User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
গতমাসে বইটা হাতে পেয়ে সব কাজ ফেলে দিয়ে তখুনি খুলে বসলাম, কারণ কিছুদিন আগেই লেখিকার 'জাগরনে যায় বিভাবরী' বইটা পড়েছি। এককথায় অসাধারণ ছিলো। নামের কারণেই ভেবেছিলাম এই বইটাও তেমন ধরনের কিছু, কিন্তু ভুমিকা পড়ে ততক্ষণে জানা হয়ে গেছে যে 'আধারের যুবরাজ' একটা উপন্যাস। সমস্ত থ্রিলিং এ পানি ঢেলে বইটা আবার বন্ধ করে রেখে দিলাম। কারণ গত কয়েকদিন এ ফেইসবুক/রকমারী এর রিভিউ দেখে বেশ কয়েকটা উপন্যাস পড়েছি- হয় একেকটা হিন্দি সিরিয়াল নতুবা হুমায়ুন আহমেদ এর বইয়ের প্রতি লাইনের কপি। তাই আপাতত উপন্যাস পড়ার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না! যাই হোক গিলতে তো হবে, না পড়ে তো এভাবে ফেলে রাখা যায়না, শত হলেও আমরা Bookworm! পড়া শুরু করলাম গতকাল ২৭২ পৃষ্ঠার দীর্ঘ এই উপন্যাস! প্রথম দুইতিন পৃষ্ঠা পড়লাম... এমন আহামরি কিছু না... যাই হোক... শায়ান থেকে সৌরিন... আবার সৌরিন থেকে শায়ান... এরপর কোথায় হারিয়ে গেলাম নিজেও জানি না... এতো সহজ করে লিখা, এতো সুন্দর - সাবলীল, অতীত - বর্তমানকে এভাবে পরপর সাজানো কোথাও এতটুকু খাপছাড়া লাগেনি। এককথায় দারুণ একটা মন খারাপ নিয়ে বইটা শেষ করলাম। আর কয়েকটা লাইন কি বেশি লিখা যেতো না?? একটু পর পর মোবাইল হাতে নিচ্ছি আর মেসেঞ্জার এ কি যেনো খুজছি... শায়ানের পাঠানো মেসেজ বুঝি??!! ?
Was this review helpful to you?
or
#আঁধারের_যুবরাজ "প্রগাঢ় অন্ধকারে ঢাল-তলোয়ারবিহীন সাহসী এক যুবোরাজ পথ খুঁজে খুঁজে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। শায়ানের মনে হতে থাকে, সে এক অচেনা অজানা, মায়াবী রাজ্যের নিঃসঙ্গ যুবরাজ। শায়ান...আঁধারের যুবরাজ। " ★ জনপ্রিয় লেখক সুস্মিতা জাফরের নতুন উপন্যাস "আঁধারের যুবরাজ" নাম শুনে কেউ থ্রিলার ভাববেন না কিন্তু। এটি সম্পূর্ণ সমকালীন প্রেক্ষাপটে রচিত একটি মৌলিক উপন্যাস। লেখক অসংখ্য ছোটোগল্প লিখলেও ২০২২ সালে "জাগরণে যায় বিভাবরী " প্রথম ফ্যান্টাসি থ্রিলার উপন্যাস লেখার পর এটিই তার দ্বিতীয় উপন্যাস। ★ কাহিনি সংক্ষেপে : "অর্থহীন আলাপচারিতার জন্য অপরিচিত মানুষ perfect। অর্থহীন কথাবার্তা stress relief করে। নিজের জীবনের দুশ্চিন্তা দুঃখ হতাশা আর ব্যর্থতার ব্যাপারে পরিচিত কারো সাথে সহজে কথা বলা যায় না। " ( পৃ : ১৫৩ ) কাহিনির শুরু ঠিক এই পয়েন্ট থেকেই। একজন লেখক ও কর্মজীবী মহিলা সৌরিন আলম ছোটোবেলা থেকেই বেশ আত্নবিশ্বাসী, সাহসী ও মেধাবী। বলা যায় বাবা- মার কঠোর অনুশাসন তাকে এমনটি হতে বাধ্যই করেছে। তার স্বামী ডাক্তার সোপান দীর্ঘ আট বছরের সম্পর্ক হুট করেই বিনা নোটিশে শেষ করে দেয়। কিন্তু কেন? কারণ জানা নেই সৌরিনের। জীবনের এমন এক পর্যায়ে সৌরিনের ফেসবুকের মাধ্যমে আলাপ হয় আঁধারের যুবরাজের সাথে। শুরুতে যে নিজেকে সৌরিনের পাঠক বলেই পরিচায় দেয়। অপরদিকে শায়ান ছোটোবেলা থেকেই মায়াকাননের কঠিন শৃঙ্খলায় বেড়ে ওঠা এক যুবক। যে কিনা মুক্তির স্বাদ পেতে মরিয়া। ভাগ্যের ফেরে বা সৌভাগ্যের জোরে, যেভাবেই হোক মায়াকাননের মায়া ত্যাগ করে সুদূর আমেরিকায় পাড়ি জমায়। কৈশোরের শেষ ও যৌবনের শুরু থেকেই যার জীবনে একের পর এক সুন্দরী রমনীর আগমন ঘটতে থাকে। যারা শায়ানকে ভালোবাসার লোভ দেখিয়ে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। কিন্তু কেন? সৌরিন, শায়ান, সোপান আর আঁধারের যুবরাজের জীবনের যোগসূত্রটা আসলে কোথায়? এরা সকলেই একই সুতোয় গাঁথা নাকি মালাটাই ভিন্ন। লেখকের ভাষায়_ "একই ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনা নিয়ে কবি লেখে কবিতা,গল্পকার বুনে গল্প, গীতিকার গড়ে গান ; সেই একই ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনাকে ঘিরে চলছে ভিন্ন ভিন্ন হরেক কলতান। " ( কবিতা - শেষ ঠিকানা। সুস্মিতা জাফর) ★ পাঠ প্রতিক্রিয়া : বইটাকে নিয়ে অনেক বেশি এক্সপেক্টেশন কাজ করেছে শুরু থেকেই। কারণ সুস্মিতা আপুর ছোটোগল্প গুলো হয় দুর্দান্ত আর তার প্রথম উপন্যাস "জাগরনে যায় বিভাবরী" বইটাও ছিলো চমৎকার। এই বইটার প্রচ্ছদ নিঃসন্দেহে খুবই রঙিন ঠিক আঁধারের যুবরাজের জীবনের রঙিন অধ্যায়গুলোর মতো। আবার ব্যাকগ্রাউন্ডটা ছিলো কালো ঠিক সৌরিন ও শায়ানের শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের মতোই। থিম পার্ফেক্ট ছিলো কিন্তু সামনে থেকে প্রচ্ছদটা কেন যেন ফোটেনি। অনেক বেশি হিজিবিজি মনে হয়েছে। গল্পে একই সাথে দুটো সময়ের বর্ণনা সমান্তরালভাবে চলেছে যা নিঃসন্দেহে লেখক যথাযথ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বাচ্চাদের প্যারেন্টিং বিষয়ক বেশকিছু ভুল যা বাবা-মায়েরা অহরহ করেন এবং করছেন সেগুলো লেখক সুচারুরূপে তুলে ধরেছেন। এইদিকটা যেমন স্পর্শকাতর ছিল তেমনি চমৎকারও ছিলো। একপর্যায়ে সৌরিনের জন্য মন খারাপ হয়েছে। কিন্তু ওর ঘুরে দাঁড়ানো বেশ লেগেছে। "জীবনে strong হওয়ার মতো বড় অপরাধ আর একটাও হয় না। কারণ 'তুমি strong' '_এ কথাটাই একজন মানুষকে নিঃসঙ্গ করে দেয়... বন্ধুহীনে পরিণত করে ফেলে... বড্ড একা বানিয়ে দেয়। " ( সৌরিন পৃ : ৪৬) আঁধারের যুবরাজ ওরফে শায়ান চরিত্রটি ভালো লেগেছে। তার মোটিভেশনাল কথাবার্তা, গিফট দেবার ধরন, সহযোগী মনোভাব সবকিছু ভালো ছিলো। তবে এত বিচক্ষণ একজন পুরুষ বারবার একই জায়গায় হোঁচট খাওয়া কেন যেন মেনে নিতে পারিনি। " প্রতিটা মানুষের সফলতার পেছনে দীর্ঘ ব্যর্থতার গল্প লুকিয়ে থাকে। " ( আঁধারের যুবরাজ পৃ: ২১৭) উপন্যাসে বেশকিছু ইংরেজি শব্দের ব্যবহার রয়েছে, যেগুলো পড়তে পড়তে হঠাৎ কেমন বাধাঁর সৃষ্টি করে। আমার মতে এগুলো সরাসরি ইংরেজিতে না লিখে বাংলায় লিখলে বেশি ভালো হত। যেমন- স্ট্রং (Strong), রিলিফ ( relief), বাই ( bye) এমন বহু শব্দ আছে। এবার আসি কবিতা প্রসঙ্গে, কবিতাগুলো ভীষণ সুন্দর ছিলো এককথায়, কিন্তু ২৭১ পৃষ্ঠার মোটামুটি বড় একটা উপন্যাসের বইয়ে ২৬ টি কবিতা, মানে প্রতি অধ্যায়ের শুরুতে একটি করে কবিতা দেয়াটা আমার ভালো লাগেনি। প্রতিটা জনরার নির্দিষ্ট কিছু পাঠক থাকে। যারা উপন্যাস কিনে তারা হয়ত উপন্যাস পড়তে পছন্দ করে বলেই কিনে। আবার আমার মতো সর্বভুক পাঠকও আছে। কিন্তু উপন্যাস হিসাবে আগ্রহ করে কেনা বইয়ে এতবেশি কবিতা আমার মানানসই মনে হয়নি। কবিতার সংখ্যা এর অর্ধেক বা আরও কম হলেও কাহিনির কোনো হেরফের হতো না। কিন্তু এই ক্ষেত্রে পাঠক এই চড়া দামের বাজারে হয়ত কিছুটা স্বস্তি পেত। " এটাই ভালো বেশি কাছে না আসা দূরে দূরে থাকা ; রহস্য গুলো একটু হলেও বাক্সে পুরে রাখা। ( মোহভঙ্গ _ সুস্মিতা জাফর ) গল্পে সোপান শুরু থেকেই ছিলো অস্পষ্ট। ওর ছেড়ে যাবার কারণটা যেমন ধোয়াশায় ছিলো তেমনি ফিরে আসাটা আরও রহস্যজনক মনে হয়েছে। ছেড়ে যাওয়াটার মোটামুটি একটা কারণ লেখক দিলেও ফিরে আসার কোনো ব্যাখ্যা বইতে ছিলোই না। আমি শেষের দিকে কিছু লাইন হলেও এই বিষয়ে আশা করেছিলাম। হুট করে সৌরিনের ওভার পজেসিভ বাবা-মার রূপ পরিবর্তনও একটু ধাক্কা দিয়েছে আমায়। সমাপ্তি নিয়ে কিছু বলব না তাহলে স্পয়লার হয়ে যাবে তবে শায়ানের চিঠিটা অনেক ভালো লেগেছে। মন ছুঁয়ে গেছে। শায়ানের দিক থেকে সে শতভাগ সঠিক ছিল। কিন্তু এত এত অপমান, মানসিক স্ট্রেস আর টানাপোড়েন দীর্ঘ ৫টা মাস সহ্য করার পর মাত্র ১ ঘণ্টায় সৌরিনের মন পরিবর্তন অতি নাটকীয় মনে হয়েছে। এটা ছোটোগল্প হলেও মেনে নেয়া যেত কিন্তু বিশাল কলেবরের একটা উপন্যাসের তাড়াহুড়ো সমাপ্তি মেনে নিতে পারছি না। যেখানে সৌরিন যথেষ্ট আত্ননির্ভশীল একজন নারী। বাঙালি নারীরা হয়ত এত সহজে সংসারের মায়া ত্যাগ করতে পারে না, যেমনটা লেখক বুঝিয়েছেন কিন্তু সৌরিনের দিক থেকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ সোপানের কাছ থেকে কিছু জবাবদিহিতা একান্ত সৌরিনোর প্রাপ্য ছিল। সেই সাথে পাঠক হিসেবে আমাদেরও জানার আগ্রহ ছিল। গল্পে অনেক অনেক নারী চরিত্র চলে এসেছে, যাদের মধ্যে বেশকিছু আমার অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। শায়ান যেহেতু কোনো প্লেবয় চরিত্র প্লে করেনি, সেইক্ষেত্রে এত নারীর সহচার্য অপ্রয়োজনীয় ছিলো। ★ লেখকের সাবলীল ও ঝরঝরে লেখা সবকিছুর পরও পাঠককে উপন্যাসে আকর্ষণ করতে যথেষ্ট বলে আমার মনে হয়েছে। বইয়ে তেমন কোনো ভুল আমার চোখে পড়েনি। প্রোডাকশন, বাইন্ডিং, শব্দ বিন্যাস চমৎকার ছিলো। ছোটো ছোটো লুপহোল গুলো ছাড়া উপন্যাসটি পড়তে বেশ লেগেছে। বর্তমানের নীল সাদার দুনিয়ার সাথে এই প্রজন্মের মেলবন্ধন লেখক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে লেখকের পূর্বের লেখার সাথে তুলনা করলে এই বইটি কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়।
Was this review helpful to you?
or
#আঁধারের_যুবরাজ_বুক_রিভিউ ? বই-পরিচিতিঃ বইয়ের নামঃ আঁধারের যুবরাজ লেখিকাঃ সুস্মিতা জাফর প্রচ্ছদঃ মো.সাদিতউজজামান প্রকাশকঃ রাশেদ রানা প্রকাশনীঃচলন্তিকা প্রকাশন প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি,২০২৪ জনরাঃ সামাজিক রোমান্টিক উপন্যাস মুদ্রিত মূল্যঃ ৭০০ টাকা ''দূর হতে আমি তারে সাধিব গোপনে বিরহ ডোরে বাঁধিব বাঁধনবিহীনও সেই যে বাঁধন অকারণ...'' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লাইনগুলো যেন গল্পের সারাংশ। ভালবাসা মানে সবসময় হাতে হাত রেখে চলা নয়, পাশাপাশি বসে চোখে চোখ রেখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনা নয়।সকল ভালবাসা প্রাপ্তির বার্তা বয়ে বেড়ায় না ,কিছু ভালবাসা শুধু সম্প্রদানের। সব প্রাপ্তি যেমন দুহাত ভরে সুখ এনে দেয়না তেমনি কিছু অপ্রাপ্তি এনে দেয় আত্মার শান্তি। কখনও কখনও ভালোবাসা শুধু দূর থেকে অনুভবের। কোন এক মেঘলাদিনে উদাসী মনে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থেকে ধোঁয়া উঠা গরম কফির মগে নরম ঠোঁটের ছোয়া লাগাতে লাগাতে আনমনে কাউকে স্মরণ করে সুখ মিশ্রিত দুঃখ কিংবা দুঃখ মিশ্রিত সুখ অনুভব করাটাও ভালবাসা। এমনি এক ভালবাসার গল্প '' আঁধারের যুবরাজ '' ? ফ্ল্যাপ: ভালোবাসার গল্পগুলো আসলে কী রকম হতে হয়? রোমান্টিক সংলাপ ,দুটি প্রাণের উথাল পাথাল পাগলামো,বন্য উন্মত্ততায় হারিয়ে যাওয়া, গল্পের ভাঁজে ভাঁজে রগরগে উত্তেজনা। এর বাইরেও কি শিহরণ জাগানিয়া ভালোবাসার গল্প হয় ? ভালোবাসি' বলা যায় সহজেই। ভালো হয়তো বাসাও খুব বেশি কঠিন নয়। ভালোবেসে কাছে চাওয়া এবং পাওয়াও হরদম চলছে। কিন্তু ভালোবেসে না চেয়েও কিংবা চেয়ে না পেয়েও কিংবা পেয়ে হারিয়েও ভালোবাসাকে অবিকৃত রেখে পাশে থাকার গল্প বেশি আছে কি? 'আঁধারের যুবরাজ'... এমন একটি গল্পের সঙ্গে সহযাত্রা হয়ে যাক।" ? পাঠ প্রতিক্রিয়া - আঁধারের যুবরাজ ( Mistry Prince of Darkness ). গল্পটা পড়ে আমার শায়ান এর জন্য প্রচুর কষ্ট হয় । শায়ানকে যদি কেউ প্লে বয় বলে তাহলে সে সম্পূর্ণ ভুল বলবে কারণ সে প্লে বয় ছিল না বরং তাকে নিয়েই সবাই প্লে করে। ছোটবেলা থেকে কঠোর শাসনে বড় হওয়া শায়ান তার জীবনে বার বার ঠকে যায় ভালবেসে , যাকেই সে বিশ্বাস করে ভালবেসে আগলে রাখতে চেয়েছে তার থেকেই চরম আঘাত পেয়ে দূরে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। ভালবাসাহীন জীবন প্রাণহীন তরুর মত তাই তো সেই তরুতে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে সে হন্যে হয়ে ভালোবাসা খুঁজে বেড়ায়। আদৌ কি পেয়েছিল সেই ভালবাসার দেখা !! নাকি পায়নি !! নাকি পাওয়ার আগেই হারিয়ে ফেলেছিল !! গল্পের আরেক কেন্দ্রীয় চরিত্র সৌরিন আলম যার জন্য একবুক আফসোস আমার। নিজেকে সৌরিনের জায়গায় বসিয়ে প্রশ্ন করি, কী হতো আমার সিদ্ধান্ত !! আমি ও কি সোপানের হাত ধরেই জীবন কাটিয়ে দিতাম !! নাকি সত্যিকারের সুখের খোঁজ করতাম। আমরা বাঙালি মেয়েরা বেশিরভাগ সময়ই সমঝোতার জীবন বেছে নেই যেখানে ঝামেলা কম থাকে ,থাকে মেকি সুখ ,সৌরিনও সেই জীবনটাই হয়তো চেয়েছে। ছোট বেলা থেকে বাবা মায়ের শাসন ,তার প্রতি তাদের উদাসীনতা , তিক্ত শৈশব কৈশোর সৌরিনকে কঠিন হৃদয়ের করে গড়ে তোলে। তাই তো তার জীবনের এতো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সে সামনে এগিয়ে যায় , নিজেকে নিজে ভালোবাসে , নিজের ছোট বড় স্বপ্নগুলোকে নিজে পূরণ করে। শক্ত হৃদয়ের অধিকারিণী পিছিয়ে পড়েনি ,নিজেকে হেরে যেতে দেয়নি। আমি যেন শৌরিনের মাঝে নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। আর প্যারেন্টিং নিয়ে যদি বলি , বাবা মা কখনো তার সন্তানের খারাপ চায়না , কিন্তু এখানে ব্যাপারটা হচ্ছে যুগ। একেক যুগের পিতা মাতার শাসনের ধরণ একেকরকম। উদহারণ হিসেবে যদি আপনি নিজেকে মা হিসেবে দাঁড় করিয়ে আপনার মা , আপনার মায়ের মা , তার মা এভাবে বিচার করেন তো উত্তর পাবেন। গল্পে যে সময়কালের উল্লেখ ওই সময় বাবা মায়েদের শাসন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমনি ছিল। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মনমানসিকতার পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান যুগের একজন বিচক্ষণ মা হিসেবে আপনি সবার আগে অবশ্যই আপনার সন্তানকে বোঝার চেষ্টা করবেন। এটাই বাস্তবতা। গল্পের চিঠিটা আমাকে কাঁদিয়েছে , যে কখনো ভালবাসা হারায়নি সে হয়তো হারানোর ব্যাথাটা বুঝবেনা। চিঠি পড়ে শায়ানের ভালবাসার ধরণের প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে যায় ,দূর থেকেও কিভাবে পুরোটা দিয়ে ভালবাসা যায়, গোপনে আড়াল হয়েও কিভাবে বিরহডোরে বাঁধতে হয় তা শায়ান দেখিয়ে দিয়েছে। ? প্রিয় চরিত্র - গল্পে আমার প্রিয় চরিত্র সেঁজুতি। জীবনে মাঝে মাঝে কিছু সময়ের জন্য কিছু মূল্যবান মানুষের আগমন ঘটে ,তাদের স্থায়ীকাল স্বল্প হলেও জীবনে তাদের প্রভাব থাকে ব্যাপক। জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়টা পার করার জন্য সাপোর্ট হিসেবে পাওয়া বন্ধু দুর্লভ। তবে যদি আপনি এমন কাউকে পান তবে নিঃসন্দেহে সে রত্ন। এদের কখনো হারিয়ে যেতে দিতে নেই। কিন্তু হায় !! চাইলেও সবাইকে ধরে রাখা যায়না আর যদি সে নিজেই হারিয়ে যেতে চায় তাহলে তো কথাই নেই। তেমনি হারিয়ে যাওয়া এক নিঃস্বার্থ দুর্লভ বন্ধু সেঁজুতি। বন্ধু হিসেবে রিফাত এর নাম ও নিতেই হয়। শায়ানের জীবনে সকল অপ্রাপ্তির মাঝে ভীষণ এক প্রাপ্তির নাম রিফাত । ? প্রিয় উক্তি - যাকে ভালোবাসার মানুষ আছে তাকে কখনো ভালোবাসতে নেই। সব অপরাধের মাফ হয় কিন্তু কারো মনের দুর্বল জায়গায় আঘাতের কখনো মাফ হয় না! যে যত দ্রুত আপন হয়, তাকে হারানোর ভয় তত বেশি থাকে। সময় সাজিয়ে দেয় কে হবে কার কত প্রিয়। ' তুমি Strong ' এই কথাটাই একজন মানুষকে নিঃসঙ্গ করে দেয়, বন্ধুহীনে পরিণত করে ফেলে, বড্ড একা বানিয়ে দেয় ! ? অন্যান্য - চলন্তিকার বই আমার আগেও অনেক পড়া হয়েছে। তাদের প্রোডাকশন কোয়ালিটি চমৎকার। "আঁধারের যুবরাজের" বাইন্ডিং, প্রিন্টিং চমৎকার হয়েছে। সম্পাদনাও বেশ ভালো ছিল। এছাড়া বইটির ফ্রন্ট সাইজ, কালার, লাইন স্পেস, পেইজের গুণগত মান, যতিচিহ্নের ব্যবহার ইত্যাদি সন্তোষজনক। বইয়ে বানান ভুল তেমন একটা চোখে পড়েনি। বইয়ের কোয়ালিটি বলা যায় উন্নত মানের।সেক্ষেত্রে প্রকাশনীকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। ? ব্যক্তিগত মতামত - গল্পে আমার দৃষ্টিতে সমালোচনা করার মত কোনো দিক পাইনি। না লেখায় ,না কাহিনী তে , না চরিত্র গঠনে। মৌলিক বইয়ের বদৌলতে প্রাপ্তবয়স্ক কন্টেন্ট নিয়ে ও কোনো অভিযোগ নেই। ? লেখিকা প্রসঙ্গে - ''আঁধারের যুবরাজ'' লেখিকা সুস্মিতা জাফরের দ্বিতীয় উপন্যাস এবং আমার পড়া প্রথম উপন্যাস ও প্রথম বই । মুগ্ধ হয়ে পড়েছি বইটা। চমৎকার ও দক্ষ লিখন শৈলীর মাধ্যমে সবকিছু সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলেন লেখিকা। অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভকামনা লেখিকার জন্য। আগামীতে যেন আরো সুন্দর সুন্দর গল্প আমাদের উপহার দিতে পারেন সেই প্রত্যাশায় শুভ কামনা রইলো । যবনিকায় বলতে হয় , গল্পটি মূলত মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক উপন্যাস। গল্পটিতে সুখ ,দুঃখ , বিরহ , বিচ্ছেদ , পারিবারিক টানাপোড়েন , পিতামাতার অবহেলা ইত্যাদি আমাদের আশেপাশের সমাজের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই উপন্যাসের সবচেয়ে সুন্দর উপস্থাপন মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। শিশু ,কিশোর ও প্রাপ্তবয়ষ্ক লোকজন তাদের স্থান ,কাল , বয়সভেদে তাদের মনের কি ধরণের পরিবর্তন ঘটে কিংবা আচরণের কি ধরণের পরিবর্তন ঘটে তা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আপনার কবিতাগুলোর প্রশংসা যেভাবেই করিনা কেন তা কম হয়ে যাবে ,চমৎকারের উপরে কিছু থাকলে সেটা সেই লেভেলর দাবিদার । আর সবশেষ ভালবাসা শায়ানের হৃদয়ছোঁয়া চিঠির জন্য। বিঃ দ্রঃ - গল্পটি প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রাপ্তমনস্কদের জন্য প্রযোজ্য । ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
Was this review helpful to you?
or
আমাদের জীবন বড় বিচিত্র, তার চেয়েও বিচিত্র মানুষ ।সেই বৈচিত্র্যময় কাহিনীর সমাবেশ ই ঘটেছে "সুস্মিতা জাফর" এর লেখা "আধারে যুবরাজ" বই তে।এক জীবনে এত কিছু ঘটতে পারে তা হয়তো আপুর উপন্যাস টা না পড়লে জানতাম না। বই পরিচিতি: বই: আঁধারের যুবরাজ লেখক: সুস্মিতা জাফর জনরা: সামাজিক-রোমান্টিক প্রকাশনী: চলন্তিকা প্রচ্ছদশিল্পী: মো: সাদিতউজজামান প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৪ মুদ্রিত মূল্য: ৭০০ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৭২ ফ্ল্যাপ: ভালোবাসার গল্পগুলো আসলে কী রকম হতে হয়? রোমান্টিক সংলাপ, দুটি প্রাণের উথালপাথাল পাগলামো, বন্য উন্মত্ততায় হারিয়ে যাওয়া, গল্পের ভাঁজে ভাঁজে রগরগে উত্তেজনা। এর বাইরেও কি শিহরণ জাগানিয়া ভালোবাসার গল্প হয়? 'ভালোবাসি বলা যায় সহজেই। ভালো হয়তো বাসাও খুব বেশি কঠিন নয়। ভালোবেসে কাছে চাওয়া ও পাওয়াও হরদম চলছে। কিন্তু ভালোবেসে না চেয়েও কিংবা চেয়ে না পেয়েও কিংবা পেয়ে হারিয়েও ভালোবাসাকে অবিকৃত রেখে পাশে থাকার গল্প বেশি আছে কি? আঁধারের যুবরাজ... এমন একটি গল্পের সঙ্গে সহযাত্রা হয়ে যাক। প্রচ্ছদ : বইয়ের একটি গুরুত্তপূর্ণ দিক হলো প্রচ্ছদ নির্মাণ । এক্ষেত্রে এই প্রচ্ছদ টি স্বার্থক ।আবছায়া অন্ধকার যা কিনা রহস্যের জানান দিচ্ছে। নিস্তব্ধ আধারে বসে আছে উপন্যাসের দুই চরিত্র ।কিন্তু বাস্তবে কি তাদের এভাবে পাশে বসে গল্প করা হয়ে উঠেছিল? কাহিনী সংক্ষেপ: উপন্যাসের মূল চরিত্র সৌরিন বিয়ের ৬ বছরের মাথায় একদিন সকালে যে কিনা হুট করে জানতে পারে তার স্বামী সোপান তাকে রেখে চলে গেছে ,কোনো কিছু না বলেই ।এদিকে এমন ঘটনায় পরিবার পাড়া প্রতিবেশী কলিগ সবার থেকে প্রতিনিয়ত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতে সে হয়রান ।যেই বান্ধবীকে আপন ভেবে নিজের কথা শেয়ার করেছিল বিপদে তাকেও সে পায়নি পাশে,নিজের একটা আপন মানুষ পাওয়া বুঝি এত কঠিন!শৈশব থেকেই সৌরিন আর দশটা শিশুর মতো আদর যত্ন পায় নি ।বরং বেড়ে উঠেছে কঠিন শাসন আর বৈষম্যমূলক পরিবেশের মধ্যে । যায় চাওয়া পাওয়ার ছিল না কোনো দাম ।সেই ছোট্ট সৌরিন কখনো নিজেই ভেঙেছে আবার নিজেই গড়েছে নিজেকে ।অথচ সেই স্ট্রং সৌরিন এত বড় একটা ঘটনার পর আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি ।দিন দিন সবার চাপে তার সমস্যাগুলো গুলো যেনো আরো মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিলো ,এর যেনো কোনো শেষ নেই কোনো পরিত্রাণ নেই। সেই মুহূর্তে ফেসবুকে পরিচয় হয় "আধারে যুবরাজ" নামের এক আইডি র মালিকের সাথে ।যে কিনা তার সকল সমস্যা শুনতে উদগ্রীব ।দিনশেষে সৌরিন যেখানে হতাশা আর তীব্র গ্লানিতে হারিয়ে যায় সেখানে আজকাল সেই অচেনা ব্যক্তি তাকে একটু বাঁচার, মনের কথাগুলো বলার মত একটা আশ্রয় দেয় ।কিন্তু এর পরে কি হয় তার সাথে?কে ছিল সেই অচেনা ব্যক্তি? কি চায় সে?কেনো অচেনা কারো জন্য তার এত চিন্তা? তাদের এই পারস্পরিক আলাপ ,তাদের সম্পর্ক কতদূর এগিয়ে যায়?এর পরিণতি বা কি? কে ছিল এই আধাঁরে "যুবরাজ"? একই সাথে দেখা মেলে উপন্যাসের আরেক চরিত্রের সাথে "শায়ান"। জীবন যাকে কষ্ট ব্যতিত আর কিছু দেয় নি ।ছোটবেলা থেকে বাবা মা র তীব্র শাসন ,বন্ধু বান্ধব ছেড়ে নতুন ক্যান্টনমেন্ট এ ভর্তি ,প্রথম ভালোবাসাকে নিজের করে না পাওয়া,পরিবারের অগোচরে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া, আবার বিদেশে পাড়ি জমানো।সেখানের সংগ্রামী নিঃসঙ্গ জীবন ,একা কি কেউ কখনো বেঁচে থাকতে পারে?সেই একাকিত্ব ঘুচাতেই আগমন ঘটে প্রীতিতির,পরিচয় হয় অনলাইন জগতে নাম পরিচয় গোপন করা সেঁজুতির সাথে ।মিশুক আর বাচাল প্রকৃতির এই সেঁজুতির কাছেই যেনো ছিল সকল সমস্যার সমাধান ।সময় ভালই কাটছিল কিন্তু সেই সেঁজুতি ও একসময় নিখোঁজ হয়ে যায় সেঁজুতি কি আর ফিরে আসে ?নাকি একবারেই হারিয়ে যায়? দেশে ফিরেও বাবা মা র কাছে নেই তার কোনো দাম। মাসে মাসে টাকা পাঠানো ই যেনো তার একমাত্র দায়িত্ব। তবে শায়নের জীবনে কি আর কেউ এসেছিল?তার নিঃসঙ্গ জীবনে নিঃস্বার্থ ভাবে কেউ কি ভালোবেসেছিলো?কেউ কি দিয়েছিল এতটুকু আশ্রয়? পাঠ প্রতিক্রিয়া: আমি সাধারণত কোনো উপন্যাস পড়া শুরু করলে এক বসাতে শেষ করি ।কিন্তু "আধারে যুবরাজ" বইটা শুরু করার পর বইটা আমি রেখে দিয়েছিলাম ,আগ্রহ পায়নি। কিন্তু যখনই আধাঁরে যুবরাজ এর অংশটুকু আসে তখনই সেই রহস্য ভেদ করার জন্য এক বসাতে বাকি অংশ শেষ করেছি।উপন্যাসের মাঝে মাঝে এভাবে কবিতা দেওয়ার আইডিয়া টা একেবারেই ইউনিক লেগেছে আমার কাছে। আচ্ছা কে ছিল এই আধারে যুবরাজ? কেনো ছদ্মনামে নিজেকে পরিচয় দেন?সেইই কাহিনী জানার জন্যই মূলত পুরোটা শেষ করেছি। সুস্মিতা জাফর আপু মূলত ছোটো গল্পের কারিগর উনার ছোটগল্প আমি পড়েছি ।তাই প্রথম উপন্যাস হিসেবে আধাঁরে যুবরাজ প্রশংসার দাবিদার। শুরুটা ধীরে হলেও আস্তে আস্তে সবার জীবনের কাহিনীগুলো জানার পর সৌরিন,সেঁজুতি,শায়ান এদের প্রত্যেক কে অনেক আপন মনে হচ্ছিল । এখানে মূলত লেখিকা ৯০ দশক আর বর্তমান সময়ের এক সুন্দর মেলবন্ধন করেছেন ।শৈশব থেকে শুরু করে শায়ান আর সৌরিনের বাকি জীবনের জার্নি -পুরোটা সময় জুড়ে লেখিকা বেশ কিছু মেসেজ আমাদের দিয়েছেন ।দেখিয়েছেন কিছু বাস্তবতাকে ।সমাজের নানা রকম মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছেন নানা চরিত্রের আদলে। কথায় বলে "লেবু বেশি চিপলে তিতা হয়ে যায় "।কথাটা যেনো সৌরিন এর শৈশবের সাথে একেবারে মিলে যায়। একটা মানুষের প্রথম আশ্রয় তার পরিবার ।সেই পরিবারের কাছেই সে আশ্রয় খুঁজে, ভালোবাসা চায়।কিন্তু ভালোবাসার নামে নিজেকে স্ট্রং করার কারণ দেখিয়ে তার বাবা মা তাকে কেবল দূরে সরিয়ে রেখেছে।অবহেলা আর এত এত বিধি নিষেধ শুনতে শুনতে সৌরিন আবদার করাই ভুলে গিয়েছে ।আমাদের সমাজের একটা কমন চিত্র ।আমার মাঝে মাঝে মনে হয় পেরেন্টিং নিয়ে সবার আসলে একটা কোর্স করা উচিত ।একটা ছোট মানুষের সাথে কিভাবে আচরণ করা উচিত সেটা সম্পর্কে সবার প্রকৃত ধারণা থাকা উচিত।।প্রয়োজনের বাইরে করা কড়া শাসন ,একটা বৈষম্যমূলক আচরণ সেই ছোটো শিশুর উপরে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে সেটা অনেকে জানেই না । বন্ধুহীন জীবন কি আসলে কল্পনা করা যায়? কিন্তু প্রকৃত বন্ধুর দেখা আমরা কয়জন পাই?সে হিসাবে শায়ান অনেক ভাগ্যবান যে কিনা এত ভালো ভালো বন্ধু পেয়েছিল।তাদের বন্ডিং গুলো আমার অনেক ভালো লেগেছে ।মাধ্যমিক পরে অন্য প্রতিষ্ঠানের চলে যাওয়ার অংশটুকু আমাকে বেশি টাচ করেছিল হয়তো এইজন্যে যে আমি নিজেও এক সময় এই পর্যায় পার করেছি। বন্ধু বান্ধব ছেড়ে দূরে পড়াশুনা করার এই জার্নিটা যতটা না কষ্ট দেয় তার থেকেও বেশি পোড়ায় প্রিয়জন থেকে দূরে থাকার জন্য । বৈবাহিক সম্পর্কে একে ওপরের প্রতি ভালোবাসার সাথে সাথে বিশ্বাস, সম্মান ,সবকিছুই দরকার ।আমরা নিজেদের বাইরের দিক দিয়ে যদি শক্ত দেখাই না কেনো দিনশেষে নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে আমরা বড় অসহায় ।একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল ।আমাদের ভালো লাগা মন্দ লাগা সেই মানুষটা কে কেন্দ্র করেই ঘুরে। কিন্তু সেই মানুষটাই যখন বিশ্বাস এর মর্যাদা ভঙ্গ করে , অসম্মানিত করে তখন কেমন লাগে আসলে? বিশ্বাস ভঙ্গের এই কষ্ট টুকুবোধয় পৃথিবীর অন্য সব কষ্টকে হার মানায় ।ভেতর থেকে নিজেকে ভেঙ্গে দেয়।সোপান চলে যাওয়ার পরের সময় টুকু ,সোপান না থেকেও সব জায়গায় সৌরিন এর হেলুসিনেশন ।বার বার অতীত এর কথা মনে পড়ে যাওয়া। আশেপাশে মানুষ দের মানসিক অত্যাচার ।এক কথায় সৌররিনের কষ্টটুকু লেখিকা চোখের সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন । আবার প্রবাস জীবন নিয়ে অনেকের মনেই অনেক ফ্যান্টাসি কাজ করে ।সেখানে যাওয়া মানেই জীবনকে সেট মনে করেন ।অথচ সেই ব্যক্তি জানে আপনজন ছেড়ে প্রিয় মানুষদের ফেলে অচেনা অজানা একটা শহরে বেঁচে থাকা কি নিদারুণ কষ্টের ।এখানে আছে একাকীত্বের ছোবল ,আছে সঙ্গীহীনতার কালো অধ্যায় ।এই সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়গুলো লেখিকা খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন । তবে শেষ অংশে এসে এই চমক এর জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না ।এই চুম্বক অংশ জানার জন্য হলেও সবাই এই বইটি প্লিজ পড়ে শেষ করবেন । চরিত্র বিশ্লেষণ: সৈরিন: উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র ।সেই সাথে আমার ভীষন পছন্দের একজন ।ছোটো বেলা থেকে যে কিনা বড় হয়েছে অন্য দশটা শিশুর থেকে আলাদাভাবে ।সেই ছোট্ট সৌরীন তার শৈশব থেকেই নিজেকে গড়ে তুলেছে স্ট্রং আর আত্মনির্ভরশীল হিসেবে।জীবনে বহু পথ নানা প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়েছে একাই।এই চরিত্র থেকে অনেক শিক্ষাও গ্রহণ করার আছে ।তবে ভাগ্যের কি নির্মাণ পরিহাস। সেই শক্ত সৌরিন যেভাবে প্রিয় মানুষের থেকে আঘাত পেয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে যেয়েও আবার নিজেকে সামলে নেয় এই অংশটুকু আসলেই অনেক অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল ।তবে তার কষ্টটুকু যেনো খুব গভীরভাবে অনুভব করতে পেরেছি । শায়ান :আলোচ্য উপন্যাসের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ।আমরা নায়ক হিসেবে সবসময় পারফেক্ট কাউকে চাই ।যে কিনা কথায় চলনে ব্যবহারে হবে সবার থেকে আলাদা মার্জিত সবথেকে ফিট।কিন্তু বাস্তব জীবনে তেমন টা আসলে হয়না,লেখিকা হয়তো সেটাই দেখিয়েছেন ।আমাদের প্রত্যেকের জীবনে উত্থান পতন আছে ।ভালো মন্দ মিলেই আমরা ।তাই সেইদিকে বিচারে শায়ান শুদ্ধ কোনো পুরুষ নয় বরং হাসি আনন্দ দুঃখ, ভুল এই সবকিছু মিলেই শায়ান চরিত্রকে লেখক সাজিয়েছেন । সায়ানের শৈশব অন্য বাচ্চাদের মত মসৃণ ছিল না ।পরিবার ই তাকে সেই কমফোর্টজোনটা দেয়নি ,আগলে রাখে নি ভালোবাসায় তার শৈশব কিংবা কৈশোরের সময়টুকু ছিল রীতিনীতি , বিধি নিষেধের বেড়াজালে বন্দী ।পরিবারে এই বন্দী জীবন থেকে সে তাই মুক্তি চেয়ে এসেছে প্রথম থেকেই ।অথচ তার ই বোনের সাথে পরিবারের আচরণ ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত ।ছোটবেলা থেকে মা বাবার সেই পক্ষ পাতিত্ত দেখে মনে মনে কষ্ট সয়ে গেছে ।রুপা কিংবা তানজিলা কাঙ্ক্ষিত কাউকেই সে পায়নি ।কৈশোরের প্রথম ভালোবাসাও তাকে ধরা দেয় নি ,বরং দিয়েছে তীব্র যন্ত্রণা ।প্রবাসে পারি জমালে সেখানে তার নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র সঙ্গী ছিল প্রিতীতি। যায় কাছে নিজের মনের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছিল বিনিময়ে ভালোবাসা পেয়েছিল কি? সেঁজুতি:উপন্যাসে আরো অনেকের মাঝে আমার প্রিয় আরেকটি চরিত্র ।এই শহরে আমার সবাই নিজের একটা মানুষ চাই ।যাকে নিজের সবটুকু বলা যায় ।আমাদের আশেপাশে এত মানুষ এর ভীড়ে এমন মানুষ খুব কম আছে যারা আমাদের মন ভালো করে দিতে পারে।আমাদের সমস্যা গুলো যারা নিমিষেই সমাধান করে ফেলতে পারে ।সত্যি কথা বলতে উপন্যাসের মাঝের অংশে এসে আমি শুধু এই অপেক্ষাতেই ছিলাম যে কখন আবার সেঁজুতির দেখা পাবো ।সেঁজুতি কে ভীষন মিস করেছি । আমার কাছে লাগা কিছু অসঙ্গতি: ?প্রথমত উপন্যাসের বেশ কিছু অংশে ইংরেজি ওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়েছে যেটা আমার মনে হয় বাংলা করে লিখলে আরো ভালো লাগতো । ?আর কবিতার অংশটুকু একদম ব্যতিক্রমী চিন্তা ধারার পরিচয় দিলেও উপন্যাসের কাহিনী অনুপাতে কবিতা গুলো সাজালে আরো ভালো লাগতো বলে আমার মনে হয় । ?বয়স ৫২ তে এসে শায়ানের ২১ বছরের কারো সাথে লিভ টুগেদার এই অংশটুকু আমার ভীষন উইয়ার্ড লেগেছে । ?রূপার অংশটুকু ক্লিয়ার না আমার কাছে কিছু জায়গায় । যায় কিনা ভালোবাসার মানুষ আছে ,কাল বাদে যার সাথে যে পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করে ফেলেছে সে কেনো পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার দিন শায়ান এর সাথে নিজের জীবনের ঘনিষ্ঠ একটি মুহূর্ত তৈরি করলো? ?উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে শায়ানের কাছে আমার প্রত্যাশা ছিল বেশি ।কিন্তু আমাকে বার বার মনঃক্ষুণ্ণ করেছে তার অধিকাংশ কার্যকলাপ ।একজন মানুষ জীবনে কতবার প্রেমে পড়তে পারে? ধোঁকা খাওয়ার পরেও কিভাবে একই পথে পা বাড়ায়?এতগুলো নারীর সান্নিধ্য যাওয়ার ব্যাপার টি আমার ভালো লাগেনি।যদিও তার নিঃসঙ্গ জীবন এর জন্যে অনেক টা দায়ী তবুও । ?আর সোপান এর চরিত্র টা একেবারেই পাঠকদের কাছ থেকে আলাদা করা হয়েছে ।সে কোথায় গিয়েছিল কেনো গিয়েছিল ,যাকে ফেলে চলে গেছিলো ডিভোর্স কাগজ পর্যন্ত পাঠিয়ে দেবার পর কেনো সেই মানুষ টার কাছেই ফিরে আসার তাগিদ অনুভব করলো এটা একটা বড় ধোঁয়াশা হিসেবেই রয়ে গেছে ।এতদিনের ভালোবাসার সম্পর্কে কিসের অভাব তাকে সঙ্গিনীর সাথে এমন প্রতারণা করতে উদ্বুদ্ধ করলো !তবে কি আসলেই ভালোবাসার মানুষকে পেতে নেই? ?আর সৈরিনীর শেষ সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি কিছু বলবনা ।এত কিছু সহ্য করেও সেই আত্মমর্যাদা সম্পন্ন নারী। যে ছোটবেলা থেকে নিজেকে স্ট্রং হিসেবে গড়ে তুলেছে , সেই সৌরীন জীবনে এত বড় একটা ধাক্কা খাওয়ার পরেও সেই জঘন্য বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েও তার এমন সিদ্ধান্তে আসা আসলে কতটুকু কাম্য?তবে সেটা কোথাও না কোথাও আমার কাছে তার আত্মসম্মান হারিয়ে ফেলার মতো মনে হয়েছে ।যদিও আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একজন মেয়ে ঠিক এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হতো বলে মনে করি । পুরো উপন্যাস জুড়ে শায়ান এর প্রতি অনেক জায়গায় বিরক্ত লেগেছিলো। কিন্তু শেষ অংশে এসে সায়ানের জন্যে মন টা ভীষণ পুড়েছে,একটা মানুষ এক জীবনে কেবল কষ্ট ই পেয়ে গেলো ,সুখ বুঝি এতই দুষ্প্রাপ্য কারো কারো জীবনে !জীবনের কিছু কিছু ঘটনা আমরা হয়তো চাইলেও পরিবর্তন করতে পারবোনা ,মেনে নেওয়া কিংবা ভালোবেসে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া ই হয়তো একমাত্র সমাধান । লিখনশৈলী : লেখকের সবচেয়ে বড় গুন হলো তার লেখার মাধ্যমে পাঠকের মন ছুঁয়ে যাওয়া। সে হিসেবে লেখিকা স্বার্থক ।ভালো লাগার সব উপাদান ই তার লেখায় উপস্থিত ।সহজ, সাবলীল ,লেখা মাত্রই তা পাঠক মনে ভালো জায়গা করে নেয় ।আমার ভালো লেগেছে । প্রোডাকশন কোয়ালিটি ও অন্যান্য : বই এর প্রোডাকশন কোয়ালিটি অনেক ভালো ছিল।কোথাও পড়তে গিয়ে সমস্যা হয় নি। বই এর কাগজ, বাঁধাই, সব একদম ঠিকঠাক ছিল। দুই তিনটা জায়গা ছাড়া তেমন কোনো বানান ভুল চোখে পড়ে নি ।এক্ষেত্রে পড়ে আরাম পেয়েছি। প্রিয় কিছু উক্তি: ?"সব অপরাধের মাফ হয় কিন্তু কারো মনের দুর্বল জায়গায় আঘাতের কখনো মাফ হয় না।" ?"যে যত দ্রুত আপন হয়, তাকে হারানোর ভয় তত বেশি থাকে।" ?"সকল সুযোগ হাত পেতে গ্রহন না করাই মনেহয় বুদ্ধিমানের কাজ।" পরিশিষ্ট: মোটকথা এই উপন্যাসে আছে কাছে আসার গল্প, আছে বিশ্বাস ঘাতকতা ,আছে কাছের মানুষদের থেকে পাওয়া কষ্ট , আছে অপ্রাপ্তি, অবহেলার আড়ালে প্রকৃত ভালোবাসার কথা ।এক কথায় পুরোটা উপন্যাস যেনো আমাদের সমাজের ই একটা ক্ষুদ্র অংশ ।তবে এই উপন্যাস টা অবশ্যই প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ।কাহিনীর প্রয়োজনে এমন বেশ কিছু অংশ লেখিকা বর্ণনা করেছেন যেটা প্রাপ্তবয়স্ক বা প্রাপ্তমনষ্ক ছাড়া অন্যদের পড়তে একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে বলবো।
Was this review helpful to you?
or
#আঁধারের_যুবরাজ_বুক_রিভিউ বই: আঁধারের যুবরাজ লেখক: সুস্মিতা জাফর প্রকাশনী: চলন্তিকা প্রচ্ছদ: মো. সাদিতউজজামান মুদ্রিত মূল্য: ৭০০৳ গল্পটা এমন এক যুবরাজের যার সবকিছু থেকেও নেই পরিপূর্ণ স্বাধীনতা। এতো এতো সুযোগ-সুবিধা আর বিলাসিতার মাঝে কড়া শাসন নামের পরাধীনতার শেকলে বাঁধা তার শৈশব, কৈশোর। কড়াকড়ির আঁধারে মোড়া জীবন। বলা হয়ে থাকে, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। এই কথা যেমন ভালোবাসার বেলায় সত্য, তেমনি শাসনের বেলাতেও। এই স্নেহ আর শাসনের মাঝে সঠিক ব্যালেন্স করাটা প্যারেন্টিং এর অংশ। খুব বেশি স্নেহ, আহ্লাদ আর আবদার পূরণের জন্য যেমন সন্তান 'আদরে বাঁদর' হয়ে ওঠে, তেমনি অতি শাসনের বেলাতেও হিতের বিপরীত হতে পারে। স্নেহ আর শাসনের ব্যালেন্সটা বয়স, মনঃস্তত্ব ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির সাথে সাথে পরিবর্তনশীল। শৈশব কৈশোরে সন্তানের সবচাইতে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল হলো বাবা মা, খুব বেশি শাসন ঐ বয়সটায় সন্তানের সুস্থ স্বাভাবিক মানসিক বিকাশে বাধার সৃষ্টি করে। এই কথাগুলো পুত্র সন্তান ও কন্যা সন্তান উভয়ের বেলায় একই। কিন্তু 'ব্যাড প্যারেন্টিং' এর আরো এক নজির দেখা যায় গল্পের অন্য আরেক প্রধান চরিত্র সৌরিনের ক্ষেত্রে। তাকে ছোট থেকেই 'মেন্টালি স্ট্রং' হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে যখন আদর, স্নেহ ও মমতার সবচাইতে বেশি প্রয়োজন ছিল, তখন সেইসব কিছু বঞ্চিত করা হয়েছে। সন্তানদের মাঝে বাবামায়ের সৃষ্ট এই বিভেদ, সৌরিনকে দিয়েছে একটা অসুস্থ অস্বাভাবিক শৈশব। ফলাফলস্বরূপ আস্থা তৈরির জায়গাটা পরিণত হয়েছে ফাঁপা গহ্বরে। নিজের জগতের বাহিরে সে তৈরি করে নিয়েছে 'স্ট্রং মেন্টালিটি' নামের এক শক্ত খোলস। কিন্তু ভেতরটা ঠিক আগের মতো কোমল রয়ে গেছে। স্বামী সোপানের সাথে সৃষ্ট দূরত্বে ভেতরে ভেতরে প্রতিনিয়ত গুমড়ে মরেছে। সম্পর্কের ভাঙনে সন্দেহের আঙুল একটা ভরসাস্থল খুঁজে ফিরেছে, যার সাথে হৃদয় মেলে মনের কথা বলা যায়, মনের ভার হালকা করা যায়। যে তাকে পুরোপুরি বুঝবে। সে সবার সামনে যেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে, তেমন ভাবে নয়। বরং সত্যিকার অর্থেই তাকে বুঝবে। একদিন সৌরিনের কাছে একটি ম্যাসেজ এলো, আঁধারের যুবরাজ নামক এক ফেসবুক আইডি থেকে। কে সেই আঁধারের যুবরাজ? শুরু হয় কথোপকথন, রাত পেরিয়ে হয় ভোর। হাঁটি হাঁটি পা পা করে গড়ে ওঠে বন্ধুত্বের সম্পর্ক, অনুচ্চারিত হৃদয়ের বন্ধন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী দেখা মেলে আড়ালে থাকা মানুষটার? এটাই ভালো বেশি কাছে না আসা, দূরে দূরে থাকা; রহস্যগুলো একটু হলেও বাক্সে পুরে রাখা। ~ মোহভঙ্গ (সুস্মিতা জাফর) গল্পের আরেক অধ্যায়ে আছে শায়ান। পাশ্চাত্য সভ্যতা ও জীবনযাপনের 'লিভ টুগেদার রিলেশন' এ অভ্যস্ত প্রজন্মের সাথে পরিচিত পাঠকের কাছে তার চরিত্রটি ধরা দেবে 'প্লে বয়' হিসেবে। ব্যাপারটা হয়তো এমন মনে হবে, সে যাকেই দেখছে তাকেই ভালোবেসে ফেলছে। ক্রমাগত নিত্যনতুন অনিয়ন্ত্রিত সম্পর্কে জড়িয়ে যায় শায়ান। সেইসব মেয়েরাও তার ব্যক্তিত্ব আর বাহ্যিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে মোহমুগ্ধ। যার ফলে শায়ানের জীবনে দেখা মেলে অসংখ্য নারী চরিত্রের। এই যে ভালো লাগা, শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। এর মাঝে গভীরতা কতটুকু? কতটুকুই বা নির্ভেজাল? দিনশেষে সত্যিকারের ভালোবাসা খুঁজে ফেরে ভালোবাসার কাঙাল। সত্যিকার ভালোবাসা তো এমন নয়। সত্যিকারের ভালোবাসায় সবকিছুর আগে প্রয়োজন মনের মিল, খুব সুন্দর একটা বোঝাপড়া আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক। শেষ পর্যন্ত কি শায়ান খুঁজে পায় নিঃস্বার্থ ভালোবাসা? নাকি পেয়েও হারিয়ে ফেলে বাস্তবতার জটিলতায়? কিছু মানুষ পায় না আবার কিছু মানুষ পেয়েও হারায়। পেয়ে, না পাওয়ার দূরত্বে; তারা হৃদয় ভর্তি হাহাকার তাড়ায়! ~ নিশ্চুপ আঁধার (সুস্মিতা জাফর) 'আঁধারের যুবরাজ' কেবল মানবমানবীর গল্প বলে না, এখানে আছে প্রবাসে ক্যারিয়ার গড়ার লড়াই, ভিন দেশে মানিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা। আছে বন্ধুত্ব, পারিবারিক টানাপোড়েন, সম্পর্কের বোঝাপড়া। চরিত্রদের মনঃস্তত্ব লেখকের সাবলীল গল্প বলার ধরণে যেন ভীষণ স্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছিল। আর প্রতিটি অধ্যায়ে যুক্ত হওয়া ছোটবড় বিভিন্ন কবিতার অর্থপূর্ণ পঙক্তিগুলো যেন উপন্যাসটিতে যুক্ত করেছে ভিন্ন মাত্রা। তবে গল্পের স্বার্থে যুক্ত হওয়া কিছু আপত্তিকর বর্ণনার জন্য বইটিতে 'অপ্রাপ্তমনষ্কদের জন্য নয়' ধরণের সতর্কবার্তা থাকলে ভালো হতো।
Was this review helpful to you?
or
❝কিছু মানুষ পায় না আবার কিছু মানুষ পেয়েও হারায়। পেয়ে, না পাওয়ার দূরত্বে ; তারা হৃদয় ভর্তি হাহাকার তাড়ায়।❞ ~ সুস্মিতা জাফর ভালোবাসা! শুদ্ধতম এক অনুভূতির নাম! কিন্তু কাউকে ভালোবাসলেই কি ভালোবাসার মানুষের সাথে একসঙ্গে থাকার গল্প সৃষ্টি হয়? কেউ হয়তো ভালোবাসার মানুষকে পায় আবার কেউ হয়তো পেয়েও হারায়। কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসার অনুভূতি কি কখনো হারিয়ে যায়? মনের গোপন প্রকোষ্ঠে সেই অনুভূতির বাস তো চিরস্থায়ী। তেমনই এক ভালোবাসার গল্পকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে লেখক সুস্মিতা জাফরের লেখা সামাজিক-রোমান্টিক জনরার উপন্যাস ❝আঁধারের যুবরাজ❞। ◾কাহিনী সংক্ষেপ : লেখক সৌরিন আলমের ইনবক্সে 'আঁধারের যুবরাজ' নামক ফেসবুক আইডি থেকে একটি মেসেজ আসার মধ্য দিয়ে কাহিনীর সূত্রপাত ঘটে। কোনো এক অজানা কারণে স্বামী সোপানের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় যখন সৌরিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তখনই তার জীবনে আগমন ঘটে আঁধারের যুবরাজের। ফেসবুক আইডিটি দেখতে ফেক মনে হলেও সৌরিন 'আঁধারের যুবরাজ' ছদ্মনামের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষটির সাথে বিভিন্ন কারণে কথা না বলে থাকতে পারে না। কিন্তু সোপানের সাথে সৌরিনের সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার কারণ কী? কখনো কি সেই দূরত্ব মিটবে না-কি সৃষ্টি হবে স্থায়ী বিচ্ছেদের? 'আঁধারের যুবরাজ' ছদ্মনামের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সেই মানুষটির আসল পরিচয় বা কী? তার সাথে সৌরিনের সম্পর্কের সমীকরণ বা কেমন হবে? অন্যদিকে, নবম শ্রেণিতে পড়া শায়ানের জীবন বাবা-মায়ের কড়া শাসনে আবদ্ধ থাকলেও সে মুক্ত বাতাসে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়। হঠাৎ করে তার জীবনে আগমন ঘটে সদ্য এস.এস.সি. পরীক্ষা দেয়া ফুফাতো বোন রূপার। বয়সে বড়ো হলেও রূপার জন্য মনের মধ্যে ভালোবাসা নামক অনুভূতির সন্ধান পায় শায়ান। এই সম্পর্কের পরিণতি কী হয়? বাবা-মায়ের শাসনের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেতে একসময় শায়ান পাড়ি জমায় আমেরিকায়। ধীরে ধীরে অসংখ্য নারীর আগমন ঘটে তার জীবনে। সেই তালিকায় ধীরে ধীরে যুক্ত হয় তানজিলা, প্রতীতি, সেঁজুতি, ফারসিয়া, ওসিনসহ আরও অনেকে। কিন্তু তাদের সাথে শায়ানের সম্পর্কের সমীকরণ কেমন হয়? কারো কাছে কি সে তার কাঙ্ক্ষিত ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছিল? কেমন ছিল তার প্রবাস জীবনের দিনগুলোর ল'ড়াই? বাবা-মায়ের শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে সত্যিই কি সে ভালো ছিল? সৌরিনের জীবনের গল্পের সাথে শায়ানের জীবনের গল্পের যোগসূত্র বা কী ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে পাঠককে হাতে তুলে নিতে হবে ❝আঁধারের যুবরাজ❞ বইটি। ◾পাঠপ্রতিক্রিয়া: আঁধারের যুবরাজ! নামকরণই যেন বর্ণনা করছে রহস্যের মায়াজালে আবৃত কোনো এক ব্যক্তির জীবনগাথা। কৌতূহলোদ্দীপক শব্দটি আমার মনের কোণে যে ঔৎসুক্য সৃষ্টি করেছিল তা নিবারণের মানসেই বইটি হাতে তুলে নিয়েছিলাম। যে জাদুকর বই উপহার দিয়ে অসংখ্য বইপ্রেমীর মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেছিলেন তার জীবন কি সুখের ছিল? না-কি কন্টকাকীর্ণ পথ তাকেও পাড়ি দিতে হয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই ব্যস্ততম জীবনেও খুঁজে নিয়েছিলাম এক খণ্ড অবসর, বইটির সাথে কাটিয়ে দিয়েছিলাম বেশ খানিকটা সময়। বইটি পড়া শেষ করার পরে পাঠপ্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে হয়ে পড়েছিলাম অনুভূতিশূন্য। বইটি শুধু এক জাদুকরের জীবনীগ্রন্থ নয়। এর পরতে পরতে লেখক লিপিবদ্ধ করেছেন জীবনযুদ্ধের এক চিরপরিচিত আখ্যান কিন্তু ভিন্ন আঙ্গিকে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ও বয়সভেদে মানুষের জীবনদর্শন, মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন তুলে ধরা হয়েছে চমৎকারভাবে। লেখক বইটিতে বর্ণনা করেছেন প্রবাস জীবনের বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই। দুইটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ের ও দুইজন ভিন্ন মানুষের গল্পকে লেখক সমান্তরালে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে এক বিন্দুতে যুক্ত করেছেন নিপুণ কৌশলে। সাধারণত পৃথিবীর সব পিতা-মাতাই সন্তানের ভালো চায়। কিন্তু সত্যিই কি তাদের সব সিদ্ধান্ত সন্তানের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে? যদি আনতো তাহলে তো পৃথিবীতে ‘ব্যাড প্যারেন্টিং’ শব্দগুচ্ছর অস্তিত্বই থাকতো না। বাবা-মায়ের ভুল সিদ্ধান্ত যে সন্তানের জন্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ যে সন্তানের জন্য কতটা কষ্টদায়ক হতে পারে তারই চমৎকার উদাহরণ যেন এই উপন্যাসটি। তবে বাবা-মায়ের আচরণ হয়তো অনেক সময় পরিবেশ-পরিস্থিতি ও তাদের চিন্তাভাবনার উপর নির্ভরশীল হয়! লেখকের লেখনশৈলী চমৎকার। বেশ সহজ ও সাবলীল বর্ণনা ছিল সম্পূর্ণ উপন্যাস জুড়ে। উপন্যাসের কাহিনী সাধারণ হলেও লেখক তা উপস্থাপন করেছেন অসাধারণভাবে। কাহিনীর সূচনাতেই বইয়ের প্রতি যে আকর্ষণ অনুভব করেছিলাম তা শেষ পর্যন্ত বর্তমান ছিল। তবে কাহিনীর প্রয়োজনে উপন্যাসে কিছু ১৮+ ঘটনার বিবরণ এসেছে। আমেরিকার প্রেক্ষাপটে সেগুলো সাধারণ বিষয়ে হলেও আমি সেই অংশগুলো পড়তে অস্বস্তি অনুভব করছিলা৷ এটুকু না থাকলেও মনে হয় তেমন কোনো ক্ষতি হতো না। ◾চরিত্রকথন : উপন্যাসের প্রধান চরিত্র শায়ান ও সৌরিন। দু'জনেই ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে বড়ো হলেও কোথাও গিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের মিল লক্ষ্য করা যায়। বাবা-মায়ের অতিরিক্ত শাসন ও সন্তানদের সাথে তাদের আচরণগত পার্থক্যের কারণে নিজেদের ইচ্ছের মূল্যায়ন করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লড়াই দু'জনকেই করতে হয়েছে একা। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সৌরিনের চিন্তাভাবনা ও লড়াই করার মনোভাব বেশ ভালো লেগেছে। প্রথমদিকে শায়ান চরিত্রটির জন্য কোথাও একটু কষ্ট অনুভব করলেও পরবর্তীতে একাধিক সুন্দরী নারীর প্রতি তার আকর্ষণ মনে কিছুটা বিরক্তির উদ্রেক ঘটিয়েছে। অবশ্য র'ক্ত-মাংসের মানুষের চরিত্র দোষ-গুণ মিলিয়েই হয়। প্রধান দুই চরিত্র ছাড়াও উপন্যাসের কাহিনীর প্রয়োজনে অসংখ্য চরিত্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় বইটিতে। তাদের কেউ হয়তো মুখে হাসি ফুটিয়েছে, আবার কেউ হয়তো মন খারাপ করিয়েছে, অন্যদিকে আবার কেউ মনে রাগের জন্ম দিয়েছে। তবে উপন্যাসে আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র সেঁজুতি নামক পরোপকারী মেয়েটি। চরিত্ররা ভালো হোক বা খারাপ, হঠাৎ করেই কারো উপস্থিতি বা প্রস্থান ঘটেনি। প্রতিটি চরিত্রকেই লেখক পরিপূর্ণতা দান করেছেন। তবে সোপান চরিত্রের আরেকটু উপস্থিতি প্রত্যাশা করেছিলাম। ◾অন্যান্য : বইটি প্রকাশিত হয়েছে 'চলন্তিকা' প্রকাশনী থেকে। বইটির প্রোডাকশন, বাঁধাই, পৃষ্ঠার মান সবকিছুই চমৎকার। বইয়ের সম্পাদনাও যথেষ্ট ভালোভাবে করা হয়েছে। তবে অল্প কিছু টাইপিং মিস্টেক রয়ে গিয়েছে। তবে তা বইটি পড়ার ক্ষেত্রে কোনোরূপ বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। বইয়ের প্রচ্ছদ চমৎকার ও আকর্ষণীয়। নামকরণও যথার্থ ও কাহিনীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়েছে। বইটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে বেশ কিছু কবিতা, যা বইটিতে আলাদা মাত্রা যুক্ত করেছে। কবিতাগুলো যুক্ত না করলে হয়তো বইয়ের কলেবর ও মূল্য কিছুটা কম হতো। কিন্তু কবিতাগুলো পড়তে আমার বেশ ভালো লেগেছে। সর্বশেষ বলা যায়, নব্বইয়ের দশকের কৌশরের প্রেম, বর্তমান যুগের অনলাইন প্রেম, বিচ্ছেদ ও প্রতারণা, হৃদয়ের হাহাকার, পারিবারিক বন্ধন ও টানাপোড়েন, বন্ধুত্ব, বাংলাদেশ ও আমেরিকার জীবনযাত্রা, পিতামাতার অবহেলা, ভালোবাসা ইত্যাদি সবকিছুর সংমিশ্রণে সৃষ্ট চমৎকার এক উপন্যাসের নাম ❝আঁধারের যুবরাজ❞। ★বই পরিচিতি : বইয়ের নাম ~ আঁধারের যুবরাজ লেখক ~ সুস্মিতা জাফর প্রচ্ছদ ~ মো. সাদিতউজজামান প্রকাশনী ~ চলন্তিকা প্রকাশন প্রথম প্রকাশ ~ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ জনরা ~ সামাজিক-রোমান্টিক উপন্যাস মুদ্রিত মূল্য ~ ৭০০ টাকা
Was this review helpful to you?
or
দোরগোড়ায় কড়া নেড়েছিল ভিখারি বাড়িয়ে শূন্য থালার ছায়া; ঘরে কিছু ছিল না দেওয়ার মতো ব্যতিরেকে কয়েক মুঠো মায়া। ~সুস্মিতা জাফর। বলছিলাম লেখক সুস্মিতা জাফর এর রোমান্টিক- সামাজিক উপন্যাস ❝ আঁধারের যুবরাজ ❞ এর কথা। ★বই বৃত্তান্ত: -------------------- নাম: আঁধারের যুবরাজ লেখক: সুস্মিতা জাফর প্রচ্ছদ: মো. সাদিত উজ জামান জনরা: সামাজিক-রোমান্টিক উপন্যাস পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৭২ প্রকাশনী: চলন্তিকা মুদ্রিত মূল্য: ৭০০৳ প্রকাশকাল: বইমেলা ২০২৪ ★নামকরণ ও প্রচ্ছদ : ------------------------------ ❝ আঁধারের যুবরাজ ❞ নামটি ভিন্নধর্মী। নামটি শ্রবণ হওয়ার পরই প্রশ্ন আসে অন্তকোণে কে এই আঁধারের যুবরাজ? তার জীবন কি অন্ধকারে আচ্ছন্ন? বইটি পড়ার পর একজন পাঠক উপলব্ধি করবে নামটি বইয়ের জন্য পুরোপুরি যৌক্তিক। ❝ আঁধারের যুবরাজ ❞ নামের ছদ্মনামের শায়ানের জীবনকে কেন্দ্র করে এবং শায়ানের সাথে জড়িত আরো অনেক চরিত্র নিয়ে উপন্যাসটি আবর্তিত। সাদিতউজজামান ভাইয়ার করা প্রচ্ছদটি উপন্যাসের কাহিনীর সাথে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। একজন নারী ও পুরুষ অবয়বের সাথে যেন চারপাশে রঙধনু নেমে এসেছে। গাঢ় রঙের আলোর ছটা প্রচ্ছদকে বেশ আকর্ষণীয় করেছে। ★ফ্ল্যাপ: -------------- ভালোবাসার গল্পগুলো আসলে কী রকম হতে হয়? রোমান্টিক সংলাপ, দুটি প্রাণের উথালপাথাল পাগলামো, বন্য উন্মত্ততায় হারিয়ে যাওয়া, গল্পের ভাঁজে ভাঁজে রগরগে উত্তেজনা। এর বাইরেও কি শিহরণ জাগানিয়া ভালোবাসার গল্প হয়? 'ভালোবাসি বলা যায় সহজেই। ভালো হয়তো বাসাও খুব বেশি কঠিন নয়। ভালোবেসে কাছে চাওয়া ও পাওয়াও হরদম চলছে। কিন্তু ভালোবেসে না চেয়েও কিংবা চেয়ে না পেয়েও কিংবা পেয়ে হারিয়েও ভালোবাসাকে অবিকৃত রেখে পাশে থাকার গল্প বেশি আছে কি? আঁধারের যুবরাজ... এমন একটি গল্পের সঙ্গে সহযাত্রা হয়ে যাক। ফ্ল্যাপটি লিখেছেন কথাসাহিত্যিক ফৌজিয়া খান তামান্না। ★পাঠ অনুভূতি: ------------------------- ❝ আঁধারের যুবরাজ ❞ একটি রোমান্টিক- সামাজিক উপন্যাস। আঁধারের যুবরাজ যে কিনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষকে বই উপহার দেয় কিন্তু আঁড়ালে থাকে। গল্পটা আঁধারের যুবরাজের যার নাম শায়ান তালুকদার । গল্পটা সৌরিন আলমের যিনি একজন লেখক। শায়ানের জীবনের ঘটনাপ্রবাহ এবং সৌরিনের জীবনের ঘটনাপ্রবাহ দুটোই সমান্তরালে এগিয়েছে যা বইটিকে অন্যমাত্রা রূপ দিয়েছে।লেখক দারুণভাবে দুটো মানুষের জীবনের গল্প সমান্তরালে লিখেছেন। সমাজের বিভিন্ন অসংগতি, বৈষম্যগুলো উঠে এসেছে চরিত্রদের মাধ্যমে যা বাস্তবতার আদলে লিখিত।মূলত, চারপাশের ঘটনাগুলোই পুঞ্জিভূত হয়েছে বইতে।পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল এমন ঘটনা যেন কোথায় শুনেছি।পারিবারিক ও সামাজিক বেশকিছু ঘটনার মেলবন্ধন রয়েছে। কিশোর বয়সের আবেগ অনুভূতি চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে ।স্টিকার জমানো, জমানো টাকায় বই কেনা, হুটহাট প্রেমে পড়ে যাওয়া। দাম্পত্য সম্পর্ক আর সব সম্পর্ক থেকে ভিন্ন।হুট করে একজন বিচ্ছেদ ঘটালে অন্যজনের উপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে। এক ছাদের নিচে থাকতে থাকতে পরম নির্ভরশীলতার সৃষ্টি হয়।সামাজিক, মানসিকভাবে নিদারুণ কষ্ট পোহাতে হয়। শক্ত হৃদয়ের অধিকারী একজন মানুষের ও ভিতরে একটা নরম মন থাকে। সেও নিঃসঙ্গ অনুভব করে।চায় তার পাশে কেউ থাকুক।কেউ তাকে আগলে রাখুক। একজন নারী যতই স্বাবলম্বী হোক তবুও একা বাসা নিয়ে থাকাটা যেন রীতিমতো অসম্ভব। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও অসম্মানিত হওয়া, প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া। এ ব্যাপারগুলো ভীষণ বাস্তব।পড়ার সময় একসাথে রাগ এবং কষ্ট দুটোই হচ্ছিল। সন্তানের মধ্য বৈষম্য আমাদের প্রতিটি ঘরের চিত্র যেন। কোথাও কন্যা সন্তান অবহেলিত হয় আবার কোথাও পুত্রসন্তান। মা- বাবা হয়তো কোনোদিন উপলব্ধি করতেও পারেন না , বৈষম্যমূলক আচরণে কতটা হীনমন্যতায় ভোগে একজন সন্তান।নিজেকে অপাংত্তেয়, অনাহুত ভাবে। সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে অনেক মা-বাবাই অতিরিক্ত চাপে রাখেন । শুধুই পড়াশুনা আর কিছুতে মনোনিবেশ করা যাবে না। এতে মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হয় কেউ কেউ। কেউ আবার বিপথে পা বাড়ায়। ❝ আঁধারের যুবরাজ ❞ আমার কাছে বিশেষ হওয়ার আরেকটি কারণ রয়েছে। সুস্মিতা আপু আমার "ফারসিয়া" নাম একটি চরিত্রের নাম দিয়েছেন।যদিও চরিত্রটি ইতিবাচক কিছু করেনি। কিন্তু পাঠক হিসেবে বইটি আমার কাছে বিশেষ হয়ে থাকবে। ★চরিত্রকথন: -------------------- ?শায়ান: কিশোর বয়স থেকে প্রাপ্তবয়স্ক পুরো সময়টুকুই বইয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। কড়া শাসনে বড় হওয়া শায়ান মা- বাবার অগোচরেই অনেককিছুতে জড়িয়ে পরে। আবেগী, খামখেয়ালি চরিত্রের শায়ানের কিছু কিছু দিক ভীষণ ভালো লাগলেও আবার কিছু দিক ভালো লাগেনি। শায়ানের চরিত্র অতি পরিচিত। আমাদের আশপাশেই এমন বহু শায়ান রয়েছে। শায়ানের চরিত্রের স্খলন ভালো লাগেনি। শায়ান যেন নিজেই স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে।শায়ান আরেকটু যত্নশীল নিজের প্রতি, জীবনের প্রতি হতে পারতো। ?সৌরিন: দৃঢ় মনোবল, সাহসী, শিক্ষিত এই মেয়েটিকে ভীষণ ভালো লেগেছে আবার মায়াও লেগেছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। ছোটবেলা থেকেই যাকে মা- বাবা শুধু বলেছে স্ট্রং হওয়ার কথা।একজন মানুষ যত বড়ই হোক না কেন মা- বাবার স্নেহের প্রতি সবসময় কাতর থাকে। সৌরিন চরিত্রটি আরো শত শত নারীকে প্রতিনিধিত্ব করেছে। শিক্ষিত, স্বাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়েছে। কখনো দৃঢ়, কখনো ভঙ্গুর এই চরিত্রটিকে ভালো লেগেছে। এ বইয়ে আমার অন্যতম পছন্দের চরিত্র সেঁজুতি।এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রের মধ্য রয়েছে: সোপান, মুনা, রূপা, তানজিলা,ফাহিম,রিফাত, রাতুল, সোনিয়া,প্রতীতি,পিয়েতা,ফারসিয়া,ওশিন। ★প্রিয় উক্তিসমূহ: -------------------------- ?সব অপরাধের মাফ হয় কিন্তু কারো মনের দুর্বল জায়গায় আঘাতের কখনো মাফ হয় না। ?তিল তিল করে গড়ে তোলা ভীষণ কঠিন কিন্তু হুট করে ভেঙে ফেলা খুব সহজ। ?যাকে ভালোবাসার মানুষ আছে তাকে কখনো ভালোবাসতে নেই। ?যে যত দ্রুত আপন হয়, তাকে হারানোর ভয় তত বেশি থাকে। ?কাউকে তীব্রভাবে ভালোবাসা যাবে না। খুব বেশি ভালো লাগা, প্রিয়জনকে দূরে সরিয়ে দেয়। ★লেখনশৈলী : ---------------------- লেখক সুস্মিতা জাফর এর ছোটগল্পের ভক্ত আমি। প্রতিটি গল্পের শেষে বিস্মিত হই বিষয়বস্তু নির্বাচনে। এমন কিছু বিষয় নিয়ে চমৎকার সব গল্প লিখে ফেলেন পারতপক্ষে যা আমাদের অচিন্তনীয়। মেদহীন, সাবলীল ভাষায় ভিনধর্মী সব প্লটে গল্প লিখে প্রতিবার তৃপ্ত করেন পাঠকমনকে। ❝আঁধারের যুবরাজ❞ এর মাধ্যমে প্রথমবার লেখকের উপন্যাস পড়া হলো। সমান্তরালভাবে দুটো মানুষের জীবনের গল্প আলোকপাত করেছেন।এক্ষেত্রে অনেকসময় অসামঞ্জস্যতা লক্ষ করা যায়।কোথাও না কোথাও তাল কেটে যায়। তবে এ বইয়ে তা মোটেও হয়নি।বলাবাহুল্য, লেখক বেশ যত্ন সহকারে বইটি লিখেছেন। ★সম্পাদনা, বানান ও অন্যান্য: --------------------------------------------- চলন্তিকা প্রকাশনীর সম্পাদনা বরাবরই বেশ পরিপাটি। বেশ যত্ন সহকারে বইয়ের সম্পাদনা করে থাকেন। ❝আঁধারের যুবরাজ ❞ এ তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বিরামচিহ্নের ভুল প্রয়োগ, বানান ভুল এসব সমস্যা একটি বইপড়ায় বিরক্তির সৃষ্টি করে। কিন্তু এ ধরনের কোনো সমস্যা দৃষ্টিগোচর হয়নি। এছাড়া বইয়ের প্রোডাকশন কোয়ালিটি ও বাইন্ডিংও বেশ ভালো। অতিরিক্ত শক্ত বাঁধাই কিংবা নড়বড়ে হলেও বই পড়ায় অসুবিধা হয়। পৃষ্টার মানও ভালো। অতিরিক্ত ফাঁকা কিংবা অতিরিক্ত হিজিবিজি হলে বইটি পড়ার সময় আগ্রহ নষ্ট হয়। লেখার ফন্টও আরামদায়ক। সবমিলিয়ে বলতে হয়,বইটির প্রোডাকশন বেশ ভালো হয়েছে। যেকোনো পাঠকেরই পড়তে আরামদায়ক অনুভূতি হবে। ★ব্যক্তিগত মতামত: ------------------------------- রোমান্টিক - সামাজিক উপন্যাস যাদের পছন্দ তাদের বইটি ভালো লাগবে। তবে, বইটি অবশ্যই আঠারো বছরের ঊর্ধ্বে যারা তারা পড়তে পারবে।কাহিনীর ধারাবাহিকতায় প্রাপ্তবয়স্ক ঘটনা এসেছে কয়েকবার । যারা নিজেদের প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্তমনস্ক মনে করেন তারা পড়তে পারেন। (রিভিউকারী : ফারসিয়া মাহমুদ)
Was this review helpful to you?
or
তারে শক্ত করে আঁকড়ে রাখতে গিয়ে একটা সময় বুঝতে পারি; নিজের কাছে নিজেই গেছি ম'রে! নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ ~ সুস্মিতা জাফর বই: আঁধারের যুবরাজ লেখক: সুস্মিতা জাফর জনরা: সামাজিক-রোমান্টিক প্রকাশনী: চলন্তিকা প্রকাশকাল: বইমেলা ২০২৪ রিভিউতে: ফাহারিয়া লিজা "আঁধারের যুবরাজ" নামটা সুন্দর না! আচ্ছা নাম দেখে কি ভেবেছেন কোন রাজা-রানীর গল্প কিংবা থ্রিলার বা ভুতুড়ে গল্প?? উঁহু, একদমই নয়। "আঁধারের যুবরাজ" একটি ফেসবুক আইডির নাম। কী এই আইডির বিশেষত্ব, যাকে কেন্দ্র করে একটি গোটা উপন্যাস রচিত হয়েছে? জানতে হলে পড়তে হবে সুস্মিতা জাফরের সামাজিক-রোমান্টিক জনরার নতুন এই উপন্যাসটি! বইটির নামকরণ যথার্থ। আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। এই বইয়ের প্রচ্ছদ আমার সাদামাটা লেগেছে, তবে সুন্দর। বইটা পড়েও নিজের কল্পনায় কোন ঠিকঠাক প্রচ্ছদ উপস্থাপন করতে পারিনি! বইয়ের উৎসর্গ ভীষণ সুন্দর। আমার মন ছুঁয়ে গেছে। অতীত আর বর্তমানের সুন্দর এক মেলবন্ধন ঘটেছে বইটিতে। একই সাথে দুইটা সময়ের দুইজন মানুষের জীবন চিত্র বইটি ফুটে উঠেছে। গল্পটা শুরু হয়েছিল মেসেঞ্জারে মেসেজ আদান-প্রদানের মাধ্যমে। "আঁধারের যুবরাজ" নামে ফেসবুক আইডি থেকে সৌরিনকে মেসেজ করেছিল কেউ একজন। অজানা কারণে সেও মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে দেয়। এই ছোট্ট মেসেজ আদান-প্রদান কী কোনো সম্পর্কের রূপ নিবে?? একদিকে দেখা যায়, অন্যরকম হেয়ার স্টাইল করার কারণে বাবার হাতে মা'র খায় শায়ান নামক কিশোরটি। এর মাঝেই শায়ানের জীবনে ঘটে অন্য এক ঘটনা। রূপা নামক বড়ো কাজিনের প্রেমে পড়ে যায়। এটা কি প্রেম নাকি কৈশোরকালের আবেগ?? বাবা-মায়ের অতিরিক্ত শাসনের কারণে শায়ানের সবকিছু দমবন্ধ লাগে। ছোট থেকেই বাবা-মা তার বোনকে বেশি ভালোবাসে। পাখিরা যেমন বন্ধ খাঁচায় ছটফট করে ঠিক তেমনি শায়ানও তার বাড়িতে ছটফট করে। আচ্ছা শায়ান কী মুক্ত হতে পেরেছিল?? শায়ানের জীবনে অনেক নারীর আগমন ঘটেছে। জীবন নিয়ে সে বরাবরই উচ্চাকাঙ্খী! এত নারীর ভিড়ে কেউ কি তাকে ভালোবেসেছিল? অন্যদিকে সৌরিন বাবা-মায়ের বড় মেয়ে। ছোট থেকে জেনে এসেছে, বড়দের স্ট্রং হতে হয়। সৌরিনের ছোটবেলাটা কেটেছে একা একাই। নানা পূর্ণতা, অপূর্ণতা নিয়েই তার জীবন গুছিয়ে নিয়েছিল। হুট আবারও তার জীবন এলোমেলো হয়ে যায়। ভালোবাসার মানুষটির ধোঁকা, তাকে দোষারোপ এই সবকিছুর মাঝেও জীবনে এসেছে অন্যরকম পরিবর্তন। শায়ান আর সৌরিন এরা দুই মেরুর মানুষ হলেও জীবনের একটা ঘটনাপ্রবাহ একই সূত্রে গাঁথা। আচ্ছা তাদের মধ্যে কি কোন যোগসূত্র হয়েছিল? জন্ম দিলেই বাবা-মা হওয়ার যায় না। সন্তানকে ভালোবাসার সাথে সাথে যথেষ্ট সময় দিতে হয়, তার চাওয়া-পাওয়াকে মূল্য দিতে হয়। তার থেকেও বড় কথা, সন্তানদের মাঝে বৈষম্য না করা। বর্তমান সময়ে ব্যাড প্যারেন্টিং বিরাট এক সমস্যা। এর কারণেই শিশুদের জীবনে আসে একাকিত্ব, নষ্ট হয়ে যায় তাদের শৈশর। রক্তের সম্পর্কের বাইরে মাঝে মধ্যে কিছু সম্পর্ক খুব আপন হয়ে যায়। ডাল-পালা ছড়িয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে। বন্ধুত্ব এমন এক সম্পর্ক। সত্যিকারের বন্ধুত্ব সকল চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে। প্রতিটি মানুষের জীবনে ভালো বন্ধু থাকা খুব জরুরি। বিশ্বাস শব্দটা ভীষণ ভারি। যাকে তাকে বিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু বিশ্বাস করে ঠকে গেলে মানুষের জীবনে ঘটে আমূল পরিবর্তন। আচ্ছা এই পরিবর্তন কি সুখকর হয়?? সব মানুষই চায়, তার জীবনে কেউ একজন থাকুক যাকে সব কথা অনায়াসে বলতে পারে। আমাদের অনেকের ধারণা, যারা দেশ থেকে বিদেশে যায় তারা হয়তো ওখানে অনেক শান্তিতে থাকে। কিন্তু এতটাই কি সহজ বিদেশে টিকে থাকা? সুস্মিতা জাফরের লেখা ঝরঝরে, প্রানবন্ত। উপন্যাসটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের ছন্দে এগিয়ে গেছে। তবে যারা মনোযোগ দিয়ে পড়বেন না; শুরুতে তারা অতীত আর বর্তমান নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলবেন হয়তো। উপন্যাসে প্রতিটি চরিত্র সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। দারুণ শব্দবুনন; যদিও কয়েকটা টাইপিং মিস্টেক ছিল। উপন্যাসের শেষটা আমি আমার মতো করে অনুমান করেছিলাম কিন্তু মিলেনি। যাই হোক শেষ সুন্দর। এটাই হয়তো নিয়তি! শায়ানকে একপর্যায়ে আমার বিরক্ত লেগেছে। শায়ানের চরিত্র এত ঢিলে দেওয়া উচিত হয়নি৷ কিছু ব্যাপার অতিরিক্ত রকমের বাড়াবাড়ি। কিছু ব্যাপার আমার কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে। এছাড়া বইটি সুখপাঠ্য। ★ বই থেকে পছন্দের কিছু লাইন: ১.প্রতিটা মানুষের সফলতার পেছনে দীর্ঘ ব্যর্থতার গল্প লুকিয়ে থাকে। ২.নিজের জীবনের দুশ্চিন্তা, দুঃখ, হতাশা আর ব্যর্থতার ব্যাপারে পরিচিত কারো সাথে সহজে কথা বলা যায় না। ৩.সব অপরাধের মাফ হয় কিন্তু কারো মনের দুর্বল জায়গায় আঘাতের কখনো মাফ হয় না! ৪.স্বার্থপর মানুষের যতই উপকার করো না কেন সে কখনোই তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবে না! একটু ভিন্ন রকমের সামাজিক-রোমান্টিক বই পড়তে চাইলে অবশ্যই "আঁধারের যুবরাজ" পড়বেন। আশা করি দারুণ সময় কাটবে। একঘেয়েমি লাগবে না।
Was this review helpful to you?
