User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের লেখক খালেদ হুসেইনী পেশায় একজন চিকিৎসক। বইটির প্রেক্ষাপট জুড়ে আছে আফগানিস্তানের কাবুল। আফগানিস্তানে শীতকালে স্থানীয়ভাবে এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা। একে অন্যের ঘুড়ি কাটাই হলো খেলার মূল লক্ষ্য। এভাবে একে অন্যের ঘুড়ি কেটে যার ঘুড়ি শেষ পর্যন্ত থাকত, নিয়ম অনুসারে সে বিজয়ী হতো। যারা কাটা ঘুড়ি সংগ্রহ করত, তাদের আলাদা নাম ছিল। তাদের বলা হতো কাইট রানার। কাবুলের অভিজাত ওয়াজির আকবর খান এলাকায় বাস করা কাবুলের ধনী ব্যবসায়ীর মা-হারা একমাত্র ছেলে আমির, তাদের ভৃত্য আলির ছেলে হাজারা সম্প্রদায়ের হাসান, আমিরের 'বাবা' আঘা সাহেব, তার বন্ধু রহিম খান এ উপন্যাসের কয়েকটি প্রধান চরিত্র। হাসানের বাবা আলি বহুকাল ধরে আঘা সাহেবদের বাড়িতে ভৃত্য হিসেবে বসবাস করতেন। সেই সূত্রে হাসান আমিরদের বাসাতেই থাকত। সে ছিল আমিরের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। তাদের মধ্যে ছিল প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। এছাড়া আরও অনেক চরিত্র আছে যেমন: আসেফ, সুরাইয়া ইত্যাদি।১৯৭৫ সালের এক শীতের ঘটনা। আমির সেবার ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতায় জিততে প্রবলভাবে আগ্রহী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তার বিশ্বস্ত বন্ধু হাসানও তাকে সাহায্য করার জন্য তৈরি। প্রবল উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিযোগিতা শেষে আমির প্রথম হয়। সে সময়ের রীতি অনুযায়ী, বিজয়ী ঘুড়িটিকে কুড়িয়ে এনে স্মারক হিসেবে বসার ঘরে সাজিয়ে রাখা হত। বিজয়ী নীল ঘুড়িটিকে কুড়িয়ে আনার সময় সেই শেষ বিকেলে তাদের জীবনে ঘটে এমন এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, যা ছিল তাদের ধারণারও বাইরে।তাজা আনন্দের রেশটুকু কেটে যাওয়ার আগেই ঘটে যাওয়া সেই দুঃখজনক ঘটনা আমিরের জীবন ওলট-পালট করে দেয়, আমির আর হাসানের সম্পর্কে চিড় ধড়ায়। আমির আর হাসানের সাথে আগের মতো মিশতে পারে না। হাসান বুঝতে পারে না, কী তার দোষ, কেন আমির তাকে এড়িয়ে চলে, তার কী করা উচিত। সেই শেষ বিকেলের ঘটনা আমির আর হাসানের মধ্যকার সম্পর্কে ছেদ ঘটায় চিরদিনের মতো।এরপর এক সময় যুদ্ধ প্রবেশ করে আফগানিস্তানে। নিয়তির ফেরে ও রাজনীতির নির্মম পরিহাসে আমিররা যুধবিধ্বস্ত কাবুল ছেড়ে পাড়ি জমায় আমেরিকায়। সেখানে আঘা সাহেব চাকরি নেন এক পেট্রোল পাম্পে। যদিও আমেরিকার নতুন জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি, তবুও সেখানে ধীরে ধীরে তাদের জীবনে অনেকটাই স্বাভাবিকতা ফিরে আসে।কিন্তু একদিন তার বাবার বন্ধু রহিম খানের ফোন তাকে আবার অস্থির করে তোলে। সুপ্ত সেই অস্বস্তিগুলো লাভার মতো ছড়িয়ে পড়তে থাকে, তাকে প্রতিনিয়ত গ্রাস করে নিতে থাকে। সেই শেষ বিকেলের অনভিপ্রেত ঘটনা তাকে দুঃস্বপ্নের মত ক্রমশ তাড়া করে ফেরে। যদিও বা সেটাকে সে পুরোপুরি চেপে রাখতে চেয়েছিল, হৃদয়ের গহীনে সমাহিত করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। সেই অস্বস্তিকর শেকল থেকে মুক্ত হতে চায় সে। যার জন্য সে ছুটে যায় আফগানিস্তানে, মুক্তি পাওয়ার জন্য। কোন দুঃসহ স্মৃতি সে বয়ে বেড়িয়েছিল? নতুন কী এমন নগ্ন সত্য উন্মোচিত হয়েছিল তার সামনে? আমির কি আদৌ মুক্তি পেয়েছিল? এই রিভিউটি পড়ে কেউ যদি বইটি পড়তে শুরু করেন, তবে বইটি শেষ করার পর হতবিহ্বল হওয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে রাখবেন, তা না হলে আপনার মানসিক সমস্যা হতে পারে কিন্তু!
Was this review helpful to you?
or
রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_আগস্ট_২০১৯ বইয়ের নাম: দ্য কাইট রানার; মূল লেখক: খালেদ হোসাইনি; অনুবাদক: শওকত হোসেন; প্রকাশক: কথামেলা প্রকাশন; ধরন: অনুবাদ:উপন্যাস উপন্যাসের পটভূমি: আঘা সাহেব বিপত্নীক, একজন ধনী আফগানী, আলী তার একজন ভৃত্য যে কি না ছোট বেলা থেকে আঘা সাহেবকে সাথ দিয়েছেন। কাকতালীয় ভাবে তাদের দুজনেরই স্ত্রী নেই কিন্তু ছেলে আছে। আমির এবং হাসান তাদের দ্বিতীয় স্বত্ত্বা।উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আঘা সাহেবের ১২ বছরের পুত্র আমির। ছেলেবেলা সব সময় দুরন্তই হয়, কিছু কিছু বন্ধুও হয় মনের মতো আর সেরকমই একটা বন্ধু হাসান। একই সীমারেখার মধ্যে বেড়ে ওঠা দুটি স্বত্ত্বা আমির এবং হাসান। একই সাথে ঘুড়ি ওড়ানো, একই সাথে সিনেমা দেখা, খেলাধুলা করা সবই তাদের নিত্যদিনের অভ্যাস ছিলো। ছেলেবেলায় শুধু বন্ধুই থাকে তা নয় কিছু শত্রুও থাকে। হাসান আমিরে জন্য নিবেদিত প্রান সকল সময়ে সকল বিপদে সে তার বুক পেতে দিয়েছে আমির কে রক্ষা করার জন্য, এক কথায় হাসান আমিরে জন্য ঢাল হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু আমির? কেমন ছিলো সে? সে কি আদৌ হাসান কে সাহায্য করেছে? নাকি তাকে বিপদে দেখে ফেলে এসেছে? আঘা সাহেব আমিরের মতো হাসান কেও ভালবাসতো, হাসানের কোন সমস্যা হলে উদ্বিগ্ন হয়ে যেতো এমন যে হাসান তার আরেক টা পুত্র? এটা আমিরের পছন্দ ছিলো না। মুলত আঘা সাহেব আমির কে কিছুটা দুরে দুরেই রাখতো নিজের ভালবাসা থেকে। এটাই হাসানের প্রতি আমিরের হিংসার জায়গা ছিল। হাসানকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার জন্য সে তার জন্ম দিনে তার বাবার থেকে পাওয়া ঘড়ি আর একটা খাম (টাকার) হাসানের ঘরে রেখে আসে। আলী চুরির অপবাদ সহ্য করতে না পেরে ইচ্ছা করেই আঘা সাহেবের বাড়ি ত্যাগ করেছে। যদিও আঘা সাহেব তা চাননি, অনেক কেঁদেছেন, বুঝিয়েছেন বাড়িতে থাকার জন্য। কেন তার এতো কান্না? আর এই একটা ভুলই আমিরে জীবনে নতুন অধ্যায়ের সুচনা করবে, ভাবাবে, নতুন একজন মানুষ হতেও সাহায্য করবে। এরপর কেটে গেছে কয়েকটা বছর। শুরু হয়েছে আফগানিস্তানের যুদ্ধ, শরনার্থী হিসেবে ১৮ বছর বয়সে আমিরকে পাড়ি জমাতে হয়েছে আমেরিকাতে। আমেরিকায় কাটানো বিশ বছরের জীবনে সে বিয়ে করে সংসার পেতেছে, তার বাবারও বিয়োগ ঘটেছে। আটত্রিশ বছর বয়সে কোন অজানা সত্যি তাকে আফগানিস্তানে ফিরিয়ে এনেছে? কোন সত্যি হাসানের প্রতি তার আলাদা ভালবাসার জন্ম দিয়েছে? অতীতে করা ভুলের প্রায়শ্চিত্ত সে কিভাবে করেছে? কেন সে কাবুলের মতো তালেবানে জমাট বিপজ্জনক জায়গাতে পদার্পণ করেছে? কেন তাকে ছেলেবেলার শত্রু আসিফের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে? কেন সে হাসানের ছেলে সোহরাব কে উদ্ধার করার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেছে? সোহরাব কে আমেরিকায় নিয়ে আসার জন্য তাকে অগনিত বাঁধা পাড়ি দিতে হয়েছে, কেন তিনি এ সকল বাঁধাকে কিছুই মনে করেনি? এ সকল প্রশ্নের উত্তর পেতে পড়তে হবে খালেদ হোসাইন এর "দ্য কাইট রানার।" ট্রাজেডি শুধু নাটকে উপস্থিত তা নয়, এই উপন্যাসটিকে একটা ট্রাজেডি ক্ষেত্র বললেও কোন ভুল হবে না। উপন্যাসের প্রেক্ষাপট: উপন্যাসের প্রেক্ষাপট আফগান যুদ্ধ কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। যে সময়টাতে অনেক সাজানো গোছানো জীবন ফেলে অনেক ধনী পরিবারকেও শরনার্থী হতে হয়েছে পাকিস্তান, আমেরিকার মতো দেশ গুলোতে। আবার অনেকে আছে যারা দেশকে ভালবাসে বলে দেশের মাটি আকড়ে পড়ে থেকেছে, সহ্য করেছে তালেবানের অত্যাচার, ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরনে হারিয়েছে স্বজনদের। ধর্মের কথা বললেও তালেবানদের কার্যাবলীর মধ্যে মানবিক কিছু ছিলো এমনটা দেখা যায়নি, দেখা গিয়েছে তাদের পাশবিক নির্যাতন, শিশু ধর্ষনের মতো জঘন্য কাজও তারা করেছে, আসলে ধর্মের নামে তারা শুধু নোংরা নির্যাতন চালিয়েছে অসহায় মানুষগুলোর উপরে। উপন্যাসটিতে একটা বিষয় লক্ষনীয়, আপাত দৃষ্টিতে হাজারা গোত্রের লোকগুলো আফগানিস্তানের লোকদের চোখে ছোট জাত ছিলো, তারা তাদের কে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের চোখে দেখতো, বিশ্বাসঘাতক বলে বিবেচনা করতো আর তালেবান সম্প্রদায় এদেরকে আরো খারাপ নজরে রাখতো, পুরো হাজারা সম্প্রদায়কে তারা নির্মম ভাবে হত্যা করে। উপন্যাস নিয়ে নিজস্ব কিছু কথা: আমরা জেনেছি যে, আমির গল্পের প্রধান চরিত্র, তবে আমার মতে হাসান এবং আমির চরিত্রের তুলনা করলে হাসানকেই প্রধান চরিত্র হিসেবে নির্ভুল মনে হবে। যেখানে হাসান বিপদে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, আর আমির ভীরুতার। যখন হাসান শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছিলো আমির নির্বাক চেয়ে দেখেছে, মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে, এত কিছুর পরও হাসান তার বন্ধুকে আগের মতোই ভালোবেসেছে। তাই প্রথম দিক থেকে আমির চরিত্রটা প্রধান হওয়ার উপযোগী নয়। একটা বই পড়তে যেয়ে পাঠকের মধ্যে ন্যাচারাল জাজমেন্ট চলেই আসে। সেক্ষেত্রে সোহরাবকে ধৈর্যশীলই বলা যায় কিন্তু- যখন আমির সোহরাবকে আমেরিকায় মাইগ্রেশন করার জন্য নানা রকম বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, সামান্য একটা কথার জন্য সোহরাব কব্জির শিরা কেটে আত্বহত্যা করতে চেষ্টা করছে। বিষয়টা খুবই হতাশাজনক যদিও আমির সেটাকে হতাশা হিসেবে নেয় নি। তাকে সুস্থ করার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে তার জীবনের প্রথম প্রার্থনাটা করেছে। বিষয়টা এমন নাও হতে পারতো সোহরাব ছোট হলেও বিবেচক ছিল, বুদ্ধিমান ছিলো। তাই সে আরো একটু বিবেচনা করতে পারতো। উপন্যাসটিতে কয়েকটা জীবনকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আর তুলে ধরা হয়েছে তাদের জীবনের খুঁটিনাটি। লেখক তার জীবনের ৩৮ বছরের একটা সমীকরণ দাঁড় করিয়েছেন, যার কিছু অংশ আফগানিস্তান আর কিছু অংশ আমেরিকায় কাটানো। ভাইয়ের মতো বন্ধুর ছেলেকে বাঁচানোর জন্য তার মতের পরিবর্তন ,নাস্তিক থেকে আস্তিক হওয়া। তাঁর এবং তাঁর বাবার করা ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করা, ছোট্ট মুখে একটু হাসি ফোটানের জন্য তার হাজারো প্রয়াশ, এ সবকিছুই উপন্যাসটিকে পূর্ণতা দিয়েছে। একজন প্রিয় লেখক হয়ে ওঠার জন্য খালেদ হোসাইনি এর “দ্য কাইট রানার” বইটি পড়াই যথেষ্ট। উপন্যাসটিতে লেখক ঘটনা গুলো কে এতটা সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করেছেন যা আপনাকে ভাবাবে, আপনার ভেতরটা কেঁপে উঠবে, চোখের জল আটকিয়ে রাখতে পারবেন কিনা সেই গ্যারান্টি আমি দিতে পারছি না, যেখানে আমি পারিনি। উপন্যাসটিতে অনেক গুলো ঘটনা, যেগুলো খুবই হৃদয় বিদারক। বিচারক হিসেবে আপনি একদিক থেকে অবশ্যই ঘৃণা করবেন আর অপরদিকের প্রতি আপনার মমতার শেষ থাকবে না।ভালবাসবেন কিছু চরিত্রকে, তাদের বিয়োগ আপনাকে অন্য রকম বেদনায় মনকে সিক্ত করবে।
Was this review helpful to you?
