User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বই:চাঁদের কাছে রোদের চিঠি লেখিকা:রুকসাত জাহান নব্ববুইয়ের দশক হচ্ছে বাঙালিদের এক নস্টালজিয়াময় সময়।আবহমানকাল ধরে বয়ে চলা সংস্কৃতি আর বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব আবিস্কার এর সুফল এই দুইয়ের সংমিশ্রণে দেখেছিলো নব্বুইয়ের দশক।নব্বুইয়ের দশকে চিঠির যেমন চল আছে তেমনি রঙিন টিভি, টেলিফোনের ধাবমান অগ্রগতি ও লক্ষ্য হয়।আমি এখন বই পড়তে গেলে খুব নিরাশ বোধ করি,সংলাপ বহুল উপন্যাস পড়তে গিয়ে মনে হয় একটা গন্ডির মাঝেই গল্পটা আটকে গেছে।নির্ধারিত পরিধি অতিক্রম করতে পারে নি।সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম আলো পড়লে গল্পের চরিত্রগুলোর মধ্যে দিয়ে ঐ সময়টা যেন সেলুলয়েডের পাতার মতো চোখের সামনে দিয়ে ভেসে উঠতো,কিন্তু এখনকার বইগুলোতে কালকে সাক্ষী করে রাখবে এমন লেখা কদাচিৎ মিলে যায়। এ বইটি যেন হালের সেই স্টেরিওটাইপকে ভেঙে চুরমার করে দিলো।গল্লের মূল চরিত্রের জন্ম লগ্ন থেকে উপন্যাসের সূচনা আর চরিত্রের পরিণতিতে এর সমাপ্তি।মিষ্টি প্রেমের এই উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে রবী ঠাকুরের শেষের কবিতার অমিত আর লাবণ্যের সেই চিঠি প্রেমের কথা বারংবার মনে পড়েছে।বই পড়ার আগে আমার ধারণা হয়েছিলো উপন্যাসটি জনরা মনে হয় পত্র উপন্যাস।কিন্তু না গল্পের শুরুতেই আমাকে লেখিকা ভুল প্রমাণিত করলেন।আয়শার রূপে একজন ধীর স্থির, ভিন্ন চিন্তাধারার চিত্রায়ণ ছিলো আমার জন্য এক চমক। মধ্যবিত্ত দুটি পরিবারের টানাপোড়েনের গল্প।শিক্ষা আর পছন্দের মানুষকে নিয়ে যে বিভেদের সূত্রপাত দুই ভাইয়ের মধ্যে ঘটেছিলো তারই রেশ পুরো উপন্যাসে দেখা যায়।গল্পটি না একেবারে সাধারণ, মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানের মাথা উঁচু করে দাড়াবার গল্প,বাড়ির পাশের মেয়ের সাথে এক রাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকার গল্প।কিন্তু এই সাধারণ গল্পটার মধ্যে দিয়ে লেখক নব্বুইয়ের দশকের পুরো সমাজের পট পরিবর্তনের চিত্রাঙ্কন করেন তখনই তা হয়ে ওঠে অসামান্য। লেখক বেশ কিছু সূক্ষ্ম বিষয় তুলে ধরেছেন গল্পের ফাঁকে ফাঁকে, যেমন শিক্ষার আলোয় আলোকিত আয়শা আর মির্জা রাশেদের পরিবারে রোদ আর রোজির সুস্থভাবে বেড়ে ওঠা আর অশিক্ষিত মির্জা আব্বাসের টাকার গরমে অপরকে ছোট করার যে প্রবণতা তার করুণ পরিণতি শিকার তারই পরিবার।সন্তানের মানসিকতা না বুঝতে পারার দরুন বৃষ্টির জীবনের ছন্দপতন।আবার নিজের জীবনকে বাঁচতে চাইবার স্বাধীনতা। লেখিকা যেন একজন অদৃশ্য মানবীর ন্যায় টাইমট্রাভেলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে চরিত্রগুলো নিজের মতো ক্যানভাসে রঙ ছড়াতে দিচ্ছেন।টমবয় কিরনের নিজের বন্ধুকে প্রশ্ন করার মধ্যে দিয়ে যেন আগল ভাঙার সুর লক্ষ্য করা যায়। শুদ্ধ প্রেমকে অন্তরে নিয়ে সারাজীবন একা যাপন করার যে শেষ পিড়ি ছিলো তা বোধ হয় নব্বুইয়ের দশক।বর্তমানে প্রেম নামে যে রম্য নাটক চলছে তাদের উপর চপেটাঘাত চাঁদের কাছে রোদের চিঠি বইটি।
Was this review helpful to you?
or
‘চাঁদের কাছে রোদের চিঠি’— এক ঘোরলাগা সময়ের বয়ান নব্বইয়ের দশকের যাপিত জীবন ‘চাঁদের কাছে রোদের চিঠি’ উপন্যাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হচ্ছে এর সময়সচেতনতা। যে সময়কে ধারণ করে লেখক এগোতে চেয়েছেন, সেটিকে কোনোভাবেই তিনি অতিক্রম করে যাননি। এটা লেখকের সচেতন মনোবৃত্তি। নব্বইদশকের আখ্যান হয়ে উঠতে গেলে নব্বইদশকের পূর্বকথা অবধারিতভাবেই আসবে। আমরা সে ইঙ্গিত পাই দেশের তৎকালীন রাজনৈতিক বাস্তবতার উল্লেখপ্রসঙ্গে। বলতে হবে এক্ষেত্রেও লেখক সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন। বিষয়ের বাইরে অযাচিতভাবে কথা বাড়াননি। পারিবারিক কাহিনির ফ্রেমে প্রয়োজনের অতিরিক্ত রাজনীতি মেশাননি। সম্ভবত এ কারণেই উপন্যাসে অতিকথন হয়েছে এমনটা বলা যাবে না। চাঁদ আর রোদের পরিণতিটা দেখানোর জন্য অতটুকু পেছনে যাওয়াটা প্রয়োজন ছিলই। তবে এটা সত্য, এই কাহিনিই আরও খানিকটা অল্প লিখে বর্ণনা করা যেত। ঘটনাক্রমে লেখক সে পথে হাঁটেননি। নির্দিষ্ট সময়রেখায় মানুষের বিনোদনমুখিতার জোয়ারের ব্যাপারটিতেই লেখক বেশি জোর দিয়েছেন। আর সেজন্যই এসবের গল্পবিবরণ অনেক বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। উল্লেখযোগ্য এবং প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে এসেছে মিস্টার বিন, মীনা, ইত্যাদি, ব্যান্ডের গান (এলআরবি, সিম্ফনি), শুক্রবারের সিনেমা, সিনেমা হল, সালমান শাহ, মৃত্যু, ছায়াছন্দ, আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ, ক্যাসেটের ফিতা ইত্যাদি। বিশেষত সিনেমা, সিনেমা হল এবং সালমান শাহ একটু হলেও বেশি আলো পেয়েছে। প্রতি শুক্রবার বিকেল তিনটা বিশ মিনিটের পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সিনেমা নব্বই দশকের বাংলাদেশের বাঙালি জনজীবনে বিপুল প্রভাব ফেলেছিল। ফেলেছিল সাড়া। মির্জা আব্বাসের বাড়িতে বোন এবং বোনজামাইয়ের আগমনের হেতু সিনেমা দেখা— এটিই সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ এ প্রভাবের। এখনকার প্রজন্ম ডিজিটাল সিনেমার দর্শক। কিন্তু নব্বই দশকের ৩৫ মিলিমিটার ক্যামেরা, রূপালি পর্দা, অ্যানালগ সিনেমা হলের প্রাচুর্যের ব্যাপারে নতুন প্রজন্মের একটা বড়ো অংশের অবগতিই নেই। সেই সময়ে বিয়ের পর সপরিবারে সিনেমা হলে যাবার চর্চাটা উপন্যাসের কাহিনির পরিমণ্ডলে উল্লেখ করতে লেখক ভোলেননি। এ প্রসঙ্গে এ মুহূর্তে মনে পড়ছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ এবং ‘বিপিনের সংসার’ উপন্যাসদুটির কথা। ভৌগোলিক অবস্থান এবং সময়ের বাস্তবতা ভিন্ন হলেও সেকালের ‘টকি’ আর একালের ‘সিনেমা হল’ যে একই তাৎপর্য বহন করে, সেকথা ভুলে যাবার সুযোগ নেই। বাকি রইল সালমান শাহ। যখন আমি বইটি পড়ছিলাম, লেখককে ব্যক্তিগতভাবেই বলেছি কথাটা, “সালমান শাহের প্রসঙ্গ আমাকে চমৎকৃত করল। আবার, আপনি যদি সালমান শাহের কথা না লিখতেন, গোস্বা করতাম।” সালমান শাহ এর চেয়েও বেশি আবেগের বিষয় আমাদের কাছে। তাঁর মৃত্যুরহস্যের দিকটা উল্লেখ করা না গেলেও ঘটনাটার প্রভাব প্রসঙ্গে আরও কিছুটা লেখা যেত বোধহয়। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে চিঠির ব্যবহার নিয়ে আলাদা করেই লেখা যেত, তবু এখানেই বলাটা যুক্তিসংগত মনে করছি। চাঁদ আর রোদ যে একাধিক চিঠি বিনিময় করেছে, সেসবের ভাষায় সিনেমার সংলাপের প্রভাব লক্ষণীয়। এক চিঠিতে চাঁদকে রোদ লিখেছে— এই পৃথিবীর কোনো কিছুতে এত শক্তি নেই যে আমাকে তোর কাছ থেকে আলাদা করতে পারে। আগেকার সামাজিক-রোমান্টিক ধারার বাংলা সিনেমার প্রচলিত সংলাপের অনুসৃতিতেই এমন বাক্য রচিত। উপন্যাসের ভাষাশৈলীর নির্মাণে রোদ এবং চাঁদের প্রেমপরবর্তী ভাষার পরিবর্তন লক্ষণীয়। এই দুই চরিত্রের সংলাপের ভাষার পুনর্নির্মাণ করতে গিয়ে লেখক কৌশলী হয়েছেন। শুরুর দিকে এই দুজনের ভাষাও অন্য সব চরিত্রের মতো জগাখিচুড়ি ধরনের ছিল। উল্লেখ্য লেখক সংলাপের ভাষার ব্যাপারে যে খুব সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন, একথা বলা যায় না। ‘চাঁদের কাছে রোদের চিঠি’ সমতট অঞ্চলের কাহিনি। সেক্ষেত্রে চরিত্রসংলাপ নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় করাই যেত। সেটা হয়নি। মোটকথা একক কোনো একটা ভাষারীতির অনুসরণ করলে আরেকটু গোছালো হতো নির্মাণ। যন্ত্রসভ্যতার প্রভাব নব্বইয়ের দশকে আবহমান গ্রামীণ জীবনে যন্ত্রসভ্যতা হঠাৎ করে একটা পরিবর্তনের ছোঁয়া এনে দেয়। মোটাদাগে এ পরিবর্তন সূচিত হয় টেলিভিশনের আবির্ভাবে। সামাজিক বৈষম্যের একটা সূক্ষ্ম চিত্রও এতে উঠে আসে। শুরুতে আসে সাদাকালো টেলিভিশন, তারপর রঙিন। উপন্যাসে মির্জা আব্বাসের পরিবার প্রভাবশালীর কাতারে। স্বভাবতই তার বাড়িতে সবার আগে রঙিন টেলিভিশন এবং ফ্রিজ আসতে দেখি। বিশেষ করে ফ্রিজের বিষয়টির বিবরণকে বুদ্ধিদীপ্তভাবে দীর্ঘায়িত করেছেন ঔপন্যাসিক। যার বাড়িতে ফ্রিজ থাকে, তার বাড়ির ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাওয়াটা গ্রামীণ নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সমাজপ্রতিভুর একটি উল্লেখযোগ্য সমাজমনস্তত্ত্ব। টেলিফোনের বিষয়টিকেও একইভাবে দেখা যায়। সামাজিক সম্পর্কের জাল নিত্যপ্রয়োজনের খাতিরে সেই স্বর্ণযুগে এভাবেই বিস্তৃত হতো। সমাজের সম্ভ্রান্ত ধনাঢ্য পরিবারে এ কারণে এই যে ভোগান্তি, তা কখনো সখনো যে সেই পরিবারটির গৌরবের মাধ্যম হয়ে উঠত না, এমন কথা বলার উপায় নেই। উপন্যাসে প্রাসঙ্গিকভাবেই আলিফ লায়লা, ইত্যাদির মতো সেকালের উল্লেখযোগ্য বিনোদন মাধ্যমের কথা উঠে এসেছে। উঠে এসেছে এসবকিছুকে ঘিরে সমকালীন মানুষের উন্মাদনা। প্রসঙ্গত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র উল্লেখ করাটা জরুরি। সেখানে গ্রামীণ যাত্রাপালার ব্যাপারে সেকালের মানুষের উন্মাদনার চিত্র পাঠকমানসে ভেসে ওঠার কথা। এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, আধুনিক সুবিধাবিবর্জিত বিনোদনকামী মানুষ এ সমস্ত সামাজিক সুযোগ সুবিধা নিতে গিয়ে কখনো কখনো যে প্রচ্ছন্ন অবহেলার, ইঙ্গিতময় কটুকথার শিকার হতেন না, এমনটা নয়। উপন্যাসের মূল পারিবারিক দ্বন্দ্বের যে সুরটি লক্ষণীয়, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে এই অবহেলার চিত্র লেখক দেখিয়েছেন। নগরসভ্যতা আর যন্ত্রসভ্যতার মেলবন্ধন বিস্তৃতিবিচারে উপন্যাসটি মূলত গ্রামীণ পটভূমির। তবু তাতে নগরজীবন এসেছে স্বল্প পরিসরে। “ঢাকায় এসে বড়ো বড়ো বাড়ি, রাস্তাঘাট, গাড়ি দেখে যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে আরেকটি যন্ত্র দেখে। ‘মোবাইল ফোন’ তার ছাড়া কথা বলার যন্ত্র। ...” গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে নায়কের মনের প্রতিক্রিয়া এই। পরে এ প্রসঙ্গ আরও কিছুদূর বিস্তার পেয়েছে। তাতে মির্জা আব্বাসের শহরে যাওয়ার কথাও এসেছে। তারপর আমরা দেখি মির্জা আব্বাসের হাতের মুঠোয় মোবাইল। নগরসভ্যতা আর যন্ত্রসভ্যতার মেলবন্ধন এভাবেই এসেছে উপন্যাসে। এদেশে মোবাইলের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার কিন্তু নব্বইয়ের দশকে শুরু হয়নি। বরং আরও কিছুটা পরে সকলের হাতের মুঠোয় এসেছে মোবাইল। ততদিনে মোবাইলের জায়গা হয়েছে মানুষের পকেটে। কবি নির্মলেন্দু গুণ যে মোবাইলকে মুঠোফোন হিসেবে অনূদিত করেছেন, তা মূলত শুরুর দিকে লোকের হাতের মুঠোয় মোবাইল বহনকেই ইঙ্গিত করে। একথা অসত্য বা বানোয়াট নয় যে সে সময় মফস্বলের রাস্তায়ও মোবাইল হাতে মানুষ দেখলে তার পেছনে লোকের ভিড় পড়ে যেত। এক মিনিট কথা বলবে, এমন আবদার করত কেউ কেউ। বলাবাহুল্য এ বিষয়টিকে এতটা বিস্তৃতভাবে না লিখলেও উল্লেখ করতে কার্পণ্য করেননি লেখক। সমাজচিত্রে নারী পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসহায়ত্ব ‘চাঁদের কাছে রোদের চিঠি’ উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতীয়মান। ওর মধ্যেই বৃষ্টির দৃঢ়তা, ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে ইসরাত এবং আয়েশার ইতিবাচক সচেতনতা, চাঁদ আর কিরণের প্রতিবাদী মানস— এসব নারীকে মহিমান্বিত করার প্রয়াস। পরিণামের ভয় না করে শ্বশুরালয় ছেড়ে বৃষ্টি তুহিনের হাত ধরে পালিয়ে যায়। এখানে শুধু প্রেমের জয়গান গীত হয়নি। বরং যৌনজীবনের প্রচলিত ট্যাবুর বিরুদ্ধে এ এক শক্ত বার্তা। এর আগে শ্বশুরালয়ে বৃষ্টির জীবনযন্ত্রণা চোখে-আঙুলে দেখিয়ে দেয় একটা সত্য। পিতার প্রভাব বিবাহিতা কন্যার তেমন কোনো কাজেই আসে না। মানসিক অত্যাচারে ভুক্তভোগী হবার বেলায় নারী কেবলই নারী। তবু বৃষ্টি একেবারে চুপ থাকেনি। বাবা মির্জা আব্বাসের রাজনীতির উপকরণ হওয়ায় তার মনের যে আক্ষেপ, তা পাঠককে ভাবায়। আয়েশা এবং ইসরাতও স্বামীর বাড়িতে মৌখিক নিগ্রহ ও অপমানের শিকার। কিরণ আর চাঁদ তাদের দাদি আমেনার বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করেছে। তবু, অবস্থার পরিবর্তন তো মুখের কথা নয়। এদিকে আয়েশা যখন মির্জা রাশেদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটায়, তখন সেকেলে শাশুড়ি হোসনে আরা ইঙ্গিতপূর্ণ বদমেজাজ প্রদর্শন করতে ছাড়ে না। মোটাদাগে সেকাল আর একালের ভেদরেখা স্পষ্ট হয়েছে তিন প্রজন্মের এ কাহিনির নির্মাণে। উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের পরিণতিতেও লেগে আছে এক ন্যক্কারজনক পুরুষতন্ত্রের ঘ্রাণ। লেখক সেখানেও অবশ্য নারীকে প্রতিবাদী হিসেবেই দেখিয়েছেন। রুকসাত জাহানের লেখায় ধারাবাহিক উন্নতির ছাপ লক্ষণীয়। শুধু বিষয় নির্বাচনের দিকটি বিবেচনায় রেখে বলছি, ‘চাঁদের কাছে রোদের চিঠি’ একটি চমকপ্রদ বিষয়কে ধারণ করেছে। একটি ঘোরগ্রস্ত প্রজন্মের যাপিত জীবনকে দেখিয়েছে। সকলে বলে লেখকের পরবর্তী বইটি পড়ার জন্য মুখিয়ে আছি। আমি বলব লেখক এরপর কী বিষয়ে লেখেন, তা দেখার অপেক্ষায় আছি। © রেজওয়ান আহমেদ ২ জুন ২০২৪, মিরপুর, ঢাকা।
Was this review helpful to you?
