User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
সুনীলের লেখালেখির প্রথম দিককার আত্মজীবনীমূলক ও ভ্রমণ বিষয়ক উপন্যাস ছবির দেশে কবিতার দেশে বিস্তৃত হয়েছে লেখক সুনীলের ফ্রান্সসহ বিদেশ ভ্রমনের কথা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা যুবক সুনীল তখন বেকার, বাংলা পত্রিকায় টুকটাক লিখে কিছু কামাই হত সেসময়। হঠাত আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক পল এঙ্গেলের মারফতে আমেরিকার আয়ওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়েটিভ রাইটিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করতে সুদূর ভিনদেশে পাড়ি জমায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। প্রথমে সুদূর আমেরিকায় শুরু হয় প্রবাস জীবন। ভিন্ন এক দেশের জীবনের সাথে খাপ খাওয়াতেই সেখানে পরিচিত হয় ভীষন কাব্যপ্রেমী মেয়ে মার্গারেট ম্যাতিউর সঙ্গে। এলোচুলো স্বর্ণকেশী বন্ধুর সাহচর্যে ফরাসি দেশের বিখ্যাত কবিদের কবিতা পড়াসহ অনুবাদ করে তারা, সেখানেই সোনালি দুঃখ বইয়ের কাহিনিপট আঁকেন সুনীল। দীর্ঘদিন বন্ধুত্ব,পরিচয়ের ও অন্তরঙ্গতার সুবাদে আমেরিকা থেকে ফ্রান্সে যায় তারা, উদ্দ্যেশ্য ছিল কিছুদিন থিতু হওয়া ও ফরাসি দেশকে গভীরভাবে জানা। ফরাসি দেশ থেকে বিদায় কালে প্যারিসের লুভর মিউজিয়াম ভ্রমণের অভিজ্ঞতার চমৎকার বিবরণ দিয়ে গেছে লেখক। এরপর দেশে ফিরে আসার বছর খানেক বাদে আবারো ফরাসি দেশের উদ্দ্যেশে সস্ত্রীক পাড়ি জমান, সঙ্গে যায় তার কয়েকজন বন্ধু। যাত্রায় মার্গারেটের স্মৃতি কাতর করে তাকে। পরবর্তীতে ফরাসি দেশের পূর্ব অভিজ্ঞতায় মোহাচ্ছন্ন হয়ে পাঁচ পাঁচবার ভ্রমণ করেন তিনি। ভ্রমণ কাহিনীটি অনেক গুলো সংখ্যক অধ্যায়ে বিভক্ত বলা চলে। অধ্যায় গুলোর শুরুতে চমৎকার করে সুনীল বিখ্যাত কবিদের কবিতা দিয়ে জুড়ে দিয়েছে যা ভীষণ সুন্দর। এরমধ্যে বিশেষ করে কবি বদলেয়ার, আপোলিনেয়ার, মিসো উল্লেখযোগ্য। ফরাসি দেশের কাব্য সাহিত্য ও ঐতিহ্যের পাশাপাশি বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের বিখ্যাত চিত্রকর্ম দেখার সৌভাগ্যের বিশদ বর্ননা দিয়ে গেছেন তিনি। বিশেষ করে দেগা, মোনে, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি,পিকাসোর মত খ্যাতিমান চিত্রকরের শিল্পকর্মের পেছনে তাদের জীবনের কষ্টকর অধ্যায় নিয়ে বেশ গভীর আলোচনা রয়েছে। বন্ধু ভাস্কর,অসীমের সাথে নানা তীর্থস্থান দর্শন, মাঝরাত্তিরে সমুদ্রের উন্মত্ত