User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#নিশাবসান #পাঠ_অনুভূতি ♦এক নজরেঃ •উপন্যাসের নামঃ নিশাবসান •লেখকঃ প্রভা আফরিন •ধরনঃ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক •প্রকাশনীঃ নবকথন প্রকাশনী •প্রচ্ছদঃ সাদিতউজজামান •পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৩১৭ •প্রকাশকালঃ বইমেলা ২০২৪ লেখনীতেঃ রিফায়াত হাসান সাকিব ♦ভূমিকাঃ এই পৃথিবীতে আসলে অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গেলে তা দারুণ মনের কাছাকাছি নিয়ে যেভাবে বলতে হয় । তাই সেভাবেই বলি বরং । অনেক বছর আগে, একটা দিন ছিল । যেদিন আমি বাইরে বেরিয়ে সেই ছোট বাচ্চা বেলায় কতগুলো গান শুনেছিলাম । শুনতে পেয়ে মনে হয়েছিল আমি কাঁপছি । কেনো কাঁপছি? কাঁপছি, কারণ আমার মনে হয়েছিল আমার শরীরে আর কিছু নেই । দেশাত্মবোধক গানগুলোই আমার কাছে শুধু আছে । এগুলো শুনতে শুনতে স্মৃতিচারণ করতে করতে যখন আমি দেশের কথা ভাবতে বসে নিজেদের দেশের পতাকাটা দেখি তখন একরাশ সম্মান কাজ করে মনে । যে সম্মানটা আমাকে বলে, আমি বাংলাদেশের মানুষ, এটাই কি আমার জন্য জীবনের সেরা প্রাপ্তি নয়? বোধহয় অবশ্যই সেরা প্রাপ্তি । আমি জানি না কেনো, আমি কখনও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস পড়তে চাইতাম না । কারণ এই উপন্যাসগুলো পড়লে আমার মনে যে ঝড় উঠে তা বয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো শক্তি আমার মনের আসলে নেই । দুর্বল অনুভবে প্রচণ্ড কান্না পায় আসলে । ♦নামকরণঃ নামকরণ বলতে মনে পড়লো, একটা গান আছে, না? পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল । সেই গানটার নিগূঢ় অর্থ দিয়েই বলি, ১৯৭১য়েও পৃথিবীতে চিরাচরিত জীবনের নিয়ম অনুযায়ী সূর্য তো প্রতিদিন পূর্ব দিকেই উঠেছে । কিন্তু সেই সূর্য উঠায় তো প্রাণ ছিল না । যেদিন সেই প্রাণকে জীবন্ত করার ছাপ হিসেবে সূর্যোদয়টা হলো, তখন সেখানে বিনিময়ে প্রচুর রক্তের আভাস । রক্তের শ্বাসে প্রচুর অনুভূতির আখ্যান । কোথাও যেন জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে সূর্য কিনে নিয়ে শান্তির সুরে ডাক দেয়ার আহ্বান । ‘নিশাবসান’ যেন সেই অন্ধকার রাতগুলোতে পাক হানাদার বাহিনীদের ভয়াল থাবা থেকে সরিয়ে সেই লাল হয়ে যাওয়া রক্তের সূর্যটার টকটকে লাল এর শুরু । যেখানে রাত্রির অন্ধকারে কোনো ভয়াল গ্রাসের জায়গা নেই । রাত্রি হলেও যেন তা দিনের সঙ্গী হয়ে দেশের আকাশে সবুজের বুকে লাল এর মতো করে শান্তির এক আখ্যান । এই রাতের অন্ধকারকে দূর করে সবকিছু কাটিয়ে দিয়ে দিনের আলো জ্বেলে সুখ এবং দেশকে ভালোবাসার ব্যাখ্যা দেয়ার নামই দেন ‘নিশাবসান’ । ♦ফ্ল্যাপে লেখাঃ ইয়াসিফ বিলের পানিতে চোখ বুলিয়ে মিঠা সুরে বলল, “খুশবুকে আজ কচুরিফুলের মতো লাগছে ।” “কচুরিফুলের মতো লাগে কেমনে?” “কচুরিফুল সুন্দর না?” খুশি ইয়াসিফের চোখের দিকে তাকিয়ে অপ্রতিভ হলো । এমন সুন্দর চোখ আজ পর্যন্ত কোনো পুরুষের দেখেনি সে । ঘন পল্লবঘেরা অক্ষিকোটরের মায়াময় দৃষ্টির সামনে হুট করেই সে আড়ষ্ট হয়ে গেল । চোখ নামিয়ে বলল, “তুমি খালি আজগুবি কথা কও ।” “এটা আজগুবি কথা?” “তা না কী? মানুষ গোলাপের মতো, পদ্মের মতো সুন্দর কয় । আর তুমি কও ভাইস্যা যাওয়া কচুরিফুলের কথা! খারাপ কইতে পারো না দেইখ্যা সান্ত্বনা দেও, বুঝি আমি ।” ইয়াসিফ আহ্লাদে ভর্ৎসনা করে বলল, “আন্ডা বুঝিস! কচুরিফুল হলো তরঙ্গিণী ফুল । কোনো ফুল জীবন্ত অবস্থায় হাঁটাচলা করতে পারে না, এক গাঁ থেকে আরেক গাঁয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে না । স্রোতের বুকে ভাসে বলে কচুরিফুলের সেই ক্ষমতা ও সৌভাগ্য আছে, গোলাপ কিংবা