User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#লিপস্টিক #পাঠ_অনুভূতি ♦এক নজরেঃ •উপন্যাসের নামঃ লিপস্টিক •লেখকঃ জিনিয়া জেনিস •ধরনঃ সামাজিক, রোমান্টিক •প্রকাশনীঃ তাম্রলিপি •প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ •পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৫২ •প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ লেখনীতেঃ রিফায়াত হাসান সাকিব ♦ভূমিকাঃ হঠাৎ করে রাতের আঁধারে নিজের পড়া বইয়ের জগতটার দিকে তাকালে ভীষণ অদ্ভুত এক অনুভূতি হয় কেনো যেন । বারবার মনে হয়, এক জীবনে এত এত চরিত্র, তাদের জীবনের গল্প জানার সুযোগ পাওয়া কতটা ভাগ্যের বলে মনে হয় । কতশত চরিত্র এর গল্প জীবনকে ভীষণ ভালো লাগা দেয় । কত চরিত্রের নাম যেন জীবনের সাথে জড়িয়ে গিয়েছে । কল্পনায় যেন তারা কল্পনারই সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়েছে । এরকম মুহূর্তগুলোতে তাই ভীষণ আবেগতাড়িত বলে মনে হয় । ♦ পারিপার্শ্বিক দিকঃ অনেকগুলো দিন পরে, বড্ড আয়োজন করে একটা বই পড়তে বসেছিলাম । এটা যে কী আনন্দের! ভীষণ মায়ার মতো প্রবল আকর্ষণের তা আমার মন খুব জানে । আমি বারবার চেয়েছি, আমার বই পড়ার মুহূর্তে এক বই পড়ার শেষে পরের বইটি শুরু করার মুহূর্ত দীর্ঘায়িত যেন না হয় । আমি এখনও তাই ভীষণ ভাবে অপেক্ষা করে বসি, নতুন কোনো বই পড়ার । নতুন কিছুর সঙ্গী হওয়ার । এই বইটি পড়বো তা অনেকদিন ধরেই আমার ইচ্ছা ছিল খুব । এরপরে আজকে যখন রাত ১২টা ৩০ মিনিট, তখন বইটি পড়তে শুরু করেছিলাম । এখন যখন সময় রাত ৩টা ২০ মিনিট । তখন যেন পড়া শেষ হয়ে গেল । ♦নামকরণঃ মানুষের জীবনে জড়িত থাকা প্রতিটি জড়বস্তু যেন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত হয়ে পড়ে । কখনো সখনো প্রতীকী হয়ে থাকা বস্তুগুলো রূপক অর্থে যেন জীবনের সাথে জড়িয়ে যায় । এগুলো মানুষের জীবনে অদ্ভুত একটা শিক্ষা হয়ে আলোড়ন তুলে দিয়ে যায় । যেন জীবনের এক ধরনের শিক্ষা নিয়ে এসে পড়ে । লিপস্টিক যেন সেরকমই রঙচঙা জীবনের বাইরে গিয়ে নতুন কিছু দেখানোর আখ্যান । কিছু রঙ যেন মানুষের শরীরের আবহে মিশে গিয়ে নিজেকে গড়ে তুলে দেয় মানুষের হাতে । যা শিক্ষা হয়ে জীবনের গল্পে চলাচল করে । তাই লিপস্টিক সেরকমই এক আখ্যান হয়ে ধরা দেয় । ♦ফ্ল্যাপে লেখাঃ মানুষ তার স্বপ্নে বাঁচে । নিমার সাদামাটা জীবনকে লিপস্টিকের রঙিন পরশ এঁকে দেয় এক নতুন পরিচয় । বহু দিনের স্বপ্নকে বাস্তব রূপে দেখার পরিচয় । এই কঠিন পথ পাড়ি দেয়া নিমার জন্য সহজ ছিল না । জাদিবের মতন একজন তার চলার পথে সাহস না জোগালে সে হয়তো হারিয়ে যেত হতাশার অমানিশায় । জাদিব গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র, যে সীমাহীন অনিশ্চয়তার মাঝেও আশায় বুক বাঁধার মতন শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী । মানুষের ভাবনা কিংবা দুর্ভাবনা অনেক সময় তন্দ্রার আবেশে তার সামনে দৃশায়িত হয় । লিপস্টিককে কেন্দ্র করে তেমনই এক দুর্ভাবনা বারবার নিমার মাঝে আসে, সেটাকে উপন্যাসের একটা ইন্টারেস্টিং পার্ট বলা যেতে পারে । আদৌ কি সে ব্যাপারটার সাথে তার জীবনের সংযোগ ছিল সেই প্রশ্নের উত্তর নাহয় তোলা থাক । ‘লিপস্টিক’ জাদিব, নিমার ভালোবাসার গল্প । শত বাঁধা পেরিয়ে ছুটে চলা নারীর জিতে যাওয়ার গল্প । সুরের ধারায় শব্দগুচ্ছকে গাঁথতে জানে জাদিব নামের যে মানুষটা, শেষ পর্যন্ত কি সে নিমাকে বাঁধতে পারবে হৃদয় গহীনে? ♦প্রচ্ছদঃ প্রচ্ছদটা অতি সাধারণ হলেও ভীষণ ভারসাম্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় কেনো যেন । প্রথম দেখায় খুব গুরুত্বপূর্ণ কোথাও একটা যেন মনে হয় । সাদা রঙের আবহে লাল রঙের রঙে যেন লিপস্টিক ভীষণ রূপক অর্থে জড়িয়ে আসে । লিপস্টিক এর রঙ এবং রক্তের রঙ কোথাও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় । ভীষণ দারুণ তবে সাধারণ হয়েও বেশ ভালো একটা প্রচ্ছদ ছিল এটি । ♦পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ ✓পটভূমিঃ উপন্যাসের পটভূমিতে বেশ রহস্যময়ের মতো এক ধরনের ধাঁচ তৈরি করা হয়েছে বলে কোথাও যেন ভীষণ ভাবে মনে হয়েছে বারবার কিছু একটা ঘটবে । এরকম বারবার অনুভব হতে থাকা উপন্যাসটিতে তাই দারুণ কিছু অপেক্ষায় থাকা অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে । যদিও এই উপন্যাসে পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপটে সেভাবে ঘটনার ঘনঘটায় তেমন কিছুই ঘটেনি, তবে যেভাবে রহস্যের ধাঁচ এবং ভবিষ্যতে কিছু ঘটার আশঙ্কা রাখার মতো করে পটভূমি এবং প্রেক্ষাপট সাজানো হয়েছে তা বেশ ভালো ছিল । এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপটটি বেশ ভালো হলেও কোথাও গিয়ে মনে হয়েছে উপন্যাসের দৃশ্যপটে সংযোগের ক্ষেত্রে আরেকটু সময় নিয়ে সাজানো যেতে পারতো । কোথাও একটা এক দৃশ্যপটের সাথে আরেক দৃশ্যপটের ভারসাম্য বজায় রাখার জায়গায় আরেকটু কাজ করা যেতে পারতো বলে মনে হয়েছে । ✓আবহ গঠনঃ এই উপন্যাসের আবহ সৃষ্টি এবং গঠন এর আসলে সেভাবে জায়গা নেই । এই উপন্যাসের ধাঁচ এবং সুর যেভাবে বয়ে গিয়েছে পুরোটা জুড়ে সেখানে আবহ এর ব্যাপার অতটা ছিল না । আবহ রাখার জন্য যেরকম বর্ণনা বা একটু সময় নেয়ার দরকার ছিল সেরকম উপন্যাসের ঘটনা বর্ণনা ছাপ ফেলতে চায়নি তাই আবহের মেলবন্ধন আসলে খুবই কম ছিল । ♦চরিত্র গঠনঃ বেশ কয়েকটি চরিত্র নিয়ে থাকা উপন্যাসটিতে চরিত্রের গঠন ভালোই ছিল । যতটুকু জায়গা এবং উপস্থিতি প্রয়োজন ছিল ততটুকুই দেয়া ছিল । তবে শায়না চরিত্রটির আরেকটু উপস্থিতি থাকতে পারতো বলে মনে হয় । এছাড়া জাদিব এর চরিত্রের রসায়ন এবং বিশ্লেষণ বোঝাতে যেভাবে একটা ছোট চরিত্রকে নিয়ে আসা হয়েছিল তা বেশ ঘটনাপ্রবাহ এর খাতিরে ভালো ছিল । ♦চরিত্র বিশ্লেষণঃ •নিমাঃ সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সাথে মানিয়ে নিয়ে পরিবারের সমস্যার সময়ে নিজের পরিবারকে দেখার মানসিকতা রাখার মতো এক অসাধারণ, বুদ্ধিমতী নারী, নিমা । নিজের কাজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি সবাইকে গুরুত্ব দেওয়ার এক চেষ্টা দেখা যায় তার মাঝে । •লোরাঃ বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের, হাসিখুশি মেয়েটি ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে কোনো একটা কাজ করে ফেলে । সেই কাজের প্রভাবে তার জীবনে ভবিষ্যতে কিছু প্রভাব আসে । মানসিক কিছু চিন্তা তাকে ভাবনা চিন্তা করায় । সবার সাথে মিশে যাওয়ার এক দারুণ চেষ্টা আছে তার মাঝে । •জাদিবঃ সম্পর্ককে মূল্যবোধ দিয়ে তা বজায় রাখার মতো অসাধারণ একটি চরিত্র, জাদিব । প্রতিটি সম্পর্ককে ভীষণ সম্মান করতে জানে সে । কোথাও গিয়ে যেন ভালোলাগার মতো । আত্মবিশ্বাসী স্বভাবের মানুষটি ভালোবাসার জন্য জীবনকে অন্যরকম ভাবে দেখতে চায় । •শায়নাঃ অতীতের কোনো একটা পরিস্থিতির কারণে তার জীবনে কোথাও একটা যেন আটকে থাকার মতো অনুভূতি আছে । প্রতিটি পরিস্থিতিতে তাই কিছু কষ্ট তাকে অতীতের কথা মনে করিয়ে দেয় । অতীত তাকে কিছু ভুল এবং দোষের নামান্তরে কিছু করতে মনে করিয়ে দেয় । •টুকিটাকি চরিত্রঃ এছাড়াও এই উপন্যাসে আরো বেশ কতগুলো চরিত্র আছে । উপন্যাসে আছে তাসলিমা এর মতো দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করে নিজের সংসারে চেষ্টা করে যাওয়া একজন নারী । আছেন নিজের সন্তানকে লালনপালন করে একা হাতে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যাওয়া আতিক সাহেব । এছাড়াও উপন্যাসে আছে বন্ধুত্বপূর্ণ, হাসিখুশি স্বভাবের জেরিন, আফসানা । এছাড়াও কিছু বন্ধুদের সম্পর্কের রসায়ন বেশ ভালো লাগায় । আরো বেশ কিছু চরিত্র যেন উপন্যাসকে দিয়ে যায় । ♦প্রিয় চরিত্রঃ এই উপন্যাস এর প্রিয় চরিত্র বলতে গেলে খুব একটা দ্বিধান্বিত কেনো যেন হতে ইচ্ছে করে না । তবুও মাঝে মাঝে ভাবতে ইচ্ছে করে খুব । জাদিব চরিত্রটিই যেন নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং উপস্থিতি নিয়ে প্রিয় চরিত্র হয়ে বসে পড়ে । ♦প্রিয় অংশঃ এই উপন্যাসেরও কিছু প্রিয় অংশ আছে, লিপস্টিক নিয়ে ঘটনার সমান্তরালে দুইটি ঘটনা যেন উপন্যাসটিকে জড়িয়ে রেখেছে পুরোটা জুড়ে । স্বপ্নের সাথে ঘটে যাওয়া রঙচঙে জীবনের টানাপোড়েন, ভালোবাসায় রঙের আলোড়ন কোথাও যেন ভিন্নধর্মী এক অদ্ভুত মানসিকতা দিয়ে যায় । যা অদ্ভুত ভাবে উপন্যাসটিকে উপস্থাপন করার ব্যাখ্যা করে ভালো লাগায় । এছাড়াও জাদিব এর বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা, সম্পর্কের মূল্যবোধে নিজেকে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়া । ভালোবাসার জন্য কষ্ট সহ্য করে এগিয়ে যাওয়া মুহূর্তগুলো ভীষণ ভালো লাগায় । এছাড়াও উপন্যাসে এক ধরনের রহস্য এর মতো ধাঁচ রাখা হয়েছে, যা বেশ ভালো লেগেছিল । কিছু গানের মুহূর্ত যেন উপন্যাসে এক ধরনের স্নিগ্ধ টান নিয়ে আসে । ♦সংলাপঃ যেহেতু এটি একটি বর্ণনা ভিত্তিক উপন্যাস । তাই উপন্যাসে সংলাপের আধিক্য খুবই কম । খুব একটা দেখা যায় না । তাই সংলাপ যতটুকু ছিল তা ঘটনাপ্রবাহ এবং প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সামাজিক দৃষ্টিকোণে সময়ের পটভূমি অনুযায়ী বেশ ভালো ভাবেই ব্যবহার করা হয়েছে । উপন্যাসের শব্দচয়নেও বেশ দারুণ কাজ ছিল । যেহেতু এটি এক ধাঁচে একই রকম সুরে কাহিনী বয়ে চলে যাওয়ার মতো উপন্যাস, তাই কোথাও কোনো প্রকার আপেক্ষিকতা কিংবা খামতি নেই । ♦লেখক প্রসঙ্গেঃ লেখক জিনিয়া জেনিস এর লিখনশৈলী এর সাথে আগেও কিছু কিছু সময়ে পরিচিত আমি । তার কিছু ছোট ছোট গল্প আমার পড়া হয়েছে । এছাড়াও বিভিন্ন গল্প সংকলনে তার লেখা পড়ার পাশাপাশি তার একক গল্প সংকলন ‘আনন্দ বর্ষণ’ পড়া হয়েছে আমার । বেশ বাস্তবিক এক ধাঁচ রেখে গল্প লিখে যাওয়ার দারুণ এক চেষ্টা থাকে তার মাঝে । উপন্যাস হিসেবে ‘লিপস্টিক’ তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস । তার সামাজিক প্রেক্ষাপট, ঘটনায় বাস্তবিকতার ছোঁয়া লেগে থাকা মুহূর্তে পটভূমি সাজানোর চেষ্টা বেশ ভালো থাকে । যা এই উপন্যাসেও পরিলক্ষিত ছিল । বেশ ভালো চেষ্টা ছিল । তার লিখনশৈলীর জন্য শুভকামনা রইলো । ♦প্রকাশনীঃ প্রকাশনী হিসেবে তাম্রলিপি এর বই আমার খুব কম পড়া হয়েছে । তাই সেভাবে পাঠক হিসেবে অনুভব প্রকাশ করতে না পারলেও তাদের এই বইটির বাঁধাই এবং প্রচ্ছদ বেশ দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । বইটির পৃষ্ঠা বাঁধাই এবং প্রচ্ছদ যেভাবে দেখানো হয়েছে তার জন্য বইটিকে দারুণ দেখতে লাগে যেন । তবে কিছু কিছু জলছাপে আরেকটু কাজ করা যেতে পারতো । কিছু কিছু দৃশ্যপট এর শেষে এবং নতুন দৃশ্যপট এর শুরুতে একটু ফাঁকা জায়গা বেশি রাখা যেতে পারতো । তবে এই উপন্যাসের সবথেকে যা চিন্তার বিষয়, তা হচ্ছে বানান ত্রুটি । এই উপন্যাসে বানান ভুলের মারাত্মক আধিক্য ভীষণভাবে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে । বানান ভুল এবং টাইপিং মিস্টেক এতটাই বেশি যে কখনও কোথাও যেন মনোযোগ বজায় রাখা চিন্তার মতো ছিল । এছাড়াও চরিত্রের নামে বানান ভুলও ছিল । ‘শায়না’ কখনও ‘শায়লা’ কিংবা ‘আতিক’ কখনও ‘আনিস’ হয়ে ধরা দিয়েছে । এছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ লাইনে, সংলাপে বানান ভুলের দেখা গিয়েছে । আশা করি এগুলো দেখা হবে । ♦রেটিংঃ ৩.৭/৫ ♦উপসংহারঃ অনেকগুলো দিন পরে কোনো একটা বই শেষ করার পরে উপসংহার লিখতে গিয়ে সময় দেখে মনে হলো, এরকম সময়েই আগে আমার অনুভূতি প্রকাশ করে ঘুমোতে যাওয়া হতো । এরকম সময়গুলোই, এরকম রাতের আঁধার আমাকে স্মৃতিচারণ করার কথা মনে করিয়ে দেয় যেন । কী যে ভীষণ মায়া লাগার মতো একরাশ আনন্দ দিতে দিতে বলে, তৈরি হও আবার কোনো রাতের জন্য নতুন কতগুলো জীবনের গল্প নিয়ে । আমিও ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করে যাই!
Was this review helpful to you?
or
আমরা যেভাবে পরিকল্পনা করি সেভাবে কী পুরো জীবন অতিবাহিত হয়? উত্তরটা অবশ্যই না হবে। জীবনের নানা ধাপে আমরা এমন সব ঘটনার মুখোমুখি হই যা আমাদের জীবন পাল্টে দেয়। মানুষের জীবনের বাঁকে বাঁকে রয়েছে এমন কিছু ব্যাক্তির আনাগোনা যারা জীবনে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন নিয়ে আসে। সমকালীন উপন্যাস ‘লিপস্টিক’ এও আমরা এমন সব ঘটনার মুখোমুখি হবো। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে নিমা পিতার অসুস্থতার কারণে সংসার চালানোর সংগ্রামে নেমে পড়ে। একসময় নিমা একটি পার্লারে কাজ নেয়, তারপর তাদের জীবন ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছিল। এক বিয়ের অনুষ্ঠানে নিমার সাথে পরিচয় হয় জাদিবের। প্রথম দেখাতেই জাদিব নিমাকে পছন্দ করে ফেলে। তাদের এই সম্পর্কের পরিণতি কী ছিল? নিমা মাঝেমাঝে ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন দেখতো যার কোন ব্যাখ্যা ছিল না। স্বপ্নগুলো কী নিমাকে কোন ইঙ্গিত দিচ্ছিল? নাকি এগুলো মনের নিছক কল্পনা? লেখক জিনিয়া জেনিস এর লেখা উপন্যাস ‘লিপস্টিক’। আমাদের সমাজের বেশকিছু দিক লেখক উপন্যাসে তুলে ধরেন। নানা চরিত্রের সমন্বয়ে রচিত ‘লিপস্টিক’ উপন্যাসটি মানুষের জীবনের সুখ, দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রতারণা, দুর্ঘটনা ইত্যাদি সবকিছু নিয়ে রচিত হয়েছে। উপন্যাসটির শুরুটা হয় চমৎকারভাবে। নিমার পরিবারের দৃশ্য প্রথমে বর্ণিত হয়। এরপর একে একে নিমার স্ট্রাগল দেখিয়েছেন লেখক। এছাড়া আরো অনেক চরিত্রের আগমন ঘটতে থাকে। লোরা, জাদিব, অনিক, শায়না, ডলি, হাসান সহ আর বেশকিছু চরিত্র দেখা যায়। আমাদের সমাজে মেয়েদের জন্য কোন স্থান নিরাপদ নয়। প্রতি পদে পদে এই অনিরাপদ পরিবেশে তাদের জন্য বিপদ উৎ পেতে থাকে। কত কত মেয়ে সংসার চালানোর জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। নিমাও এমন একটি সংগ্রামী চরিত্র। নিমা ভবিষ্যতে সুখী ও নিরাপত্তার জীবন পাবে কিনা তা পুরো উপন্যাস পড়লেই জানা যাবে। ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানদের মানসিক অবস্থা অন্যদের মতো হয় না। পরিবারের বিপর্যয়ের অবস্থা দেখে ছোট থেকেই তাদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বড় হলেও তাদের জীবনটা অন্যদের মতো হয় না। লেখক এই বিষয়টিও বইয়ে উল্লেখ করেছেন। উপন্যাসে জাদিব ও নিরার অংশগুলো পড়তে দারুণ লেগেছে। জাদিব চরিত্রটিকেও বেশ ভালো লেগেছে। পরোপকারী এই চরিত্রটি অন্যের বিপদেও পাশে দাঁড়ায়, যা মুগ্ধ করার মতো। আরেকটি পছন্দের চরিত্র হলো লোরা। নিজের অবস্থান নিয়ে লোরার মধ্যে কোন অহংকার নেই। নিমা ও লোরার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটা ছিল চমৎকার। উপন্যাসের শেষটাও লেখক সুন্দরভাবে টেনেছেন। কোন গোঁজামিল দেননি। বইয়ের নামকরণ এমন হওয়ার পিছনেও কারণ রয়েছে যা পুরো বই পড়লে বোঝা যাবে। এছাড়া বইয়ের কোয়ালিটি, বাঁধাই ছিল বেশ ভালো। প্রচ্ছদটিও উপন্যাসের সাথে একদম মানানসই। সমকালীন উপন্যাস ‘লিপস্টিক’ পড়তে আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। একবসায় বইটি পড়ে শেষ করেছি। ◼️বই পরিচিতি: বই: লিপস্টিক লেখক: জিনিয়া জেনিস প্রকাশনী: তাম্রলিপি ক্যাটাগরি: সমকালীন উপন্যাস প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৪ প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ মুদ্রিত মূল্য: ৪৬৭ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৫২
Was this review helpful to you?
or
" হাতের লিপস্টিকটা ছিটকে গিয়ে পরল আয়নার কাঁচে। কাঁচের টুকরা সাথে রক্তের বড় বড় ফোঁটা গড়িয়ে পড়তে থাকে মেঝেতে। " ★ এবারের বইমেলায় লেখক জিনিয়া জেনিস এর প্রথম উপন্যাস "লিপস্টিক " প্রকাশিত হয়েছে। কথাগুলো সেই বইয়ের ই অংশ। বইটি মূলত নিমা আর জাদিবের ভালোবাসার গল্প। তাদের সাদামাটা একঘেয়ে জীবনটাকে লিপস্টিকের রঙের মতো রঙিন করার গল্প। ★ কাহিনি সংক্ষেপে : গল্পের শুরু নিমা নামের অতি সাধারণ পার্লারে চাকরী করা একটি মেয়ের জীবন সংগ্রাম থেকে।। যার ঘরে পঙ্গু বাবা ও পরিশ্রমী মা আছেন। অপর দিকে সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা জাদিব, যে নিজেও বাবার অফিসে ভালো পজিশনে কর্মরত। সমাজের এই দুই স্তরে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে অবস্থানরত নিমা ও জাদিব যখন তাদের ভালোবাসার নৌকা বিয়ে নামক নদীর ঘাটে বাধার সিদ্ধান্ত নেয় তখন আসে তাদের জীবনে আসল ঝড়। শুধু তাই ই নয় এর মাঝে নিমার জীবনে ঘটে যায় এক নির্মম ঘটনা। যা নিমাকে দিন দিন ডিপ্রেশনের দিকে নিয়ে যায়। জাদিব আর নিমার এই ভালোবাসা কী পরিনতি পাবে? নাকি জীবন যুদ্ধে হেরে যাবে? সামনে কী হয়েছিলো জানতে হলে পড়তে হবে "লিপস্টিক " বইটি শেষ পর্যন্ত। "প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের পাতায় এমন কিছু ঘটনা জড়িয়ে থাকে যা সে একান্ত নিজের কাছে রাখতে চায়। সব চাওয়া যে মানুষ তার মন মত পাবে এমনটাও জরুরী নয়। আবার কখন কে কার সামনে সত্যের ডাল পালা মেলে ধরবে তাকেও আগে থেকে বুঝতে পারে না।" ★পাঠ প্রতিক্রিয়া : জিনিয়া আপুর এটা প্রথম উপন্যাস হলেও প্রথম বই না। আপুর লেখা প্রথম গল্পগ্রন্থ "আনন্দ বর্ষণ" আগেই পড়া হয়েছে আমার। আপুর ছোটগল্প গুলো বরাবরই ভালো লাগে। লিপস্টিক উপন্যাসটি