or
"আঁধারের যুবরাজ" নামটা বেশ একটা ছায়াছায়া রহস্য মাখা, তাই না? আর সুস্মিতা জাফরের মিস্ট্রি বা থ্রিলার জনরার ছোটোগল্প আর উপন্যাস পড়ে ভেবেছিলাম এটা তেমন কিছুই হবে। এরপর যদিও নানাজনের মন্তব্য পড়ে বুঝতে পেরেছিলাম যে আসলে এটা সামাজিক-রোমান্টিক ধরণের সমকালীন জনরার একটা উপন্যাস, তবু দু’টো বইয়ের মধ্যে থেকে কোনটা নেবো জিজ্ঞেস করায় যখন লেখক স্বয়ং তাঁর ছোটোগল্প সংকলন সরিয়ে এই বইটিই নিতে বললেন, তখন তো আর কথাই থাকে না। গল্পের প্লটটা খুব অচেনা না হলেও তার মঞ্চায়নটা অন্যরকম। আর এটাই আমাকে মূল গল্পের চেয়ে বেশি টেনেছে। দু’জন আলাদা মানুষের গল্প, দু’টি আলাদা সময়ের গল্প, দু’টি আলাদা দেশের গল্পে লেখক খুব সাবলীলভাবেই যোগসূত্র তৈরি করেছেন। দু’টি কিশোর-কিশোরীর সমান্তরাল ভাবে বেড়ে ওঠা, জীবনের প্রতিটি স্তরে তাদের মানসিক অবস্থা, আনন্দ, বেদনা, ভালোবাসা, পাওয়া, না-পাওয়া—সবকিছু সুস্মিতা তাঁর ঝরঝরে লেখনীতে ফুটিয়ে তুলেছেন। এক অধ্যায় থেকে অন্য অধ্যায় আলাদা মানুষ, আলাদা জীবন হলেও, পড়তে গিয়ে কোথাও ছন্দপতন হয় না। শুধু সামাজিক-রোমান্টিক না বলে সাথে সমকালীন বলার একটা বড়ো কারণ কাহিনীর মূল চরিত্র দু’জনের পরিচয়ের ক্ষেত্রটি—আমাদের খুব চেনা ফেসবুক। এ গল্পে ফেসবুককেও একটা মূলচরিত্র বলা যেতেই পারে। ফেসবুক থেকে অনেক কিছুই হয়, হচ্ছে। এখানেও অনেকটাই তাই। তবে শেষ পর্যন্ত যা হয় সেটা আমাদের চিরাচরিত ধারণার সাথে মেলে কিনা তা জানতে চাইলে বইটি পড়াই ভালো। পুরো উপন্যাসটিতে নানা সময়ে নানান চরিত্র এসেছে। বেশিরভাগই যতটুকু দরকার ততটুকু গড়ে উঠেছে, তবে আমার মনে হয়েছে সৌরিনের বর সোপান আরও খানিকটা ডিটেইল দাবী করে। শেষের ট্যুইস্টটা ভালোই ছিল, সৌরিনের সিদ্ধান্তও মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু সোপানের সিদ্ধান্তের পিছনের ব্যাখ্যাটা পেলে হয়ত কাহিনীর শেষটা আরেকটু শক্তপোক্ত হতো। সেই সাথে গল্পের অন্য কিছু ডিটেইলস কমানো যেত কি? অনেকের মন্তব্যে পড়লাম প্যারেন্টিং নিয়ে কিছু কথা উঠে এসেছে। যে সময়ের কথা এ উপন্যাসে এসেছে, এবং সম্ভবতঃ এখনও, বাংলাদেশে এমন পরিবার বিরল নয়। সবচেয়ে বড়ো কথা, এরা জানেনই না যে তাঁরা কোথায় ভুল করছেন। শেষে কোনোভাবে সৌরিনের বাবামা কিছুটা বুঝলেও (তাদের পরিবর্তনটা রাতারাতি হয়েছে বলে একটু বেশি নাটকীয় লেগেছে), শায়ানের বাবামা কিছুই বুঝে নি। আর সেটাও অস্বাভাবিক না। তবে শায়ান এতকিছু পারল আর ওর বাবামা’কে কিছুই বলতে পারল না, সেটাও একটু বেশি বেশি। আরও দুয়েকটা ব্যাপারের মধ্যে এসেছে কিছু একান্ত সময়ের বর্ণনা। সেগুলো এসেছে, ক্ষতি নেই। না এলেও ক্ষতি ছিল না। তার চেয়ে আমার কাছে নায়কের জীবনের সকল নারীই অপরূপা—এটা একটু অতিনাটকীয় মনে হয়েছে। যেমনটা হয় মাসুদ রানা বা জেমস বন্ডের কাহিনীতে—সবাই চাইলে সুপারমডেল হতে পারত। অন্ততঃ এ ধরণের পরিচিত গন্ডির সামাজিক কাহিনীর কেউ কেউ আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতোও হতে পারত। আরেকটা ব্যাপার হলো ইংরেজির ব্যবহার—অথবা বলা ভালো ইংরেজিতে ছাপা। ওই কথাগুলো বাংলা হরফে করা যেত কি? প্রায়ই ইংরেজি হরফ কেমন একটা বাধা তৈরি করেছে যেন। প্রচ্ছদ, ছাপা সবই মানসম্মত। প্রচ্ছদ প্রথম দেখায় কাছে টানে, তবে ভালো করে দেখলে একটু বেশি কাজ মনে হয়। ভিতরে কিছু টাইপো, মুদ্রণপ্রমাদ রয়েছে, সেগুলো তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। তবে আশা করি পরেরবার সেগুলো শুধরে যাবে। যদিও কবিতাগুলো বাড়তি পাওয়া, তবু বইটার কলেবর একটু ছোটো করা যেত যদি কিছু কবিতা কম দেওয়া হতো। প্রায় প্রতি চ্যাপ্টারের শুরুতে/ শেষে কবিতা না দিয়ে উপন্যাসের কোথাও কোথাও প্রয়োজনমতো বা সেই অধ্যায়ের মূলভাবের সাথে মিলিয়ে দিলেও ভালো লাগত। কিংবা অধ্যায়ের শুরুতে দিয়ে সেই একই পৃষ্ঠা থেকে পরের অধ্যায়টা শুরু করলেও পৃষ্ঠা সংখ্যা কমত। ব্যক্তিগতভাবে চার-পাঁচ লাইনের ছোট্ট কবিতাগুলোই আমার বেশি ভালো লেগেছে। আর খুবই ভালো লেগেছে বিটারিডারদের মতামতগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে শুরুতেই সেগুলোকে পাঠকের জন্য প্রকাশ করাটা। “আঁধারের যুবরাজ"-এর পরিচয় প্রথম থেকেই হয়ত সবাই বুঝতে পারবেন, তবু এই বইয়ের পাত্রপাত্রীদের কী হলো, কেন হলো, এরপর ওদের কী হবে—এরকম একটা আগ্রহ পুরোটা জুড়েই কমবেশি রয়ে যায়—আর সেখানেই লেখকের মুন্সিয়ানা। পাঠক হিসেবে যদিও আমি সুস্মিতা জাফরের কাছে আরও ছোটোগল্প দাবী করব, তবে উপন্যাসের পথটায় চলা যেন তাঁর বন্ধ না হয়, সে কথাও বলব॥ বইয়ের নামঃ আঁধারের যুবরাজ লেখকঃ সুস্মিতা জাফর প্রচ্ছদঃ মো. সাদিতউজজামান প্রকাশনীঃ চলন্তিকা প্রকাশন প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ জনরাঃ সামাজিক রোমান্টিক উপন্যাস মুদ্রিত মূল্যঃ ৭০০ টাকা রেটিংঃ ৭.৫/১০
Was this review helpful to you?
or
#বুক_রিভিউ বইটি পড়ার ইচ্ছে ছিল অনেক দিন থেকেই। সময় বের করতে পারছিলাম না তারপরও আজ পড়ে শেষ করলাম! উপন্যাসের সবচেয়ে রহস্য জনক চরিত্র আসলে সোপান!! সে কেন সৌরিনের সাথে এমন করেছিল? কেনই বা তার সিদ্ধান্ত বদলে গেল? সৌরিনের ওপর একটু রাগ হয়েছে! বোকা বোকা লেগেছে তার নতুন সিদ্ধান্ত! ★ উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র শায়ান। অনেক দায়িত্ববান সে। যে কী না চাইলেই চরম স্বার্থপর হয়ে জীবন কাটাতে পারতো.. কিন্তু একদিনও সে এমন করেন নি। বরং তার এই ভালো মানুষীর সুযোগ নিয়েছেন অনেকেই। বড্ড একা হয়ে গেলেও সে জীবন বিমুখ হয় নি। কোনো অভিযোগও করেন নি কখনো। কিন্তু ভালোদের যে ঠকতে হয় বুঝতে পারে নি তার সরল মন। মস্তিষ্ক নয় মনকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। ★ ★ ব্যাড প্যারেন্টিং নিয়ে অনেক লেখা আসা প্রয়োজন। আর কত জাতি মুখ বন্ধ রাখবেন? শৈশব সুন্দর হলেই না বাকী সব সুন্দর হয়ে তৈরি হয়। ★ সবচেয়ে বেহায়া ( ?) চরিত্র হলো প্রতীতি এবং পিয়েতা। মেয়ে বা ছেলে নয়, সবারই একটা নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে থাকা উচিত। তবেই না একটা সুস্থ পৃথিবী গড়ে উঠবে। ★ রাতুল সাহেবকে একটুও ভালো লাগে নি। সবচেয়ে নিষ্ঠুর হয়তো তার স্ত্রী! যার অসুস্থ আচরণ পাঠককে অবাক করবেই! ★ অনেক মেসেজ বহুল উপন্যাস " আধাঁরের যুবরাজ "। প্রেম, ভালোবাসা, পরিবার কিংবা পরকীয়া কিংবা শারীরিক / মানসিক নির্যাতন পাঠক যেমন চান তেমনই দেখতে পারেন.. ★ আচ্ছা খুব স্ট্রং হওয়াটা কী অপরাধ? কিংবা মানুষকে বিশ্বাস করাটা কী অপরাধ? কী অপরাধ আর কী বা সমাজের ভুলে ভরা শেকল... ★ আপনি যদি রক্ষণশীল পাঠক হয়ে থাকেন তবু একবার পড়ে দেখবেন। আমিও কিন্তু কম রক্ষণশীল নই ?। ★ সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব তৈরি করাটা অবশ্যই সময় নিয়ে এবং বিচক্ষণতার সাথে হওয়া উচিত। ভালো লাগাটা বেশি দূর টেনে নেওয়ার আগে অনেক ভেবে নেওয়া উচিত। ★ কবি ( ?) Sushmita Zafar এর এ উপন্যাসে কবিতা নামক বিশেষ চমক রয়েছে! আর উপন্যাসের কবি চরিত্রটি কে জানেন তো?? ** লেখকের জন্য শুভেচ্ছা রইল, অনেক নতুন বই আসুক। বই : আধাঁরের যুবরাজ। লেখক : সুস্মিতা জাফর। জনরা: উপন্যাস। প্রকাশনী : চলন্তিকা। মুদ্রিত মূল্য : ৭০০ টাকা। সংগ্রহ করতে পারেন আপনার পছন্দের অনলাইন বুকশপ থেকে।
Was this review helpful to you?
or
#আঁধারের_যুবরাজ_বুক_রিভিউ "আঁধারের যুবরাজ" নামটা দেখেই মনে হয় একটা রহস্য রহস্য ভাব আছে।এটা হয়তো কোনো থ্রিলার গল্প। আসলে না এটা একটা সামাজিক-রোমান্টিক উপন্যাস।পড়ার পর মনে হবে এটা কি আসলেই রোমান্টিক উপন্যাস।কখনো সামনাসামনি না দেখে,হাতে-হাত না রেখে,চোখে-চোখ রেখে দুইটা কথা না বললে এটা কি রোমান্টিক উপন্যাস হয়।হয়তো,এই যে এই গল্পে হলো। ★"আঁধারের যুবরাজ" উপন্যাস টাতে লেখিকা আমাদের আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো,যেগুলো আমরা কখনো দেখে ও না দেখা করি সে ঘটনাগুলো তুলে ধরেছেন।মা-বাবা কখনো খারাপ হয় না।তারা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না।তারা যা করেন সবসময় সন্তানের ভালোর জন্যই করেন।কিন্তু তারা এটা বুঝে না ভালো চাইতে গিয়ে তারা সন্তানকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে ফেলে।তোমাকে এটা করতে হবে,এটা হতে হবে,এভাবে চলা যাবে না তারা তাদের মতামত গুলো সন্তানের উপর চাপিয়ে দেয়।নিজের পছন্দের কোনো মূল্য থাকে।আঁধারের যুবরাজ উপন্যাসের তেমনি একটা চরিত্র সৌরিন।যাকে ছোট থেকে বলা হয়েছে তোমাকে ফাস্ট হতে হবে,ভালো পজিশনে যেতে হবে,পড়ে গেলে কান্না করা যাবে না।এই যে ভালো পজিশনে পৌঁছানোর পর সে বুঝতে পারলো তবুও তার প্রাপ্তির খাতা শূন্য।এরপর থেকে জীবনের যত ঝড় এসেছে কখনো পিছু ফিরে দেখেনি শক্ত হাতে মোকাবিলা করেছে।সবসময় নিজের ইচ্ছে কে গুরুত্ব দিয়েছে।নিজের ইচ্ছে গুলো নিজেই পূরণ করেছে।সৌরিন চরিত্র টা আমার অনেক পছন্দের একটা চরিত্র। ★সচারাচর আমাদের সমাজের পক্ষাপটে মেয়েদের থেকে ছেলেদের কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।কিন্তু উপন্যাসে শায়ান থেকে তার বোন শেফালিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মেয়েদের কে গুরুত্ব দেওয়া খারাপ না।কিন্তু এক সন্তান অন্যজন থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। দুইজনকে দুই চোখে দেখা এটা কখনোই ভালো না।শায়ানের আমেরিকা যাওয়ার পরের জার্নি টা অনেক কষ্টকর ছিলো।ওখানে দিন-রাত খাটুনি করে টাকা ইনকাম করে মা-বাবাকে সন্তুষ্ট করা যায় না,তাদের কথা শুনতে হয় তাহলে ব্যাপারটা আসলেই কষ্টকর।কিন্তু শায়ানের সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করার ব্যাপারটা আমার ভালো লাগেনি।তার একটু হলে ও প্রতিবাদ করার দরকার ছিলো।আর বারবার ধোঁকা খাওয়ার পর ও সে শেষ পর্যন্ত একি কাজ করে গেছে।যাইহোক শায়ানের বন্ধু ভাগ্য টা চমৎকার। নয়তো রিফাত এর মতো এতো ভালো একটা বন্ধু খুঁজলে ও পাওয়া যায় না।শায়ানের বিপদে-আপদে,দুঃখ-কষ্টে সবসময় রিফাত তার সাথে ছিলো।এরপর আমেরিকাতে সেঁজুতির মতো মানসিক সাপোর্ট দেওয়া এমন বন্ধু পাওয়া ও মুশকিল।যখন শায়ানের সবচেয়ে বেশি কাউকে পাশে প্রয়োজন ছিলো তখনই সেঁজুতি দেবদূতের মতো আসে তার জীবনে।সেঁজুতিকে আমার অনেক ভালো লেগেছে। ★উপন্যাসের নব্বই দশকের ঘটনা আর বর্তমান সময়ের ঘটনা দুইটাই লেখিকা চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন।অতীত-বর্তমান দুইটা দিক ই নিপুণভাবে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে।শায়ান আর সৌরিন এর জীবনের প্রেম-ভালোবাসা,দুঃখ-কষ্ট,হাসি-কান্না এই সবকিছুই মনে হয়েছে আমি নিজে অনুভব করেছি। ★ভালো না লাগার দিক বলতে কিছু কিছু বিষয় বেশ চোখে লেগেছে।যেমন বইয়ের ভিতরে বাংলা লেখার মাঝে ইংলিশ লেখাগুলো পড়তে বিরক্ত লেগেছে।এগুলো বাংলাতে লিখলে ভালো হতো।আর উপন্যাস এ সোপান এর বিষয় টা আরেকটু বিস্তারিত লিখলে ভালো হতো।সোপানের দিকটা ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।আর লেখিকা শেষে তাড়াহুড়ো করে গল্পের সমাপ্তি টেনেছে।সমাপ্তি টা আরেকটু আস্তে-ধীরে টানা যেতো। ★লেখিকার লেখনশৈলী চমৎকার।ওনার লেখায় কিছু তো একটা আছে যেটা পাঠককে গল্পের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখে।”আঁধারের যুবরাজ" উপন্যাসের প্লট টা ইউনিক ছিলো।সুস্মিতা আপুর সহজ-সাবলীল লেখায় গল্পটা অনেক উপভোগ্য ছিলো।বইয়ের চরিত্রায়ন,শব্দচয়ন,বর্ণনাশৈলী সবকিছু চমৎকার ছিলো।এর আগে আপুর কোনো উপন্যাস পড়া হয় নাই। এটাই প্রথম,কিন্তু আপুর ছোট গল্প পড়েছি।আর আপুর ছোটগল্প গুলো আমার অনেক পছন্দ।উপন্যাসের প্রতি অধ্যায়ের শুরুর কবিতা গুলো অনেক সুন্দর ছিলো।বইয়ের প্রোডাকশন বেশ ভালো হয়েছে।সম্পাদনা ও দারুণ হয়েছে।বইয়ে বানান ভুল প্রায় একদমই চোখে পড়েনি।তাই পড়ে আরাম পেয়েছি। ★আমার মনে হয়েছে আঁধারের যুবরাজ উপন্যাসে লেখিকা আমাদের কিছু মেসেজ দিয়েছেন।এই যে শায়ানের মতো আমরা একি ভুল বার বার করি।ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে সেই একি জিনিস আবার করি।সহজেই সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলি।আমাদের জীবনে ফারসিয়ার মতো ও অনেকে আসে যারা উপকারের বিপরীতে ক্ষতি করে। আবার সেঁজুতি,রিফাত এর মতো ও বন্ধু আসে যারা নিঃস্বার্থ ভাবে পাশে থাকে।আমাদের জীবনে আসা সবগুলো চরিত্র ই আমাদের কিছু না কিছু শিক্ষা দিয়ে যায়। বই: আঁধারের যুবরাজ লেখক: সুস্মিতা জাফর প্রকাশনী: চলন্তিকা জনরা: সামাজিক-রোমান্টিক মুদ্রিত মূল্য: ৭০০৳
Was this review helpful to you?
or
❝স্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করার অভিনয়ে, সবাই এখন ভীষণভাবে ব্যস্ত। অথচ মাস্কের আড়ালে, মুখোশটা হাতে নিলেই দেখতে পাবে; অস্বাভাবিকতা অবিরত!❞ ~মুখোশের অন্তরালে (সুস্মিতা জাফর) মানব জীবন বড়োই রহস্যময়। জীবনের মোড়ে মোড়ে ঘটতে থাকে অপ্রত্যাশিত সব ঘটনা, যা অনেকসময় আমাদের জীবনকে পাল্টে দেয়। নতুনভাবে জীবনটাকে উপলব্ধি করতে শেখায়। সুস্মিতা জাফর এর লেখা দ্বিতীয় উপন্যাস ‘আঁধারের যুবরাজ’ এও এমন সব ঘটনার দেখা মেলে। ‘আঁধারের যুবরাজ’ উপন্যাসটি মূলত শায়ান, সৌরিন নামক চরিত্রদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। উপন্যাসটির কাহিনী আগাতে থাকলে আরো অনেকগুলো চরিত্রের দেখা মেলে। বিখ্যাত লেখক সৌরিন আলম এর দাম্পত্য জীবনে হঠাৎ করেই কালো মেঘের আনাগোনা দেখা যায়। সৌরিনের স্বামী সোপান একদিন না বলে কয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। এরপরেই সৌরিনের জীবনে নানা ঘটনা ঘটতে থাকে। হুট করেই একদিন আধাঁরের যুবরাজ নামের এক ফেসবুক আইডি তাকে নক করে। ‘আঁধারের যুবরাজ’ নামটা দেখার পর মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে যে কে এই আধাঁরের যুবরাজ? সে কী আধাঁরে বসবাস করে? তার আধাঁরে থাকার পেছনে কারণটা কী? সৌরিনকে নক করার পেছনের উদ্দেশ্যটাই বা কী? আমাদের সমাজে দাম্পত্য সম্পর্কে কোন সমস্যা দেখা দিলে মানুষ প্রথমে নারীদের দোষ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এরপেছনে যে পুরুষের দোষও থাকতে পারে তা তারা মানতে নারাজ। ফলে, সেই নারীটিকেই একা সব যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। সমাজের মানুষের দ্বারা প্রতিনিয়ত হেয় হতে হয় সেই নারীটিকে। লেখক পুরো বইটিতে এই বিষয়টিতেও আলোকপাত করেছেন। সমাজের মানুষের মনোভাব উপন্যাসের চরিত্রদের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। ছোটবেলা থেকেই অনেক পিতা মাতা সন্তানকে আত্মনির্ভরশীল ও সঠিকভাবে গড়ে তুলতে কঠোর আচরণ করেন। এতে হিতে বিপরীত হয়। মানসিক কষ্টের মধ্য দিয়ে সন্তানরা বড়ো হতে থাকে। একসময় তাদের মনে ক্ষোভের জন্ম হয়, যা তাদেরকে পিতা মাতা থেকে আরো দূরে সরিয়ে নেয়। ‘আঁধারের যুবরাজ’ উপন্যাসে এই বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। পিতা-মাতার এমন বৈষম্যমূলক আচরণ যে কত খারাপ তা লেখক দেখিয়েছেন। উপন্যাসটিতে বর্তমান কাহিনীর সাথে অতীতের বিভিন্ন কাহিনীও বর্ণিত হয়েছে। শায়ান, সৌরিন এর জীবনের বিভিন্ন কাহিনীর সাথে সাথে তাদের ছোটবেলাটাও লেখক বইয়ে উল্লেখ করেছেন। শায়ানের প্রথম প্রেম দূরে সরে যাওয়া, ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি, রাজনীতিতে যোগ দেয়া, পরবর্তীতে বিদেশ গমন- এসবকিছুই রয়েছে বইটিতে। মায়াকানন থেকে মুক্তির পর শায়ানের বিদেশ জীবনেও সংগ্রাম চলতে থাকে। রিফাতের মতো বন্ধু আজকাল পাওয়া মুশকিল। শায়ানের বিপদে আপদে রিফাত সবসময় পাশে থেকেছে। মুখোশধারী একশ বন্ধু থাকার চেয়ে রিফাতের মতো একটি বন্ধু জীবনে থাকাই মঙ্গলের। উপন্যাসের সমাপ্তিটাও লেখক দারুণভাবে টেনেছেন। বাস্তবেও আসলে এমনই ঘটে থাকে। আমাদের সমাজে কোন বিবাহিত নারী এই পরিস্থিতিতে হয়তো এমন সিদ্ধান্তই নিতো। বইয়ের কয়েক জায়গায় বেশকিছু ১৮+ অংশ রয়েছে। এই দৃশ্যগুলো না থাকলেই আমার মনে হয় ভালো হতো। এছাড়া, উপন্যাসের অনেকজায়গায় ইংরেজি শব্দের ব্যাবহার করা হয়েছে। এভাবে ইংরেজি শব্দ ব্যাবহার না করে বাংলা শব্দ ব্যাবহার করাটাই ভালো। বইয়ের প্রচ্ছদটা বেশ রঙিন ও দারুণ দেখতে। সবচেয়ে বেশি সুন্দর ব্যাক কভারটা। হরেক রঙের ব্যাবহারে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল পেছনটা। লেখক বইয়ে অনেকগুলো কবিতা ব্যাবহার করেছেন। এই বিষয়টা ইউনিক লেগেছে। কবিতাগুলো খুব সুন্দর এবং পড়তে অসাধারণ লেগেছে। এছাড়া, বইয়ের বাইন্ডিং, কোয়ালিটিও দারুণ। সহজ-সাবলীল ভাষায় বর্ণিত ‘আধাঁরের যুবরাজ’ বইটা পড়তে বেশ ভালো লেগেছে এবং বইয়ের সাথে চমৎকার কিছু সময় কেটেছে। ◼️বই পরিচিতি: বই: আঁধারের যুবরাজ লেখক: সুস্মিতা জাফর জনরা: সামাজিক-রোমান্টিক প্রকাশনী: চলন্তিকা প্রচ্ছদশিল্পী: মো: সাদিতউজজামান প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৪ মুদ্রিত মূল্য: ৭০০ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৭২
Was this review helpful to you?
or
পৃথিবীর কোনো বাবা-মা কি তার সন্তানের খারাপ চায়? একশব্দে এর উত্তর হবে ‘না’। তাহলে কেন অনেক সন্তানই মনে করে তাদের বাবা-মা কেড়ে নিয়েছে তাদের আনন্দময় শৈশব! সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতকে করেছে তিক্তকর অভিজ্ঞতায় পূর্ণ! এর উত্তরও হবে এক কথায়, ‘ব্যাড প্যারেন্টিং।’ আচ্ছা প্যারেন্টিং আবার ‘ব্যাড’ হয় কী করে! হ্যাঁ, প্যারেন্টিংও ব্যাড হতে পারে। ওভার প্যারেন্টিং, শারীরিক আঘাত, তুলনা করা, ভয় দেখানো, অতিরিক্ত প্রত্যাশা এসবই ব্যাড প্যারেন্টিং। আমি সবসময় আমার পরিচিত গণ্ডির মধ্যে এই ব্যাড প্যারেন্টিং নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু প্রতিবারই হতাশ হয়েছি। যাদের সাথে আলোচনা করতাম তারা মানতেই নারাজ যে প্যারেন্টিং ব্যাড হতে পারে। তারা যা করছে সেটা শাষণ। আর শাষণ সন্তানের জন্য ভালোই। আমি তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে পারতাম না এই সন্তানদের ভবিষ্যতে কী কী সমস্যা হতে পারে। তাদের শৈশবটা যে মলিনভাবে কেটে যাচ্ছে তাও বোঝাতে পারতাম না। এতোক্ষণে পাঠক ভাবছেন ‘আঁধারের যুবরাজ’ হয়তো প্যারেন্টিং এর জ্ঞান কপচানো হয়েছে এমন কোনো উপন্যাস। মোটেও এমন কিছু নয়। ‘আঁধারের যুবরাজ’ নামটি দেখেই মনে হয় থ্রিলার জাতীয় কোনো উপন্যাস হবে। যেহেতু লেখকের প্রথম উপন্যাসও থ্রিলার ছিল। ঠিক এমন একটা মনোভাব নিয়েই আমি বইটি পড়তে শুরু করেছিলাম। পড়তে পড়তে বুঝতে পারছিলাম থ্রিলার না, তবুও এ উপন্যাসটিকে থ্রিলার আখ্যা দিতে ইচ্ছে করে। কারণ প্রথম চৌদ্দটি পর্বেও আপনি বুঝতে পারবেন না ঠিক কী হতে যাচ্ছে। মানুষের মন সবচেয়ে বেশি রহস্যময়। এ উপন্যাসে চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্ব চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। সেই সাথে অতীত ও বর্তমান কোলাজ করে লেখা লিখনশৈলী সম্পূর্ণ মনোযোগ ধরে রাখতে বাধ্য। ‘আঁধারের যুবরাজ’ কে? কেন তার সৃষ্টি? অন্ধকারেই কি তার বাস? অন্ধকার কি তার ভালো লাগে? এ সব প্রশ্নের উত্তর জানার পাশাপাশি পাঠক শায়ান ও সৌরিন এর জীবনের গল্পও জানতে পারবেন। পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখার মতো চমৎকার লেখনশৈলীর এ উপন্যাস। কৈশোরে প্রথম প্রেমের অনুভূতি, প্রথম বিচ্ছেদ কিংবা প্রতারিত হওয়ার কষ্ট, অনলাইন ফ্লার্টিং, প্রিয় সব বইয়ের নাম, ক্যারিয়ারের জন্য স্ট্রাগল করা, পেয়ে হারানোর কষ্ট, না পাওয়ার হাহাকার সব মিলে অনবদ্য এ উপন্যাসের সাথে পাঠকের দারুণ কিছু সময় কাটবে। সালসাবিলা নকি ০৩.০১.২৪
Was this review helpful to you?
or
ফালতু একটা বই। পুরোই সময় নষ্ট। এগুলো কারা ছাপে?