or
লেখালেখি মাত্র কয়েক বছর ধরে কিংবা যাদের প্রথম প্রকাশিত বই এসেছে তাদের লেখা আমরা সাধারণত কোনো প্রকার এক্সপেকটেশন ছাড়াই পড়ি। আমাদের মনোভাব থাকে অনেকটা এমন, ‘পড়ে দেখি কেমন লিখেছেন তিনি’। কিন্তু পড়তে পড়তে যদি দেখি যতটুকু আশা করিনি তার চাইতে বেশি ভালো লাগছে আর হৃদয়ে প্রগাঢ় ছাপ ফেলে দিয়েছে তখন কী হয়? দীর্ঘদিন পর্যন্ত আমরা সেই লেখাটার ঘোর থেকে বের হতে পারি না। আর কারো সাথে এমন হয় কিনা জানি না, কিন্তু আমার সাথে ডেফিনিটলি এমনটাই ঘটে। আর এরপর স্বাভাবিকভাবেই আমি সেই লেখকের কাছ থেকে একই ধরণের অথবা এর চাইতে বেশি ভালো কিছু আশা করতে শুরু করি। এমনই একজন লেখক রুকসাত জাহান। আজ তার তৃতীয় উপন্যাস নিয়ে আমার পাঠপ্রতিক্রিয়া জানাতে এসেছি। লেখিকার প্রথম উপন্যাস ‘হৃদয়ে তার পায়ের ছাপ’ আমি শুরু করেছিলাম কোনো প্রকার এক্সপেকটেশন ছাড়া। কিন্তু এই উপন্যাসটি আমাকে প্রবলভাবে ধাক্কা দিয়েছিল। পরবর্তীতে আমি একইরকম আশা করেছিলাম তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘স্বপ্ন কেনার দামে’ নিয়ে। কিন্তু উপন্যাসটি আমাকে আশাহত করেছিল। নাহ, কোনোদিক থেকে খারাপ ছিল না। বরং সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে নিতান্তই বাস্তবতা তুলে ধরেছেন তিনি। কিন্তু ওই যে ‘হৃদয়ে তার পায়ের ছাপ’ এর ঘোর থেকে বের হতে পারিনি। তাই দ্বিতীয় উপন্যাস ভালো হলেও আমাদের বাস্তবিক জীবনের প্রেক্ষাপট নিয়ে রচিত উপন্যাসটি আমার মনে দাগ কাটেনি। আর তাই হয়তোবা তৃতীয় উপন্যাস নিয়ে আমার খুব বেশি আশা ছিল না। স্রেফ রোমান্টিক জনরার একটা উপন্যাস হিসেবে পড়তে শুরু করেছিলাম। এবার আসি কেমন ছিল রুকসাত জাহান এর তৃতীয় উপন্যাস ‘চাঁদের কাছে রোদের চিঠি’ নিয়ে আমার পাঠ-অভিজ্ঞতা। ‘চাঁদের কাছে রোদের চিঠি’ নামটা দেখলেই রোমান্টিক জনরা মনে হবে, স্বাভাবিকভাবেই। আর প্রচ্ছদ সেই ভাবনাকে আরো উসকে দেয়। প্রচ্ছদ এককথায় অসাধারণ। প্রচ্ছদের রঙ ধূসর হলুদ বর্ণও আমাদের সোনালী অতীতকেই যেন মনে করিয়ে দিতে চায়। বিভিন্ন প্রমোশনাল পোস্টে জানতে পেরেছিলাম, নব্বই দশকের প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে উপন্যাসটি। খুব বেশি ভালো লাগবে এই আশা না করলেও ধারণা করেছিলাম উপন্যাসটিতে কী কী থাকতে পারে। পড়তে পড়তে প্রথম যেখানে ধরা খেলাম তা হলো, এটি আগাগোড়া প্রেমের উপন্যাস নয়। আমার মতো যারা এটাকে প্রেমের উপন্যাস ভেবে পড়া শুরু করবেন তারাও ধরা খাবেন নিশ্চিত। তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে কী আছে এই উপন্যাসে? চলুন সংক্ষেপে কাহিনিটা জেনে নেই। নব্বই দশকের কোনো এক ডিসেম্বরের রাতে মির্জা আব্বাসের ঘরে তৃতীয় কন্যাসন্তান চাঁদের জন্ম হয়। এরপর কাহিনীর পরতে পরতে আমরা জানতে পারি মির্জা আব্বাসের পুরো পরিবারের কথা, সেইসাথে তারই চাচাতো ভাই মির্জা রাশেদের পরিবারের কথা। জানতে পারি কীভাবে ও কেন দুই চাচাতো ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিল। মির্জা রাশেদেরই সন্তান রোদ। মির্জা আব্বাস ও মির্জা রাশেদের সন্তানেরা চাচাতো ভাইবোন হিসেবে একসাথেই হেসেখেলে বড়ো হতে থাকে। নাম দেখে রোমান্টিক মনে হলেও এটা আসলে সমকালীন উপন্যাস। কারণ এখানে প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেমের বর্ণনা বাকি সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়নি। বরং নব্বইয়ের দশকের সমাজ রূপান্তর, প্রযুক্তির ছোঁয়া, তরুণদের স্বপ্ন, রাজনীতি ও অর্থনীতির হাওয়াবদলসহ বেশ কিছু বিষয় সমানতালে এগিয়ে গেছে। সেইসাথে ছিল সে সময়ের মানুষের আচার-ব্যবহার, বিশ্বাস ইত্যাদির সাবলীল বর্ণনা। আমার কেমন লেগেছেঃ নব্বই দশকের সেইসব দিন মানেই নস্টালজিক হয়ে যাওয়া। সেরকম একটা মনোভাব নিয়েই পড়তে শুরু করি। কিন্তু আমার জন্য অপেক্ষা করছিল আরো দারুণ কিছু। আসলে এর প্লটকে আশি আর নব্বই দশকের মিশেল বলা যায়। আমি খুব একটা নস্টালজিক হইনি বরং শিহরিত হয়েছি। কারণ আমার জন্ম যখন, তখনকার সমাজে ইতিমধ্যেই পরিবর্তনের হাওয়া লেগে গেছে। আমার টিভি দেখা শুরু রঙিন টিভি দিয়ে, সেসময় টিএন্ডটির টেলিফোন লাইনও ছিল। যারা ধনী তাদের মোবাইল ফোনও ছিল। সাদাকালো টিভি আমি দেখিইনি। অথচ উপন্যাসে রোদ আর চাঁদ যে সময়ে বেড়ে উঠছিল তখন টেলিভিশন ছিল এক অলৌকিক বস্তু। প্রথমে সাদাকালো টিভি এরপর আসে রঙিন টিভি। ওদের উত্তেজনাটা যেন আমিই টের পাচ্ছিলাম। তাই নস্টালজিক না হয়ে বরং নতুন নতুন অনেক কিছুই জানলাম যেগুলোর সাথে আমার পরিচয় ছিল না। যেমন, রেডিওতে নাটক শোনা। লেখকের লেখনশৈলী এমন ছিল আমার মনে হচ্ছিল আমি সেই সময়েই বাস করছি। বৃষ্টি, কিরণ, রোদ, চাঁদ, রোজী সবার সাথে আমিও যেন বেড়ে উঠছি। পারিবারিক ও সামাজিক আবহে গল্প এগোচ্ছে, রোদ আর চাঁদও বড়ো হচ্ছে। একটা পর্যায়ে রোদের লেখা প্রথম চিঠিটা! যে কারো হৃদয়ে প্রেমের সুবাসিত বাতাস দোলা দিয়ে যাবে। এরমধ্যে দুই মির্জার সম্পর্ক ভালো হওয়ার পরিবর্তে নানাবিধ কারণে আরো খারাপ হতে থাকে। কী হয় কী হয় এমন একটা দুশ্চিন্তা কাজ করতে থাকে তখনই হুট করেই ধাক্কাটা আসে। হ্যাঁ, এটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। যেহেতু এই উপন্যাস নিয়ে প্রমোশনাল পোস্ট ছাড়া আর কিছুই পড়া হয়নি, কোনো রিভিউ পড়া হয়নি আর আমারও খুব বেশি এক্সপেকটেশন ছিল না তাই এই ধাক্কাটা আমি সামাল দিতে পারিনি। একদম স্থবির করে দিয়েছিল আমাকে। কী ছিল সেই ধাক্কাটা সেটা বলব না। সেটা পাঠকের জন্য তোলা থাকুক। শুধু বলব, বহুদিন পর বহুদিন পর্যন্ত মনে রাখার মতো একটা উপন্যাস পড়লাম। এই উপন্যাসের আরেকটা পজিটিভ দিক হোলো, কোথাও স্লো মোশনে কাহিনি এগিয়েছে, আবার শেষে এসে হুট করে সমাপ্তি টেনেছে এমন না। বরং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই গতিময়তা ছিল। প্রাঞ্জল বর্ণনায় সব পর্বই ছিল আগ্রহ জাগানিয়া। আর শেষে যে ধাক্কাটার কথা বললাম, সেটাও অপ্রাসঙ্গিক বা হুট করে এসেছে এমন মনে হয়নি। রুকসাত জাহান তার গতিশীল লেখনশৈলী দিয়ে আমার পাঠকমন জয় করে নিয়েছেন। ধীরে ধীরে এটা উচ্চমাত্রা পাচ্ছে। আবার তার জন্য একটা চাপও তৈরি করছে, পরের লেখাগুলোও এমন শক্তিশালী হতে হবে। যদি তিনি এই ধারাবাহিতা ধরে রাখতে পারেন, আমার বিশ্বাস অদূর ভবিষ্যতে তিনি তার লেখনশৈলীর জাদু দিয়ে পাঠকমনে রাজত্ব করবেন।
Was this review helpful to you?
