User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ভাল লেগেছে
Was this review helpful to you?
or
جيد
Was this review helpful to you?
or
বই এর নাম - কবির আত্মবিশ্বাস লেখক - আল মাহমুদ ক্যাটাগরি - প্রবন্ধ প্রকাশনী প্রকাশনী - অনন্যা প্রকাশনী পৃষ্ঠা সংখ্যা - ১৪৭ গায়ের মূল্য - ১৫০ টাকা 'কবির আত্মবিশ্বাস' একটি প্রবন্ধ। ২০০০ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। কবি তাঁর সাহিত্যিক জীবনের নানা উপলব্ধি,আক্ষেপগুলোকে অকপটেই পাঠক শ্রেণীর কাছে প্রকাশ করেছেন বইটিতে। আল মাহমুদের বই এর সাথে পরিচয় খুব দীর্ঘ নয়। নোলক কবিতার মাধ্যমে তাঁর লেখার সাথে পরিচিত হই। ২০১৮ এর ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা থেকে বইটি কিনেছি এবং কবিকে তাঁর বাসায় গিয়ে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। প্রবন্ধের প্রতি আমার ঝোঁক কম।কিন্তু এটা পড়া শুরু করার পর অনেকটা আগ্রহ জন্মেছিল। এবার আসি বই এর কাহিনিতে। #কাহিনি_সংক্ষেপ : এক সময় ইসলামের সাথে দূরত্ব ছিলো কবি আল মাহমুদের। ইসলাম ধর্মের উপর পরে পুরোপুরি বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং মদ্য পান ছেড়ে দেন। তখন তাঁর কাছের কিছু মানুষ এবং বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা অভিযোগ এনিছিলেন, তিনি এর জবাব দিতে গিয়ে, ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইসলামের মানবিক শক্তি সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। ** আল মাহমুদ মনে করেন একজন প্রকৃত কবির জন্য প্রয়োজন তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সঞ্চয়। কবিকে হতে হবে নিজের অভিজ্ঞতা, নিজের শব্দ ও উপমায় দৃঢ়ভাবে দন্ডায়মান। ** কবি ফেব্রুয়ারি মাসকে সাংস্কৃৃতিক মাস্তানীর মাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন ফেব্রুয়ারি হল বাঙালিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোর এক সম্মিলিত উৎসবের মাস।একটা শ্রেণী রয়েছে যারা সারা বছর ভাষার কদর করেননা কিন্তু ফেব্রুয়ারি এলে ভাষার জন্য তাদের ভালোবাসা জাগ্রত হয়ে যায়। ** বাংলার মর্যাদা আশানুরূপ গুরুত্ব পাচ্ছেনা এর পিছনে তিনি অর্থনৈতিক কারণকে দায়ী করেছেন। ** রাষ্ট্রভাষা বাংলার কোনো শত্রু না রইলোও সাহিত্যভাষা বাংলার বড় শত্রু হিসেবে তিনি কলকাতা কেন্দ্রিক সাহিত্য ব্যবসায়ীদের দায়ী করেছেন। বাংলাদেশের বই এর বাজার তলিয়ে যাচ্ছে এর পিছনে তিনি দায়ী করেছেন তথাকথিত কয়েকজন বই পুস্তক বিক্রেতাদের।তাদের কারসাজিতে কলকাতার বই এ বাজার ছেয়ে যাচ্ছে। তারা জাতীয় সাহিত্যের গলা টিপে ধরেছে। ** তিনি মনে করেন ১৯৫২ এর মত আরেকটি আন্দোলনের প্রয়োজন আছে।সেটি হল সাহিত্য ভাষার আন্দোলন। ** কবি বলেছেন, কবিদের মধ্যে যে কবিসুলভ গুণের ঘাটতি রয়েছে সেটি হল আত্মবিশ্বাস। ** কবি নববর্ষ পালনকে সমর্থন করেন তবে নববর্ষ পালনের নামে প্রকৃতিপূজা, মূর্তিপূজাকে সচেতনভাবে পরিহারের পক্ষে মত দিয়েছেন।বাঙালিদের কিছু বৈশিষ্ট্যকে তিনি বুদ্ধি বিবেচনাহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। ** কবি তরুনলেখক গোষ্ঠীর কলকাতার স্বীকৃতির জন্য ভিখিরিপনার কথা বলেছেন। কবি স্বীকার করেছেন তিনিও এই দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি অনুভব করেছেন এই প্রলোভনের মায়া কাটিয়ে উঠা উচিৎ সকল তরুণ কবির। নতুবা বাংলা সাহিত্য ঢাকা কেন্দ্রিক হয়ে উঠবেনা। তরুণ কবিগোষ্ঠীর এই প্রলোভনের পিছনে তিনি ৪৭ এর দেশ বিভাগের পর একদল সাহিত্যিক,অগ্রজদের দায়ী করেছেন। তিনি মনে করেন তাদের চাপ এবং পাওয়ার প্রতিষ্ঠার ফলে তরুণ কবিরা কলকাতার প্রীতি প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছেন। ** কবি বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা না করে আমাদের দেশীয় সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করা উচিৎ। আমাদের সাহিত্যের উপর অন্য কোনো সাহিত্যের আধিপত্য মেনে নেওয়া কবির পক্ষে সম্ভব নয়। ** কবি গায়ে পড়া কিছু বুদ্ধিজীবীদের কথা বলেছেন। যারা আগা গোড়া না বুঝেই নিন্দা করে বসেন। ** গ্রুপ থিয়েটারগুলির আঞ্চলিক শব্দ সম্ভারে নাট্যমঞ্চে যে ঝড় বইয়ে দিয়েছেন তাতে ঢাকায় এক নতুনতর আধুনিক বাংলাভাষা ও সাহিত্যের উদ্ভব ঘটেছে এবং কলকাতা সাহিত্যভাষার উপর এর প্রভাব পড়ছে, সামনে পড়বে।এই উপকারটুকুর কারণে তিনি গ্রুপ থিয়েটারগুলোর কাছে ঋনী হলেও তিনি ধারণা করেন এর পিছনে তাদের অবচেতন ভূমিসংলগ্নতা ও কোনো অজ্ঞাত দৈব কারণে তারা এ উপকারটুকু করেন। ** কবিদের আচরণ সম্পর্কে আল মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের কবি প্রতিনিধিগণ নিজের ব্যক্তিগত কৃতিত্বের ঢাক পেটানো ছাড়া আর কারো নাম উচ্চারণ করতে চাননা কবি সভায়। এছাড়া কবি নেপালের তরুণ বিদগ্ধ কবি প্রতিভা ডক্টর বানীরা গিরি,ইরানী কবি তাহেরা সফরজাহেদর, জসীম উদদীন,ফররুখ আহমেদ, রবীন্দ্রনাথ সহ অন্যান্য কবি প্রতিভা,তাদের আচরণ, নমনীয় স্বভাব, সাহসিকতা, ব্যক্তিত্ব নিয়েও আলোকপাত করেছেন। তিনি মনে করেন,আধুনিক কবিতার মুক্তি বা সচলতার জন্য রবীন্দ্র সাহিত্যের প্রয়োজন। এ দেশে আধুনিক আধ্যাত্মিক মননশীল মানুষের জন্যেও রবীন্দ্র সাহিত্য অপরিহার্য। পঞ্চাশ দশকের আবৃত্তি সম্পর্কেও তিনি আলোচনা করেছেন। শেষ অংশে তিনি বাংলাদেশের এক গৃহবধূ নার্গিস মান্নানের হাতের নিপুণ ছোয়ায় গড়ে তোলা তাম্র শিল্পে যে কৃতিত্ব, তার বর্ণনা করেছেন। #আমার_উপলব্ধি : আমার কাছে মাঝামাঝিতে মনে হয়েছিল আল মাহমুদ তার ব্যক্তিগত কষ্ট ক্ষোভগুলোর বহিঃপ্রকাশ করেছেন। কিন্তু এর জবাবও তিনি বই এ দিয়েছেন। তিনি বুঝিয়েছেন তিনি তার ব্যক্তিগত উপলব্ধি গুলোকে আক্ষেপের ছলে প্রকাশ করেছেন। বলা যায় বাংলা সাহিত্যের পদচারণায় তার নিবিড় বিচক্ষণগুলোর খোলাসা করেছেন পাঠক সমাজের কাছে। এই বইটি প্রকাশ হওয়ার পর কবি বিরোধী মানুষগুলোর মনোভাব কেমন ছিল জানার অনেক ইচ্ছে হয়েছে। পুরো বইটিতে কবি যে বিষয়টিকে জড়ালোভাবে উপস্থাপন করেছেন সেটি হলো কলকাতা সাহিত্যের ভীরে ঢাকার বাংলা সাহিত্য তলিয়ে যাওয়া।আর এটাকে তিনি কোনোভাবে মেনে নিতে রাজী নন। তিনি বারবার কলকাতা সাহিত্য প্রীতি থেকে নিজেদের সরে আসার কথা বলেছেন।বাংলা সাহিত্যের প্রতি তার ভালোবাসা এবং বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ করার উচ্ছ্বাসাটা বারবার প্রতিফলিত হয়েছে এই বইটিতে। সবার পড়ার আমন্ত্রণ রইলো। ভালো লাগবে, সেই সময়ে সাহিত্য সমাজে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সম্পর্কে কিছুটা অবগত হওয়া যাবে।