User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের দুটি অসাধারণ বই এই রচনাসমগ্র - ৪ এ স্থান পেয়েছে। বই দুটির একটি হল, ছোটগল্পের সংকলন 'খর যৌবনের বন্দি'। আরেকটি হল, ষাটের দশকের সাহিত্য আন্দোলন নিয়ে লেখা আত্মজীবনীমূলক বই 'ভালোবাসার সাম্পনা'। বই দুটি সম্পর্কে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল। ১. খর যৌবনের বন্দি : অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের অনেক পরিচয়ের মধ্যে তাঁর লেখক পরিচয়টি বরাবরই ঢাকা পড়ে যায়। অথচ তিনি এর মধ্যেই সব মিলিয়ে প্রায় ৩০টির মত বই লিখে ফেলেছেন। তিনি সবচেয়ে বেশি লিখেছেন আত্মজীবনীমূলক বই। এর পিছনেও অবশ্য একটা ইতিহাস আছে। স্যারকে তাঁর অনুজপ্রতিম শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস একবার একটা বড় ক্যানভাসের উপন্যাস লেখার অনুরোধ করেছিলেন। যেখানে প্রায় কয়েক দশকের কথা উঠে আসবে। এই অনুরোধের কিছুদিন পরেই ইলিয়াস মারা যান। তখন স্যার ইলিয়াসের কথা রাখার জন্যেই কলম হাতে তুলে নেন। ফিকশন উপন্যাস না লিখে তাঁর নিজের জীবনের গল্পই লেখা শুরু করেন বিভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্ন বইয়ে। যার কারণেই তাঁর লেখা আত্মজীবনীমূলক বইয়ের সংখ্যা এত বেশি। এছাড়া তাঁর অন্যান্য বইয়ের মধ্যে আছে তাঁর দেয়া ভাষণের সংকলন, তাঁর দেয়া সাক্ষাৎকারের সংকলন এবং বিভিন্ন সময়ে লেখা জর্নাল। তিনি কোন উপন্যাস লিখেন নি। তবে অনেকের ভুল ধারণা আছে যে তিনি কোন ফিকশনই লিখেন নি। এই ধারণা ঠিক নয়। তিনি বেশ কিছু অসাধারণ ছোটগল্প লিখেছেন। তাঁর লেখা এই ‘খর যৌবনের বন্দি’ বইটিও তেমনি একটি ছোটগল্পের সংকলন। ‘খর যৌবনের বন্দি’ বইটিতে ছয়টি অসাধারণ ছোটগল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো হল, ‘একটি প্রেমের গল্প’, ‘উধাও চরাচরে’, ‘খর যৌবনের বন্দি’, ‘জনিত বাসনা’, ‘চেতনাচেতনের পদাবলি’ এবং ‘স্বর্ণচাঁপার রূপকথা’। এই গল্পগুলো সম্পর্কে আলাদাভাবে আলোচনায় যাবো না। তবে এতটুকু বলা যায়, এই সংকলনের ছয়টি গল্পের প্রত্যেকটিই অসাধারণ কাঠামোর উপর দাঁড়ানো। আর এই গল্পগুলোর সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হল, এদের প্রত্যেকের কাহিনীই স্বতন্ত্র, অনন্য বৈশিষ্ট্যে ভরপুর। গল্পগুলো রুচিশীল পাঠকের শুধু মনের খোরাকই যোগাবে না, তার পাশাপাশি গভীরভাবে ভাবতেও বাধ্য করবে। সমসাময়িক লেখকদের লেখা ছোটগল্পগুলোর মধ্যে এ রকম প্রভাব বিস্তারকারী ছোটগল্প আমি খুব কমই পড়েছি। তবে আফসোসের বিষয় হল, স্যারের লেখা নিয়ে কখনোই সেভাবে আলোচনা হয় নি। ‘খর যৌবনের বন্দি’ বইটি পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের লেখা ছয়টি শক্তিশালী ছোটগল্পের সংকলন ‘খর যৌবনের বন্দি’ বইটি চিন্তাশীল পাঠকদের ভালো লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস। ২. ভালোবাসার সাম্পান : অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ‘ভালোবাসার সাম্পান’ বইটি মূলত ষাটের দশকে আমাদের দেশে যে এক ব্যতিক্রমধর্মী সাহিত্য আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার উপর ভিত্তি করেই রচিত। লেখক নিজেই সেই সাহিত্য আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন। তাই তার কলমের অভিজ্ঞ ছোঁয়ায় সেই সময় আমাদের চোখের সামনে অসাধারণ দক্ষতায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে এই বইয়ে। ষাটের দশকে আমাদের জাতীয় জীবনে এক বিরাট পরিবর্তনের ঢেউ এসে আঘাত হেনেছিল। সে সময় আমাদের সমাজে প্রথমবারের মত বিত্তের পদপাত শোনা যায়। আর সে উত্তাল সময়ে খুব সহজেই বিত্তের অধিকারী হওয়া যাচ্ছিল অসৎ উপায় অবলম্বন করে। ফলে সেই সময়ে বিত্তের পাশাপাশি আরেকটি যে বিষয় মোটা দাগে আমাদের সমাজে এসে আসন গেঁড়ে বসে এবং পরবর্তীতে স্থায়ী হয়ে যায় তা হল নৈরাজ্য। এই নৈরাজ্য-বিক্ষুব্ধ সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে, ষাটের দশকে এক দল তরুণ সাহিত্যিকের আবির্ভাব ঘটে যারা গল্পে-কবিতায় এই অবক্ষয়ের সময়কে ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন পরবর্তীকালে নিজেদের সময়কে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, রফিক আজাদ, আব্দুল মান্নান সৈয়দ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁদের প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা ছিল ‘কণ্ঠস্বর’, আর এই পত্রিকার সম্পাদনায় ছিলেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ নিজেই। এই পত্রিকা প্রকাশের অর্থ সংগ্রহের জন্যে যে কষ্টকর অধ্যবসায় আর তরুণ লেখক-সাহিত্যিকদের বুকভরা ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখার যে কেন্দ্রীয় দায়িত্ব তা স্যার অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথেই পালন করে গেছেন। আর ‘ভালোবাসার সাম্পান’ হল সে সবের-ই আখ্যান। ভালোবাসার সাম্পান একই সঙ্গে ইতিহাস ও কিংবদন্তি, উপন্যাস ও স্মৃতিকথা; অনবদ্য আবেগদীপ্ত ও বুদ্ধি-ঝলকিত ভাষাশৈলীতে গাঁথা এ হল আমাদের জাতীয় জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য ইতিহাস, একটা সাহিত্যিক সম্প্রদায় বা একদল সাহিত্যিকের বেড়ে ওঠার হাহাকারের সাথে যেখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে একটা জাতির জন্ম-চিৎকার। এ বই একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে ওঠা আসলেই খুব কঠিন। পরিশেষে বলা যায়, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের ‘ভালোবাসার সাম্পান’ বইটি গবেষকদের জন্যে যেমন বিশেষ সহায়ক হবে তেমনিভাবে আগ্রহী পাঠকদের জন্যে এ বই হবে তথ্যের অবাধ ভাণ্ডার আর ইতিহাসের পথ ধরে নির্মল আনন্দের যাত্রার অনুষঙ্গ। পরিশেষে বলতে হয়, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ রচনাসমগ্র - ৪ স্যারের অন্যান্য রচনাসমগ্রের মতই সংগ্রহে থাকার দাবীদার।