or
আশির দশক, নব্বইয়ের দশক নিয়ে আমাদের সমাজের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেশ একটা আগ্রহ আছে। কেমন ছিল সেই সময়ের জীবন? মোবাইল ছিল না, টিভিরও মাত্র একটা চ্যানেল, আর ছিল হাতে লেখা চিঠি, না কোন এসএমএস, না মেনেঞ্জার, না ফেসবুক! কি ভাবে থাকতো তখনকার দিনের কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা? লেখিকা রুকসাত জাহান আশির দশক, নব্বইয়ের দশককে উপজীব্য করে লিখেছেন “চাঁদের কাছে রোদের চিঠি” নামক এক উপন্যাস। চমৎকার এই উপন্যাসে উঠে এসেছে তৎকালীন সময়, সামাজিক অবস্থা। মির্জা রাশেদ ও মির্জা আব্বাস চাচাতো ভাই। পাশাপাশি বাড়ি। কিন্তু এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দুই পরিবারের সম্পর্ক শীতল। যদিও এই শীতলতার জের দুই পরিবারের বাচ্চাদের উপর পড়ে না। মির্জা আব্বাসের তিন মেয়ে, বৃষ্টি, কিরণ ও চাঁদ, আর মির্জা রাশেদের দুই ছেলেমেয়ে রোদ ও রোজী। এই দুই পরিবারের বাচ্চারা আশেপাশের আরো অনেক বাচ্চাদের সাথে দল বেধে স্কুলে যায়, একসাথে খেলাধুলা করে। সবার বড় বৃষ্টি, পড়াশুনায় ভালো না, এসএসসি পরীক্ষায় খারাপ করার ফলে তার আর পড়ালেখা হয় না, মির্জা আব্বাস বৃষ্টির বিয়ে দিয়ে দেয়। রোদ অনেক মেধাবী ছেলে, সে এইচএসসি পরীক্ষায় স্ট্যান্ড করে, এবং পরবর্তীকালে কুমিল্লা মেডিক্যালে ভর্তি হয়। কিরণও একবারেই এসএসসি, এইচএসসি পার হয়ে যায়। চাঁদও অনেক মেধাবী ছাত্রী। তখনকার দিনে টিভি তো আর ঘরে ঘরে ছিল না। এক বাড়িতে টিভি থাকা মানেই সবার অধিকার ছিল সেই টিভির উপর! টিভিতে নাটক, সিনেমা বা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান সবাই একসাথে দেখতো। একই ব্যাপার হতো ফ্রিজের ক্ষেত্রেও। এই বিষয়গুলো বইয়ে সুন্দর করে উঠে এসেছে। মেয়ে সন্তান হলে যে বউয়ের দোষ দেওয়া, তা যেমন এখন আছে, সেই আশি/নব্বইয়ের দশকেও ছিল। যে কারণে তৃতীয় সন্তান মেয়ে হওয়ায়, মির্জা আব্বাসের মা অসন্তুষ্ট হন। আর মেয়ে সন্তানের গায়ের রং শ্যামলা হলে তো কথাই নাই! সব দোষ বউয়ের, আর বাচ্চাটা উঠতে বসতে গায়ের রং নিয়ে কথা শুনতেই থাকে। এছাড়াও আরো অনেক বিষয় উঠে এসেছে গল্পে। যেমন – প্রচলিত ধারণা বংশ রক্ষা শুধু ছেলেরা করতে পারে, বাচ্চা না হওয়ার জন্য দায়ী করা হয় স্ত্রী’কে। এছাড়াও বিয়ের পর মেয়েদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। পছন্দের কিছুই আর করা যায় না। তা সে মির্জা রাশেদের বউ আয়েশা হোক, বা তার বোন মিলি হোক। বিয়ের পর মিলিকে দেখে চেনাই যায় না। চমৎকার আবৃত্তি করা, গান করা, সংস্কৃতিমনা মিলি হারিয়ে যায়। সংসারের শান্তির জন্য পানির মতো পত্র অনুযায়ী আকার পরিবর্তন করা নারীর স্বভাব। মিলিও তাই নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে নিজেকেই বদলে নেয়। “চাঁদের কাছে রোদের চিঠি” বইয়ে খুব সুন্দর সুন্দর কয়েকটা চিঠি আছে। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাঠানো হাতে লেখা চিঠি! এখনকারদিনের অনেক ছেলেমেয়েই হয়তো কখনো হাতে লেখা চিঠি পায় নি। আবার অনেকে পোস্ট অফিস কি সেটাও জানে না। হাতে লেখা চিঠির মাধুর্য, নস্টালজিয়া নব্বইয়ের দশকের পর পরই বিলুপ্ত প্রায়! সর্বত্র মোবাইল ফোনের বিচরণ এর প্রধান কারণ। উপন্যাসের শেষের টুইস্টের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। লেখিকা রুকসাত জাহানের মাস্টার স্ট্রোক ছিল শেষের টুইস্ট! লেখাটা ভালো লেগেছে। যদিও কিছু জায়গায় গল্প লেখার স্টাইলটা অনেকটা প্রবন্ধ লেখার মতো, বা রিপোর্ট রাইটিং বা কোন ইনফরমেশন জানানো হচ্ছে সে রকম মনে হয়েছে। যেমন, “কিন্তু গত কয়েক বছরে দেশের আর্থিক দৃশ্যপট দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ এখন শিক্ষার পেছনে অনেক বেশি খরচ করছে। আগের মতো শুধু অবস্থাপন্ন গৃহস্থ আর মেধাবীদের মাঝেই পাস-ফেলের চিন্তা আটকে নেই।” এই অংশগুলো একটু অন্য ভাবে লিখলে ভালো হতো। . বইটার প্রচ্ছদ অপূর্ব! এক দেখাতেই সবার পছন্দ হবে। প্রিন্টিং, বাইন্ডিং সুন্দর ছিল, ছাপাখানার ভূত খুব সামান্যই তার কাজ করতে পেরেছে। তবে এক শব্দ ভেংগে দুই লাইনে চলে যাওয়ার বিষয়টা দৃষ্টিকটু। চলন্তিকার এই ব্যাপারে আরো সতর্ক হওয়া উচিত। . বই পরিচিতিঃ বইয়ের নামঃ চাঁদের কাছে রোদের চিঠি লেখকঃ রুকসাত জাহান প্রকাশনীঃ চলন্তিকা প্রচ্ছদঃ ফাইজা ইসলাম প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৪৪ মুদ্রিত মূল্যঃ ৪০০ টাকা
Was this review helpful to you?