পদ্মের নেই । তারা জীবন্ত হলেও জড়বস্তুর ন্যায় । তুই কেন তাদের উপমা হবি?” খুশি মুগ্ধ হলো ব্যাখ্যা শুনে । সে সবসময় নিজেকে পথের ধারে অনাদরে ফুটে থাকা দূর্বাফুল ভেবে এসেছে । কেউ তাকে কচুরিফুল বলে তার এমন সুন্দর ব্যাখ্যা দেবে, তা ভাবেনি । এখন মনে হচ্ছে কচুরিফুলই বোধ হয় সবচেয়ে সুন্দর ফুল । ♦প্রচ্ছদঃ প্রচ্ছদটি দেখতে গিয়ে আমার সর্বপ্রথম যা খেয়াল হয়েছিল তা হলো একজন নারী বেষ্টিত প্রচ্ছদটিতেও এক সবুজের ঘন অরণ্য যেন রূপক অর্থে বাংলাদেশের পতাকারই সেই সবুজ হয়ে আসা রূপটি । আশ্চর্যজনক ভাবে নামলিপির লাল হয়ে আসা রূপটা যেন পতাকার লাল । সেই মুহূর্তে তা অনুধাবন করে আমি থমকে গিয়েছিলাম । আমার মনে হয়েছিল, এভাবেও এত সুন্দর করে প্রচ্ছদটি সাজানো যায়? এতটা দারুণ ভাবে উপন্যাসটিকে ফুটিয়ে তুলতে পারা যায় । কোথাও যেন সবুজ হয়ে আসা ঘন জঙ্গল, একজন নারী, পাশে উড়তে থাকা প্রজাপতি এবং ওই বুনোফুল আমাকে ভালোলাগা দিয়েছিল । সাথে ধোঁয়াশা হয়ে ওঠা ধাঁচ আমাকে মাটি নামক দেশের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল । এই উপন্যাসটির প্রতি প্রভাবিত হতে বাধ্য করেছিল । এত সুন্দর প্রচ্ছদটি দেখে তাই আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম । ♦পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ আমার একটা মন আছে । সেই মনে যত ধরনের এলোমেলো ভাবনা, সব আমাকে ঘিরে ধরে রাখে । আমি কোনো স্বাভাবিক বিষয়েই যেন যা করতে হয়, দেখা গেল তার উল্টোটা করে বসে থাকি । নির্জন রাতের অন্ধকারে যখন আমার বই পড়া অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল তখন হঠাৎ করে একদিন আমি বই পড়া ইস্তফা দিয়েছিলাম । মনে হয়েছিল, অভ্যাস তো অনেক হলো, এবার তাকে সুখ বানাই । রোজকার নিয়মে না করে অল্পবিস্তর আদান প্রদানের মতো করে একদিন একটু সুখ টেনে নিলাম । একদিন না হয় বিষাদেই মজে থাকি । এরকম অনুভূতি যেদিন আমার হলো, সেদিন আমি টের পেলাম যে আমার বিরহ, বিষাদ, কষ্ট নিয়ে আঁকড়ে ধরে রাখা উপন্যাসগুলো পড়তে যেরকম অনুভূতির দিক থেকে তৃপ্তি পাই আমার যেন বিভিন্ন রাতগুলোতে তাই দরকার হয় খুব । তবুও আমি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস হিসেবে ‘নিশাবসান’ পড়িনি । আমি এতগুলো দিনে এটা ভাবিনি যে এই বইটা কখনও পড়া হবে না । কিন্তু আমি এটা ভেবে নিয়েছিলাম, এই বইটা যেদিন সাধারণ কোনো দিন হবে না । পড়ার শেষেই আমি বিষণ্ণ হয়ে যাবো । দেশের জন্য মনোকষ্টে ভুগতে থাকবো । এই বইটা সেজন্যই এতদিন পড়া হয়নি, আমি একটা এমন রাতের অপেক্ষা করছিলাম যেদিন আমার মন খুব খারাপ থাকবে । আর খারাপে খারাপে বাচ্চাকালের মতো করে কাটাকাটি বলবো । ✓পটভূমিঃ সাধারণত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসের পটভূমি এবং প্রেক্ষাপট হিসেবে যে সময়কাল ধরে উপন্যাসটির বয়ে গিয়ে থাকে এই উপন্যাস তার থেকে একটু আলাদা । কারণ উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহ, জীবনধারা, মনস্তাত্ত্বিক আলোড়ন এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সবকিছু ভীষণ ভারসাম্যপূর্ণ করতে তারও কিছুটা আগে থেকে উপন্যাসের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে । গ্রামীন সংস্কার, তখনকার রাজনৈতিক অবস্থান এবং জীবনযাপন এর বিভিন্ন পরিস্থিতি যেন ভেসে আসে উপন্যাস জুড়ে । এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে ১৯৬৯ এর জানুয়ারি থেকে । তখনও বাংলাদেশ পূর্ব বাংলা (পূর্ব পাকিস্তান) হয়ে বিরাজ করছে । অভ্যুত্থান হওয়ার তোড়জোড় চলছে । এই বাংলার মানুষ স্বাধিকার এর চেষ্টায় অধিকার না পাওয়ার কষ্ট, এবং বেদনায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে । তেমনই একটা সময়ে নিঝুম অরণ্য ঘেঁষা সবুজে নিমজ্জিত গ্রাম হিমডাঙা যেন স্বপ্নের মতো মনে করে এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপটে দৃশ্যপট হয়ে জুড়ে বসে । এত দারুণ ভাবে ইতিহাস অনুযায়ী বর্ণনা, এবং তার সাথে খাপ খাইয়ে জীবনধারা সাজানো হয়েছে যে পড়ার সময়ে ভীষণ অর্থবহ মনে হয় কোথাও একটা । ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ এর আসার পুরো মুহূর্তগুলো এত দারুণ ভাবে উপন্যাসের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বর্ণনা করা হয়েছে যে কোথাও একটা ভীষণ স্মৃতিচারণ করতে ইচ্ছে করছিল । এছাড়াও উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহ এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করতে গিয়েই ভেসে আসে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মুহূর্ত । রাত কেটে গিয়ে ডিসেম্বর এর ১৬ তারিখের সকাল হওয়া নিশাবসান মুহূর্ত । সেই গ্রাম, হিমডাঙা, ব্রক্ষপুত্র নদ ঘেঁষে থাকা ময়মনসিংহ, এবং ঢাকার উত্তাল অবস্থা মিলিয়ে যে প্রেক্ষাপট তা দৃশ্যপটে অদ্ভুত সুন্দর এক ভাবাবেগ এনেছিল যেন । ✓আবহ গঠনঃ এই উপন্যাসের আবহ তৈরি এবং তা অনুযায়ী ভারসাম্যপূর্ণ করার জন্যেই বোধহয় গল্পটা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন বিশদে আলোচনা কোথাও গিয়ে গল্পের মাঝে পারিপার্শ্বিক বর্ণনাগুলো এসেছে তা যেন উপন্যাসে এক ধরনের গভীরতা এনেছে । এবং তার জন্যেই বোধহয় উপন্যাসের প্রেক্ষাপট অনেকটা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে নেয়া হয়েছে । এবং এই ধীরে ধীরে করার ফলে দৃশ্যপটে বয়ে চলা গ্রাম এবং তার জীবনধারা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । যা উপন্যাসে এক ধরনের গভীরতা এনেছে । এবং তার জন্য পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এর অসাধারণ গুরুত্ব তা যেন কোথাও গিয়ে একটা টের পাওয়া যায় । ♦চরিত্র গঠনঃ উপন্যাসের প্রেক্ষাপট, তখনকার রাজনৈতিক অবস্থান এবং বিভিন্ন যুদ্ধ পরিস্থিতি মিলিয়ে যে পটভূমিতে প্রেক্ষাপট হিমডাঙা গ্রাম, ময়মনসিংহ এবং ঢাকা ছাড়িয়েছিল সেখানে কতগুলো চরিত্র যেন উপন্যাসে নিজস্ব গঠন দিয়ে এক ধরনের ভারসাম্য এবং অদ্ভুত স্থিরতা এনেছিল । চরিত্রগুলোর গঠনে বেশ অনেকখানি সময় নিয়ে যেন তৈরি করার এক চেষ্টা করা হয়েছে । ♦চরিত্র বিশ্লেষণঃ •নয়নঃ শিশুসুলভ আচরণের দুরন্ত, হাসিখুশি স্বভাবের ছেলেটির যেন মনের অনেক আশা । একদিন অনেক কিছু তাদের পাওয়া হবে । এতটুকু ছোট জীবনে কত শখ মানুষের পূরণ হয়, কতটুকু হয় তা ওর জানা নেই । তবু ও আশা করে । আশায় বুক বেঁধে রাখে । কতক্ষণ পরে সেই মুহূর্তটা কেটে গেলে আবার তা ভুলে যায় । ভুলে গিয়ে বোন এবং মায়ের জন্য ভালোবাসা জমিয়ে রাখে যেন । কোথাও যেন ওর সুখে থাকার এক তাড়া । •খুশিঃ কণ্টকাকীর্ণ পথে জীবনের রাস্তায় চলতে গিয়ে কোথাও যেন প্রতিবন্ধকতার এক ছায়া । তবুও এই নারী পথ চলতে শিখে যায় । জীবনের পথ চলা বোধহয় খুব একটা কঠিন না? বড্ড কঠিন এই পৃথিবীতে খুশি চুপচাপ, শান্ত । জীবন নিয়ে যায় বেশি কিছু আশা ছিল না । দুদণ্ড শান্তি খোঁজার চেষ্টায় সে সূর্যমুখী হতে পারেনি । হতে পারেনি কচুরিফুলও । কিন্তু সে খুশবু হয়েছিল । বড্ড আত্মবিশ্বাসী স্বভাবের নারীটি জীবনের সংগ্রামে যেন জ্বলজ্বল করছিল । •বাদলঃ অন্যের সংসারে বেড়ে ওঠা যুবকটি ভালোবাসাতে চেয়েছিল একদিন । স্বপ্ন দেখেছিল তাকে নিয়ে ঘর বাঁধবে । তা আসলে স্বপ্ন এবং সুখের মাঝে কোথাও একটা নিঃশ্বাসের মতো করে এগিয়ে আসছিল । শান্ত, চুপচাপ ধাঁচের ছেলেটি ফিরতে চেয়েছিল । •ধবলীঃ অনুভূতি কেমন হয় তা নীরবে বুঝিয়ে দেয়ার মতো করে ধবলী বেড়ে উঠে । নিজের পাশের মানুষদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা তার মাঝে সর্বদা যেন বিরাজ করে । অনুভূতির বিশেষণগুলো এত সুন্দর করে কেনো টের পেতে হয়! •সালমাঃ কোথায় যেন শুনেছিলাম মনের মাঝে সংগ্রাম জীবনের সবথেকে বড় সংগ্রাম হয়ে ধরা দেয় । সালমা যেন সেরকমই । জীবনভর নিজের মনের সাথে মানসিকতার এক অদ্ভুত সংগ্রাম করে কাটিয়ে দেয়ার চেষ্টা তাকে অসাধারণ করে গড়ে তুলে । মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার মানসিকতা, নিজের আত্মসম্মানবোধ এবং শত বিপদেও শক্ত থাকার চেষ্টা তাকে কঠিন করে তুলে যেন । •দূর্বাঃ প্রতিটি ভালোবাসার গল্পে এক অদ্ভুত জোর থাকে । যে ভালোবাসার গল্পগুলো অপ্রাপ্তি হিসেবে নাম লেখায় তা যেন আরো স্মৃতি মননে আরো ভীষণ গভীরতা সম্পন্ন হয়ে ধরা দেয় । অদ্ভুত সমাজের বাঁধাধরা নিয়মে ভালোবাসা যেন কোথাও একটা দূর্বার জীবনে এড়িয়ে যায় । তবুও কী ভালোবাসা থাকে? থাকে তো । নিঃশ্বাস, বাতাস, গন্ধ সবকিছুকে ভালোবাসা নিয়ে জীবনের পথগুলো চলতে শিখে যায় দূর্বা । •কবিরঃ বিয়ে বিমুখ মানুষটির সংসার জীবনের বড় ভয় । স্বাধীনচেতা মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চলা মানুষটির দেশের জন্য মন কাঁদে । দেশের এক টুকরো সুখের জন্য নিজেকে এগিয়ে দিতেও চিন্তা করে না সে । এই জীবনে বোধহয় এটাই বোধহয় বড় প্রাপ্তি । •ইয়াসিফঃ শান্ত, চুপচাপ ধরনের পুরুষ চরিত্রটি শান্তিপ্রিয় ধাঁচ নিয়ে জীবনের যুদ্ধে নেমে পড়ে । হঠাৎ কোথাও ভালোবাসা জীবনকে নতুন এক ভাবে আঁকড়ে ধরতে শেখায় । সেই ভালোবাসাই তাকে দেশের প্রতি অদ্ভুত এক টান এনে দেয় । হঠাৎ মনে হয় যেন, দেশ নামক মা যদি সুখে থাকে তাহলে বাংলার প্রতিটি কোনাই আসলে সুখে থাকবে । •শেহরিনঃ ভালোবাসায় বিশ্বাসী হওয়া নারীটি জীবনের এক পর্যায়ে গিয়ে মনে করে নিজের জীবনে আচ্ছাদিত পুরুষটির জীবনে তিনিই অদ্বিতীয়া হবেন । ধৈর্য ধরে ভালোবাসার এই খেলায় কখনো তিনি এগিয়ে যান, কখনোবা মন রাজ্যের পুরুষটি । তবুও কখনো অধৈর্য হয়ে, কখনও অভিমানে, কখনও সিক্ত হয়ে জীবনের যুদ্ধে এগিয়ে যেতে হয় । •ময়নামতিঃ অদ্ভুত আত্মবিশ্বাসী স্বভাবের মহিলাটি নিজের স্বভাব এবং আচরণ দিয়ে এক ধরনের যেন পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য যেন আবেশ তৈরি করতে পারেন । তার বুদ্ধি, কথাবার্তা, ক্ষুরধার মস্তিষ্ক সব যেন তার একাকীত্বকে সঙ্গী করে জীবনের একা চলায় শক্তি হয়ে সাহায্য করে । •টুটুলঃ বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের মিষ্টি এই মানুষটি সময়ের প্রয়োজনে যেন অসাধারণ হয়ে উঠতে পারেন । দেশের প্রয়োজনে লড়াই করার মানসিকতার পাশাপাশি বোনের মতো নারীকে ভীষণ যত্নে রাখার চেষ্টা করতে পারেন । ভাইতুল্য মানুষটিকে সাহায্য করার মানসিকতা নিয়ে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যেতে পারেন । •টুকিটাকি চরিত্রঃ এই এত এত চরিত্রের মাঝেও আরো কিছু চরিত্র যাকে যারা উপন্যাসের জীবনধারায় তখনকার সামাজিক প্রেক্ষাপটে ভারসাম্য এনেছিলেন । এই উপন্যাসে আছেন মিজান মোল্লা, যিনি নিজ স্বার্থের জন্য বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ভুল কাজ করার ইচ্ছেও মনে ধারণ করেন । এছাড়াও আছেন নাহিদা, স্বামী এবং পরিবারকে সুখী রাখতে যিনি নিজ সন্তানকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চেয়েছিলেন যেকোনো পরিস্থিতিতে । আছেন গুলমোহর, যিনি বংশ পরম্পরায় খেয়াল রাখা স্বভাবে নিজের প্রতি খেয়াল নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেন । এছাড়াও আছেন সমাজের তরে নিজেকে নিমিষেই বিলিয়ে দেয়া অসীম সাহা, যিনি নিজের পেশার গুণে সেই সময়ে যুদ্ধ চলাকালীন পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছিলেন । এছাড়াও উপন্যাসে আছে সময়ের পরিবর্তনে নিজের স্বার্থ নিয়ে এগিয়ে চলা হিরণ । আছেন ভালোবাসার প্রতি সাময়িক মোহে আক্রান্ত হওয়া আওসাফ । এছাড়াও আছেন নিজের গ্রামকে একটু সুখী দেখতে চাওয়া, রত্না বুড়ি । যিনি কারো জন্য অপেক্ষা করেছিলেন । অপেক্ষা করতে করতে এগিয়ে গেলেন জীবনজুড়ে । এছাড়াও এই উপন্যাসে আছেন সাহায্য করার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা সিদ্দিক । এরকম কতশত চরিত্র উপন্যাসের মাঝে যেন নিজের উপস্থিতি দিয়ে এগিয়ে চলে যায় পুরোটা জুড়ে । ♦প্রিয় চরিত্রঃ এই উপন্যাসের প্রিয় চরিত্র নিয়ে ভাবতে গিয়ে আমি বারবার দ্বিধান্বিত হয়েছি । কয়েকবার কোথাও একটা যেন মন হারিয়ে গিয়েছে । মন বুঝতে চেয়েছে আমি কার কথা বলতে চাই । কয়েকটা চরিত্রই আমার মনে জায়গা করে নিয়েছিল বিশেষ করে । কবির মাস্টার এর জীবন ত্যাগ করে দেশের জন্য এগিয়ে যাওয়া, সালমার জীবনের সংগ্রাম, বাদল এর ফিরতে চাওয়ার ঘ্রাণ, ময়নামতির অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস এবং খুশির চুপচাপ হয়েও নিজস্ব স্বকীয়তা এগুলো যেন প্রিয় হতে বাধ্য করে । এরপর একটা সময়ে হঠাৎ করে প্রিয় চরিত্র কে আমার মাথায় চলে এসেছিল । খুশি থেকে খুশবু হয়ে ওঠা নামের যথার্থতায় যেন টের পাওয়া হয়ে উঠে, এই অদ্ভুত আলগোছে থাকা নারীটি যে পরিবেশে বাস করে সেই পরিবেশেই এক অদ্ভুত ঘ্রাণ বিরাজ করা সৃষ্টি হয় । নিজস্ব ঢঙে, নিজস্ব স্বকীয়তায় যেন সেই পরিবেশে অদৃশ্যে এক ধরনের আলোড়ন ঘটে । যে পতাকার লাল সবুজে তৈরি কাপড়ে ঘ্রাণে খুশবুর ঘ্রাণ পাওয়া যায় তা যেন নিশাবসান হয়ে স্বাধীনতার জ্বলন্ত এক প্রতীক । যাকে কেউ নিজস্ব স্নিগ্ধতা নামক ঘ্রাণের জন্যেই খুশবু বলে ডাকে সেই খুশিই প্রিয় চরিত্র হয়ে থেকে যায় আমার মনে । এই অদ্ভুত সূর্য ওঠার লালের ঘ্রাণে যেন ওই খুশবুর ঘ্রাণই বড্ড গভীরতা সম্পন্ন হয়ে ধরা দিতে চায় । সে যেখানে থাকে সেখানে নিজের নীরব নিস্তব্ধতা এক ধরনের ঘ্রাণ অদ্ভুত ভাবে নিয়ে আসে যেন । ♦প্রিয় অংশঃ এই উপন্যাসের সবার আগে যা প্রিয় হয়ে আছে তা হলো উপন্যাসের পটভূমিটা । এত সুন্দর করে উপস্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং তার সময়কালের সাথে সংযুক্ত করে ঘটনাপ্রবাহ সাজানো হয়েছে যে উপন্যাসটি ভীষণ মনের কাছাকাছি হয়ে ধরা দেয় । এছাড়াও খুশি এবং নয়ন এর অদ্ভুত সম্পর্কের রসায়ন ভীষণ মন কেড়ে নেয় । সালমার নির্লিপ্ততা, ময়নামতির ভাবাবেগ কোথাও একটা গিয়ে উপন্যাসের প্রতি এক ধরনের ভালোলাগা তৈরি করে দেয় । শেহরিন এর ভালোবাসাকে খুঁজে পাওয়ার বিশেষত্ব কিংবা খুশির জীবন সংগ্রামে এগিয়ে চলা এগুলো ভীষণ আবেগতাড়িত করে দেয় যেন । সেই যে সুখী না হওয়া সংসারের অদ্ভুত ধুলোয় পড়া বাক্সটা ওই মুহূর্তের আলোড়ন আমাকে ভীষণ ভালো লাগা দেয় । ভালো লাগা দেয় নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে খুশি থেকে খুশবু ছাড়িয়ে নিজস্ব আলোতে নিজেকে অদৃশ্যেভাবে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টায় । ♦প্রিয় সংক্ষেপঃ মুক্তিযুদ্ধ, পাক হানাদার বাহিনীর বাংলাদেশ এর সাথে লড়াই কিংবা হিমডাঙা গ্রামের অপেক্ষায় থাকা প্রকৃতি যেন এই উপন্যাসের আখ্যানে কোথাও একটা অনুভূতির মতো করে ভেসে বেড়ায় । উপন্যাসের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সেভাবেই গল্পে আসে । তবে এই উপন্যাসের বেশ কয়েকটা চিঠি এবং কবিতাগুলো কী মারাত্মক সৌন্দর্য নিয়ে যে ভালোলাগা বাড়িয়ে দেয় তা আসলে অনুভূতি প্রকাশের জন্য তীব্র হয়ে ধরা দেয় । দিনশেষে আসলে আমরা ফুলের ঘ্রাণে যাকে খুঁজে বেড়াই সে সূর্যমুখী হতে চেয়েছিল, কিংবা কচুরিফুল । স্বাধীনতা নিয়ে থাকা ভীষণ আবেগে রক্ত ভেসে ওঠা আকাশ যেদিন সূর্যোদয় দেখেছিল, যে আকাশ একদণ্ড শান্তি চেয়েছিল আর বলেছিল, “সেদিন বাংলার বুক হয়েছিল নোটবুক, কালি হয়ে ঝরেছিল রক্ত আর কলম বন্দুক ।” ♦সংলাপঃ এই উপন্যাসের শব্দচয়ন এবং বর্ণনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি উপন্যাসের প্রেক্ষাপট এবং জীবনধারা অনুযায়ী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । যা ভীষণ ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলার চেষ্টা করেছে । মুক্তিযুদ্ধের সময় কালীন মুহূর্তগুলোকে বিশ্লেষণ করতে বিভিন্ন শব্দগুলো দারুণ ভাবে চেষ্টা করেছে । সেভাবেই সাজানো হয়েছে যেন । ♦লেখক প্রসঙ্গেঃ লেখক প্রভা আফরিন এর প্রকাশিত হওয়া বই সংখ্যা তিনটি । তবে ‘নিশাবসান’ লেখক প্রভা আফরিন এর প্রকাশিত হওয়া দ্বিতীয় বই তথা দ্বিতীয় উপন্যাস । এই বইটি যখন প্রকাশ পেলো তখনও আমি লেখকের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ‘মধুসখা’তেই আটকে ছিলাম । যদিও আটকে থাকা বলাটা ভুল হয়ে যাবে । কারণ আটকে থাকা মানে তো, কারো থেকে বাঁধা পেয়ে বেরোতে না পারা । কিন্তু আমি কেনো যেন নিজ ইচ্ছায় মজে গিয়ে এই বইটিতে আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম । এইরকম একটা পরিস্থিতিতে যখন লেখকের এই বইটি এলো, স্বাভাবিক ভাবেই এত ভালো লাগা উপন্যাসের লেখকের পরের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বেশি হওয়ার কথা । কিন্তু সেখানে আমি হঠাৎ করে এই বইটা আর পড়া হলো না এতগুলো দিন ধরে । হঠাৎ যেদিন এটা লক্ষ্য করলাম, আমি মনে করলাম আমি বোধহয় এখনও অনুভূতির দিক থেকে নরমই আছি । যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রেক্ষাপট এর জন্য এই উপন্যাসটি আমি বারবার এড়িয়ে যাচ্ছি, অনুভূতির মিশেলে পড়ে কান্নাভেজা চোখের দায়ে চাহনিতে এই বইয়ের পৃষ্ঠা না মেলাতে চাচ্ছি সেই আমি এই আসলে এই বইটা পড়ে কান্না কুড়োতেই চেয়েছিলাম । যাহোক লেখকের লিখনশৈলী নিয়ে আসলে বর্ণনা করার মতো অনুভূতি খুব কম আমার । পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে ফুটিয়ে তোলার এক অসাধারণ দক্ষতা নিয়ে লেখক যেভাবে পটভূমি এবং প্রেক্ষাপট সাজিয়ে তুলেন তা বেশ ভালো লেগে যাওয়ার মতো । এই অনুভূতি আসলে ব্যাখ্যা করা যায় না, বর্ণনা করা যায় না । শুধু চুপচাপ আবেশের মাঝে আবেগতাড়িত হয়ে নিঃশ্বাসে তা মনের মাঝে আঁকড়ে নেয়াই যায় । অদ্ভুত সুন্দর লিখনশৈলী এই উপন্যাসেও ফুটে উঠেছে । সাধারণত বিভিন্ন লেখকের বর্ণনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংলাপ এই দুইয়ের মিশেলের সমান্তরালের টানাপোড়েনে বিভিন্ন সমস্যা হয়, কারো যেকোনো একটাতে অস্বস্তি তৈরি হয় । কিন্তু লেখক প্রভা আফরিন যেন নিজস্ব স্বকীয়তা এবং নিজস্ব লিখনশৈলীর অসাধারণ ধাঁচে দুই বিভাগেই বেশ দারুণ কাজ করে যাচ্ছেন । এত সুন্দর উপন্যাসটিকে তাই যখন নিজের যোগ্যতার অর্জনের কোঠায় আরেকটু আশা করতে ইচ্ছে করে, তা খুবই কম হিসেবে দেখলে ভীষণ কষ্ট বোধ হয় । যাহোক লেখকের পরবর্তী লেখাগুলোর জন্য শুভকামনা রইলো । ♦প্রকাশনীঃ নবকথন প্রকাশনী সবসময়ই যা অসাধারণ ভাবে করে থাকে, তা হলো বইটির বাঁধাই এবং প্রচ্ছদটি দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে । এখানেও যেন তাই করা হয়েছে । অসাধারণ সুন্দর ভাবে প্রচ্ছদটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । দেখলেই যেন উপন্যাসের পটভূমি এবং প্রেক্ষাপট এর কথাগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে । এই প্রচ্ছদটি তাই দেখতে বেশ ভালোলাগা কাজ করে । এছাড়াও বই বাঁধাই করা বেশ ভালো ছিল । বিভিন্ন জলছাপগুলো যেভাবে সাজানো হয়েছে তাও বেশ ভালো ছিল । বইতে বানান ত্রুটি সেভাবে নেই, যে কারণে বইটি পড়তে কোথাও একটা যেন বেশ লাগে । ♦রেটিংঃ ৫/৫ ♦উপসংহারঃ কোনো মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস সাধারণত আমি পড়তে চাই না যে কারণে, কারণ হঠাৎ করে মনে হয় নিঃশ্বাসে দম আটকে যাওয়া এক অনুভব আমাকে আবেগতাড়িত করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে । যদিও চিরাচরিত জীবনের গ্রামের সবুজ ধাঁচ, বুনোফুলের জীবনের মতো করে এগিয়ে চলা, দেশের তরে আত্মত্যাগ করা কোথাও যেন সুখ সুখ এক ধরনের ভালোলাগা অনুভব দেয় । এই উপন্যাসের দুই বিরহের আখ্যানে দুইটা কবিতার মতো অংশ আছে, যা আমার কেনো প্রিয় হয়ে উঠেছে আমি তা সত্যিই জানি না । শুধু জানি, এগুলো আসলে অনুভূতিতে কেমন তীব্রতা নিয়ে ভালোলাগা অনুভূতি দেয় । তবুও আমি একটু লিখে যাই, দূকুল যেখানে মিলায় সেখানেই নদী শুকায় ভালোবাসা সেথায় গুমরে ওঠে চৈত্রতপ্ত খরায় ।
Was this review helpful to you?
or
#নিশাবসান "দেবদারু গাছের তলায় পড়ে থাকা নধর দেহটিকে একে একে পাঁচজন পুরুষ ছিঁড়েখুঁড়ে খেল। সেই সঙ্গে চর, খামচি, লাথি আর অকথ্য ভাষায় গালি তো আছেই। এক একটা প্রহারে খুশির হৃৎপিণ্ডটা মুচড়ে উঠছে। ছটফট করছে মুক্তির আশায়। " ?? স্বাধীনতা শব্দটি শুনতে এবং বলতে যতটা সহজ, স্বাধীনতা অর্জনটা কিন্তু ঠিক ততটাই কঠিন। ত্রিশ লক্ষ বাঙালির রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের সেই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিলো। কিন্তু স্বাধীনতার সেই রক্তিম সূর্য উদয়ের আগে বাঙালিদের অমানিশার ঘোর কালো আধাঁরের রাত্রি পার করতে হয়েছিল। সেই সংকটাপন্ন অবস্থার বর্ননা সুলেখক প্রভা আফরিন চমৎকার রূপে তুলে ধরেছেন তার বই "নিশাবসান" এ। "লাল-সবুজের মিছিলে বাজে রাত্রি শেষের গান, বিজয়ের মশাল জ্বালবে আলো, হবেই নিশাবসান। " ?? কাহিনি সংক্ষেপে : গল্পের শুরু সেই ১৯৬৯ সালের কোন এক দিন থেকে। তখনও বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। বাংলাদেশের এক গহীন গ্রাম হিমডাঙায় খুশি, নয়ন ও তাদের মা সালমা বেগমের বসবাস। তাদের পাশের বাড়িটিই নয়নের চাচা মিজান মোল্লার। আর্থিক দিক দিয়ে মিজান মোল্লার পরিবার স্বচ্ছল হলেও সালমার পরিবারের জন্য তাদের কোন বিকার নেই বললেই চলে। তাই বিধবা সালমার দিন কাটে অক্লান্ত পরিশ্রম করে এবং রাত নামে অসহ্য চিন্তায় ঘিরে। সম্পর্কের শীতলতা আরেক ধাপ বাড়ে যখন মিজান মোল্লার একমাত্র উচ্চ শিক্ষিত ছেলে ইয়াসিফ মন দিয়ে বসে জাত কূলহীন, প্রাইমারি পাশ, খোড়া খুশি ওরফে তার খুশবুকে। কারণ ইয়াসিফের চোখে খুশবু বাকি সবার মতো ল্যাংড়ি না, বরং খুশবু হচ্ছে কচুরিফুল। " নিজেকে নিয়ে এভাবে হীনমন্যতায় ভুগবি না। বরং মনটাকে এমনই নিষ্কলুষ রাখবি। কখনো তাতে দূষণ ঘটতে দিবি না। মাথা উঁচিয়ে, সদর্পে চলবি সব সময়। " ( ইয়াসিফ পৃ: ৬৩) তারপর একে একে ঘটে যায় বহু ঘটনা, ইয়াসিফ বাধ্য হয়ে বিয়ে করে জমিদার বাড়ির আদরের নাতনি শেহরিনকে। সেই বিয়ে বাড়িতেও ঘটে বিরাট এক ঘটনা। এরপর দেশে শুরু হয় ছাত্র বিপ্লব, পাকিস্তানী সৈন্যদের অত্যাচার, ২৫ শে মার্চের সেই কালরাত্রি এবং সবশেষে মুক্তিযুদ্ধের ডাক। ইয়াসিফ,টুটুল, স্বপনসহ বহু বাঙালি যোগ দেয় মুক্তিযুদ্ধে। এদিকে হিমডাঙায় মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকে খুশি ও দূর্বাসহ অনেক পরিবার। কী আছে এদের ভাগ্যে? খুশি ইয়াসিফের কচুরিফুল হয়ে ভেসে যাবে,নাকি বাদলের জীবনে