User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ভিন্ন ধর্মাবলম্বী দুই নারী পুরুষের প্রেম নিয়ে এ উপন্যাস। এর সঙ্গে সমাজ বাস্তবতা, মানুষের মন প্রভৃতি বিষয় তুলে এনেছেন তারাশঙ্কর। একটি সাধারণ প্রেমের উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি পৌঁছে গেছেন মানুষের বিশ্বাস, ঈশ্বরতত্ত্বর মতো জটিল বিষয়ের কাছে। তাই আপাত দৃষ্টিতে প্রেমের উপন্যাস হলেও এই বইটি আরও অনেক গভীর বার্তা দেয়। অসাধারণ লেখনীতে অসাধারন একটি বই
Was this review helpful to you?
or
☆☆☆☆
Was this review helpful to you?
or
কলেজ জীবনের প্রথম দিনটা কী করে কাটিয়েছিলাম মনে পড়ে কি? সবটাই নিখুঁত ভাবে মনে পড়ে না; তবে কিছু কিছু পড়ে। স্কুলের গন্ডি পার হয়ে আসবার স্বস্তি (আমার জন্য স্বস্তিই বটে), নতুন নতুন বন্ধুদের সাথে, শিক্ষক- শিক্ষিকাদের সাথে পরিচয়, বারান্দায় দাঁড়িয়ে নওযাপাড়া কলেজের বিশাল মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকা। যেটা নিখুঁত ভাবে মনে পড়ে সেটা হচ্ছে প্রথমদিনেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হওয়া। স্কুলে থাকতেই এর সদস্য হবার আনন্দটা জানা ছিল। আর তাই কলেজে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কার্যক্রম আছে এটা জানা মাত্রই শ্রদ্ধেয় শিক্ষক হাফিজুর রহমানের সহায়তায় আবার সেই আনন্দের ভাগ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। প্রথম, দ্বিতীয় নাকি কততম বই হিসেবে যে বইটা আমার সাথে কলেজ থেকে বাসা পর্যন্ত এলো সেটা আবার মনে নেই। কিন্তু আসবার পর আর ফিরে যায়নি। না, না, ভাববেন না যে বইটা মেরে দিয়েছিলাম। বই ঠিকই ফেরত দিয়েছিলাম। কিন্তু এটা প্রথমবার পড়বার যে সুখ, স্মৃতি এবং একবার পড়বার পর আবার, আরেকবার পড়বার যে আকুতি সেগুলি এখনো আমাকে ছেড়ে যায়নি। বইটার নাম- "সপ্তপদী", লেখক- তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। একজন মানুষের গল্প এই ‘সপ্তপদী।’ মেধাবী, ডানপিটে কালাচাঁদ গুপ্তের রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামী হয়ে উঠবার পরম্পরা এই ‘সপ্তপদী।’ রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামী একজন ভারতীয় সন্ন্যাসী, আদিবাসী দেহাতি মানুষের অতি কাছের আপনজন পাগলা পাদরী, তাঁদের অসুখে-বিসুখে একমাত্র ভরসার বাবাসাহেব। এই বাবাসাহেবের কাহিনীই ‘সপ্তপদী।’ নামকরা ডাক্তার হবার বাসনা হৃদয়ে বয়ে পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান বৈদ্যবংশের সন্তান কালাচাঁদ গুপ্তের আগমন ঘটে কলকাতা শহরে। সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হবার কিছু আগে। শহরের হালচালে কালাচাঁদ গুপ্ত হয়ে যায় কৃষ্ণেন্দু গুপ্ত। নাম বদলালেও নামের মানে বদলায় না, বদলায় না ধর্ম। এই ধর্মও সে এক সময় বদলায়, কিন্তু সেটা অনেক পরের ঘটনা। একে একে তাঁর পরিচয় ঘটে খাস ইংরেজ জন ক্লেটন, পলি ব্রাউন, মিঃ ব্রাউন এবং জন ক্লেটনের অপূর্ব সুন্দরী বাগদত্তা অ্যাংলো ইন্ডিয়ান রিনা ব্রাউনের সাথে। ভালোবেসে ফেলে সে রিনা ব্রাউনকে। ‘‘রিনা ব্রাউনের মূল্যের তুলনায় একদিন ঈশ্বরের মূল্যও তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল কৃষ্ণস্বামীর কাছে। তখন তিনি কৃষ্ণস্বামী ছিলেন না’’- লিখেছেন অমর কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তাহলে কী ভাবে তিনি কৃষ্ণস্বামী হলেন? রিনা ব্রাউনকে পেতে হলে ধর্ম পাল্টে কৃষ্ণেন্দুকে খ্রিষ্টান হতে হবে- রিনার বাবা মিঃ ব্রাউনের দেয়া এই শর্তের ফলে খ্রিষ্টান হন কৃষ্ণস্বামী। কিন্তু ধর্ম বদলেও পেলেন না রিনাকে। যে মানুষ একটি মেয়ের জন্য নিজের ঈশ্বরকে ছাড়তে পারে সে অন্য কোনো মেয়ের জন্য তাকেও ছাড়তে পারবে- এই উপলব্ধিতে কৃষ্ণেন্দুকে প্রত্যাখান করেন রিনা। ঈশ্বরে বা ধর্মে কোনো বিশ্বাস কৃষ্ণেন্দুর ছিল না। তিনি সব সময় মানুষকেই প্রধান জ্ঞান করে এসেছেন। কিন্তু রিনা ব্রাউনের প্রত্যাখান তাকে এই ঈশ্বরের সন্ধানে নিবেদিত করে। এবং ঈশ্বরের সন্ধান তিনি পান। রোগে-শোকে কাতর, যুদ্ধের পরোক্ষ ছোবলে অসহায়, অশিক্ষিত আদিবাসী দেহাতি মানুষগুলির সেবা করবার মধ্যে তিনি ঈশ্বরের সন্ধান পান। আর রিনা ব্রাউন? মানুষের ইতিহাস থাকে। ইতিহাসেরও ইতিহাস থাকে। এই ইতিহাসের ইতিহাস ঈশ্বরে প্রবল বিশ্বাসী রিনার কাছ থেকে কেড়ে নেয় তাঁর ঈশ্বরকে। উন্মোচিত হয় ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতবর্ষের মানুষের উপর চালানো ইংরেজদের অনেক অত্যাচারের একদিক। মানুষের প্রতি মানুষের ঘৃণা রিনা ব্রাউনকে করে তোলে তামসী। সত্য গল্পের চেয়েও বিস্ময়কর! ঘোর তমসার রাজ্য থেকেও ফিরে আসে রিনা এবং তাও একদা তাকে ছেড়ে চলে যাওয়া জন ক্লেটন, সর্বোপরি কৃষ্ণস্বামীর কারণেই! পরম যত্নে ‘সপ্তপদী’তে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন এই সকল চরিত্রের কথা। কিন্তু বাড়তি কোনো মহিমা তিনি আরোপ করেননি কারো উপরেই। এ কারণেই কৃষ্ণস্বামী দেবতা হন না, বরং অনেক বেশি মানুষ হয়ে ওঠেন। কুষ্ঠরোগীদের সেবায় আত্মমগ্ন হন। এই আত্মমগ্নতার সুযোগ নিয়ে কুষ্ঠব্যধি তাকেও গ্রাস করে। মানুষ যখন দেবত্ব প্রত্যাখান করে, সকল প্রকার কুসংস্কারের খোলস ঝেড়ে ফেলে প্রকৃতই মানবিক মানুষ হয়ে দেখা দেয় তখন কেন জানি বড় ভালো লাগে। আর এ কারণেই কালা-চাঁদের জোছনা হৃদয়ে মাখবার ইচ্ছাটুকু নিরন্তর।