User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#ফ্ল্যাট_নম্বর_নয়_ছয় #পাঠ_অনুভূতি ♦এক নজরেঃ •উপন্যাসের নামঃ ফ্ল্যাট নম্বর নয় ছয় •লেখকঃ লামইয়া চৌধুরী •ধরনঃ রোমান্টিক, সামাজিক •প্রকাশনীঃ অন্যপ্রকাশ •প্রচ্ছদঃ মো. সাদিতউজজামান •পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৪২৪ •প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা ২০২৪ লেখনীতেঃ রিফায়াত হাসান সাকিব ♦ভূমিকাঃ আমার মাঝে মাঝে খুব পূর্বপ্রস্তুতির মতো করে ভাবতে ইচ্ছে করে । সেই প্রস্তুতি এরকম হয়ে বসে পড়ে যে, মনে হয় এই নির্দিষ্ট কাজটিতে এরকম ভাবে করবো । কিন্তু এরকম প্রস্তুতিগুলো কেনো যেন আমার আর কখনও করা হয়ে উঠে না । আমি আয়োজন করে ভেবে নিয়ে কাজ যদি করতেও যাই, কোথাও একটা যেন ভয় লাগার সুরে তা পরিবর্তন হয়ে যায় । বিভিন্ন বই পড়তে বসার আগেই আমার মনে হয়, এই বইটির অনুভূতি খুব ছোট করে জানাবো । কখনও আবার মনে হয় খুব বড় করে জানাবো । কিন্তু দিনশেষে আমার মনে হয়, আমি আসলে অনুভূতি প্রকাশে খুব কাঁচা একজন মানুষ । আমার ভবিষ্যৎ খুব খারাপ কিছু একটা হবে অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে । কেননা যা প্রকাশ করতে খুব ছোট করে বলা যায়, তাই আমি যেন বিশদে লিখতে গিয়ে অনেক বড় করে ফেলি । তখন আমার মনে আরো একটা কথা ধক করে উঠে যেন, আমি তো অনুভূতি প্রকাশে কারো ভালো লাগার জন্য কিছু লিখি না । নিজের ভালো লাগা প্রকাশ করতে কি এই সমাজ আমাকে একটু সময়ও দিবে না? একটু বড় না হয় হোক । সবাই না হয় না পড়ুক । কিন্তু একটা বই পড়ার শেষে যে অনুভূতি আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়, তা নিজের একটু বোধগম্য হওয়া জরুরি বৈকি । তাই নিজের জন্যেই লিখে যাই । বোধহয় অনুভূতি প্রকাশে কাঁচা আমি এভাবেই যতদিন যাবে লিখে যাবো । ♦নামকরণঃ সাধারণত অলিগলি, রাস্তা, কোথাও একটা ছোট্ট শূন্য দেয়াল, বাসার উপরের নির্জীব পড়ে থাকা ছাদ, বাসার কোনায় পড়ে থাকা রংয়ের পলেস্তরা খসে পড়া কিছু আমাকে অনুভূতি জানায় । মনে হয় যেন কতশত মানুষের মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে আছে তারা । কতশত মুহূর্তের এত সাক্ষী হওয়া প্রাণহীন এই জড় পদার্থগুলোকে তখন ভীষণ অনুভূতি নিয়ে পড়ে থাকা মানুষগুলোর মতো মনে হয় । মনে হয় যেন কত আজন্মকাল ধরে যেন বিভিন্ন অনুভূতি, এবং কত মুহূর্ত নিয়ে যেন তারা বেঁচে আছে । অথবা বোধহয় বেঁচে নেই । ‘ফ্ল্যাট নম্বর নয় ছয়’ এরকমই এক আখ্যান । যে ফ্ল্যাটটিতে নির্জীব একটা নাম হলেও কোথাও যেন এটা অনেক কিছু বয়ে দিতে চাওয়ার আখ্যান । তিন বান্ধবীর কতশত মুহূর্ত এর নিঃশ্বাসের শব্দ নেয়ার যে টানগুলো তা যেন কোথাও একটা এই বাসায় এক অদ্ভুত ঢেউ তুলে । কতশত সুর যেন মনের অজান্তেই গান গেয়ে ফেলে । বন্ধুত্বের এক আখ্যানে বিভিন্ন মুহূর্তের ভবিষ্যতের স্মৃতিচারণ করার জন্য যে দৃশ্যপট এবং প্রেক্ষাপট বড্ড মনে ঠাঁই নিয়ে ফেলতে হবে, ফ্ল্যাট নম্বর নয় ছয় যেন সেই প্রেক্ষাপটের আদলে গড়া অদ্ভুত এক দৃশ্যপট । যা পাল্টানো যায় না, পরিবর্তন করে অদ্ভুতুড়ে ভাবে তাকিয়ে থাকা যায় না । শুধু বয়ে নিয়ে যেতে হয়, নিত্যনৈমিত্তিক অভ্যাসের মতো করে । এই অসাধারণ নামটি তাই কোথাও একটা ভালো লেগে যায় । বন্ধুত্বের গল্প, পাশাপাশি হয়ে সব বিশেষণগুলোকে এক করে ফেলবার স্মৃতির সব গল্পগুলোকে বড্ড কাছের মনে হয় যেন । ♦ফ্ল্যাপে লেখাঃ আমাদের জীবনে কোনো স্যাড এন্ডিং নেই । কোনো ঘটনা কিংবা কোনো মানুষই আমাদের জীবনের বিষাদময় সমাপ্তি হতে পারে না । খুব বেশি হলে সেই ঘটনাটি কিংবা মানুষটি আমাদের জীবনের খুব ক্ষুদ্র অংশজুড়ে থাকা হৃদয় কাঁপানো একটি স্যাড সং হতে পারে । ‘ফ্ল্যাট নম্বর নয়-ছয়’ উপন্যাসটি ঘনিষ্ঠ তিন বান্ধবীর জীবনের গান নিয়ে । তাদের বন্ধুত্ব নিখাদ, যেন তিন শালিক । যেন একে অপরের জন্য হাসতে হাসতে জীবন বাজি রেখে দেয় । ঘটনাচক্রে এই তিন তরুণীর সাথে জীবনের নানান হিসাব-নিকাশে, প্রেমে, অপ্রেমে, ভালোবাসায়, ঘৃণায় জড়িয়ে থাকা তিন যুবক নক্ষত্র, দুরুক এবং সায়াহ্ন নিয়ে নেয় এই উপন্যাসের মূল চাবি । হয়ে উঠে নায়ক, খলনায়ক সবই । ‘ফ্ল্যাট নাম্বার নয়-ছয়’-এ আছে বন্ধুত্ব, আছে প্রেম, আছে জীবন জয়ে অনুপ্রাণিত করার শব্দের খেলা । ♦প্রচ্ছদঃ যেদিন প্রথম এই প্রচ্ছদটি দেখেছিলাম সেদিন প্রথম নজরে হঠাৎ করে কোথাও একটা আটকে গিয়েছিলাম যেন । তাই সাথে সাথে প্রচ্ছদটি দেখতে পারিনি । যখন ফেসবুকে এসে প্রথম দেখা হলো, আমার মনে হলো আমি না আসতে পারার মতো করে আবারও আটকে গিয়েছি । তবে এবার বুঝি ভালো লাগায়, কারণ এই অসাধারণ নামের উপন্যাসটির যেরকম প্রচ্ছদ দরকার ছিল । তার থেকেও বড্ড সুন্দর এবং সম্পর্কযুক্ত সংযোগ স্থাপন করা এই প্রচ্ছদটি দেখলেই আমার মায়া লাগছে । মনে হচ্ছে যেন এখনই আমি দরজায় কড়া নেড়ে শব্দ করে বলি, একটু দুদণ্ড আমায় বসতে দেবে? তোমাদের গল্প শুনি । এই দরজা, এই ছিটকিনি এবং দরজার পাশের ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা শূন্য দেয়াল কোথাও একটা যেন ভালো লাগা দেয় । অদ্ভুত সুন্দর প্রচ্ছদটিকে তাই ভীষণ মায়া নিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে । ♦পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ এই উপন্যাসটি যখন একটা সময়ে ফেসবুকে গল্প হয়ে ছিল, তখন আমি দুইরকম ভাবে পড়েছিলাম আসলে । ধারাবাহিক ভাবে চলাকালীন পড়তে চেয়েও প্রতিদিনকার পর্ব হিসেবে পড়া হয়নি । দেখা গেল, কখনও ১টি পর্ব পড়া হলো, তার বেশ কয়েকদিন পরে কতগুলো পর্ব একসাথে পড়া হলো । কিন্তু আমি যেন শেষের কয়েকটা পর্ব এত নিঃশ্বাস আটকে রেখে পড়েছিলাম যেন কোথাও একটা আমি আটকে গিয়েছি বলে মনে হয়েছিল । মনে হয়েছিল, আমি বোধহয় এই ফ্ল্যাটেই আটকে আছি ভিতরে, বাইরে থেকে কেউ শব্দও করছে না অনুভূতির জন্যে । আজকে উপন্যাস পড়তে গিয়ে মনে হলো, আমার ফেসবুকে গল্প পড়া হিসেবে কি আমি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছি! আগের মতো পড়া হয় না । বরং বই পড়তে খুব ইচ্ছে করে । তাই এই উপন্যাসটিকেও যেন নতুন করে আবিষ্কার করে তোলা হলো । ✓পটভূমিঃ উপন্যাসের পটভূমি সম্পর্কে লিখতে গিয়েই মনে হলো, এই উপন্যাসটি আসলে ফ্ল্যাট নম্বর নয় ছয় এর বিভিন্ন অনুভূতি এবং তা প্রকাশ করে ফুটিয়ে তুলতে চাওয়ার আখ্যান । কোথাও একটা যেন এই ফ্ল্যাটের মানুষগুলোর কথাই নিজের ভাষায় কেউ কড়া নেড়ে নিজস্ব ঢঙে বলে গেল । উপন্যাসের পটভূমিতে বন্ধুত্বের গল্প বলে । যারা একসাথে স্বপ্ন দেখে । স্বপ্ন দেখে ভালোবাসার । ভালো থাকার । কোথাও একটা গিয়ে নিজেদেরকে নিজেরাই আঁকড়ে ধরে থাকার । বন্ধুত্বের এই নিঃশ্বাস নেয়া আখ্যানে এই উপন্যাসের পটভূমিকে তাই কোথাও একটা নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে বয়ে যাওয়া দিনগুলোর কথা মনে