User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#মৌনালেখ্য #পাঠ_অনুভূতি ♦এক নজরেঃ •উপন্যাসের নামঃ মৌনালেখ্য •লেখকঃ সুমাইয়া তাসনিম •ধরনঃ মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক •প্রকাশনীঃ উপকথা প্রকাশন •প্রচ্ছদঃ পরাগ ওয়াহিদ •পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৫৯ •প্রকাশকালঃ অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ লেখনীতেঃ রিফায়াত হাসান সাকিব ♦ভূমিকাঃ অনেক দিন পরে যখন আমি এই বইটি পড়ছি হঠাৎ করে মনে হলো কোথাও যেন হৃদয় ভাঙা শব্দ হলো । বৃষ্টিভেজা রাতে খোলা জানালার দেয়ালের পাশে যেভাবে জানালা আটকে রাখা কাঠের তক্তাগুলো ভিজতে থাকা অবস্থায় আছড়ে পড়ে, ঠিক সেভাবে যেন কোথাও একটা আছড়ে পড়লো । আমি আমার জীবনে নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে যা করি, তার মতো করেই বই পড়া বিষয়টিকেও আমার অভ্যাস বানিয়ে ফেলতে চেয়েছিলাম । চেয়েছিলাম যে বই আমার মনে আসে, তার সুখ আমার হৃদয়ে আসুক । তো যা বলছিলাম, হৃদয় ভাঙা সেই শব্দে আমি থমকে গেলাম । আমি নিজেকে দেখতে পেলাম সেই জায়গায় যেখানে মানুষে মানুষে চুপ করে তাকিয়ে থাকা আছে । শুধু চাহনি দিয়ে পৃথিবী বুঝিয়ে ফেলা হয় । এই এতকিছু করার বই পড়ার জগতটাকে আমি ছাড়তে পারবো না, কিন্তু আঁকড়ে ধরে রাখতেও পারছি না । এই যে করছি না বলে পারছি না এর আক্ষেপ আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আর চোখের কোণে বই পড়ার অবস্থাতেই চোখে পানি এনে দিচ্ছে । ♦ পারিপার্শ্বিক দিকঃ আজ কতগুলো দিন পরে আমি বই পড়লাম, আমার মনে নেই । কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে করে আমি রোজকার মতো রাতগুলো আকাশের উদাসীন থেমে যাওয়া অন্ধকারে বই পড়ে বই দিয়ে আমার পৃথিবীকে জ্বলজ্বল করে গড়ে তুলি । এই বইটা যে আমি পড়বো তা ঠিক করে রেখেছিলাম কতদিন আগে, তা এখন খেয়াল হচ্ছে না । অথচ কী যে আয়েশ করে, বড্ড আলগোছে মনের যত্নে এই বইটি আমি কতগুলো দিন পড়তে চেয়েছিলাম । সেই দিনটি এমন এক দিন হয়ে এলো, যেদিন আমি আয়োজন করেই রাত ১২টার কোনো একটা সময়ে বইটা হুট করেই পড়া শুরু করেছিলাম । যখন পড়া শেষ হলো তখন সময়টা রাত ৩টা ৩০ মিনিট । ♦নামকরণঃ মানুষ নিজের মনে যে কতশত সুখ আর স্বপ্ন নিয়ে শহর গড়ে ফেলে তার শেষ নেই । এই সুখ আর স্বপ্নের শহরে বন্দরে হয়ে তৈরি করতে চায় পাশে থাকা মানুষগুলোকে । কেউ তো আসুক যে দুদণ্ড শান্তি দিবে । জীবনানন্দ দাশ এর কবিতার মতো করে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই বোধহয় চায় কেউ শুধু আসুক, শান্তি দেয়ার জন্য । শান্তিতে পাশে থেকে নিস্তব্ধতাকে রাখলেও তার মূল্য যেন বুঝতে পারা যায় তা শেখাতে আসুক । এই উপন্যাস, মনের মাঝে বয়ে চলা অগুনতি বিশেষণের শুধু চোখ দিয়ে তাকিয়ে থাকা চাহনির উপাখ্যান । এই উপন্যাস নিঃসঙ্গতার কঠিন এক বাস্তবতার উপাখ্যান । ‘মৌনালেখ্য’ যেন মনের নীরবে ঘুপটি মেরে থাকা যে পাখিটি