User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#এমন_দিনে_তারে_বলা_যায় "বৃষ্টি আমার ভীষণ প্রিয়। ঝুমঝুম বৃষ্টিতে ভেজা কিংবা বৃষ্টি ভেজা দিনে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা আর সাথে আমার প্রিয় একটা বই নিয়ে জানালার পাশে বসা- আহা!জীবন কত সুন্দর।" জনপ্রিয় লেখক আফিফা পারভীনের প্রথম উপন্যাস ছিলো "এসো নীপবনে" যার পরিমার্জিত ও বর্ধিত রূপ "এমন দিনে তারে বলা যায়"। এটি একটি হৃদয়ছোঁয়া ও গভীরভাবে বাস্তবমুখী উপন্যাস যা পাঠককে জীবনের কঠিন বাস্তবতা ও আবেগের জগতে নিয়ে যায়। বইটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে চারজন আর্মি অফিসার রুমি, জামান, আশরাফ এবং আসাদের বন্ধুত্ব, তাদের ব্যক্তিগত জীবন, এবং পেশাগত দায়িত্বের ওপর। এই উপন্যাসে যুদ্ধ, ভালোবাসা, ত্যাগ, এবং ব্যক্তিগত সংগ্রামের চিত্র অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ★কাহিনীর মূলধারা : ক্যাপ্টেন রুমি একজন দায়িত্বশীল কিন্তু সংসার জীবনের প্রতি সংশয়ী মানুষ। তার জীবনে একটি বড় মোড় আসে যখন সে পরিচিত হয় বৃষ্টি নামের মেয়েটির সাথে। বৃষ্টি একাধারে শান্ত ও রাগী, এবং মা হারানোর বেদনায় বড় হওয়া মেয়েটি জীবনে স্থিতি খুঁজতে থাকে। তাদের প্রথম সাক্ষাৎ ঝগড়ার মধ্য দিয়ে শুরু হলেও ধীরে ধীরে এ সম্পর্ক রূপ নেয় ভালোবাসায়। রুমি এবং বৃষ্টির সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি পাঠকদের মনে এক নতুন আবেগের জন্ম দেয়। "কি হয়েছে সঠিক জানি না। তবে এটুকু বুঝতে পারছি, কিছু একটা হয়েছে। আমার অনিচ্ছায়, অজান্তেই খুব বড় ধরনের রদবদল হয়ে গেছে কোথাও। " ( রুমি, পম: ১৫৩) অপরদিকে, জামান তার ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে এক ধরণের শূন্যতায় দিন কাটায়। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া জামানের জীবনে কি ভালোবাসা আর ফিরে আসবে শ্রাবণধারার মতো ? আসাদ তার পরিবারের দায়িত্ব পালনে নিজের স্বপ্নগুলোকে বিসর্জন দেয়। আর আশরাফ তার ভালোবাসার মানুষ জাফরিনকে বিয়ে করলেও, সংসার জীবনে তার যে সংগ্রাম সেটাও সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। "ভালোবাসা কখনো নিঃস্বার্থ হয় না। বরং ভালোবাসার মতো স্বার্থপর ব্যাপার আর একটিও নেই। ভালোবাসা সবসময় নিজ স্বার্থে স্বার্থপর হয়। " ( জামান, পৃ: ২০৪) ★বইটির গভীর দিক : বইটির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে ঢাকায় ঘটে যাওয়া একটি জঙ্গি হামলা। এই অংশটিতে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ত্যাগ ও তাদের জীবনের অনিশ্চয়তার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন অভিজ্ঞ হাতে। লেখকের সুকৌশলী লেখায় রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা পাঠককে ভাবিত ও আতঙ্কিত করে রাখবে। "সব সময় চলে যাওয়া মানেই সব শেষ নয়। কোন কোন চলে যাওয়া এমন হয় যে, যাওয়ার পরেও সবটুকু জুড়ে থেকে যায়। " ( বৃষ্টি, পৃ: ৩২) ★আমাদের শহীদ পরিবার : এই উপন্যাস আমাদের শহীদ পরিবারের বাস্তবতার কথা মনে করিয়ে