User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
কথিত আছে, পাঠককে হাসানোর চেয়ে কাঁদানো অনেক সহজ। কাহিনীর বিষয়বস্তু যাইহোক, ভাষার নিপুন ব্যবহার ও শব্দচয়নের মাধ্যমে অতি সাধারণ দৃশ্যকেও সাহিত্যিকরা এমন অসাধারণ করে ফেলতে পারেন যে তা পড়ার পর পাঠকের চোখে জল আসতে বাধ্য। কিন্তু ইমদাদুল হক মিলনের সেই ক্ষমতা নেই। সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে তার উপন্যাসের ভাষা অতটা গভীর না যে তা পাঠকের মনকে নাড়া দেবে। কিন্তু অধিকাংশ সাহিত্যিকের যা নেই সেটা আছে ইমদাদুল হক মিলনের। অন্যান্য লেখকেরা যেমন নিজস্ব লেখনীর মাধ্যমে গল্পকে শক্তিশালী করতে চান, সেখানে ইমদাদুল হক মিলনের গল্প শুরু থেকেই অত্যন্ত শক্তিশালী থাকে। তাতে আলাদা করে রঙ চড়ানোর দরকার হয় না। ইমদাদুল হক মিলনের ভাষায় জাদু থাক বা না থাক, তিনি যে গল্প বলতে চান উপন্যাসের মাধ্যমে সেগুলো এতই অদ্ভুত রকমের সুন্দর যে তা পড়ার পর বুকটা হু হু করে উঠতে বাধ্য। সেরকমই একটা গল্প তিনি বলেছেন 'কিশোরী' উপন্যাসে। এই উপন্যাসের কাহিনী কিশোরী নাম্নি এক কিশোরীকে নিয়ে। জন্মের সময় সে তার মাকে হারিয়েছে। ছয় মাস বয়সে তার বাপও বেপাত্তা। তারপর থেকে সে বড় হয়েছে দাদীর কাছে। বাপ-মা কারুর আদরই সে পায়নি। কিন্তু মায়ের কথা না, বারবার বাপের জন্য তার মন কাঁদে। সে অপেক্ষায় দিন গোনে কবে তার বাপ তার কাছে ফিরে আসবে। মেয়েটা একটু পাগল টাইপের, সবাই বলে মাথায় ছিট আছে। তার আচার আচরণ অস্বাভাবিক কিন্তু বাপের আসবার কথা বলে সবাই তাকে প্রবোধ দেয় আর তখন সে স্বাভাবিক হয়ে। তো, একদিন তারা যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থাকে তার দারোয়ান মন্টু কিশোরীকে শান্ত করতে মিছেমিছি তার বাপের কাছে ফোন করার ভান করে আর কিশোরীকে আশ্বাস দেয় আজই তার বাপ আসবে। কাকতালীয়ভাবে সে রাতে মতি নামের এক লোক এসে আশ্রয় নেয় সেই বাড়িতে যে ভাগ্যের ফেরে এসে পড়েছে সেখানে। কিশোরী প্রথম মতির অস্তিত্ব টের পায় এবং তাকে নিজের বাপ বলে ধরে নেয়। মতিও আত্মরক্ষার্থে পাগল মেয়েটার সাথে অভিনয় করতে থাকে। ওদিকে কিশোরী নিয়মিত লুকিয়ে মতিকে খাবার দেয়, আদরযত্ন করে। মতিরও স্নেহ জন্মায় কিশোরির উপর। এমন সময় মতির অস্তিত্ব ফাঁস হয়ে যায় কিশোরীর দাদীর কাছে। দাদী সব শোনেন এবং মতিকে বাস্তবতার কথা মনে করিয়ে দেন। আজীবন মতি কিশোরীর বাপ সেজে থাকতে পারবে না। সে থাকলে তাদেরও বিপদের সম্ভাবনা আছে। তাই সে যত তাড়াতাড়ি চলে যায় ততই মঙ্গল। কিশোরীকে মিছে বাঁধনে বেঁধে ফেললে পরে সে আরও বড় রকমের আঘাত পাবে। সব শুনে ও বুঝতে পেরে সেদিনই মতি চলে যায়। ওদিকে পরদিন কিশোরী বাপকে খুঁজে না পেয়ে বাপের জন্য আবার অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু তার অপেক্ষার প্রহর এবার আর ফুরোয় না। সবমিলিয়ে খুবই হৃদয়গ্রাহী এক কাহিনী। সারসংক্ষেপ শুনে অতি সাধারণ মনে হতে পারে। উপন্যাসটি রচিতও হয়েছে একদমই সাদামাটা ভাষায়। সংলাপগুলো আঞ্চলিক। সাহিত্যরস খুব কমই পাওয়া যাবে। কিন্তু তারপরও সার্বিকভাবে উপন্যাসটির অতি সাধারণত্বই একটা সময় একে অসাধারণে পরিণত করেছে। এত সাদামাটাভাবে একটা গল্পকে যে উপস্থাপন করা যায়, 'কিশোরী' পড়ার আগে তা বিশ্বাস হওয়া কঠিন। কিন্তু 'কিশোরী' পড়ার পর পূর্বতন সব বিশ্বাস ভেঙে যেতে বাধ্য। অতি সাধারণ বর্ণনায় অতি সাধারণ কাহিনীর একটি উপন্যাস কিরকম তীব্রভাবে পাঠকের হৃদয়মন সবকিছুকে গভীর আবেগে আলোড়িত করতে পারে তা জানতে হলে পড়ে দেখতেই হবে 'কিশোরী' উপন্যাসটি।