or
'দ্য কাইট রানার' আফগান বংশোদ্ভুত আমেরিকান লেখক খালেদ হোসাইনির প্রথম উপন্যাস। প্রথম উপন্যাসেই হোসাইনি তার শক্তিশালী লেখনী প্রতিভার দারুণ বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছেন। সমসাময়িক উপন্যাস ঘরানার এই বইটি বিচিত্র আবেগের সতর্ক সংমিশ্রণে রচিত একটি হৃদয়গ্রাহী উপাখ্যান, যা পাঠকহৃদয়কে গভীরভাবে আলোড়িত করতে সক্ষম। অসাধারণ এই উপন্যাসটি রচিত হয়েছে লেখকের মাতৃভূমি আফগানিস্তানের প্রেক্ষাপটে। রাশিয়ান আগ্রাসনে জর্জরিত ও তালিবান অধ্যুষিত যে যুদ্ধবিধ্বস্ত, ধূসর আফগানিস্তানের চিত্র আমরা দেখে অভ্যস্ত, তার বাইরে যুদ্ধ পূর্ববর্তী, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তানের এক দুর্লভ চিত্র অঙ্কিত হয়েছে এই বইটিতে, যা একে করেছে অনন্য। উপন্যাসের কাহিনীর শুরু ১৯৭০ এর দশকের পুরনো, স্বাধীন আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে। সেই সময়ের কাবুলের শিশুদের শুভ্র শৈশবের বর্ণনা পাওয়া যায় বইটির প্রথম পৃষ্ঠাগুলোতে। কাবুলের অভিজাত ওয়াজির আকবর খান এলাকায় বাস করা বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে আমির ও তার বাবার ভৃত্য আলীর ছেলে, তার বন্ধু হাসানের দুষ্টুমিভরা দিনগুলো চমৎকার কেটে যাচ্ছিলো। মা মরা ছেলে আমিরের দুঃখ শুধু ছিল একটাই, বাবাকে কাছে না পাওয়া। তার প্রিয় বাবা যেন কাছে থেকেও অধরা, যেন তিনি আমিরকে অপত্যস্নেহ থেকে বঞ্চিত করেই স্বস্তি পেতে চান। কিন্তু নাছোড়বান্দা আমির নানা সম্ভব-অসম্ভব উপায়ে বাবার ভালোবাসা অর্জনের জন্য লড়াই করে যেত। তা সে কচি হাতে গল্প লিখে বাবা মুগ্ধ হবেন ভেবে তাকে পড়তে দেয়াই হোক বা ভালো না লাগলেও বাবার প্রিয় খেলা ফুটবলের পাকা দর্শক বনে যাওয়ার অভিনয় করেই হোক। ১৯৭৫ সালের এক সকাল এনে দিল আমিরের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ, যা তাকে বাবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে সহায়তা করতে পারে। সেদিন ছিল আফগানিস্তানের জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী খেলা ঘুড়ি ওড়ানোকে কেন্দ্র করে আয়োজিত একটি স্থানীয় প্রতিযোগিতার দিন। আমির ও হাসান অন্যান্য আফগান শিশুর মতোই ঘুড়ি ওড়ানোতে দক্ষ ছিল। তাই তারা প্রতিযোগীতায় জয়ী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ও প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে তাদের ঘুড়ি ওড়ানো উৎসবে অংশ নিল এবং আমির তাতে প্রথম হলো। সেসময়ের রীতি ছিলো, বিজয়ী ঘুড়িটিকে কুড়িয়ে এনে স্মারক হিসেবে বসার ঘরে সাজিয়ে রাখা। হাসান ঘুড়ির গতিপথ না দেখেই ঘুড়ির পতনস্থল চিহ্নিত করতে ওস্তাদ ছিল। তাই সে বিজয়ী নীল ঘুড়িটিকে কুড়িয়ে আনতে রওনা দিলো। অনেক সময় পার হয়ে গেলেও হাসান ফিরে না আসায় চিন্তিত আমির তাকে খুঁজতে বের হলো। খুঁজতে গিয়ে সে হাসানকে আবিষ্কার করে এক গলিপথে এলাকার বদমাশ ছেলেদের হাতে জঘন্য বুলিংয়ের শিকার হতে। কিন্তু আমির ভয়ে সেদিন হাসানের পাশে দাঁড়ালো না । ঘুড়ি প্রতিযোগিতা হয়তো বাবার সাথে তার সম্পর্কের টানাপোড়েন হ্রাস করেছিল, হয়তো সে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের বাহবা কুড়িয়েছিল, কিন্তু সেদিন হাসানের পাশে না দাঁড়ানোর তীব্র অপরাধবোধ তাকে প্রতিনিয়ত বিদ্ধ করছিলো। হাসানকে দেখলেই তা আরো তীব্রভাবে তাকে দংশন করতো। এটা সহ্য করতে না পেরে আমির হাসান ও তার বাবাকে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো। এক বৃষ্টিভেজা দিনে হাসান ও আলী যখন তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছিলো, তখন তার বাবার তীব্র কষ্ট ও তাদের ফেরাবার আকুতি তার অপরাধবোধকে বাড়িয়ে দিলেও সে নিশ্চুপ থেকে আরেকটি অপরাধ করলো। অপরাধবোধে জর্জরিত আমিরের দিনগুলো হয়তো অনুশোচনার তাড়া খেয়েই কেটে যেতো। কিন্তু রাশিয়ার আক্রমণে আফগানিস্তান তখন মৃত্যপুরীতে পরিণত হয়েছে। তাই আমির ও তার বাবা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গেল আমেরিকায়। আমেরিকায় নতুন জীবন শুরু হয় আমিরের। আমির একজন সফল লেখক হয়ে ওঠে ও প্রিয় রমনীর ভালোবাসা অর্জন করে। কিন্তু পুরনো পাপের অপরাধবোধ তাকে তাড়িয়ে বেড়াত, তাই সে খুঁজতে থাকে এ থেকে মুক্তির উপায়। ২০০১ সালে তার বাবার পুরনো বন্ধু রহিম খান পাকিস্তান থেকে ফোন করে তাকে বলল, "ভালো হওয়ার আরেকটা সুযোগ আছে।" সেই সুযোগটিই লুফে নিতে আমির ছুটল পাকিস্তানে। সেখানে রহিম খানের কাছে সে শুনলো অবিশ্বাস্য এক সত্য ঘটনার কথা, যার মাধ্যমে সে নতুনভাবে আবিষ্কার করল তার শৈশবকে। আবিষ্কার করলো তার বাবার অদ্ভুত আচরণের রহস্য এবং হাসানের সাথে তার প্রকৃত সম্পর্ক। তারপর সে কলুষিত অতীতকে মুছে দিতে এক ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে অংশ নিতে যাত্রা করে আফগানিস্তানে। অবশেষে আমির কি পেরেছিলো তার জীবনজুড়ে বয়ে বেড়ানো অপরাধবোধের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে? আর কি হাসানের সাথে দেখা হয়েছিলো তার? জানতে হলে পড়তে হবে বইটি। 'দ্য কাইট রানার' উপন্যাসে উঠে এসেছে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিন দশকের আফগানিস্তানের চিত্র। এখানে যেমন আপনি পাবেন শিশুদের নিষ্পাপ শৈশব উপহার দেয়া নিরাপদ আফগানিস্তান, তেমনি পাবেন রাশিয়া- আফগানিস্তান যু্দ্ধের সময়ের বিভীষিকাময় আফগানিস্তান। তালিবান অধ্যুষিত আফগানিস্তানের চিত্রও এখানে ফুটে উঠেছে চমৎকারভাবে। বইটিতে নানা রাজনৈতিক ঘটনাপুঞ্জির বিপরীতে ব্যক্তিগত জীবনের গল্প বলেছেন লেখক। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালে। প্রকাশের পরে এটি পাঠক ও সমালোচকমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়, প্রকাশিত হয় তিন ডজন দেশে। সারাবিশ্বে জনপ্রিয়তা পেলেও খোদ আফগানিস্তানের পাঠকরাই বইটিকে ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। তবে এখানে আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাস নিয়ে যে মর্মভেদী ও নিরীক্ষাধর্মী বর্ণনা উঠে এসেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। হোসাইনির এই সাহিত্যকর্মটি একইসাথে অতীতে বিস্মৃত এমন একটি জাতির বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক জীবনকে তুলে ধরেছে, যা কি না বর্তমান সময়ের বিশ্বরাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। বইটিতে লেখক আফগানিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ পশতু সম্প্রদায় ও সংখ্যালঘিষ্ঠ হাজারা সম্প্রদায়ের মধ্যকার জাতিগত বৈষম্যকেও চিত্রিত করেছেন। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আমির, তার বাবা ও তার বাবার বন্ধুরা পশতু, অভিজাত আফগান। অন্যদিকে, আমিরদের বাড়ির ভৃত্য আলী ও তার ছেলে হাসান হাজারা। আমির বড়লোক বাবার সুবিধাপুষ্ট ছেলে, যে দামী স্কুলে পড়ে। অন্যদিকে, হাসান ছোট্ট কুটিরে বাস করা অশিক্ষিত, সুবিধাবঞ্চিত শিশু। আমির হাসানের এই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাকে ছোট করে, তাকে শাহানামা পড়ে শোনানোর সময় ভুল শোনায়, তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। বইটিতে রয়েছে শৈশবের অবিচ্ছেদ্য অংশ- খেলাধুলা, ঘোরাঘুরি, দুষ্টুমি, বন্ধুত্ব থেকে বুলিংয়ের শিকার হওয়া। রয়েছে আপনজনের প্রতি বিশ্বস্ততা ও বিশ্বাসঘাতকতার কথা। গল্পের আড়ালে বইটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। লেখক বইটিতে দেখিয়েছেন কীভাবে আমাদের ছোটবেলার ভুলগুলো পরবর্তী জীবনকে প্রভাবিত করে। সবমিলিয়ে 'দ্য কাইট রানার' একইসাথে বন্ধুত্ব, বিশ্বস্ততা, বিশ্বাসঘাতকতা, ভালোবাসা, সহিংসতা, অপরাধবোধ, মুক্তি এবং টিকে থাকার গল্প। বইটি আফগানিস্তানের প্রেক্ষাপটে লেখা হলেও এর মূল গল্পটি সার্বজনীন, যা যেকোনো দেশ, জাতি বা সংস্কৃতির প্রেক্ষিতে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। বইটি পড়ে আপনি প্রধান চরিত্র আমিরের প্রতি সহানুভূতি অনুভব করবেন, তার কষ্টে কষ্ট পাবেন, তার কুকর্মে রাগান্বিত হবেন। এটি খালেদ হোসাইনির প্রথম উপন্যাস হলেও তিনি বইটির চরিত্রচিত্রণ ও কাহিনী বর্ণনায় চমৎকার মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। হোসাইনির গল্পকথন সহজ ও সাবলীল হলেও তা যথেষ্ট শক্তিশালী। বইটির কাহিনীসূত্র যথেষ্ট শক্তিশালী, তবে গল্পকথনের ভঙ্গিটাও দারুণ। বইয়ের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে প্রধান চরিত্র আমিরের জবানীতে, উত্তম পুরুষে।২০০৭ সালে উপন্যাসটি অবলম্বনে হলিউডে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। একই নামের এই চলচিত্রটি পরিচালনা করেন মার্ক ফর্স্টার। খালেদ হোসাইনি জন্মগ্রহণ করেন আফগানিস্তানের কাবুলে। তার বাবা ছিলেন আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কুটনীতিক, আর মা হাই স্কুলের ফার্সি ভাষার শিক্ষিকা। আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু হলে হোসাইনির পরিবার আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। পরে হোসাইনি আমেরিকার নাগরিকত্ব লাভ করেন। তিনি সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৮৮ সালে বায়োলজিতে ডিগ্রী নেন। পরের বছর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগো স্কুল অব মেডিসিন থেকে ১৯৯৩ সালে ডিগ্রী নেন। ১০ বছর চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার পর তিনি চিকিৎসাপেশা থেকে অবসর নেন এবং পুরোপুরি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ২০০১ সালে তিনি 'দ্য কাইট রানার' লেখা শুরু করেন এবং ২০০৩ সালে এটি প্রকাশিত হয়। তার তিনটি বই আন্তর্জাতিক বেস্টসেলারের মর্যাদা পেয়েছে- দ্য কাইট রানার, অ্যা থাউজেন্ড স্প্লেনডিড সান এবং দ্য মাউন্টেন ইকোড। তিনি বর্তমানে পরিবারের সাথে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করছেন।
Was this review helpful to you?