or
চাঁদের কাছে রোদের চিঠি ❝মুঠোফোন ফেলে দিয়ে কলমটা তুলে নিলাম তোমার হৃদয়ের ডাকঘরে আমি আজ চিঠি দিলাম। যান্ত্রিক শব্দগুলো আজ আবেগ খুঁজে নিক, আমিও হতে চাই নব্বইয়ের মাতাল প্রেমিক।❞ ~চাঁদের কাছে রোদের চিঠি ◼️কাহিনী সংক্ষেপ: নব্বই দশকের সময়কালে একই গ্রামে পাশাপশি বাড়িতে দুই চাচাতো ভাই মির্জা আব্বাস ও মির্জা রাশেদ এর বসবাস। বাড়ি এত কাছাকছি হলেও কিছু কারণে তাদের মধ্যে বহু বছর ধরে নানা মনোমালিন্য চলছিল। তারপরেও মির্জা আব্বাসের তিন মেয়ে বৃষ্টি, কিরণ ও চাঁদ এবং মির্জা রাশেদের দুই ছেলে-মেয়ে রোদ ও রোজী একসাথে হেসেখেলে বেড়ে উঠছিল। কৈশোরের সময়কালে রোদ ও চাঁদের মধ্যে অন্যরকম ভালোলাগার সৃষ্টি হয়। তাদের এই প্রেম কী পূর্ণতা পাবে? দুই পরিবারের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কী অবসান ঘটবে না? অন্যদিকে, বৃষ্টির বিয়ে ঠিক হয় বয়সে অনেক বড় এক পাত্রের সাথে। কিন্তু বৃষ্টি এই বিয়ে করতে নারাজ। তার রাজি না হওয়ায় পেছনের কারণটা কী? টমবয়ের মতো চলাফেরা করা কিরণও একজনকে মন দিয়ে বসে। সে কী তার মনের মানুষকে নিজের করে পাবে? উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হলে পড়তে হবে ‘চাঁদের কাছে রোদের চিঠি’ উপন্যাসটি। ◼️ পাঠ প্রতিক্রিয়া: নব্বইয়ের দশকের সোনালী সময়ের কাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছে লেখক রুকসাত জাহান এর তৃতীয় উপন্যাস ‘চাঁদের কাছে রোদের চিঠি। উপন্যাসটির সূচনা হয়েছে চমৎকার গ্রামীণ পরিবেশের বর্ণনা দিয়ে। এরপর ধীরে ধীরে সব চরিত্রের আগমন ঘটতে থাকে। উপন্যাসটির নামটা দেখলে মনে হবে এটি পুরোদস্তুর রোমান্টিক উপন্যাস। কিন্তু না, এরমধ্যে রয়েছে পারিবারিক সম্পর্কের বর্ণনা, টানাপোড়েন, প্রেম, বিরহ, প্রতিহিংসা, লোভ ইত্যাদি সবকিছুর গল্প। চাঁদ ও রোদের প্রেমের সময়টা ভীষণ মিষ্টি করে বর্ণিত হয়েছে। তখন এত আধুনিকতা ছিল না। তাদের মধ্যে একটু আধটু চোখাচোখি আর চিঠির মাধ্যমেই যোগাযোগ হতো। তবে, একমুঠো রোদ কী একফালি চাঁদকে নিজের রঙে রাঙাতে পারবে কিনা তা পুরো বইটি পড়লেই জানা যাবে। নব্বই দশক সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা ছিল না। লেখক বইয়ে এত সুন্দর করে সবকিছু বর্ণনা করেছেন যে সবকিছু চোখের সামনে ভাসছিল। আর গ্রামীণ পটভূমিতে রচিত হওয়াও পড়তেও অসাধারণ লেগেছে। নব্বই দশকের শৈশবের সময়কালে কৃত্রিমতা প্রবেশ করেনি। শৈশবের আনন্দময় দিনগুলো কৃত্রিমতায় ঢাকা ছিল না। গ্রামের বাড়ির সবার একসাথে থাকা, বিকেল হতে না হতেই শিশুদের খেলার মাঠে যাওয়ার অস্থিরতা, ফসলের মৌসুমের ব্যস্ততা, সবাই একসাথে টেলিভিশন দেখা ইত্যাদি নানা আনন্দময় সময়ের কথা লেখক উল্লেখ করেছেন। তখনকার মানুষের মধ্যেও কিছু সংকীর্ণতা ছিল। গায়ের রঙ একটু কালো হলেই তা নিয়ে মানুষের চিন্তার শেষ ছিল না। চাঁদের গায়ের রঙ অন্যদের বোনদের তুলনায় শ্যামলা হওয়ার কারণেও তাকে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। গায়ের রঙ দিয়েই তখন বেশিরভাগ মানুষকে বিচার করা হতো, অন্য গুণের কোন দাম ছিল না। উপন্যাসের সমাপ্তি নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। তবে এটা বলতে পারি, দীর্ঘদিন মনে রাখার মতো এন্ডিং ছিল। ◼️বইয়ের প্রচ্ছদটি ভীষণ ভীষণ সুন্দর। এবারের মেলার সেরা একটি প্রচ্ছদ এটি। বইয়ের থিমের সাথে প্রচ্ছদের পুরো মিল রয়েছে। এছাড়া, বইয়ের কোয়ালিটি, বাইন্ডিং ছিল দারুণ। ১৪৪ পৃষ্ঠার ‘চাঁদের কাছে রোদের চিঠি’ বইটি একবসায় পড়ার মতো এবং উপন্যাসটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। ◼️বই পরিচিতি: বই: চাঁদের কাছে রোদের চিঠি লেখক: রুকসাত জাহান প্রকাশনী: চলন্তিকা প্রচ্ছদ: ফাইজা ইসলাম প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৪ মুদ্রিত মূল্য: ৪০০ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪৪ রেটিং: ৫/৫
Was this review helpful to you?
or
★বই বৃত্তান্ত: ------------------ বই: চাঁদের কাছে রোদের চিঠি লেখক: রুকসাত জাহান প্রকাশনী: চলন্তিকা জনরা: সামাজিক - রোমান্টিক উপন্যাস প্রচ্ছদ : ফাইজা ইসলাম মুদ্রিত মূল্য : ৪০০৳ ❝আমার বয়স যখন ষোল, তোমার উনিশ বৃষ্টিভেজা রাতে চোখে চোখ মিলেছিল নির্নিমেষ। সেই থেকে শুরু আমাদের প্রণয় কাল এভাবেই কেটে যাক দিন মাস সাল। আমায় ভালোবেসে নাম দিয়েছ মে ফ্লাওয়ার আর একমুঠো রোদ্দুর তুমি আমার।❞ বলছিলাম লেখক রুকসাত জাহান এর সামাজিক - রোমান্টিক উপন্যাস ❝ চাঁদের কাছে রোদের চিঠি ❞ বইয়ের কথা। ★বইয়ের যা যা ভালো লেগেছে : -------------------------------------------------- ❝চাঁদের কাছে রোদের চিঠি ❞ নব্বই দশকের পটভূমিকে কেন্দ্র করে রচিত সামাজিক - রোমান্টিক উপন্যাস।লেখক বেশ সাবলীল ভাষায় আলোকপাত করেছেন যার দরুণ বইটি পড়ার সময় একঘেয়েমি সৃষ্টি হয় না। তৎকালীন সময়ের জনজীবন, পরিবেশ, প্রণয়, বৈবাহিক বন্ধন, নারীদের অবস্থান, কুসংস্কারাচ্ছন্ন কিছু দিক, গৃহস্ত বাড়িগুলোর পরিবেশ সবকিছুর সুনিপুণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে বইতে। বইটিতে আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ রয়েছে যেহেতু গ্রামীণ পটভূমিকে কেন্দ্র করে লেখা তবে তা সহজে পাঠযোগ্য, বোধগম্য হবে এমন। একবিংশ শতাব্দীর সূচনাতে আমার জন্ম হলেও নব্বই দশকের কিঞ্চিৎ সাক্ষী আমিও ছিলাম। সবাই একসাথে জড়ো হয়ে টেলিভিশনে আলিফ লায়লা, সিসিমপুর, সিনেমা দেখার সেসব মধুর দিনগুলো এখন কেবলই স্মৃতি। বই পড়তে পড়তে আমি স্মৃতিকাতর হয়ে পরছিলাম বারংবার। চক্ষুদর্পণে ভেসে বেড়াচ্ছিল সোনালী সেসব স্মৃতিগুলো। বিভিন্ন ক্যাসেট সংগ্রহের একটা প্রতিযোগিতা করতাম আমরা। অথচ এখন ইন্টারনেটের বদৌলতে এক নিমিষেই সবকিছু হাতের মুঠোয় চলে আসে। তবুও,অলস দুপুর কিংবা উদাসী সন্ধ্যায় অতীতের স্মৃতিতে ভ্রমণ করে এসে আকুল হয়ে ওঠে মন প্রাণ। নব্বই দশকের প্রণয় কতটা স্নিগ্ধ, সুন্দর ছিল বইটা পড়ে আরো একবার অনুভব করলাম। চিঠি আদান প্রদান করে একে অপরের প্রতি ভালোলাগার জানান দেয়া, অল্প কিছু বাক্যের প্রেমময় মধুর শব্দের মোহনায় ভেসে যাওয়া।অতঃপর, হৃদয় দুলিয়ে দেয়া অমোঘ আহবানে সায় জানানো। বইটিতে রয়েছে আয়েশার মতো মার্জিত, রুচিশীল এক নারী যিনি একজন চমৎকার মা , মির্জা আব্বাস এর মতো কন্যাসন্তানকে অবহেলা করা পিতা, সংসারে পুরনো আসবাবের মতো অপাংক্তেয় হয়ে থাকা ইসরাত,স্নিগ্ধ ভালোবাসার প্রলেপে জড়িয়ে যাওয়া চাঁদ ও রোদ, একপাক্ষিক ভালোবাসায় সিক্ত হওয়া কিরণ। ভালোলাগার পাশাপাশি কিছু নির্মম বাস্তবতাও বইতে উপস্থাপিত হয়েছে। নারীদের অবমূল্যায়ন, কন্যা সন্তান জন্মদান মায়ের উপর দোষারোপ,গৃহস্ত ঘরের যেকোনো সমস্যা গৃহবধুর কাঁধে চাপানো, সন্তানে জন্মদানে ব্যর্থ হলে তা পুরোপুরি মায়ের উপর চাপিয়ে দেয়া। বইটিতে শিক্ষণীয় কিছু দিক রয়েছে। চরিত্রদের পরিণতি কিংবা মুখনিঃসৃত বাক্যের মাধ্যমে লেখক তা ছড়িয়ে দিয়েছেন পাঠকের নিকট। দীর্ঘদিন কাউকে অবহেলা, অযত্ন করার পর যখন আত্মোপলব্ধি, অনুশোচনা জাগে অন্তকোণে তখন হয়তো মানুষটাই আর থাকে না।প্রকৃতি সবসময় সুযোগ দেয়না ভুল শুধরানোর। মা- বাবার একটি ভুল সিদ্ধান্ত সন্তানের জীবন বিপর্যস্ত করে তোলে। তাই সমাজ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা বাদ দিয়ে সন্তানের জীবনের জন্য উপকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। ❝পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি❞ কথাটি মিথ্যে নয় মোটেও। পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় এর মাধ্যমে মানুষ জীবনে সফলতা বয়ে আনে। তীব্র প্রচেষ্টা করে পড়াশুনা করার পর যখন দূর্দান্ত ফলাফল অর্জন করা যায় এবং মা- বাবার স্বপ্ন পূরণ করা যায় সে মুহুর্তগুলো ভীষণ আনন্দের এবং তৃপ্তিদায়ক। বলা বাহুল্য, নব্বই দশকের বাস্তব চিত্র লেখক দারুণভাবে বইতে চিত্রার্পিত করেছেন। ★ বইটি যারা পড়তে পারবেন: --------------------------------------------- যাদের সামাজিক- রোমান্টিক উপন্যাস পছন্দ এবং নব্বই দশকের আলোকে রচিত বইগুলো পড়তে পছন্দ করেন তাদের বইটি বেশ ভালো লাগবে।সাবলীল লিখনী পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন যারা তারা এ বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। লেখক রুকসাত জাহান খুবই সহজ, সাবলীল ভাষায় বইটি আলোকপাত করেছেন। শালীন, মার্জিত ভাষায় বর্ণিত এ বইটি পড়ার সময় একঘেয়েমি আসে না। আমাদের আশেপাশেরই গল্পগুলো একত্রিত করে বইয়ের পাতায় উপস্থাপন করেছেন। বইটি প্রাপ্তবয়স্ক যেকোনো বয়সের পাঠক অনায়াসেই পড়তে পারবেন। শিশু কিশোরদের হাতে তুলে না দেয়াই উত্তম। বইটিতে অশালীনতা না থাকলেও প্রাপ্তবয়স্ক অল্পস্বল্প ঘটনা রয়েছে যার দরুণ বইটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই উত্তম হবে। ★ব্যক্তিগত মতামত: -------------------------------- ❝চাঁদের কাছে রোদের চিঠি ❞ বইয়ে রহস্য,এডভেঞ্চার নেই। কিন্তু গল্পগুলো আমাদের শৈশব ও কৈশোর এর। যাপিত জীবনে এ ধরনের বইগুলো যেন এক টুকরো স্বস্তি। শহরের যান্ত্রিকতা থেকে টেনে নিয়ে যায় সবুজ গাছে আচ্ছাদিত ফেলে আসা সেই শৈশবে। ক্যাসেট ও সাদাকালো টেলিভিশন এর মতো যে দিনগুলো হারিয়ে গিয়েছে আমাদের জীবন থেকে । লুকোচুরি, গোল্লাছুট, বউচি খেলার মায়াময় সেসব দিনের অতীত- আর্তি চোখের কোণায় অশ্রু জমায়। আলাদিনের চেরাগ হাতে পেলে কমবেশি সবাইই বোধহয় ছোট্টবেলার সেসব দিনে একবার ভ্রমণ করে আসতো। এ বইটি যেন এক ট্রাইম ট্রাভেল। বাল্যকালের মধুর দিনগুলো থেকে ভ্রমণ করিয়ে এনেছে। বইটি যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকের ভালো লাগবে কিন্তু নব্বই দশকে যারা বেড়ে ওঠেছেন তাদের সবচেয়ে বেশি ভালো লাগবে আমার মতামত।তারা নিজের সাথে সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ততা খুঁজে পাবেন। লেখক রুকসাত জাহান এর লেখা এর আগেও পড়া হয়েছে।গ্রামীণ পটভূমিতে রচিত ❝ হৃদয়ে তার পায়ের ছাপ ❞ বইটিও প্রথম বই হিসেবে বেশ ভালো ছিল। সময়ের আবর্তনে লেখনী আরো পরিপক্ক হয়েছে। কাহিনীর গাঁথুনি, চরিত্রবিন্যাস, উপন্যাসের গতিময়তা সবকিছুতে যত্নশীলতার ছাপ রয়েছে। অযথা কাহিনী বাড়ানো হয়নি আবার তাড়াহুড়ো করে শেষও করা হয় নি। চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির প্রোডাকশন কোয়ালিটিও চমৎকার। বাঁধাই বেশ মজবুত হয়েছে। টাইপিং মিস্টেক তেমন দৃষ্টিগোচর হয়নি।সবমিলিয়ে, বইটি পড়ার সময় ভালো কিছু মুহুর্তের সাক্ষী হলাম। সর্বোপরি বলা যায়, বইটিতে রয়েছে মিস্টি প্রেমের আবহ, বিরহ, মান-অভিমান, নির্মম বাস্তবতা, সামাজিক অবস্থা, এবং বইয়ের সমাপ্তিতে রয়েছে এক চমক যা কিছুক্ষণের জন্য হলেও বাকরুদ্ধ করে দিবে পাঠকদের। আশা করি, ভবিষ্যতে লেখক আরো দারুণ কিছু বই পাঠকদের উপহার দিবেন। ★রিভিউকারী : (ফারসিয়া মাহমুদ)
Was this review helpful to you?