ঢেউ, লোয়ার নদীর নীল জলের সৌন্দর্য উপভোগের দৃশ্য উঠে এসেছে বইয়ে। এছাড়াও ফরাসি দেশের রাজপ্রাসাদের বিশালতা, দুর্গের ইতিহাস,বার্নার্ড শ র লেখা জোন অব আর্ক নিয়েও নানাবহুল তথ্য সমৃদ্ধ বিবরণ উঠে এসেছে। প্রচুর সংখ্যক স্মৃতির ভিড়ে আমেরিকার বিটবংশ, গ্রিনিচ গ্রামের কবি, প্রতিবেশী ক্রিস্তফ, এলেন গিন্সবার্গেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে স্মৃতির ভাঁজে ভাঁজে। বইয়ের সবচেয়ে আবেগের দিক ফ্রান্সের লুদা গ্রামের সেই মার্গারেট মেয়েটি। হারিয়ে যাওয়া মার্গারেটের স্মৃতিকাতরতায় সুনীল পুরো বই জুড়ে আলতো করে তার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। এ প্রসঙ্গে সুনীলের কয়েকটি লাইন সকল পাঠককে টাচ করবে "মার্গারেটের কাছ থেকে আমি কত দূরে সরে এসেছি! আমার বয়স বেড়েছে কিন্তু মার্গারেটের বয়েস একটুও বাড়েনি।" ( এই অংশুটুকু বুঝতে বইটি পাঠক কে পড়তে হবে ) সুনীল বন্ধু মার্গারেটের বিদায় বেলার প্রসঙ্গে বলেন "মার্গারেটের সেই কান্না ভেজানো মুখ, যেন জঙ্গলের কোনো গাছের না ছেঁড়া, শিশির মাখানো শুভ্র ফুল।" বইয়ের আরেকটি চমৎকার দিক, এই বইয়ে উপন্যাস লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কে দেখা যায় ভিন্ন এক রূপে।গদ্য লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখার ভক্ত হওয়ার পাশাপাশি বইয়ে চমৎকাররূপে পেয়েছি কবি সুনীলকে। কাব্য,সাহিত্য,ছন্দ ও ভ্রমণের সন্নিবেশে পায়ে হেঁটে যেন ফ্রান্স ভ্রমণের স্বাদ পেয়ে গেলাম সুনীলের এক টুকরো আত্মজীবনীমূলক বইয়ের পাতায় পাতায় । শেষ অবধি পড়ে মনে হচ্ছিল এমন এক নদীতে ডুব দিয়ে এলাম যেখানে একই সাথে সুনীলের এক ছটাক জীবনবৃত্তান্ত, শিল্প সাহিত্যের মাঝে সঞ্চরণ আর পৃথিবীর অন্যতম সেরা স্থানগুলোয় আকস্মিক এক সফর সেরে এলাম। সুনীলের লেখার গভীরতার প্রেমে পড়তে যে কেউ বাধ্য, সেই সাথে ফ্রান্স ছাড়াও বিভিন্ন দেশের ইতিহাস ও ঘটনা সম্বলিত প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে জানার মত অনেক কিছু। জ্ঞান গরিমা কে ছাপিয়ে ফরাসি দেশের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে গড়ে ওঠা কাব্য সাহিত্যের সৃষ্টিশীল অধ্যায় সুনীলের ছবির দেশে কবিতার দেশে যেন এক কথায় এক অনবদ্য সৃষ্টি।
Was this review helpful to you?
or
Valo
Was this review helpful to you?
or
Simply awesome
Was this review helpful to you?
or
অরিজিনাল প্রিন্ট
Was this review helpful to you?
or
একজন নিতান্তই ভবঘুরে কবি। খানিকটা ভাগ্যের ফেরেই পাশ্চাত্যের এক সাহিত্য অনুরাগীর কল্যানে গেলেন আমেরিকা৷ সেখানে কাব্যচর্চা আর আড্ডার মধ্য দিয়ে অলস জীবন অতিবাহিত করতে থাকেন। এরই মাঝে একজন পরিচয় ঘটে লালচে চুলের কবিতা প্রেমী ফরাসি তরুণী মার্গারিটের সাথে।তার সানিধ্য পেতেই আমেরিকার মায়া ত্যাগ করে প্রথমবারের মতো পাড়ি জমান শিল্পী-সাহিত্যিকদের পুণ্যভূমি ফ্রান্সে। স্বাদগ্রহণ করেন কালজয়ী অনেক শিল্প কর্মের।এরপর আরো বেশ কয়েকবার স্ত্রী অথবা বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে ভ্রমণে যান অনিন্দ্যসুন্দর এই দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে। সেই সব অভিজ্ঞতাই বর্ণিত হয়েছে সুনীলের " ছবির দেশে কবিতার দেশে " ভ্রমণকাহিনীটিতে। সুনীলের সাহিত্যের পথে পথচলা থেকে শুুরু করে ব্যাক্তিজীবনের বেশ কিছু দিক সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায় এই বইটি থেকে। ভ্রমণের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তিনি এখানে এদগার দ্যগা, মোনে, মানে, বোদলেয়ার, রেনোয়া, পল সেজান, কামিল পিসারোর মতো বিভিন্ন প্রখ্যাত ফরাসি শিল্পী-সাহিত্যিকদের কাজ গুলোকে বিশ্লেষণ করেছেন এবং তাঁদের জীবন বিষয়ক নানা ঘটনা ব্যাখ্যা করেছেন। সেই সাথে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন ইম্প্রেশনিস্ট আন্দোলনের নানা দিক,আর বার বার ব্যাক্ত করেছেন প্রিয় বান্ধবী মার্গরিটের প্রতি তার হৃদয়গ্রাহী অনুভূতি। প্রতি পরিচ্ছেদের শুরুতে তার অনুদিত কবিতাংশগুলোও ছিলো মনোমুগ্ধকর। এককথায় অসাধারণ একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
প্রচণ্ড আফসোস করছি, কেন এই বইটা আরো দশ বছর আগে পড়িনি। সুনীলের বেশ কয়েক ধরণের লেখা পড়েছি, কিন্তু ছবির দেশে কবিতার দেশে বইয়ে উনার যে পরিচয় পেলাম, সেটা অসামান্য। পুরো লেখায় আমার চোখের সামনে সুনীলের জীবনের খণ্ডচিত্র ভেসে আসছিল। মার্গারিটকে মনে করে আমার মনও আন্দোলিত হচ্ছিল প্রায়ই। ভ্রমণ আর জীবনের গল্প বলার ফাঁকে সুনীল তার চেতনা আর জীবনের গভীরতম বোধগুলোও তুলে এনেছেন প্রায়ই। ব্যাপারটা সত্যিই অসামান্য। নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই বই সুনীলের অন্যতম প্রধান মাস্টারপিস।
Was this review helpful to you?
or
চার তারা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু প্রতিটি অধ্যায়ে লেপ্টে থাকা অসাধারণ অনূদিত কবিতাগুলাে তা আর হতে দিলাে কই! তাই পাঁচ তারাই সই। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই ভ্রমণকাহিনী/আত্নজীবনী জুড়ে মার্গারিট মাতিউর প্রসঙ্গ এমন বিষন্নভাবে জড়িয়ে ছিল যে তা যেন পাঠককে ভিন্ন ভিন্ন গল্পের মধ্যের একটি সাধারণ ভিত্তি খুঁজে পাবার স্বস্তি দেয়; মার্গারিট প্রসঙ্গই বইটির। ভিন্ন ভিন্ন কাহিনীর সুতাে একত্রে জুড়ে দিয়েছে। চমৎকার লেগেছে।
Was this review helpful to you?