Was this review helpful to you?
or
ঘোর ঘন আঁধারের মধ্যখানে, জ্বলজ্বলে সাদা বিন্দুটি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে আসে। যেন এক যুবরাজ সাদা ঘোড়ায় চড়ে, অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো আমার হৃদয় মাঝে। উপন্যাসের নামটি পড়ে যে দৃশ্যপট আমার চোখে ভেসে উঠেছে তাকে শব্দে প্রকাশ করলে এ লাইনগুলিই বেরিয়ে আসে। সুস্মিতা জাফরের "আঁধারের যুবরাজ" কেমন জানি এক ঘোর লাগা নাম। ফ্ল্যাপ: ভালোবাসার গল্পগুলো আসলে কী রকম হতে হয়? রোমান্টিক সংলাপ, দুটি প্রাণের উথালপাথাল পাগলামো, বন্য উন্মত্ততায় হারিয়ে যাওয়া, গল্পের ভাঁজে ভাঁজে রগরগে উত্তেজনা। এর বাইরেও কি শিহরণ জাগানিয়া ভালোবাসার গল্প হয়? 'ভালোবাসি বলা যায় সহজেই। ভালো হয়তো বাসাও খুব বেশি কঠিন নয়। ভালোবেসে কাছে চাওয়া ও পাওয়াও হরদম চলছে। কিন্তু ভালোবেসে না চেয়েও কিংবা চেয়ে না পেয়েও কিংবা পেয়ে হারিয়েও ভালোবাসাকে অবিকৃত রেখে পাশে থাকার গল্প বেশি আছে কি? আঁধারের যুবরাজ... এমন একটি গল্পের সঙ্গে সহযাত্রা হয়ে যাক। ফ্ল্যাপটি লিখেছেন কথাসাহিত্যিক ফৌজিয়া খান তামান্না। কাহিনী সংক্ষেপ: নতুন লেখকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় সৌরিন আলম পেশায় একজন চাকুরিজীবী। ছেলেবেলায় বাবা মা'র অতি প্রত্যাশা, অতি নিয়মানুবর্তিতা, কথায় কথায় নিষেধাজ্ঞা জারি- তাকে ঠেলে দেয় ছোট ছোট অসংখ্য অপ্রাপ্তির দিকে, অপূর্ণতার দিকে। সন্তানকে আত্মনির্ভরশীল করতে "তুমি অনেক স্ট্রং"- বারে বারে বলা তাদের এই কথাটি আদৌ কি সৌরিনকে স্ট্রং করতে পারে? হঠাৎ-ই একদিন সৌরিনের মেসেঞ্জারে নক করে আঁধারের যুবরাজ নামে একজন। সোপানের সাথে সৌরিনের আট বছরের সম্পর্ক যখন অনিশ্চয়তার পথে, সৌরিন যখন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছে তখন আঁধারের যুবরাজের আগমন ঘটে। সৌরিনের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, অনুপ্রেরণা যোগায়। সৌরিন যেন নিজেকে নতুন করে খুঁজে পায়! অপরদিকে, অতি শাসনে বড় হওয়া সায়ান- যে নিজের মনের মতো একটা হেয়ার কাট দিলেও বাবার হাতে মার খেতে হয়। সাথে যুক্ত হয় মা আর বড় বোনের বকা আর কটুক্তি। মায়াকানন নামের বাড়িটাকে জেলখানা মনে হতে থাকে তার। শাসনের এই বাড়াবাড়িই কি সায়ানকে একটু অন্যরকম করে ফেলে না? কৈশোরের প্রথম প্রেম হারিয়ে ফের প্রেমে পড়া, রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠা, তারপর সময়ের ফেরে আমেরিকা প্রবাসীর তালিকায় নাম লেখানো। প্রেম, প্রতারণা, বন্ধুত্ব- বিভিন্ন সম্পর্কের চড়াই উতরাই কিভাবে পাড়ি দেয় সায়ান? আর এই আঁধারের যুবরাজ-ই বা কে? সৌরিন বা সায়ানের সাথে তার সম্পর্কের সমীকরণটাই বা কী? পাঠ প্রতিক্রিয়া : প্রথমেই বলি, এই উপন্যাসে আলাদা দুই পরিবারে সন্তান পালনের যে চিত্রটি আমরা দেখি তা আমাদের বহুল পরিচিত। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভাবা হতো- হয়তো এগুলোই সন্তান পালনের সঠিক পদ্ধতি। তবে এ গল্পে আমরা বেশ কিছু সুন্দর এবং সংবেদনশীল বার্তা পাই প্যারেন্টিং এর ব্যাপারে। সত্যি বলতে, মা-বাবা-সন্তান এর মধ্যকার মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলো আমাকে অনেক গভীরে ভাবিয়েছে। একা বেড়ে ওঠা সৌরিনের অপূর্ণ থাকা সাধগুলো যখন একে একে সে নিজেই পূরণ করল- এটা তার ব্যাক্তিত্বে এক অন্য মাত্রা যোগ করছে। বাবা-মা নয়, সে নিজেই নিজেকে স্ট্রং করে তুলেছে! মুক্ত বিহঙ্গের মতো আকাশে উড়তে চাওয়ার বাসনায় প্রবাসী সায়ানের স্ট্রাগল ছিল চোখে পড়ার মতো। এ পথ তার জন্য সহজ ছিল না তবে সে ছিল ভাগ্যবান। তার জীবনে যেসব নারীরা এসেছিল- কেউ ছিল তার প্রেমিকা, কেউ শুধুই বন্ধু, কেউ আবার প্রেমিকাও নয় বন্ধুও নয়। বাবা- মা'র জন্য ভালোবাসা, দায়িত্বশীলতা, বন্ধু কিংবা পরিচিত সবাইকে সাহায্য করার মানসিকতা যেমন মুগ্ধ করে তেমনি এই গুনটির জন্য কম ভুগতে হয়নি সায়ানকে! রহস্যময় মানব এই আঁধারের যুবরাজের সারপ্রাইজ বই উপহার দেবার বিষয়টা বেশ ভালো লেগেছে। সাথে ভালো লেগেছে সৌরিনের সাথে তার সততা। সব মিলিয়ে বলতে হয় আঁধারের যুবরাজ যেমন ভালোবাসার গল্প তেমনি পরিবারের গল্প। এ যেন আমার গল্প, আপনার গল্প, পাশের বাড়ির গল্প। পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েন, প্রেম, প্রতারণা, বন্ধুত্ব- সব কিছুই এখানে গুরুত্ব পেয়েছে। গল্পের প্রয়োজনে অনেকগুলো চরিত্রের আগমনকে কখনো অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়নি। যা কিছু ভালো লাগার: প্রথমেই বলতে হয় উপন্যাসের পটভূমি সুন্দর, গোছানো। প্রতিটা পর্বের শুরুতে কবিতা- বিষয়টি উপন্যাসটিতে এক অনন্য মাত্রা যোগ করেছে। যেন গল্পে অন্যরকম একটি আবহ সৃষ্টি হয়েছে এর কারনে। সায়ানের চিঠির অংশটা আমার কাছে উপন্যাসের one of the best part! গল্পের সমাপ্তি খুব স্পর্শ করে গেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই তো হওয়ার ছিল। অন্য কোনো সমাপ্তি এই গল্পের সাথে মানানসই হতো না। তবুও শেষটায় মন কেমন করে উঠলো। ঠিক বিষন্নতায় নয়, হাহাকারে! গল্পের রেশ সাথে ছিল দীর্ঘক্ষণ। আলাদা করে চরিত্রের বিশ্লেষনে যাব না আমি। তবে আঁধারের যুবরাজ আর সৌরিনের ব্যাক্তিত্বের পাশাপাশি রিফাত এবং সেঁজুতি চরিত্র দুটি আমার খুব ভালো লেগেছে। প্রতিটি মানুষের জীবনে অন্ততঃ একজন বন্ধুর খুব প্রয়োজন, একজন সত্যিকার বন্ধু। মন্দলাগা: টুকটাক বানান ভুল ছাড়া আমার কাছে সত্যিই কোনো মন্দ লাগার দিক নেই। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে প্রচ্ছদটি আরেকটু সুন্দর হতে পারত। বই এর মান: বই এর ছাপা, ফন্ট, বাঁধাই নিয়ে অভিযোগের কোনো জায়গা নেই। বুক প্রোডাকশন এক কথায় চমৎকার! লিখনশৈলী : লেখকের সবচেয়ে বড় গুনের কথা যেটা বলতে হয় সেটা হলো- পাঠককে টেনে ধরে রাখার ক্ষমতা। সমকালীন বা সামাজিক রোমান্টিক যাই বলি না কেন এই ঘরানার বইগুলো একটানা পড়ে যাওয়াটা ইদানীং খুব বেশি হয় না, অন্তত আমার নিজের ক্ষেত্রে। সে হিসেবে সব কাজ সামলে আমি দেড় দিনের কম সময়ে বইটি শেষ করেছি। সহজ ভাষায় ঝরঝরে লেখা। বর্ননা করার ধরন চমৎকার যেটা সহজেই ভিজ্যুয়ালাইজ করা যায়। প্রিয় লাইন: ? "তুমি Strong" - এই কথাটাই একজন মানুষকে নিঃসঙ্গ করে দেয়... বন্ধুহীনে পরিণত করে ফেলে... বড্ড একা বানিয়ে দেয়! ? সকল সুযোগ হাত পেতে গ্রহন না করাই মনেহয় বুদ্ধিমানের কাজ। ? কাউকে তীব্রভাবে ভালোবাসা যাবে না। খুব বেশি ভালো লাগা, প্রিয়জনকে দূরে সরিয়ে দেয়। ? যাকে ভালোবাসার মানুষ আছে তাকে কখনো ভালোবাসতে নেই! ? সব অপরাধের মাফ হয় কিন্তু কারো মনের দুর্বল জায়গায় আঘাতের কখনো মাফ হয় না। ? প্রতিটি মানুষের কাছেই তিনটি জিনিস খুব প্রিয়- নিজের নাম, নিজের চেহারা আর নিজের জন্ম তারিখ। বই পরিচিতি: নাম: আঁধারের যুবরাজ লেখক: সুস্মিতা জাফর প্রচ্ছদ: মো. সাদিত উজ জামান জনরা: সামাজিক রোমান্টিক পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৭২ প্রকাশনী: চলন্তিকা প্রকাশক: রাশেদ রানা মুদ্রিত মূল্য: ৭০০৳ প্রকাশকাল: অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ রিভিউদাতা: নওশীন জোবায়ের অদিতি
Was this review helpful to you?
or
#আঁধারের_যুবরাজ_বুক_রিভিউ কিছু মানুষ পায় না আবার কিছু মানুষ পেয়েও হারায়। পেয়ে, না পাওয়ার দূরত্বে; তারা হৃদয় ভর্তি হাহাকার তাড়ায়! ~ নিশ্চুপ আঁধার (সুস্মিতা জাফর) উপরোক্ত কবিতাটি "আঁধারের যুবরাজ" বই থেকে নেওয়া হয়েছে৷ বইটি "ছোটগল্পের জাদুকর" সুস্মিতা জাফরের রচিত অষ্টম বই ও দ্বিতীয় উপন্যাস। বইটি চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ এ প্রথম প্রকাশিত হয়েছে। ◑ নামকরণ : প্রথম যখন "আঁধারের যুবরাজ" বইটার নাম দেখলাম তখন বিশেষ কিছুই মাথায় আসেনি। ভেবেছিলাম কোনো যুবরাজের কাহিনীই হবে হয়তো, যে আড়ালে থাকতে পছন্দ করে। তখন নাম নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাইনি। তারপর বইটা সম্পর্কে টুকটাক জানলাম, তখন মনে হলো নামটা ঠিকই আছে। কিন্তু বই পড়ার পর কেন বইয়ের নামকরণ "আঁধারের যুবরাজ" রাখা হয়েছে তা পুরোপুরি ক্লিয়ার হয়েছে। আর উপন্যাসের নামটা একদম মানানসই, পারফেক্ট হয়েছে। ◑ প্রচ্ছদ : আঁধারের যুবরাজ বইটির প্রচ্ছদ যখন প্রথম দেখেছিলাম তখন তেমন একটা ভালো লাগেনি। সবকিছু ঠিকঠাক লাগলেও ছেলেটির মুখটা মানানসই লাগেনি। কিন্তু চারপাশে গাছগাছালিতে ভরপুর একটা জায়গার সিড়িতে নীল পাঞ্জাবি ও গোলাপি রঙের শাড়ি পরিহিতা যুগলদ্বয়কে একসময় পছন্দ না করে থাকতে পারিনি। প্রচ্ছদের আংশিক উপন্যাসের বিশেষ একটা মুহূর্তকে কেন্দ্র করে আঁকা। প্রচ্ছদটি একসময় পছন্দ হয়ে গেলেও একটা জায়গায় আমি এখনো সন্তুষ্ট হতে পারিনি। সেটা হলো ছেলেটির মুখমণ্ডল। আমার মনে হয়েছে ছেলেটিকে আরেকটু ভালোভাবে আঁকতে পারলে প্রচ্ছদটি আরো সুন্দরভাবে ফুটে উঠতো। ◑ পারিপার্শ্বিক দিক : প্রথম যখন "আঁধারের যুবরাজ" পড়া শুরু করি তখন কেন যেন দুইটা অধ্যায় পড়ার পর বইটা আমার আর পড়তে ইচ্ছে করছিল না। মনে হচ্ছিল পড়া এগুচ্ছে না, একঘেয়েমি লাগছে৷ তাই বইটা সাইডে রেখে দুইটা গল্পগ্রন্থের বই পড়া শেষ করলাম এবং বইগুলো জলদি শেষ করতে পেরেছিলাম। তখন ভাবলাম এবার হয়তো "আঁধারের যুবরাজ" ফটাফট পড়া হয়ে যাবে। কিন্তু না, দ্বিতীয়বারের মতো শুরু করেও পড়া এগুচ্ছিল না। তখন মনস্থির করলাম, জোর করে হলেও এবার বইটা শেষ করব। সেই মোতাবেক পড়েই যাচ্ছিলাম ঢিলামি করে। কিন্তু হঠাৎ করেই খেয়াল করলাম বইটা পড়তে ভালো লাগছে। যেই একঘেয়েমি ভাবটা ছিল তা যেন হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেল। তারপর, জলদি শেষ করতে পারলাম বইটা। ◑ কাহিনী সংক্ষেপ : "হাই, আমি সৌরিন আলমের সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। উনি নিশ্চয়ই পেজটা নিজে চালান না; মডারেটর আছে?" হঠাৎ একদিন সকালে সৌরিন আলমের মেসেঞ্জারে আসা একটা মেসেজে চোখ আটকে যায় তার। প্রোফাইলে পাহাড়ের ছবি দেওয়া ফেইক আইডিটির নাম "আঁধারের যুবরাজ।" কিন্তু কে এই আঁধারের যুবরাজ? কী চায় সে সৌরিনের কাছে? "আঁধারের যুবরাজ" নামে একজন বইপ্রেমী বইপড়ুয়াদের উপহার দিচ্ছিল বিভিন্ন গল্পের বই। কিন্তু হঠাৎ করেই সে বই উপহার দেওয়া বন্ধ করে দিল। কেন? বইপ্রেমীদের মুখে হাসি ফুটানো মানুষটা হঠাৎ করে কেন হারিয়ে গেল? আগাম বার্তা ছাড়া হঠাৎ করেই সৌরিনকে ছেড়ে চলে যায় সোপান, দুই বছরের প্রেম ও ছয় বছরের বৈবাহিক সম্পর্ককে তুচ্ছ করে। ছোট থেকে আত্মনির্ভরশীল, সাহসী ও স্ট্রং থাকা সৌরিন বিয়ের পর সোপানের উপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। হঠাৎ করে সোপানের চলে যাওয়ায় সৌরিন কি সামলাতে পারবে নিজেকে? নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া শায়ান বাবা-মায়ের কড়া শাসনে বড় হচ্ছিল। সে স্বপ্ন দেখত একদিন তাদের মায়াকাননের বন্দী বাড়িটা থেকে তার মুক্তি মিলবে। ভাগ্যক্রমে একসময় সে পাড়ি জমায় আমেরিকায়। কিন্তু মায়াকানন থেকে সবসময় মুক্তি চাওয়া শায়ান কি সেই মুক্তির আনন্দ উপভোগ করতে পারবে? দুই দুইবার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে ধোঁকা খাওয়ার পর নিজেকে কি সামলে নিতে পারবে শায়ান? বিদেশ বিভুইয়ে একা নিজেকে সামলে তার ক্যারিয়ার কি গড়তে পারবে? নতুন করে কি তার জীবনে কারো আগমন ঘটবে? ◑ পাঠ-প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা : পৃথিবীর কোনো বাবা-মা তার সন্তানের খারাপ চায় না। সন্তান যাতে মানুষের মতো মানুষ হতে পারে, তার প্রচেষ্টায় করে যায় বাবা-মা। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা চালাতে গিয়ে অনেক সন্তানের আনন্দময় শৈশব নিঃশেষ হয়ে যায়। বাবা-মায়ের কঠোর শাসন, শারিরীক আঘাত, মানসিক নিপীড়ন, অতিরিক্ত প্রত্যাশা, ভালো রেজাল্ট, নিয়মে বেঁধে ফেলা, তুলনা করা, কটাক্ষ করা, ভয় দেখানো ইত্যাদি সন্তানের ক্ষতির কারণও হতে পারে। এই সবকিছুকে ব্যাড প্যারেন্টিংয়ের আওতায় ফেলা যায়। কিন্তু গুড প্যারান্টিং এর পাশাপাশি ব্যাড প্যারেন্টিং বলেও যে কিছু আছে বা হতে পারে সেটা অনেকেই মানতে নারাজ। মানুষের ধারণা বাবা-মা যা কিছু করে বা করবে তার সবই সন্তানের ভালোর জন্য। কিন্তু সবকিছুরই একটা ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে। ইতিবাচক দিকগুলোকে হাইলাইট করলেও নেতিবাচক দিকগুলোকে কিন্তু এড়িয়ে যাওয়া যায় না। একটা নেতিবাচক দিকই সন্তানের শৈশব থেকে কৈশোর অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দিতে পারে। আবার অনেকেই সেই নেতিবাচক দিকগুলোকে ছাপিয়ে, মনের মাঝে কষ্ট পুষে রেখে উন্নতির শেখরে পদার্পণ করে। "আঁধারের যুবরাজ" বইটিকে পুরোপুরি ব্যাড প্যারেন্টিংয়ের আওতায় ফেলা না গেলেও বইটিতে এর কিছু ঝলক উঠে এসেছে। বর্তমানে প্রায় অনেক সন্তানই ব্যাড প্যারেন্টিংয়ের শিকার হচ্ছে। বাবা-মায়ের অতিরিক্ত শাসন, প্রত্যাশা একসময় সন্তানের কাছে বোঝা-স্বরূপ মনে হতে পারে। ছোটবেলা থেকেই একটা আনন্দময় শৈশব, বাবা-মায়ের আদর মাখানো শাসন, ছোট ছোট ইচ্ছে পূরণ, বাবা-মায়ের সাথে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সবাই প্রত্যাশা করে। কিন্তু তার বদলে যখন সন্তানকে সাহসী, স্ট্রং ও আত্মনির্ভরশীল করে তোলার জন্য তাদেরকে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করা হয়, শারীরিক ও মানসিক আঘাত করা হয় তখন সেগুলো বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। একসময় বাবা-মায়ের থেকে সন্তান অনেকটা দূরে সরে যেতে পারে। সৌরিনকে ছোটবেলা থেকে তার বাবা-মা স্ট্রং করে গড়ে তুলেছে। নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবিদার হলেও তাকে নিরুৎসাহিত করা উচিত। সৌরিনকে স্ট্রং করতে গিয়ে তাকে অনেককিছু বিসর্জন দিতে হয়েছে। তা হোক তার শখের জিনিসপত্র কিংবা অন্যকিছু। বাবা-মায়ের কোলে উঠতে চেয়েও তা পূরণ না হওয়া, স্কুল বাসে যাতায়াতের অভ্যাস গড়ে তোলা, সবসময় পড়াশোনায় ব্যস্ত রাখা, পড়াশোনায় ক্ষতি হবে ভেবে গল্পের বই পড়তে না দেওয়া, কঠোর শাসনে রাখা, পছন্দের খাবার খেতে না পারা, নাচ ও ছবি আঁকার ইচ্ছে পূরণ না হওয়া ইত্যাদি সৌরিনের শৈশবটাকে বিষাদে ঢেকে দিয়েছে। বাবা-মায়ের সাথে মনের কথাগুলো শেয়ার করতে না পেরে গুমরে যেতে হয়েছে। সৌরিনকে ছোটবেলা থেকেই একপ্রকার মানসিক নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। অন্যদিকে শায়ান, যাকে মানসিক নিপীড়নের পাশাপাশি সহ্য করতে হয়েছে শারীরিক অত্যাচার। চুলে রাহুল কাটের জন্য বাবার হাতে মার খাওয়া, পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল না হওয়ায় মার খাওয়া, রাজনীতিতে জড়িয়ে যাওয়ায় মার খাওয়া ইত্যাদি যেন তার নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পছন্দের সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে না পারলে পড়াশোনার প্রতি একটা অনীহা চলে আসে। বাবার চাপে পড়ে বিজ্ঞান বিভাগে পড়লেও একসময় শায়ান তার স্বীদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে৷ পরিবারের নানান চাপ, তুচ্ছতাচ্ছিল্যের জন্য শায়ান তার বন্দী জীবন থেকে মুক্তি চাইতো। কতটা চাপে থাকলে একটা মানুষ তার নিজের বাড়ি থেকে মুক্তি চাইতে পারে সেটাও ভাবার বিষয়। সচরাচর আমরা যা দেখে থাকি, মেয়েদের থেকে ছেলেদের বেশি প্রায়োরিটি দেওয়া হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছেলেদের শখ, আহ্লাদ বাবা-মা কোনো প্রশ্ন ছাড়াই পূরণ করে থাকে। কিন্তু "আঁধারের যুবরাজ" উপন্যাসে শায়ানের থেকে তার বড় বোন শেফালীকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মেয়েকে ভালোবাসা খারাপ কিছু না, কিন্তু তারপরও এক সন্তানের সাথে অতিরিক্ত কঠোর হওয়া এবং অন্য সন্তানের প্রতি নরম থাকা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে৷ পক্ষান্তরে, সৌরিনের পরিবারে আমাদের সমাজের চিরাচরিত দিকটাই লক্ষণীয়। সৌরিনের ছোট ভাই আরিনকে বেশি প্রায়োরিটি দিতে গিয়ে সৌরিনকে বঞ্চিত করা হয়েছে। চাইলেই সব সন্তানকে সমান প্রায়োরিটি দেওয়া যায় না। একটু এদিক সেদিক হবেই। কিন্তু তাই বলে সন্তানদের মধ্যে অতিরিক্ত ফারাক করাও উচিত নয়। এতে বাবা-মায়ের সাথে সন্তানদের একটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়। "আঁধারের যুবরাজ" নামটি যখন প্রথম দেখি তখন আমি ভেবেছিলাম বইটি থ্রিলার উপন্যাস। যেহেতু সুস্মিতা জাফর থ্রিলার বেশি লিখে থাকেন সেহেতু আমার ধারণাটাও অবাঞ্ছনীয় নয়। কিন্তু আমার ধারণা বদলেছে বইটা পড়ে। উপন্যাসটিতে রয়েছে পারিবারিক টানাপোড়েন, প্রেম, বিরহ, বাবা-মায়ের অবহেলা, স্ট্রাগল, পেয়ে হারানোর কষ্ট, না পাওয়ার হাহাকার। শুরুর দিকে অনেকটা স্লো লাগলেও পরবর্তী ঘটনা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ছিলাম। সৌরিনের সাথে কী ঘটবে, শায়ানের জীবনটাই-বা কোন দিকে মোড় নিবে জানার জন্য পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়ে যাচ্ছিলাম। শায়ান ও সৌরিনের কষ্ট দেখে, তাদের বাবা-মায়ের থেকে পাওয়া অবহেলা দেখে মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেছিল। তাদের জন্য এক আকাশ পরিমাণ কষ্ট অনুভব করছিলাম। সোপানের চলে যাওয়ার পর সৌরিনের কষ্ট, স্ট্রাগল আমাকে অনেক ভুগিয়েছে। তাছাড়া বিদেশ বিভুইয়ে শায়ানের স্ট্রাগল ছিল চোখে পড়ার মতো। আমেরিকা মানেই সহজ কিছু নয়। অচেনা একটা দেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখা বেশ কঠিন একটা ব্যাপার। শায়ানের চিঠিটা পড়ে কেমন যেন একটা অনুভূতি হয়েছিল। কান্না পায়নি কিন্তু গলায় যেন একটা কাঁটার মতো বিঁধে ছিল। না পারছিলাম উগলে দিতে আর না পারছিলাম গিলতে। ভালোবাসার মানুষ থেকে ধোঁকা পাওয়া শায়ানের জন্য মায়া হলেও তার জীবনে একাধিক নারীর আগমনে একটু বিরক্ত হয়েছিলাম বৈকি৷ একটা সময় এসে সৌরিন তার শখ, আহ্লাদ নিজে পূরণ করেছিল, এই ব্যাপারটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। অন্যকেউ আমার শখ পূরণ করে দিবে এই আশায় না থেকে নিজের কথা নিজেরই ভাবা উচিত। তাহলে অন্যের উপর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না। সৌরিন যখন সর্বপ্রথম তার বঞ্চিত হওয়ার কথা জোর গলায় তার বাবা-মাকে বলেছিল তখন ব্যাপারটা প্রশান্তিকর লেগেছিল। শুরু থেকেই আমি চাইতাম সৌরিন তার মনের কথাগুলো কারো সাথে শেয়ার করুক কিংবা বাবা-মাকে জানাক। একসময় সৌরিনের প্রতিবাদ করায় মনটা প্রশান্তিতে ছেয়ে গেছিল। অন্যদিকে শায়ান তার মনের কথা বাবা-মাকে কখনো বলতেই পারলো না। শায়ানের মা যখন তাকে টাকার জন্য প্রেশার দিচ্ছিল তখন শায়ানের জোর গলায় প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। শেফালীর সন্তানের স্কুল খরচ বা রাতুলের আত্মীয়-স্বজনের খরচ বহন করার দায়িত্ব শায়ানের নয়। শায়ান যখন আমেরিকায় গাধার খাটুনি খাটছিল তখন সে কেমন আছে, আদৌও টাকা পাঠাতে পারবে কিনা সেটা না জেনে তাকে রীতিমতো প্রেশার দেওয়া হচ্ছিল তখন আমার প্রচন্ড বিরক্ত, খারাপ লাগছিল৷ শায়ানকে ভীষণ দুর্বল মনে হচ্ছিল। কেন সে প্রতিবাদ করতে পারে না? আর যখন একটু প্রতিবাদ করার চেষ্টা করতে চাইলো তখন তার মায়ের তিক্ত কথায় দমে যেতে হলো। কিন্তু তারপরও আমি তার জোর গলায় প্রতিবাদ করার প্রত্যাশায় ছিলাম। বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা অনেক কঠিন একটা ব্যাপার। শায়ান ও রিফাতের বন্ধুত্বটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। বন্ধুর জন্য কয়জনই-বা এতো কিছু করে। শায়ান ধোঁকা খেয়ে, অবহেলা পেয়েও রিফাতের মতো বন্ধু পেয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা গর্বের বিষয়। ফারুকের ব্যাপারটায় আমার অনেক খারাপ লেগেছে। সেঁজুতি মেয়েটা আমার ভীষণ পছন্দের। অচেনা একটা শহরে শায়ানকে মেন্টাল সাপোর্ট দিয়ে তার পাশে থাকাটা অবাকই করেছে আমাকে। যখন শায়ানের বেহাল দশা দেখে ভাবছিলাম ছেলেটার কী যে হবে, ঠিক তখনই দেবদূতের মতো যেন সেঁজুতির আগমন ঘটে। এই মেয়েটার জন্য আমার ভীষণ মায়া হয়। উপন্যাসে অতীত ও বর্তমানের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে সু-নিপুণভাবে। নব্বই দশকের ঝলক ও বর্তমান সময়ের দৃশ্যপট চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কখনো আমেরিকায় না গিয়েও লেখিকার সেই দেশ নিয়ে লেখা, দেশের বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করা বেশ ভালো লেগেছে। শায়ান ও সৌরিনের স্ট্রাগল যেন আমার চোখের সামনেই ভাসছিল। তাদের কষ্টগুলো যেন আমিও অনুভব করতে পারছিলাম। শেষের দিকে উপন্যাসটা যেন একটু তাড়াহুড়ো করে সমাপ্তির দিকে চলে গেছে। সমাপ্তিটা আরেকটু গুছানো হতে পারতো। ◑ ভালো না লাগার দিক : "আঁধারের যুবরাজ" উপন্যাসের প্রায় পুরোটাই আমার পছন্দের। সেখানে অপছন্দের দিক নেই বলতে গেলেও একটুর জন্য যেন বলতে পারছি না। উপন্যাসে কিছু এডাল্ট কথা উঠে এসেছে। হ্যাঁ, গল্পের প্রয়োজনে হয়তো উঠে এসেছে। যেই পরিবেশের সাথে যেটা মানানসই সেটা হবেই। এডাল্ট সিনগুলোও আমেরিকার পরিবেশের সাথে মানানসই। কিন্তু বইয়ের এই অংশগুলো পড়তে গিয়ে বিব্রতবোধ করছিলাম। মনে হয়েছে, সরাসরি এভাবে উল্লেখ না করলেও বোধহয় ভালো হতো। হালকার উপর দিয়ে লিখে চালালেও পাঠক বুঝতে পারতো। এই অংশগুলো পড়তে গিয়ে যেমন বিব্রতবোধ করেছি তেমন অস্বস্তিতেও পড়তে হয়েছে। উপন্যাসে বেশকিছু ইংরেজি শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। ইংরেজি শব্দের ব্যবহার হতেই পারে, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু শব্দগুলো ইংলিশের পরিবর্তে যদি বাংলায় লেখা হতো তাহলে ভালো হতো। বাংলার পাশাপাশি এতোগুলা ইংরেজি শব্দের ব্যবহার আমার কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে। জিনিসটা বারবার চোখে বাঁধছিল। ◑ খুচরো আলাপ : সুস্মিতা জাফরের একটা ভিডিও'র হালকা একটু অংশ দেখেছিলাম। সেখান থেকে জানতে পেরেছিলাম উপন্যাসে শায়ান ও সৌরিনের অতীত-বর্তমান একসাথে চলমান। পুরোটা ভিডিও না দেখেই আমি ধরে নিয়েছিলাম উপন্যাসটা টাইম ট্রাভেল নিয়ে লেখা। কীভাবে অতীত ও বর্তমানের সমন্বয় ঘটবে তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। আমার মাথা থেকে বেরিয়েই গিয়েছিল, গল্পটা আসলে জাদুকরের। এখানে টাইম ট্রাভেল বলতে কিছুই নেই। যখন কথাটা মনে পড়লো তখন নিজের বোকামিতে নিজেই কতক্ষণ হেসেছি৷ ◑প্রিয় উক্তি : ▪️জীবনে অনেকরকম সুযোগ আসবে। কিন্তু সকল সুযোগ হাত পেতে গ্রহণ না করাই মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ। ▪️যে যত দ্রুত আপন হয়, তাকে হারানোর ভয় তত বেশি থাকে। ▪️যাকে ভালোবাসার মানুষ আছে তাকে কখনো ভালোবাসতে নেই। ▪️"তুমি Strong" - এই কথাটাই একজন মানুষকে নিঃসঙ্গ করে দেয়। বন্ধুহীনে পরিণত করে ফেলে। বড্ড একা বানিয়ে দেয়। ▪️প্রতিটা মানুষের সফলতার পেছনে দীর্ঘ ব্যর্থতার গল্প লুকিয়ে থাকে। ▪️সব অপরাধের মাফ হয় কিন্তু কারো মনের দুর্বল জায়গায় আঘাতের কখনো মাফ হয় না। ▪️কাউকে তীব্রভাবে ভালোবাসা যাবে না। খুব বেশি ভালো লাগা, প্রিয়জনকে দূরে সরিয়ে দেয়। ◑ সম্পাদনা, বানান ও অন্যান্য : চলন্তিকার বই আমার আগেও অনেক পড়া হয়েছে। তাদের প্রোডাকশন কোয়ালিটি টপনচ। "আঁধারের যুবরাজের" বাইন্ডিং, প্রিন্টিং চমৎকার হয়েছে। সম্পাদনাও বেশ ভালো ছিল। এছাড়া বইটির ফ্রন্ট সাইজ, কালার, লাইন স্পেস, পেইজের গুণগত মান, যতিচিহ্নের ব্যবহার ইত্যাদি সন্তোষজনক। বইয়ে বানান ভুল তেমন একটা চোখে পড়েনি। মাঝারি সাইজের বই হওয়ায় পড়তেও তেমন একটা অসুবিধা হয়নি। সুবিধাজনক স্থানে রেখে নির্বিঘ্নে পড়তে পেরেছি। ◑ লেখনশৈলী : সুস্মিতা জাফরের লেখনশৈলী ঝরঝরে, প্রাঞ্জল। মূলত "টেবিল নম্বর ১৭" বইয়ের মাধ্যমে আমার সুস্মিতা জাফরের বই পড়া শুরু। ধীরে ধীরে তিনি প্রিয় লেখকদের তালিকায় নিজের নাম যুক্ত করে নিয়েছেন সু-নিপুণভাবে। পছন্দের লেখকের বই যত পড়া হয় ততই প্রত্যাশা আরো বেড়ে যায়। আমরা আশায় থাকি লেখক আমাদের আরো চমৎকার কিছু বই উপহার দেবেন এবং লেখক তা দিয়ে যাচ্ছেন। "আঁধারের যুবরাজ" বইয়ের প্লট নিঃসন্দেহে চমৎকার। বইয়ের পটভূমি, চরিত্রায়ন, শব্দচয়ন, বর্ণনাশৈলী সবকিছু এতো পরিপক্ব ছিল যা পাঠককে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে বাধ্য করে। চমৎকার শব্দচয়ন, বর্ণনাশৈলীর মুন্সিয়ানায় লেখক বাস্তব ও কল্পনার মিশেলে উপন্যাসটাকে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। ◑ সর্বশেষ আলোচনা : "আঁধারের যুবরাজ" সুস্মিতা জাফরের লেখা দ্বিতীয় উপন্যাস এবং আমার পড়া প্রথম উপন্যাস। লেখিকার প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস "জাগরণে যায় বিভাবরী" আমার পড়া হয়নি বিধায় তার উপন্যাস লেখার ধরন আমার তেমন জানা ছিল না। তবে ছোটগল্প পড়া হওয়ায় এক্সপেকটেশনও বেশি ছিল। আর লেখিকা আমাকে একদম নিরাশ করেননি। উপন্যাসটা যেন স-মহিমায় নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। উপন্যাসে প্রতি অধ্যায়ের শুরুতে লেখিকা একটি করে কবিতা অ্যাড করেছেন। দেখতে যেমন সুন্দর লাগছিল তেমনি কবিতাগুলো পড়েও ভালো লেগেছে। ◑ রেটিং : ৪.২/৫ ◑ এক নজরে বই পরিচিত : নাম : আঁধারের যুবরাজ লেখক : সুস্মিতা জাফর প্রচ্ছদ : মো. সাদিত উজ জামান জনরা : থ্রিলার উপন্যাস প্রকাশনী : চলন্তিকা মুদ্রিত মূল্য : ৭০০৳ প্রকাশকাল : অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ রিভিউদাতা : ফারজানা উর্মি
Was this review helpful to you?
or
#আঁধারের_যুবরাজ_বুক_রিভিউ . ‘হাই, আমি সৌরিন আলমের সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। উনি নিশ্চয়ই পেজটা নিজে চালান না, মডারেটর আছে?’ কী দারুণ ওপেনিং! পাঠককে ধরে রাখার জন্য বইয়ের শুরু খুব গুরুত্বপূর্ণ, আর এই ক্ষেত্রে সুস্মিতা জাফরের নতুন উপন্যাস “আঁধারের যুবরাজ” পুরোপুরি সফল বলে আমি মনে করি। সৌরিন আলমের এক অস্থিরতার সময়ে আঁধারের যুবরাজের সাথে পরিচয় হয়, ফেসবুক মেসেঞ্জারে। আস্তে আস্তে ফেক আইডির আঁধারের যুবরাজের সাথে সৌরিনের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। সৌরিন আলমের চেয়ে বয়সে বড় আঁধারের যুবরাজ নামের ফেক আইডির এক মানুষ দাবী করে যে সে প্রবাসী, আমেরিকায় থাকে। প্রায় প্রায়ই সে বিভিন্ন অচেনা মানুষকে বই উপহার দেয়। সৌরিনের সাথে আঁধারের যুবরাজের পরিচয় হঠাৎ করে নয়, আঁধারের যুবরাজের তার আগের কয়েকমাস সৌরিনকে ফেসবুকে ফলো করে। উপন্যাসের কাহিনী খুব সুন্দর ভাবে এগিয়েছে। কখনো সৌরিন আলম, কখনো বা আঁধারের যুবরাজ আবার কখনো শায়ান তালুকদারকে নিয়ে কাহিনী এগিয়েছে। আর সৌরিন আলম ও শায়ান তালুকদারের অতীত-বর্তমানের কাহিনীর ব্লেন্ড খুব সুন্দর হয়েছে, কোথাও হোঁচট খেতে হয় না। সৌরিন আর শায়ান উপন্যাসের মূল দুইটি চরিত্র। অন্যান্য চরিত্ররা এসেছে কাহিনীর প্রয়োজনে। তারা দুইজনই প্যারেন্টাল অ্যাবিউজের শিকার। সৌরিনের বাবা-মা সৌরিনকে ‘দুর্দান্ত সাহসী, নির্ভীক আর strong’ বানানোর জন্য শৈশবে তার কোন আবদারই পুরন করে নি। সে নাচতে ভালোবাসতো, ভালো ছবি আঁকত, কিন্তু তার কোন ইচ্ছাই পূরণ হয় নি, কখনো তাকে strong হতে হবে এজন্য, আবার কখনো বাড়ির লোন পরিশোধের অজুহাতে। সৌরিনের ছোটভাই বাবা-মার কাছে যত ধরণের সুযোগ সুবিধা পেয়েছে, তার কিছুমাত্র সৌরিন পায় নি। আর এদিকে শায়ানও ছোট থেকেই কঠোর শাসনের মধ্যে বড় হয়েছে। একটু এদিক-সেদিক দেখলেই তার গায়ে বাবা-মা’র হাত উঠত সমানে। যদিও তার বড় বোনের জন্য ছিল না কোন নিষেধাজ্ঞা। এই ভাবে সৌরিন-শায়ান দুইজনের শৈশবকে অ্যাবিউজ করা হয়েছে। যে জন্য তরুণী বয়সের সৌরিনের মুখ থেকে আর্তনাদ ভেসে আসে "লাগবে না আমার ফ্ল্যাট। বাড়ি বানানোর দোহাই দিয়ে বঞ্চিত করে আমার শৈশব আর অবহেলিত কৈশোর ফিরিয়ে দাও, আব্বু-আম্মু! প্লিজ!" অথবা সৌরিন-শায়ানের কথোপকথন উল্লেখ করতে পারি, "দুজনই প্যারেন্টাল অ্যাবিউজের শিকার। বাইরের কেউ হয়তো মেনে নেবে না, বলবে, আব্বা-আম্মা যা করে সন্তানের ভালোর জন্যই করে। কিন্তু আমি আর আপনি তো জানি, কী কী হয়েছে আমাদের সাথে .... কী কী হচ্ছে?" আমার মনে হয়েছে যে, সৌরিন বা শায়ান দুজনের কেউই খুব একটা strong ক্যারেক্টার না, এটার কারণ মনেহয় তাদের বঞ্চিত শৈশব। সোপান যখন সৌরিনকে ছেড়ে চলে যায়, সাথে সাথেই সৌরিন যেন অকুল সাগরে পড়ে যায়। কি করবে বুঝতে পারে না, কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারে না। অথচ সৌরিনের এত ভেংগে পড়ার কথা না, সে কর্মজীবী মানুষ, ফেসবুকে তার একটা পেজ আছে, সে সাইক্লিং শেখাতো, তার বাবা-মা-ভাই আছে। কিন্তু সহমর্মিতার হাতের অভাবে আর শৈশবের বঞ্চনায় তার মনে যে নিরাপত্তাহীনতার জন্ম হয়, তার ফলেই সে এরকম ভেংগে পড়ে। আবার শায়ানের আত্মবিশ্বাসেও ঘাটতিও ছোটবেলার অতিরিক্ত শাসনের ফল। যে কারণে ছোটবেলায় রুপার হাতে অ্যাবিউজ হওয়া বা তানজিলার প্রতি কাব-লাভ একতরফাই থেকে যায়। ডিভি লটারি জেতার খবরও সে বাসায় ঠিকমত বলতে পারে না। শায়ান একের পর এক মেয়ের সাথে জড়িয়েছে- রূপা, তাজরীন, প্রতীতি, সেঁজুতি, নাতাশা, পিয়েতা, ফারসিয়া! পরে ওশিনের সাথে শায়ানের বিয়ে হয়, যদিও তাদের বিবাহিত জীবন ঠিক সুখের হয় না! শায়ানের বড় দুর্বলতা কাউকে না করতে পারে না। তার বাবামা তাকে রীতিমতো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে টাকা পাঠাতে বাধ্য করে। তবে এক্ষেত্রে শায়ানের দোষও কম না। তার উচিত ছিল প্রথমেই বাবা-মাকে পরিষ্কার করে বলা যে সে কতটুকু করতে পারবে। একবার কারো জন্য কিছু করলে, সে মনে করে এইটা তো তার পাওনা! গল্পটা পুরোপুরিই শায়ান আর সৌরিনকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে। আর অন্যান্য চরিত্ররা এসেছে গল্পের প্রয়োজনে। তবে বড় আশ্চর্য হতে হয় এটা দেখে যে অন্যান্য চরিত্রের নিজস্ব মতামত বা চিন্তাভাবনা বা তাদের মধ্যকার কোন কথাবার্তা উপন্যাসে নাই বললেই চলে। যেমন তাদের বাবা-মা কেন তাদের শৈশব থেকে বঞ্চিত করেছেন, পরোক্ষভাবে অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতায় জানা হয়েছে, কিন্তু সরাসরি তাদের বাবা-মা’র মুখ থেকে শোনা যায়নি। এটা সৌরিন - আঁধারের যুবরাজ - শায়ান ব্যাতিত সব চরিত্রের জন্য সত্য! সোপান কেন ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছিল, আবার কেনই বা ফিরে এলো তার কোন ব্যাখ্যা নেই। তেমনি জানা যায় না রাজনৈতিক দলের বড়ভাই, বা প্রতীতি, বা সেঁজুতির মনের কথা। এই বইয়ের একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো প্রতি অধ্যায়ের শুরুতে লেখকের লেখা কবিতা পাওয়া। ছোট ছোট কবিতাগুলো বেশ সুন্দর। ভালো লেগেছে। . “আঁধারের যুবরাজ” সুস্মিতা জাফর আপুর নতুন উপন্যাস, এসেছে চলন্তিকা থেকে। বইটি পড়ে খুব ভালো লেগেছে। বইয়ের প্রচ্ছদ দারুণ, প্রিন্টিং সুন্দর, বাঁধাই সুন্দর, বানান ভুল তেমন একটা চোখে পড়েনি। শুধুমাত্র পড়ার সময় “তানাহলে” শব্দটা বেশ বিরক্ত করেছে এবং এই “তানাহলে” বেশ কয়েকবার চোখে পড়েছে। এটা তো “তা না হলে” হবে! . বই-পরিচিতিঃ বইয়ের নামঃ আঁধারের যুবরাজ লেখিকাঃ সুস্মিতা জাফর প্রচ্ছদঃ মো. সাদিতউজজামান প্রকাশনীঃ চলন্তিকা প্রকাশন প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ জনরাঃ সামাজিক রোমান্টিক উপন্যাস মুদ্রিত মূল্যঃ ৭০০ টাকা পৃষ্ঠ সংখ্যাঃ ২৭২
Was this review helpful to you?
or
#আঁধারের_যুবরাজ_বুক_রিভিউ ❝ভালো থেকো আমার প্রিয় মানুষ। এই ইউনিভার্সে না হোক,হয়তো অন্য কোনো ইউনিভার্সে তোমার সাথে আমার একবার হলেও দেখা হবে!❞ ?বই-পরিচিতিঃ বইয়ের নামঃ আঁধারের যুবরাজ লেখিকাঃ সুস্মিতা জাফর প্রচ্ছদঃ মো.সাদিতউজজামান প্রকাশকঃ রাশেদ রানা প্রকাশনীঃচলন্তিকা প্রকাশন প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি,২০২৪ জনরাঃ সামাজিক রোমান্টিক উপন্যাস মুদ্রিত মূল্যঃ ৭০০ টাকা পৃষ্ঠ সংখ্যাঃ ২৭২ ?বইটির ফ্ল্যাপঃ ভালোবাসার গল্পগুলো আসলে কী রকম হতে হয়? রোমান্টিক সংলাপ, দুটি প্রাণের উথালপাতাল পাগলামো, বন্য উন্মত্ততায় হারিয়ে যাওয়া, গল্পের ভাঁজে ভাঁজে রগরগে উত্তেজনা। এর বাইরেও কি শিহরণ জাগানিয়া ভালোবাসার গল্প হয়? 'ভালোবাসি' বলা যায় সহজেই। ভালো হয়তো বাসাও খুব বেশি কঠিন নয়। ভালোবেসে কাছে চাওয়া এবং পাওয়াও হরদম চলছে। কিন্তু ভালোবেসে না চেয়েও কিংবা চেয়ে না পেয়েও কিংবা পেয়ে হারিয়েও ভালোবাসাকে অবিকৃত রেখে পাশে থাকার গল্প বেশি আছে কি? আঁধারের যুবরাজ... এমন একটি গল্পের সঙ্গে সহযাত্রা হয়ে যাক। ?বইটির উৎসর্গঃ আমার দাদা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। জানি না, দাদা বেঁচে থাকলে খুশি হতেন নাকি বেজার। দাদুরও এখন পঁচাশি বছর বয়স। সব সময় শিশুসুলভ আচরণ করেন। এ বইটা হাতে ধরিয়ে দিলে হয়তো বুঝবেনও না এখানে তাঁদের দুজনেরও নাম লেখা আছে। তবুও এ বইটি তাঁদের দুজনের জন্য। মীর মোকাদ্দেছ আলী (মরহুম দাদা) আছিয়া বেগম (দাদু)। ?বইয়ের অংশ থেকে নেওয়াঃ 'এই সৌরিন, এই!' আম্মুর ডাকে ধড়মড় করে উঠে বসল সৌরিন। কাঁচা ঘুমটা ভেঙে যাওয়ায় বিরক্ত লাগল ওর। 'সেই কখন থেকে তোমার ফোন বেজে যাচ্ছে! রিসিভ করছ না কেন?' মোবাইলটা টেবিলে চার্জে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়েছিল একটু। এই সাতসকালে কে এত ফোন করছে? 'এত্ত ঘুম, বাব্বাহ! আর তুমি কি পাগল হয়ে গেছো!' হুট করে ফ্যানটা অফ করে চলে গেল আম্মু। কী যে এক অস্ত্র হয়েছে এই বাঙালি মায়েদের কাছে। গরমের দিনে ঘুম থেকে তোলার জন্য ফ্যানের সুইচ অফ করে দেন এনারা! কেন? ফ্যানের সাথেই কেন শত্রুতা করতে হবে? পরক্ষণেই সৌরিনের মনে পড়ল, এখন জানুয়ারি মাস। কনকনে শীতের ভোর। মোবাইলে তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস! সৌরিন ভেবেই পাচ্ছে না, সে ফ্যান ছেড়ে ঘুমিয়েছিল কেন? আশ্চর্য! ?ঔপন্যাসিকের কথাঃ সত্যি বলতে ২০২৩ সালের জুলাইতেও আমি ভাবতে পারিনি, বছর শেষ হওয়ার আগেই সুস্মিতা জাফরের আরো একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস লেখা হয়ে যাবে! তাও আবার ষাট হাজারের অধিক শব্দের...প্রথম উপন্যাস 'জাগরণে যায় বিভাবরী'-এর দ্বিগুণ! 'আঁধারের যুবরাজ'-এর প্লট আমি সাজাতে শুরু করেছিলাম এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই। দীর্ঘ ছয় মাস মস্তিষ্কের প্রতিটা কোষে কোষে এ গল্প সাজাতে হয়েছে আমাকে... সিনক্রোনাইজ করতে হয়েছে অতীতের সাথে বর্তমানের। পুরো কাঠামো গুছিয়ে তবেই লিখতে বসেছিলাম আগস্ট মাসে। বলা যায়, টানা পাঁচ মাসের নির্ঘুম চেষ্টার ফসল আমার এ দ্বিতীয় উপন্যাসটি। ?চরিত্রায়নঃ সৌরিন আলম,শায়ান তালুকদার, আঁধারের যুবরাজ, শেফালী, রিফাত,রোকেয়া, রায়হান সাহেব,রাতুল,ফাহিম, তানজিলা,রূপা,প্রতীতি,ফারসিয়া,নাতাশা ওশিন,সৌরিনের মা-বাবা সহ আরও অনেকেই।প্রত্যেকটি চরিত্রকেই সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখিকা।হুট করেই কারোর চরিত্রই চলে আসে নি গল্পে।পছন্দের চরিত্র ছিল সৌরিন ও আঁধারের যুবরাজ। রিফাতের বন্ধুত্ব বেশ ভালো লেগেছে। ?পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ বইয়ের গল্পটা থ্রিল নয় তবুও রহস্যময়! নাম দেখে থ্রিলই মনে হয়েছিলো। সময় নিয়ে বইটি শেষ করবো ভাবলেও এতো আগ্রহ বেড়েছিলো যে পুরো রাতেই শেষ করলাম। অসাধারণ একটা সামাজিক রোমান্টিক উপন্যাস। প্রথম কয়েকটি পর্ব পরেই বলা যাবে না যে পরে কি হতে চলেছে।লেখা গুলো বাদ দিয়ে পরের পর্ব ধরতে পারব এমনও নয়। প্রথম কযেকটি পর্ব ধীর গতিতেই আগানো।পুরোটা বই ই মনোযোগ ধরে রাখতে বাধ্য। ভালোবাসা,বিরহ,অতীত,পিতামাতার অবহেলা প্রত্যেকটিই পর্বই যেন বাস্তব মনে হচ্ছিল।দৈনন্দিন জীবনের অহরহ ঘটনা ও বলা যায়। "ভালোবাসি" না বললেও কি ভালোবাসা হয় না? লেখিকা দারুণ শব্দচয়নে লিখেছেন উপন্যাস টি। উপন্যাসের মাঝে মাঝে কিছু কবিতা দেয়া আছে।আমার কাছে ভালোই লেগেছে। পড়ার মাঝে একঘেয়ে দূর করে এবং চরিত্র গুলো যেন কবিতার মাঝে বিদ্যমান।জীবনে প্রতিদিনে কতোকিছুই না ঘটে থাকে।প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য লেখার মাঝে জানিয়ে দিয়েছে লেখিকা আপু। কিছু জিনিস আমরা না চাইতেও পেয়ে যাই আবার কিছু জিনিস আমরা চেয়ে ও পাই নাহ্ আর পেয়েও হারানোর কষ্ট বেশিই। শেষের দিকের ৩ পেজেই চিঠিটার প্রত্যকটি কথা পড়ে আমি হতভম্ব! গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। যদিও চরিত্র গুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঠিক ছিলো। উপন্যাসের শেষ অংশ টুকুর রেশ কাটবে না কখনো।উপন্যাস টা পড়েই দেখুন, শেষাংশ টা না বলি আর। সৌরিন কি পেরেছিল ছয় বছরের সম্পর্কের বেড়াজাল ভেঙে থেকে বেরিয়ে আসতে? পেরেছিল কি আঁধারের যুবরাজ কে ভালোবাসতে? কে এই আঁধারের যুবরাজ? কি তার পরিচয়? যুবরাজ কি জানত না সৌরিন বিবাহিত ছিল?কেন ই বা সৌরিনকে উপহার দিয়েছিল? যুবরাজ জানত সৌরিনকে তার কখনোই পাওয়া হবে না তবুও কি যুবরাজ সৌরিন কে ভালোবাসত? সোপান কোথায় ই ছিল এতোদিন? আলোচনা না সমালোচনা কি- না জানি না উপন্যাসটিতে চরিত্রের কথোপকথনের মধ্যে কিছু এডাল্ট কথা রয়েছে। যদিও চরিত্রের সাথে খুব সুন্দরভাবেই সাজানো।তবুও কথাগুলো ডিপলী আলোচনা না করে হালকার উপর স্কিপ করাই যেতো।তবে পাঠক চাইলে তা স্কিপ করে পড়তে পারে। ?বইটির নামকরণঃ বর্তমানে লেখক-লেখিকা এবং পাঠকদের হৃদগত ভাবমূর্তি প্রকাশের জন্য অন্যতম মাধ্যম হলো বই।ভিন্ন রকমের কল্পনাশক্তি ব্যবহারেই বইয়ের নামকরণ হয়।সেক্ষেত্রে "আধাঁরের যুবরাজ" বইটির নামকরণ চমৎকার! ?বইটির প্রচ্ছদঃ বর্তমানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো বইয়ের প্রচ্ছদ। বইয়ের প্রচ্ছদ উপর আকৃষ্ট হয়েও বই কেনা হয়। তেমনি "আধাঁরের যুবরাজ" বইয়ের চমৎকার নামের সাথে মিল রেখে কিছু রঙের ছোঁয়ায় অসাধারণ একটি প্রচ্ছদ । বইটির ডেমো প্রচ্ছদ কিন্তু অসম্ভব সুন্দর! ?লেখিকার পরিচিতিঃ পেশায় চিকিৎসক সুস্মিতা জাফরের লেখালেখির শুরুটা হয় ক্লাস ওয়ানে। ১৯৯৯ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের 'কচি-কাঁচার আসর'-এ প্রথম ছড়া এবং দৈনিক প্রথম আলোর 'গোল্লাছুট'-এ প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। দৈনিক সমকাল ও যুগান্তরে লিখেছেন ফিচার। এ পর্যন্ত তার লিখিত গল্পের সংখ্যা দেড়শর অধিক। সুস্মিতার লেখা ছয়টি গল্পগ্রন্থ 'সোয়েটার', 'টেবিল নম্বর ১৭', 'ব্রেকিং নিউজ', 'জল জাদুকর', 'ইথেন এবং রোদ চশমা, 'প্রেয়সী'। প্রথম উপন্যাস থ্রিলার জনরার 'জাগরণে যায় বিভাবরী' ও শিশু-কিশোর গল্পগ্রন্থ 'ইথেন এবং রোদ চশমা'-এর জন্য ভূষিত হয়েছেন 'চলন্তিকা সাহিত্য পুরস্কার' ও 'চলন্তিকা বইমেলা বেস্টসেলার পুরস্কার'-এ। ?বানান,কোয়ালিটিঃ সাধারণত বইয়ের কিছু ভুল থাকেই। তবে বেশি ভুল থাকলে বিরক্তিকর চলে আসে পড়াতে। কিছু ভুল পড়ার মতোই। সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখাগুলো ছিল। তবে চলন্তিকা প্রকাশনীর "আধাঁরের যুবরাজ" বইটিতে তেমন কোনো ভুল আমি পাই নি।যার কারণে বইটি পড়েও তৃপ্ত। বইয়ের কোয়ালিটি বলা যায় উন্নত মানের।বাইন্ডিং থেকে শুরু করে কাগজের মান ভালো।সেক্ষেত্রে প্রকাশনীকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। ?পছন্দের কিছু কথাঃ ★কাউকে তীব্রভাবে ভালবাসা যাবে না।খুব বেশি ভালো লাগা,প্রিয়জনকে দূরে সরিয়ে দেয়। ★যাকে ভালোবাসার মানুষ আছে তাকে কখনো ভালোবাসতে নেই! ★যে যত দ্রুত আপন হয়,তাকে হারানোর ভয় তত বেশি থাকে। ★প্রতিটি মানুষের কাছেই তিনটা জিনিস খুব প্রিয় - নিজের নাম,নিজের চেহেরা আর নিজের জম্মতারিখ। ★যাকে আমরা ভালোবাসি তাকে কখনো বিয়ে করতে হয় না।বিয়ে না করলে ভালোবাসাটা যুগ যুগ জিইয়ে থাকে। ★সময় সাজিয়ে দেয় কে হবে কার কত প্রিয়। ★অর্থহীন আলাপচারিতার জন্য অপরিচিত মানুষ perfec। ★নিজের জীবনের দুশ্চিন্তা,দুঃখ,হতাশা আর বর্থ্যতার ব্যাপারে পরিচিত কারো সাথে সহজে কথা বলা যায় না। ★জীবনে অনেকরকম সুযোগ আসবে। সকল সুযোগ হাত পেতে গ্রহণ না করাই মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ। ★"তুমি Strong " এই কথাটাই একজন মানুষকে নিঃসঙ্গ করে দেয়... বন্ধুহীনে পরিণত করে ফেলর...বড্ড একা বানিয়ে দেয়! যারা সামাজিক রোমান্টিক গল্প পছন্দ করেন পড়তে তারা বইটি পড়ে দেখতে পারেন। লেখায় ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ
Was this review helpful to you?
