User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ভালো
Was this review helpful to you?
or
১৯৯৮ সালে পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের কলামসমূহের সংকলন এটি। পাঠক যেন বইটি কেনা বা পড়া শুরুর আগেই বইটি সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে সে উদ্দেশ্যে পৃথকভাবে এই বইয়ে স্থান পাওয়া কলামগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিসরে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। # ১ প্রিয় গগণঃ- ঢাকায় ১৯৯৮ সালে অনুষ্ঠিত ইন্ডিপেনডেন্স কাপ ক্রিকেটের ফাইনালের পরপরই স্যার এই কলামটি লেখেন। প্রথমেই তিনি গগণের প্রসংগ নিয়ে আসেন। গগণ হল সেই দুঃসাহসী দেশপ্রেমিক ছেলে যে প্রবাসে থাকাকালীন কিছু পাকিস্তানি তরুণের মুখে বাংলাদেশকে উদ্দেশ্য করে বলা অপমানজনক কথাবার্তা মেনে নিতে না পেরে তার প্রতিবাদ করেছিল এবং তার ফল স্বরূপ বেলজিয়ামের রাস্তায় নৃশংসভাবে তাঁকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি তরুণেরা। এই গগণের কথা উল্লেখের পরেই স্যার মূল প্রসংগে চলে যান। তিনি তীব্র হতাশার সাথে লিখেছেন সেইসব বাংলাদেশীর কথা যারা ক্রিকেট খেলা দেখতে গিয়ে স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে নেচেছে। এক তরুণীর আফ্রিদিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া বা আসিফ ইকবালকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর ব্যাপারগুলোকে তিনি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখেছেন কিন্তু নিজের দেশে বসে অন্য দেশের পতাকা নিয়ে নর্তন-কুর্দন তিনি মেনে নিতে পারেন নি। এতে নিজ দেশের পতাকা ও সর্বোপরি একাত্তরের চেতনা কিভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে তা যেমন স্যার তুলে ধরেছেন তেমনি অন্যান্য দেশের প্রেক্ষাপটে অন্যের দেশের জাতীয় পতাকা হাতে নেয়া যে নিজ দেশের সার্বভৌমতাকে হত্যা করা, সেটাও ব্যাখ্যার সাহায্যে ব্যক্ত করেছেন তিনি।এর পাশাপাশি কথায় কথায় পাকিস্তানের পতাকা বিজ্ঞানসম্মত কিনা বা বর্তমানে পাকিস্তানের মানুষ বাংলাদেশ সম্পর্কে কি ধারণা বহন করে এবং এমম্বিধ কারণে তিনি ব্যক্তিগতভাবে পাকিস্তান সম্পর্কে কতটা ঘৃণা পোষণ করেন সেসব বিষয়ও কলামটিতে গুরুত্বের সাথে স্থান করে নিয়েছে। # ২ আমার ছেলেবেলাঃ- এই লেখায় স্যার লিখতে চেয়েছিলেন তার ছোটবেলা কেমন ছিল সে সম্পর্কে। কিন্তু বাস্তবে তিনি বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনার বিবরণ লিখে ফেলেছেন এবং আশ্চর্য হলেও সত্য, সেগুলোর মাধ্যমেই তাঁর ছেলেবেলার সামগ্রিক চিত্র ফুটে উঠেছে। এই লেখায় সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে তাঁর বাবার স্মৃতি। বাবার জ্যোতিষচর্চার নেশা কিভাবে তাঁর মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছিল ও পরবর্তি জীবনে তা নিয়ে ঘটা মজার কিছু ঘটনা, বাবার সাহিত্যপ্রেম কিভাবে তাকেও আকর্ষন করেছিল আবার কিভাবে বাবার হয়ে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই তিনি বড়দের ম্যাগাজিনে একটি বইয়ের সমালোচনা লিখে ফেলেছিলেন তা তুলে ধরেছেন তিনি। এছাড়াও ছোটবেলা থেকেই তার বিজ্ঞানমনস্কতা, ছেলেবেলার লাগামছাড়া জীবন, তার এক মামীর অসাধারণ জীবন এবং ছেলেবেলায় স্যারের দেখা নিষ্ঠুরতার কিছু কাহিনীও তিনি নিয়ে এসেছেন এই লেখায়। # ৩ বইয়ের মেলা এবং মেলার বইঃ এই কলামটি ১৯৯৮ সালের অমর একুশে বইমেলার সময় প্রকাশিত হয়। শুরুতেই লেখক বইমেলার প্রসংগে অবশ্য যাননি। আধুনিক যুগে বইয়ের কি অবস্থা, অদূর ভবিষ্যতে বই 'লেখা' ও 'পড়া' আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে কথা বলেছেন স্যার। এরপর বইয়ের দুনিয়ায় কম্পিউটার আর টেলিভিশনের অনুপ্রবেশ এবং তাঁর দৃষ্টিতে কোনটার প্রভাব কেমন তাও জানিয়েছেন স্যার। এরপর বিশদে আলোচনা করেছেন বই পড়ায় অমনোযোগিতার সাথে সম্পর্কিত ডাইলেক্সিয়া রোগ নিয়ে। এরপর এসেছেন বাংলাদেশের বইমেলার প্রেক্ষাপটে। এখানে মূলত তাঁর কন্ঠে হাহাকারই ঝরেছে যে শুধু এই মেলার সময়ই একসাথে এত বই পাওয়া যায় অথচ বছরের বাকি সময় মানুষ খুব বেশি বই কেনে না আর যারা কেনে তাদেরও আগ্রহ থাকে কেবলই প্রেম ভালোবাসার রগরগে উপন্যাসের প্রতি। আমাদের দেশের মানুষের উচ্চ মানসিকতার অভাবে এদেশের অনেক প্রতিভাবান লেখক যে গবেষণাধর্মী বই লিখতে সাহস পাচ্ছেন না এবং প্রকাশকেরাও তা প্রকাশের উদ্যোগ নিচ্ছে না, সেটারও উল্লেখ করেছেন স্যার। # ৪ আলতা ও তানিয়ারা (এক ও দুই):- নারীদের নিয়ে এ পর্যন্ত যত লেখকের যত লেখা পড়েছি তার মধ্যে সেরা বোধ হয় 'আলতা ও তানিয়ারা' শীর্ষক দুই পর্বের কলামটি। এটি তথাকথিত 'নারীবাদি' রচনা নয় যেখানে একপেশেভাবে শুধু পুরুষদের দায়ি করে মূলত নারীদেরকেই ছোট করা হয়েছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার এই লেখাটিতে একাধারে সামাজিক, ধর্মীয়, বৈজ্ঞানিক ও জনগণের সাধারণ মনোভাব - এই চার দৃষ্টিকোণ থেকেই নারীদের সাথে হওয়া অবিচার ও অন্যায়ের ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করেছেন এবং পরবর্তিতে বিশদভাবে নারীর প্রকৃত অবস্থান তুলে ধরেছেন। এই লেখাটি বহুমাত্রিক। অসংখ্য ঘটনার বিবরণ সন্নিবিষ্ট হয়েছে এই লেখায়। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে দিক তা হল, এই লেখার পর পাঠক আর নারীদের অবস্থা দেখে সহানুভূতিশীল হবে না বরং আসলে নারীর অবস্থান কিরকম হওয়া উচিৎ না জেনে সচেতন হয়ে উঠতে পারবে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই এই লেখাটি অবশ্যপাঠ্য। # ৫ শুভ জন্মদিনঃ- জাহানারা ইমামের জন্মদিনে প্রকাশিত হয়েছিল এই কলামটি। সেখানে স্যার জাহানারা ইমাম সম্পর্কে কিছু স্মৃতিচারণা করেছেন এবং তার মাধ্যমে জাহানারা ইমামের সংগ্রামী জীবনের কিছু দিকও তুলে ধরেছেন। জাহানারা ইমামকে ঘাতক দালাল নির্মূল করার আন্দোলনে নামতে গিয়ে কিরকম উৎকট রসিকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে, সেগুলো আরও একবার এই কলামের মাধ্যমে স্যার প্রকাশ করেছেন। কলামের শেষের দিকে '২০ বছর পরে' নামক গ্রন্থে প্রকাশিত জাহানারা ইমামের লেখা কিছু লাইন সরাসরি তুলে দিয়ে স্যার জাহানারা ইমামের দেশ ভাবনার চিত্রকেও চিত্রায়িত করতে চেয়েছেন। # ৬ ছাত্ররাজনীতির 'যদি' এবং 'কিন্তু':- ১৯৯৮ সালে রাষ্ট্রপতির অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দিলেন এবং তারপর এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে দেশের সকল রাজনৈতিক দল অবস্থান নিল, সেই প্রেক্ষাপটে এই কলামটি রচিত। এখানে স্যার নিজে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে, ছাত্র রাজনীতির ভিতর ও বাহির এবং বর্তমানে এর কার্যকারিতা ও অকার্যকারিতা সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েই ছাত্র রাজনীতি যে প্রকৃতই নিষিদ্ধ করা উচিৎ সে সম্পর্কে অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কিছু পয়েন্ট উত্থাপন করেছেন। # ৭ নিউক্লিয়ার ওয়ার্ল্ড কাপঃ- এই কলামটি একেবারেই বিজ্ঞানমনস্কদের জন্য। এখানে স্যার পারমাণবিক বোমার আবিষ্কার ও উন্নত রাষ্ট্রসমূহের নিজস্ব স্বার্থ চরিতার্থ করতে এর যথেচ্ছ ব্যবহারের ঘটনাগুলো যে কতটা বিপদজনক এবং বিশ্ববাসীর জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। # ৮ ইনডেমনিটি কালচারঃ- এই কলামে স্যার দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বদলে যারা এই ব্যবস্থার ব্যবস্থাপক তাদের এক হাত নিয়েছেন। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রদের দাবির মুখে যে দেশে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা হয়, সে দেশে লোক দেখানো শিক্ষা বাজেট যে উৎকট রসিকতা বৈ আর কিছুই নয়, তা স্যার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন। শিক্ষা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কলামের বিষয়বস্তু স্বাভাবিকভাবেই দেশের রাজনীতি, সংসদ, রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রভৃতি আলোচনায় গিয়ে থেমেছে। # ৯ আর মুখস্ত নয়ঃ- এই কলামের শুরুতেই একটি গল্পের মাধ্যমে স্যার দেখিয়েছেন, একটা শিশু ছোটবেলা কতটা কল্পনা ও সৃজনীশক্তি নিয়ে জন্মায় এবং পরবর্তি জীবনে শিক্ষাব্যবস্থার নিষ্ঠুর নিগড়ে বন্দি হয়ে, নিষ্পেষিত হয়ে তাদের সকল সৃজনশীলতা চিরদিনের মত হারিয়ে যায়। দেশের প্রায় প্রতিটা শিক্ষার্থীর জীবনেই এমনটা ঘটছে যে কারণে দেশটা ক্রমেই অকর্মণ্য অথর্ব শিক্ষিতে পরিণত হচ্ছে যাদের কাছ থেকে দেশের কোন প্রাপ্তিই ঘটবে না। এই জন্যে লেখক এই কলামের মাধ্যমে সৃজনশীল শিক্ষা ও গ্রেডিং সিস্টেম চালুর দাবি জানিয়েছিলেন। # ১০ বাংলাদেশ এবং তথ্য প্রযুক্তিঃ- এই কলামের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে তথ্য প্রযুক্তির যে কোন বিকল্প নেই এবং এখনই দেশে তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লব শুরু হলে আধুনিক বিশ্বে বাংলাদেশ সম্মানজনক স্থান লাভ করতে পারবে, সে ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন স্যার। পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের বেহাল দশা যেমন তিনি তুলে ধরেছেন তেমনি প্রাথমিকভাবে তা থেকে উত্তোরণের পথও বাতলেছেন তিনি। # ১১ বিচারের শেষ নয়-বিচারের শুরুঃ- অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়ি্যে পড়া ১৩ ছাত্র রাজনীতিকের বিচারের প্রেক্ষাপটে রচিত এই কলাম। অপরাধীদের বিচারের বিষয়টিকে অবশ্যই স্বাগত জানিয়েছেন স্যার পাশাপাশি যে ঘৃণ্য ছাত্র রাজনীতির ফলে এসব ঘটনা ঘটছে, তাঁকে সমূলে উৎপাটনের বিষয়টিও আরও একবার তুলে ধরেছেন স্যার। পরিশেষে বলব, স্যারের দেশ ভাবনার একটি অসামান্য সাক্ষ্য হয়ে রয়েছে এই বইটি। এই বইয়ের বিষয়ভিত্তিক প্রতিটি কলামই যেমন ওইসব বিষয়ে আমাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দেবে, তেমনি সেগুলো থেকে স্যারের মূল্যবান মতামত গ্রহণেরও সুযোগ ঘটবে আমাদের।