দেয়। দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া সেনাদের পেছনে থেকে যায় তাদের পরিবারের গভীর শূন্যতা। অনেক সময় এই পরিবারগুলোর সংগ্রাম এবং তাদের মনের বেদনা সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে না। শহীদ সেনাদের সন্তানদের জীবনে বাবা হারানোর শূন্যতা অমার্জনীয়। কিন্তু তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে, তাদের জীবনে নতুন স্বপ্ন এবং স্থিতি আনতে আমাদের দেশকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। "একটি বুলেট মানুষের স্বপ্ন, সুখ, শান্তি কেড়ে নিয়ে জীবনকে কেমন বিবর্ণ করে দেয়, এটা যারা ভুক্তভোগী শুধু তারাই জানেন। ( পৃ:৩৫০) । ★পাঠকপ্রতিক্রিয়া: উপন্যাসটি পড়ার পর মনে হয়েছে, এটি শুধু একটি বই নয়, বরং জীবনের গভীরতম আবেগ আর কঠিন বাস্তবতার চিত্রায়ন। কাহিনীর প্রতিটি অধ্যায় আমাকে ভেতর থেকে নাড়া দিয়েছে। সবার আগে বলি, রুমি আর বৃষ্টির সম্পর্কের জটিলতা এবং আবেগের ওঠানামা আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছে। ঝগড়ার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া তাদের সম্পর্ক ধীরে ধীরে ভালোবাসায় রূপ নেয়—এই রূপান্তর ছিল বাস্তব আর মুগ্ধকর। বৃষ্টির রাগ, রুমির দ্বিধা—সবকিছু এতটা জীবন্ত লেগেছে যে, মনে হয়েছে আমি যেন চরিত্রগুলোর পাশেই দাঁড়িয়ে আছি। জামান, আসাদ, আর আশরাফের গল্পগুলোও আমাকে ভীষণভাবে ছুঁয়ে গেছে। বিশেষ করে জামানের হারানোর বেদনা আর আসাদের ত্যাগের দিকগুলো হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। শহীদ একজন বীর যোদ্ধার গল্প তো মনে গভীর দাগ কেটেছে। এই অংশটুকু পড়ে আমার চোখ ভিজে উঠেছিল। আফিফা পারভীন অত্যন্ত সাবলীলভাবে গল্পটি লিখেছেন। লেখার ধরণ এমন যে, মনে হয় চরিত্রগুলো পাঠকের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠছে। চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক গভীরতা, তাদের অনুভূতির জটিলতা এবং কঠিন বাস্তবতাগুলো পাঠকের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলে। বইটিতে দেশের সেনাদের জীবন, তাদের সংগ্রাম, এবং শহীদ পরিবারগুলোর বাস্তবতার প্রতি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে এই বাস্তবতার কথা ভেবে আমি গভীরভাবে আবেগাপ্লুত হয়েছি। লেখিকার ভাষার সাবলীলতা আর গল্প বলার কৌশল এতটাই প্রাঞ্জল যে, বইটি শেষ না করে রাখা অসম্ভব। প্রত্যেকটি চরিত্রের অনুভূতি যেন আমার নিজের অনুভূতিতে মিশে গেছে। এই উপন্যাসটি আমাকে জীবন, ত্যাগ, এবং ভালোবাসার নতুন অর্থ বুঝিয়েছে। এটি এমন একটি বই, যা একবার পড়লে পাঠক শুধু কাহিনী নয়, চরিত্রগুলোর জীবনের অংশ হয়ে যায়। আমি এই বইটি সবাইকে পড়ার পরামর্শ দেব, বিশেষ করে যারা জীবনের গভীর অর্থ খুঁজতে চান। লেখকের ভাষায় _ "এমন দিনে কোন মহেন্দ্র ক্ষণে বেশুমার খুশি ও ভালোবাসা স্বর্গ থেকে সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ হিসেবে যেন এসে ঝরে পড়ে মানুষের জীবনে!তারপর নশ্বর জীবনকে ভরিয়ে দেয় অপার্থিব আলোর রোশনাইয়ে, সাজিয়ে দেয় পারিজাতের সুঘ্রানে।
Was this review helpful to you?
or
বইটি অনেক সুন্দর এন্ড wallpepar টা josss
Was this review helpful to you?
or
কিছু কিছু বই থাকে সিম্পল কিন্তু ভীষণ ভীষণ সুন্দর। এই বইটি একদম তেমন। সব ধরনের পাঠককে সন্তুষ্ট করার মতোই বইটি শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত।
Was this review helpful to you?
or
পাঠ অনুভূতি বই:এমন দিনে তারে বলা যায় লেখক:আফিফা পারভীন প্রকাশনী:গ্ৰন্থরাজ্য জনরা: সমকালীন এটা কোনো রিভিউ না।আমি রিভিউ বা গুছিয়ে সুন্দর শব্দ দ্বারা লিখতে পারিনা।এই কথাগুলো শুধু আমি বই পড়ে মন থেকে যা অনুভব করেছি তা লেখার চেষ্টা মাত্র। বইটা শুরু করার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটা সেকেন্ড প্রতিটা মিনিট আমি দারুন ভাবে উপভোগ করেছি।পুরো বই শেষ করার জার্নিটা আমার কাছে তৃপ্তিদায়ক ছিলো।এসে নীপবনে পড়ার সময় আমার মনের কোণে কোথাও একটু আফসোস রয়ে গেছিলো।ইশ যদি আরেকটু পড়া যেত! ইশ ওদের নিয়ে যদি আরেকটু লিখতো আপু।এমন ক্ষুদ্র কিছু আফসোস রয়ে গেছিলো। কিন্তু এমন দিনে তারে বলা যায় বইটা আমার মনে সেই আফসোস আসার কোনো জায়গা ই দেয়নি। পূর্নতায় যেনো পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এমন দিনে তারে বলা যায়।বইটা পড়ার সময় আমার একবার ও মাথায় আসেনি আরে আমি তো এই কাহিনী জানি, এরপর কি হবে তাতো জানি। বিশ্বাস করুন এমন ভাবনা ই আসেনি।আপু এতো সুন্দর করে নতুনত্ব দিয়ে বইটা পরিপূর্ণ করেছে যে আগে পড়েছি এই ভাবনা ই মনে আসতে দেই নি আপুর হাতের যাদু।আমি আপুকে বলি শব্দের যাদুকর।তার হাতের ছোঁয়ায় সাধারণ কোনো শব্দ ও অসাধারণ হয়ে উঠে। পরিশেষে বলবো এ বইটা পাঠক মনকে তৃপ্তি দিতে সক্ষম সাথে পাঠক মনে তার পাকাপোক্ত জায়গা করে নিতে সক্ষম।এমন দিনে তারে বলা যায় এককথায় অসাধারণ একটি বই হয় এসেছে আমাদের মাঝে। আপুর জন্য দোয়া এবং অনেক অনেক ভালোবাসা। এভাবেই সারাজীবন লিখে যান আপু। আপনার হাতের ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে উঠুক সবকিছু। ভালোবাসা আপুকে। (ঠিকভাবে লিখতে পেরেছি কিনা জানি না। ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
Was this review helpful to you?
or
বুক রিভিউ বই: এমন দিনে তারে বলা যায়। লেখিকা: আফিফা পারভীন। জনরা: সমকালীন। প্রকাশনী: গ্রন্থরাজ্য। "কোনো একটা দিন এমন হয় যে, সেই দিনটাতে সবকিছুই একটু ব্যতিক্রমী ও বেহিসাবি হয়।" © ব্যতিক্রমী এই দিনের অংশ হিসেবে হতে পারে নতুন কোনো মানুষের সাক্ষাৎ অথবা নতুন কোনো কাঙ্ক্ষিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সাথে পরিচয়। সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও কতিপয় মানুষের জীবনধারা, সেনাজীবনের কর্মব্যস্ততাসহ দায়িত্ব ও কর্তব্য, পারিবারিক বন্ধনের ইতিবাচকতা, বন্ধুত্বের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা এবং সর্বোপরি অতীতে ঘটে যাওয়া হলি আর্টিজন হা মলার আদ্যোপান্ত নিয়ে রচিত হয়েছে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আফিফা পারভীন এর একক উপন্যাস "এমন দিনে তারে বলা যায়" কাহিনী সারসংক্ষেপ: সিলেটের বিখ্যাত মুঠোমুঠো বৃষ্টি এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ইকবাল চৌধুরীর মেয়ে বৃষ্টির মধ্য এক বিরাট কনফিউশান তৈরি করে সাক্ষাৎ হয় ক্যাপ্টেন রুমির। পারিবারিক সুশিক্ষার বদৌলতে আজীবন মেয়েদেরকে সম্মান করে আসা ক্যাপ্টেন রুমি একজন অপরিচিত মেয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত বাক্যবাণে জর্জরিত হয়ে ব্যথিত হৃদয় নিয়ে ফিরে আসে নির্ধারিত গন্তব্যে যেখানে উপস্থিত ছিল তার তিন বন্ধু এবং একইসাথে কোর্সমেট ক্যাপ্টেন জামান, ক্যাপ্টেন আসাদ ও ক্যাপ্টেন আশরাফ। ঘটনার পরিক্রমায় তাদের সিলেট ভ্রমণ শেষ হলে তাদের প্রাপ্তির ঝুলিতে জমা হয় নতুন পরিচিত এক মুখ বৃষ্টি ও তার বাবা। অবশ্য ততদিনে নানান চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে একটি সহনীয় বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে তারা। এরপর একে একে জট খুলতে থাকে ক্যাপ্টেন জামানের বিষণ্ণতার, ক্যাপ্টেন আসাদের পারিবারিক অবস্থানের ও ক্যাপ্টেন আশরাফের প্রণয়ের। একে একে উন্মোচিত হতে থাকে পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব, সম্পর্কের জটিলতা, কর্মক্ষেত্রের ভ য়াবহতা, জীবন ও মৃ ত্যুর সন্ধিক্ষণ ও জীবনের চাওয়া-পাওয়ার এক অপূর্ব মেলবন্ধনের সাথে অদম্য সাহসিকতার। পাঠপ্রতিক্রিয়া: 'এমন দিনে তারে বলা যায়' উপন্যাসটি 'এসো নীবপনে' উপন্যাসের পরিমার্জিত, পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ। এটিতে সবদিক থেকেই লেখার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। বইটি পড়তে পড়তে যেমন সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্য হারিয়েছি তেমনি নদীর খরস্রোতা হওয়ার কারণ ও সেখানের মানুষের জীবনধারণে ব্যথিত হয়েছি। ক্যাপ্টেন রুমি ও বৃষ্টির ভ্রমণকাহিনী পড়তে পড়তে তাদের সাথে ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে যেমন ঘুরেছি তেমনি স্বচক্ষে দেখার আগ্রহও তীব্র হয়েছে। বইয়ের প্রতিটি চরিত্রের মাধ্যমে দেওয়া লেখিকার বার্তাগুলো নোট করেছি। প্রতিটি চরিত্রের মধ্যকার সূক্ষ্ম বিষয়গুলো পরিলক্ষিত করেছি। বইয়ের প্রতিটি বাক্যে এক অমোঘ শক্তি বিদ্যমান যা শেষ পর্যন্ত আমাকে টেনে নিয়ে গিয়েছে। পারিবারিক বন্ধনে যেমন মুগ্ধ হয়েছি তেমনি সেনাজীবনের নানান জটিলতা ও সেগুলো মোকআবিলায় তার আগ্রাসী ভূমিকায় তাদের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সৃষ্টি হয়েছে। বইটি শেষ করার পর আমার অনুভূতি ছিল আমি মুগ্ধ, সন্তুষ্ট এবং পরিতৃপ্ত। চরিত্র বিশ্লেষণ: অনেকগুলো চরিত্র নিয়ে বিশাল কলেবরে স্পেশাল এডিশনের ৩৮৬ পেইজের এই উপন্যাসটির উল্লেখযোগ্য কয়েকটি চরিত্র: ইকবাল চৌধুরী: একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এবং বর্তমানে সুনামধন্য ব্যবসায়ী একই সাথে বৃষ্টির বাবা ও মায়ের যৌথ ভূমিকা পালন করেছে। স্ত্রী ও কন্যার প্রতি ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধের এক অপূর্ব মেলবন্ধন তিনি। আজন্ম মনের মণিকোঠায় লালন করেছেন তার প্রিয়তমাকে, আরাধনা করেছেন ভালোবাসাকে। রুশা চৌধুরী: উপন্যাসে উল্লিখিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মা চরিত্র। যিনি বায়োলজিক্যালি ক্যাপ্টেন রুমির মা হলেও আত্মিকভাবে ক্যাপ্টেন জামানের মায়ের ভূমিকাও পালন করেছেন। দক্ষতার সাথে সংসার, সন্তান ও নিজের কর্মক্ষেত্র সামলেছেন। তার সন্তানদের চরিত্রগঠনের মাধ্যমেই ফুটে উঠেছে তার আদর্শ, তার নীতি, তার শাষণ ও অনুরাগ। বৃষ্টির মা: উপন্যাসে তিনি প্রত্যক্ষভাবে কোনো অবদান না রাখলেও তাকে আমরা খুঁজে পেয়েছি বৃষ্টির হাহাকারে, ইকবাল চৌধুরীর বিষণ্ণতায়। পরশপাথরের মতো এই মানুষটি না থেকেও রয়ে গেছেন প্রতিটি পাঠকের হৃদয়ে, সম্মানে ও দোয়ায়। এই চরিত্রের মাধ্যমে আপু দেখিয়েছে কীভাবে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষও আমাদের ছেড়ে চলে যেতে পারেন। ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বর্তমান সময়ের এক বহুল আলোচিত ও ঘটমান ব্যাপার। আল্লাহ সবাইকে এর থেকে রক্ষা করুন। রেহনুমা আন্টি: বৃষ্টির জীবনে আশীর্বাদ। আল্লাহ তায়ালা সকল রেহনুমা আন্টির কলিজায় শান্তি দিন। শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার একটি চরিত্র। ক্যাপ্টেন রুমি: কর্মজীবনে যথেষ্ট সচেতন ও সফল সেনা হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন রোমিও এবং প্রচণ্ড ঝালখোর। রাগ হলে তোতাপাখির মতো কাচামরিচ চর্বন করা তার প্রধান কাজ। একজন দায়িত্বশীল সেনা, ছেলে, ভাই, বন্ধু, প্রেমিক ও স্বামী। তবে ভালোবাসায় মানুষ বোকা হয়ে যায় এই থিউরি মেনেই হয়তো তার জীবনে কিছু খারাপ সময় তিনি পার করেছেন। গল্পে আমাদের এন্টারটেইন যেমন করেছেন তেমনি কাঁদিয়েছেন। ক্যাপ্টেন জামান: 'মরে তো আমি কবেই গিয়েছি' এই উক্তির মাধ্যমেই বুঝা যায় তার জীবনের গভীর বিষণ্ণতার। চমৎকার ব্যক্তিত্ব ও গান গাইতে পারা এই মানুষটির জীবন যেন সুখ দুঃখের এক ভেলা। তবে জীবনে যাই হোক তা মেনে নিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সুন্দর করে তোলার প্রয়োজনীয়তা ও প্রচেষ্টার যে শিক্ষা লেখিকা এই চরিত্রের মাধ্যমে দিয়েছেন তা একই সাথে প্রশংসনীয় এবং শিক্ষনীয়। পুরো উপন্যাসের আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র ক্যাপ্টেন জামান। ক্যাপ্টেন আসাদ: আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রতিচ্ছবি। বাবাহীন পরিবারে একমাত্র ছেলের জীবন সংগ্রামের আয়না। বাস্তবতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ও নিজের দায়িত্ব পালনে সদা স্বতঃস্ফূর্ত এই চরিত্রটি মুগ্ধ করেছে। ক্যাপ্টেন আশরাফ: সমাজে সব সময় আলালের ঘরে দুলাল হয়না ক্যাপ্টেন আশরাফ তারই প্রমাণ। সোনার চামচ মুখে নিয়ে সম্ভ্রান্ত পরিবারের জন্মগ্রহণ করেও বেছে নিয়েছে এক মহান কঠোর প্ররিশ্রমের পেশা। সেনাজীবনের ট্রেনিংয়ের বর্ননাই বলে দেয় সফলতার শিখরে পৌঁছাতে ঠিক কতটা কাঁ টার আঘা ত সইতে হয়। তাছাড়া তার জীবনটা ফ্ললেস পিকচারের মতোই সুন্দর। সার্জেন্ট জাহাঙ্গীর: আহা! দূর্ভাগা। রাত পোহালেই যে সদ্য জন্মানো কন্যাকে দেখতে যাওয়ার তাড়া ছিল, রাতের আধারেই তার সমস্ত অপেক্ষার অবসান হয়ে গেছিল। সমস্ত অপেক্ষার উর্ধ্বে চলে যাওয়া সার্জেন্ট জাহাঙ্গীর পুরো পৃথিবীর সেইসব সেনাদের প্রতিচ্ছবি যারা দেশের জন্য আত্মত্যাগ করার তালিকায় চলে আসে। প্রতিদিনের ও প্রতিমুহূর্তের ঘটনা। শহীদ মর্যাদা তো পায় কিন্তু এই শহীদ মর্যাদার বিনিময়ে পরিবার যা হারায় তার কী কোনো বিকল্প আছে। আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি মানুষকে নেক হায়াত দান করুন। বৃষ্টি: 'মাকে আমার মনে পড়ে না' মা! তাকে মনে পড়বে কী৷ তাকে কী কখনোও ভুলা যায়। সে তো সব সময় মনে, প্রয়োজনে, জ্ঞানে ও অজ্ঞানে থাকে। অথচ মাতৃহীন জীবন কাটাতে হয় কত মানুষের। বৃষ্টির মায়ের প্রতি গভীর অনুরাগ ও মায়ের অনুপস্থিতি প্রতিটি সন্তানের জন্যই এক অবর্ননীয় ক ষ্ট। তবে বৃষ্টি সৌভাগ্যবান যে, ইকবাল চৌধুরীর মতো একজন বাবা ও ক্যাপ্টেন রুমি মতো একজন সঙ্গী পেয়েছেন। বৃষ্টি নিজেও কম কিছু নয়। সিলেটসহ পুরো দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করার উদ্যোগ তাকে আরও মহিমান্বিত করেছে। শ্রাবণী: সম্পর্কে ক্যাপ্টেন রুমির চাচাতো বোন ও একজন হবু ডাক্টার। প্রচণ্ড গুনী ও যত্নশীল এই মেয়ের বাহ্যিক বর্ননায় আমি মেয়ে হয়েও পিছলে পড়েছি। রুনি: সম্পর্কে ক্যাপ্টেন রুমির বোন এবং ভাইয়ের মতোই নিজের চাওয়া পাওয়ার প্রতি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। পুরো উপন্যাসের সবচেয়ে বোল্ড চরিত্র। এর একেকটা কাণ্ড ও কথা পাঠককে একই সাথে মুগ্ধ ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। স্বাতী: প্রচণ্ড ভাগ্যবান এক হতভাগ্য মেয়ে। এই চরিত্রর জন্য দুঃখ যেমন হয় তেমনি আফসোসও হয়। জীবনে সবকিছু পেয়েও যেন কিছুই পায়নি। একটা ভুল সিদ্ধান্ত, একটা সঠিক পরামর্শ ও পদক্ষেপের অভাবে কিছু মানুষের জীবনকে অন্ধকারে ফেলেছে নিজেরটাসহ। তবে অবশ্যই এমন সমাপ্তি কারও ক্ষেত্রেই কাম্য নয়। জাকির: মালিকের জন্য সব অসম্ভবকে সম্ভব করাই যার কাজ। যার কাছে বাঘের দুধ সংগ্রহ করা অসম্ভব কিছু নয়, ক্যাপ্টেন রুমির গায়ের রঙ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করাও দুধভাত। শুধু তার কাছে রুটি খাওয়া যু