User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
কোন আর্টওয়ার্ক বা চিত্রশিল্পকে আশ্রয় করে গল্প বা উপন্যাস আগে যে হয়নি, তা নয়। তবে তার মাঝেও ট্রেসি শিভারলিয়ারের দ্য গার্ল উইথ আ পার্ল ইয়াররিং নি:সন্দেহে একটি অসাধারন সৃষ্টি। ১৬৬০ সালে ডাচ চিত্র শিল্পী ইয়োহান্নেস ভারমিয়ারের ছবি দ্য গার্ল উইথ দ্য পার্ল ইয়াররিং এর উপরে ভিত্তি করে শিভারলিয়ার সত্য ঘটনা এবং যতটাসম্ভব ফ্যাক্টকে অপরিবর্তীত রেখে লিখেছেন এই অসাধারন উপন্যাসটি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কবীর চৌধুরীর গাম্ভীর্যপুর্ণ অনুবাদ। গ্রিট, আমাদের গল্পের নায়িকা, দারিদ্রতার কারণে চিত্রশিল্পী ইয়োহান্নেস ভারমিয়ার বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে যোগ দিতে বাধ্য হয়। অন্ধ টাইল পেইন্টার বাবা আর সামান্য আয়ের শিক্ষানবীশ ভাই এর আয়ে সংসার তো চলবার কথা নয়। তাই পরিবারের স্বার্থে গ্রিট চলে যেতে বাধ্য হয় ভারমিয়ারের বাড়িতে কাজ করার জন্য। ভারমিয়ার একজন চিত্রশিল্পী এবং একই সাথে কয়েকটি মেয়ের বাবা। আরও একটি সন্তান আসছে সামনেই। তাই তার যেমন ব্যস্ততার কমতি নেই, তেমনই কমতি নেই অভাবের। তবে এর মাঝেও বাড়ির পরিবেশ সামাল দেয়ার জন্য শ্বাশুড়ি মারিয়া থিনসকে সাহায্য করার জন্য তিনি একজন বাড়তি লোককে নিয়োগ দিতে রাজি হন। গ্রিট প্রথমে সাধারণ কাজের জন্য বিবেচিত হলেও পরে তার কাজের সুক্ষ্ণতার জন্য তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় ভারমিয়ারে কাজের স্টুডিও নিয়মিত পরিস্কারের কাজ। এভাবেই কাজের মেয়ে গ্রিট ধীরে ধীরে সবার অগোচরে হয়ে উঠতে থাকে ভারমিয়ারের শিল্প জগতের একজন নিরব কিন্তু কর্মময় সরব অস্তিত্ব। এক সময় একজন ক্লায়েন্ট এর অনুরোধে গ্রিটকে মডেল করে ছবি আকতে শুরু করলেন ভারমিয়ার। তার এই কাজ বাড়িতে সৃষ্টি করল এক অস্বস্তিকর অবস্থা। ভারমিয়ারের প্রাত্তন অ্যামেচার মডেল তার স্ত্রী গ্রিট এর এই নতুন অবস্থানকে মেনে নিতে পারলেন না। তিনি নিজেকে ভাবলেন হুমকির মুখে, কিন্তু মা মারিয়া থিনসের চতুর প্রভাবে এবং নতুন এই পেইন্টিং টাকা পয়সার অভাব কতখানি ঘুচাতে পারবে তা বুঝতে পেরে নিরবেই মেনে নেন স্ত্রী ক্যাথারিনা। তবে ভুলে যান না নি:সন্দেহে, ক্ষমাও যে করেননি গ্রিটকে, এটাও তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন সময়ে। গ্রিট এভাবেই ভারমিয়ারের শিল্প জীবনে পুর্ণমাত্রায় জড়িয়ে পরে। স্টুডিও পরিস্কার করা, তার জন্য রং তৈরি করা, রং সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে তার শিল্প জীবনের সব দায়িত্বই নিয়ে নেয় নিজের উপরে। এরই মাঝে প্রেম নিবেদন করে মাংসওয়ালার ছেলে পিটার, তার প্রস্তাব গ্রহনের জন্য বাড়ির নিরব চাপের মুখে গ্রিট আবিস্কার করে, ভারমিয়ারের প্রতি তার বাড়তি অনুভুতি আছে, সেটা ঠিক প্রভু-ভৃত্য সুলভ নয়। সবই মোটামুটি কোন একরকম আকা বাকা পথে এগিয়ে চলছিল, কোনভাবে চলে যাচ্ছিল দিন। কিন্তু বাধ সাধল সেই মুক্তো বসানো কানের দুলটি। ক্যাথারিনা ভারমিয়ার এই দুলটির মালিক। তিনি এটা নিয়ে গর্বিতও বটে। কিন্তু যখন ছবির প্রয়োজনে গ্রিটের কানে উঠল দুলটি, ভারমিয়ার স্ত্রী ক্যাথারিনার পক্ষে বুঝি আর সহ্য করা সম্ভব হল না। শেষে কি হল তা আর নাই বা বললাম। পাঠক জেনে নিন, বুঝে নিন বইটি পড়ে। তবে এটা বলতে পারি, পড়ে কিছুটা কাটখোট্টা মনে হলেও, অনুভুতিটা কম হবে না মোটেই। বইটির প্রচ্ছদে যে ছবিটি রয়েছে, সেটাই বিখ্যাত দ্য গার্ল উইথ পার্ল ইয়াররিং ছবিটি। বইটির ভেতরে ভারমিয়ারের আকা আরও কিছু ছবি আছে বেটার প্রিন্টে। তবে নি:সন্দেহে এটাই তার শ্রেষ্ঠ কাজ বলে মনে হবে আপনার কাছে। ট্রেসি শিভারলিয়ারের ঘরে টানা ষোল বছর ঝুলানো ছিল ছবিটির একটি কপি। বার বার ছবিটির দিকে তাকিয়ে তিনি ছবির ভেতরে অন্য একটি আবেদন অনুভব করতে থাকেন। তাই তিনি খোজ খবর করে বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করে কিছুটা ইতিহাস, কিছুটা কল্পনার আশ্রয় নিয়ে এই উপন্যাসটি সৃষ্টি করেন। তার বক্তব্য ছিল, ছবিটি যেন তাকে জোর করছিল, কিছু একটা বলার চেষ্টা করে গেছে ষোল বছর ধরে। তিনি সেটারই জবাব দিয়েছেন উপন্যাসের মাধ্যমে। কেউ বলেন গ্রিট এর কোন বাস্তব অস্তিত্ব ছিল না। ছবিটি স্রেফ কোন এক অজানা মডেল এর সহায়তায় আকা হয় মাত্র। গ্রিট এর অস্তিত্ব প্রমান করা আসলেই সম্ভব নয় ঐতিহাসিকভাবে। কিন্তু আমরা যারা বইটি পড়ি, ভাবতে ভালবাসি, গ্রিট ছিল কোন এক সময়, ছবিটিতে তার অনুভুতি, নিস্পাপতা, ভয়, কষ্ট আর ভারমিয়ারের প্রতি তার ভালবাসার ছাপ রেখে গেছে।