or
দোরগোড়ায় কড়া নেড়েছিল ভিখারি বাড়িয়ে শূন্য থালার ছায়া; ঘরে কিছু ছিল না দেওয়ার মতো ব্যতিরেকে কয়েক মুঠো মায়া। ~সুস্মিতা জাফর। বইয়ের নাম: আঁধারের যুবরাজ লেখিকা: সুস্মিতা জাফর। প্রকাশনী: চলন্তিকা। প্রকাশক: রাশেদ রানা। প্রচ্ছদ: মো. সাদিতুউজামান। জনরা: সামাজিক-রোমান্টিক মূল্য: : ৭০০ টাকা মাত্র। পৃষ্ঠা: ২৭২ পরিবেশক- বাংলাদেশ: বেঙ্গল বই, পাঠক সমাবেশ, বাতিঘর। ভারত: দেজ পাবলিশিং। ১৩ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা। যুক্তরাষ্ট্র: মুক্তধারা, নিউইয়র্ক। অনলাইন পরিবেশক: রকমারি, দূরবীন, বইপরী, বুকমার্ক, ধী, প্রজ্ঞা, বই বিলাস, ক্ষণিকা ও বুকলেট। ব্যক্তিগত রেটিং: ৪/৫ রিভিউ দাতা: এম.আর.এ. আকিব লেখক পরিচিতি: পেশায় চিকিৎসক সুস্মিতা জাফরের লেখালেখির শুরুটা হয় ক্লাস ওয়ানে। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক ইত্তেকাফের 'কচি-কাঁচার আসর'-এ প্রথম ছড়া এবং প্রথম আলোর 'গোল্লাছুট'-এ প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। সুস্মিতার লেখা ছয়টি গল্পগ্রন্থ 'সোয়েটার', 'টেবিল নম্বার ১৭', 'ব্রেকিং নিউজ', 'জল জাদুকর', 'ইথেন এবং রোদ চশমা', এবং 'প্রেয়সী'। প্রথম উপন্যাস থ্রিলার জনরার 'জাগরণে যার বিভাবরী' ও শিশু-কিশোর গল্পগ্রন্থ 'ইথেন এবং রোদ চশমা'-এর জন্য ভূষিত হয়েছেন 'চলন্তিকা সাহিত্য পুরস্কার' ও 'চলন্তিকা বইমেলা বেস্টসেলার পুরস্কার'-এ। প্রচ্ছদ: একটি রোমান্টিক বইয়ের প্রচ্ছদ যেরকমটা হওয়া উচিত, প্রচ্ছদটা ঠিক সেরকম হয়েছে। চারপাশে গাছগাছালি, তার মধ্যে একটি সিঁড়ির মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকা বসে আছে। প্রেমিকের পরনে পাঞ্জাবি এবং প্রেমিকার পরনে শাড়ি যেন মুহুর্তটা আরো সুন্দর করে তুলেছে। এছাড়া আরো একটি ডেমো প্রচ্ছদ রয়েছে এটিও আমার খুব ভালো লেগেছে। একটি রোমান্টিক বইয়ের প্রচ্ছদ হিসেবে দুটি প্রচ্ছদই পাঠকের মন কাড়বে। তবে মূল প্রচ্ছদে আমরা দেখতে পাই প্রেমিক-প্রেমিকা দুজনের চোখ বন্ধ। যদি দুজন দুজনের দিকে চোখ খুলে তাকিয়ে থাকতো তাহলে হয়তো আরো ভালো লাগতো দেখতে। যদিও প্রচ্ছদ নিয়ে আমার ধারণা নিতান্তই অল্প। ফ্ল্যাপ: বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাগুলো লিখেছেন কথাসাহিত্যিক ফৌজিয়া খান তামান্না। নিচে ফ্ল্যাপ থেকে কিছু অংশ সরাসরি তুলে ধরা হলো- " 'ভালোবাসি' বলা যায় সহজেই। ভালো হয়তো বাসাও খুব বেশি কঠিন নয়। ভালোবেসে কাছে চাওয়া এবং পাওয়াও হরদম চলছে। কিন্তু ভালোবেসে না-চেয়েও কিংবা চেয়ে না-পেয়েও কিংবা পেয়ে হারিয়েও ভালোবাসাকে অবিকৃত রেখে পাশে থাকার গল্প বেশি আছে কি? 'আঁধারের যুবরাজ'... এমন একটি গল্পের সঙ্গে সহযাত্রা হয়ে যাক।" উৎসর্গ: লেখিকার জন্মের মাত্র কয়েকমাস পরেই তাঁর দাদা মা/রা যান। দাদার কোনো স্মৃতি লেখিকার মনে নেই। এমনকি দাদার সাথে কোনো ফটোগ্রাফও নেই তাঁর। তাঁর দাদা ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তবে দাদার সাথে কোনো ফটোগ্রাফ না-থাকলেও দাদার কথা লেখিকার হয়তো বেশ মনে পড়ে। হয়তো মনে পড়ে দাদা বেঁচে থাকলে আদরটা আরো একটু বেশিই পেতেন। এজন্যই 'আঁধারের যুবরাজ' বইটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর দাদা ও দাদুকে। দাদু বেঁচে থাকলেও পঁচাশি বছর বয়সে এখন আর এতকিছু বুঝেন না। উৎসর্গ পাতায় সুন্দর করে দাদা ও দাদুকে নিয়ে লেখিকা বেশ গুছিয়ে কিছু কথা লিখেছেন। লেখাগুলো ভালো লেগেছে। ভূমিকা: 'আঁধারের যুবরাজ' বইয়ের ভূমিকা অংশে তিনজন পাঠক/বেটা রিডার তাঁদের মতামত প্রকাশ করেছেন। আমি সেখান থেকে সালসাবিলা নকির লেখার কিছু অংশ সরাসরি তুলে ধরলাম। " 'আঁধারের যুবরাজ' নামটি দেখেই মনে হয় থ্রিলার জাতীয় কোনো কাহিনি হবে। যেহেতু সুস্মিতা জাফরের প্রথম উপন্যাসও থ্রিলার জনরার ছিল। ঠিক এমন মনোভাব নিয়েই আমি পাণ্ডুলিপিটি পড়তে শুরু করেছিলাম। পড়তে পড়তে বুঝতে পারছিলাম থ্রিলার না; তবুও এ উপন্যাসটিকে থ্রিলার আখ্যা দিতে ইচ্ছে করে। কারণ প্রথম চৌদ্দটি পর্বেও আপনি বুঝতে পারবেন না, ঠিক কী হতে যাচ্ছে। মানুষের মন সবচেয়ে বেশি রহস্যময়। এ উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্ব চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। সেই সাথে অতীত ও বর্তমান কোলাজ করে লেখা লিখনশৈলী; সম্পূর্ণ মনোযোগ টেনে ধরে রাখতে বাধ্য।" পাঠ প্রতিক্রিয়া: 'আঁধারের যুবরাজ' উপন্যাসের কয়েক পর্ব লেখিকা ফেসবুক গোষ্ঠীতে (গ্রুপে) প্রকাশ করার জন্য বই পড়ার আগেই পর্বগুলো পড়েছিলাম। সেখান থেকেই উপন্যাসটি পড়ার আগ্রহ হয়েছিল। প্রথমেই যে প্রশ্নটি মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল তা হলো, "আঁধারের যুবরাজ আসলে কে?" ঠিক এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যই যেন বইটি পড়ার প্রতি আগ্রহটা বেশি ছিল। বইটি যখন পড়তে শুরু করি তখন ভেবেছিলাম এত বড়ো বইটি পড়তে কতদিন যেন লাগবে! তবে বেশিদিন লাগেনি, মাত্র ৪দিনেই আমি বইটি পড়ে শেষ করতে সক্ষম হয়েছি। আমি একটি বই পড়লে সেটি শুধু রিডিং পড়েই যাই না, বরং প্রত্যেকটা শব্দ এবং অর্থ বুঝার চেষ্টা করি এবং উপন্যাসের কাহিনিগুলো বাস্তবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। অবশ্য শুধু আমি না, প্রত্যেক পাঠকই হয়তো এমন করেন। বইটি পড়ার সময় আমার কখনো একঘেয়েমি সৃষ্টি হয়নি, বরং একটি পর্ব পড়ার পর অন্য পর্ব পড়ার জন্য মনের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। পরের পর্বে কী আছে, পরের পর্বে কী আছে... এরকম একটা কৌতূহল আমার মধ্যে ছিল। পাঠকদের ধরে রাখার জন্য লেখিকা যথেষ্ট গুছিয়ে বইটি লিখেছেন বলে ভালো লেগেছে। বইয়ে অপ্রয়োজনীয় কোনো বর্ণনা লিখে বইটি বড়ো করা হয়নি বরং প্রত্যেকটা ঘটনাই কাহিনির প্রয়োজনে উঠে এসেছে। এজন্যই বেশ বড়ো বইটি পড়তে গিয়ে একবারের জন্যও সময়ের অপচয় হচ্ছে বলে মনে হয়নি। আমি বিশ্বাস করি, এরকম প্রতিক্রিয়া শুধু আমার না, বরং যারা যারা বইটি পড়বে কেউ-ই বইটি পড়তে গিয়ে একঘেয়েমি অনুভব করবে না। এছাড়া বইটিতে যেমন রোমান্টিক দৃশ্য রয়েছে, তেমনি আছে কিছু দুঃখের দৃশ্য। রোমান্টিক দৃশ্য পড়ার সময় আমি যেমন রোমাঞ্চিত হয়েছি ঠিক তেমনি দুঃখের দৃশ্যগুলো আমাকে ব্যথিত করেছে। সার-সংক্ষেপ: উপন্যাসের শুরুটা হয় সৌরিন নামের একজন নবীন লেখিকার ইনবক্সে একটি মেসেজ পাঠানোর মধ্য দিয়ে। মেসেজটি পাঠিয়েছেন 'আঁধারের যুবরাজ' নামের একজন। কেন যেন সৌরিন আলম এই আঁধারের যুবরাজকে উত্তর না-দিয়ে থাকতে পারে না। আইডির এরকম অদ্ভুত নাম দেখেই হয়তো তার আঁধারের যুবরাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়, যেরকম আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল পাঠকেরও। একসময় নিয়মিতই সৌরিন আলম আঁধারের যুবরাজের সাথে কথা বলতে থাকে। কিন্তু ঠিক কী কারণে সে আঁধারের যুবরাজের সাথে কথা বলে সে তা জানে না। অপরদিকে উপন্যাসের অন্য ভাগে আমরা দেখতে পাই শায়ান নামের নবম শ্রেণিতে পড়া এক কিশোরের দেখা। নবম শ্রেণিতে পড়া শায়ান সবসময় আকাশে উড়তে চায়। এ বয়সটাই হয়তো এমন, সবসময় উড়তেই মন চায়। চুলের স্টাইল থেকে শুরু করে বন্ধুদের সাথে মিশে সিগারেট খাওয়াও হয় শায়ানের। কিন্তু বাবা-মায়ের কড়া শাসনে সবসময় ভয়ে থাকে সে। সামান্য চুলের স্টাইলের জন্য বাবার হাতে মা/র খেতে হয়। নবম শ্রেণির শায়ানের জীবনে প্রথম ভালোবাসার মানুষ হয়ে আসে সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া ফুপাতো বোন রুপা। অপূর্ব রূপসী রুপাকে দেখে শায়ানের কিশোর মনে প্রেমের উদয় হয়। যদিও রুপা আপু তার থেকে বয়সে ২ বছরের বড়ো, তবুও সে একা একাই হয়তো ভালোবেসে ফেলে রুপা আপুকে। কিন্তু কী হয় এর ভবিষ্যৎ? অবশ্য শায়ানের জীবনে আরো কয়েকজন নারীরও আগমন ঘটে। তানজিলা, প্রতীতি, পিয়েতা, ফারসিয়া, সেঁজুতি ও ওশিন আসে শায়ানের জীবনে। অবশ্য সবার সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল না তার। অতঃপর নির্দিষ্ট কেউ একজন কি আসে শায়ানের জীবনে? এলে কে সে? সে কি তার ভালোবাসা দিয়ে শায়ানের জীবনটা বসন্তের মতো রঙিন করে দিতে পারে? অপরদিকে বাবা-মায়ের শাসনের জন্য মায়াকাননে নিজের বাড়িটাকে জেলখানা মনে হতো শায়ানের। তার খুব ইচ্ছে হতো এই জেলখানা থেকে মুক্তি পেতে। ইচ্ছে করতো মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াতে। একসময় তার ইচ্ছে পূরণ হয়। ভাগ্যক্রমে সে চলে যায় আমেরিকায়। কিন্তু সেখানে গিয়েও কি সে সুখী হয়? তার এতদিনের ইচ্ছে পূরণ হওয়ায় সে কি মন থেকেই খুশি হতে পারে? না কি একের পরে এক সমস্যা এসে তার জীবনে সৃষ্টি হয়? শায়ান কি নিজে সম্পূর্ণ নির্দোষ না কি তারও কোনো ভুল রয়েছে? শেষ পর্যায়ে শায়ানের কী হয়? আর ওই যে প্রথমে বলেছিলাম আঁধারের যুবরাজের কথা, সেই আঁধারের যুবরাজের সাথে সৌরিন আলমের নিয়মিতই কথা হতে থাকে। আঁধারের যুবরাজ সৌরিনের জন্য নানারকম উপহার পাঠাতে থাকে। তাও আবার খুব দামী দামী উপহার। কিন্তু এত দামী দামী উপহার এই অচেনা আইডির লোকটা কেন দিচ্ছে সৌরিনকে? সৌরিনের জন্মদিনের আঁধারের যুবরাজই যেন সবার আগে সৌরিন আলমকে শুভেচ্ছা জানায়। কিন্তু কেন? সৌরিন আলম তো বিবাহিতা। যদিও কয়েকদিন স্বামীর সাথে ভালো সম্পর্ক যাচ্ছিলো না, স্বামীর অনুপস্থিতিতে কি আঁধারের যুবরাজ সৌরিনের মনে জায়গা করে নেয়? সৌরিন কি আঁধারের যুবরাজকে ভালোবেসে ফেলে? আঁধারের যুবরাজ বলে আদৌ কি কেউ বাস্তবে আছে? না কি আইডিটার সাথে সাথে আইডির মানুষটাও ফেক? উপন্যাসের শেষে কী হয় সৌরিন এবং আঁধারের যুবরাজের? সৌরিন ও তার স্বামীর মধ্যে কি মিটমাট হয় না কি আঁধারের যুবরাজের সাথেই সৌরিনের নতুন সম্পর্ক সৃষ্টি হয়? জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে 'আঁধারের যুবরাজ' বইটি। চরিত্র বিশ্লেষণ: সৌরিন আলম: একজন নবীন লেখল সৌরিন আলম। ছোটোবেলা থেকেই অনেক স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছে সে। বাবা-মা সবসময় বলতেন তোমাকে স্ট্রং হতে হবে। ছোটোবেলা থেকেই স্কুলে যাওয়া থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া সবকিছু যেন সৌরিনকে একা একাই করতে হতো। যেখানে সহপাঠীদের বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের নিজ হাতে খাইয়ে দিতো সেখানে সৌরিনকে সবকিছু নিজে নিজেই করতে হতো। ছোট্ট সৌরিনের মনের কষ্টগুলো কেউ বুঝতো না। মনের মধ্যে কতটা চাপা কষ্ট নিয়ে সৌরিন বড়ো হয়েছে সেই জানে। সে ভাবতো তার বাবা-মা কখনোই থাকে ভালোবাসেনি। সমস্ত ভালোবাসা তার ছোটোভাইয়ের জন্য। তাকে একটুও ভালোবাসেনি। ছোটোবেলা থেকে এমন কষ্ট পাওয়া সৌরিনের জীবনে বড়ো হয়েও কষ্ট লেগে থাকে। সৌরিন চরিত্রটার ছোট্ট বেলার কাহিনিগুলো আমাকে খুবই আঘাত দিয়েছে। প্রত্যেকটা সন্তান চায় তার বাবা-মা তাকে একটু যত্ন নিক, একটু ভালোবাসুক। কিন্তু সে তা পায়নি। তবে সৌরিন নিজেকে স্ট্রং করে গড়ে তুলেছে বলে খুবই ভালো লেগেছে। সবসময় নিজেই নিজের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতো। কিন্তু তারপরেও মাঝেমধ্যে সে প্রচণ্ডরকমের দুর্বল হয়ে কান্নাও করতো। সৌরিন চরিত্রের মাঝে আমরা একই সাথে শক্ত এবং দুর্বল দুটি দিকই লক্ষ করি। তবে স্ট্রং দিকটাই অধিক বলে মনে হয়। শায়ান তালুকদার: ছোটোবেলা থেকেই বাবা-মায়ের কড়া শাসনে বড়ো হয়েছে সে। সবসময় মনে হতো বাবা-মা তাকে ভালোবাসে না, শুধুই শাসন করে। বড়ো বোন শেফালীকে বাবা-মা বেশি আদর করে। শায়ানকে একটুও স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়া হয় না। কিন্তু এতকিছুর পরেও শায়ান তার মতো চলতে চায়। সিগারেট খাওয়া থেকে শুরু করে রাজনীতি সবকিছুতেই সে যুক্ত হয় পরিবারের কাউকে না-জানিয়েই। বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছিল শায়ান ডাক্তার হবে, কিন্তু শায়ান তা হতে পারেনি। শায়ান মনে করে তাকে অতিরিক্ত শাসন করা হয়। কারণ নবম শ্রেণির কোনো কিশোরের গায়ে হাত তোলা বিষয়টা বাবা-মায়ের আদৌ উচিয় কি না। কিন্তু শায়ানের সমস্ত চিন্তাভাবনা কি সঠিক? শায়ান চরিত্রটা ভালো লাগলেও আমার মনে হয়েছে শায়ানের পরিস্থিতির জন্য শুধু তার বাবা-মা নয়, বরং সে নিজেও অনেকটা দায়ী। চাইলেই সে নিজেকে আরো একটু গুছিয়ে নিয়ে পারতো। ফাহিম ও রিফাত: শায়ানের সবচেয়ে প্রিয় দুই বন্ধু ফাহিম এবং রিফাত। ফাহিম এবং রিফাতের মধ্যে আমরা চিরপরিচিত বন্ধুদের মনোভাব দেখতে পাই। তাদের বুদ্ধিতেই শায়ান নিজের চুলের স্টাইল-সহ সিগারেট খাওয়া সবকিছু শিখে। কিন্তু এতকিছুর পরেও বন্ধু তো বন্ধুর জন্যই। বিভিন্ন বিপদ-আপদে সবার আগে বন্ধুরাই বরং এগিয়ে এসেছে। সে হিসেবে ফাহিম এবং রিফাতের মধ্যে আমরা প্রিয় বন্ধুর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পেয়েছি। শায়ানের বাবা-মা: শায়ানের বাবা-মায়ের মধ্যে আমাদের স্বাভাবিক বাবা-মায়ের আচরণই দেখতে পাই। প্রত্যেক মা-বাবাই চায় তাদের সন্তান যেন ভদ্র-নম্র, শিক্ষিত হয়। এলাকার সবাই যেন তাদের সন্তানকে ভালো ছেলে বলেই মনে করে। সবাই চায় তাদের ছেলে-মেয়েরা ভালো করে লেখাপড়া করে ভালো একটা চাকরি করুক। কিন্তু কিশোর ছেলের গায়ে আঘাত করা বিষয়টা আমার কাছে একটু বেশিই মনে হয়েছে। কারণ শুধু শাসন করেই কাউকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনা যায় না, বরং ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে একটা ভালো কাজে উৎসাহিত করতে হয়। আর নির্দিষ্ট একটা স্বপ্ন সন্তানকে দিয়ে পূরণ করানোর বিষয়টাও ভালো লাগেনি। সন্তানকে ডাক্তার হতে হবে এমন মনোভাব রাখা আদৌ উচিত না। সন্তানের পছন্দ-অপছন্দ অবশ্যই বাবা-মায়ের বুঝা উচিত। তবে শায়ানের বাবা-মায়ের মধ্যে ব্যতিক্রম একটা দিক লক্ষ করেছি যে, সচরাচর সব মা-বাবাই তাদের মেয়ের চেয়ে ছেলেকেই বেশি ভালোবাসেন, কিন্তু শায়ানের বাবা-মা শায়ানের চেয়ে শেফালীকে একটু বেশিই ভালোবাসেন। বিষয়টা আমাকে অবাক করেছে। সৌরিনের বাবা-মা: সৌরিনের বাবা-মায়ের ওপর আমার খানিকটা রাগই হয়েছে। অবশ্যই সন্তানকে স্ট্রং করে গড়ে তুলতে হবে, তাই বলে এমন করে নয়। একটা ছোট্ট শিশু তার মা-বাবাকে ঠিক কতটা চায় সেটা তার বাবা-মায়েদের বুঝা উচিত। কিন্তু সৌরিনের বাবা-মা তাকে কখনো সেভাবে বুঝেনি! তবে শেষ মুহূর্তে যখন তার বাবা-মা তাকে সাপোর্ট করেছেন এটি ভালো লেগেছে। যদিও সৌরিনের হারিয়ে যাওয়া শৈশব তারা কখনোই ফেরত দিতে পারবে না। আঁধারের যুবরাজ: আঁধারের যুবরাজ চরিত্রটা একটা রহস্যময় চরিত্র। সে অচেনা একজন মানুষ হয়েও অনলাইনে মানুষকে বই উপহার দেয়। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন মেয়ের সাথে ফ্লার্টিংও করে। আঁধারের যুবরাজ নিয়ে আমি বেশি বিশ্লেষণ করতে চাচ্ছি না, সে যেহেতু আঁধারের যুবরাজ তাহলে সে আঁধারেই থাকুক। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি চরিত্র আমরা উপন্যাসে দেখতে পাই। তবে এত গুরুত্বপূর্ণ না-হওয়ায় চরিত্রগুলো বিশ্লেষণ করলাম না। এই চরিত্রগুলো উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিল না। চরিত্রগুলোর আংশিক অবস্থান আমরা উপন্যাসে লক্ষ করি। বইয়ের নামকরণ: কোনো উপন্যাস কিংবা কাব্যগ্রন্থের নাম নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, "নামকে যারা নামমাত্র মনে করে, আমি তাদের দলে নেই।" অর্থাৎ শিল্পের নামের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। উপন্যাসের সবচেয়ে রহস্যময় চরিত্র হলো আঁধারের যুবরাজ নামের আইডিটা। এই আঁধারের যুবরাজ কে? কী চায় সে সৌরিনের কাছে? সে কি সৌরিনকে চেনে? এই প্রশ্নগুলো শুধু সৌরিনের নয়, একই সাথে সমস্ত পাঠকের। এই আঁধারের যুবরাজ যেন এক আকর্ষণীয় চরিত্র! কেন্দ্রীয় চরিত্রের নামানুসারে বইয়ের নাম 'আঁধারের যুবরাজ' রাখা হয়েছে। যা অত্যন্ত যৌক্তিক বলেই আমি মনে করি। বইয়ে পছন্দের কয়েকটি উক্তি: বইয়ের বেশ কয়েকটি উক্তি আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি উক্তি নিচে তুলে ধরলাম। ১. মনের টান যদি আর না থাকে, চাকরির ভয়ে আমার কাছে ফিরিয়ে আনব জোর করে? (পৃষ্ঠা: ২১) ২. জীবনে অনেকরকম সুযোগ আসবে। কিন্তু সকল সুযোগ হাত পেতে গ্রহণ না করাই মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ। (পৃষ্ঠা: ৭৮) ৩. আসলে মামা-কাকার জোর না থাকলে দুনিয়ায় সহজে কিছু অর্জন করা যায় না। (পৃষ্ঠা: ৯১) ৪. সব অপরাধের মাফ হয় কিন্তু কারো মনের দুর্বল জায়গায় আঘাতের কখনো মাফ হয় না। (পৃষ্ঠা: ১০৪) ৫. যে যত দ্রুত আপন হয়, তাকে হারানোর ভয় তত বেশি থাকে। (পৃষ্ঠা: ২৩৯) ৬. তিল তিল করে গড়ে তোলা ভীষণ কঠিন কিন্তু হুট করে ভেঙে ফেলা খুব সহজ। (পৃষ্ঠা: ২৫৪) ৭. যাকে ভালোবাসার মানুষ আছে তাকে কখনো ভালোবাসতে নেই। (পৃষ্ঠা: ২৬৯) ৮. কাউকে তীব্রভাবে ভালোবাসা যাবে না। খুব বেশি ভালো লাগা, প্রিয়জনকে দূরে সরিয়ে দেয়।