ডাকতে থাকে মনজাগানিয়া করে বড্ড করুণ সুরে, তারই বিভিন্ন অনুভূতি বিশ্লেষণের আখ্যান । ♦ফ্ল্যাপে লেখাঃ হতে পারে গল্পটা আনিসের, যে হৃদয়ের সেই ভাষা বুঝতে চায় যা অধিকাংশ মানুষের কাছেই দুর্বোধ্য, কিংবা যা প্রকাশ করার মত সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া দুস্কর বলে গভীরেই চাপা পড়ে হাসফাস করে প্রকাশ পাবার আকাঙ্ক্ষায় । কিংবা রুবির, যে কক্ষচ্যুত কোনো নক্ষত্রের মতো বিস্তৃত মহাশূন্যে ঘুরপাক খেতে খেতে খুঁজে বেড়াচ্ছে নিজস্ব কক্ষপথের সন্ধান । অথবা জহিরের, নৈর্ব্যক্তিক আবেগ, দ্বিধাগ্রস্ততা, নিঃসঙ্গতা যাকে বিভ্রান্ত করে চলে প্রতিনিয়ত । সম্পর্ক গুলো যার জন্যে অস্পষ্ট এক চিত্রকর্ম, খুব কাছে থেকেও, স্পর্শ করেও যাদের সে হৃদয়ঙ্গম করতে পেরে ওঠেনা । কিংবা তনুর, জীবনটা যার কাছে বড় আদুরে সকাল । বেঁচে থাকাকে যে উপভোগ করে, ভালোবাসে । যাকে বড় সহজেই ভালোবেসে ফেলা যায় । কিংবা রায়হানের, জীবনের দ্ব্যর্থবোধকতার উপলব্ধি যাকে ভারাক্রান্ত করে তোলে এক সন্ধ্যায় আচমকা নিজেকে আবিষ্কার করার পর । কিংবা হয়তো উচ্চাভিলাষী জয়নালের । জীবনের সাথে যে প্রচন্ড হিসেবী । হয়তোবা মেহেরজানের, জীবনের শত বাঁক ঘুরে এসে যে একদিন আবিষ্কার করে তার নিজের বলে আসলে কিছুই নেই । জীবনের পথ পরিক্রমায় মানুষ যা অনুভব করে, সে আবেগ-অনুভূতিগুলোকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য কখনো কখনো ভাষা বড় সংকীর্ণ বোধ হয় । তবু তো তারা বড় বাস্তব, ভীষণ স্বচ্ছ । মানুষের এই বড় একান্ত, আটপৌরে, নিজস্ব কথাগুলো, অনুভূতি গুলো আর তার ব্যবচ্ছেদই মৌনালেখ্য । দর্শন থেকে জন্ম হলেও সময়ের পরিক্রমায় মনোবিদ্যা এতটাই বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানের উৎস হয়ে উঠেছে যে, সাহিত্যরস আর কাঠামোগত মনোবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ একইসাথে ধারণ করা একটু কঠিন । এই উপন্যাসের মাধ্যমে সেই জায়গাটিতে চেষ্টা করা হয়েছে একটি মেলবন্ধন নির্মাণ করতে । ♦প্রচ্ছদঃ এই প্রচ্ছদটি যেদিন প্রথম দেখেছিলাম, সেদিন আমার মন ধক করে উঠেছিল । তারপর হাত । আমার মনে হয়েছিল নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে ঘটনা বোধহয় এভাবেই আসে । প্রচ্ছদে মানুষের জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনের ছাপ যেন স্পষ্ট হয়েও মনে এক আলোড়ন তুলতে চেয়েছে । কোথাও একটা জীবনে ফুটে থাকা বিশেষণগুলোই যেন উঠে আসতে চেয়েছে । নিঃসঙ্গতা, জীবনের টানাপোড়েন, জীবনের মধ্যগগনে দাঁড়িয়ে থাকা মধ্যদুপুর এগুলোই যেন কোথাও একটা জীবনকে বলতে চেয়েছে । জীবনের বিভিন্ন ধাপের বিভিন্ন ধাঁচের এই জীবনে কতগুলো পাখি, জুতা, গাছ এবং রোদ এগুলো যেন জীবনের অর্থ হয়েই আসে । সম্পর্ক, সম্পর্কের যত্ন যেন উদাসীন এই মনখারাপের দৃশ্যে ভেসে থাকে । অদ্ভুত সুন্দর এই প্রচ্ছদটা দেখেই প্রথমে বইটা নেয়ার ভীষণ ইচ্ছে হয়েছিল আমার । ♦পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ এই পৃথিবীতে আমাকে আকর্ষণ করার মতো বস্তু হলো, মনস্তাত্ত্বিক । আমি কখনও যখন বাইরে কোথাও যাই, আমার মনে হয় এই পৃথিবী বড্ড কেমন যেন! কোথাও একটু আলগোছে থাকা নেই । এই পৃথিবী বড্ড নিঃসঙ্গতার কথা বলে । অদ্ভুত সুরে পৃথিবীজুড়ে থাকা মানুষগুলো যেন বড্ড নিঃসঙ্গ হয়ে মনের কাছাকাছি গিয়ে পাশে থাকার জন্য মানুষ খুঁজে । এই শহরে শান্তির খোঁজে কত মানুষ যেন একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকে । শুধু তাকিয়ে থেকে বলে, একটু পাশে থাকার জন্য, সুখী করার জন্য মানুষ চাই । ✓পটভূমিঃ এই উপন্যাসের পটভূমিতে আমি তাই মুগ্ধতাই খুঁজে পেয়েছি । যে উপন্যাসে যত বিশেষণে নিঃসঙ্গতা, কষ্ট, বিষাদ আর মনের কাছাকাছি কিছু থাকার প্রক্রিয়া এসেছে জীবনের সমান্তরাল টানাপোড়েনে । সেই উপন্যাসের পটভূমির প্রেক্ষাপট আমার তত মনের কাছাকাছি হয়ে আবাস গেড়েছে । আমি শুধু নীরবে তাতে সায় দিয়েছি । আমার এই পৃথিবীতে মনে হয় রাতের আঁধারে হোক কিংবা দিনের আলোড়নে কোথাও যেন পৃথিবী নিঃসঙ্গতার বুনটে ঠাসা । কোথাও এই সঙ্গতা নামক দুর্বলতার আবরনে নিঃসঙ্গতাই পৃথিবী বরণ করে নিয়েছে । মনের মাঝে কোথাও যেন অনুভূতির খেদ, তা নিয়ে বিশ্লেষণের বড্ড তোরজোর । এরকমই হয়ে থাকা পটভূমির এই উপন্যাসটি বড্ড কাছের হয়ে ধরা দিতে তাই বেশিক্ষণ যে অপেক্ষা করতে হয়নি । পৃথিবীতে মনের কাছাকাছি চলে যাওয়া যেন সবথেকে কঠিন, সবথেকে দুর্লভ । তা বর্ণনা করার জন্য যে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা, অনুভূতি প্রকাশের জন্য তীব্র তাড়া তা প্রতিটি প্রেক্ষাপটে কোথাও একটা গিয়ে সুখ এবং অসুখের মাঝে তীব্র নির্জীব করে রাখে । রাতের এই নির্জনতা যেন কোথাও একটা এই পটভূমিকে ঘিরে ধরে রাখা প্রেক্ষাপটে যেভাবে কাহিনী বয়ে গিয়েছে তা আরো ভালো লাগা দেয় । ✓আবহ গঠনঃ পটভূমি এবং প্রেক্ষাপটকে জায়গা করে নেয়ার জন্য উপন্যাসে দরকার হয় আবহ সৃষ্টি করার জন্য যে জায়গা থাকে তাকে মনখুলে বিস্তার করতে দেয়ার স্বাধীনতা দেয়া । সাথে দৃশ্যপটকে নিজের মতো এগিয়ে যাওয়া । এই দুইটা বিষয়ই উপন্যাসে বেশ দারুণ ভাবে ছিল । যেভাবে উপন্যাসে বয়ে গিয়ে উপন্যাসে একটু গভীরতা আনার চেষ্টা করেছে তা বেশ ভারসাম্য তৈরি করার চেষ্টাও করেছে । ♦চরিত্র গঠনঃ এই উপন্যাসে বেশ কতগুলো চরিত্র আছে । যেহেতু সামাজিক ধাঁচের সাথে মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে উপন্যাসটি সাজানো হয়েছে তাই উপন্যাসের চরিত্র গঠন খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল । কারণ তাদের মাঝে দিয়েই উপন্যাসের ভাবভঙ্গি, এবং তাকে উপস্থাপন করে ফুটিয়ে তুলে অনুভূতি প্রকাশ করা হবে । মনস্তাত্ত্বিক এক মুহূর্ত যেন উঠে আসবে । ♦চরিত্র বিশ্লেষণঃ •আনিসঃ আনিস জীবনে একজন সঙ্গী চেয়েছিল । যে তাকে বুঝবে, সুখ এবং শান্তির খোঁজে থাকা পৃথিবীতে পাশে থাকা সঙ্গীর মাঝেই আঁকড়ে ধরে রাখবে । বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের, হাসিখুশি