সূর্যমুখী হয়ে আলো ছড়াবে? দিনশেষে হিমডাঙার নিশাবসান হবে তো? "মানুষ হারিয়ে গেলে বোধহয় তাকে নিয়ে কথাও হারিয়ে যায়। শুধু পাঁজরের গায়ে লেপটে থাকে হাহাকার।" ?? পাঠ প্রতিক্রিয়া : বইটা সেই বইমেলার সময় প্রিয় একজনের কাছ থেকে উপহার পেয়েছিলাম। পড়ি পড়ি করে আর পড়া হচ্ছিল না। যাইহোক দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বেশকিছু দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রচুর বই পড়তে পেরেছিলাম। বেশকিছু রিভিউ পড়ে বইটির পটভূমি সম্পর্কে আগেই অবগত ছিলাম,তাই ভাবলাম এক আন্দোলনের সময় আরেক যুদ্ধের ইতিহাস পড়ে নেয়া যাক। ব্যস বসে গেলাম বইটি নিয়ে। বইটির পটভূমি যদি শুধু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বলা হয়, তাহলে ভুল বলা হবে। কারণ বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি, গ্রামীণ পটভূমি, যুদ্ধের আগে আমাদের দেশের দুরাবস্থা, মানুষের নীতিবোধ এবং কয়েকজন কিশোর কিশোরীর স্বপ্ন আকাঁ হয়েছে। সেই সাথে আছে অভিমানীনি শেহরিন ও নির্লিপ্ত ইয়াসিফের সংসার যুদ্ধ। "যাকে বাঁধাতেই পারলাম না, তাকে মুক্তিই বা কী করে দেবো? অথচ আমি দেখি আমার মুক্ত আকাশটাতেও শুধু তোমারই বিচরণ। " ( শেহরিন - ইয়াসিফ পৃ: ১৮৩) বইটি এক কথায় চমৎকার। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, বই, পত্রিকা পড়ে আর লোকমুখে যেটুকু শুনেছি তা থেকেই জানা। কিন্তু বর্তমান দেশে চলমান আন্দোলনের সময় এই বইটা পড়েছি বলেই হয়ত আজকের স্বাধীন বাংলা আর ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধের সময়টার সাথে অনেক বেশি রিলেট করতে পেরেছি। লেখকের শব্দ বুনন, বাক্যের বিন্যাস, ভাষার সম্ভার ছিলো দুর্দান্ত। এত চমৎকার করে উনিশ দশকের বর্ননা এই বিংশ শতাব্দীর লেখক দিয়েছেন তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। শেষটা ছিলো আরও দারুণ। এত সুন্দর পরিণতি যেন গোটা স্বাধীন বাংলার রূপ তুলে ধরেছে। সেই সাথে কষ্ট লেগেছে কিছু চরিত্রের করুন পরিনতি দেখে। "সব অন্যায়ের বিচার সমাজ করতে পারে না৷ সমাজের নিজেরই তো অন্যায়ের শেষ নেই। তাই কিছু বিচার নিয়তির ওপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত। ওপরে যিনি আছেন, তিনি হিসেব করে সমস্ত কাজের প্রতিদান দেবেন।" ?? নামকরণ ও প্রডাকশন : বইটির নামকরণ আমার কাছে যথাযথ মনে হয়েছে, ঠিক পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ভয়াল কালো রাত শেষ হয়ে বাংলার বুকে যেমন স্বাধীনতার সূর্যের আলো ফুটে সকল অন্ধকার দূর করেছে, তেমনি বইটিতেও অন্ধকারের বুক চিড়ে নতুন ভোর এসেছে, হয়েছে "নিশাবসান "। নবকথনের প্রোডাকশন কোয়ালিটি ভালো বরাবরই। এই বইটির কাজও সুন্দর হয়েছে তবে টপনচ বলব না। প্রচ্ছদ আলাদাভাবে দেখলে অনেক সুন্দর, তবে কেন জানি বইটির বর্ননার সাথে মিলিয়ে আরও বেটার কিছু হতে পারত আমার মনে হয়। নামলিপিটা বেশ সুন্দর। ?? সবশেষে বলব, লেখকের দ্বিতীয় বই হিসাবে আমার বইটি খুবই ভালো লেগেছে। একদমই নতুন লেখিয়ে মনেই হয়নি। যে মুক্তিযুদ্ধ পৃথিবীর বুকে বাঙালি জাতিকে একটি নিজস্ব ভূখণ্ড এনে দিয়েছিল, তার ইতিহাস আমাদের নতুন প্রজন্মের অবশ্যই জানা উচিত। লেখকের ভাষায় শেষ করলে_ "সেদিন বাংলার বুক হয়েছিল নোটবুক, কালী হয়ে ঝরে ছিল রক্ত আর কলম বন্দুক।"
Was this review helpful to you?
or
"নিশাবসান" বইটি পড়ে এত্ত ভাল্লাগছে। কী চমৎকার লেখনী! সব কিছুর উপস্থাপন এতো সুন্দরভাবে করা হয়েছে। এই বইটার কথা আমার অনেক অনেক দিন মনে থাকবে। মনে রাখার মতোই বই এটা। প্রিয় বইয়ের লিস্টে এই বইটাও যোগ হলো। দোয়া রইল এমন আরও বই যেন আপু আমাদের উপহার দিতে পারেন।??