(পৃষ্ঠা: ২৭০) বই নিয়ে সমালোচনা: একজন পাঠককে অবশ্যই একজন গঠনমূলক সমালোচক হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমি যতটা বইয়ের রিভিউ দিই, প্রত্যেক রিভিউতে আমি সমালোচনা যুক্ত করি। এতে করে লেখক/লেখিকা-সহ পরবর্তী যারা বইটি কিনবে তাদেরও উপকার হয় বলে মনে করি। আর লেখক/কবিরা উদার মনের হয় বলেই জানি এবং আশা করি তাঁরা গঠনমূলক সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবেই নেয়। আর যারা গঠনমূলক সমালোচনা করে তারা কিন্তু অন্যান্য পাঠকদের থেকে আরো একটু মনোযোগ দিয়ে বইটি পড়ে। মনোযোগ দিয়ে বইটি পড়ে বলেই অসংগতিগুলো চোখে পড়ে। প্রথমেই যে বিষয়টা বলতে চাই তা হলো বইয়ের নির্দিষ্ট একটা পর্ব পড়ে আমার মনে হয়েছে এটি শুধু ১৮+ বয়সীদের জন্য। কিন্তু লেখিকা বইয়ে এমন কোনো সতর্কতা অবলম্বন করেননি। বইয়ের শুরুতে লেখা নেই যে এটি শুধু ১৮+ দের জন্য। তবে হয়তো অনেকে আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলতে পারেন যে এট ১৮+ নয়, রোমান্টিক উপন্যাসে এগুলো থাকবেই। কিন্তু এসব যুক্তিতর্কের বাইরে গিয়েও আমার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করব। আমার কাছে এটি ১৮+ বলেই মনে হয়েছে। চাইলে বর্ণনাটা অন্যরকম করা যেত। এছাড়া আমি উপন্যাস পড়ার সময় যে জিনিসটা খেয়াল করি তা হলো বানান, বাক্যগঠন এবং শব্দচয়ন। তবে এ বইয়ে তেমন কোনো অসংগতি চোখে পড়েনি। বেশ বড়ো বই হওয়ার পরেও ওইরকম তেমন অসংগতি নেই। যে কয়েকটি অসংগতি চোখে পড়েছে তা খুব সম্ভবত মুদ্রণপ্রমাদ। নিচে সেগুলো পৃষ্ঠা-সহ উল্লেখ করলাম যাতে পরবর্তী মুদ্রণে সংশোধন করে নেওয়া যায়। দিল (পৃষ্ঠা: ১৫)- দিলো। (বা.এ.আ.বা.অ. পৃষ্ঠা: ৬৫১) আছো (পৃষ্ঠা: ৩২, একাধিকবার ব্যবহৃত হয়েছে)- আছ। (অর্থের পরিবর্তন না-হলে ও-কার বর্জনীয়।) আচ্ছা,রুপা কি বুঝতে পারে? (পৃষ্ঠা: ৩৪)- আচ্ছা, রুপা কি বুঝতে পারে? (বিরামচিহ্নের পর ফাঁকা রাখা অপরিহার্য।) USA এর কি না (পৃষ্ঠা: ৪৪)- USA-এর কি না (ষষ্ঠী বিভক্তি 'এর' সবসময় শব্দের সাথে সেঁটে বসে। বিশেষ প্রয়োজনে হাইফেন দিয়ে লেখা যায়।) তানাহলে (পৃষ্ঠা: ৮১, একাধিকবার ব্যবহৃত হয়েছে)- তা না-হলে। খাব না খাব না বলে (পৃষ্ঠা: ৮১)- খাব না, খাব না বলে। বলো আব্বু (পৃষ্ঠা: ৮৩) - বলো, আব্বু। (সম্বোধন পদে কমা বসে।) সোনালি ব্যাংকের (পৃষ্ঠা: ৯৪)- সোনালী ব্যাংকের। ('সোনালি' কিন্তু 'সোনালী ব্যাংক'। প্রতিষ্ঠানের নাম প্রতিষ্ঠান যেভাবে লেখে সেভাবে লেখা সমীচীন।) বালবটা (পৃষ্ঠা: ৯৭)- বাল্বটা (বা.এ.আ.বা.অ, পৃষ্ঠা: ৯৫৪) কিসের সমাধান? (পৃষ্ঠা: ১০৩)- কীসের সমাধান? (বা.এ.আ.বা.অ, পৃষ্ঠা: ৩০৯) রিং টোনগুলোর (পৃষ্ঠা: ১০৭) - রিংটোনগুলোর। রঙ (পৃষ্ঠা: ১২৭) - রং। (রং কিন্তু রঙের) (বা.এ.আ.বা.অ, পৃষ্ঠা: ১১৫৬) বিরানি (পৃষ্ঠা: ১৫৯) বিরিয়ানি। (বা.এ.আ.বা.অ, পৃষ্ঠা: ৯৮৫) এদিক দিয়েই যাচ্ছিল, ভাবল দেখা করে যায়(পৃষ্ঠা: ১৮৫)- এদিক দিয়েই যাচ্ছিল, ভাবল দেখা করে যাই। (যেহেতু সে নিজে ভেবেছে তাহলে উত্তম পুরুষে ক্রিয়াপদের শেষে 'ই' হবে।) ঊনত্রিশ (পৃষ্ঠা: ২০৯)- উনত্রিশ। (বা.এ.আ.বা.অ, পৃষ্ঠা: ২০৫) তোর উচিতওই বদ ছেলেটার...(পৃষ্ঠা: ২১২)- তোর উচিত ওই বদ ছেলেটার... সোপান করেছে কি! (পৃষ্ঠা: ২১৩)- সোপান করেছে কী! (বিস্ময় বুঝাতে 'কী' বসে।) সব সময় (পৃষ্ঠা: ২৩৫)- সবসময়। দেয়ালগুলো (পৃষ্ঠা: ২৫৪)- দেওয়ালগুলো। (বা.এ.আ.বা.অ, পৃষ্ঠা: ৬৬৭) রানী (পৃষ্ঠা: ২৬৪)- রানি। (বা.এ.আ.বা.অ, পৃষ্ঠা: ১১৭৮) সাথী (পৃষ্ঠা: ২৭০)- সাথি। (বা.এ.আ.বা.অ, পৃষ্ঠা: ১৩১৭) (অভিধানে 'সাথি' হলেও 'সাথী' অধিক প্রচলিত।) এছাড়া ১২৭ নাম্বার পৃষ্ঠার শেষে এবং ১২৮ নাম্বার শুরুর একটি লাইন বুঝতে পারিনি। লাইনটি এমন, "ওর কথা মনেও রেখেছে এটাতে সে যার পর নাই অবাক।" এখানে কি মুদ্রণপ্রমাদ হয়েছে না কি আমিই বাক্যটি বুঝতে পারিনি? পুনশ্চ: এটি একটি উপন্যাসের বই হলেও প্রত্যেক পর্বের শুরুতে আপনি ১টি করে কবিতা পাবেন। তাহলে উপন্যাস পড়ার পাশাপাশি আপনি বইটিতে বেশ কয়েকটি সুন্দর সুন্দর কবিতাও পড়তে পাবেন। যাকে বলে একের ভিতর দুই। তাহলে আর দেরি কেন? এখনই বইটি অর্ডার করতে পারেন। তাছাড়া চলছে বইমেলা। বইমেলায় চলন্তিকার ৭-৮ নং স্টলে আপনি পেয়ে যাবেন 'আঁধারের যুবরাজ' বইটি। [বা.এ.আ.বা.অ= বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান।]
Was this review helpful to you?
or
#আঁধারের_যুবরাজ_বুক_রিভিউ ✓সারসংক্ষেপ– বইপাড়া গ্রুপে বেশ সরগরম ছিল জাদুকর নামে বই উপহার দেওয়ার এই বিশেষ মানুষটি। হঠাৎ একদিন উধাও হয়ে গেল। যারা বই পেয়েছিল এবং যারা পাওয়া আশায় ছিল, যারা পাইনি পর্যন্ত তারাও ভীষণ আগ্রহ ছিল, এমন করে আচমকা বই উপহার দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায়। এর পেছনের কাহিনি সাথে সেই জাদুকরের শৈশব-কৈশোর থেকে পরিণত হওয়ার জীবনী, চড়াই-উতরাই, পেয়েও প্রতিবার হারানোর স্বাদ আস্বাদনের ব্যথা; সবকিছুই উঠে এসেছে 'আঁধারের যুবরাজ' বইটিতে। জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে বইটি। ✓পাঠ প্রতিক্রিয়া– বইটি শুরুর কয়েকটা পাতা মাত্র পড়েছি, এরইমধ্যে আমার লেখিকা আপুকে নক দিয়ে বলতে মন চাইছিল, আপু এটাকে বইয়ের পাতায় আবদ্ধ না রেখে সিনেমার পর্দায় আনুন। এটা বায়োপিক ফিল্মসের যোগ্য কাহিনি অনুভব হয়েছে আমার কাছে।(একান্ত ব্যক্তিগত মত) নন-লিলিয়ার অর্থাৎ অতীত-বর্তমানের যোগসাজশে একের পর এক কাহিনি-গল্প আবর্তিত। অনেকেই দেখি সূচিপত্র, ভূমিকা, লেখকের অনুভূতি কথন, ফ্ল্যাপ পর্যন্ত এড়িয়ে পড়ে; তবে আমার ভালো লাগে একদম শুরু থেকে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে। আমি খুব একটা ভালো রিভিউ দিতে পারি না, আর দিলেও অল্পতে ছোট্ট করে সংক্ষেপে লেখার অভ্যাস। কিন্তু আপুর এই বইটি পড়ে বিস্তর আলোচনা করতে যাচ্ছি। আসলে বইটি পড়ে এত এত অনুভূতিতে আবেশিত হয়েছি তার সাথে সকলের পরিচয় করিয়ে দিতেই এত আলোচনা। অবশ্য সাথে কিছুটা সমালোচনাও রয়েছে। প্রতিটি গল্পাংশের আগের পৃষ্ঠাতে লেখিকার লেখা কবিতা দিয়ে শুরু। ভূমিকাতে লেখিকা বলেছিলেন, এগুলো ২০১১/১২ সালের লেখা যা এই বইয়ে ব্যবহৃত করেছেন। কিন্তু আমি বলব, এই উপন্যাসের জন্যই যেন এই কবিতাগুলো সৃষ্টি, চমৎকার মেলবন্ধন! শুরুটা সাদামাটা হলেও গল্প যতো এগিয়েছে আমার পাঠক মন ততোই উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। প্রথমেই ছককষে রেখেছিলাম, সময় নিয়ে আস্তে-ধীরে পড়ব। কিন্তু নাহ, এক বসাতে রাত কভার করে উঠতে হয়েছে। সৌরিনের অংশ পড়ে মন যেমন বিষণ্নতায় ছেয়ে গেছে, তেমনই শায়ানের অংশের ঘটনাগুলো আমাকে মিশ্র অনুভূতি দিয়েছে। পৃথক পৃথক সময়ে কাহিনির মোড়গুলোও চমকিত করেছে বেশ। কোনো স্থানেই বিরক্তির রেশ মাত্র নেই। উলটো লেখকের লেখা ও কাহিনির জাদুবলে একের পর এক পাতা উলটে গিয়েছে আপন মহিমায়। রূপার প্রেমে পড়া, রিফাত ও ফাহিমের সাথে বন্ধুত্বের কথোপকথন। আবার ফের তানজিলার প্রতি ভালোলাগা তৈরি হওয়ায় বোধ হলো, প্রথম দ্বিতীয় প্রেম বলে কিছুই নেই যেন। ভালোলাগা যখন-তখন আসতে পারে যেমন প্রতি বছর বসন্তের আগমন। এরপর রাজনীতিতে নাম লেখানো, শায়ানের সাথে সাথে আমি-ও সত্যি সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছিলাম ওই মুহূর্তে, যখন আরেফিন বাক্স খুলে ওর হাতে দিলো। মানে আমাকে পুরো থৃ ল ভাব দিয়েছে। সে যখন বলল, 'আমি জানি, আমার সীমাবদ্ধতা কতটুকু।' তখন আমার মন চাচ্ছিল, এই মানুষটার সাথে যদি দেখা করা যেত। সুন্দরীদের দেখলেই প্রেমে পড়ার মতো ফ্লার্ট করা প্লে বয় হওয়ার পরও তাকেই ভালোলাগার কারণ নিঃসঙ্গ এই মানুষটির নিঃস্বার্থতা ও পরোপকারী মনোভাব! প্রতি পদেপদে যাকে মানুষ ব্যবহার করেছে অথচ সে এর বদলে ভালোবাসা দিয়েই গেছে, তার সাক্ষাৎ কে না চাইবে! শায়ান তালুকদারের মায়াকাননের ত্যাগে অশ্রু বিসর্জনে যেন আমিই কেঁদে ফেলেছি। কারণ রয়েছে, আমাদের মতো পাঠকের জীবনেও রয়েছে বিষণ্ণ আঁধারিয়া আংশিক অতীত। প্রতীতির অংশে ভেতরে ভেতরে ভীষণ রাগ ওঠছিল। আর পিয়েতা আহা! নামটা খুব পছন্দের ছিল, কিন্তু রিকশার ঘটনার থেকেই ভালোলাগা উড়াল দিলো; সন্দেহ হচ্ছিল কী না। শেষে তো ফারসিয়ার কাজ ওশিনের কাছে জবাবদিহিতার পাহাড় বানালো। আপু যখন বললেন, সৌরিনের অংশটুকু কাল্পনিক বা গল্প অথচ আমার মনের উত্তর ছিল, এত বাস্তবতা একটা মানুষ কীভাবে অনুভব করাতে পারেন, হয়তো লেখক বলেই পারেন পাঠকদের অনুধাবন করাতে। আমি যেন নিজেকে পড়ছিলাম, সৌরিনকে নয়! সোপানের মতো স্বামী এবং তার পরিবারের মতো মানুষ কিন্তু আমাদের সমাজেই বসবাস। জাহিদ সাহেব আর ফারাজানা দম্পতি সৌরিনের প্রতি কঠোর মনোভাব চিত্রায়িত করে ব্যাড প্যারেন্টিংয়ের। ওর শৈশবকাল কল্পনাতে আমায় ভীষণ পীড়িত করছিল। শায়ানের অবস্থাও কিছুটা এমনই ছিল। সবাই বলতে পারে, বাবা-মা সন্তানের ভালোই চান। কিন্তু না, লেখিকা যথাযথ ও চমৎকার উদাহরণ তুলে ধরেছেন বইয়ে। গল্পে কিছু কিছু স্থানে ১৮+ অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক মূলক দৃশ্যও রয়েছে। যা গল্পের প্রয়োজনে ব্যবহৃত, এই একটি বিষয় শুধু আমার কাছে ভালো লাগেনি কারণ বিব্রতকর ও অস্বস্তিকর। সেসব স্থানের দৃশ্যগুলো একটু অন্যরকমভাবে ব্যক্ত করা যেত বা অংশটুকু না লিখলেও মনে হয় না গল্পের উপর কোনো প্রভাব পড়ত। যদিও লেখিকা ভালো বুঝেন। পাঠক হিসেবে আমার অভিমত রাখা স্রেফ। দুই মেরুর একজন আমেরিকার মতো শহরে ও একজন বাংলাদেশের, যখন মিলিত হয়ে দেখার সুযোগ হয়, তখন আমার মতো পাঠকের জন্য শেষ টুইস্টটা, আহা! লেখক রোলার কোস্টারের চড়াইছেন। কাহিনি আঁধারের যুবরাজের হলেও বাকি চরিত্রগুলোও সগর্বে তাদের নিজ নিজ চরিত্রায়ণে কাহিনি এগিয়ে নিয়েছে। ✓প্রিয় কিছু উক্তি– "সকল সুযোগ হাত পেতে গ্রহণ না করাই মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ।" "সব অপরাধের মাফ হয় কিন্তু কারো মনের দূর্বল জায়গায় আঘাতের কখনো মাফ হয় না! কথা বলার সময় একবার ভাবেও না যে, সেই সামান্য কটু বাক্যটা কারও মনে বিশাল আঘাত হানতে পারে। আর কথা এমনই এক জিনিস; একবার বললে ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।" "মানুষ মাত্রই একা। জীবনে আসা কোনো মানুষই স্থায়ী না।" "রক্তের সম্পর্ক, বন্ধুত্বের সম্পর্ক কিংবা কাগজে-কলমে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক মিথ্যে হয়ে যায়। যখন বিপদের দিনে তাদের কাউকেই পাশে পাওয়া যায় না।" "অর্থনৈতিক মুক্তির দেখা মিললেও বাঙালি নারীরা কেন যেন স্বামী নামক পুরুষটির ওপর থেকে মানসিক নির্ভরশীলতা কমাতে পারে না।" "কাউকে তীব্রভাবে ভালোবাসা যায় না। খুব বেশি ভালো লাগা, প্রিয়জনকে দূরে সরিয়ে দেয়।" ✓প্রিয় কবিতা সমূহ– স্পর্শের বাইরে, শিরোনামহীন, প্রেমাস্পর্শ, নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ, মোহভঙ্গ, নিমন্ত্রণপত্র, ফেরারি সময় প্রভৃতি। আর সবচেয়ে স্পেশাল ছিল, আঁধারের যুবরাজের তরফ থেকে সৌরিন আলমকে দেওয়া চিঠি। ওটা পড়ে রাত পৌঁনে তিনটা বাজে আমি নিরবে অশ্রু ঝরিয়েছি। ✓লেখকের লেখনশৈলী– কথাসাহিত্যিক ও গল্পকার সুস্মিতা জাফরের লেখা প্রথম পড়া হয় 'ডিনার' ও গল্পগ্রন্থ 'ব্রেকিং নিউজ'। নির্ভুল বানানে, সাবলীল ও ঝরঝরে শব্দ প্রয়োগে বর্ণনা করে যেভাবে গল্প বুনেন পাঠক বেশ তৃপ্তি সহকারে পড়তে পারে। ✓বইয়ের প্রোডাকশন, প্রচ্ছদ ও নামকরণ– প্রচ্ছদের কথা আগে বলি, জনপ্রিয় প্রচ্ছদকার সাদিত ভাইয়ের করা এই প্রচ্ছদটি এত্ত স্নিগ্ধ ও মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিচ্ছিল! দৃশ্যটি যেন বাস্তবে চোখের সমুখে ফুটে ওঠছিল। কাহিনির সাথে নামকরণ একদম পারফেক্ট তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। চলন্তিকার বই আগেও পড়েছি আমি, তাঁদের প্রোডাকশন টপনচ। বাঁধাই, কভার, পৃষ্ঠা পাঠকদের পড়ার সুবিধা অনুযায়ী একদম। ✓বই পরিচিতি– বই : আঁধারের যুবরাজ লেখক : সুস্মিতা জাফর জনরা : সামাজিক, রোমান্টিক উপন্যাস প্রকাশন : চলন্তিকা প্রকাশনী মুদ্রিত মূল্য : ৭০০৳ পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২৭২ রেটিং : ৯/১০ রিভিউ by Ta Ra Na
Was this review helpful to you?
or
#আঁধারের_যুবরাজ_বুক_রিভিউ বই: আঁধারের যুবরাজ লেখক: সুস্মিতা জাফর প্রকাশনী: চলন্তিকা মুদ্রিত মূল্য: ৭০০ কাহিনী সংক্ষেপে: ৮ বছরের সম্পর্ককে তুচ্ছ করে কোনো কারণ না জানিয়েই হুট করে সৌরিণকে ছেড়ে চলে যায় সোপান। তারপর সৌরিন কীভাবে সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করে? সৌরিন আলমের সাথে ফেসবুকে পরিচয় ঘটে আঁধারের যুবরাজের। প্রথমে বিরক্তকর হলেও একে একে তাদের আলাপ বাড়তে থাকে। বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকা আঁধারের যুবরাজ সৌরিণের ফেসবুকে লেখা পড়েই তার ভক্ত হয়ে যায়। এক পর্যায়ে প্রেমেও পড়ে যায়। এবং পাঠাতে থাকে নানা উপহার বিশেষ করে বই কিন্তু প্রেম কি তাদের হয়েছিলো? পাঠ-প্রতিক্রিয়া: সাত বছর বয়স থেকেই সৌরিনকে স্ট্রং, আত্মনির্ভশীল করে তোলার তাগিদে তার বাবা-মা তাকে একা করে দিলো। যে বয়সে মা বাবার আহ্লাদে বড় হওয়ার কথা সেখানে তাকে সব একা একাই করতে হতো। তার ছোটো ভাইকে যতোটা প্রাধান্য দেয়া হতো তার সিকিভাগও তাকে দেয়া হতো না! এতে ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটার মনে কি প্রভাব ফেলে তার বাবা মা কখনো তা বুঝার চেষ্টা করেনি! সৌরিণের ছোট থেকে বড় হওয়ার জার্নিটার কথা ভেবে ভীষণ খারাপ লাগলেও, বড় হয়ে নিজের সকল শখ পূরণ করাটা ভীষণ ইন্সপায়ার করেছে আমাকে। সৌরিণের ব্যাক্তিত্ব এক কথায় অসাধারণ লেগেছে। সেই কিশোর বয়সে একপাক্ষিক প্রেমের ব্যর্থতা থেকে শুরু করে জীবনের বিভিন্ন স্তরে গিয়েও প্রেমে ব্যর্থ হওয়া শায়ানের জন্য কখনো খারাপ লেগেছে, কখনো আবার বিরক্ত হয়েছি এতোবার প্রেমে পড়ার বিষয়টায়! ফেসবুকে নিজের নাম, পরিচয় গোপন করে বই উপহার দেয়ার বিষয়টায় মনে হয়েছে সত্যিকারের কারো সাথে মেলাতে পারছিলাম। একজন বইপ্রেমী হিসেবে বিষয়টা ভালো লেগেছে। রিফাত চরিত্রটা ভালো লেগেছে ওদের বন্ধুত্বটা খুব সুন্দর করে দেখানো হয়েছে। উপন্যাসে চরিত্রের সুবিধার্থেই হয়তো কিছু এডাল্ট কথা লেখা হয়েছে। যা আমার মনে হয় কিছুটা এড়িয়ে গেলে কিংবা সরাসরি সেরকম না লিখলেও উপন্যাসে খুব একটা প্রভাব পড়তো না। তাছাড়া সোপানের বিষয়টা আমার কাছে ধোঁয়াশাই রয়ে গেল। সে কেন করলো কাজটা আবার ফিরেই কেন আসলো তা বিস্তারিত জানতে পারলে হয়তো ভালো লাগতো। ------------------------ বইটা শেষ করার পর কিছুক্ষণের জন্য ভেবে পাচ্ছিলাম না কি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা উচিত। এন্ডিংটাকে পার্ফেক্ট বলবো নাকি এতোটা আশা নিয়ে পড়ার পর শেষে এসে এ এন্ডিং পড়ে কষ্ট পাবো! সুস্মিতা জাফরের লেখা পড়া হলো এই প্রথম। পুরো উপন্যাসটায় মনে হচ্ছিলো আমি লেখিকাকে কল্পনা করেই পড়েছি। একরকম উত্তেজনা নিয়ে পড়ে গিয়েছি। সৌরিণ, সোপান, শায়ানের সাথে কি হয়েছে, কেন হয়েছে তা জানার জন্য। বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় বলবো উপন্যাসটা আমার ভালো লেগেছে। লেখিকার লেখনশৈলী চমৎকার। পরবর্তীতেও লেখিকার এরকম আরো উপন্যাস পড়তে চাইবো। পছন্দের উক্তি : ~ ' তুমি Strong' - এই কথাটাই একজন মানুষকে নিঃসঙ্গ করে দেয়... বন্ধুহীনে পরিণত করে ফেলে... বড্ড একা বানিয়ে দেয়! ~ সব অপরাধের মাফ হয় কিন্তু কারো মনের দুর্বল জায়গায় আঘাতের কখনো মাফ হয় না! ~ কাউকে তীব্রভাবে ভালোবাসা যাবে না। খুব বেশি ভালো লাগা, প্রিয়জনকে দূরে সরিয়ে দেয়।