User login

Sing In with your email

Email Address
Password
Forgot Password?

Not Account Yet? Create Your Free Account

Send

Recipients:
Message:

Share to your friends

Copy link:

    Our Price:

    Regular Price:

    Shipping:Tk. 50

    • Size:
    • Color:
    QTY:

    প্রিয় ,

    সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
    মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?

    Please Login to Continue!

    Our User Product Reviews

    Share your query and ideas with us!

    Customer Reviews

      By nayim uddin

      12 Nov 2023 08:58 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      অসাধারণ হয়েছে।। হাজার বছর বেঁচে থাকবে

      By Rafia Rahman

      08 May 2022 07:49 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বইয়ের নাম : নিষিদ্ধ লোবান লেখক : সৈয়দ শামসুল হক বইয়ের ধরণ : মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস প্রচ্ছদ : মাসুক হেলাল প্রকাশনী : অনন্য প্রথম প্রকাশ : ১৯৮১ পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৭১ মুদ্রিত মূল্য : ১৫০/- রক্ত ...!!! চারিদিকে রক্ত ... কেমন হবে তার গন্ধ? নিশ্বাস ভারি হয়ে যাবে? শ্বাস নিতে কষ্ট হবে? রক্তের গন্ধ কি সবসময় বিকট বলে মনে হয়? নাকি কখনো সুগন্ধি "লোবান" বলেও মনে হয়? দেশের জন্য যাঁরা নিজেদের অকাতরে বিলিয়ে দেয়, মৃত্যুকে খুশি মুখে আলিঙ্গন করে দেশ ও দেশবাসীর জন্য, নিজের রক্ত দিয়ে যারা লিখে যান স্বাধীনতা ; তাঁদের রক্তের সুবাস কি "লোবান" নয়??? ফ্ল্যাপ: মুহূর্তের ভেতর ব্যস্ত হয়ে পড়ে দুজন। নিঃশব্দে একের পর এক লাশগুলো টেনে এনে তারা জড়ো করতে থাকে। সময় অতি অতিক্রান্ত হতে থাকে। চাঁদ আরো সরে আসে। আকাশে আজ মেঘ নেই। চত্বরের ওপর বীভৎস শ্বেতীর মতো ছেঁড়া আলো পড়ে থাকে। কাহিনী সংক্ষেপ: নিঃশব্দ নবগ্রাম স্টেশন! হবেই বা না কেনো? সময়টা যে ১৯৭১। চারিদিকে যুদ্ধের আগুন জ্বলে, কেউ কাউকে বিশ্বাস করছে না। বলা তো যায় না বন্ধুবেশে কখন শত্রু বেড়িয়ে পড়ে!!! ঢাকা থেকে জলেশ্বরীর উদ্দেশ্য রওনা দেয় বিলকিস। জলেশ্বরীতে যে মা-বোন-ভাই সকলেই আছে, তাদের খবর তার জানা নেয়। কিন্তু নবগ্রামে ট্রেন থামলেই যেন চারিদিকে কেমন নিঃশব্দতা নেমে পড়ে। মনে কুডাক ডাকে, সকলেই ঠিক আছে তো? পাকিস্তানিদের হাতে ভাই খোকা ধরা পড়ে নায় তো? আলতাফের খবরও সে জানে না। জলেশ্বরী যাওয়ার পথে বিলকিসের সাথী হয় সিরাজ। অচেনা এই ছেলেটি তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। বিলকিস জানতে পারে সিরাজের এক হৃদয়বিদারক অতীত! কী সেই অতীত? পর্যালোচনা: মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে লেখা সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস "নিষিদ্ধ লোবান"। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে জ্বলছে দেশ, ঢাকা ছেড়ে গ্রামে আসতে বাধ্য হয় বিলকিস। স্বামী আলতাফ জীবিত না মৃত তা সে জানে না। পরিবারের বাকি সদস্যদের সন্ধানে জলেশ্বরীর দিকে পা বাড়ায় সে। নবগ্রামের পথে অচেনা তরুণ সিরাজের সাথে পরিচয় হয়। সিরাজের মানা করা সত্ত্বেও বিলকিস পরিবারের খোঁজে যেতে চায়। অগত্যা সিরাজ তার সঙ্গী হয়। জলেশ্বরীতে পা রেখে যেন মনে হয় মৃত্যুপুরী। কেউ কোথাও নেয়। পরিবারের সদস্যদের হন্যে হয়ে খোঁজে বিলকিস। জানতে পারে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে নদীর ওপারে পাড়ি দিয়েছে। বৃটিশ আমলের মুসলিম লীগের স্থানীয় নেতা আলেফ মোক্তারের কাছ থেকে জানতে পারে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। গ্রামের বাজারে পড়ে আছে অনেক লাশ! লাশের কবর দেওয়া নিষেধ পাকিস্তানি বাহিনীর নির্দেশে। যেন লাশ ছিড়ে খায় শিয়াল-শকুনে। আপনজনদের মৃতদেহের এমন অশ্রদ্ধা বিলকিস মেনে নিতে পারে না। তারা সিদ্ধান্ত নেয় সকল লাশের কবর দিবে দুজনে। উপন্যাসে বিলকিস-সিরাজের মধ্যে দেখা গেছে ভাইবোনের এক অটুট সম্পর্ক। যারা পাকিস্তানিদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হিসেবে গ্রামবাসীদের লাশ কবর দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। বইয়ে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন তৎকালীন সময়ে বাঙালিরা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে যুদ্ধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও বিলকিস-সিরাজ পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে পাকিস্তানি বাহিনীর আদেশ অমান্য করে লাশ করব দেওয়ার মাধ্যমে। যে বিলকিস অন্ধকার ভয় করে আপনজনদের মৃতদেহ তাকে আগ্নেয় মশালে রুপান্তরিত করে। যে মশালের আলোয় আলোকিত হয় যুদ্ধের চেতনা, জ্বলে যায় পাকিস্তানি সৈন্যদের সাহসের ভিত। কিছু কথা: সব্যসাচী লেখক হিসেবে খ্যাত সৈয়দ শামসুল হক বাংলাদেশের প্রখ্যাত একজন সাহিত্যিক, যিনি একাধারে কবিতা, ছোটগল্প, নাটক, উপন্যাস, কাব্যনাট্য, প্রবন্ধসহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাতেই স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে বাংলা সাহিত্যে রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে লেখক সৈয়দ শামসুল হকের "নিষিদ্ধ লোবান" অন্যতম সেরা। উপন্যাসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি নারী ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবস্থান ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাট পাকিস্তানিদের চোখে ছিল সাধারণ ব্যাপার। যার দরুন নির্যাতিত-খুন হয়েছে লাখো বাঙালি। যার রক্তাক্ত দাগ থেকে যাবে সারাজীবন বাঙালির ইতিহাসে ও হৃদয়ে। "নিষিদ্ধ লোবান" পাঠককে পরিচয় করিয়ে দিবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং তৎকালীন বাঙালি সমাজের করুন অবস্থা ও বীরত্বগাথা সংগ্রামের সাথে। বাঙালি পাঠক হৃদয় বারংবার সিক্ত হবে বাঙালির আত্মত্যাগের গৌরবে এবং পূরণ হবে ঘৃণায় পাকিস্তানি সৈন্যদের নির্মমতায়।

    • Was this review helpful to you?

      or

      যুদ্ধদিনের গল্প কখনো শেষ হয়না,হারিয়ে যায়না স্মৃতির পাতায় থাকা চেতনা থেকে।মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে কষ্টার্জিত স্বাধীন ভূখন্ডের স্বাধীনতার ইতিহাসের অতীতটা হিম দেয়া রক্তের মত,পাহাড় ভেদ করার মতই ভয়াবহ।'সব্যসাচী'লেখক সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস " নিষিদ্ধ লোবান" বইটি ৭১' এর মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরী।এছাড়াও এখানে লেখক তুলে ধরেছেন পাকবাহিনীর নির্মম তান্ডবলীলা,বিহারীদের নিষ্ঠুর আচরণ,যুদ্ধে স্বজন হারানো,হারিয়ে অদম্য উচ্ছাসে যুদ্ধ পরিচালনা। বইটির প্রথমদিকে খুব সাধারণ ভাবে শুরু হলেও মুক্তিযুদ্ধের সিংহভাগ ই নির্মমতা তুলে ধরেছেন দুইটি মানুষকে কেন্দ্র করে। তাছাড়া গুটি কয়েক চরিত্রের মাধ্যমে লেখক তুলে ধরেছেন হাজারো মানুষের আর্তনাদ।কেন্দ্রীয় চরিত্র দুটি হল বিলকিস এবং সিরাজ।ঠিক এই উপন্যাসের শেষের লাইনটা " মশালের মত প্রজ্জ্বলিত শরীর দিয়ে তাকে ঠেস দিয়ে ধরে রাখে বিলকিস"।কিছু কিছু বই থাকে যেটা একবার মনোযোগ সহকারে পড়লে দ্বিতীয়বার পড়ার মত ক্ষমতা হবে এমন মানুষ দুর্লভ।৭১ পৃষ্ঠার একটি বই কিন্তু এর লিখনশৈলী পাঠকের হৃদয়ের আবাসভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শিরা-উপশিরায় বয়ে নিয়ে যাবে,ছুঁয়ে যাবে নির্মমতার করুণ ছাঁচ।পাকবাহিনীরা হিন্দুদের উপর যে অমানবিক অত্যাচারের লীলাময় কান্ড ঘটিয়েছে তা ফুটে উঠেছে প্রদীপ ওরফে সিরাজ চরিত্রে।প্রদীপের ছদ্দনাম সিরাজ কেন! এই সূত্র খুঁজে পেতে হলে পাঠককে মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময় অর্থাৎ জলেশ্বরী অঞ্চলে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি প্রতিফলিত হয়েছে সেসব সময়ের সাথে আলিঙ্গন করতে হবে।১৭-১৮ বয়সের একটা ছেলে বিলকিসকে অনুসরণ করে চলছে,ওদিকে বিলকিস ২৫ শে মার্চ কালরাতে নিখোঁজ হওয়া স্বামী আলতাফের খোঁজে উদ্বিগ্ন।সিরাজের সাথে বিলকিসের সম্পর্কটা যেরকমই হোক তীব্র শোক মানুষ কে পাথর করে। ঠিক সেই শোক আর শোকাচ্ছন্নিত না হয়ে প্রবল মনোবল নিয়েই বিলকিস সিরাজের লাশকে দাফন করতে চায়।তৎকালীন সময় জুড়ে নারীদের অসম্মানিত করার চিত্রখানি ফুটতে দেখা যায় পাকিস্তানি এক মেজরের নিকৃষ্ট উক্তিতেঃ "আমি তোমায় সন্তান দিতে পারবো,উত্তম বীজ উত্তম ফসল,তোমার সন্তান খাঁটি মুসলমান হবে।আমরা সেই সন্তান তোমাদের দেবো,তোমার বোনকে দেবো,তোমার মাকে দেবো।যারা হিন্দু নয়,অবাধ্য নয়,আন্দোলন করে না,জাতির এই খেদমত করতে এসেছি"। উক্তিটির মাধ্যমে পাক বাহিনীর নারীদের প্রতি যে অশ্লীল মনোভাব তা ফুঁটে ওঠে।তারা মা বোনকে গণহারে ধর্ষন করেছে নিষ্ঠুর বর্ণনাহীনভাবে।আর তারাই নাকি জাতির খেদমত করতে চায়।এর থেকে পরিহাস্য আর বানোয়াট আর কিছুই নেই।তবে এখানেও বিলকিসকে সাহসী মানুষের ভূমিকায় দেখতে পাওয়া যায় এবং পাশাপাশি উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যুবতীদের প্রতি পদক্ষেপ। ভালো লেগেছে,নিষিদ্ধ লোবানের কিছু হৃদয়স্পর্শী লাইনঃ- কেউ ভেঙে পড়েনা,শোক কখনো এত বড় হয়না যে উঠে দাঁড়ানো যায়না। পালাবার সবচেয়ে ভালো জায়গা শত্রুর ঘাটির ভিতরে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজও আমরা বাঙালীরা চিরকাল বহন করে চলেছি।স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীকার স্ব গৌরবে অর্জিত হলেও তবু সবাই জানিনা সঠিক ইতিহাসের রক্তে ভেজা মাটি আত্মচিৎকার আর সম্ভ্রমহানীর করুণ আর্তনাদ।জানিনা ইতিহাসের গতিপথের বিস্তারিত সংগ্রামময় স্বজাত্যবোধের অধিকার।স্ব উদ্যোগে যুদ্ধের ইতিহাসের এপিঠ ওপিঠ জানতে চাওয়া মানুষ কমই আছে।যারা উপন্যাস ভালোবাসেন এবং মুক্তিযুদ্ধের এই কষ্টার্জিত চেতনা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সকল শ্রেনীর মানুষকে "নিষিদ্ধ লোবান" বইটি পাঠের জন্য জানাই সাদরে আমন্ত্রণ।

