রের পর কোলকাতায় অর্জুনকে নিয়েও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। আরও উল্লেখ্য, পশ্চিমবাংলার বড় বড় গোয়েন্দা চরিত্র স্রষ্টাদের মধ্যে এখন কেবল অর্জুনের স্রষ্টা সমরেশ মজুমদারই বেঁচে আছে, তাই অর্জুন এখনো নিয়মিত সত্যানুসন্ধান করে যাচ্ছে! 'অর্জুন' সিরিজটি অনেকটা ফেলুদা বা সন্তু-কাকাবাবু সিরিজের মতই কিশোর উপযোগি, ব্যোমকেশের মত প্রাপ্তমনস্কদের জন্য রচিত নয়। 'দেড়দিন' উপন্যাসে দেখা যাবে, অর্জুন জগুদার কাছ থেকে জানতে পারল এক অদ্ভুত ঘটনা সম্পর্কে। স্থানীয় গরিব লোকেরা সবাই এক আধ ভরি করে সোনা নিয়ে ব্যাংকে বন্ধক রাখছে। আপাত দৃষ্টিতে ব্যাপারটা খুব বেশি কৌতূহলোদ্দীপক নয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, হঠাৎ করে ঐ গরিব লোকেরা সবাই-ই অল্পবিস্তর সোনা পাচ্ছে কই আর সেগুলো এক যোগে বন্ধক রাখছে কেন? অর্জুন এর পেছনে অন্য কোন গূঢ় রহস্যের আঁচ পেল। বুঝতে পারল এটা হয়ত কোন সোনা চোরাচালানকারী বড় চক্রের কাজ। তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজে লাগাচ্ছে গরিব মানুষদের। কিন্তু এই রহস্য সমাধানের সৌভাগ্য হল না অর্জুনের কেননা কেউ তাকে এই কেসের জন্য ডাকে নি। বরং অমলদার থেকে সে পেল এক নিরামিষ কাজের অফার। দিল্লী থেকে আসা চার তরুণীর গাইডের ভূমিকা নিতে হবে তাকে! অর্জুন বাধ্য হল এই কাজে। কিন্তু এই কাজে এসেও সে কিছু অস্বাভাবিক জিনিস লক্ষ্য করল। মিস্টার ভার্মা নামের এক লোক আর তার ট্যাকস্যার দেখা পাচ্ছে অর্জুন, তারা যেখানেই যাচ্ছে সেখানেই। তারমানে কি মিস্টার ভার্মা তাদের অনুসরণ করছে? অর্জুন জানতে পারল সে যাদের গাইড হয়ে এসেছে তাদের মধ্যে নন্দিনী নামের মেয়েটা চেনে ভার্মাকে, রিসেন্টলি তার বাবার সাথে বিরোধ হয়েছে ভার্মার। অর্জুন বিপদের গন্ধ পেয়ে মেয়েদের নিয়ে পালানোর চেষ্টা করল। এরই ফাঁকে সে সরাসরি দেখা পেল সোনা চোরাচালানকারী চক্রের সাথে জড়িত দুই লোকের। আবার নতুন গেস্ট হাউজে গিয়ে দেখা মিলল আরেক রহস্যময় চরিত্র মিস্টার পুরীর যে এরপর থেকে ভার্মার মতই তাদের অনুসরণ করতে লাগল। মেয়েরা জঙ্গলে গিয়ে দেখা পেল এক লোমশ প্রানীর। সেখানে আরও পাওয়া গেল এক লোকের মৃতদেহ যে শহরে সোনা বেচতে গিয়ে ফেরার পথে খুন হয়েছে। গেস্ট হাউজে ফিরে অর্জুন জানতে পারল, মিস্টার ভার্মা যে মহিলাকে মিসেস ভার্মা হিসেবে নিয়ে ঘুরছেন, সে আদৌ মিসেস ভার্মা নন। এক সাথে ঘটে যাওয়া এই সব ঘটনা মেলাতে বসল অর্জুন। সব অংক মিলিয়ে সমাধানে এসে অর্জুন খুঁজে পেল সোনা চোরাচালান রহস্যের সমাধানও। এবার সম্মুখ লড়াইয়ে নেমে অর্জুনকে ধরতে হবে আসল অপরাধীদের, যারা এই চক্রের মূল হোতা। পারবে কি অর্জুন? তা জানতে হলে পড়তে হবে এই উপন্যাসটি। গোটা কাহিনিই অসাধারণ। খুবই গতিশীল কাহিনী। প্রতি পাতাতেই নতুন কিছু না কিছু হচ্ছে। একেবারে মেদহীন একটা রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাস। তারপরও বলতে বাধ্য হচ্ছি, সমরেশ মজুমদারের লেখায় সেই জাদুটা মিসিং যার ফলে গল্পের বাঁকে বাঁকে টানটান উত্তেজনার সৃষ্টি হবে পাঠক মনে। সুসংগঠিত প্লট হওয়া সত্ত্বেও সেই মানের পরিবেশন গুণের অভাবে ততটা রোমাঞ্চিত আমি হতে পারিনি, যতটা হওয়া উচিৎ এই ধরণের উপন্যাস পড়ে।