হয় । এই উপন্যাসের পটভূমিতে তিন নারীর জীবন নিয়ে গড়ে উঠা পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন পরিবেশ এবং তাদের নিয়ে গড়ে উঠতে চাওয়া মুহূর্তগুলোর বর্ণনা করা হয়েছে যেন । অদ্ভুত সুন্দর এই পটভূমিতে তাই প্রেক্ষাপটগুলো যখন বয়ে গিয়েছে ভীষণ ভালো লাগা নিয়ে আমি অপেক্ষা করেছি বারবার আবেগতাড়িত হওয়ার । এবং যখন তা হয়েছি তখন মনে হয়েছে, এই উপন্যাসটি কোথাও একটা নিঃশব্দে যেন নিজের ধাঁচেই এক ধরনের গভীরতা নিয়ে এসেছে । যে গভীরতায় আচ্ছন্ন হয়ে আমি বারবার মজে গিয়েছি, গিয়ে তোলপাড়ের ন্যায় নিঃশ্বাস নিয়েছি । সাধারণত একই ধাঁচে একইরকম সুরে উপন্যাস লেখার যে টান তা এত বড় উপন্যাসে সম্ভব হয় না । এই উপন্যাসে তা দারুণ ভাবে করা হয়েছে । প্রেক্ষাপটগুলোতে কোথাও একটা যেন একই রকম সুরে গভীরতা নিয়ে একই ধাঁচের মতো করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । দৃশ্যপট গুলো যেন তাই ভীষণ ভারসাম্যপূর্ণ বলে কোথাও একটা মনে হয় । মনে হয় যেন কোথাও একটা ভীষণ কাছের এই উপন্যাসটিকে আমি চোখ বাড়ালেই দেখতে পাবো । এই জীবনের গল্পগুলো বড্ড কাছের যেন । ✓আবহ গঠনঃ এই উপন্যাসের আবহ গঠন যেন উপন্যাসের গভীরতা এবং তার ধাঁচ প্রকাশেই ফুটে উঠেছে । বিভিন্ন দৃশ্যপটে যেভাবে বর্ণনা করে ঘটনাপ্রবাহ এবং তার গতিধারা সূক্ষ্ম ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেখানে আবহ সৃষ্টি করা বেশ ভালো ভাবেই এসেছে বলে মনে হয়েছে । বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কিছু চুপচাপ মুহূর্ত, নিঃসঙ্গ ছোঁয়া এবং নিশ্চুপ চাহনি যেন এই আবহ গঠনের পাশাপাশি কাহিনীও অনেকখানি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়েছে । ♦চরিত্র গঠনঃ বড়সড় হওয়া উপন্যাসগুলোতে সাধারণত যেরকম সংখ্যক চরিত্র থাকে, সাধারণত তার তুলনায় একটু কম সংখ্যক চরিত্র হলে কোথাও একটা যেন নির্ভেজাল ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয় । মনে হয় যেন বিশদে বিস্তারিত ভাবে চরিত্রগুলোকে গঠন এবং দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য একটা সুযোগ পাওয়া গেল । চরিত্রগুলোকে ভীষণ উপস্থাপন করার চেষ্টা এবং ওদের মানসিক মুহূর্তগুলো ভীষণ উপন্যাসকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে কল্পনায় অনুভব করতে সাহায্য করবে । এই উপন্যাসটিতেও যেন ঠিক তাই হয়েছে । ♦চরিত্র বিশ্লেষণঃ •শায়েরীঃ প্রতিটি সম্পর্ককে ভীষণ সম্মান করা মেয়েটির দায়িত্বজ্ঞানবোধ অসাধারণ । পরিবারকে ভালোবাসতে চাওয়া মেয়েটি সমস্ত পরিস্থিতি মানিয়ে চলতে জানে । কখন কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, কিভাবে অনুভূতি প্রকাশ করতে হয়, কিভাবে ধৈর্য নিয়ে কষ্ট সহ্য করে কাজ করে যেতে হয় তা যেন শায়েরীকে ভীষণ ভাবে বিশ্লেষণ করে । শায়েরী ভালোবাসতে জানে, তবে তার ভালোবাসা যেন ভালোবাসার মানুষদেরকে প্রকাশ করে জানানোর থেকেও বড্ড বেশি বোঝানোর । •আদুরীঃ অধৈর্য এবং দুরন্ত স্বভাবের মেয়েটি কখন যে কোন কাজ করে তার হঠাৎ করে কোনো ব্যাখ্যা মনে আসে না । মনে হয় যেন, তাড়াহুড়ো করে কাজ করে ফেলার যা স্বভাব তা যেন আদুরীকে ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করছে । কোথাও এক ধরনের যা চাওয়া তাই পেয়ে যাওয়ার মানসিকতা তাকে কোথাও এক ধরনের যেন কষ্ট এবং অদ্ভুত অনুভূতি দেয় যেন । ভালোবাসা কখনও