User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
সচিত্র সন্ধানী পত্রিকায় ‘তিন পয়সার জ্যোছনা’ উপন্যাসটি পড়ে অভিভূত হন ঢাকা মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া আনোয়ারা বেগম। সেই থেকে তাঁর মনে বাসনা জাগলো এর লেখকের সাথে দেখা করার, কে এই সৈয়দ শামসুল হক? চিঠি লেখালেখি চললো। এরপর ৬৩ সালের জুন মাসের একদিন এলো, গুলিস্তানের চাইনিজ রেস্টুরেন্টে দেখা করলেন সৈয়দ হকের সাথে। প্রথম দেখাতে তিনি বেশ শঙ্কিত। এরকম ছিপছিপে, কালো, একহারা গড়নের লোক; তার উপর আবার ইন্টারের পর আর পড়ালেখা করেনি, লেখালেখির জন্য! এরকম একটা মানুষকে বেছে নেয়ার চিন্তা করাটা ঝুঁকির ব্যাপার হয়ে যায় না? এরপর ঠিক করলেন: লেখাপড়া শেষ করেনি। বিদ্যা কতদূর আমাকে জানতে হবে! তারপর তো সম্পর্ক! সম্পর্ক করার আগে শার্লক হোমসের মত ইনভেস্টিগেশন দরকার! এভাবে আরেকদিন দেখা করলেন। রিকশা যখন শাহবাগ মোড়ের কাছাকাছি তিনি সৈয়দ হককে জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি তো লেখাপড়া শেষ করেননি। বুঝলাম, সাহিত্য করবেন বলে শেষ করেননি, বেশ, বিখ্যাত সাহিত্যিকদের ইংরেজি নামের বানান করতে পারবেন?" সৈয়দ হক হকচকিয়ে গেলেন, কি? পারব! ━ বানান করুন তো ‘ডস্টয়োভস্কি’ ইংরেজিতে? ━ এবার বলুন ‘লিও টলস্টয়’ ━ বলুন ‘মায়াকোভস্কি’ ━ বলুন ‘বরিস পাস্টারনেক’ ━ বলুন ‘ইয়েভগনি ইয়েভতুশেঙ্কু’… এভাবে বারবার বানান বলার সময় আনোয়ারা বেগম তাঁর হাতের চিরকুট বের করে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় মিলিয়ে দেখছেন। কারন সেসব বানান আদতে তিনি নিজেও জানেন না। সৈয়দ হক বলল, "কি ব্যাপার? তুমি বারবার হাতব্যাগ খুলে কি দেখছ? ━ কিছু না! ━ পরীক্ষায় কি পাশ করলাম?" এভাবে পরিচয়, পরিচয় থেকে প্রণয়, এরপর পরিণয়। সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে আনোয়ারা সৈয়দ হক দীর্ঘ ৫০ বৎসর কাটিয়েছেন। সৈয়দ হক আদতে কেমন মানুষ ছিলেন, তার সাহিত্য অনুরাগ, এসব স্মৃতিচারণ তুলে এনেছেন লেখিকা বইটিতে। বাংলা সাহিত্যের সব্যসাচী লেখক হিসেবে সৈয়দ শামসুল হক অধিষ্ঠিত। দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গে যে ক'জন শক্তিমান ও প্রধান লেখকদের হাতে ধরে এগিয়ে চলে বাংলা সাহিত্য তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। সেই লেখকের সংসারজীবনের সঙ্গী আনোয়ারা সৈয়দ হকও একজন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক। এদেশের রক্ষণশীল সমাজে একজন পুরুষের লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যতটা সহজ, নারীকে তার চেয়ে অনেক বেশি বেগ পেতে হয়। আনোয়ারা সৈয়দ হক একজন স্বতন্ত্র্য ধারার লেখিকা। সৈয়দ শামসুল হকের সাথে তাঁর লেখার গঠন-ধরণ একেবারেই আলাদা। তবুও এদেশের কিছু লোকের কাছে তাঁকে নানা কথা শুনতে হয়েছে, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের জোরেই একজন স্ত্রী হিসেবে তিনি লেখিকা। এ কথা যে কত মিথ্যা ও অবান্তর তা যারা দুজনের বই পড়েছে তারাই জানবে। আনোয়ারা হক ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তাঁর মধ্যে কলমধারী স্বত্ত্বা বিবাহের আগেই গড়ে ওঠে। সৈয়দ শামসুল হকের মতো একজন শক্তিশালী লেখকের সহধর্মিণী হওয়ায় অনেকে গুলিয়ে ফেলে ও ভুল বোঝে যে তিনি নাকি সৈয়দ হকের জোরেই লেখিকা। বইপত্র না পড়লে যা হয় আর কি। বাঙালি ভিত্তিহীন সমালোচনায় সিদ্ধহস্ত। তাঁর লেখা এই বইটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো। অনেক কিছুই জ জানতে পারলাম। ঐতিহ্যকে বইটি পড়ার সুযোগ করে দেবার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। বইটি ঐতিহ্যের রিডার্স ক্লাব থেকে পড়ার জন্য নেয়া।