      By Shohidul Islam

      12 Mar 2022 11:51 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      valoi

      By limon

      01 Feb 2022 10:41 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      সৈয়দ শামসুল হক এর যুগান্তকারী সৃষ্টি। মুক্তিযুদ্ধের বিষয় নিয়ে অনবদ্য এক উপন্যাস।

      By আরিফ আহমাদ

      09 Dec 2021 02:41 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      দারুণ কিছু বইয়ের তালিকায় রাখার মতো ছিলো

      By Tarekul Islam

      30 Oct 2021 11:09 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      অনেক ভালো মানের বই

      By Manjurul Hasan

      08 Sep 2021 07:13 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      কবি,কথাশিল্পী,নাট্যকার—সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক,ষাটবর্ষপূর্তি উপলক্ষে আমার শ্রদ্ধা ও অভিবাদন গ্রহণ করুন।আপনি ভালো ক'রেই জানেন এক বামনপল্লীর অধিবাসী আমরা,যে-পল্লীতে অতিকায়দের আবির্ভাব দুর্লভ ও বিব্রতকর ঘটনা;এবং যদি কোনো অতিকায় আপন দুর্ভাগ্যবশত আবির্ভূত হয় মাঝারি ও নিম্নমাঝারির কীর্তনমুখর এ-পল্লীতে,তাকে আমরা নিজেদের মাপ অনুসারে কেটে নিয়ে স্বস্তি পাই।এ-কাজ আমরা ক'রে আসছি শতাব্দীর পর শতাব্দী।আপনার কথা ভাবলে আমি বোধ করি আপনার অতিকায় প্রতিভায় আমরা স্বস্তি পাই নি;তাই আমাদের মাপ অনুসারে কেটে নিয়েছি আপনাকে;–আপনার অতিকায়তা সুখকর নয় আ।আমাদের জন্যে;আপঞ্জ যে অতিকায় তা আমরা স্বীকার করতে চাই নি;বরং আপনাকে বহু ক্ষুদ্রকায়ের থেকে ক্ষুদ্র দেখার একটি অভ্যাস আমরা গ'ড়ে তুলে স্বস্তি পাচ্ছি।অন্ধ যেমন কখনো সম্পূর্ণ হাতি দেখে উঠতে পারে না,আমরাও সম্পূর্ণ আপনাকে,সৈয়দ শামসুল হককে,দেখতে পাই নি।অন্ধদের আচরণ, আমি বুঝি, নিরন্তর পীড়ন করেছে আপনাকে;তাই আপনি মহাভারতীয় একটি শব্দ—'সব্যসাচী'–পুনরাবিষ্কার করেছেন নিজের জন্যে;নিজেকে দেখেছেন আধুনিক অর্জুনরূপে। বামনপল্লীতে অর্জুন বেমানান;তবে আমাদের ভাগ্য দু-একটি অর্জুন আমাদের পল্লীতেও জন্মগ্রহণ করে।আমরা স্বস্তি পাই,সুখী হই,একমাত্রিকতায়;আপনি বহুমাত্রিক,এটাই আমাদের অস্বস্তির প্রধান কারণ।যিনি শুধুই কবিতা লেখেন,তাঁকে আমরা বলি কবি;তাঁর নামের সাথে কবির আগে বিশেষণের পর বিশেষণ আমরা ব্যবহার করি;যিনি শুধুই উপন্যাস লেখেন,তাঁকে বলি ঔপন্যাসিক, যিনি শুধুই নাটক লেখে, তাঁকে বলি নাট্যকার;কিন্তু যিনি ঋদ্ধ করেন সাহিত্যের নানান শাখা,যিনি হন সৈয়দ শামসুল হক,তাঁকে কী বলবো আমরা ঠিক ক'রে উঠতে পারি না।বকবি বলবো,না ঔপন্যাসিক, না নাট্যকার? তাঁকে এক শব্দে আমরা ডাকতে পারি না ব'লে তাঁকে দেখি খণ্ডিত ক'রে;খণ্ডিত করতে গিয়ে তাঁকে ক্ষুদ্র ক'রে তুলি গৌণদের থেকে।আমাদের খণ্ডিতকরণপ্রবণতার এক বড়ো শিকার আপনি,সৈয়দ শামসুল হক,আপনি তা জানেন,এবং তা নিশ্চয়ই আপনাকে দশকের পর দশক পীড়িত ক'রে আসছে।আপমি নিজেই জানেন কবিতা, কথাশিল্প,নাটক মিলিয়ে আপনার উচ্চতার স্রষ্টা আধুনিক বাঙলা সাহিত্যে তিনচারজনের বেশি,এবং সমগ্র বাঙলা সাহিত্যেও খুব বেশি মিলবে না।আমাদের খণ্ডিতকরণরোগের বড়ো এক শিকার হয়ে আছেন মহৎ বুদ্ধদেব বসু ;রবীন্দ্রনাথের পর যাঁর সমতুল্য আর কেউ নেই;তাঁর মহিমা আমরা যেমন বুঝি না,আমরা বুঝি না আপনার মহিমাও।কথাশিল্পী হিশেবেই আপনার পরিচয় বেশি,কিন্তু আপনি যে ওই এলাকায় আমাদের প্রধানতম,তা আমরা বলি না,বলতে ভয় পাই,বা আমরা বুঝে উঠতে পারি না।আমাদের বামনপল্লীতে পুরোনোর মূল্য বেশি,আর এ-পল্লীতে কোনো কথা একবার র'টে গেলে তার থেকে আমাদের আর মুক্তি ঘটে না,চিরকাল আমাদের ওই রটনা রটিয়ে যেতে হয়।কথাসাহিত্যের কথা উঠলে আজো সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ আর শওকত ওসমানের কথা বলি,বিশেষ করে বলি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্-র কথা,যেনো তিনিই আমাদের শ্রেষ্ঠ,এমনকি চিরকালের শ্রেষ্ঠ,কথাশিল্পী ;আমরা এখনো ভুল ধারণার মধ্যে রয়েছি।সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ আর শওকত ওসমানের মধ্যে মুসলমানিত্বের পরিচয় লেগে আছে গাঢ়ভাবে,আর শিল্পকলার বিচিত্র সৌন্দর্যও দুর্লভ তাঁদের কথাসাহিত্যে।আর তাঁরা কি অনেকটা উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মনে রেখেই লেখেন নি তাঁদের উপন্যাসগুলো?আপনিই তো প্রথম লিখেছেন আমাদের আপত্তিকর উপন্যাস,যা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বিব্রত করেছে;এবং দেখিয়ে দিয়েছে শিল্পকলা পাঠ্যপুস্তক নয়।আমাদের কথাসাহিত্যকে প্রথম বিচিত্র শিল্পসৌন্দর্যখচিত ক'রে তুলেছেন আপনি;এবং আপনার সৃষ্টিশীলতাও বিস্ময়কর। আপনি নিরীক্ষার পর নিরীক্ষা করেছেন শিল্প ও সৌন্দর্য সৃষ্টির;আপনার কথাশিল্প ও কবিতা ও নাটক নিরীক্ষার বিস্ময়কর বিশ্ব,যার কোনো তুলনা বাঙালি মুসলমানের মধ্যে দেখি না।সমগ্র বাঙলা সাহিত্যেও কি খব বেশি দেখি?বাঙলা কথাশিল্পে জীবন যতোটা বড়ো হয়ে আছে,ততোটা কি বড়ো হ'তে পেরেছে শিল্পকলা ও সৌন্দর্য? তারাশঙ্কর বা বিভূতিভূষণ বা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ে যতোটা জীবন পাই,ততোটা কি পাই সৌন্দর্য ও শিল্পকলা;এবং তাঁদের আজো আমরা যতোটা কিংবদন্তি ভাবি তাঁরা কি ততো বড়ো?তাঁরা কি বাঙলা উপন্যাসকে প্রথার মধ্যেই রেখে দেন নি,শিল্পকলার থেকে স্থূল জীবন নিয়েই বেশি মেতে থাকেন নি?আপনি বেরিয়ে এসেছিলেন ওই প্রথার ভেতর থেকে।শিল্পকলায় নিরীক্ষা মূল্যবান,কিন্তু নিরীক্ষা যদি শুধুই নিরীক্ষা হয়ে থাকে,তাহলে তার বিশেষ মূল্য থাকে না;শিল্পকলায় মূল্যবান হচ্ছে সফল নিরীক্ষা,যা আপনার কথাশিল থেকে কবিতা থেকে নাটক পর্যন্ত বিস্তৃত।আমি এখানে আপনার উপন্যাস বা গল্প বা কবিতা বা নাটকের ভাষ্য লিখতে চাই না,হয়তো কোনোদিনই লিখে উঠতে পারবো না,শুধু জানাতে চাই যে আপনার মহত্ত্ব আমি সব সময়ই উপলব্ধি করি।আপনার বাঙালিত্ব ও আন্তর্জাতিকত্ব যেমন শিল্পিত,তেমনি শিল্পিত আপনার প্রেম ও কাম এবং জীবন।আপনার কবিতার উপাখ্যানতা যেমন শিল্পিত,তেমনি শিল্পিত তার গীতিময়তা;এবং বিস্ময়কর আপনার নাটক—অলীক কুনাট্য রঙ্গের দেশে আপনি নাটককে ক'রে তুলেছেন শিল্পকলা।নাটক আমার কাছে দৃশ্যকাব্য নয়,পাঠ্যকাব্য;মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব,আর আপনার নাটকেই আমি পাই ওই পাঠ্যকাব্যত্ব—সুন্দরী নটী,সুন্দর নট,সুন্দর রঙ্গমঞ্চ বাদ দেয়ার পর যা থাকে,তাই হচ্ছে নাটক,যা পাঠ্য,যা দেখার নয়,অনুভব আর উপলব্ধির।নাটক শুধু উল্লাস আর করতালিতে সমাপ্ত নয়।আপনি যখন তৎসম থেকে চলতি যান,এবং চলতি থেকে আঞ্চলিকে,তখন যা সৃষ্টি হয়,তা হচ্ছে শিল্পকলা;এবং আপনার প্রজন্মের কেউ ওই শিল্পকলাকে আপনার মতো অনুভব করেন নি।আপনি বাঙলা গদ্যকে পরিস্রুত করেছেন,শিল্পকলা ক'রে তুলেছেন।আপনার মধ্যে আমি দেখি সৌন্দর্য আর শিল্পকলা, যা জীবনের থেকে মহৎ,এবং অবিনশ্বর। —হুমায়ুন আজাদ অগ্রন্থিত প্রবন্ধ

      By MUHAMMAD TAYYEB MOHSIN

      13 Aug 2021 09:49 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      Good

      By Md. Sayef Hasan Ratul

      07 Aug 2021 02:41 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      খুবই ভালো বই।

      By Muhommad Badiuzzaman Dider

      01 Jul 2021 10:42 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      সুন্দর লিখা

      By Salim Solaiman

      19 May 2021 11:32 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      সব্যসাচি লেখকের আরেকটি চমৎকার সৃষ্টি

      By puja roy

      13 May 2021 11:44 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      অসাধারণ একটা বই

      By Nahid Hossain Neer

      12 Apr 2021 05:23 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      অসাধারণ লেখনী।

      By Farhana Yesmin

      20 Nov 2020 11:09 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      nice

      By Asif Mahmud

      15 Aug 2020 09:14 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      নিষিদ্ধ লোবান চমৎকার একটা উপন্যাস। অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে চলে গেছিলাম আমি বইটি পড়ে। নিস্তব্ধতা কাজ করছিলো । চমৎকার একটা উপলব্ধি হয়েছিলো আমার। অবশ্যই পড়ার মতো বই একটা।

      By Abdullah Al Refat

      18 Jul 2020 11:00 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      মোটামুটি ভালোই

      By Tasekul Alam

      05 Mar 2020 06:12 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      চমৎকার

      By ahsan habib

      18 Jan 2020 12:18 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      A novel based on the story of the War of Liberation. Surrounded by two characters, built on the northern plains of Bangladesh. Bilkis is the child of a Muslim house. He came to Dhaka to train his mother, brother, sister and sister's children at the village home in April. It is not known whether the husband is alive or dead. Before the specified train station the train leaves and arrives at his village five miles walk. From the station, a boy named Siraj brought him to their house. His brother Bihari and Pakistanis have been shot dead in the market. You are summoned because no one can bury them. Two dead bodies are in the works for burial. Biharis were caught on the second night. Siraj is actually a lamp. In the latter part of the novel, Bilkis is known as Hindu. With Pradeep, who accompanied the Major, fell into a cheetah and sacrificed himself.

    • Was this review helpful to you?

      or

      "নিষিদ্ধ লোবান " বইটি সৈয়দ শামসুল হকের লেখা একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস। উপন্যাসটির মূল চরিত্র বিলকিস এবং সিরাজ। বিলকিস ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা থেকে তার গ্রামে তার বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে চলে আসার সময় ট্রেন তাকে আগেই নামিয়ে দেয়।এই সময় সিরাজ নামে একজন তাকে গ্রামে পৌঁছাতে সাহায্য করে।সে গ্রামে এসে সিরাজের মাধ্যমে জানতে পারে তার ভাইসহ অসংখ্য মানুষকে মিলিটারিরা মেরে ফেলেছে।মিলিটারিরা বলে দিয়েছে কেউ সেই মানুষগুলোকে কবর দিতে পারবে না। কিন্তু তারা দুজন এক রাতে কিছু মানুষকে কবর দেয়। কিন্তু দ্বিতীয় দিন তারা ধরা পড়ে। সিরাজ আসলে প্রদীপ। প্রদীপকে মিলিটারিরা মেরে ফেলে।অবশেষে প্রদীপকে চিতায় পোড়ানোর সময় বিলকিস মেজরকে চিতায় ফেলে দেয় এবং সে নিজেও চিতার আাগুনে আত্নহুতি দেয়।অনেক ভালো একটা উপন্যাস।

      By Md.Mizanur Rahman

      13 Dec 2019 05:47 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বইটি পড়ে অনেক ভাল লাগছে। আমি বইটি নিতে চাই।

      By md. mehadi hassan

      07 Dec 2019 03:59 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      Very nice book indeed

      By Sagor Hasan Ovi

      25 Nov 2019 03:14 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      সাহিত্যের মাধ্যমে যারা একাত্তরের যুদ্ধের চিত্র জানতে চান, তারা জন্য 'নিষিদ্ধ লোবান' পড়ে দেখতে পারেন। “নিষিদ্ধ লোবান” উপন‍্যাস অনুসরণেই গেরিলা চলচ্চিত্র নির্মীত হয়েছে।

      By Dr. Asif Shufian Arnab

      16 Nov 2019 09:07 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      যুদ্ধে লাশ থাকবে তা নতুন কিছু নয়।এই বইতেও লাশ আছে কিন্তু লাশ গুলো অনেক ভারী কারন তা ৭১-এর যুদ্ধে গর্বিত শহীদের লাশ,তবে বিলকিস ভাবে মানুষ মারা গেলে শরীর ভারী হয়ে যায়,বেচে থাকলে আত্না তার শরীরকে পাখির পালকের মত হালকা রাখে। বিলকিস চায় প্রত্যেকটি লাশকে তার প্রাপ্য সম্মান টুকু দিতে ...... এভাবেই লেখক সৈয়দ শামসুল হক 'নিষিদ্ধ লোবান' বইকে এগিয়ে নিয়ে যায় প্রত্যেক লেখকের মনের ভেতর।

      By Tasnim Ara Mim

      31 Oct 2019 11:09 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা হয়েছে এরকম খুব কম বই পড়া হয়েছে আমার। তবে যে মাস্টারপিস বইগুলো আমি পড়েছি তার মধ্যে নিষিদ্ধ লোবান অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীরা কতো অসহায় ছিলো, আত্নীয় হারানোর যে আকুলতা, সবকিছু এসেছে বইটিতে। বইয়ের মুল চরিত্র বিলকিস অনেক কষ্ট করে জীবনের ঝুকি নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে পৌছায়। কিছুদিন আগে ঢাকাতে তার স্বামী নিখোঁজ হয়েছে। অবশেষে গ্রামের বাড়িতে ফিরে চোট ভাইয়ের জন্য। কিন্তু গন্তব্য তে পৌছানোর পর কে যেন তাকে অনুসরন করছে দেখা গেলো। একদিকে পাকিস্তানি হায়েনা আরেকদিকে এই অনুসরণ এসব মিলিয়ে বিলকিস ফিরতে পারবে তো? আর ছোট ভাইটার খোঁজ শেষ পর্যন্ত মিলবে তো?

      By Tamjid Shajol

      23 Oct 2019 02:26 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      সৈয়দ সামসুল হক বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং শক্তিমান একজন লেখক। তার লেখা অসংখ্য বইয়ের মধ্যে 'নিষিদ্ধ লোবান' বইটি অন্যতম। এই উপন্যাসটির মূল চরিত্র হিসেবে লেখক বিলকিস নামের একজনকে উপস্থাপন করেছেন। বিলকিস ঢাকা থেকে ট্রেনে এসেছে তার গন্তব্য হলো জলেশ্বরী কিন্তু নবগ্রামে এসে ট্রেন আর জলেশ্বরীতে যাবে না, ট্রেন তোরশাতে ফিরে চলে যায়। অথচ জলেশ্বরীর দূরত্ব এখনো ৫ মাইল, কিন্তু সেখানে যাওয়ার কোন যান নেই, হাতে গোনা কিছু মানুষ থাকলেও জলেশ্বরীতে যাওয়ার কেউ নেই। পরিবেশটাই কেমন যেন ছমছমে, কিন্তু পায়ে হেটে হলেও বা যেভাবেই হোক বিলকিস কে জলেশ্বরীতে যেতেই হবে , তাঁর মন ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে আছে তার মা , বোন ও ভাইয়ের জন্য। আবার এদিকে সেই ২৫ শে মার্চ রাত থেকে তাঁর স্বামী আলতাফের কোন খোঁজ নেই সে বেচে আছে না নেই কিছুই জানে না সে। ভাই,বোন ও মায়ের প্রতি তীব্র শঙ্কায় পাঁচ মাইল না হাজার মাইল ও পায়ের হাটার মতো দুঃসাহসও পেয়ে যাওয়া একটা মুহুর্তের ব্যপার মাত্র। সে পায়ে হেটেই জলেশ্বরীর দিকে ছুটে চললো। ষ্টেশনে নামার পর থেকেই সে লক্ষ্য করছিলো তার ছোট ভাই খোকার বয়সী একটা ছেলে তাকে অস্বাভাবিকভাবে লক্ষ্য করছিলো।কিছুদুর যেতেই বিলকিস দেখতে পায় ছেলেটি তার পিছু নিয়েছে এবং ছেলেটি সিরাজ বলে তার পরিচয় দেয় এবং বিলকিসকে জলেশ্বরিতে যেতে নিষেধ করছে । কিন্তু বিলকিস তো তার সিদ্ধান্তে অটল,তাকে যে যেতেই হবে।বাধ্য হয়ে কোনো এক রহস্যময় কারণে ছেলেটিও তার সাথে বিলকিসকে জলেশ্বরী পর্যন্ত এগিয়ে দিতে যায়। সময়ের বাঁকে বাঁকে আমাদের সবার জীবনের প্রতিটি মোড়েই নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়,হতে পারে সেটা নতুন কোন ঘটনার জন্য,হতে পারে কোন পরিচিত মানুষের সান্নিধ্য লাভের জন্য অথবা হতে পারে অপরিচিত কোন মানুষের সাথে পরিচিত হয়ে।সময়ে সময়ে এই সম্পর্ক গুলো রক্তের সম্পর্ক কেও হার মানায়। লেখক সিরাজের সাথে বিলকিসের সম্পর্কটা এভাবেই ফুটিয়ে তুলতে ছেয়েছেন। জলেশ্বরীতে যেয়ে বিলকিস দেখতে পায় তাদের বাসায় কেউ নেই ,পরে সিরাজ খোজ নিয়ে জানতে পারে তারা সহ গ্রামের সবাই বাসা ছেড়ে পালিয়েছে।পরে তারা আরও জানতে পারে বিলকিসের ভাই খোকা সহ গ্রামের অনেক ছেলেদেরকে গুলি করে মেরে বাজারে ফেলে রেখেছে পাকিস্তানিরা,লাশ ছোঁয়ার প্রতি কড়া নিশেধাজ্ঞাও জারি করেছে তারা। কথায় আছে অধিক শোকে মানুষ পাথর হয়ে যায়,এই সময়টাতে ভোতা হয়ে যায় ইন্দ্রীয় এর কার্য ক্ষমতা। ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ তার কাছে নতুন মনে হয় নি, মনে হয়েছে শোনা কথাই সে দ্বিতীবার শুনেছে। দৃঢ় হয়েছে তার মনোবল, তাঁর মাথায় নতুন চেতনা জেগে উঠেছে, সে দাফন করবে তার ভায়ের লাশ।পাক-বাহিনী কিভাবে তাকে প্রতিরোধ করে সেটাই সে দেখতে চায়। আর তার সাথে সঙ্গ দিয়েছিল সিরাজ। কে এই সিরাজ? কি তার সম্পর্ক বিলকিসের সাথে?সে কেনও বিলকিসকে এগিয়ে দিতে গেলো? সে কি শুধুই দায়িক্ত পালন করেছে? দায়িত্ব হলেও কিসের দায়িত্ব সেটা? তার নাম কেন একসময় সিরাজ থেকে প্রদীপ হয়ে গিয়েছিলো? বিলকিস কি আদৌ তার ভাই এর লাশ দাফন করতে পেরেছিল? এই সকল প্রশ্নের সমাধানের জন্য আপনি পড়তে পারেন বইটি... সম্পূর্ণ কাহিনী প্রবাহটাই পুরোপুরি থ্রিলার টাইপ, আপনি অধির আগ্রহে পরবর্তী ঘটনার জন্য অপক্ষা করতে বাধ্য হবেন,মনে হবে উপন্যাসের চরিত্রের সাথে আপনিও ঘুরে বেরাচ্ছেন সম্পূর্ণ ঘটনা প্রবাহ লেখক এভাবেই সাজিয়েছেন। এটুকু জোর দিয়েই বলতে পারবো আপনি একবার পড়তে বসলে শেষ না করে উঠতেই পারবেন না।

      By Mahmudur Rahman

      21 Oct 2019 01:34 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস। আমার পড়া হক সাহেবের প্রথম বই। অনেকদিন ধরেই পড়ার ইচ্ছা ছিল। যুদ্ধকালীন সময়ে একটি মেয়ে তার গ্রামে ফিরে আসে এবং দেখে সেটা শ্মশান হয়ে আছে। সেই দুপুরে, মেয়েটির আসার কিছুক্ষণ আগে বাজারে লাইন করে দাঁড় করিয়ে কিছু মানুষ মারা হয়, যার মধ্যে তার ভাইটিও ছিল। হানাদারদের আদেশ ছিল এই লাশ কেউ দাফন করবে না। কিন্তু বিলকিস রাতের আঁধারে সে সব লাশ দাফন করতে যায়। তখনই জানতে পারে বিকেল থেকে যে ছেলেটা তাঁকে বোন বলে ডেকেছে, সে আসলে হিন্দু। ওরা ধরা পরে মিলিটারির হাতে। তারপর? শেষটা জয়ের। বিলকিস বিজয় পায়, তাঁর নিজের কাজে নিজের ক্ষেত্রে বিজয়। এমন অনেক ছোট ছোট জয় নিয়েই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ।

      By Pie

      16 Oct 2019 09:43 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      বই: নিষিদ্ধ লোবান লেখক: সৈয়দ শামসুল হক প্রকাশনী: অনন্যা প্রকাশনী পৃষ্ঠার সংখ্যা: ৭০ চরিত্রসমূহ: বিলকিস, সিরাজ, আলতাফ, শমশের, আলেফ মোক্তার, মেজর, খোকা, আর্দালি। কাহিনীসংক্ষেপ: দেশের বিভিন্ন জায়গায় মিলিটারি ক্যাম্প করছে, সাধারণ মানুষকে ধরে ধরে গুলি করছে, কেউ আবার ইন্ডিয়া যাচ্ছে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে এমন সময় আলতাফ নিখোঁজ। আলতাফের বন্ধু শমশের বলছে আলতাফ ইন্ডিয়া গিয়েছে। এই অবস্থায় আলতাফের স্ত্রী বিলকিসের ঢাকায় একা থাকা উচিত হবে না তাই জলেশ্বরীর পথে যাত্রা। জলেশ্বরীতে তার বাবা-মা, ভাই-বোন থাকে। কিন্তু নবগ্রামে এসে ট্রেন আর যাবে না বলছে। না যেতে চাওয়ার কারনটাও কেউ বলছে না। কিন্তু তাকে যে সন্ধ্যার আগে জলেশ্বরী পৌঁছতেই হবে। এই বিপদের সময় তার সঙ্গী হয় সিরাজ। এরপর তাদের দুজনকে একসাথে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে দেখা যায়। পাঠ প্রতিক্রিয়া: মুক্তিযুদ্ধের বইয়ে যেমন থাকে- লোকজনকে সারিবদ্ধ করে গুলি করা, লুটপাট করা, স্থানীয় দালালদের যন্ত্রণা, নিরীহ মানুষদের বাড়িছাড়া করা, হানাদারদের নারী লালসা, নৃশংসতা কোনো কিছুই বাদ যায় নি। ট্রেন থেকে নামা সেই অসহায়, উদ্বিগ্ন বিলকিসের রাতের আধারে বিহারীদের চোখ ফাকি দিয়ে লাশ কবর দেয়া দুঃসাহসী বিলকিস হয়ে ওঠার গল্পটা অসাধারণ। মানুষের প্রয়োজন আর শক্তি সমানুপাতিক। লেখক তা দেখিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের বই আমাকে বারাবরই আকৃষ্ট করে। বইটি সম্পর্কে কিছু না জেনে শুধু সৈয়দ শামসুল হকের লেখনীর উপর ভরসা থেকেই পড়তে বসা। মুক্তিযুদ্ধের কিছু বই আগেই পড়ে ফেলার দরুন কোনো ঘটনাই নতুন মনে হয় নি। মনে হয়েছে কোনো পূর্বপঠিত বই পড়ছি। তারপরেও কোথাও একটা অসাধারণ কিছু ছিল যা একনাগাড়ে বইটি পড়ার জন্য যথেষ্ট। হয়তো সেটা বিলকিসের সাহস, দৃঢ়তা ও স্থিরতা। বইটি ছোটবেলায় পড়লে হয়তো পড়ার অনুভূতি পরিপূর্ণতা পেত।

      By Sultan

      14 Oct 2019 04:53 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      সৈয়দ সামসুল হক বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং শক্তিমান একজন লেখক। তার লেখা অসংখ্য বইয়ের মধ্যে 'নিষিদ্ধ লোবান' বইটি অন্যতম। এই উপন্যাসটির মূল চরিত্র হিসেবে লেখক বিলকিস নামের একজনকে উপস্থাপন করেছেন। বিলকিস ঢাকা থেকে ট্রেনে এসেছে তার গন্তব্য হলো জলেশ্বরী কিন্তু নবগ্রামে এসে ট্রেন আর জলেশ্বরীতে যাবে না, ট্রেন তোরশাতে ফিরে চলে যায়। অথচ জলেশ্বরীর দূরত্ব এখনো ৫ মাইল, কিন্তু সেখানে যাওয়ার কোন যান নেই, হাতে গোনা কিছু মানুষ থাকলেও জলেশ্বরীতে যাওয়ার কেউ নেই। পরিবেশটাই কেমন যেন ছমছমে, কিন্তু পায়ে হেটে হলেও বা যেভাবেই হোক বিলকিস কে জলেশ্বরীতে যেতেই হবে , তাঁর মন ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে আছে তার মা , বোন ও ভাইয়ের জন্য। আবার এদিকে সেই ২৫ শে মার্চ রাত থেকে তাঁর স্বামী আলতাফের কোন খোঁজ নেই সে বেচে আছে না নেই কিছুই জানে না সে। ভাই,বোন ও মায়ের প্রতি তীব্র শঙ্কায় পাঁচ মাইল না হাজার মাইল ও পায়ের হাটার মতো দুঃসাহসও পেয়ে যাওয়া একটা মুহুর্তের ব্যপার মাত্র। সে পায়ে হেটেই জলেশ্বরীর দিকে ছুটে চললো। ষ্টেশনে নামার পর থেকেই সে লক্ষ্য করছিলো তার ছোট ভাই খোকার বয়সী একটা ছেলে তাকে অস্বাভাবিকভাবে লক্ষ্য করছিলো।কিছুদুর যেতেই বিলকিস দেখতে পায় ছেলেটি তার পিছু নিয়েছে এবং ছেলেটি সিরাজ বলে তার পরিচয় দেয় এবং বিলকিসকে জলেশ্বরিতে যেতে নিষেধ করছে । কিন্তু বিলকিস তো তার সিদ্ধান্তে অটল,তাকে যে যেতেই হবে।বাধ্য হয়ে কোনো এক রহস্যময় কারণে ছেলেটিও তার সাথে বিলকিসকে জলেশ্বরী পর্যন্ত এগিয়ে দিতে যায়। সময়ের বাঁকে বাঁকে আমাদের সবার জীবনের প্রতিটি মোড়েই নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়,হতে পারে সেটা নতুন কোন ঘটনার জন্য,হতে পারে কোন পরিচিত মানুষের সান্নিধ্য লাভের জন্য অথবা হতে পারে অপরিচিত কোন মানুষের সাথে পরিচিত হয়ে।সময়ে সময়ে এই সম্পর্ক গুলো রক্তের সম্পর্ক কেও হার মানায়। লেখক সিরাজের সাথে বিলকিসের সম্পর্কটা এভাবেই ফুটিয়ে তুলতে ছেয়েছেন। জলেশ্বরীতে যেয়ে বিলকিস দেখতে পায় তাদের বাসায় কেউ নেই ,পরে সিরাজ খোজ নিয়ে জানতে পারে তারা সহ গ্রামের সবাই বাসা ছেড়ে পালিয়েছে।পরে তারা আরও জানতে পারে বিলকিসের ভাই খোকা সহ গ্রামের অনেক ছেলেদেরকে গুলি করে মেরে বাজারে ফেলে রেখেছে পাকিস্তানিরা,লাশ ছোঁয়ার প্রতি কড়া নিশেধাজ্ঞাও জারি করেছে তারা। কথায় আছে অধিক শোকে মানুষ পাথর হয়ে যায়,এই সময়টাতে ভোতা হয়ে যায় ইন্দ্রীয় এর কার্য ক্ষমতা। ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ তার কাছে নতুন মনে হয় নি, মনে হয়েছে শোনা কথাই সে দ্বিতীবার শুনেছে। দৃঢ় হয়েছে তার মনোবল, তাঁর মাথায় নতুন চেতনা জেগে উঠেছে, সে দাফন করবে তার ভায়ের লাশ।পাক-বাহিনী কিভাবে তাকে প্রতিরোধ করে সেটাই সে দেখতে চায়। আর তার সাথে সঙ্গ দিয়েছিল সিরাজ। কে এই সিরাজ? কি তার সম্পর্ক বিলকিসের সাথে?সে কেনও বিলকিসকে এগিয়ে দিতে গেলো? সে কি শুধুই দায়িক্ত পালন করেছে? দায়িত্ব হলেও কিসের দায়িত্ব সেটা? তার নাম কেন একসময় সিরাজ থেকে প্রদীপ হয়ে গিয়েছিলো? বিলকিস কি আদৌ তার ভাই এর লাশ দাফন করতে পেরেছিল? এই সকল প্রশ্নের সমাধানের জন্য আপনি পড়তে পারেন বইটি... সম্পূর্ণ কাহিনী প্রবাহটাই পুরোপুরি থ্রিলার টাইপ, আপনি অধির আগ্রহে পরবর্তী ঘটনার জন্য অপক্ষা করতে বাধ্য হবেন,মনে হবে উপন্যাসের চরিত্রের সাথে আপনিও ঘুরে বেরাচ্ছেন সম্পূর্ণ ঘটনা প্রবাহ লেখক এভাবেই সাজিয়েছেন। এটুকু জোর দিয়েই বলতে পারবো আপনি একবার পড়তে বসলে শেষ না করে উঠতেই পারবেন না।

      By Neel kontho

      13 Oct 2019 09:45 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      মুক্তিযুদ্ধের বইয়ে যেমন থাকে- লোকজনকে সারিবদ্ধ করে গুলি করা, লুটপাট করা, স্থানীয় দালালদের যন্ত্রণা, নিরীহ মানুষদের বাড়িছাড়া করা, হানাদারদের নারী লালসা, নৃশংসতা কোনো কিছুই বাদ যায় নি। ট্রেন থেকে নামা সেই অসহায়, উদ্বিগ্ন বিলকিসের রাতের আধারে বিহারীদের চোখ ফাকি দিয়ে লাশ কবর দেয়া দুঃসাহসী বিলকিস হয়ে ওঠার গল্পটা অসাধারণ। মানুষের প্রয়োজন আর শক্তি সমানুপাতিক। লেখক তা দেখিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের বই আমাকে বারাবরই আকৃষ্ট করে। বইটি সম্পর্কে কিছু না জেনে শুধু সৈয়দ শামসুল হকের লেখনীর উপর ভরসা থেকেই পড়তে বসা। মুক্তিযুদ্ধের কিছু বই আগেই পড়ে ফেলার দরুন কোনো ঘটনাই নতুন মনে হয় নি। মনে হয়েছে কোনো পূর্বপঠিত বই পড়ছি। তারপরেও কোথাও একটা অসাধারণ কিছু ছিল যা একনাগাড়ে বইটি পড়ার জন্য যথেষ্ট। হয়তো সেটা বিলকিসের সাহস, দৃঢ়তা ও স্থিরতা। বইটি ছোটবেলায় পড়লে হয়তো পড়ার অনুভূতি পরিপূর্ণতা পেত।

      By Al Amin

      12 Oct 2019 10:07 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বেশি ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। তখন কোন জাত-পাত ছিল না, হিন্দু-মুসলমান ছিল না, সবাই সবাইকে সাহায্য করেছে প্রানের মায়া ত্যাগ করে। অনেক হিন্দু পরিবারকেও আশ্রয় দিয়ে ছিল কট্টর মুসলমান পরিবার। পাকিস্থানী হানাদাররা কতটা ভয়ন্কর ছিল এবং ভিন্ন ধর্মের মানুষদের বিশেষ করে হিন্দুদের প্রতি তাদের মনোভাব কেমন ছিল তার পরিষ্কার বর্ননা আছে বইটিতে। মুসলমান নারীরা ছিল তাদের কাছে ভোগের বস্তু। পাকিস্থানী হানাদাররা বলতো তোমাদের রক্ত শুদ্ধ করে দিয়ে যাব, তোমাদের গর্ভে খাঁটি পাকিস্তানী রেখে যাব, ইসলামের নিশানা উড়িয়ে যাব। মূলত দুটি চরিত্র নিয়ে এই উপন্যাসটি নির্মিত। বিলকিস নামের একটি মেয়ে ঢাকা থেকে ট্রেনে গ্রামের বাড়ীতে আসে । যুদ্ধের কারনে তাকে স্টেশন থেকে বেশ কিছু দূর আগে নেমে যেতে হয়। সিরাজ নামের একটি ছেলে তাকে তাদের বাড়ীতে নিয়ে আসে । বাড়ি এসে বিলকিস জানতে পারে তার ভাইকে বিহারী আর পাকিস্তানীরা বাজারে গুলি করে মেরে ফেলে রেখেছে । ফতোয়া দেয়া হয়েছে কেউ তাদের কবর দিতে পারবে না। অসংখ্য লাশ পরে আছে দাফন ছাড়া। উপন্যাসের শেষ দিকে বিলকিস এবং সিরাজ ধরা পরে পাকিস্থানী মেজরের হাতে। তখন বুঝা যায় সিরাজ আসলে হিন্দু। তার প্রকৃত নাম প্রদীপ। এই উপন্যাসটি থেকেই নির্মিত হয়েছে গেরিলা সিনামাটির চিত্রনাট্য।

      By Fahamida

      27 Sep 2019 02:09 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পরিস্থিতি বর্ণনা করে লেখা সুন্দর একটি বই।পাকিস্তানিদের নৃশংসতার এবং তখন মানুষের পরিস্থিতি সুন্দর করে বর্ণনা করে হয়েছে বইটিতে।বিলকিস নামের এক নারীর কথা বলা আছে যে তার পরিবারের জন্য, তার ভাইয়ের জন্য হয়ে উঠে প্রচণ্ড সাহসী এক নারী। লাশের ভেতরে প্রেতের মতো হেঁটে চলেছে এক রমণী,সেই রমণীকে বর্তমানের মনে হয় না,অতীতেরও নয়,কিংবা কোনো আগামীর।আর বলা হয়েছে সিরাজ নামের এক কিশোরের কথা।যে তার সবাইকে হারিয়ে কখন কিশোর থেকে বড় হয়ে যায় নিজেও বুঝতে পারে না।বলা হয়েছে পাকিস্তানিদের নির্মমতার কথা, বিকৃত মানসিকতার কথা।যারা চায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে শুধুই তাদের সন্তান।যারা হবে প্রকৃত মুসলমান আর প্রকৃত মুসলমানরা তাদের বাবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না।বিলকিস এবং সিরাজের পরিণতির কথা আর পাকিস্তানিদের নৃশংশতার কথা জানতে হলে পড়ে ফেলুন বইটি। পারসোনাল রেটিং ৫/৫

      By Abu Talha Mihrab

      01 Sep 2019 11:23 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা উপন্যাস। পুরোটা কিহিনি একজন নারী এবং কমবয়সী একটা হিন্দু ছেলেকে ঘিরে। ঢাকা থেকে ফেরত, মাঝপথে বাঁধা এবং পরিবার হারানো, রাতের অন্ধকারে শতশত লাশের সারিতে নিজের পরিবারের একজনকে খুঁজে পাওয়া, শেষমেশ মিলিটারি অফিসারের হাতে উপন্যাসের নায়িকা ধর্ষিত হওয়া ইত্যাদি একজন পাঠকের হৃদয়কে তুমুলভাবে নাড়া দিয়ে উঠবে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কয়টা উপন্যাস আছে, নিষিদ্ধ লোবান তার অন্যতম। গল্পের ভাষা অত্যন্ত চমৎকার। গদ্যেও যে ছন্দ থাকে সেটা প্রমাণ করেছেন সৈয়দ শামসুল হক। একবৈঠকে পড়ার মতো একটা বই।

      By Anik Hassan

      04 Jul 2019 05:41 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জুলাই বইয়ের নাম: নিষিদ্ধ লোবান লেখকঃ সৈয়দ শামসুল হক প্রকাশকঃ অনন্যা ধরন: মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস উপন্যাসের পটভূমি: বিলকিসের গন্তব্য জলেশ্বরী,তাঁর যাত্রাপথের শুরু ছিল ঢাকা, নবগ্রামে ট্রেন এসে ফেরত চলে গেল তোরশাতে। জলেশ্বরীর দুরুত্ব এখনো পাঁচ মাইল, কোথাও কোন যান নেই। হাতে গোনা কিছু মানুষ দেখা যাচ্ছে,যান থাকলেও জলেশ্বরী তে যাওয়ার মনোভাব কারোর নেই। পরিবেশটাই কেমন নিরবতায় সায় দিচ্ছে। পায়ে হেটে হলে ও বিলকিস কে জলেশ্বরী যেতেই হবে,তাঁর মন উদ্বিগ্ন হয়ে আছে তার মা, বোন ও ভায়ের জন্য। সেই ২৫ শে মার্চ রাত থেকে তাঁর স্বামী আলতাফের কোন খোঁঁজ নেই। কখনো খোঁঁজ পাবে সে আশা সে করে না। নাড়ির টান কিনা না করতে পারে, পাঁচ মাইল কেন হাজার মাইল ও পায়ের হাটার মতো দুঃসাহসও পেয়ে যাওয়া একটা মুহুর্তের ব্যপার মাত্র। সে পায়ে হেটেই জলেশ্বরীর দিকে ছুটে চললো। স্টেশনে নামার পর থেকেই সে লক্ষ্য করেছে, ১৭-১৮ বছরের একটা ছেলে তাকে অনুসরন করছে। হাটার মধ্যেই মনে হচ্ছিলো কেউ তার পিছু নিয়েছে,পেছনে তাকিয়ে সেই ছেলেটাকেই আবিষ্কার করলো বিলকিস যাকে সে ইষ্টিশানে দেখেছিলো।ছেলেটা একটু সামনের দিকে এগিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।বিলকিস কিছু প্রশ্ন করলে সে চুপ করে থাকে, পরক্ষনে বলে উঠে আপনি জলেশ্বরীতে যাবেন না।বিলকিস তাঁর সিদ্ধান্তে অটল, তাকে যেতেই হবে।তবে ছেলেটার সরলতা আর মিনতি তাকে স্পর্শ করে যায়। সময়ের বাঁকে বাঁকে জীবনের প্রতিটি মোড়েই মানুষের জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়,হতে পারে সেটা নতুন কোন ঘটনার জন্য,হতে পারে কোন পরিচিত মানুষের সান্নিধ্য লাভের জন্য অথবা হতে পারে অপরিচিত কোন মানুষের সাথে পরিচিত হয়ে।সময়ে সময়ে এই সম্পর্ক গুলো রক্তের সম্পর্ক কেও হার মানায়। হ্যাঁ বিলকিসের সাথে এই ছেলেটার পরিচয় এমনই একটা সম্পর্কের সুচনা করে। পথ চলার শেষ সময়টুকু পর্যন্ত বিলকিসের সহযোগী হয় এই ছেলেটাই, প্রদীপ ওরফে সিরাজ। সিরাজ বিলকিস কে তার বড় বোনের আসনেই আসিন করে। তারা দুজনেই জলেশ্বরীর দিকে পা বাড়ায়,সন্ধ্যের দিকে তারা পদার্পন করে জলেশ্বরীতে, কিন্তু বাড়িতে মা, বোন, ভাই কাউকেই না দেখে বিলকিস চিন্তিত হয়ে পড়ে। সিরাজ গ্রামে খোঁঁজ নিয়ে জানতে পারে বিলকিসের মা বোন নদীর ওপারে চলে গেছে আর তারা নিরপাদেই আছে। কিন্তু তার ভাইকে হত্যা করেছে পাকিস্তানি সৈন্যরা।ভায়ের মৃত্যর খবর সিরাজ বিলকিস কে দেয় না। কিন্তু বিলকিস পরক্ষনে ঠিকি জানতে পারে তার ভায়ের মৃত্যুর খবর। আরো জানতে পারে তার ভাই সহ আরো অনেক কে হত্যা করে বাজারের মাঠে ফেলে রেখেছে পাকিস্তানিরা। লাশ ছোয়ার প্রতিও কড়া নিষেধাক্কা জারি করা হয়েছে। কথায় আছে অধিক শোকে মানুষ পাথর হয়ে যায়,এই সময়টাতে ভোতা হয়ে যায় ইন্দ্রীয় এর কার্য ক্ষমতা। ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ তার কাছে নতুন মনে হয় নি, মনে হয়েছে শোনা কথাই সে দ্বিতীবার শুনেছে। দৃঢ় হয়েছে তার মনোবল, তাঁর মাথায় নতুন চেতনা জেগে উঠেছে, সে দাফন করবে তার ভায়ের লাশ।পাক-বাহিনী কিভাবে তাকে প্রতিরোধ করে সেটাই সে দেখতে চায়। আর তার সাথে সঙ্গ দিয়েছিল সিরাজ। কে এই সিরাজ? কি তার সম্পর্ক বিলকিসের সাথে? নাকি সে শুধুই দায়িক্ত পালন করেছে? দায়িত্ব হলেও কিসের দায়িত্ব সেটা? তার নাম কেন প্রদীপ থেকে সিরাজ হলো? বিলকিস কি আদৌ তার ভায়ের লাশ দাফন করতে পেরেছিল? এই সকল প্রশ্নের সমাধানের জন্য আপনি পড়তে পারেন সৈয়দ শামসুল হক এর নিষিদ্ধ লোবান। উপন্যাসের প্রেক্ষাপট: সৈয়দ শামসুল হক এর “নিষিদ্ধ লোবান” বইটি ৭১’ এর মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা। লেখক সৈয়দ শামসুল হক, এখানে তুলে ধরেছেন পাক-বাহিনী আর তাদের সহযোগীদের(দেশীয় শত্রু) তান্ডবের কিছু নমুনা। বিলকিস আর সিরাজই উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র। তাছাড়া রয়েছে আলেফ মোক্তার, ইষ্টটিশান মাষ্টার, ইনজিন ড্রাইভার, পাকবাহিনীর মেজর, আর্দালি আর কিছু বিহারী।তবে বিলকিস আর সিরাজই মুখ্য চরিত্র। গুটি কয়েক চরিত্র এর মধ্য দিয়েই লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন লাখো মানুষের আর্তনাদ।তুলে ধরেছেন পাকিস্তানিদের নির্মমতা,নিষ্ঠুরতা আর কিভাবে বিহারীরা বাঙালীদের সাথে আচরন করেছে। নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাস হতে পাওয়া সৈয়দ শামসুল হকের কিছু উক্তি: সৈয়দ শামসুল হক কিছু উক্তি উপস্থাপন করেছেন উপন্যাসটিতে, যেগুলো ঐ সময়ের সাথে তো যায়ই আবার চিরন্তন সত্য হিসেবে নিলেও ভুল হবেনা। নিষিদ্ধ লোবান বুক রিভিউ লেখার সময় উক্তিগুলোকে একত্র করা হয়েছে। ১.“কখনো কখনো সমস্ত মানুষের মুখ এক হয়ে যায়”। ২ “বিষয়টা এমন যে যখন একজন ব্যক্তি আত্মকেন্দ্রিকটা ভুলে গিয়ে অনেকের মাঝে নিজেকে খুজে নিতে পারে অন্যের ভালো মানে নিজের ভালো মনে করতে পারে তখনি কেবল এমন টা হতে পারে”। ৩.“পালাবার সবচেয়ে ভালো জায়গা শত্রুর ঘাটির ভেতরে”। ৪.“কেউ ভেঙে পড়ে না,শোক কখনো এত বড় নয় যে মানুষ মাথা তুলে দাড়াতে পারে না”। ৫.“সোনা পুড়লে কিন্তু আরো খাঁটি হয়। মানুষ কে বিপদ দিয়ে বিচার করলে অনেকটা এমরকমই হবে। মানুষের মন কে আরো দৃঢ় আরো শক্তিশালী করার জন্যই বিপদ গুলো হানা দেয় তাদের মনের দুয়ারে। আর মানুষ জন্মের আগ থেকেই বিপদের সাথে যুদ্ধ করে করেই পৃথিবীর আলো দেখে। তাই শোক কখনো সাহসের ঊর্ধ্বে না”। ৬.“চাঁদ কখনো আলো দেয়,কখনো মেঘের আড়ালে কৃপণ হয়ে যায়”। উক্তিটি লেখক খুব স্বাভাবিক অর্থেই ব্যবহার করেছন। আকাশ মানেই চাঁদ আছে আর সাথে মেঘের ও অভাব নেই। তাই মাঝে মাঝে চাঁদ অনীচ্ছাতে হলেও কৃপণ হয়। বাংলা সাহিত্যের অন্যান্য লেখকদের উক্তিগুলো থেকে তাঁর উক্তিগুলো বেশ পাকাপোক্ত এবং হৃদয়চ্ছেদী। উপন্যাস নিয়ে নিজস্ব কিছু কথা: লেখক তার "নিষিদ্ধ লোবান" উপন্যাসটিতে একটা নির্দ্দিষ্ট জায়গা আর কিছু চরিত্র নিয়ে লিখেছেন। কিন্তু ফুটিয়ে তুলেছেন পুরো যুদ্ধের ভয়াবহতা। যুদ্ধের সময় সাধারন মানুষের ভাবনা, স্বজনদের হারিয়েও সাহসি হয়ে ওঠা, নতুন উদ্যম নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করা। তাছাড়া পাক-বাহিনীর বাঙালির প্রতি আচরন টাও উপন্যাসে বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। পাকিস্তানিরা বাঙালিদের কে কুকুরের সাথে তুলনা করেছে, তাদের কে হত্যা করে ফেলে রেখেছে যাতে শেয়াল বা শকুন খেয়ে যায়। এমন কাজ মানবিকতার মধ্যে পরে না। তখনকার সময়ে যারা বিহারী ছিল তাদের কার্যক্রম আরো নিষ্ঠুর। সাধারন মানুষের বাড়ি ঘর লুঠ করেছে তারা,পাকিস্তানিদের কে বাড়ি চিনিয়ে দিয়েছে, এক কথায় তারা পাকিস্তানিদের দোসর ছিলো। বিহারীদের বিষাক্ত কার্যকলাপের একটা জ্যান্ত উদাহরন:আলেফ মোক্তার কে জুতোর মালা গলায় দিয়ে মাজায় দড়ি বেধে সারা গ্রাম ঘোরানো। একটা অন্ধ নিরীহ বাঙালিকে, শুধু বাঙালি বলে, এই অন্ধ লোকটাকে অসহনীয় নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে তাও আবার বিহারীদের থেকে যারা এদেশে থেকেছে, এই দেশের অন্ন জল খেয়েছে। আবার,বাঙালিদের প্রতি পাকবাহিনীর চিন্তা চেতনার দিক গুলোও মেনে নেয়ার মতো না।তারা বাঙালিদের কে কুকুর ভাবে তারা ভাবে বাঙালির রক্ত শুদ্ধ না, তারা প্রকৃত মুসলমান না। বিলকিসের প্রতি মেজরের উক্তি ছিল এরকম- “আমি তোমায় সন্তান দিতে পারবো, উত্তম বীজ উত্তম ফসল। তোমার সন্তান খাঁটি মুসলমান হবে। আমরা সেই সন্তান তোমাদের দেব, তোমাকে দেব, তোমার বোনকে দেব, তোমার মাকে দেব, যারা হিন্দু নয়, অবাধ্য নয়,আন্দোলন করে না,জাতির এই খেদমত আমরা করতে এসেছি”। উক্তিটার মাধ্যমে পাকবাহিনীর নিকৃষ্ট ব্যবহারের চিত্রই ফুটে ওঠে। তারা একই সাথে ধর্ষণ করেছে মা মেয়েকে।এর থেকে নিকৃষ্ট আর কি হতে পারে। আর এটা নাকি ছিল নাকি তাদের খেদমত, বড়ই হাস্যকর। উপন্যাসে বিলকিস কে আমরা একজন সাহসী নারী হিসেবেই লক্ষ্য করি। নিজের আদরের ভায়ের মৃত্যু সংবাদ তাকে দমিয়ে দেয় নি আরো সাহসী ও দৃঢ় করেছে। ইচ্ছা জাগিয়েছে পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে যেয়ে ফেলে রাখা লাশ গুলোকে দাফন করার। জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সে তার সাহস হারায় নি, সাহস ও বুদ্ধিমত্তার দ্বারা সে নিজের সম্মান তো রক্ষা করেছে। উপরন্তু একজন পাক-বাহিনীর মেজর কে মৃত্যু দন্ড শাস্তি দিতে পেরেছে। তার সাহসী কার্যকলাপ সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। অপর দিকে পুরো উপন্যাসে বিলকিস কে সাহায্য করেছে সিরাজ ওরফে প্রদীপ, যে কিনা বিলকিসের রক্তের সম্পর্কের কেউ না। তবুও সে যা করেছে বিলকিসের জন্য, রক্তের সম্পর্কের কেউ ও এমন টা করে না। একটু গভীরভাবে ভাবলে মুলত সে দেশের জন্য কাজ করেছে। আর সবার মতো সে ইন্ডিয়া চলে যায়নি। নিজের বাবা, মা, ভাই ও বোন কে হারিয়ে সে চেয়েছে দেশে থেকে দেশের জন্য কাজ করতে। যুদ্ধের সময় ধর্ম বৈষম্য টা খুব প্রকট ছিল। হিন্দুরাই সব চেয়ে বেশি জীবনের ভয়ে থাকতো। তাই প্রদীপকে ও সিরাজ হতে হয়েছে। এটা সে চায় না, সে আবার প্রদীপ হতে চায় আর সেটা বাংলাদেশে থেকেই। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জানা, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে অবশ্য করনীয়, তাই যতটুকু না জানলেই নয় ওতটুকুই শুধু আমরা জানি। একটু বিস্তারিত ভাবে জানার সুযোগ হয়ে ওঠে না আর হয়ে উঠলেও সব সময় ইচ্ছা থাকে না। আমরা বুলি আওড়ানোর মতোই ভাসা ভাসা ভাবে পড়ে থাকি যুদ্ধের ইতিহাস। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত ছিল বলেও অনেকে যুদ্ধ সম্পর্কে কিছুটা জানে। নিজের উদ্যোগে যুদ্ধের ইতিহাস পড়ে এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে। যারা উপন্যাস পড়তে ভালবাসেন তাদের জন্য নিষিদ্ধ লোবান বইটি দুটি কাজ করবে, প্রথমত সে পড়ার মাধ্যমে বিনোদন পাচ্ছে দ্বিতীয়ত যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কেও জানতে পারছে।

      By Anirban Maitra

      06 Jun 2019 05:49 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      ?বইয়ের নাম : নিষিদ্ধ লোবান ?লেখক: সৈয়দ শামসুল হক ?ক্যাটাগরি : মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ?প্রকাশনা: অনন্যা ?পৃষ্ঠা সংখ্যা:৭১ ?মূল্য: ১৩২৳ উনিশ'শ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ । লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।যুদ্ধের সেই আগুন পুড়িয়ে দিয়েছিল বাঙালির সকল জরা, জীর্ণতা, ভীরুতা আর সাথে পাক-হানাদারদের না-পাক রাজত্বকে। সে আগুনের ছোঁয়া এসে লেগেছিলো বাঙলার শিল্প-সাহিত্য-গল্প-উপন্যাসে। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত তেমনি একটি উপন্যাস, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের “নিষিদ্ধ লোবান”।দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের একটি অণু অংশ সত্তর পৃষ্ঠার এই বইটিতে তুলে ধরেছেন সৈয়দ হক।নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের এটি একটি বিন্দু হয়তো, কিন্তু সে বড় উজ্জ্বল,রক্তিম আলোয় জাজ্বল্যমান ! বিলকিস ঢাকা থেকে ট্রেনে উঠেছে জলেশ্বরী গ্রামে যাওয়ার জন্য। ট্রেনটা নবগ্রাম স্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছে, তারপরেই জলেশ্বরী। নবগ্রাম স্টেশনে ট্রেনের নির্ধারিত দু মিনিট পেরিয়ে গেলেও গ্রামের গণ্ডগোলের কারণে ট্রেন আর ছাড়ে না।সে সিদ্ধান্ত নেয় একাই যেতে হবে তাকে গ্রামে, সেখানে আছে তার বাবা-মা আর সদ্য তারুণ্যে পা রাখা ভাই - 'খোকা'। তার স্বামী আলতাফ ঢাকায় কাজ করতো একটা পত্রিকা অফিসে, ২৫শে মার্চের পর তার কোনো খবর পায় নি বিলকিস।যাওয়ার পথে তার সঙ্গী হয় সিরাজ নাম্নী তার ভাইয়ের বয়সী একটি ছেলে। তার সাথে গ্রামে গিয়ে দেখে একসময়কার প্রাণচঞ্চল গ্রামটি যেন হয়ে উঠেছে বিরান মরুভূমি।পাকিস্তানিদের ভয়ে পালিয়েছে সবাই। সিরাজ তাকে নিয়ে যায় তার পরিচিত এক বাড়িতে। সেখানে বিলকিস জানতে পারে বিহারী আর পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংসতা- তাদের হাতেই বাজার প্রাঙ্গনে নির্মাম বুলেটে বিদ্ধ হয় খোকাসহ আরো অনেকে। এমনকি পশুর মৃতদেহের মতো ফেলে রাখে নিথর মানবদেহগুলোকে,কেউ তার কাছে ঘেঁসলেই হত্যা করে তাকেও। বিলকিস আর সিরাজ সিদ্ধান্ত নেয় কবর দেবে মৃতদেহগুলোর। প্রথম দিনে তারা কবর দেয় বেশ কয়েকটি মৃতদেহকে। পরদিন সতর্ক হয়ে যায় বিহারীরা আর মিলিটারিরা। কড়া পাহারা বসায় চতুর্দিকে। আলো থাকতে বিলকিস আর সিরাজ লুকিয়ে থাকে পাটের গুদামে।আলাপচারিতায় বিলকিস জানতে পারে সিরাজ,ওরফে প্রদীপের করুণ কাহিনী। ৫ মাসের নৃশংসতা কেড়ে নেয় তার বাবা,মা,বোন এমনকি তার আত্মপরিচয়কে। বিলকিস জানতে পারে "আমার সোনার বাংলা" শেখানোর অপরাধে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তার ভাইকে। সেই রাতে তারা বের হলে ধরা পরে যায় বিহারীদের হাতে। তারা তাকে নিয়ে যায় স্থানীয় মিলিটারি ক্যাম্পে।সেখানে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন নেমে আসে তাদের ওপর। এর মধ্যে হানাদারবাহিনীর অত্যাচারে এবং তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিতে গিয়ে মারা যায় প্রদীপ।বিলকিস স্থানীয় মেজরকে চিতা সাজিয়ে সৎকার করতে বলে তাকে।নারী সম্ভোগে লালায়িত মেজর আয়োজন করে দেয় চিতার,কিন্তু চিতায় শুধু প্রদীপই দগ্ধ হয় না, বিলকিস নিজেও আত্নাহুতি দেয় এবং মেজরকে জড়িয়ে ধরে মেরে ফেলে তাকেও-- এই হলো উপন্যাসের কাহিনী । "দাম দিয়ে কিনেছি বাংলার নাম, কারো দানে পাওয়া নয়।দাম দিছি প্রাণ লক্ষ কোটি--জানা আছে জগৎময় !"--বইটা শেষ করার পর এই গানটাই সর্বক্ষণ বাজছিলো মনের ভেতরে।'লোবান' মানে কী? মৃতদেহের সাথে দেয়া এক সুগন্ধি বিশেষ। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের কাহিনীর প্রেক্ষাপটে প্রতীকী অর্থে 'লোবান' নামটি ব্যবহার করেছেন লেখক। উপন্যাসের কাহিনীর সাথে "নিষিদ্ধ লোবান" নামকরণটি মানিয়ে গেছে চমৎকার ভাবে। হাতে গোনা কয়েকটি চরিত্রের মাধ্যমেই লেখক এ উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধের সময়ের পাকবাহিনী ও বিহারিদের নৃশংস তান্ডব। সিরাজ আর বিলকিসের সম্পর্কের মাধ্যমে লেখক দেখিয়েছেন রক্তের বন্ধন, ধর্মের বন্ধনের চেয়েও বড় আত্মার বন্ধন, বিবেকের বন্ধন । বাঙালি,বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি বিহারী ও পাকহানাদার বাহিনীর নৃশংসতা আর বিকৃত মনোভাবের চিত্রও ফুটে উঠেছে এ উপন্যাসে। লেখক উপন্যাসের সমাপ্তিটাও টেনেছেন চমৎকারভাবে।মুক্তিযুদ্ধকে যারা দেখেন নি, সাহিত্যের মাধ্যমে যারা একাত্তরের যুদ্ধের চিত্র জানতে চান, তাদের জন্য 'নিষিদ্ধ লোবান' বইটি নিঃসন্দেহে উপযুক্ত হবে। #হ্যাপি রিডিং ?

    • Was this review helpful to you?

