User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অচেনা এক দেশের অজানা এক গভীর জঙ্গলে আপনার সাথে আসা গাইড যদি এক পর্যায়ে আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তখন আপনি কি করবেন? যখন দেখবেন আপনার বাহন ল্যান্ডরোভারটাও সে সাথে নিয়ে গেছে যেখানে খাবার পানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা ছিলো তখন আপনি কিভাবে সার্ভাইভ করবেন? যখন দেখবেন সাথে থাকা শর্টগান আর রাইফেলটার গুলি ও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে কিন্তু আশেপাশের হিংস্র জানোয়ার বেড়েই চলেছে তখন আপনি কি করবেন? আপনার শেষ পরিণাম কি হবে? "গুগুনোগুম্বারের দেশে" নামক গল্পে লেখক বুদ্ধদেব গুহ, ঋজু রায়চৌধুরী ও রুদ্র বোস নামের দুই ব্যক্তির এমনি এক লোমহর্ষক এডভেঞ্চারের বর্ণনা দিয়েছেন। আফ্রিকার ঘন জঙ্গলে ওয়াণ্ডারাবো নেম এক পশু শিকারীদের বসবাস আছে যারা অনিয়মে পশু শিকার করে তাদের দাঁত, সিং, চামড়া, পা ইত্যাদি চড়া দামে বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে চোরাচালানে বিক্রি করে। তাদের সম্বন্ধে একটা পেপার সাবমিট করার দায়িত্ব ঋজুদার কাঁধে দেয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি। এই চোরা-শিকারিরা সেরেঙ্গেটির ঘাসবন এ গোরোংগোরো আগ্নেয়গিরির উঁচু পাহাড়ে বসবাস করে। এই কাজের সব খরচ সীসাইটিটিই বহন করছিলো। ঋজুদার এডভেঞ্চার সঙ্গী হলো রুদ্র। আফ্রিকার এই ঘন জঙ্গলে গাইড ছাড়া যাওয়াটা বড়ই বোকামি হবে ভেবে ঋজুদা ভুষুণ্ডা নামে এক স্থানীয় লোককে গাইড হিসাবে নেন আর এই এডভেঞ্চারে খাবারের ব্যবস্থার জন্য তাদের সাথে থাকে টেডি মহম্মদ নামে লম্বা একজন ব্যক্তি। গল্পের শুরুতেই সাভানার ঘাসবনে ভুষুণ্ডা পথ হারিয়ে ফেলে এবং সবাই আটকে যায়। কিন্তু ঋজুদার বিচক্ষনতায় সে বারে পথ বের করতে পারে সবাই। ল্যাণ্ড-রোভার গাড়িটা রুদ্র চালাচ্ছিলো কিন্তু কিছু দূর যাবার পরে হঠাৎ ঋজুদা তাকে থামতে বলে। মারিয়াবো পাহাড়শ্রেণীর থেকে তখনো তাড়া মাইল দশেক দূরে। পাহাড় থেকে ঘন ধোয়া বেরুতে দেখা গেলো। সেখানে হয়তো কোনো জনমানব থাকতে পারে অথবা তা শত্রুর আস্তানাও হতে পারে আর পাশাপাশি সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় সেখানেই তাবু খাটিয়ে রাত পার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রাতে যেনো কোনো বিপদের সম্মুখীন হতে না হয় সে জন্য রাতে পালা করে পাহারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রাতের বারোটা পর্যন্ত রুদ্র জেগে পাহারা দেবে আর বাকি সময়টা ঋজুদা জাগবে। রাতে কোন সমস্যা না হলে সকালের নাস্তা শেষে পাহাড়ের দিকে রওয়ানা হবে তারা। কিন্তু রাত বারোটার মধ্যেই হঠাৎ রুদ্র লক্ষ্য করলো পাহাড়ের দিক থেকে কেউ একজন তার দিকে এগিয়ে আসছে। লম্বায় সাত ফিটের মতো হাতে একটা লম্বা লাঠি ও কোমরে একটা দাঁ। লোকটাকে কাছাকাছি আসতে দেখে রুদ্র ভয়ে তার দিকে বন্দুক তাক করে, কিন্তু লোকটা এতোটাই সহযে রুদ্রের বন্দুকের নল ধরে তা ঘুরিয়ে ফেলে ভয়ে রুদ্র গুলি চালিয়ে দিলে ঋজুদা ঘুম ভেঙে ছুটে আসে। ঋজুদা জানায় এই লোকটা আসলে মাসাই সর্দার যার নাম নাইরোবি। পরদিন স্কাএ সর্দারের সাথেই তারা পাহড়ের দিকে যায়। টেডি মাসাই লোকদের সাথে গিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করে আনে। মসাই সর্দার তাদের রাস্তা বলে দিলে ঋজুদা ও বাকিরা মিলে সেই পথেই যাত্রা শুরু করে। যখনি তারা ওয়াণ্ডারাবোদের ঘাটিতে পৌঁছে ভুষুণ্ডা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ঋজুদা ও রুদ্রকে প্রায় মৃত্যুর মুখেই দিগন্তহীন, পথচিহ্নহীন সেরেঙ্গেটি প্লেইন্স- এর মধ্যে পরিত্যাগ ও টেডির খুন করে ল্যাণ্ড-রোভার এবং গোলাবারুদ সব কিছু নিয়ে পালিয়ে যায়। ঋজুদা আর রুদ্র কি বেঁচে ফিরতে পেরেছিল সেই ঘন অচেনা ভয়ানক আফ্রিকান জঙ্গল থেকে? কেনোইবা ভুষুণ্ডা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো? ওয়াণ্ডারাবোদের শেষ পরিণতি কী হয়েছিল? জানতে হলে পড়তে হবে বুদ্ধদেব গুহ রচিত গুগুনোগুম্বারের দেশে গল্পটি। প্রতিক্রিয়াঃ বুদ্ধদেব গুহ'র সাথে আমার প্রথম পরিচয় এই বইটি দিয়েই। এর আগে তার মাধুকরী বইটা উপহার পেয়েছিলাম, কিন্তু সময় পাইনি পড়ার। ঋজুদা মূলত ছোটদের গোয়েন্দা কাহিনী জনরার বই। কিন্তু লেখার ধরণ আর প্লট এতোটাই সুন্দর যে প্রাপ্তবয়স্ক কেউও যদি এই বই পড়ে তাহলে সমান মজাই পাবে। তাছাড়া এডভেঞ্চারের বই হওয়ায় অনেক অনেক নতুন জিনিস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে বইটি থেকে। আফ্রিকার জঙ্গলের এমন সব প্রাণীর সম্পর্কে জেনেছি যা কোনোদিন নাম ও জানা ছিলো না। এডভেঞ্চার ও রোমাঞ্চে ভরপুর বইটা পড়তে পড়তে হারিয়ে যাচ্ছিলাম আফ্রিকার সেই ঘন জঙ্গলে। অসম্ভব সুন্দর একটা বই পড়লাম। আপনি পড়ে না থাকলে এখনি পড়ে ফেলুন। আর ডুবে যান আফ্রিকার জঙ্গলের এডভেঞ্চারে। পড়তে থাকুন, ধন্যবাদ।