বজায় রাখতে পারা মানুষটি মানুষের মধ্যেকার সম্পর্ক, অদ্ভুত মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি এসবগুলো বুঝতে চেয়েছিল । এই বিশেষণগুলো বোঝার জন্যেই আনিস যেন প্রগাঢ় এক চাহনি নিয়ে পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়ায় । •তনুঃ মিষ্টি, হাসিখুশি স্বভাবের মেয়েটির জীবনে দুই ধরনের ছায়া । যে ছায়ায় নিজেকে প্রাণোচ্ছল দেখতে পাওয়ার পাশাপাশি আত্মজ্ঞানসম্পন্ন মূল্যবোধ এবং নিজের ভালো লাগায় ভালোবেসে বাঁচতে শেখার এক গল্প যেন জানায় । বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের মেয়েটি পরিস্থিতি বুঝতে পারে খুব । •জহিরঃ সমাজের কিংবা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সবকিছুর এক অদ্ভুত ছায়া তার জীবনে পড়ে । সেই পড়ে যাওয়ায় কোথাও একটা আলোড়ন তুলতে চায় । নিজেকে পাশের মানুষগুলোর সাথে মানিয়ে না চলতে পারার থেকেও নিজেকে নিয়ে বেঁচে থাকার এক অদ্ভুত মনস্তাত্ত্বিক অনুভূতি একটা পরিস্থিতিতে তাকে কষ্ট দেয় । সে ভালো নেই, নাকি ভালো থাকা তাকে ঘিরে নেই এই দুইয়ের সমান্তরাল টানাপোড়েনে জীবন বয়ে যায় অনেকখানি । •রুবিঃ ভীষণ আত্মবিশ্বাসী স্বভাবের মেয়েটি একটু জীবনে শান্তি চায় । যে শান্তিতে প্রিয়জনদের একটু পাশে থাকা, একটু হাতে হাত রেখে বসে থেকে ভালোবাসো তো জিজ্ঞেস করার উত্তরে সম্মতি দেয়া চাওয়া হয় । কোথাও একটা নিঃসঙ্গতাকে এড়িয়ে পাশের মানুষটার সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে চাচ্ছিল সে । আত্মজ্ঞানসম্পন্ন মনোভাবের মেয়েটির পরিস্থিতি বোঝার অদ্ভুত এক চেষ্টা । যেন এক নিমিষেই সব বোঝা হয়ে যায় । •মেহেরজানঃ সমাজের এক অদ্ভুত গ্রাসে তাকে জীবনের পুরোটা জুড়ে দিয়ে যেতে হয় । এই পরিস্থিতি যেন জীবনের পুরোটা জুড়ে দ্বৈত এক কষ্টের সাক্ষী হয়ে যায় । কোথাও একটা সংসারের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার চেষ্টায় নিজেকে মেলে না ধরতে পারার ভয়, সমাজের অন্ধকার দিক তাকে মনের মাঝে থেকে ছোট করে দেয় । পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করে অনেক কিছু যেন করতে । •টুকিটাকি চরিত্রঃ এছাড়াও এই উপন্যাসে থাকা অনেকগুলো চরিত্র আমার ভীষণ কাছের মনে হয়েছে । হঠাৎ করে জীবনের নতুন এক রূপে আকীব এর চোখ মেলে দেখা । রেহানা এর সমাজ এবং সংস্কার এর বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব যেন কোথাও মিশে আছে । এছাড়াও নিজেকে নিয়ে উন্নাসিক জয়নাল এর বর্তমান এই সমাজের চিরাচরিত সংসারের পুরুষের রূপ যেন কোথাও ফুটে উঠে । রায়হান এর জীবনের এক মধ্যগগনে অদ্ভুত এক বোধোদয় অথবা জাহানারা এর পরিস্থিতি সবই যেন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ এর মতো করে জীবনেরই এক অদ্ভুত রূপ । ♦প্রিয় চরিত্রঃ এই উপন্যাসে প্রিয় চরিত্র আসলে কে হতে পারে তা নিয়ে ভাবতে বসে মনে হলো, এই উপন্যাসের প্রিয় চরিত্র হতে পারে উপন্যাসের গল্প । এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলে উপস্থাপন করা হয়েছে যে আমি আবেগতাড়িত হয়েছি । আন্দোলিত হয়ে মুগ্ধতায় ভেসেছি । তবে কিছু কিছু দৃশ্যপট এবং প্রেক্ষাপট ঘিরে থাকা আমাকে রুবি বেশ অন্যরকম অনুভূতি দিয়েছে । আনিস এর চরিত্রটির বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিও বেশ প্রিয় মনে হয়েছে । ♦প্রিয় অংশঃ বেশ কয়েক বছর আগে আমি একটি ছবি দেখেছিলাম, যার নাম ছিল ‘বেলাশেষে’ । সেই ছবিটি দেখতে গিয়ে আমি নিজেকে দেখতে পেয়েছিলাম । আমি ভেবে নিয়েছিলাম সেই রূপে, যেখানে ধৈর্য নিয়ে আমি জীবনের গল্পকে বুঝতে পারা যায় । পরিস্থিতির অনুকূলে হোক কিংবা প্রতিকূলে কোথাও একটা যেন চাহনি দিয়েই বিশ্লেষণ করে ফেলা যায় । সেরকমই জায়গা থেকে আমার মনে হয়েছিল, এরকম ধীরস্থির গোছের ছবিগুলোর যে সাদা-কালো এবং কালো ধাঁচে যে মন খারাপের গুরুগম্ভীর মিশেল, সেই জগতটা অনুভব করতে আমি বেশ রয়ে গিয়েছি । সেই গল্পেরও একটা মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল । এই উপন্যাসের প্রচ্ছদটা কোনো না কোনোভাবে আমাকে ‘বেলাশেষে’ এর কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল । আমাকে জীবনের উঠাপড়ায় ভাবতে শিখিয়েছিল । জীবনের কিছু নিরিবিলিতে ছাপ, কিছু আলোড়ন কিছু মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এগুলো উপন্যাসে থাকায় আমার ভালো লাগায় । মনস্তাত্ত্বিক আবহে যেভাবে সামাজিক কিছু সমস্যা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যা শিক্ষামূলক হিসেবে তার অবিসংবাদিত সমাধানও দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই এই উপন্যাসে আমার অন্যতম প্রিয় একটি দিক । এছাড়াও উপন্যাসের প্রতিটি আলাদা আলাদা জলছাপে আমি যেন একেকটা গল্প খুঁজে পাই । গল্পগুলো কোথাও যেন ঘটনার প্রেক্ষাপটে আলাদা অথচ কোথাও একটা যেন একই সুরে গাঁথা থেকে অদৃশ্য সংযোগ স্থাপন করে যায় । ভীষণ ভাবে ভালো লেগে যায় । আলাদা আলাদা দৃশ্যপট অথচ ভীষণ কাছের হয়ে যাওয়া প্রতিটি জলছাপগুলোতে থাকা আলাদা নামগুলো দেয়া বিষয়টা জীবনের টানাপোড়েনে দারুণ অর্থবহ বলে মনে হয় । জীবনের কোথাও গিয়ে একটা দৃশ্যেই যেন জীবনের বড্ড গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ধরা দেয় । ওই একটা দৃশ্য যেন জীবনকে ব্যাখ্যা করে । ‘রুবি’ এবং ‘তনু’ চরিত্রটির এরকম একটা মুহূর্ত কোথাও একটা যেন উপন্যাসের প্রিয় অংশ হয়ে আছে আমার কাছে । এছাড়া ‘রুবি’ এবং ‘মেহেরজান’ এর কথোপকথন কোথাও একটা যেন উপন্যাসকে অদ্ভুত ভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়ে যায় । ♦সংলাপঃ উপন্যাসের প্রেক্ষাপট এবং মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে যেভাবে উপন্যাসে শব্দচয়ন করা হয়েছে তা বেশ ভালো ছিল । এক্ষেত্রে যেভাবে সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছে তা যথেষ্ট ভারসাম্যপূর্ণ ছিল । কিন্তু সংলাপের