or
তখন আফগানিস্তানের এত খারাপ দশা ছিল না, ছিল না তালেবান, কিংবা বাইরের দুনিয়ার আগ্রাসন। এমনকি টেলিভিশনও ছিল না। সেই সময়ের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন আমির আগা নামক ১২ বছরের এক ছেলের পরিবার। আমির আগার একমাত্র খেলার সঙ্গী ছিল তার দাস হাসান। হাসানের বাবা ও ছিল আমিরের বাবার ছোটবেলার সাথী। একসাথে ঘুড়ি ওড়ানো, শেষ ঘুড়িকে কব্জা করে নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করা নিয়ে তাদের শৈশব। এক শীতে ঘুড়ি দৌড় নিয়ে আমিরের সামনেই লাঞ্ছিত হয় হাসান। বদলে যায় সব কিছু। সেই সাথে বদলায় আফগানিস্তান। আমির আগার নুতন ঠিকানা হয় আমেরিকা। বাবার মৃত্যু, প্রেম, আর প্রতিদিনের জীবনের মাঝে ভুলে যায় তার কাবুল, আর বন্ধু হাসানের কথা। বহু বছর পর আমির নিজের বাবার সম্পর্কে এক সত্য জানার পর ছুটে যায় হাসানের খোঁজে। ফিরে যায় তার শৈশবের কাবুলে। কিন্তু এবারের কাবুল তাকে অনেক কিছু দেখায়, অনেক বাস্তবতার সামনে নিয়ে যায় যা সে কল্পনা ও করেনি কখনো।
Was this review helpful to you?
or
"দা কাইট রানার" খালেদ হোসেইনীর অতিমাত্রায় সুন্দর এবং একইসাথে বেদনাদায়ক একটি গল্প যার মূল নায়ক আমির, এক আফগান বালক যে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হাসানকে ১২ বছর বয়সে ধোঁকা দেয়, বিশ্বাসভঙ্গের সামিল কাজ করে। আমির তখন থেকে পরবর্তী কয়েক দশক এই কর্মের জন্য এক গভীর বেদনা এবং কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করতে থাকে, সবসময় ওই ঘটনার প্রায়শ্চিত্ত করতে চায়। আমির কাবুলের একজন অতি সফল এবং ধনী বাবা "আঘা" সাহেবের মাতৃহারা একমাত্র সন্তান। আমিরের পরিবার জহির শাহ'র আমলে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তাদের চাকর আলী এবং আলীর ছেলে হাসানের সাথে বাস করত। আলীকে আঘা সাহেব বন্ধু এবং ভাইয়ের মতই স্নেহ করতেন, আর হাসান আমিরের সমবয়সী ও তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। আমির ও হাসান যদিও সবসময় একইসাথে থাকতো কিন্তু আমিরের চোখে এই বন্ধুত্ব সমপর্যায়ের ছিলনা। সমাজশ্রেণী ব্যবস্থা ছাড়াও ধর্ম এবং গোত্রের কারনে আমির হাসানকে আলাদা চোখে দেখত। আমির হল ধনী ও সুন্নী, হাসান ছিল গরীব ও শিয়া সম্প্রদায়ের। আমির তার বাবার বন্ধুর (রহিম সাহেবের) কাছ থেকে জানতে পেরেছিল যে, আলী ও হাসান 'হাজারা' গোত্রের যারা সমাজের অনেক নীচু সম্প্রদায়ের। এরপরও আঘা সাহেব হাসানকে সন্তানতুল্য স্নেহ করতেন এবং আলীকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে দেখতেন। আমির তার বাবার হাসানের প্রতি অতিমাত্রায় স্নেহ ও প্রীতি দেখে হাসানকে হিংসা করত। এক সন্ধ্যায় ঘুড়ি প্রতিযোগিতায় আমিরের জন্য কেটে যাওয়া ঘুড়ি আনতে যেয়ে হাসান কাবুলের এক মেঠো পথে প্রভাবশালী পশতূন পরিবারের আসিফ নামক এক কিশোরের দ্বারা শারীরিকভাবে লাঞ্চিত হয়। আসিফ আমিরের সাথে পূর্ব-দ্বন্দ্বের জের ধরে হাসানের উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। আমির যদিও ঘটনার একমাত্র চাক্ষুষ সাক্ষী কিন্তু সে হাসানের সাহায্যে তো এগিয়ে গেলই না বরং তার বন্ধুকে লাঞ্চিত হতে দেখল। আমির অসীম লজ্জাবোধ ও পাপবোধে আক্রান্ত