একটি সামাজিক উপন্যাস। লিপস্টিক নামেই প্রথম দর্শনে মেয়েরা আর্কষণ অনুভব করবে বইটির প্রতি। আমিও সেই কাতারের ই একজন। গল্পটা নিমা আর জাদিবের তাই পুরো কাহিনি মূলত এই দুজন চরিত্রকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। একটা ছেলে কতটা ভালোবাসলে একটা মেয়ের জন্য নিজের আরাম, আয়েশ ও সকল সুখ সুবিধা বর্জন করতে পারে তা জাদিবকে জানলে বুঝা যায়। নিমাকে সে দিক থেকে জাদিবের তুলনায় একটু কম ভালো লেগেছে। জাবিন, শায়না, লোরা,হাসান আফসানা চরিত্রগুলো বেশ ছিলো। শায়নার অতীতটা দুঃস্বপ্নের মতো ওর জন্য মায়া লেগেছে। গল্পটা শুরু দিকে বেশ স্লো মশনে চলছে মাঝে একটু পিক করলেও তেমন টপনচ মনে হয়নি। শেষটায় বেশ স্বতঃস্ফূর্ত লেগেছে বিশেষ করে জাদিবকে। গল্পের নামটার সাথে আমি কাহিনির সাদৃশ্য খুবই কম পেয়েছি তবে প্রচ্ছদটা নামলিপি ও কাহিনির সাথে বেশ যায়। মন্দ লাগেনি তবে আরও ভালো করার স্কোপ ছিলো এটা বলব। যেহেতু আপুর লেখা আগেও পড়েছি। বেশকিছু জায়গায় নামের গড়মিল ও টাইপিং মিস্টেক চোখে পড়ছে যা,পড়ার চলমান গতিকে ব্যহত করছে। ★ জাদিব : " আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে মনে করি জীবনটা শেষ। হয়তো তারপর থেকে জীবনের আরেকটা নতুন পাতা শুরু। " উপন্যাসটিতে আমার সবচেয়ে ভালো লাগার একটি চরিত্র হচ্ছে জাদিব। আত্নবিশ্বাসী, পরিশ্রমী ও সম্পর্কের প্রতি সৎ একজন পুরুষ। যে নিজের নিয়তি নিজের হাতেই ঠিক করতে জানে। নিজের পাশাপাশি ভালোবাসার মানুষগুলোকেও আগলে রাখতে পারে। এমন একজন জীবন সঙ্গী হয়ত সব মেয়েই মনে মনে আশা করে। ★ নিমা : "জীবনে একই মুহূর্তের পুনরাবৃত্তি ঘটে থাকে। শুধু সময়ের সাথে নতুন কিছু মুখ আমাদের পাশে নিজের জায়গা করে নেয়, আবার কারো প্রস্থান ঘটে। " গল্পের আরেকটি কেন্দীয় চরিত্র নিমা। সুন্দরী, পরিশ্রমী, ক্রিয়েটিভ একটি মেয়ে। যার কাজ নিজের ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে অন্যের স্পেশাল দিনগুলোকে সাজিয়ে তোলা। পেশায় একজন মেকাপ আর্টিস্ট। কিন্তু যার নিজের জীবনটাই একসময় ছিলো রঙহীন। নিমা চরিত্রটি ভালো লাগলেও মূল চরিত্র হিসাবে কিছুটা ম্লান মনে হয়েছে। জাদিব বেশি স্বতঃস্ফূর্ত ছিলো তাই হয়ত। ★ সবশেষে বলব, জাদিবের রঙহীন জীবনে নিমার লিপস্টিকের রঙিন পরশ মন্দ লাগেনি। লেখকের আরও সুন্দর সুন্দর লেখা পড়ার অপেক্ষা রইলাম। বই : লিপস্টিক লেখক : জিনিয়া জেনিস প্রকাশনী : তাম্রলিপি মলাট মূল্য : ৪৬৭ টাকা
Was this review helpful to you?
or
স্ট্রাগল করে সারভাইব করে সাদামাটা জীবনে পথচলা নিমার জীবনে আসা ভালোবাসা ও তার মধুর সমাপ্তি নিয়ে লিখা চমৎকার একটি উপন্যাস। লেখিকার লিখার ধরনে অভিভূত আমি।