শুরুতে উদ্ধৃতি মূলক চিহ্ন থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল আসলে, না হলে কোনটা সংলাপ তা বুঝতে কখনও কখনও দ্বিধায় পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা ঘটে । ♦লেখক প্রসঙ্গেঃ লেখক সুমাইয়া তাসনিম এর প্রথম উপন্যাস, ‘মৌনালেখ্য’ । বইয়ের সংখ্যা হিসেবে দ্বিতীয় । যখন কোনো উপন্যাসে মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি আমি খুঁজে পাই তখন সেখানে আমি পাঠক হিসেবে আজন্ম এক ধরনের দুর্বলতা খুঁজে পাই । আমার মনে হয় কোথাও একটা আকর্ষণ করে আমাকে । জীবনের টানাপোড়েনে মনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে । মন যে পৃথিবীর সবথেকে দুর্লভ এবং কঠিন বস্তু, ভালো লাগা কিংবা সুখে থাকা, নিঃসঙ্গতা এসব মনস্তাত্ত্বিক আবহের যে ছাপ তা আমাকে সবসময় আগ্রহী করে তুলে । মনের একটা ছাপ যে জীবনজুড়ে বয়ে যায় ভালো থাকা এবং সুখে থাকার জন্য তা মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসগুলোতে বুঝতে পারা যায় । লেখক এখানে দারুণ কাজ করেছে । প্রথম উপন্যাস হিসেবে এটি বেশ ভালো লাগা দিয়েছে আমাকে । এই ধরনের উপন্যাসে চরিত্র বর্ণনা, প্রেক্ষাপট উপস্থাপন এবং ঘটনাপ্রবাহ ফুটিয়ে তুলে তাকে ভারসাম্যপূর্ণ করা বেশ ভালো লাগার মতো কাজ । তা লেখক বেশ ভালোভাবেই করেছেন । লেখকের পরবর্তী লেখার জন্য শুভকামনা রইলো । ♦প্রকাশনীঃ উপকথা প্রকাশন এর কাজ একটা দিক থেকে আমার ভীষণ প্রিয় মনে হয় । যেভাবে পটভূমি বাছাই করে তারা বই আনে তা পাঠক হিসেবে বেশ ভালো লাগে আমার । এছাড়া যেভাবে বই প্রস্তুত করে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে তা প্রশংসার যোগ্য । তবে এই বইটির প্রচ্ছদের রং ছবির থেকে একটু হালকা ধাঁচের হয়েছে । প্রেস এর সমস্যা হলেও এখানে একটু নজর দেয়া জরুরি । এছাড়া বইতে বেশ কয়েক জায়গায় বানান ভুল আছে । তবে বই বাঁধাই এবং পৃষ্ঠা বাঁধাই ভালো করার মাধ্যমে অসাধারণ একটা বই পড়ার সুযোগ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ । ♦রেটিংঃ ৪.৭/৫ ♦উপসংহারঃ একজন মানুষের সবথেকে বোধহয় দরকার হয় কি জানেন? পাশের মানুষের উপস্থিতির এক অদৃশ্য গন্ধ । অথবা ঘ্রাণও বলতে পারেন । এই পৃথিবীতে সুখ নামক এক অদ্ভুত মোহনীয় আবেগের সাক্ষী হতে চায় । নিঃসঙ্গ নামক এক মনস্তাত্ত্বিক আবহে মানুষ একটু সুখ চায়, শান্তি চায় । মানুষ মানুষের খোঁজে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায় । একাকী জীবনে বড্ড আলগোছে থাকার অভাব । এরকমই এক আখ্যানে মানুষের জীবনে চলা বড্ড বুনো জীবনে বয়ে যায় কত অনাঘ্রাত ইতিকথা । এই উপন্যাসে একটা কবিতা আছে, তা যেন জীবনেরই রূপের চিরাচরিত আখ্যান । তারই ছোট একটু অংশ দিয়ে শেষ করে যাই, গরাদে দুটো ব্যস্ত চড়ুই যুগল, ডেকে ডেকে তবে ক্লান্ত হলো ভীষণ । রেগেমেগে শেষে একটা খসা পালক, রেখে গেল ফের ফিরে আসার অজুহাতে । তখনো আমি ভেতরে অসুখ পুষে, বিবর্ণ চোখে পরিচিত সুখ খুঁজি ।