or
নাম না বলে দিলেও বুঝতে অসুবিধে হবার কথা নয় যে, এ-ভ্ৰমণকাহিনী ফরাসীদেশকে কেন্দ্র করে। কে যেন একবার বলেছিলেন, প্রত্যেক শিল্পীরই দুটি মাতৃভূমি। একটি, যেখানে যে জন্মেছে; অন্যটি হল, ফ্রান্স। শিল্পী বলতে এখানে শুধুই চিত্রকরদের কথা বলা হয়নি, কবিরাও নিশ্চিত এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, এই ফরাসিদেশেই যেমন ছিলেন দেগা, মোনে, মানে, রেনোয়া, গগ্যাঁ, মাতিস, রুয়ো কি পিকাসোর মতন মহান শিল্পীরা। তেমনি এই দেশ র্যাবো, ভের্লেন, বদলেয়ার, মালার্মে ভালেরি, অ্যাপোলিনিয়ার আর আঁরি মিসোর মতন কবিদেরও। ফরাসীদেশই তাই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার আত্মার বর্ণনায় এসে যেতে বাধ্য, ছবির দেশ ও কবিতার দেশ। কবি ও শিল্পীদের এই অমরাবতীতে একবার নয়, বারবার গিয়েছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তার পাঁচবারের ভ্ৰমণ-অভিজ্ঞতা মিলিয়ে এই বই। সাধারণ ভ্ৰমণকাহিনীর থেকে এ-রচনার স্বাদ একেবারে আলাদা। নিছক ঘোরাফেরা আর দেখাশোনার মামুলী বৃত্তান্ত নয় এই বই। পুরো ফরাসীদেশটাকেই যেন খুঁড়ে-খুঁড়ে দেখা। তার শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ঐতিহ্যের মধ্যে বিচরণ। শুধু এই শতকেই নয়, গত শতকেও। বিশেষ করে সেই সময়ে, যখন চিত্রশিল্পী ও কবিরা পারস্পরিক ঘনিষ্টতার মধ্য দিয়ে জড়িয়ে পড়ছেন নানান সৃষ্টিশীল আন্দোলনে। স্বাভাবিকভাবেই এ-ভ্রমণকাহিনীতে এসে পড়েছে মার্গারিট নামে সেই ফরাসী বান্ধবীটির কথাও, প্রথমবার আমেরিকা-প্রবাসকালে যার সাহচর্য ফরাসীদেশকে গভীরভাবে জানতে সাহায্য করেছিল। মার্গারিটকে নিয়ে বহু গল্প-উপন্যাস লিখেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কিন্তু এই প্রথম মার্গারিটের সঙ্গে তাঁর গভীর অন্তরঙ্গতার আনুপূর্ব কাহিনী অকপটে বর্ণনা করলেন তিনি। এই ভ্ৰমণকাহিনীতে তাই টুকরো আত্মজীবনীরও স্বাদ। আর মাগারেটের সূত্রেই এই ভ্ৰমণকাহিনীতে এসেছে আমেরিকার বিটবংশ ও গ্রিনিচ গ্রামের কবিদের সঙ্গে তুমুল আড়ার স্মৃতি।
Was this review helpful to you?
or
প্রিয় বই
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ। প্রিয় একটা বই। রেকমন্ডেড।
Was this review helpful to you?
or
ভ্রমণ প্রিয় বই মজার একটা বই জানা শুনা অনেক কিছু আছে
Was this review helpful to you?
or
এই বইটা দেখলেই যে নামটা মনে আসে আর যার নির্মম মৃত্যুর জন্য ঈশ্বরকে দোষী করতে ইচ্ছা করে সে নামটা মার্গারিট। মানুষকে কি সরল মনে বিশ্বাস করা ভূল যেমনটা করেছিলো মার্গারিট..?? এমন নির্মম পরিণতি কি কোনওভাবে তার প্রাপ্য হয়...??
Was this review helpful to you?
or