or
#চাঁদের_কাছে_রোদের_চিঠি "হাত বাড়িয়ে চাঁদকে একটা প্যাকেট দেয় রোদ। দীপু নাম্বার টু। বইটা খুলে। হলুদ একটা চিঠির খাম হাতে এসে পড়ে। তুই কি জানিস, চাঁদ আর রোদের কিরণ যে একই? সূর্যের যে কিরণ দিনে রোদ, রাতেই তা চাঁদের আলো। তুই আর আমি দিন আর রাতেরই দুটো রূপ মাত্র। এই পৃথিবীতে কি আমরা একটাই রূপ হতে পারি? তুই কি এক মুঠো রোদের এক ফালি চাঁদ হবি?" ★ ভালোবার এমন আহ্বান চাইলেই কি ফেরানো সম্ভব? হয়ত না। তাইতো রোদের এমন ভালোবাসার আহ্বানে চাঁদও সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেনি। পাঠকপ্রিয় লেখক রুকসাত জাহানের তৃতীয় একক উপন্যাস "চাঁদের কাছে রোদের চিঠি " নব্বই দশকের এমনই একটি ভালোবাসার আখ্যান ব্যক্ত করে যায়। ★ কাহিনি নব্বইয়ের : গল্পের শুরু আব্বাস ও রাশেদ সাহেবের দুই পরিবারের ৫ ছেলেমেয়েদের ঘিরে। বৃষ্টি, কিরণ, রোজি,রোদ আর চাঁদ। একসাথে পাশাপাশি বসবাস, পড়াশোনা, খেলাধুলা, বেড়ে ওঠা সবই যেনো চোখের সামনে এই পাঁচ জনের। কিন্তু বড় হতে হতে এদের কারো কারো মনে একে অন্যের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে থাকে। কিরণের মনে রোদ আর রোদের মনে চাঁদ কড়া নাড়ে। এদিকে বহু বছর আগের এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাশেদ ও আব্বাস সাহেবের মনে এখনও তিক্ততা রয়েই গেছে । যার ফলে আয়শা ও ইসরাত একে অপরের কাছাকাছি হয়েও নাগালের বাইরে যেন দূরের মানুষ। পারিবারিক এমন বৈরি সম্পর্কে রোদ আর চাঁদের ভালোবাসা কীভাবে ঠিকানা খুঁজে নিবে? কিরণ ই বা কীভাবে সামলাবে নিজের মনকে? নব্বই দশকে যেখানে ছেলেমেয়ে একসাথে দাড়িয়ে কথা বলাও দৃষ্টিকটু সেখানে বৃষ্টি কীভাবে ভিন্ন ধর্মের তুহিনের হাত ধরবে? এই সব কিন্তুর মধ্যেই রোদ আর চাঁদের ভালোবাসার চারাগাছ চিরকুট আর চিঠির মধ্যেমে একটু একটু করে বেড়ে উঠতে থাকে গোপনে। মোবাইল, ইন্টারনেট ও ওয়াইফাইয়ের যখন নামগন্ধও ছিলো না সেই সময়ের মিষ্টি, শুদ্ধ একটি ভালোবাসার কাহিনি হলো "চাঁদের কাছে রোদের চিঠি "। ★ নব্বইয়ের অনুভূতি : বইটা হাতে নিয়েই বুঝেছি রোমান্টিক উপন্যাস হবে। চিঠি, প্রেমপত্র আদান প্রদান। ভালোবাসার মিষ্টি খুনসুটি সবশেষে পরিনয়ের মধুর পরিণাম। কিন্তু বইটার যত গভীরে গিয়েছি ততই নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছিলাম। আহা নব্বইয়ের টান।ফেলে আসা শৈশব, কৈশোরের হাজারো স্মৃতি। চেনা পরিচিত সেই সময়, সাদাকালো টিভিতে আলিফ লায়লা দেখা, গরমে একটু ফ্রিজের ঠান্ডা পানির শীতলতা, কয়েন আর ডাকটিকিট সংগ্রহ, স্কুলের মাঠে আড্ডা, সন্ধ্যা হলে হারিকেনের আলোয় পড়তে বসা এমন নব্বইয়ের আরও নানান ছোট বড় ঘটনা উপন্যাসের পাতায় নিপুণভাবে কাহিনির সাথে জুড়ে দেয়া। এখনকার মোবাইল, ইন্টারনেটের মতো প্রেম নয়। চোখের দৃষ্টিতে কথা আদান-প্রদান, দূর থেকেই একটু দেখা, পাশাপাশি দূরত্ব রেখে হেটে চলা এবং সবচেয়ে ভালোলাগার জিনিস চিঠি আর চিরকুটে মন দেয়া,নেয়া। সবই যেন ফুটে উঠেছে বইটিতে। এত এত স্মৃতি চোখের সামনে ভাসছিলো যে বইয়ের মাঝেই ডুবে গিয়েছিলাম। লেখক তার গল্পের ঝুড়ি থেকে যেন গোটা নব্বইয়ের সময়টাই তুলে ধরেছেন বইতে। কিছু সংলাপ যেন গোটা কাহিনিকে কয়েক লাইনেই মুগ্ধতার চাদরে মুড়ে দিয়েছে। এমনই নদীর মতো শীতল, বহমান প্রেম চলত নব্বই দশকে। "কত লুকোচুরি খেলা খেলতে হয়, এমনও হয় রাস্তার পথ চলতে পাশাপাশি দূরত্ব রেখে শুধু হেঁটে যাওয়া হয়। একটা কথাও বলা হয় না মুখে। তবুও যেন অব্যক্ত কত কথা বলা হয়ে যায়। কখনো জুতোর ফিতে বাধার বাহানায়,কখনো গাছের নিচে ছড়িয়ে থাকা বকুল কুড়ানোর ছলনায় হাতে হাতে চিঠি চিরকুট চালাচালি হয়। " ( পৃ: ১০৮) ★ কিছু চরিত্র কথা বলে : যেকোন উপন্যাসে এমন বিশেষ কিছু চরিত্র থাকে, যা তাদের সংলাপ ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে গোটা উপন্যাসে অন্য মাত্রা যোগ করে। এরা যেকোন যুগে, যেকোন সময়েই নিজ রাজত্ব বহাল রাখে। এই উপন্যাসেও এমন কিছু চরিত্র আছে। ❤️ রোদ : "পৃথিবীর বুকে যে ফুল ফোটে তা ঝরে পড়ে। হৃদয়ের বুকে ফোটা ফুল নয়। কেননা পানি নয়, ভালোবাসা নামক রক্ত শুষেই সে ফুলের রঙ রূপ আসে। দূরত্ব বরং সেই ফুলকে কাছে পাওয়ার বাসনা আরো তীব্র করে। " এই চরিত্রটি আমার অনেক প্রিয়। মেধাবী, দূরন্ত, সুদর্শন এক কিশোর রোদ। এ যেন ঠিক নায়ক হবার সকল বৈশিষ্ট্য নিয়েই রচিত হয়েছে। একইসাথে অকপট। নিজের ভালোবাসার মানুষকে মনের কথা জানাতে এক মুহূর্তও বিলম্ব করে নি। ❤️ চাঁদ : " আমার অনুভূতিগুলো আমি মনে বুঝিয়ে বলতে পারিন। যে আমাকে ভালবাসবে,আমার চোখ দেখেই তাকে আমার কথাগুলো আমার অনুভূতিগুলো বুঝে নিতে হবে। আর আমি জানি, চাঁদের মন শুধু রোদই বোঝে। উপন্যাসের এই চরিত্রটি যেন শান্ত এক নদী। যে আপন ভুবনেই বয়ে চলে । নিজের প্রতি হওয়া সকল তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা সব যেন তার কাছে স্বাভাবিক। কিন্তু একই সাথে তার ব্যক্তিত্বের ধার ছিলো পাঠক হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে সর্বোচ্চ যত্ন দিয়ে আগলে রাখতে জানে এমনই ছিলো চাঁদ। ❤️ কিরণ : " একজনকে ভালোবাসলে তাকেই যে পেতে হবে তা তো নয়। ভালোবাসার মানুষকে ভালোবেসে যাওয়ার জন্য তাকে পাওয়াটা জরুরি নয়।" উপন্যাসের এই চরিত্রটি কিছুটা ভিন্ন। সে একইসাথে টমবয়, দূরন্ত আর ভীতু। কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কিরণ চরিত্রটি পাঠকের নজরে পড়বে নিশ্চিত। ★ এছাড়াও বৃষ্টি, তুহিন, শফিক, রোজি,আয়শা, ইসরাত, রাশেদ, আব্বাস সবাই ছিলো নিজ নিজ জায়গায় চমৎকার। ★ প্রচ্ছদ ও প্রোডাকশন :বইয়ের কন্ডিশন, প্রোডাকশন,প্রিন্টিং কোয়ালিটি সবকিছুই চমৎকার ছিলো। প্রচ্ছদটা ছিলো আরও দারুণ। পুরো প্রচ্ছদটি যেন গোটা উপন্যাসের মূলভাব ফুটিয়ে তুলেছে শিল্পের ছোঁয়ায়। এযেন একটা খামে মোড়া গোটা নব্বইয়ের আবেগ। এইজন্য প্রচ্ছদ শিল্পী ফাইজা ইসলামকে অভিনন্দন জানাই। লেখকের ঝরঝরে লেখা বইটি একটানে পড়তে স্বস্তি দিয়েছে। সব মিলিয়ে চমৎকার একটা সময় কেটেছে চিঠি, চিরকুট, নব্বইয়ের প্রেম, রোদ আর চাঁদের সাথে।
Was this review helpful to you?
or
শেষ করলাম সমসাময়িক জনপ্রিয় লেখক রুকসাত জাহানের লেখা সামাজিক উপন্যাস "চাঁদের কাছে রোদের চিঠি"। রুকসাত জাহানের লেখার বিশেষ দিক হলো, তার লেখার মাঝে মাটির গন্ধ পাওয়া যায়! তার লেখার মধ্যে দিয়ে ইট পাথরের এই যান্ত্রিক শহরে থেকেও প্রকৃতির কাছাকাছি আসা যায়! হাজারো ব্যস্ততা, শত সহস্র কাজের মাঝে আমাদের প্রত্যেকের জীবনে ঘিরে থাকা অতীতের মিষ্টি, অম্ল, মধুর স্মৃতিগুলো অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। "চাঁদের কাছে রোদের চিঠি" পুরোনো দিনের হারিয়ে যাওয়া সেই স্মৃতিগুলোকে আমাদের চোখের সামনে মেলে ধরবে। বিশেষ করে যাদের জন্ম আশি কিংবা নব্বই দশকে তারা উপন্যাসটি পড়াকালীন সময়ে নিজেদের স্বর্নালি অতীতে ফিরে যেতে বাধ্য হবেন। দুজন নারী পুরুষ এবং তাদের পরিবারকে ঘিরে উপন্যাসটির পটভূমি রচিত হলেও এই গল্প নিয়ে যাবে অতীতের সেই দিনগুলোতে যে দিনগুলোর কথা ভেবে আমরা হয়ত এই ডিজিটাল যুগে এসেও দীর্ঘশ্বাস ফেলি। যে সকল পাঠক প্রেমের গল্প পড়তে ভালবাসেন, ভালবাসেন প্রথম প্রেমে পড়ার মিষ্টি অনুভুতিগুলোকে, তাদের কাছে ভীষণ ভালো লাগবে "চাঁদের কাছে রোদের চিঠি"। গল্পের সমাপ্তি নিয়ে কিছু বলতে চাই না। শুধু এটুকু বলতে পারি, গল্পের শেষ ভাগে এসে আমি চমকে গেছি, বড্ড বেশী চমকে গেছি! "চাঁদের কাছে রোদের চিঠি"র লেখক রুকসাত জাহানের জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা। বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন জনরায় ছড়িয়ে যাক্ লেখকের বলিষ্ঠ পদচারণা এই প্রত্যাশা রাখছি।
Was this review helpful to you?