হল এই ঘটনার ফলে। শীগ্রই আমিরের পাপবোধ এমন মারাত্মক রূপ ধারন করল যে সে তার মনের ব্যাথা কমানোর জন্য হাসানের উপর চুরির অভিযোগ আনে, যাতে হাসান ও তার বাবা আলী আমিরদের ছেড়ে চলে যায়। আলী ও হাসান আমিরদের পরিবার ছেড়ে হাজারা গ্রামে চলে যায়, আঘা সাহেবের শত বাধা ও কান্না সত্ত্বেও। এরপর কাহিনীতে আফগানিস্তানের যুদ্ধ প্রবেশ করল এবং রাজনীতির নির্মম পরিহাস আমির ও তার বাবাকে কাবুল ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যামেরিকায় পালিয়ে যেতে বাধ্য করল। অ্যামেরিকায় আঘা সাহেব এক পেট্রোল পাম্পে চাকরি নেন এবং ছেলের পড়াশুনার খরচ চালাতে থাকেন। আঘা সাহেব অ্যামেরিকার এই নতুন জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হন। আরও প্রায় বিশ বছর পর ২০০০ সালে আমিরের বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রহিম খান আমিরকে পাকিস্তানের পেশোয়ারে আসতে বলেন যেখানে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। রহিম সাহেব আমিরকে বলেন, প্রায়শ্চিত্তের এখনও সময় আছে। আমির মৃত্যুপথযাত্রী রহিম সাহেবের এই শেষ আহবানে সাড়া দিল এবং পাকিস্তানের উদ্দেশে রওয়ানা দিল। পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানের পথে সে নির্মম থেকে নির্মমতম নৃশংসতার সাক্ষী হল। যুদ্ধবিধ্বস্ত তালিবান নিয়ন্ত্রিত কাবুলে পৌঁছে আমির তার ছোটবেলার প্রিয় শহরকে ভঙ্গুর অবস্থায় দেখে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হল। হাসানকে খুঁজতে এসে সে আরও নির্মম ভয়ংকর ঘটনার সম্মুখীন হয়। অনেক বছরের লুকায়িত সত্য সে জানতে পারে। আমির কী পারবে তার ছোটবেলার বন্ধু হাসানের সাথে বিশ্বাসভঙ্গের প্রায়শ্চিত্ত করতে? কীভাবে করবে? আমি পুরোপুরি থ্রিলার ও ফ্যান্টাসি খেকো হলেও খালেদ হোসেইনীর এই মহাকাব্যিক অসাধারণ উপন্যাস "দ্যা কাইট রানার" আমার অন্যতম প্রিয় একটা বই। সাধারনত দেখা যায় সমালোচকদের দৃষ্টিতে যে বই অতি উৎকৃষ্ট মানের হয়, তা আমাদের মত সাধারন পাঠকদের জন্য প্রায়ই অখাদ্যের সামিল হয়। এক্ষেত্রে খালেদ হোসেইনী পুরোপুরি ভিন্ন। লেখক এই উপন্যাসে যুদ্ধ পূর্ববর্তী আফঘানিস্তানের নির্মল সুন্দর রূপ, সোভিয়েত যুদ্ধের নির্মমতা এবং যুদ্ধ পরবর্তী তালিবানদের নৃশংসতা এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে যা যেকোনো পর্যায়ের পাঠককে মুগ্ধ করতে বাধ্য। কাহিনী আপাতদৃষ্টিতে খুবই সাধারন মনে হলেও লেখক তার অপূর্ব লেখনীর মাধ্যমে এই কাহিনীকে অতিমাত্রায় অসাধারনে পরিণত করেছেন। ২০০৩ সালে প্রকাশিত খালেদ হোসেইনীর প্রথম উপন্যাসটি আমার মতে সবারই ভালো লাগবে। ২০০৮ সালে বইটা কিনার পর থেকে এই পর্যন্ত আমি ৫ বার পড়ে ফেলেছি এই অসাধারন উপন্যাসটি। এই বই থেকে নেওয়া কিছু অদ্ভুত সুন্দর উক্তিঃ ১) "It may be unfair, but what happens in a few days sometimes even a single day, can change the course of whole lifetime..." ২) "There is only one sin, and that is theft...when you tell a lie, you steal someones right to the truth" ৩) "Time can be a greedy thing, sometimes it steals the details for itself" ৪) "There is a way to be good again..."