      or

      নিষিদ্ধ লোবান, লেখক : সৈয়দ শামসুল হক, ক্যাটাগরি : মুক্তযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস, প্রকাশকাল : ১৯৮১, প্রকাশনী : অনন্যা প্রকাশনী, গায়ের মূল্য : ১০০ টাকা 'নিষিদ্ধ লোবান' সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক রচিত একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস। #কাহিনী_সংক্ষেপ : জনশূন্য নবগ্রামের রেইলপথ ধরে উৎকন্ঠা একটি মেয়ে হেঁটে চলছে। নাম বিলকিস।তাকে প্রায় পাঁচ মাইলে হেঁটে যেতে হবে। গন্তব্য স্থান জলেশ্বরী।ঢাকা থেকে ট্রেনেই এসেছে সে।নবগ্রামে এসে শুনেছে মিলিটারিরা জলেশ্বরী আক্রমণ করেছে তাই ট্রেন আর যাবে না।কিন্তু যেভাবেই হোক জলেশ্বরীতে যে তাকে পৌঁছাতেই হবে। কিছুটা পথ সামনে যেতেই বিলকিস অনুভব করলো কেউ একজন তাকে অনুসরণ করছে।পিছনে ফিরে দেখে ১৭/১৮ বছর বয়সী এক ছেলে ঠিক তার ছোট ভাইয়ের মত।ছেলেটির নাম সিরাজ। সে বিলকিসকে জলেশ্বরী যেতে নিষেধ করে।একা এই পথ যাওয়া বিলকিসের জন্য বিপদজনক।কিন্তু জলেশ্বরী যাওয়াটাও বিলকিসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এতোদূর এসে সে ঢাকা ফিরে যেতে পারে না।আবার ছেলেটির ব্যাকুলতা উপেক্ষা করতে পারে না। তবে কী সে ফিরে যায় ঢাকায়? নাকি পাঁচ মাইল পথ হেঁটে জলেশ্বরীতে পৌঁছায়?!কী এমন হয়েছিল জলেশ্বরীতে? সব উত্তর মিলবে উপন্যাসের প্রত্যেক পাতায়। #আমার_উপলব্ধি : শামসুল হকের গুটি কয়েক কবিতা ব্যতীত তার আর কোন বই এর সঙ্গে আমার পরিচয় নেই।ভাইয়ার বুক সেলফ দেখতে গিয়ে চোখে পড়লো বইটি।একটু চেক করে দেখলাম বইটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক।সারাংশটুকুও ভালো লেগে গেল।পড়া শুরু করলাম।এক ঘন্টার মধ্যেই পড়া শেষ করে ফেলি।চোখের সামনে দৃশ্যগুলোকে কল্পনা করে স্থির থাকতে পারছিলাম না।বিলকিসের জায়গায় নিজেকে বসাতে গিয়ে শরীর শিহরিত হচ্ছিলো বারবার।এই উপন্যাসটিতে ৭১ এর নির্মমতা, নৃশংসতা তুলে ধরলেও খন্ড কিছু বিষয়কে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।বিলকিসের প্রত্যেকটি পদক্ষেপে পাঠক যেন উপলব্ধি করতে পারে মুহূর্তগুলোকে।বিলকিসের সাথে সমান তালে চলতে গিয়েও যেন কোন ক্লান্তিবোধ হয়নি।বিলকিস আর সিরাজ যেন এখানে প্রতীকী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়টাতে এরকম হাজারো বিলকিস,সিরাজ তাদের অদম্য সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে।সব মিলিয়ে সম্পূর্ণ উপন্যাসটি নান্দনিক ছিল। **চরিত্র বিশ্লেষণ** ১।বিলকিস এই চরিত্রটা একজন সাহসী,উদ্যমী, নারীর পরিচয় বহন করে।যে মেয়ে একা এক রাত পার করতে পারতো না সেই মেয়ে রাতের আঁধারে মানুষরূপী হিংস্র পশুদের দেখে আর ভীত হয় না।একটার পর একটা আঘাত তার মনোবলকে যেন আরো দৃঢ় করে চলছিল।কোন হায়েনার দল যদি তার শরীরকে টুকরো টুকরো করে দেয় তবুও হার মানতে নারাজ সে।প্রিয়জন হারানোর বেদনা তাকে আরো বেশি সাহসী করে তোলে।তার চোখে জ্বলজ্বল করছে প্রতিশোধ নেবার আগুন। সব মিলিয়ে অসাধারণ সাহসিকতা আর অনুসরণীয় একটি চরিত্র ছিল বলে মনে হয়েছে। ২।সিরাজ এই চরিত্রটাও যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় বহন করেছে।সহজ সরল একটা চরিত্র।সহজে মায়া সৃষ্টি করে।সব হারিয়ে অজানা,অপরিচিত একটা নারীর প্রতিটা পদক্ষেপে সহায়তা করেছে সে,সব বিপদ থেকে বিলকিসকে রক্ষা করেছে।তার চরিত্রটার মধ্য দিয়ে আসল মনুষ্যত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। পুরো উপন্যাসে কাহিনী এবং চরিত্রগুলোর উপস্থাপন সাবলীলভাবে ফুটে উঠেছে।পড়ার আমন্ত্রণ রইলো। নিষিদ্ধ লোবানের কাহিনী অবলম্বনে ২০১১ সালে নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত "গেরিলা" মুভিটি নির্মিত হয়।তবে কাহিনীতে কিছুটা পরিবর্তন রয়েছে।মুভিটিতে অভিনয় করেছে জয়া আহসান, ফেরদৌস, এটিএম শামসুজ্জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, শম্পা রেজা, গাজী রাকায়েত সহ আরো অনেকে।

      By maruf morshed

      14 Dec 2017 12:47 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      নিষিদ্ধ লোবানঃ বুক মিভিউ; সৈয়দ শামসুল হক বইয়ের একদম শেষে এসে বুঝলাম-আরে এর সাথে তো গরিলা সিনেমার মিল আছে। তবে গরিলা সিনেমা অনেক সিনেমাটিক। আর নিষিদ্ধ লোবান অনেক মর্মান্তিক। আমি বলবো না যে বিলকিস অনেক সাহসী মহিলা। বা যুদ্ধে যাবার ইচ্ছা একবার পোষণ করলেও হয়তো স্বামী বাচ্চা বেচে থাকলে কখনোই যেতে চাইতো না। তারপরো ভাইয়ের লাশের জন্য বিলকিসের সেই জানহীন ইচ্ছা-সেই লাশ দাফনের ইচ্ছা সেই একাত্তরের বীভৎস বিগলিত ইতিহাসের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমরা স্বাধীন দেশে বেচে আছি। মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ সুবিধা দেখে আমরা হিংসা করছি। কিন্তু একবারো কি মনে হয়-প্রতাপ রা কি একবারো সুবিধার কথা চিন্তা করেছিল? নাকি আমরা মনে করে বসে আছি-মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান না দিয়ে সেই পাকিস্তানি সৈনিকদের অবৈধ সন্তানরা সুবিধা পেলে ভালো হত? সাচ্চা মুসলিম, সাচ্চা পাকিস্তানি তাই না? “অন্ধকারের ভেতরেই চোখে পড়ে বাড়ির কিছু কাপড় ঝুলছে, বারান্দায় বালতিতে রাখা পানি, বদনা। রান্নাঘরে মেঝের উপর ইতস্তত ছড়িয়ে আছে বাসনকোসন যেন এইমাত্র কেউ খেতে খেতে উঠে গেছে। দাওয়ার নিচে পড়ে আছে শাদা কালো খোপ কাটা ফুটবল” পড়লে বুকটা কেমন জানি হাহাকার করে উঠে। বারবার মনকে ধন্যবাদ জানাই। আল্লাহ তোমার নিকট হাজার হাজার শোকর-একটা স্বাধীন দেশে অন্তত জন্মাতে পেরেছি। “একটা শার্ট, বাচ্চাদের কয়েকটা জামা, গামছা, দুটো সাদা শাড়ি। মৃদু বাতাসে শাড়ির ভাজ করা পেট ফুলে ফুলে ওঠে। আবার ঝুলে পড়ে অনবরত পতাকার মতো সখেদে কাপে। একটা শাড়ির কোন হাতের মুঠোয় নিয়ে বিলকিস তার মুখে চেপে ধরে। সাবান দিয়ে ধোবার পরো মানুষের সুবাস এখনো যায়নি” একবার নিজের বাসার সাথে তুলনা করে দেখুন তো। ধরেন আপনি চা খাচ্ছেন, আপনার মা আপনার জন্য রুটি সেকছেন, বাবা বাজার এর ব্যাগ হাতে বাজারে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন-ঠিক তখনি দুমদাম দুমদাম। দরজায় হানাদারদের লাঠির আঘাত। জানি জানি-অতটা গায়ে লাগছেনা-লাগার কথাও না। তবে আতংকের সময় আমরা তরুণ রা পার করেছি একসময়। বিএনপির ৯৩ দিনের আন্দোলনের সময়। সেকি সময় রে বাবা-রাস্তা ঘাটে চলতে ভয়-বাসের জানালা সবসময় বন্ধ। ঢাকা থেকে দিনাজপুর পুলিশি পাহাড়ায় পার-তারপরে আবার যাত্রীরা সবসময় চোখ খোলা রেখে দূরে দূরে তাকিয়ে আছে-কখন আবার কে কোথা থেকে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে। সেই রাজনৈতিক ডামাডোলে হিসেবের বাহিরেও কতজন যে মারা গিয়েছেন তার হিসেব নেই। মুক্তিযুদ্ধের অত্যাচার ছিল-এর থেকেও হাজার গুন ভয়াবহ। “তাদের মরতে হবেনা কোনোদিন? তাদের মাটি দেবার দরকার হবেনা কোনোদিন? ছেলেদের প্রান নিয়েছিস, মায়ের কোল খালি করেছিস, মায়ের মতো মাটি, তার কোলে রাখতে দিবিনা এজিদের দল? যেখানকার লাশ সেখানে থাকবে? মাটি সর্বত্র, মুর্খের দল। মাটি তাদের নিজের বুকে টেনে নেবে। আল্লাহর ফেরেশতা দাফন করবে। ফেরেশতার কাছে তোর হুকুম টিকবে না” শ্রদ্ধা রইল সেই নাম না জানা, কবরের মাটি না পাওয়া, পানিতে ভেসে যাওয়া, শিয়াল কুকুরে কামড়ে খেয়ে ফেলা, সেই অগনিত শহীদ দের প্রতি। সবাইকে বিজয়ের মাসের শুভেচ্ছা।

      By Jannatul Ferdouse

      11 Mar 2017 04:31 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      #রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইঃ নিষিদ্ধ লোবান লেখকঃ সৈয়দ শামসুল হক ধরণঃ মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস প্রকাশনীঃ অনন্যা মূল্যঃ ১২০ টাকা (রকমারি মূল্য ৮৪ টাকা) . বাংলাদেশের সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক রচিত #নিষিদ্ধ_লোবান একটি মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস। 'লোবান' মানে কী? মৃতদেহের সাথে দেয়া এক সুগন্ধি বিশেষ। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের কাহিনীর প্রেক্ষাপটে প্রতীকী অর্থে 'লোবান' নামটি ব্যবহার করেছেন লেখক। উপন্যাসের কাহিনীর সাথে "নিষিদ্ধ লোবান" নামকরণ চমৎকার ভাবে মানিয়ে গেছে। . ঢাকা থেকে ট্রেন এসে থামে নবগ্রামে। #বিলকিস ট্রেন থেকে নামে এবং তার যাত্রা উদ্দেশ্য আরোএক স্টেশন পরের 'জলেশ্বরী'। নবগ্রাম থেকে জলেশ্বরীর দূরত্ব প্রায় পাঁচ মাইল এবং সেখানে যাওয়া যে কি পরিমাণ বিপজ্জনক ব্যাপার সেটা বিলকিস স্টেশনের দায়িত্বে থাকা কয়েকজনের সাথে কথা বলেই বুঝতে পারে। সকালের দিকে নাকি জলেশ্বরীতে গুলি চালিয়েছে মিলিটারি। সেই গুলির ভয়াবহতা যে কি রকম, তখন পর্যন্ত হয়তো বিলকিস সেটা অনুধাবন করতে পারেনি। জলেশ্বরীতে যতই দুর্ভোগ পোহাতে হোক, বিলকিস মনে মনে ভেবে নেয়- যেতেই হবে তাকে জলেশ্বরী। তার মা, ভাই-বোন রয়েছেন সেখানে। তাদের খবর না পাওয়া পর্যন্ত মনে শান্তি পাওয়া সম্ভব নয় তার পক্ষে। কিন্তু একা মেয়ে মানুষ অত দূর কিভাবেই বা হেটে যাবে? মিলিটারি, বিহারিদের বেশ প্রাদুর্ভাব আজকাল। নির্বিচারে তারা মানুষ মারছে। ঢাকা থেকে বলতে গেলে ২৫ শে মার্চের পর প্রায় প্রাণের মায়ার কারণেই পালিয়ে আসতে হয়েছে বিলকিসকে। বিলকিস জানেনা আলতাফ বেঁচে আছে না মারা গেছে সে রাত্রে। স্বামীর ফেরার অপেক্ষায় হয়তো থাকা উচিত ছিল তার ঢাকায়, কিন্তু ঢাকার পরিস্থিতি এতই ভয়ানক যে দু দন্ড সেখানটায় অবস্থান না করাই ভাল। হাটা ধরে বিলকিস, আর তারপরই খেয়াল করে প্রথম থেকেই তাকে অনুসরণ করা একটি ছেলে পিছু নিয়েছে তার। বয়েসে তার ভাই "খোকা"র বয়েসি। জানা যায়, ছেলেটির নাম #সিরাজ। বিলকিস যেন জলেশ্বরীতে না যায় তার জন্য ব্যাকুল আবেদন জানায় সিরাজ। কিন্তু বিলকিসের পরিবার যে সেখানে! তাকে যেতেই হবে। অগত্যা, সিরাজ নামের সেই অদ্ভুত ছেলেটিও সঙ্গ দেয় বিলকিসকে। প্রবল ঝড়ের মাঝেও মানুষ একটা খড়কুটোকেও আঁকড়ে ধরতে চায়, আর সেরকমই ভয়াবহ সময়ে বিলকিসও যেন নির্ভয়ে সিরাজের সেই সঙ্গতাকে ভরসা হিসেবেই নেয়। . নিজের পুরনো বাড়িটাকে কেমন অচেনা ঠেকে বিলকিসের কাছে। কেউ নেই। কোথায় সব? ভাল আছে তো সবাই ? মা-বোন? আর খোকা?? খোকার বয়েসি ছেলেদের যে তখন ঘোর বিপদ..... সিরাজ জানায়, ভাল আছে সবাই। গ্রাম ছেড়ে আজ সকালেই পালিয়েছে ওরা, তাই বাড়িতে নেই। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বিলকিস। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সিরাজ নিয়ে যায় বিলকিসকে 'আলেফ মুক্তার' এর বাড়ি। একসময়ের ক্ষমতাশালী আলেফ মুক্তার আজ অন্ধ!!! একা!!! কেউ নেই এই অন্ধ বৃদ্ধকে দেখাশোনা করার। বিহারিরা নাকি প্রতিদিন কোমরে দড়ি বেঁধে তাকে বাজারে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে।.... সেই আলেফ মুক্তারের কাছেই হঠাৎ করেই জানতে পারে বিলকিস এক ভয়াবহ খবর! অদ্ভুত শান্ত হয়ে মেনে নেয় সে সেই বিষাদময় সংবাদ এবং দাঁড়ায় এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা পাঠ করে! রাতের অন্ধকারে বাজারের উদ্দেশ্যে সিরাজ নামের ছেলেটিকে নিয়ে সেই ভয়াবহ দুঃসময়ে নির্ভীক পা ফেলে বিলকিস। সিরাজ একবার তাকে ডাকে 'আপা' একবার ডাকে 'দিদি' কিন্তু এমন কেন? বাজারে পৌঁছে তারা। সারি সারি মানুষ সেথায় ঘুমিয়ে। হ্যাঁ চিরতরে ঘুমিয়ে। আজ সকালেই হত্যা করা হয়েছে তাদের। বাংলার মানুষ হয়েও বাংলার মাটিতে তাদের স্থান হচ্ছেনা! কেউ এদের স্পর্শ করলেই গুলির আদেশ দেয়া আছে। কিন্তু, বিলকিস আর সিরাজের মত দুঃখীদের যে মরণের ভয় নেই, ঘাতকরা তা জানতো না। আর তাই রাতের অন্ধকারে সেই মৃতদেহ গুলোকে কবর দেয়ার জন্যই আসে তারা। কবরের কথা তুলতেই সিরাজের কাছ থেকে একটি অদ্ভুত কথা শোনে বিলকিস। যার মানে সে পরে জানতে পারে। মৃতের সংখ্যা এত বেশী যে এক রাতে সবাইকে কবর দেয়া সম্ভব হয়না। কিন্তু সে রাতেই বিলকিসের সামনে আসে প্রদীপ নামের একটি ছেলে! কে এই প্রদীপ? আর কে ছিল সেই সিরাজ? যাইহোক, দ্বিতীয় রাতে একটি নীল শার্ট গায়ে জড়ানো ছেলের মুখের দিকে তাকাতেই কাঁধে অনুভব করে তারা বন্দুক! আর তারপর...... না! হার মানেনি বিলকিস, হার মানেনি সিরাজ, আর হার মানেনি প্রদীপ! তারা 'ভালবাসা' কি জানতো.... আর তাই ভালবাসার সাহসেই জ্বলন্ত আগুনকে তারা সুগন্ধময় লোবান চোখেই দেখে জয় ছিনিয়ে এনেছিল সেই রক্তঝরা দিন গুলো থেকে..... . #পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ সৈয়দ শামসুল হকের "নিষিদ্ধ লোবান" প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই উপন্যাসটির মাধ্যমে লেখক প্রকাশ করেছেন যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং অসাম্প্রদায়িকতা। অতি সাধারণ ভাবেই গল্প চলতে থাকলেও এই গল্পের চমক রয়েছে একাবারে শেষের পৃষ্ঠায়। মানুষের আসল পরিচয় সে মানুষ, আর মানুষ যেন চরম বিপদের মুহুর্তটায় মনের আবেগ আর ভালবাসা নিয়ে মানুষের সাহায্যেই এগিয়া আসে সেই বার্তা লেখক তার লেখনীতে রেখে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের গল্প-উপন্যাস সব সময়ই বেস্ট! তাই ব্যতিক্রমধর্মী এই মুক্তিযুদ্ধের বইটি পড়ে দেখার আমন্ত্রণ রইল। হ্যাপি রিডিং.....