দ্ধ জয়ের সমান। তবে উপস্থিতি অল্প হলেও পাঠককে সুস্থ বিনোদন দেওয়ায় তার জুড়ি মেলা ভার। তবে চরিত্রটির সমাপ্তি পাঠককে একইসাথে স্বস্তি, শান্তি ও ঠোঁটের কোনায় মুচকি হাসি উপহার দেবে। রীতা: ভাগ্যে বিড়ম্বনার শিকার রীতা আপা রাধুনি হিসেবে চমৎকার। বৃষ্টিকে যে আদর ও স্নেহ দিয়ে আগলে রেখেছে তা মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। তবে জাকিরের সাথে সম্পর্কটা দা-কুমড়া হলেও প্রশংসনীয় ছিল। উল্লেখযোগ্য পছন্দের উক্তি ও শিক্ষনীয় উক্তিতে ভরপুর এই বইটি প্রতিটি পাঠকের জন্য উন্মুক্ত ও উপযুক্ত। সাবলীল ও মার্জিত ভাষায় এই উপন্যাস প্রতিটি মানুষের মধ্য সম্পর্কের যত্নের প্রতি দায়িত্বশীল করে তুলবে। যারা থ্রিলার পড়তে পড়তে ব্যক্তিজীবনে রুখাশুখা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের মধ্যেও প্রাণের সঞ্চার করবে। উপহার হিসেবে দিতে পারেন আপনার গুরুজনকে, সহপাঠী, সহকর্মী, পরিজনকে ও ভালোবাসার মানুষকেও।
Was this review helpful to you?
or
#পাঠ_অনুভূতি বই: এমন দিনে তারে বলা যায় লেখক: আফিফা পারভীন প্রকাশনী: গ্রন্থরাজ্য প্রচ্ছদশিল্পী: ফাইজা ইসলাম শুরুতে প্রচ্ছদের কথা বলতেই হয় এক দেখায় সবার নজর কাড়বেই। বর্ষার প্রকৃতির ছোঁয়া যেন প্রচ্ছদে ফুটে ওঠেছে। বইয়ের নামটাও দারুণ। লেখিকা আপুর প্রতিটা বই আমি কয়েকবার করে পড়েছি, এসো নীপবনে মনে হয় সবচেয়ে কম পড়েছি। তাই 'এমন দিনে তারে বলা যায়' পড়ার সময় সবকিছু নতুনের মতো অনুভূতি পাচ্ছিলাম। পরিবার, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, দেশপ্রেম সবকিছু মিলে যেন একটা পরিপূর্ণ উপন্যাস। আমার পছন্দের জায়গার মধ্যে সব জায়গাতে গেছি শুধু সিলেট যাওয়া বাকি। সেই পছন্দর জায়গা নিয়ে লেখা বই আমিও যেন কল্পনাতে সিলেটের সব সৌন্দর্য উপভোগ করছি। সিলেটের অপরূপ সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। লেখক এতো নিখুতভাবে বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন পাঠকরা পড়ার সময় আকৃষ্ট হবেই। বইয়ের সব চরিত্র এতো দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পড়ার সময় সেই চরিত্রের মাঝে যেন হারিয়ে যায়। সব চরিত্রগুলোকে সমান গুরুত্ব দিয়ে লিখেন। হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ সবকিছুকে মিলিয়ে পারফেক্ট একটা বই। আমি এখন রাতে বেশি বই পড়ি এই বইটা পড়ার সময় ও বৃষ্টি হচ্ছিলো তাই বইটা পড়ার সময় আস্তে ধীরে পড়ছি এবং দারুণ অনুভূতি নিয়ে পড়েছি। একদম তৃপ্তি নিয়ে বই পড়ে শেষ করেছি। সেনা কর্মকর্তা জীবন নিয়ে লেখা বই আমার পড়তে খুব ভালো লাগে। তাদের জীবন সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারি। বৃষ্টিপ্রেমিদের জন্য দারুণ একটা বই। সিলেটের সৌন্দর্যের সাথে বৃষ্টির সৌন্দর্য দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। পরিপূর্ণ কম্বিনেশন একটা বই। লেখিকা আপুর লেখা নিয়ে যতই বলি কম মনে হবে কারণ প্রতিটা বইয়ে অনেক মেধা আর শ্রম দিয়ে লিখেন সেটা বই পড়ার সময় বুঝতে পারি। এতো চমৎকার একটা বই সবার পড়া উচিত।