যেন কোথাও একটা অদ্ভুতুড়ে এক কষ্ট নিয়ে আসে । •মৌনঃ চুপচাপ, শান্ত স্বভাবের মেয়েটি যেন নিশ্চুপ নীরবতাকে দারুণ ভাবে মানিয়ে চলে ব্যাখ্যা করে দিয়ে যায় । একটা অদ্ভুত ধরনের অতীতের পরিস্থিতি এবং মুহূর্ত তাকে যেন ঘিরে ধরে রাখে সারাটা জীবন ধরে । কোথাও একটা আত্মবিশ্বাসী স্বভাব, পরিস্থিতি মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে পাশের মানুষদেরকে পাশে থাকার চাহনি এগুলো যেন তার নামের মতো করেই তাকে ব্যাখ্যা করে দিয়ে যায় । •নক্ষত্রঃ নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চাওয়ার এক চেষ্টা, চুপচাপ পরিস্থিতিকে ফুটিয়ে না তুলে এড়িয়ে চলতে যাওয়ার চেষ্টা করা পুরুষ চরিত্রটিকে ভীষণ দূরের কেউ মনে হয় । কিন্তু তার একাকী অবসাদগ্রস্ত অনুভব, নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলো তাকে অদ্ভুতুড়ে হিসেবে ব্যাখ্যা করে দেয় । পরিস্থিতি অনুযায়ী তার রাগ, কথা ঠিকভাবে না শুনেই প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলা এবং সাহায্য করতে চেয়েও অদ্ভুত ভাবে অন্য রকম মানসিকতা দেখানো কোথাও একটা তাকে অন্যরকম মনে করাতে বাধ্য করে যেন । ভালোবাসার মানুষটির জন্য তার অনুভূতির ব্যাখ্যা কোথাও আমাকে উপলব্ধি করায় কিছু একটা । •সায়াহ্নঃ মেধাবী, চুপচাপ এবং পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে গিয়ে কখনও কখনও পরিবারের সিদ্ধান্তে যেন এগিয়ে চলা পুরুষটি হঠাৎ করে বিভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে পড়ে । কোথাও যেন বন্ধুত্বপূর্ণ এবং হাসিখুশি স্বভাবের মানুষটিকে বড্ড কাছের বলে মনে হয় । তবে হঠাৎ কিছু পরিস্থিতিতে ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলে যা অন্য কারো মন এবং অনুভূতিতে প্রভাব ফেলে । •দুরুকঃ হাসিখুশি স্বভাবের বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষটির একটা অতীত তাকে কোথাও যেন নীরব করে দেয় । কোথাও যেন মনের অজান্তেই বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কষ্ট পেতে বাধ্য করে । সুদর্শন, নীল চোখের এই মানুষটিকে দেখে সহসা তার মনের আনাচে কানাচে থাকা কষ্টগুলো না বোঝা গেলেও কোথাও যেন তার চারপাশের বাতাস এবং নিশ্চুপ নিঃসঙ্গতা তা বুঝিয়ে দিতে পারে । অদ্ভুত মনোবলে সবাইকে তার কথা দিয়ে মুগ্ধ করার পাশাপাশি এক মনোবল এবং ভালো লাগা দেয়ার এক দারুণ চেষ্টা তার মাঝে আছে । তবে কোথাও যেন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভুল হয়ে যায় । বোধহয় প্রকৃতিই কিছু কিছু অতীতের সাক্ষী হয়ে দাঁড়ায় । •টুকিটাকি চরিত্রঃ এছাড়াও এই উপন্যাসের আরো অনেকগুলো চরিত্র যেন মনে গেঁথে আছে । কোথাও একটা যেন তাদের উপস্থিতি এবং তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ মনে গিয়ে ভালো লাগা দেয়ার চেষ্টা করে । এই উপন্যাসে আছেন এক নিজের স্বার্থ এবং ভালোলাগা এবং সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে সুযোগসন্ধানী গোছের তাসলিমা যে প্রতিটি পরিস্থিতিতে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে চলে । এছাড়াও আছে বন্ধুত্বপূর্ণ গোছের এক প্রহর, যে ভাইকে ভাইয়ের মতো করেই ভালোবাসে । ভাইয়ের স্বভাব, তার কথা বলার ধাঁচ সেগুলোর মতো করেই যেন ভাইয়ের সুখ চায় । এই হাসিখুশি, বন্ধুত্বপূর্ণ মেয়েটিকে তাই বেশ মনে হয় । এছাড়াও এই উপন্যাসে আছে ভালোবাসা নিয়ে অন্যরকম আবেগে ভেসে যাওয়া নিয়ে খারাপ মস্তিষ্কের তৈমুর । এছাড়াও এই উপন্যাসে আছেন বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের, ভাইয়ের মতো করে সাহায্য করার স্বভাব নিয়ে, পাশের মানুষদের কষ্টকে সারিয়ে তোলার জন্য চেষ্টা করা রিদওয়ান । যে প্রচুর ভালোবাসা নিয়ে পাশের মানুষদেরকে দুঃখ ভোলাতে চায় । এছাড়াও এই উপন্যাসে আছে কষ্টকে পাশে রেখে, অতীতের মুহূর্তগুলোকে পাশ কাটিয়ে এক নাতিকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চাওয়া একজন নানি । এছাড়াও এই উপন্যাসে আছে এক পাগলের জন্যেও সাহায্য করার মানসিকতা নিয়ে থাকা এক অসাধারণ শিক্ষার্থী রুচি । আছেন এক বাবা, আফজাল সাহেব । যিনি মেয়েকে ভালো রাখার জন্য, একদণ্ড শান্তি এবং সুখ কিনে নেয়ার জন্য কখনও ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেন । এছাড়াও আছে বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের বিপাশা, যে বন্ধুকে সাহায্য করার জন্য কতগুলো চাহনি দিয়ে অপেক্ষা করেছিল । আছে একজন মা, নায়লা যিনি আক্ষরিক অর্থেই সন্তানদেরকে ভালোবেসেছিলেন । সন্তানের সুখের জন্য চেষ্টা করেছিলেন । নিজের অতীতকে একদিন ভুলে গিয়ে সন্তানের সুখ চেয়েছিলেন । এছাড়াও আছেন মাহফুজ সাহেব, যিনি অতীতের পরিস্থিতি থেকে নিজেকে এমন এক পরিস্থিতিতে রেখেছিলেন যেখানে নিজ সন্তানের থেকে সুখ যেন শান্তি পাওয়ার মতো করে মনে হয় । এছাড়াও অনেকগুলো চরিত্র এই উপন্যাসে শুধু ঘুরে বেড়ায় । নিজস্ব ঢঙে, নিজস্ব ধাঁচে । নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে তাদের নিশ্চুপ ভাবাবেগ দিয়ে উপন্যাসকে ভালোবাসতে বাধ্য করে । এরকমই আছে শিকু, আছে পুতুল । আছে শিবিকা । আছে আলিফ । ♦প্রিয় চরিত্রঃ বেশ কয়েক বছর আগে, যখন এই উপন্যাসটি প্রথম গল্প হিসেবে পড়েছিলাম তখন আমার মানসিকতা যেমন ছিল । এখন আমার তেমন নেই এটা ভেবেই আমি উপন্যাসটি পড়তে শুরু করেছিলাম । মনে হয়েছিল আমার অনুভূতি এতটা পরিবর্তনশীল না হলেও এখন আমি ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করি । এখন আমি ভাবতে চেষ্টা করি, কেউ আমার কিভাবে কেনো প্রিয় হয় । এই উপন্যাসের প্রিয় চরিত্র কে, সেটা একটু পরে বলছি । কিন্তু তার আগে কিছু লিখি । আমার অনুভূতি তো, একটু অন্যরকম করেই লিখি । চাঁদের মায়াবী আলো দেখে যে সৌন্দর্য প্রকাশ হয় তাকেই ভীষণ বিশেষণ করে বলা হয় জোছনা । কোথাও একটা মায়া ধরা আলো । এই আলোর কোনো ব্যাখ্যা নেই । শুধু সৌন্দর্য প্রকাশ আর মায়ায় ভেসে যাওয়া ছাড়া । নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে চাঁদের আলোর থেকেও বড্ড কাছাকাছি হয়ে থাকা সাধারণ আলো মানুষকে পথ চলতে শেখায় । বলতে শেখায়, আমি তো আছি । যেন নিশ্চুপ হয়ে বলে যায়, যে আলোতে আমি আছি তা খুব সাধারণ । চাঁদের আলোর মতো অত সৌন্দর্য নিয়েও আসিনি । আমি বড্ড সাধারণ, কিন্তু তবুও জীবনে চলার মতো যতটুকু লাগে আরকি । কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারে না যে, চাঁদের আলো আসলে সৌন্দর্যই দেয়, কিন্তু নিত্যনৈমিত্তিক সাধারণ জীবনে হাত ধরার মতো করে যে একটু হাপিত্যেশ করা ক্ষীণ হয়ে আসা আলো তা সাধারণ হলেও কখনও অশ্রুভেজা চোখে সাধারণ মনে হলেও চুপটি করে অসাধারণ মনে হয় । দুরুক আমার কাছে যেন সেই চাঁদের জোছনা দেয়া আলোয় ভেসে যাওয়া সেই সৌন্দর্যের মতো । বোধহয় অসাধারণ । বোধহয় কিছুটা নিজের জীবনকে আলোকিত করে অন্যকে কাব্যিক ভাবে প্রভাবিত করার মতো । কিন্তু নক্ষত্র আমার কাছে যেন সেই অতি সাধারণ ক্ষীণ হয়ে আসা আলোটি । যে হাত ধরে না, পাশে দাঁড়িয়ে থাকে না । ভালোবাসার কথা বলে না । ভালোবাসায় তার ভীষণ ভয়, দম আটকে যাওয়ার মতো করে ভয় । এই দম বাঁধা পৃথিবীতে আমার কেনো যেন তাই এই সাধারণ আলোটিকেই বড্ড অসাধারণ মনে হয় । মনে হয় নক্ষত্র এর এলোমেলো জীবন, এলোমেলো হয়ে অগোছালো থাকা এগুলো যেন কোথাও একটা নিত্যনৈমিত্তিক জীবনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি । যাকে সহসা দেখে অতীব প্রিয় হয়ে ওঠা কেউ মনে হয় না । অনেক কথার ফাঁকে তাকিয়ে থেকে দেখা হয় না । হঠাৎ করে দেখলে দূরের সৌন্দর্যকেই বড্ড কাছের এবং প্রিয় মনে হয় । কিন্তু আমি যেন কোথাও মুহূর্তে বিশ্বাসী, অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পাশের মানুষদেরকেই ভালোবাসায় বিশ্বাসী । তাই রেগে যাওয়া, লুকোতে চাওয়া কিংবা খারাপ ব্যবহার করা মানুষটিকেই তবুও ভীষণ আপন মনে হয় । কারণ সে যে আপন হয়েই আছে । এতকিছু লিখে আর আলাদা করে বলতে ইচ্ছে করে না তবুও বলি, নক্ষত্র আমার শুধু এই বইয়ের জন্য না । সে আমার সারাজীবন এর পড়া অনেকগুলো চরিত্রের মধ্যে বেশ প্রিয় একটা চরিত্র । এবং সেই আজন্মকাল ধরে প্রিয় চরিত্র হয়ে থাকলো । হঠাৎ কখনও কোনো রাতে বোধহয় আমি চাঁদের সৌন্দর্য এর দিকে তাকিয়ে নিজের পাশের নিঃসঙ্গ অন্ধকারকে নক্ষত্র মনে করেই বুঝতে পারবো, নক্ষত্র আমার কতটা প্রিয় । ♦প্রিয় অংশঃ এই উপন্যাসের অনেকগুলো বিষয় আমার খুব প্রিয় । তার মধ্যে প্রথম যেটি তা হলো এই বইয়ের উৎসর্গ । এত সুন্দর করে স্মৃতিচারণ করে লেখা হয়েছে যে আমি ভীষণ মায়া নিয়ে কয়েকবার পড়েছি । পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে এরকম অনুভূতি প্রকাশ করে বোধহয় লেখা হয়নি । তাই আবার অন্যরকম ভাবে আচ্ছন্ন হয়ে পড়তে গিয়েছি । পড়া শেষে যখন অন্য পৃষ্ঠা উল্টিয়ে চলে গেলাম, তখন মনে হলো যেন কতবার যেন পড়া হয়ে গেল । এছাড়াও এই বইয়ে ব্যবহৃত প্রথম চিঠিটা আমার বেশ প্রিয় । সপ্তম পর্বে ব্যবহৃত এই চিঠিটা আমাকে বারবার মুগ্ধ করেছে । এটা পড়েই টের পেয়েছিলাম যে ভালোবাসার গভীরতা আসলে বোঝা বড় দায় । কে যে ভালোবাসাকে বিশেষত্ব করার আহ্বানে কিভাবে ভালোবাসাকে প্রকাশ করে তা আসলে অন্যরকম এক আবেগ দেয় । এই ভালোবাসা, তা প্রকাশ না করতে চাওয়ার কষ্ট কিংবা তা না পাওয়ার জন্য লুকিয়ে খারাপ হতে চাওয়ার চেষ্টা এগুলো ভালো লাগা দেয় । এছাড়াও এই উপন্যাসে বন্ধুত্বের গল্প বেশ ভালো লাগা দেয় । ভালো লাগা দেয় কেউ যখন কারো অগোছালো শার্ট দেখে বিরক্ত হয়ে যেতে বলে ভবিষ্যতে আবার তা কুঁচকে যেন না যায় তার জন্য ব্যাখ্যা দেয় । এগুলো আসলে মনে করিয়ে দেয় এই পৃথিবীতে ভালোবাসা আসলে আছে । বোধহয় তা থাকে অপ্রকাশিত হয়ে, চুপচাপ হয়ে । কিন্তু তার গভীরতা আসলে বোঝা হয়ে উঠে না । জানা হয়ে উঠে না । ফলে অন্যান্য ভালোবাসার গল্পগুলোকে ভীষণ আবেগতাড়িত করে দেয় বলে মনে হয় । এই উপন্যাসে কিছু বৃষ্টি আটকে রাখা পানি ভর্তি পাত্র, অথবা নাফের আব্বু সম্বোধন আমার ভীষণ প্রিয় বলে মনে হয় । এগুলোকে ভালোবাসার লুকায়িত অনুভব বলে টের পাওয়া হয় । কারো মনে মনে নিজেকে খারাপ না বলা মুহূর্তকে যখন প্রিয় মানুষের মুখ থেকে প্রকাশিত বাক্য হয়ে আসতে দেখা যায় তখন তা বড্ড প্রিয় বলে মনে হয় । এছাড়াও এই উপন্যাসে কিছু মুহূর্ত বড্ড প্রিয় হয়ে আছে । দুরুক এর অতীতের কষ্ট, শেষের বিভিন্ন সংলাপ এবং দৃশ্যপট উপন্যাসের প্রিয় হয়ে আছে । এছাড়াও মৌন এর শিবিকাকে নিয়ে আসা, তার ভালোবাসার লুকায়িত স্থানগত হিসেবে কমলাপুর স্টেশন ভীষণ ভালো লাগা দেয় । উপন্যাসের শেষের দিকে আফজাল সাহেবের নিজ সন্তানের সাথে সম্পর্কের বিভিন্ন টানাপোড়েন এবং বিশ্লেষণ উপন্যাসের অন্যতম ভালো দিক হয়ে আছে । এছাড়াও প্রতিটি বিশেষণের হিসেবে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, অতীতের থেকে পাওয়া কষ্ট তার ফলে করে ফেলা বিভিন্ন পদক্ষেপ যেন উপন্যাসে এক ধরনের ভাবাবেগ নিয়ে আসে । কিছু মনস্তাত্ত্বিক দিক ভীষণ অন্যরকম করে ফেলে । এছাড়াও উপন্যাসে ব্যবহার হওয়া চিঠি এবং গানগুলো প্রেক্ষাপট এবং দৃশ্যপটের জন্য এক মায়া তৈরি করে । ♦প্রিয় সংক্ষেপঃ দিনশেষে কোথাও গিয়ে মনে হয় এই উপন্যাসটি যেন পারিপার্শ্বিক সব অনুভব, এবং অনুভূতি ছাড়িয়ে গিয়ে শুধু খেচর এবং তার আজু এর এক হয়ে যাওয়ার এক আখ্যান । একসাথে লিখতে গিয়ে হঠাৎ করে মনে হলো ‘আজুর খেচর’ নামটা এত সুন্দর কেনো শোনায় একসাথে! বোধহয় পাশে থাকার জন্যেই । মশারিরাজ্যের রাজপুত্রকে যেন কোনো এক দেশের রাজকন্যা স্বাগত জানায় কোনো এক নীলরঙা নাফ নদীর চোরাস্রোতে বসে । নাফ নদীর সেই সৌন্দর্য যেন ভালোবাসার গল্পে তাড়াহুড়োর কাছে হার মানে । ♦সংলাপ এবং বর্ণনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিঃ এই উপন্যাসের সংলাপ ধারণ, শব্দচয়ন এবং বাক্যালাপ বেশ ভালো । যেভাবে ফুটিয়ে তুলে উপন্যাসকে উপস্থাপন করে গল্পের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সাজানো হয়েছে তা বেশ ভালো লাগার মতো । কোথাও যেন শান্তি দেয় । এবং দারুণ ভাবে গল্পটিকে ভারসাম্যপূর্ণ করে তুলে । সংলাপ এর থেকে বর্ণনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি একটু বেশি বিধায় লেখক তাও সুন্দর ভাবে সাজিয়েছেন । ♦লেখক প্রসঙ্গেঃ লেখক লামইয়া চৌধুরী এর প্রকাশিত হওয়া উপন্যাস বর্তমানে ৬টি । ‘ফ্ল্যাট নম্বর নয় ছয়’ তার প্রকাশিত হওয়া পঞ্চম উপন্যাস । এই বইটি পড়তে বড্ড দেরি হয়ে গেল । কোথাও একটা যেন নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার বড্ড তাড়া ছিল যেন বইটি পড়ার জন্য । অনেকগুলো দিন আগে লেখকের লেখা একটা ছোটগল্প পড়েছিলাম একটা সংকলনে । ‘এই গল্পের কবিতা তুমি’ নামের সেই গল্পটি পড়ে আমি মুগ্ধতায় ভেসেছিলাম । যাহোক ভালোবাসার সম্পর্কগুলোর রসায়ন এবং টানাপোড়েন অনুভূতি দিয়ে বোঝানোর অদ্ভুত সুন্দর দক্ষতা এবং লিখনশৈলীতে দারুণভাবে ভারসাম্য আনা লেখক হিসেবে লামইয়া চৌধুরী এর সবথেকে বড় গুণ । তার তৈরি এই উপন্যাসগুলো তাই ভীষণ কাছের মনে হয় । এখনও কোথাও একটা যেন আমি ‘সেদিন’ উপন্যাসের ভাবাবেগেই আটকে আছি, নিমজ্জিত হয়ে আছি । এক বৃষ্টিতে বারবার তৃষিত হয়ে যেন ‘শুভ ঝুম বৃষ্টি’ বলাতেই মজে আছি । এই মায়া কাটানো দায় । এখনও যেন এক সাদা শার্টের সাথে চোখের মিলনের মুহূর্ত, কিংবা এক মাফলার বুনে যাওয়া মুহূর্তেই বারবার আটকে আছি । লেখকের এই এত সুন্দর করে লিখনশৈলীতে ভালোবাসার রসায়নগুলো বেশ থাকুক । লেখকের পরবর্তী লেখাগুলোর জন্য শুভকামনা রইলো । ♦প্রকাশনীঃ প্রকাশনী হিসেবে অন্যপ্রকাশ এর ব্যাপারে বলতে গেলেই মনে হয় তারা বইটা যেভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে তা অসাধারণ । এই বইটির প্রচ্ছদটিকেও বেশ দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । কোথাও যেন প্রচ্ছদটি দেখলেই নামটিকে ভীষণ অর্থবহ বলে মনে হয় যেন । এছাড়া প্রচ্ছদটি সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বলে বড়সড় বইটি ধরতেও বেশ লাগে যেন কোথাও একটা । এছাড়া বই বাঁধাই এবং অন্যান্য কাজগুলোও বেশ ভালো ছিল । বইয়ের জলছাপের ব্যাপারগুলোও বেশ ভালোভাবে কাজ করা হয়েছে । শুধু একটা প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে ফাঁকা জায়গা রাখা হয়নি । যা হঠাৎ দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম । বইটিতে বেশ কিছু বানান ত্রুটি আছে, যা অবশ্য তেমন একটা চোখে পড়ে না । ♦রেটিংঃ ৪.৯/৫ ♦উপসংহারঃ ভূমিকা লিখলেই উপসংহার লিখতে হবে এই বিষয়টিকে কেনো যেন আমি এড়িয়ে যেতে চাই । বারবার আমার মনে হয় আমি আর কখনো উপসংহার লিখবো না । কারণ একেবারে শেষের বিভাগটি বলেই মনে হয় এই তো শেষ হয়ে গেল, তখন আর হঠাৎ করে শেষ চোখের সামনে এসে গেল বলে হঠাৎ করে টান শেষ হয়ে যায় । তখন আমি পুরোপুরি তালগোল পাকিয়ে ভুলে যাই যেন । ভুলে যাই যে উপসংহারে কী লেখার কথা ছিল, তা আমার মনে পড়ছে না । হয়তো কোনোদিন জ্ঞানত আমি এই বিভাগটিকে পুরোপুরি মুছে ফেলবো । যাহোক এখানে বরং উপন্যাসটি সম্পর্কেই একটু লিখি । উপন্যাসের পরিশিষ্ট অংশটুকু ভীষণ ভালো লাগার মতো । তা পড়তে গিয়ে ভালো লাগা হয় । দুরুক এর অতীত এবং ভালোবাসার ছাপ ভালো লাগা দেয় কোথাও একটা । আচ্ছা একটা গোপন কথা বলি হ্যাঁ, এটা দিয়েই শেষ করবো কিন্তু । আমি না ভীষণ সামাজিক টানাপোড়েন এবং সম্পর্কে খুব বিশ্বাসী । বিয়ে নামক ব্যাপারটাকে বড্ড সম্মান করার পাশাপাশি বড্ড গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা বলে মনে হয় । এই উপন্যাসটি যখন গল্প হিসেবে চলছিল তখন আমি সায়াহ্ন এবং আদুরী এর খুব ভালোবাসাময় একটা জীবন হোক তা আশা করেছিলাম । জীবন আসলে অনেক রকমের বিশেষণ আমাদের জন্য দিয়ে রেখেছে । সেখানে পাশের মানুষটি না হয় ভালোবাসা নিয়েই এলো । এতগুলো দিন পরে মনে হলো আমি আসলে আরো বাস্তবিক হয়ে গিয়েছি । এতগুলো দিন পরে, কয়েকটা বছর পরে আজকে উপন্যাস পড়ে মনে হলো, দিনশেষে আসলে ভালোবাসাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ । তা যেভাবেই হোক, যার সাথেই পাশাপাশি হয়ে জীবন কাটানো হোক বা না । কিন্তু প্রতিটি ভালোবাসার গল্পগুলো আলাদা । তা সেই ভালোবাসা প্রকাশিত হয়ে অনেক অনুভূতিতে তৈরি হওয়া কথাগুলোর মতো সুন্দর করে প্রকাশিত হওয়া একটা গল্প হোক অথবা লুকায়িত থেকে চুপ করে গিয়ে শুধু পাশের মানুষটিকে ভালোবেসে ছবি তুলে ভালোবাসার মানুষটিকে দুঃখের সময়ে সময় দিতে চেয়ে মানিয়ে নেয়ার সময় দিয়ে পিছিয়ে গিয়ে । জীবন এরকমই আসলে । কারো কাছে দূর থেকে নয়ের মতো, কারো কাছে আসলে উল্টো দেখে ছয়ের মতো । মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ এর মতো করে আসলে জীবনে পরিস্থিতি এবং মুহূর্তগুলো দেখার দৃশ্যপট বদলায় । আসলে এই পরিস্থিতিতে বোধহয় বলা যায়, আমাদের কারো জীবনেই কোনো স্যাড এন্ডিং নেই, আমাদের কারো জীবনে আসলেই কোনো স্যাড এন্ডিং নেই...
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন একটা বই। ভালো লাগলো।
Was this review helpful to you?
or
ভালো ???