      By murad

      19 Oct 2017 05:01 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      আমি তোমায় সন্তান দিতে পারব। উত্তম বীজ উত্তম ফসল। তোমার সন্তান খাঁটি মুসলমান হবে, খোদার ওপর ঈমাণ রাখবে, আন্তরিক পাকিস্তানী হবে, চাওনা সেই সন্তান? আমরা সেই সন্তান তোমাদের দেব, তোমাকে দেব, তোমার বোনকে দেব, তোমার মাকে দেব, যারা হিন্দু নয়, বিশ্বাসঘাতক নয়, অবাধ্য নয়, আন্দোলন করে না, শ্লোগান দেয় না, কমিউনিস্ট হয় না। জাতির এই খেদমত আমরা করতে এসেছি। তোমাদের রক্ত শুদ্ধ করে দিয়ে যাব, তোমাদের গর্ভে খাঁটি পাকিস্তানী রেখে যাব, ইসলামের নিশানা উড়িয়ে যাব। তোমরা কৃতজ্ঞ থাকবে, তোমরা আমাদের পথের দিকে তাকিয়ে থাকবে, তোমরা আমাদের সুললিত গান শোনাবে।” (নিষিদ্ধ লোবান, সৈয়দ শামসুল হক) সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস “নিষিদ্ধ লোবান” কাহিনী খুব দীর্ঘ নয়, সম্ভবতঃ দুই কি তিনদিনের গল্প, কিন্তু সৈয়দ হকের সম্মোহনী গদ্য একটানে নিয়ে যায় চৌষট্টি পৃষ্ঠার উপন্যাসের শেষে। বিশাল অংশ জুড়ে আছে লাশ সরানোর, মাটি চাপা দেয়ার গল্প। টানটান বিবরণ। সম্পূর্ণ উপন্যাসটি আর দেরি না করে পড়ে ফেলুন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কাহিনী অবলম্বনে রচিত উপন্যাস । দুটি চরিত্রক ঘিরে বাঙলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পটভুমিতে নির্মিত । বিলকিস মুসলমান ঘরের সন্তান । ঢাকা থেকে ট্রেনে গ্রামের বাড়ীতে তার মা, ভাই, বোন, বোনের সন্তানদের দেখতে আসে এপ্রিলের দিকে । স্বামী বেঁচে আছে না মরে গেছে জানা নেই । নির্দিষ্ট ট্রেন ষ্টেশন এর আগেই ট্রেন থেকে যায় এবং পাঁচ মাইল পথ হেঁটে তাকে তার গ্রামে আসে । ষ্টেশন থেকেই সিরাজ নামের একটি ছেলে তাকে তাদের বাড়ীতে নিয়ে আসে । তার ভাইকে বিহারী আর পাকিস্তানীরা বাজারে গুলি করে মেরে ফেলে রেখেছে । কেউ তাদের কবর দিতে পারবে না বলে সমন জারি হয়েছ । দুজন অগুনিত লাশ দাফন করার কাজে নামে । দিতীয় রাতেই ধরা খায় বিহারীদের হাতে । সিরাজ আসলে প্রদীপ । উপন্যাশের শেষ পর্যায়ে বিলকিস হিন্দু হিসেবে পরিচিত হয় । প্রদীপের সাথে মেজর কে সাথে নিয়ে বিলকিল চিতায় ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহুতি দেয় ।

      By Jannatul Naym Pieal

      19 Apr 2014 03:23 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে বাংলা সাহিত্যে রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের 'নিষিদ্ধ লোবান' অন্যতম সেরা। এই উপন্যাসে দেখা যাবে, ঢাকা থেকে আগত বিলকিস তার পরিবারের খোঁজে নিজ গ্রাম জলেশ্বরীতে যেতে চাচ্ছে। ট্রেন ঐ পর্যন্ত যাবে না বলে একাত্তরের সেই ভয়াবহ সময়েও রাত্তিরবেলা একা সে ৫ মাইল হেঁটে যেতে উদ্যত হয়। তখন নিজেকে সিরাজ পরিচয় দেয়া এক যুবক তার সাথি হয়। বিলকিস আর সিরাজ গ্রামে পৌঁছায়। তারা খবর পায় বিলকিসের ভাই খোকাকে হানাদারেরা মেরে ফেলেছে। এই খবর শুনে নিজের জানের ভয়কে তুচ্ছ করে বিলকিস প্রতিজ্ঞা করে, ভাইয়ের সৎকার সে করবেই। সিরাজ এক্ষেত্রেও তার সাথি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি খোকার লাশ সৎকার করতে পারবে তারা নাকি তার আগেই তাদেরও খোকার মতই পরিণতি হবে, এই কাহিনী নিয়ে করুণ ও একাধারে গা শিউরে ওঠা ভয়ংকর বর্ণনা রয়েছে 'নিষিদ্ধ লোবান' উপন্যাসে। এক বাঙালি নারী আর হিন্দু যুবকের নিখুঁত চরিত্রায়নের মাধ্যমে লেখক বলতে চেয়েছেন, একাত্তরের সেই প্রেক্ষাপটে নারী ও হিন্দুদের ওপর পাকিস্তানি হানাদারেরা কি বীভৎস ও অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে। বাঙালি নারী মাত্রই যে হানাদারদের নিকট ছিল ভোগের বস্তু আর হিন্দু ধর্মালম্বিদের দেখা মাত্রই গুলি করে 'ভারত' পাঠিয়ে দিতে হবে, পাকিস্তানি মেজরের মুখ থেকে এইধরনের সংলাপ বের করে এনে লেখক সামগ্রিকভাবেই একাত্তরে পাকিস্তানি হায়নাদের মনোভাব চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভাই-বোন পরিচয় দেয়া যুবক যুবতিকে যৌন মিলনে বাধ্য করার যে ঘটনার উল্লেখ উপন্যাসে রয়েছে, তা আরও একবার মনে করিয়ে দেয় ঐ হায়নাদের মানসিকতা কেমন পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট ছিল। হিন্দু মুসলমানের মৃত্যুপরবর্তি সৎকারকর্মের যে ভিন্নতা, সেই ভিন্নতাকেও পাকিস্তানি হানাদারেরা কিরকম মানুষ আর শয়তানের বিভেদে বিভক্ত করে তা দেখে অতি দুঃখেও হাসি আসতে বাধ্য। এই উপন্যাসের শেষে এসে লেখক যেভাবে কাহিনীর সমাপ্তি ঘটিয়েছেন তা বাংলা সাহিত্যে অভূতপূর্ব ও চিরকাল স্মরণীয়। সবমিলিয়ে বলা যায়, 'নিষিদ্ধ লোবান' উপন্যাসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি নারী ও হিন্দু ধর্মালম্বীদের অবস্থান ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। সাহিত্যের মাধ্যমে যারা একাত্তরের ইতিহাসকে জানতে চান, তাদের জন্য 'নিষিদ্ধ লোবান' অবশ্যপাঠ্য।

      By prottoy pijush

      11 Mar 2017 02:49 PM

      Was this review helpful to you?

      or

      হুমায়ুন আজাদ নিষিদ্ধ লোবান কে যেভাবে আক্রমণ করেছেন তা সত্য নয়, ভালো লেগেছে। রেটিং 4/5

      By Tehsin Huda

      03 Dec 2017 08:44 AM

      Was this review helpful to you?

      or

      এর আগে সৈয়দ শামসুল হকের একটিই বই পড়েছি - 'খেলারাম খেলে যা ' - যৌনতা আর লাম্পট্যের রগরগে বর্ণনাসমৃদ্ধ বইখানি পড়ে ওনার আর কোনো লেখা পড়ার আগ্রহই হয়নি , ভেবেছি ধ্যাৎ পর্নোগ্রাফি ছাড়া ইনি কী বা আর লিখতে জানেন ! আমার বইয়ের তাকে তাই কেবল ধুলোই জমছিল 'নিষিদ্ধ লোবান ' বইটির গায়ে I লোকমুখে প্রশংসা শুনে পড়া ধরলাম , শেষ করলাম একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে ! কী শক্তিমান এক লেখক আর কী অসামান্য তাঁর শৈলী !

    •  

    Recently Viewed


    Great offers, Direct to your inbox and stay one step ahead.
    • You can pay using


    JOIN US

    icon Download App

    Rokomari.com is now one of the leading e-commerce organizations in Bangladesh. It is indeed the biggest online bookshop or bookstore in Bangladesh that helps you save time and money. You can buy books online with a few clicks or a convenient phone call. With breathtaking discounts and offers you can buy anything from Bangla Upannash or English story books to academic, research or competitive exam books. Superfast cash on delivery service brings the products at your doorstep. Our customer support, return and replacement policies will surely add extra confidence in your online shopping experience. Happy Shopping with Rokomari.com!