User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
কবি,কথাশিল্পী,নাট্যকার—সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক,ষাটবর্ষপূর্তি উপলক্ষে আমার শ্রদ্ধা ও অভিবাদন গ্রহণ করুন।আপনি ভালো ক'রেই জানেন এক বামনপল্লীর অধিবাসী আমরা,যে-পল্লীতে অতিকায়দের আবির্ভাব দুর্লভ ও বিব্রতকর ঘটনা;এবং যদি কোনো অতিকায় আপন দুর্ভাগ্যবশত আবির্ভূত হয় মাঝারি ও নিম্নমাঝারির কীর্তনমুখর এ-পল্লীতে,তাকে আমরা নিজেদের মাপ অনুসারে কেটে নিয়ে স্বস্তি পাই।এ-কাজ আমরা ক'রে আসছি শতাব্দীর পর শতাব্দী।আপনার কথা ভাবলে আমি বোধ করি আপনার অতিকায় প্রতিভায় আমরা স্বস্তি পাই নি;তাই আমাদের মাপ অনুসারে কেটে নিয়েছি আপনাকে;–আপনার অতিকায়তা সুখকর নয় আমাদের জন্যে;আপনি যে অতিকায় তা আমরা স্বীকার করতে চাই নি;বরং আপনাকে বহু ক্ষুদ্রকায়ের থেকে ক্ষুদ্র দেখার একটি অভ্যাস আমরা গ'ড়ে তুলে স্বস্তি পাচ্ছি।অন্ধ যেমন কখনো সম্পূর্ণ হাতি দেখে উঠতে পারে না,আমরাও সম্পূর্ণ আপনাকে,সৈয়দ শামসুল হককে,দেখতে পাই নি।অন্ধদের আচরণ, আমি বুঝি, নিরন্তর পীড়ন করেছে আপনাকে;তাই আপনি মহাভারতীয় একটি শব্দ—'সব্যসাচী'–পুনরাবিষ্কার করেছেন নিজের জন্যে;নিজেকে দেখেছেন আধুনিক অর্জুনরূপে। বামনপল্লীতে অর্জুন বেমানান;তবে আমাদের ভাগ্য দু-একটি অর্জুন আমাদের পল্লীতেও জন্মগ্রহণ করে।আমরা স্বস্তি পাই,সুখী হই,একমাত্রিকতায়;আপনি বহুমাত্রিক,এটাই আমাদের অস্বস্তির প্রধান কারণ।যিনি শুধুই কবিতা লেখেন,তাঁকে আমরা বলি কবি;তাঁর নামের সাথে কবির আগে বিশেষণের পর বিশেষণ আমরা ব্যবহার করি;যিনি শুধুই উপন্যাস লেখেন,তাঁকে বলি ঔপন্যাসিক, যিনি শুধুই নাটক লেখে, তাঁকে বলি নাট্যকার;কিন্তু যিনি ঋদ্ধ করেন সাহিত্যের নানান শাখা,যিনি হন সৈয়দ শামসুল হক,তাঁকে কী বলবো আমরা ঠিক ক'রে উঠতে পারি না।কবি বলবো,না ঔপন্যাসিক, না নাট্যকার? তাঁকে এক শব্দে আমরা ডাকতে পারি না ব'লে তাঁকে দেখি খণ্ডিত ক'রে;খণ্ডিত করতে গিয়ে তাঁকে ক্ষুদ্র ক'রে তুলি গৌণদের থেকে।আমাদের খণ্ডিতকরণপ্রবণতার এক বড়ো শিকার আপনি,সৈয়দ শামসুল হক,আপনি তা জানেন,এবং তা নিশ্চয়ই আপনাকে দশকের পর দশক পীড়িত ক'রে আসছে।আপমি নিজেই জানেন কবিতা, কথাশিল্প,নাটক মিলিয়ে আপনার উচ্চতার স্রষ্টা আধুনিক বাঙলা সাহিত্যে তিনচারজনের বেশি,এবং সমগ্র বাঙলা সাহিত্যেও খুব বেশি মিলবে না।আমাদের খণ্ডিতকরণরোগের বড়ো এক শিকার হয়ে আছেন মহৎ বুদ্ধদেব বসু ;রবীন্দ্রনাথের পর যাঁর সমতুল্য আর কেউ নেই;তাঁর মহিমা আমরা যেমন বুঝি না,আমরা বুঝি না আপনার মহিমাও।কথাশিল্পী হিশেবেই আপনার পরিচয় বেশি,কিন্তু আপনি যে ওই এলাকায় আমাদের প্রধানতম,তা আমরা বলি না,বলতে ভয় পাই,বা আমরা বুঝে উঠতে পারি না।আমাদের বামনপল্লীতে পুরোনোর মূল্য বেশি,আর এ-পল্লীতে কোনো কথা একবার র'টে গেলে তার থেকে আমাদের আর মুক্তি ঘটে না,চিরকাল আমাদের ওই রটনা রটিয়ে যেতে হয়।কথাসাহিত্যের কথা উঠলে আজো সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ আর শওকত ওসমানের কথা বলি,বিশেষ করে বলি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্-র কথা,যেনো তিনিই আমাদের শ্রেষ্ঠ,এমনকি চিরকালের শ্রেষ্ঠ,কথাশিল্পী ;আমরা এখনো ভুল ধারণার মধ্যে রয়েছি।সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ আর শওকত ওসমানের মধ্যে মুসলমানিত্বের পরিচয় লেগে আছে গাঢ়ভাবে,আর শিল্পকলার বিচিত্র সৌন্দর্যও দুর্লভ তাঁদের কথাসাহিত্যে।আর তাঁরা কি অনেকটা উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মনে রেখেই লেখেন নি তাঁদের উপন্যাসগুলো?আপনিই তো প্রথম লিখেছেন আমাদের আপত্তিকর উপন্যাস,যা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বিব্রত করেছে;এবং দেখিয়ে দিয়েছে শিল্পকলা পাঠ্যপুস্তক নয়।আমাদের কথাসাহিত্যকে প্রথম বিচিত্র শিল্পসৌন্দর্যখচিত ক'রে তুলেছেন আপনি;এবং আপনার সৃষ্টিশীলতাও বিস্ময়কর। আপনি নিরীক্ষার পর নিরীক্ষা করেছেন শিল্প ও সৌন্দর্য সৃষ্টির;আপনার কথাশিল্প ও কবিতা ও নাটক নিরীক্ষার বিস্ময়কর বিশ্ব,যার কোনো তুলনা বাঙালি মুসলমানের মধ্যে দেখি না।সমগ্র বাঙলা সাহিত্যেও কি খুব বেশি দেখি?বাঙলা কথাশিল্পে জীবন যতোটা বড়ো হয়ে আছে,ততোটা কি বড়ো হ'তে পেরেছে শিল্পকলা ও সৌন্দর্য? তারাশঙ্কর বা বিভূতিভূষণ বা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ে যতোটা জীবন পাই,ততোটা কি পাই সৌন্দর্য ও শিল্পকলা;এবং তাঁদের আজো আমরা যতোটা কিংবদন্তি ভাবি তাঁরা কি ততো বড়ো?তাঁরা কি বাঙলা উপন্যাসকে প্রথার মধ্যেই রেখে দেন নি,শিল্পকলার থেকে স্থূল জীবন নিয়েই বেশি মেতে থাকেন নি?আপনি বেরিয়ে এসেছিলেন ওই প্রথার ভেতর থেকে।শিল্পকলায় নিরীক্ষা মূল্যবান,কিন্তু নিরীক্ষা যদি শুধুই নিরীক্ষা হয়ে থাকে,তাহলে তার বিশেষ মূল্য থাকে না;শিল্পকলায় মূল্যবান হচ্ছে সফল নিরীক্ষা,যা আপনার কথাশিল্প থেকে কবিতা থেকে নাটক পর্যন্ত বিস্তৃত।আমি এখানে আপনার উপন্যাস বা গল্প বা কবিতা বা নাটকের ভাষ্য লিখতে চাই না,হয়তো কোনোদিনই লিখে উঠতে পারবো না,শুধু জানাতে চাই যে আপনার মহত্ত্ব আমি সব সময়ই উপলব্ধি করি।আপনার বাঙালিত্ব ও আন্তর্জাতিকত্ব যেমন শিল্পিত,তেমনি শিল্পিত আপনার প্রেম ও কাম এবং জীবন।আপনার কবিতার উপাখ্যানতা যেমন শিল্পিত,তেমনি শিল্পিত তার গীতিময়তা;এবং বিস্ময়কর আপনার নাটক—অলীক কুনাট্য রঙ্গের দেশে আপনি নাটককে ক'রে তুলেছেন শিল্পকলা।নাটক আমার কাছে দৃশ্যকাব্য নয়,পাঠ্যকাব্য;মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব,আর আপনার নাটকেই আমি পাই ওই পাঠ্যকাব্যত্ব—সুন্দরী নটী,সুন্দর নট,সুন্দর রঙ্গমঞ্চ বাদ দেয়ার পর যা থাকে,তাই হচ্ছে নাটক,যা পাঠ্য,যা দেখার নয়,অনুভব আর উপলব্ধির।নাটক শুধু উল্লাস আর করতালিতে সমাপ্ত নয়।আপনি যখন তৎসম থেকে চলতি যান,এবং চলতি থেকে আঞ্চলিকে,তখন যা সৃষ্টি হয়,তা হচ্ছে শিল্পকলা;এবং আপনার প্রজন্মের কেউ ওই শিল্পকলাকে আপনার মতো অনুভব করেন নি।আপনি বাঙলা গদ্যকে পরিস্রুত করেছেন,শিল্পকলা ক'রে তুলেছেন।আপনার মধ্যে আমি দেখি সৌন্দর্য আর শিল্পকলা, যা জীবনের থেকে মহৎ,এবং অবিনশ্বর। —হুমায়ুন আজাদ অগ্রন্থিত প্রবন্ধ
Was this review helpful to you?
or
বই: দ্বিতীয় দিনের কাহিনি লেখক: সৈয়দ শামসুল হক বই আলোচনাঃ যুদ্ধোত্তর বাস্তবতার স্থির-বয়ান। দ্বিতীয় দিনের কাহিনি (১৯৮৪)—সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ২০১৭-এর অক্টোবরে। দ্বিতীয় দিন মানে প্রথমদিনের পরের দিন। এখানে প্রথমদিন বলতে মুক্তিযোদ্ধাত্তর দিনগুলো এবং দ্বিতীয় দিন বলতে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী দিনগুলোকে বোঝানো হয়েছে। বইটাতে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং যুদ্ধপরবর্তী ঘটনা বর্নিত হয়েছে। উপন্যাসের প্রেক্ষাপট হলো যুদ্ধোত্তর জলেশ্বরী গ্রাম। গ্রামটি লেখক কল্পনা করেছেন মাত্র মানে কল্পশহর। এরপর তিনি জলেশ্বরীর প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়কে উপজীব্য করে লেখেন নিষিদ্ধ লোবান (১৯৯০) উপন্যাসটি। স্বাধীনতা সাধারন মানুষকে কতটা ছুঁয়ে গেছে, স্বাধীনতার পরবর্তী পর্যায়ে মানুষ জীবনের গুঢ় অর্থের প্রতি মানুষের আগ্রহ কতটা পাতায় পাতায় লেখক তা ঘষে মেজে তুলেছেন। সৈয়দ হক অল্প কটি চরিত্র দ্বারা স্বল্পায়তনের এই উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের নৈরাশ্যজনক চিত্র তুলে এনেছেন। এর মধ্য উল্লখযোগ্য চরিত্র দুটি হচ্চে তাহের ও ক্যাপ্টেন। তাহেরের চোখ দিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের যুদ্ধপরবর্তী নিদারুন হতাশার ছবি এঁকেছেন সৈয়দ সামছুল হক। জলেশ্বরী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চাকরি নিয়ে শহরটিতে পা রাখে তাহের উদ্দিন খন্দকার। আলো-আঁধারির ভেতর থেকে সন্দেহের দৃষ্টি ধেয়ে আসে তার দিকে। মানুষগুলো মনে করে সে বিহারি; ছদ্মবেশে সম্পত্তি পুনরুদ্ধারে এসেছে। এরপর তার পরিচয় উন্মোচিত হলে তারা তাকে অস্থায়ী একটা আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যায়। তাহের এগিয়ে যায় নিস্তব্ধতার ভয়াবহ শব্দের ভেতর দিয়ে। শহরটিতে এই ভয়াবহ নিস্তব্ধতা ও অবিশ্বাসের দীর্ঘশ্বাস নেমে এসেছে ভয়ংকর এক যুদ্ধ থেকে। যুদ্ধ-পরবর্তীকালে এসে গোরস্থানের নগরী হয়ে ওঠে জলেশ্বরী। তাহের তার স্মৃতিতে যে জলেশ্বরীকে সম্বল করে আসে, সেই জলেশ্বরী একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সর্বস্বান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ধ্বংসের সাক্ষী হয়ে। চারদিকে ক্ষয় আর মৃত্যুর চিহ্ন। একসময়ের নামহীন সড়কগুলো এখন হয়ে উঠেছে শহীদ বরকতউল্লাহ রোড, শহীদ আনোয়ার রোড, শহীদ গেদু মিয়া লেন, চাঁদবিবির পুকুর ও শহীদ সিরাজ আলী রোড। সাক্ষাতে শহরের লোকজন কেবল মৃতদের গল্প শোনায়। তাহের রাজধানীর অপেক্ষাকৃত ঝঞ্ঝাটমুক্ত জীবন ফেলে জলেশ্বরী এসেছে পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু এখানে এসে সে নির্মিতির চেয়ে ভাঙনটা দেখতে পায় স্পষ্টভাবে। মুক্তিযুদ্ধের পর ব্যক্তি থেকে সমষ্টি গড়ে ওঠার পরিবর্তে এখানে ব্যক্তিবোধ আরও সংকীর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে জলেশ্বরী সংস্কারে এসে নিজেকে প্রতারিত মনে হয় তাহেরের। তবে অন্যদিক থেকে তাকে শক্তি জোগায় ক্যাপ্টেন নামের পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা মজহার। মধ্যরাতে ক্যাপ্টেনের এ-এ-রে-এ-এ হাঁক তাহেরকে আশাবাদী করে তোলে। ক্যাপ্টেনের সঙ্গে একাত্মবোধ করে সে। ক্যাপ্টেন আর তখন একক কোনো ব্যক্তি থাকে না, উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের শক্তি হিসেবে। ব্যাক্তিগত মতামত: যখন পড়তে শুরু করি তখন টানা গদ্য দেখে পড়তে ইচ্চা করছিল না। কিন্তু পড়তে পড়তে ভিতরে গিয়ে আর বের হতে পারি নি। বইটি দারুন গদ্য বললে ভুল হবে না। সুখপাঠ্য, নিরাবেশ এবং এক পেজের পর অন্য পেজের টার্নার। আপনার ৩ ঘন্টার বেশী লাগবে না ১২০ পেজের বই পড়তে কিন্তু এই তিন ঘন্টায় হারিয়ে যাবেন মুক্তিযুদ্ধোত্তর ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে। পাঠান্তে বুকের ভিতর ফাঁকা ফাঁকা লাগবে, চোখে জল আসবে এমন বই আর পাবেন না। এ উপন্যাস পড়তে আপনার যত সময় লাগবে তার থেকে বইয়ের কথা আপনার মগজের মেমরিতে থাকবে অনেকদিন। হ্যাপি রিডিং ♥♥♥♥
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধোত্তর যে কটি উপন্যাস নির্মাণশৈলীর অভিনবত্বে অসাধারণত্বের পরিচয় দিয়েছে তার মধ্যে সৈয়দ শামসুল হকের 'দ্বিতীয় দিনের কাহিনী' (১৯৮৪) অন্যতম। কেবল নির্মিতি নয়, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী পরিবর্তমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা রূপায়ণে উপন্যাসটির বিশিষ্টতা সুচিহ্নিত। ক্ষক তাহেরের আত্মকথন ও স্মৃতিচারণ ধরে রেখেছে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা ও ঘটনা-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া। জলেশ্বরীর জনগোষ্ঠীর মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী জীবনের কাহিনী সাদামাটা নয়। তাহেরের মনোবিশ্লেষণ করে লেখক দেখিয়ে দেন প্রকৃত পরিস্থিতি। স্মৃতিতে যে সময়ের কথা উচ্চারিত হয় তা তার ব্যক্তিগত জীবনকে মিলিয়ে বৃহত্তর ইতিবৃত্তের দিকে টেনে নেয় আমাদের। এ উপন্যাসটির আগে সৈয়দ শামসুল হকের 'নীলদংশন' ও 'নিষিদ্ধ লোবান' প্রকাশিত হয়। যুদ্ধজীবনের আখ্যান বয়ানে এ দুটিতে তিনি চরিত্রের অন্তর্জগৎ উন্মোচন করেছেন; অন্তর্বাস্তবতার অনিবার্য বিন্যাস হয়ে উঠেছে কাহিনীর পরিণামসঞ্চারী।যুদ্ধোত্তর দেশের এ সমস্যাগুলো ব্যক্তির মনোকথন ও মনোসংলাপে তুলে ধরেছেন ঔপন্যাসিক। 'দ্বিতীয় দিনের কাহিনী' মুক্তিযুদ্ধের বৃহৎ ক্যানভাসের পরিবর্তে ক্ষুদ্র রেখায় ব্যক্তির সঙ্কটের উন্মোচনে সার্থকতা অর্জন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত ঘটনা ও প্রতিক্রিয়ার রূপায়ণে ঔপন্যাসিকের জীবনার্থের সার্থকতা এ উপন্যাসকে করেছে ব্যাপ্ত, সমগ্র ও দূরসঞ্চারী চেতনায় উদ্ভাসিত। জলেশ্বরীর মানুষ একদিন যুদ্ধ করেছিল বাঙালি জীবনে স্বাধীনতা আনার জন্য। তাদের সেই আত্মত্যাগ ছিল সামষ্টিক ভাবনায় উজ্জীবিত। কিন্তু বর্তমানে তারা অন্য এক সমস্যায় নিপতিত, তারা জীবনবিমুখ, নৈরাশ্যের গহনে আত্মগোপনরত; তাদের স্বপ্ন অপসৃত। স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রত্যয়গুলো বিনষ্ট হতে দেখেছে তারা; যথার্থ নেতৃত্বের অভাবে গ্রামীণ জীবনে স্বার্থপরতা, দলবাজি শিকড় গেড়ে বসেছে। পক্ষান্তরে মুক্তিযোদ্ধারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন।