User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
'চাঁদের পাহাড়'-এর মত 'হীরামানিক জ্বলে' বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের আরও একটা অ্যাডভেঞ্চারধর্মী কিশোর উপন্যাস। এখানেও রয়েছে এক দুঃসাহসিক অভিযানের কাহিনী। টানটান উত্তেজনায় ঠাসা এই থ্রিলারের শুরু কোলকাতার আবহে এবং ক্রমেই তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে জলপথ পেরিয়ে ডাচ ইস্ট ইন্ডিজের এক দুর্গম অরণ্যসংকুল দ্বীপ পর্যন্ত। এই উপন্যাসের মূল চরিত্র সুশীল। গ্রামের এক উচু বংশের সন্তান সে। পড়ালেখা শেষ করেছে কিন্তু কাজকর্ম করে না সে। কারণ তাদের বংশের রীতি হল পুরুষলোকের শুয়ে বসে কাটানো। কোন কাজ করা বা চাকরির মাধ্যমে পরের গোলামি করলে তাদের বংশের মান যায়! কিন্তু এমন করতে করতে সুশীলদের সময় এসে বংশের অবস্থা পড়ে গেছে। এমন দুরাবস্থায় বংশের মান রাখতে গিয়ে সুশীল কাপুরুষের মত গ্রামে পড়ে থেকে বিলাসী জীবন গুজরান করতে মানসিক সায় পেল না। তাই সে চাকরির খোঁজে এল কোলকাতায়। কিন্তু তার যে শিক্ষাগত যোগ্যতা তাতে কোন ভাল চাকরি তার জুটল না। ধীরে ধীরে হতাশায় নিমজ্জিত হতে শুরু করেছে সে। এমন সময় এক সন্ধ্যায় গড়ের মাঠে সে দেখা পেল জামাতুল্লা নামের এক মুসলমানের। পরদিন একই জায়গায় এসে জামাতুল্লাহ তাকে শোনাল এক অবিশ্বাস্য কাহিনী। জাহাজের মাল্লা ছিল সে। একবার তাদের জাহাজ সমুদ্রের ডুবোচরে আটকে গেলে এক দ্বীপে আশ্রয় নেয় সে। সেখানে দেখতে পায় এক আশ্চর্য হিন্দু নগরীর ধ্বংসাবশেষের। পরে আরেক অভিযাত্রিকের কাছ থেকে সে জানতে পারে ঐ দ্বীপের হিন্দু নগরীতে নাকি প্রচুর ধন সম্পদ আছে। এই গল্প শুনে সুশীল তার কাকাত ভাই সনৎকে নিয়ে জামাতুল্লাহর সাথে বেরিয়ে পড়ল এক অসম্ভব অভিযানে। তাদের সাথী হল ইয়ার হোসেন নামের এক ভয়ংকর লোক। এক জাহাজে করে তারা ভেসে চলল অসীম সমুদ্রের বুক ভেদ করে। কিন্তু সেই দ্বীপ কি তারা খুঁজে পাবে? সেই দ্বীপ যদি খুঁজে পায়ও, প্রাচীন চম্পারাজ্য ও সেখানে লুকায়িত রত্নভান্ডার পর্যন্ত কি তারা পৌঁছতে পারবে? আর সেই রত্নভান্ডারের অদৃশ্য প্রহরীর পরিচয় যখন তারা পাবে, তখনই বা তাদের কি পরিণতি হবে? এইসব প্রশ্নের জবাব মিলবে 'হীরামানিক জ্বলে'তে। সবমিলিয়ে আরও একটা শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান কাহিনী তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু এই উপন্যাসের লেখনী কিছুটা কঠিন মনে হতে পারে আজকের দিনের কিশোর পাঠকদের কাছে। কেননা মূল কাহিনীর থেকে বারবার সরে এসে পারিপার্শ্বিক বর্ণনা দিতে চেয়েছেন লেখক আর সেসবের ভিড়ে ক্রমান্বয়ে অভিযান কাহিনীর মূল মজা স্তিমিত হয়ে গেছে। পাশাপাশি 'চাঁদের পাহাড়' পড়ার পর একই লেখকের বই দেখে যদি কেউ এই বই পড়তে চায়, তার হতাশ হবার সম্ভাবনাই বেশি। কেননা 'চাঁদের পাহাড়' এর শংকর পাঠকের মনে যে ঝড় তুলেছিল, তার কিছুই দিতে পারবে না এই কাহিনীর সুশীল। শংকরের সাথে তুলনায় সুশীল নিতান্তই বাচ্চা। তাছাড়া এই উপন্যাসের অন্যান্য চরিত্রগুলোকেও খুব একটা সচেতনতার সাথে নির্মাণ করেননি লেখক তাই আলাদা করে কোন চরিত্রই মন কাড়তে পারবে না পাঠকের। কাহিনীর শুরুটা বেশ আকর্ষনীয় হলেও; কাহিনী যত এগিয়েছে, তার বর্ণনা ততই একঘেয়ে হতে শুরু করেছে তাই কাহিনীর মাঝামাঝি এসে যদি কেউ বিরক্তিতে এই উপন্যাস পড়া বন্ধ করে দেয় তো অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কাহিনীতে অনেক রোমাঞ্চকর উপাদান থাকলেও, ঠিকভাবে কাহিনীতে সেসবের প্রয়োগ ঘটাতে ব্যর্থই হয়েছেন লেখক। যাইহোক, এতক্ষণ যা বললাম সবই আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিতে দেখা 'হীরামানিক জ্বলে' সম্পর্কিত মতামত। আমি নিজেকে খুব বেশি মনস্ক পাঠক বলে দাবি করব না। হয়ত অন্যরা যদি আরও বেশি ধৈর্যের সাথে এই উপন্যাস পড়েন তো এই উপন্যাসের প্রকৃত মজা পেতে সক্ষম হবেন।