or
গতানুগতিক বুক রিভিউ লিখব না। সে বিষয়ে আমি ঠিক পারদর্শীও নই । শুধু বই/ পান্ডুলিপিটা পড়ার পরে নিজের অনুভূতিটুকুই লিখব। বইটা হাতে নিয়ে পড়ার সুযোগ এখনও না হলেও পান্ডুলিপিটা পড়ার সুযোগ হয়েছে। আপুর কাছে তাই আমি কৃতজ্ঞ। চমৎকার এই উপন্যাসটির একদম শুরু থেকে বই হয়ে আসা পর্যন্ত এই লম্বা যাত্রায় এর সাথে থাকতে পেরে ভীষণ ভালো লেগেছে। তাই বলে আমি যে মিথ্যা করে বইটি সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলব তা কিন্তু নয়। আসলে " চাঁদের কাছে রোদের চিঠি" এমনিতেই এত সুন্দর একটা উপন্যাস যে এটি সম্পর্কে মিথ্যা করে বলার কিছু নেই। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে যেমন নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলাম তেমনি বিস্মিত হয়েছিলাম। যতদূর জানি লেখক রুকসাত জাহানের বেড়ে ওঠা শহরেই। অথচ তার লেখায় নব্বই দশকের গ্রাম বাংলা এত চমৎকারভাবে উঠে এসেছে যে অবাক না হয়ে উপায় নেই। লেখক সেই সময়টাকে এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন যে নতুন প্রজন্মের পাঠকেরা এই উপন্যাস পড়ে নব্বইয়ের দশকটাকে ঠিক ঠিক অনুভব করতে পারবে। চমৎকার এই উপন্যাসটির সাথে পাঠকের সময় দারুণ কাটবে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। রুকসাত জাহান ও তার এই বইটির সাফল্য কামনা করছি। রেটিং: ৫/৫ বই: চাঁদের কাছে রোদের চিঠি লেখক: রুকসাত জাহান প্রকাশনী: চলন্তিকা প্রকাশকাল: বইমেলা ২০২৪ গতানুগতিক বুক রিভিউ লিখব না। সে বিষয়ে আমি ঠিক পারদর্শীও নই । শুধু বই/ পান্ডুলিপিটা পড়ার পরে নিজের অনুভূতিটুকুই লিখব। বইটা হাতে নিয়ে পড়ার সুযোগ এখনও না হলেও পান্ডুলিপিটা পড়ার সুযোগ হয়েছে। আপুর কাছে তাই আমি কৃতজ্ঞ। চমৎকার এই উপন্যাসটির একদম শুরু থেকে বই হয়ে আসা পর্যন্ত এই লম্বা যাত্রায় এর সাথে থাকতে পেরে ভীষণ ভালো লেগেছে। তাই বলে আমি যে মিথ্যা করে বইটি সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলব তা কিন্তু নয়। আসলে " চাঁদের কাছে রোদের চিঠি" এমনিতেই এত সুন্দর একটা উপন্যাস যে এটি সম্পর্কে মিথ্যা করে বলার কিছু নেই। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে যেমন নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলাম তেমনি বিস্মিত হয়েছিলাম। যতদূর জানি লেখক রুকসাত জাহানের বেড়ে ওঠা শহরেই। অথচ তার লেখায় নব্বই দশকের গ্রাম বাংলা এত চমৎকারভাবে উঠে এসেছে যে অবাক না হয়ে উপায় নেই। লেখক সেই সময়টাকে এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন যে নতুন প্রজন্মের পাঠকেরা এই উপন্যাস পড়ে নব্বইয়ের দশকটাকে ঠিক ঠিক অনুভব করতে পারবে। চমৎকার এই উপন্যাসটির সাথে পাঠকের সময় দারুণ কাটবে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। রুকসাত জাহান ও তার এই বইটির সাফল্য কামনা করছি। রেটিং: ৫/৫
Was this review helpful to you?
or
ভেবেছিলাম একদম নিয়ম মেনে রিভিউ লিখবো। কিন্তু অনুভূতি আসলে নিয়ম মেনে প্রকাশ করা যায় না। “ চাঁদের কাছে রোদের চিঠি” বইটার নাম পড়ে মনে হবে নির্ঘাত বাচ্চামিতে ভরা প্রেমের উপন্যাস। কিন্তু রুকসাতের প্রায় সব লেখা পড়েছি, এই উপন্যাসের কিছু অংশ ফেসবুকে পড়া ছিলো বলে জানি এটা পুরোপুরি রোমান্টিক আবার পুরোপুরি সামাজিক উপন্যাস না। উনিশশত তিরাশি সাল থেকে উপন্যাস শুরু। গ্রামীণ পটভূমিতে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে উপন্যাস শুরু হয়। লেখিকা খুব মুন্সিয়ানার সাথে আমাদের ভ্রমণ করিয়েছেন নব্বইয়ের দশক। উপন্যাসের গতবাধা ঘটনা বিন্যাস নয় সমানতালে চলেছে তৎকালীন ঘটনা প্রবাহ। প্রিয় উক্তি, “মরুভূমি মানে কি শুধুই শুষ্ক বালুকণা? মরুর বুকের যে মরূদ্যান তৈরি হয়। তার সৌন্দর্য অনাবিল। তাতে সবুজ থাকে। তাতে তৃষ্ণা মেটানোর জল থাকে। সেই মরু সরোবরে ঠান্ডা জলের স্রোত বয়ে যায়। সেখানে প্রিয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা হৃদয়ে ঝড় ওঠে না। বরং অপেক্ষার শান্ত সংগীতের কলতান হয়।‘ ‘তবে জেনে রাখো তোমার বুকে যে মরূদ্যান তৈরি হবে তার ছোঁয়া পেতে ব্যাকুল থাকবে আমার বুকে জেগে ওঠা অপেক্ষা নদী। সেই নদীর জলে পা ডুবিয়ে আমি অপেক্ষা করব নতুন সূর্যোদয়ের। যার রোদের আলোয় চিকমিকি করবে ঢেউরূপী কূলভাঙা আমার অশ্রুগুলো।” রুকসাত জাহানের এটা তৃতীয় বই হলেও লেখায় অনেক পরিপক্কতা এসেছে। মানব মানবীর প্রেমের পাশাপাশি এসেছে পরিবার, সমাজ আর তথ্যপ্রযুক্তির এগিয়ে যাওয়ার গল্প। আমি জন্মের পর থেকে ঢাকায় বড় হয়েছি। টেলিভিশন নিয়ে এই আবেগ আমার কাছে একেবারেই অজানা বিষয় ছিলো। আমার টিভিতে ডিস সংযোগ, এমপিথ্রি, মোবাইল দেরিতে পাওয়ার আবেগের বিষয়টা মনে করিয়ে দিয়েছে। এই উপন্যাস নস্টালজিক করে তুলবে আপনাকে। উপন্যাসের কোন অংশ বোরিং লাগবেনা। বেশ কয়েকটি অসাধারণ চিঠি আছে এতে। যারা প্রথম প্রেমের চিঠি পেয়েছেন তারা খুব সৌভাগ্যবান। আমরা মেসেজের যুগে এসে সেই আবেগ থেকে বঞ্চিত। উপন্যাসের বৃষ্টি চরিত্র যদিও খুব একটা ভালো, সহিষ্ণু ছিলো না, উপন্যাস এগিয়ে যাওয়ার পর মনে হলো, সব বিষয়ে সহিষ্ণুতা না থাকাই ভালো। কিছু বিষয়ে আওয়াজ না তুললে জীবন বৃথা। নামের কারণে চরিত্রটি আমার জন্য বিশেষ। উপন্যাসে অনেক বই, ব্যান্ডের গায়ক, নায়ক,নায়িকার কথাও এসেছে। এসেছে পোশাক পরিচ্ছদ আর চুলের স্টাইলের বর্ণনা। যেন লেখিকা একবার ঐ যুগে বসবাস করে এসেছেন। গ্রামের বর্ণনা ভালো লেগেছে। শেষে একটা চমক আছে। স্পয়লার দিবো না। যা উপন্যাসের বিশেষত্ব এনে দিয়েছে। বেশি বড় করলাম না লেখা। বই হোক সবসময়ের সঙ্গী। লেখিকার জন্য নিরন্তর শুভকামনা ?