Our User Product Reviews

রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের লেখা নিয়ে আলোচনা করার দুঃসাহস আমার নেই। তারপরও ‘ছেলেবেলা’ বইটি সম্পর্কে লিখতে বসলাম, বইটি পড়ে আমার কেমন লেগেছে সে অনুভূতি জানানোর জন্যে। ‘ছেলেবেলা’ বইটিতে লেখক মূলত তাঁর ছেলেবেলার কাহিনীই বর্ণনা করেছেন। এই বই শেষ হয়েছে কবিগুরুর কিশোরবেলায় এসে। বইয়ের শুরুতে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই বলেছেন, ছেলেবেলা হল এমন একটি সময় যখন বুদ্ধির এলাকায় বৈজ্ঞানিক সার্ভে শুরু হয় না, সম্ভব-অসম্ভবের সীমা-সরহদ্দের চিহ্ন থাকে পরস্পর জড়ানো। আসলেই তাই, ছেলেবেলায় কোন কিছুকেই অসম্ভব মনে হয় না। আর লেখক এই ‘ছেলেবেলা’ বইয়ের লেখনীর ভঙ্গিতেও সেই সব সম্ভবের ভাবটি বজায় রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথের লেখা সবসময়ই বহুমাত্রিক। তিনি এক বিষয় নিয়ে বর্ণনার ছলে বহু বিষয়কে আলোকিত এখানে। ‘ছেলেবেলা’ বইয়েও তার ব্যতিক্রম হয় নি। তিনি তার ছেলেবেলার স্মৃতি তুলে ধরতে গিয়ে তৎকালীন কলকাতা শহরের এত অসাধারণ বর্ণনা দিয়েছেন যে এই আত্মজীবনী মূলক বইটিকে খুব সহজেই সে সময়ের কলকাতার শিক্ষিত সমাজের জীবন-সংস্কৃতির প্রামাণ্য দলিল হিসেবে চালিয়ে দেয়া যাবে। এই বইয়ে সে সময়ে কলকাতা শহরে চলা ঘোড়ার গাড়ির কথা এসেছে, বাড়ির ঝি-বউদের চলার কাজে ব্যবহৃত দরজা-বন্ধ পালকির কথা এসেছে। কবিগুরু ছেলেবেলায় মাস্টারের পড়া ফাঁকি দেবার জন্যে যে সব ফন্দি-ফিকির করতেন সে সবের বর্ণনা করেছেন। ঠাকুর বাড়ির ছেলেদের দেখা-শোনার দায়িত্বে থাকা চাকর ব্রজেশ্বর কীভাবে লেখকের ভাগের লুচি খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতো সে গল্পও অত্যন্ত বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আবার কোন কোন অলস দুপুরে লেখক বাড়ির এক কোণে পড়ে থাকা এক ভাঙা পালকিতে বসে কল্পনায় কীভাবে দেশ-বিদেশ ঘুরতেন আর ডাকাত দলের সাথে যুদ্ধ করতেন সে সবেরও নিটোল বর্ণনা এই বইয়ে এসেছে। মোটকথা, রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলার জীবন, পরিবেশ আর স্বপ্ন সব কিছুর গল্পই ‘ছেলেবেলা’ বইয়ে পাওয়া যাবে। ‘ছেলেবেলা’ বইটি রবীন্দ্র-গবেষকদের রবীন্দ্রনাথকে আরও নিবিড়ভাবে বুঝতে সহায়ক হবে। আর সব রবীন্দ্র ভক্তের জন্যে এই বইটি অবশ্যপাঠ্য বলে আমি মনে করি।