User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
প্রথমেই বলে রাখি, কবি আল মাহমুদের লেখা 'আলোক পুলক শিহরণ' সবার জন্য না। বিশেষ করে যারা গল্প-উপন্যাস পড়তে চান, কিন্তু নিজে থেকে তার অন্তর্নিহিততাকে খুঁজে নিতে ইচ্ছুক নন তাদের জন্য এই বই নয়। এই বইটি মূলত একটা উপন্যাসিকা। উপন্যাস বলে এটাকে দাবি করা অসম্ভব কেননা এর পৃষ্ঠাসংখ্যা মাত্র ৪২। এত কম পৃষ্ঠা জেনে অনেকেই বইটা পড়তে আগ্রহী হতে পারেন কিন্তু তাদের আগে থেকে সাবধান করে দিচ্ছি, এই বই কিন্তু সাধারণ গদ্যের স্টাইলে লেখা হয়নি। কাহিনীর শুরু থেকেই কেমন একটা অস্পষ্টতার ধুম্রজাল লক্ষণীয়। এই জাল কেটে কাহিনীর গভীরে যাওয়া বা কাহিনীর গতিময়তার সাথে নিজেকে সামিল করা বেশ কঠিন হবে। সংলাপগুলোও কেমন যেন কাব্যধর্মী। অনেকটা ফিলমি টাইপও বলা চলে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ যেভাবে দৈনন্দিন জীবনে কথা বলে তার কোন ছায়া এই বইয়ের সংলাপগুলোতে নেই। প্রতিটা সংলাপ থেকেই গভীর জীবনবোধের ইঙ্গিত পাওয়া যায় কিন্তু সেগুলো কোন প্রেক্ষাপটে কি কারণে ব্যবহৃত হচ্ছে তা ঠিকভাবে 'ক্যাচ' করতে পারা যেকোন পাঠকের জন্যই কিছুটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হবে। তবে নিয়মিত কবিতা পড়েন বা কাব্যচর্চা করেন এরকম পাঠকের পক্ষে কাহিনীর বিষয়বস্তুর সাথে নিজেদের চিন্তাধারাকে 'রিলেট' করা সম্ভব হবে। এক পুরুষ আর তিন নারীর মানবীয় সম্পর্কের রহস্যময়তা ফুটে উঠেছে এই লেখায়। কবি আশ্রয় নিয়েছেন ঢাকার এক বাড়িতে। সন্ধান করে চলেছেন কাশিদা নাম্নী রহস্যময়ী এবং আপাত হিংস্র ও ভয়ংকর এক নারীর। কবি যে বাড়িতে আছেন, সে বাড়িতে আছে আরেক নারী সুগন্ধী। সুগন্ধী ভালোবেসে ফেলেছে কবিকে। তাই কবিকে সাহায্য করতে সেও কবির সাথে রাস্তায় নেমে পড়ল কাশিদার সন্ধানে। কাশিদার খবর পেতে তারা গেল মনিরা নামের আরেক নারীর বাসায়। মনিরাও বেশ সুন্দরী আর আকর্ষনীয়া। একটা সময় এল যখন দেখা যাবে কবি সুগন্ধী আর মনিরা উভয়ের প্রতি ভালোবাসার দোলাচলে ভুগছে। সুগন্ধীকে বিয়ে করার প্রতিজ্ঞা করেছেন আবার মনিরার প্রতিও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এমন সময় কবির কাছে নিজে থেকে ধরা দেবে কাশিদা। কবির যথারীতি কাশিদার প্রতিও আসক্তি জন্মাল। শেষ পর্যন্ত কবি কার সাথে পথ চলতে শুরু করলেন? এই প্রশ্নের জবাব পেতে পড়তে হবে এই উপন্যাসিকার একদম শেষ শব্দটি পর্যন্ত। কাহিনীর পরতে পরতে কবির এবং বাকি তিন নারীর কন্ঠেও নারীদের সম্পর্কে যে ধরণের মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাতে নারীত্বের কিছুটা হলেও যে অসম্মান হয়েছে তা অনস্বীকার্য। তিনটি নারী চরিত্রকেই পরগাছা ঈর্ষাপরায়নের যে রূপ দেয়া হয়েছে তাতে কোন নারীবাদী পাঠক যদি এই লেখা পড়ে চটে যান তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। পাশাপাশি এটাও বলে রাখা ভাল, সবমিলিয়ে উপন্যাসিকাটি খুব একটা সুখপাঠ্য নয়। জীবনবোধের গভীরতা হাতড়াতে গিয়ে লেখক (বা কবি) যে হাস্যকর পুরুষতান্ত্রিকতার জন্ম দিয়েছেন তাও পাঠকের খুব একটা মন কাড়বে বলে মনে হয় না।
Was this review helpful to you?
or
‘আলোক পুলক শিহরণ’ একটি মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসিকা। এখানে আল মাহমুদ একটু ভিন্ন ধরনের বর্ণনাভঙ্গি নিয়ে পাঠকের সামনে উপস্থিত হয়েছেন। বাংলা ভাষার পাঠকেরা সাধারণত এই ধরনের বর্ণনাভঙ্গির সাথে পরিচিত না। লেখক এই উপন্যাসিকায় বর্ণনার মাধ্যমে কাহিনীর সংলগ্নতা রক্ষা করার ব্যাপারে বেশ উদাসীন ছিলেন। বরং তাঁর মূল আগ্রহ ছিল, এই উপন্যাসিকায় ব্যবহৃত চরিত্র চারটির মনের মধ্যে চলতে থাকা বিভিন্ন টানাপোড়েন পাঠকের সামনে নিয়ে আসার দিকে। এই উপন্যাসিকায় দেখানো হয় একজন কবি এক অদ্ভুত মেয়ের সন্ধান করে বেড়াচ্ছেন। তিনি যেখানে উঠেছেন সেখানে সুগন্ধি নামের এক মেয়ে থাকে। কবি মেয়েটির রূপ-গুণের কিছু প্রশংসা করায় সুগন্ধি কবির প্রেমে পড়ে যায়। তারপর তারা দু’জন একসাথে সেই মেয়েটির খোঁজে বের হয়, যার নাম কাশিদা। কাশিদার ঠিকানা পাওয়ার জন্যে তারা কাশিদার বান্ধবী মনীরার কাছে যায়। তখন মনীরার সৌন্দর্য দেখে কবি প্রলুব্ধ হয়, যদিও সে সুগন্ধির কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। মনীরাও কবিকে নিজের দিকে টানার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে থাকে। তারপর দেখা যায়, কাশিদা তার গুপ্ত অবস্থা থেকে বের হয়ে মনীরার কাছে আসে। কবির সাথে কাশিদার দেখা হয়। কাশিদার আগুন-ঝরানো রূপ আর সরলতায় মুগ্ধ হয়ে কবি কাশিদাকে কামনা করতে থাকে। কাশিদাও কবিকে নিবিড় করে পেতে চায়। এই উপন্যাসিকায় লেখক মূলত পুরুষ আর নারীর চেতনার গভীরে প্রথিত একটা সহজাত প্রবণতার উপর আলোকপাত করেছেন। ঘটনার সমন্বয় করার জন্যে বর্ণনার সময় তিনটি নারী চরিত্র ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষণের সময় আমি এই তিনটি নারী চরিত্রকে একটি অভিন্ন সত্ত্বা হিসেবে বিবেচনা করছি। তাহলে এখন এই উপন্যাসিকায় চরিত্র সংখ্যা দুটি। একটি পুরুষ চরিত্র কবি আর একটি নারী চরিত্র, যে নারী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য তিন জন নারীর মধ্যেই সমভাবে বিদ্যমান। এখানে লেখক পুরুষের যে জন্মপ্রবণতা তুলে আনার চেষ্টা করেছেন তা হল, প্রতিনিয়ত উন্নততর নারীর খোঁজে থাকা। এই উন্নততর হতে পারে শারীরিক সৌন্দর্যের দিক থেকে, হতে পারে গুণের সমাবেশের কারণেও। আর কোন পুরুষ যদি কোন নারীর সাথে কোন সম্পর্কে আবদ্ধ থাকে তারপরও এই খোঁজাখুঁজির প্রক্রিয়া ব্যহত তো দূরের কথা, বিন্দুমাত্র বাধাগ্রস্থ পর্যন্ত হয় না। এখানে লেখক কবির চরিত্রের মাধ্যমে উন্নত পুরুষ চরিত্র বোঝাতে চেয়েছেন। সে চরিত্রও এই সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। তাহলে সাধারণ পুরুষ চরিত্রের কথা তো বলাই বাহুল্য। এবার আসি নারী চরিত্রটির বিশ্লেষণে। লেখক এখানে দেখাতে চেয়েছেন, নারীর জন্মপ্রবণতাই তাকে অসহায় করে রাখে। সে জীবনভর একজন পুরুষকে খুঁজে চলে, ভালোবাসা আর আশ্রয়ের জন্যে। যখন নারী কোন পুরুষকে পায় তখন সে যে কোন মূল্যে তাকে রক্ষা করতে চায়। প্রয়োজনে সে অত্যন্ত হিংস্র হয়ে উঠতেও কুণ্ঠিত হয় না। ছোট পরিসরের এই উপন্যাসিকাটি এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের কারণেই চিন্তাশীল পাঠকদের কাছে সমাদৃত হবে বলে আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস।