User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
মানিক বন্দ্যোপাধ্যাইয়ের বই আমার সবসময়ই ভালো লাগে।
Was this review helpful to you?
or
good...
Was this review helpful to you?
or
পদ্মা পাড়ের জেলেদের সংসার , সুখ দুঃখ নিয়ে রচিত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর পদ্মা নদীর মাঝি এক অনবদ্য উপন্যাস , পড়লেই বোঝা যায় উপন্যাসিক মানিক তার সহজবোধ্য রচনা কৌশল দ্বারা অঙ্কন করেছেন জেলেদের সাধারণ জীবন যাপন । কুবের মাঝির জরাজীর্ণ জীবনের মধ্যে বেড়ে ওঠা তার বিকলাঙ্গ স্ত্রী ও তার সদা চঞ্চল শালিকা কপিলা উপন্যাসের এই প্রধান দুই নারী চরিত্র গল্পের ঘাত প্রতিঘাতকে টেনে নিয়ে গেছে খেটে খাওয়া মানুষের ব্যক্তি জীবন পর্যন্ত
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যের একটি কালজয়ী উপন্যাস পদ্মা নদীর মাঝি।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মার্চ রিভিউ নংঃ১ বইয়ের নামঃ পদ্মানদীর মাঝি লেখকঃ মানিক বন্দোপাধ্যায় প্রকাশনীঃ দি স্কাই পাবলিশার্স পৃষ্ঠাঃ১৭০ মুদ্রিত মূল্য ১২৫ টাকা লেখক পরিচিতিঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (মে ১৯, ১৯০৮ - ডিসেম্বর ৩, ১৯৫৬) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তার প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মূহুর্তে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তার রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেণীসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন যা তার রচনায় ফুটে উঠেছে। জীবনের অতি ক্ষুদ্র পরিসরে তিনি রচনা করেন চল্লিশটি উপন্যাস ও তিনশত ছোটোগল্প। কাহিনী সংক্ষেপেঃ বর্ষার মাঝামাঝি।পদ্মায় ইলিশ মাছ ধরার মরসুম চলিয়াছে।দিবারাত্রি কোন সময়েই মাছ ধরবার কামাই নাই।সন্ধ্যার সময় জাহাজঘাটে দাঁড়াইলে দেখা যায় নদীর বুকে শত শত আলো অনির্বাণ জোনাকির মত ঘুরিয়া বেড়াইতেছে।জেলে-নৌকার আলো ওগুলি।সমস্ত রাত্রি আলোগুলি এমনিভাবে নদীবক্ষের রহস্যময় ম্লান অন্ধকারে দুর্বোধ্য সঙ্কেতের মত সঞ্চালিত হয়।এক সময় মাঝরাত্রি পার হইয়া যায়।শহরে, গ্রামে, রেল-স্টেশনে ও জাহাজঘাটে শ্রান্ত মানুষ চোখ বুজিয়া ঘুমাইয়া পড়ে।শেষরাত্রে ভাঙা ভাঙা মেঘে ঢাকা আকাশে ক্ষীণ চাঁদটি উঠে।জেলে-নৌকার আলোগুলি তখনো নেভে না।নৌকার খোল ভরিয়া জমিতে থাকে মৃত সাদা ইলিশ মাছ।লন্ঠনের আলোয় মাছের আঁশ চকচক করে,মাছের নিষ্পলক চোখগুলিকে স্বচ্ছ নীলাভ মণির মত দেখায়। কুবের মাঝি আজ মাছ ধরিতেছিল দেবগঞ্জের মাইল দেড়েক উজানে। নৌকায় আরও দুজন লোক আছে, ধনঞ্জয় এবং গণেশ। তিনজনেরই বাড়ি কেতুপুর গ্রামে। আরও দু-মাইল উজানে পদ্মার ধারেই কেতুপুর গ্রাম। গভীর জলে বিরাট ঠোঁটের মত দুটি বাঁশে-বাঁধা জাল লাগে। দড়ি ধরিয়া বাঁশের ঠোঁট হাঁ-করা জাল নামাইয়া দেওয়া হয়। মাছ পড়িলে খবর আসে জেলের হাতের দড়ি বাহিয়া, দড়ির দ্বারাই জলের নীচে জালের মুখ বন্ধ করা হয়।শহর থেকে দূরে এ নদী এলাকার কয়েকটি গ্রামের দীন-দরিদ্র জেলে ও মাঝিদের জীবনচিত্র এতে অঙ্কিত হয়েছে। জেলেপাড়ারর মাঝি ও জেলেদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না-অভাব-অভিযোগ - যা কিনা প্রকৃতিগতভাবে সেই জীবনধারায় অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ তা এখানে বিশ্বস্ততার সাথে চিত্রিত হয়েছে। পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কুবের নায়িকা কপিলা ও হোসেন মিয়া। কুবের, কপিলা ও হোসেন মিয়া ছাড়াও আরও কয়েকটি চরিত্র এই উপন্যাসে রয়েছে। যেমন- রাসু, ধনঞ্জয়, পীতম মাঝি, মালা, গণেষ, আমিনুদ্দি, রসুল, ফাতেমা প্রভৃতি চরিত্র। এ সব চরিত্রাবলিরর সমন্বয়ে এ উপন্যাসটিতে একটি সার্থক সমাজচিত্র।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_পাঠক_সমাগম_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা . মাসঃ জুলাই সপ্তাহঃ তৃতীয় পর্বঃ ১ বইয়ের নামঃ পদ্মানদীর মাঝি লেখকঃ মানিক বন্দোপাধ্যায় প্রকাশনীঃ দি স্কাই পাবলিশার্স পৃষ্ঠাঃ১৭০ মূল্যঃ মুদ্রিত মূল্য ১২৫ টাকা . ভূমিকা: পদ্মানদীর মাঝি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে। এটি লেখকের লেখা চতুর্থ এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস। ১৯৪৮ সালে "The Boatman of Padma" নামে অনূদিত হয়। উপন্যাসটি ১৯৩৪ সাল থেকে পূর্বাশা পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে এবং ১৯৩৬ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হওয়ার পরে ভারতীয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভাষায় অনূদিত হওয়ার গৌরব লাভ করে এই উপন্যাসটি। ভারতের একাধিক প্রাদেশিক ভাষাসহ ইংরেজি, চেক, হাঙ্গেরিয়ান, রুশ, লিথুয়ানিয়ান, নরওয়েজিয়ান ও সুইডিশ ভাষায় এই উপন্যাসের অনুবাদ প্রকশিত হয়। বইটি বাংলাদেশের একাধিক প্রকাশনী সংস্থা প্রকাশ করেছে। আমি পড়েছি "দি স্কাই পাবলিশার্স" কর্তৃক প্রকাশিত বইটি। . লেখক পরিচিতি: নাম, প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। জন্ম ১৯০৮ সালে বিহারের সাঁওতাল পরগণার দুমকা শহরে। প্রেসিডেন্সি কলেজের বিজ্ঞানের ছাত্র। হঠাৎ করেই প্রবোধকুমার লিখে ফেলে একটি গল্প। নাম দেয় "অতসী মামী"। প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তারপর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে কাটালো বাকী জীবন। সকলের পরিচিত সাহিত্যিক মানিক বন্দোপাধ্যায়। বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী। লিখেছে; পদ্মানন্দীর মাঝি, দিবারাত্রির কাব্য, পুতুলনাচের ইতিকথা, চতুষ্কোন'র মত ১৯ টি উপন্যাস। পাশাপাশি লিখেছে; অতসী মামী, প্রাগৈতিহাসিক, ফেরিওয়ালা'র মত গল্পগ্রন্থ। যেগুলো তাকে এনে দিয়েছে বাংলা সাহিত্যের অনন্য এক সম্মান। বামপন্থি বা বস্তুবাদী এই লেখকের সব লেখাতেই ছিল আদর্শ ও ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির সার্থক বহিঃপ্রকাশ। ফ্রয়েডীয় তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন মানিক বন্দোপাধ্যায়। ১৯৫৬ সালে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেন তিনি। . কাহিনী সংক্ষেপ: এটি একটি আঞ্চলিক উপন্যাস। বইটিতে প্রকাশ পেয়েছে পদ্মাতীরের কেতুপুর গ্রাম আর তার পাশের গ্রামের লোকদের জীবন প্রবাহ। নৌকা আর জালের মালিক ধনঞ্জয়ের নীরব শোষন জেলেপাড়ার জেলেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে। অভাবের তাড়নায় চুরি করে মাছ বিক্রি করতে গেলেও পদ্মানদীর মাঝিকে ঠকায় শীতলবাবু। এই উপন্যাসের আরেক সুবিধাবাদী চরিত্র হোসেন মিয়া। যার আছে ময়নাদ্বীপ নামে এক দ্বীপ। মানুষের বসবাস অনুপযোগী এই দ্বীপে নিরুপায়দের নিয়ে গিয়ে নিজের রাজত্ব গড়তে চায় সে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র চার সন্তানের জনক পদ্মা নদীর মাঝি কুবের। উপন্যাসের ভাষায় সে 'গরীবের মধ্যে গরীব, ছোটলোকের মধ্যে আরো ছোটলোক। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত তার জীবন। কুবেরের মাছ ধরার সঙ্গী হচ্ছে গনেশ। কুবেরের ঘরে সুন্দরি স্ত্রী মালা আছে। যার পা বাঁকানো, তা না হলে তার হয়তো বাবুদের ঘরে বিয়ে হতো। কুবেরের মেয়ে আছে, ছেলে আছে। কিন্তু নিজের অতৃপ্ত মনে সে শালিকা কপিলার জন্য টান অনুভব করে। কপিলার সংসার আছে। স্বামী শ্যামাদাসের কাছ থেকেও বিতাড়িত হয়ে যার মন পড়ে থাকে স্বামীর বাড়িতে। তবুও মনের গহীন কোণে হয়ত সে দূর্বল কুবেরের প্রতি। ভাই নিতে এলে ফিরতে চায় না বাবার বাড়ি, আশ্বিনের ঝড়ে কুবের যখন দিশা পায়নি, কপিলা ছিল তার পাশে। কোন একসময় কপিলা চলে যায় শ্যামাদাসের বাড়ি। কুবেরও ছুটে যায়। কিন্তু নিরাশ হতে হয় শ্যামাদাসের বিত্তের কাছে। চুপিচুপি আফিমের ব্যবসা করা হোসেন মিয়ার নৌকায় মাঝির কাজটা সে ছাড়তে পারেনা। ছাড়বে কি করে? মানুষটা যে জাদু জানে। বড়ই রহস্যময় লোক এই হোসেন মিয়া। ছিন্ন লুঙ্গি নিয়ে কেতুপুর জেলেপাড়ায় এসেছিল একদিন। কিন্তু এখন সে বড় ব্যবসায়ী। নিত্যনতুন উপায়ে চলে তার ব্যবসা। আর আছে একটা দ্বীপ। ময়নাদ্বীপ। যেখানে একসাথে বাস করে হিন্দু মুসলিম সবাই। যেখানে মসজিদ মন্দির নিয়ে বিভেদ নেই। জমি, বাড়ি, খাদ্য বস্ত্র সবই হোসেন দেয়। সে শুধু চায় জমিন আবাদি হোক, লোকে ভরে উঠুক তার দ্বীপ। সেজন্য সে ভাবেনা ন্যায় অন্যায়। মালুর চরের খুনী রসুল ঠাঁয় পায় তার দ্বীপে। রসুলের বোনের সাথে বিয়ে হয় সদ্য বিপত্নীক আমিনুদ্দির। একদিন কুবেরকেও মিথ্যা চুরির অপবাদ থেকে রেহাই পেতে ময়নাদ্বীপ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়।কে দিয়েছিল এই অপবাদ, আর কেনই বা দিয়েছিল, জানতে হলে পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসে মগ্ন হতে হবে। ময়নাদ্বীপ যাওয়ার উদ্দেশ্যে কুবের রওনা হয়। পিছনে থাকে তার ঘর সংসার, স্ত্রী, পুত্র আর দীর্ঘদিনের জেলে জীবন। কেবল থেকে যেতে চায় কপিলা। শেষ যাত্রার আগে যে প্রশ্ন করে 'আমারে নিবা মাঝি লগে?' কুবের কী কপিলার আবদার রেখেছিলো? সেটা জানা যাবে পদ্মানদীর মাঝি পাঠের মাধ্যমে। . পাঠ প্রতিক্রিয়া: এই উপন্যাসের সাথে প্রথম পরিচয় ইন্টারমেডিয়েট পড়াকালীন। পাঠ্য উপন্যাস ছিল। তখন থেকেই শুরু হয়েছিল ভালো লাগার। কুবের, কপিলা, হোসেন মিয়া, রাসু, ধনঞ্জয়, পীতম মাঝি, মালা, গণেশ, আমিনুদ্দি, রসুল, ফাতেমা প্রভৃতি চরিত্রের সংমিশ্রণে একটি সার্থক সমাজচিত্র অঙ্কনের করেছেন ঔপন্যাসিক মানিক বন্দোপাধ্যায়। জেলেপাড়ার দরিদ্র জীবন আমার চোখে পানি এনেছে। কুবের আর কপিলার নিষিদ্ধ প্রেমের টানও যেন খুব গভীর। কপিলার সেই বিখ্যাত উক্তি, "আমারে নিবা মাঝি লগে"? কথাটা আমাকে খুব করে ছুঁয়ে যায়। ব্যক্তিগত রেটিং ৫/৫ । . সেরা উক্তি: ঈশ্বর থাকেন ঐ গ্রামে ভদ্র পল্লীতে, এখানে তাঁকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না। . হৃদয় মাহমুদ
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য সৃষ্টি মানিক বন্দোপধ্যায় এর “পদ্মা নদীর মাঝি” উপন্যাসটি।জেলেদের সুখ দুঃখের জীবনগাঁথাকে লেখক অত্যান্ত সুন্দর করে তুলে ধরেছেন বইটিতে। উপন্যাসটির কাহিনি সংক্ষেপে বলতে গেলে,বর্ষার মাঝামাঝি ইলিশ ধরার মওসুমে রাত্রিকালীন পদ্মার রূপ চিত্রণে লেখক সঙ্কেতময় উপমামণ্ডিত ভাষার আশ্রয় নিয়েছেন। লেখকের দৃষ্টিতে নদীর বুকে শত শত জেলে নৌকা আলো জোনাকির মতো ঘুরে বেড়ায়। অন্ধকারের মধ্যে আলোগুলো দুর্বোধ্য। রাতে সারা পৃথিবী যখন নিদ্রামগ্ন তখন আলোগুলো থাকে অনির্বাপিত। এই আলোতে ইলিশের নিষ্পলক চোখগুলো হয়ে ওঠে স্বচ্ছ নিলাভ মনিসদৃশ। রাত্রিকালের জেলে নৌকার এই বর্ণনা ছাড়া লেখক উপন্যাসের একাধিক স্থানে পদ্মার রূপ অঙ্কন করেছেন। পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আধুনিক বাংলা উপন্যাসের একটি বিশিষ্ট সংযোজন। জীবন জীবিকার তাগিদে পদ্মা নদীর সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত মানুষের জীবন কাহিনী। এই জীবন কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে উপন্যাসিক জেলেদের যে অনবদ্য চিত্র অঙ্কন করেছেন, তা যেমন পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তেমনি এই উপন্যাসে মানুষের হৃদয়বৃত্তির যে বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে তাও পাঠকের মনকে দারুণভাবে নাড়া দিয়ে যায়। বাংলাদেশের সমাজজীবনে নিম্ন শ্রেণীর গ্রামীণ মানুষের বাস্তবচিত্র এখানে নিখুঁতভাবে রূপায়িত হয়েছে। পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসটি বাংলাদেশের পদ্মা তীরবর্তী অঞ্চলের জেলে সম্প্রদায়ের জীবনচিত্র। জেলে ও মাঝিদের দুঃসাহসিক জীবনযাত্রা এই উপন্যাসের উপজীব্য। পদ্মার সংগ্রামী জীবনের সাথে জেলেদের যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তাতে তাদের আনন্দ নেই, নেই স্বপ্ন, নেই চাওয়া পাওয়া। আছে সীমাহীন বেদনা ভার। প্রাণান্তর পরিশ্রম করেও সেই পরিশ্রমের ফসল তারা ভোগ করতে পারে না। ভোগ করে মহাজন। উপসে তাদের দিন কাটে। পদ্মা নদীর মাঝি জেলেদের জীবন দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত। জেলেপাড়ার ঘরে ঘরে শিশুদের ক্রন্দন কোনো দিন থামে না। গ্রামের ব্রাহ্মণ শ্রেণীর লোকেরা অত্যন্ত ঘৃণাভরে জেলেদের পায়ে ঠেলে। কালবৈশাখীসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার জন্য বারবার আঘাত হানে। বর্ষার পানি অবাধে তাদের ঘরে ঢুকে পড়ে। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য তারা নিজেদের রেষারেষি এবং হানাহানিতে মেতে থাকে। তারা সব ধর্মের চেয়ে এক বড় অধর্ম পালন করে তার নাম দারিদ্র্য। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে জেলেদের জীবনের এই বেদনাঘন দিকটি চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।এর চরিত্রগুলোর মধ্যে কুবের, কপিলা, মালা, মহাজন, হোসেন মিয়া, গণেশ উল্লেখযোগ্য। প্রধান চরিত্র কুবের মাঝি, তাকে কেন্দ্র করে রূপায়িত হয়েছে উপন্যাসের কাহিনী। কুবের মাঝি এখানে জেলেদের প্রতিনিধি। তার নেতৃত্বে জেলেরা তাদের জীবনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। কিন্তু কুবেরকে বিপর্যস্ত জীবনযাপন করতে হয়। কুবের কপিলার আন্তঃসম্পর্ক উপন্যাসটির ভিন্নমাত্রা সংযোজন করেছে। তাদের দুজনের ভালবাসা ছাড়াও মান অভিমান গুলো পাঠক হৃদয় ছুয়ে যায়। আমারে নিবা মাঝি লগেৃৃৃৃৃএরকম আরো অনেক কথা পাঠক হৃদয়কে হর-হামেশা পুলকিত করে। পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসটি আবহমান বাংলার চিরন্তন প্রেক্ষাগৃহ। আমাদের সমাজ সামাজিকতার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষ ও প্রকৃতির কঠোরতার মধ্যে জেলে পরিবার গুলো কেন বাঁচতে চায়,কীভাবে বাঁচে,সমাজপতিরা কেন এবং কীভাবে শোষণ করে এবং সমাজপতিদের মনোভাব কেমন হয়। গরীব মানুষের অসহায়তাকে তারা কীভাবে কাজে লাগায়। শেষ পর্যন্ত কুবের হোসেন মিয়ার ময়নাদ্বীপে আশ্রয় নেয়। জীবনের এই দৈন্যদশা কেবল কুবেরের মধ্যে লক্ষ করা যায় না। পদ্মা নদীর মাঝিতে সব জেলের জীবনেই একই ধরনের দুর্গতি লক্ষ করা যায়। এ দেশের লাখো কুবের জীবন সংগ্রামের একজন সৈনিক। আমৃত্যু ঘাম ঝরাচ্ছে নিজ নিজ কাজের গণ্ডিতে। কিন্তু নিম্নতম মৌলিক চাহিদাগুলো তাদের মিটছে না। পদ্মার তীরবর্তী দরিদ্র মানুষের বঞ্চনা ও জীবন যন্ত্রণা প্রকাশ করেছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। মহাজনদের শোষণ প্রক্রিয়ায় মালোদের জীবন হয়েছে বিবর্ণ এবং স্তম্ভিত। তারা মুখ ফুটে বলতে পারেনি বার মাস অভাব তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। অধিকার হারা মানুষগুলো বাঁচতে চায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তার বাস্তব অভিজ্ঞতার ছাঁকনিতে নিপুণ কলমের আঁচড়ের মমতার রস ঢেলে সেই চিত্র চিত্রায়ন করেছেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন যোগ্য শিল্পীর মতোন। আর তাই সময়ের প্রেক্ষাপটে বিচার করলে আজো বাংলা সাহিত্যে চিরসবুজ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি পদ্মা নদীর মাঝি।বইটি যারা পড়েন নাই তারা অনেক মিস করবেন অসাধারন এক কাহিনী।দেরি না করে পড়ে ফেলুন বইটি ভিন্ন এক স্বাদ পাবেন আশা করি।