'যে শিশু মানচিত্র ও প্রতিলিপি ভালোবাসে তার কাছে এই বিশ্ব তার ক্ষুধার মতই প্রকান্ড ওহ, প্রদীপের আলোয় কতই না বিশাল এই পৃথিবী স্মৃতির চোখে এই পৃথিবী কতই না ছোট!' শুরু করলাম 'চার্লস বেদলোয়া'র লেখা কবিতার কটা লাইন দিয়ে, নাহ কবিতা আমার পড়া হয়নি। সুনীলের অনুবাদে কবিতার এটুকু পড়লাম 'ছবির দেশে কবিতার দেশে' বইয়ে। আসলে ছবি বা পেইন্টিংতো লিখে দু'কথায় বর্ণনা করা সম্ভব না, তাই কবিতা দিয়েই শুরু করতে হল। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে একটা ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি ঔপন্যাসিক নাকি কবি! তার সৃষ্টি যদি পাঠক মনে ছাপিয়ে থাকে, তবে সেটা উপন্যাস বেশি। হ্যাঁ, তার লেখা কবিতাও জীবন্ত-সজীব। তবুও সুনীল বলেছিলেন, তিনি নিজেকে কবি ভাবতে ভালবাসেন। এমন কবির কাছে কবিতা যে আলাদা ও বিশেষ কিছু, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বলা চলে, 'অর্ধেক জীবন' বইটি যদি সুনীলের জীবনের প্রথম অংশ হলে 'ছবির দেশে কবিতার দেশে' বইটি তার বাকী অর্ধেকের আত্মজীবনী। তবে আমি বলব ভিন্ন কথা, বইটি শুধু আত্মজীবনী নয়। বইটি কাব্য, অনুবাদ, প্রবন্ধ আলোচনা অথবা নিখাঁদ খাঁটি একটা উপন্যাস; যে নামেই প্রকাশ করবেন, অপূর্ণ থেকে যাবে। শুধু 'ছবির দেশে কবিতার দেশে' নিয়ে সংক্ষেপে রিভিউ লেখা সম্ভব নয়। নাম শুনে বলার অপেক্ষা রাখেনা ছবির দেশ বলতে আমরা প্রথমে ফরাসী দেশ পরে সমগ্র ইউরোপকেই বুঝি। সতেরো শতকের শুরু থেকে ইউরোপে যে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছিল 'ছবির দেশে কবিতার দেশে'র ভাষায় সেটা শিল্প সাহিত্যের বিপ্লব। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বইটিতে তুলে ধরেছেন তার জীবদ্দশার পাঁচবার ইউরোপ তথা ফ্রান্স ভ্রমণের কাহিনী; যদিও তিনি বইটির শুরুতে বিশাল অংশ জুড়ে বর্ণনা করেছেন তার আমেরিকার প্রবাস জীবনের গল্পও। নিজের কথা বলার সাথে সাথে বইটির দ্বিতীয় প্রধান চরিত্র সুনীলের ফরাসী বান্ধবী মার্গারিট ম্যাথিউ। হ্যাঁ, মার্গারিট ম্যাথিউ এসেছে সুনীলের লেখা বেশ কয়েকটি বইয়ে। তবে 'ছবির দেশে কবিতার দেশে'র মার্গারিটকে তিনি তুলে ধরেছিলেন অন্তরঙ্গ জীবনের নিক্তিতে। অকপটে বলেছেন মার্গারিটের সাথে তার স্মৃতির গল্প। বিশ্বাস করুন, এমন সমৃদ্ধ একটা উপন্যাসের একটা পর্যায়ে মার্গারিট বিষয়টা আপনাকে থমকে দেবে। আপনি আবেগি হলে কাঁদতেও পারেন। 'ছবির দেশে কবিতার দেশে' বইটি পড়ার আগে নিজেকে কিঞ্চিৎ পড়ুয়া দাবী করতাম। কয়েকবার পড়ার পরে এখন চিত্রশিল্প প্রেমীও দাবী করতে পারি। একটা বই যে কখনো একটা ক্লাস রুম হয়ে ওঠে, এই বইটি তারই নিদর্শন। আপনি যখন ভ্রমণ পড়বেন, খেয়াল করবেন লেখক তার ভ্রমণ কেচ্ছাকে সাহিত্যের স্বরে বর্ণনা করেছেন। অথবা স্থানীয় সংস্কৃতির মিশেলে গল্প সাজিয়েছেন। বইটিতে সুনীল সে পথে হাটেননি। শেষের চারবারের ভ্রমণের যে বর্ণনা তিনি করেছেন, তাতে তিনি কখনো গদ্যকার, কখনো কবি, আবার কখনো শিল্পীর গভীর জায়গা থেকে এমনভাবে লিখেছেন আপনার কাছে মনে হবে যেন ওই ভ্রমণে সুনীলের সাথে আপনিও সহযাত্রী ছিলেন। আমেরিকা সফরে বান্ধবী মার্গারিটের কাছ থেকে ফরাসী ভাষা, শিল্প ইতিহাস সম্পর্কে গভীর তথ্য সমৃদ্ধ হয়েছিলেন; তারই মিশেলে পরবর্তী চারবার ভ্রমণের চিত্রে ছিল গভীর ছোঁয়া। প্রতিবার ভ্রমণে বিষয়ভিত্তিক বর্ণনার সাথে সাথে ইতিহাস তুলে ধরেছেন গভীরভাবে। ঠিক এ কারণে প্রত্যন্ত 'লুদ' গ্রামে যদি কোন কারণে আপনার যাত্রা থমকে, তবে অবশ্যই ভাবতে বাধ্য হবেন বইটির কথা। আমেরিকায় হারিয়ে যাওয়া এই গ্রামের মেয়ে 'মার্গারিট' এর কথা। যার কাছে প্রেম ছিল পবিত্র, ভালবাসা ছিল অনেকটা ধর্মীয় সাধনার মত। তা সে যত কঠিনই হোক। ওই যে বইটিতে 'জ্যাক প্রেড' বলেছিলেন! 'লোহার বাজারে গিয়েছি আমি শিকল কিনেছি, কঠিন শিকল। তোমারি জন্য, হে আমার প্রেম।' কাহিনিঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ষাটের দশকে জীবনের প্রথম পাসপোর্ট বানিয়ে উড়াল দিয়েছিলেন আমেরিকাতে। আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পল এঙ্গেল বিদেশী ভাষা নিয়ে কাজ করার জন্য সারাবিশ্ব থেকে ক্রিয়েটিভ রাইটার নিচ্ছিলেন, আর সে দলেই ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কোলকাতা, চাইবাসা-সাওতাল পরগণার বাইরেও যে চমৎকার পৃথিবী রয়েছে সেটাই কাছ থেকে দেখা শুরু হয় তার আমেরিকা প্রবাসজীবনে। আইওয়া শহরের শ্বেতাঙ্গ স্বর্ণকেশীদের ভিড়ে কিঞ্চিৎ ভিন্ন চেহারার এক নারীকে আবিস্কার করেছিলেন সুনীল, হ্যাঁ এটাই মার্গারিট। যাকে চুমু খেতে চাওয়ার অপরাধে দীর্ঘ দিন বিচ্ছেদ মানতে হয়েছিলো। মার্গারিট বিশ্বাস করে, চুমু ভালবাসার অংশ। ভিন্ন ধর্মের একটা ছেলের সাথে এই অনুভূতি বিনিময়ের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। যদিও পরে সুনীলের সাথে সম্পর্ক গড়ে! সম্পর্কের আবর্তেই সুনীল জানতে পেরেছেন ফরাসী দেশ সম্পর্কে, সমগ্র ইউরোপের শিল্প সাহিত্য সম্পর্কে। শব্দ শব্দ ধরে মার্গারিট সুনীলকে শিখিয়েছেন ফরাসী কবিতার অর্থ। আত্মজীবনীমূলক বইটিতে সুনীল উল্যেখ করেছেন মার্গারিটের সাথে তার বোঝাপড়ার কথা। একজন সমৃদ্ধ সাহিত্যিক হতে হলে তাকে যে আমেরিকা ছেড়ে কোলকাতায় ফিরতে হত সেটা মার্গারিটও মানতেন। বইটির শেষ দিকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় স্বীকার করেছেন, মার্গারিট তাকে ভালবেসে কোলকাতায় অলিয়স ফ্রোজেসে চাকুরী নিয়ে আসতে চেয়েছিল। এছাড়াও প্রথম দিকেই তিনি উল্যেখ করেছেন বিখ্যাত সব অ্যামেরিকান কবিদের সাথে আড্ডার গল্প, যার মধ্যে এ্যালেন্স গিনসবার্গ অন্যতম। ১৯৭১ সালে এ কবির লেখা September on Jessore road বাঙালী জাতীর আত্মার গল্প। বইটিতে প্রতি পরিচ্ছেদ শুরুতে বিখ্যাত সব কবিদের কবিতার অনুবাদ দিয়ে শুরু করেছেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। এরপরে এনেছেন ভ্রমণ ও চিত্রশিল্পের বর্ণনা। চিত্রশিল্পের বর্ণনায় উঠে এসেছে সতেরো, আঠারো শতকের বিখ্যাত সব চিত্রশিল্পীদের কথা। বইয়ের মধ্যেও রঙিন কাগজে আনন্দ পাবলিশার্স ছাপিয়েছে ইম্প্রেশোনিজম আন্দোলনের সদস্যদের গভীর সব চিত্রকর্ম। চিত্রকে টানতে গিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন রেনোয়া, এ্যাডওয়ার্ড মানে, গ্যগা, পিকাসোদের বিখ্যাতসব চিত্রকর্ম আর তার চিত্রপটের বর্ণনা। ফরাসীদের ইতিহাস থেকে শুরু ইউরোপের ব্রিটিশদের আগমন এমনকী নেপোলিয়নের বর্ণনা করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন মার্গারিটের খোঁজ পাননি সুনীল, এরপরে বিয়ে করেছেন স্বাতি গঙ্গোপাধ্যায়কে। মজার ব্যাপার হল মার্গারিটের প্রতি স্বাতির শ্রদ্ধা ছিল বোঝা যায়, লেখক আত্মজীবনীমূলক বইটিতে তুলে ধরেছেন তার ব্যক্তিজীবনের সেসব গল্পও। ফরাসী ভাষা জানা স্ত্রীকে নিয়ে পরবর্তিতে তিনি ফ্রান্স ভ্রমণ করেছেন লিখেছেন সে বিষয়েও। উল্যেখ করেছেন ফ্রান্সে তাদের বন্ধুদের কথাও। বইটির এভাগে তিনি এমন কিছু তথ্যযোগ করেছেন যা অনেকটা পাঠ্যবইয়ের মত। যেমন ফরাসীদের যুদ্ধ, ইম্প্রেশোনিজম আন্দোলনের বিষয়বস্তু, নেপোলিয়নের গল্প এবং সমৃদ্ধ কবিদের কবিতা নিয়ে সাহিত্য আলোচনা। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে বলেছেন ভ্রমণকাহিনীও। মাঝের পরিচ্ছেদে তিনি একবার টেনে নিয়েছেন মার্গারিটের সাথে তার ফ্রান্স ভ্রমণের গল্পও, বইটিতে সুনীল অকপটে স্বীকার করেছেন তাদের এক সাথে থাকার কথা, ফ্রান্স জুড়ে জগতবিখ্যাত মিউজিয়াম আইফেল টাওয়ারে ওঠা নিয়ে মার্গারিটের অনাগ্রহও লিখেছেন তিনি। পরবর্তি আরো কয়েক পরিচ্ছেদে তিনি লন্ডন ও প্যারিস প্রবাসি বন্ধুদের সাথে উত্তর ফ্রান্সের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতিচারণ করেছেন। বইটির শেষ দিকের কিছু কথা এমন যে শিল্প সাহিত্য এখন হয়ে গেছে নিউইয়র্ক কেন্দ্রিক বিশ্বের সেরা সব আর্ট গ্যালারী সব সেখানে অথচ একটা সময় বৈশ্বিক শিল্পের কেন্দ্র ছিল ফ্রান্স। ডেনমার্কের এক কবি তাকে বলেছিলেন তার বই দুশো কপি বিক্রি হলেই তিনি সার্থক, কারণ শিল্প সাহিত্য এখন আর ইউরোপে নেই সেটা গরীবদের খাদ্যে পরিণত হয়েছে। ভারত বাংলাদেশে এসব নিয়ে মাতামাতি হয়! সত্যিই যদি তাই হত তবেই হয়েছিলো। সুনীল বেঁচে নেই, থাকলে আজ লিখত ছাপাখানার প্রসারতা বাড়লেও সাহিত্য বাড়েনি। তাই হয়ত 'ছবির দেশে কবিতার দেশে'র মত বইটি নিয়েও এখন তেমন কেউ মাতে না। বাংলাদেশেও আজ দুয়েকশ কপি বই বিক্রি হলেই নিজেকে সার্থক মনে হয়। নিজস্ব মতামতঃ রিভিউটি লেখার আগে দেখলাম বইটি নিয়ে খুব বেশি সমৃদ্ধ আলোচনা নেই। অথচ বইটি অনেকেই পড়েছেন। এমন একটি বই যা ভ্রমণ, সাহিত্য, ইতিহাস, চিত্রশিল্পের তথ্য সমৃদ্ধ। বইটি আগ্রহের পাঠ্যসূচীতে যুক্ত হলে এ যুগের বিসিএস পড়ুয়ারা গিলে খেতো। সে যা হোক, যে কথা শুরুতে বলছিলাম, এক কথায় আলোকপাত করে এই বইয়ের রিভিউ করা সম্ভব নয়। বইপোকাদের গ্রুপে মাঝে মাঝে পোস্ট দেখি, আউটবই পড়বো নাকি টেক্সট বই! আউট বই বলতে তারা এসব বইকেই বোঝান। এইসব টেক্সটবুক পাঠকদের টেনে এনে যদি এমন সব বই পড়ানো সম্ভব হয় তবেই মৌলিক সাহিত্যের ধাঁরা যেমন সমৃদ্ধ হবে তেমনি গল্পে গল্পে কীভাবে নিজেকে সমৃদ্ধ করা যায় তাও সাধন হবে। শেষ করবো বইটিতে উল্যেখিত ভলতেয়ারের দারুণ এক উক্তি দিয়ে, I love physics so long; I did not try to take precedence over poetry. Now that it is crushing all the arts, I no longer wish to regard it as anything but a tyrant.
Was this review helpful to you?
or
Excellent Book!
Was this review helpful to you?
or
Excellent, EXCELLENT book! It's like a travelogue but a lot more interesting and well-written. The author describes the culture, the society and everything in such a BEAUTIFUL way you cannot help loving every bit of it. It's a must read for those who like Syed Mujtaba Ali's travel stories, and also strongly recommended for Sunil lovers.
Was this review helpful to you?
or
সনুীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার অসম্ভব প্রিয় লেখকদের একজন।তাঁর চলে যাওয়াটা অনেকের মত আমিও মেনে নিতে পারি না।একবার চিন্তা করুন তো সনুীলের লেখা ছাড়া বাংলা সাহিত্য।আমার মনে হয় এটা চিন্তা করাও দোষের।সনুীলের হাত ধরে বাংলা সাহিত্য পাড়ি দিয়েছে অনেক পথ।বাংলা সাহিত্য সনুীল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে গেছে খ্যাতির চুড়ায়।বিনিময়ে তিনি বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছেন অফুড়ন্ত কবিতা,গল্প-উপন্যাস আর অসামান্য কিছু প্রবন্ধ।ছবির দেশে,কবিতার দেশে সেরকমই একটি বই বা খন্ড একটি আত্মজীবনীও বলা যায়।কোন বইয়ে বর্ননা বেশী থাকলে আমার ভাল লাগে না।কিন্তুু এই বইটি পড়ে মনে হয়েছে বর্ননা না থকলে কোন ভাবে বইটি পাঠকদের বোঝানো যেতো না।বর্ননাও যে এত নিখুঁদ এবং সুন্দর ভাবে দেওয়া যায় ছবির দেশে,কবিতার দেশে বইটি পড়লে বুঝা যায়।আমার মতে প্যারিস না দেখলেও চলবে কিন্তু এই বই না পড়লে জীবন বৃথা।অসাধারণ একটা বই প্যারিস নিয়ে।সুনীল এর ভ্রমন কাহিনী গুলো এক নিঃশ্বাসে পরার মত।প্যারিসের শহরের বিবরন পড়ে শহরটি চোখের সামনে দেখছিলাম পড়ার সময়।সনুীলে বর্ননাতে শুধু জায়গার বিবরণী থাকে না, থাকে ইতিহাস,মতবাদ, গল্প-মিথ সবকিছু।ফ্রান্সকে বলা হয় চিত্রকলার ভূ-স্বর্গ,প্যারিস হলে তো কথাই নেই।বইটি পড়লে পৃথিবী বিখ্যাত কাছু আর্ট সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যাবে।আছে আসাধারন কিছু কবিতার লাইন।মার্গারিট নামের মেয়েটিকে সনুীল ভালবেসে ছিলেন কিনা জানিনা।তবে মার্গারিট নামের ফরাসি মেয়েটি তার জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে ছিল।মার্গারিটার কাছ থেকে অনেক কিছু জেনে ছিলেন তিনি।বইটির প্রায় অর্ধেক জুড়ে মার্গারিটার কথা আছে।ছবির দেশে,কবিতার দেশে বইটি না পড়লে সনুীল গঙ্গোপাধ্যায় অনেক কিছু অজানা থেকে যাবে।