User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Good book.
Was this review helpful to you?
or
.
Was this review helpful to you?
or
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন জনপ্রিয় ভারতীয় বাঙালী কথাসাহিত্যিক। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। "আরণ্যক" উপন্যাসের নামই উপন্যাসের মূল কথা বলে দিচ্ছে। 'সত্যচরণ' চরিত্র দিয়ে উপন্যাসের শুরু যে পড়া লিখা শেষ করে আজকালকার সাধারণ যুবকদের মতোই চাকরীর খোঁজ করছিল বিভিন্ন জায়গায়, এমন সময় হুট করেই তার এক বন্ধু তাকে জঙ্গলে চাকরী দেয়। প্রথমে সে অনেক ভাবছিল কি করে শহরের মানুষ হয়ে জঙ্গলে থাকবে বা কীভাবে তার সময় পার করবে কিন্তু যতই দিন যেতে লাগলো জঙ্গলের প্রতি তার ভালো লাগা গভীর হতে থাকলো। তার সামনে একের পর এক চরিত্র গুলো আসতে থাকে, বন-জঙ্গল এর রহস্য তাকে ঘিরে ধরতে থাকে। কখনো বাঘের ভয়, কখনো বন্যমহিষের সব ভয় এক হয়ে তার এক একটা দিন এক একটা বছর খুব রোমাঞ্চক ভাবে তার কাটতে থাকে। তার ভাগ করে দেয়া জঙ্গলের জমিতে মানুষ গুলো ফসল চাষ করতে থাকে। পাহাড় - নানান রকম গাছ - পশু- পাখি -ঝর্না - পাহাড়ি মানুষ- সেসব মানুষদের কথা- সংস্কৃতি সব কিছুর একার দর্শক হয়ে থাকে সত্যচরণ সে সব মুগ্ধ হয়ে চোখ ভরিয়ে দেখে নিতে থাকে কিন্তু কখনো তাদের সাথে গভীর আরণ্যে ডুবে যেতে পারে না কারণ তার চাকরী শহুরে লোক সামান্য চাকুরীর জন্য সেখানে গিয়েছে, জঙ্গলে তার কোন স্থান নেই। শেষ সময়ে যখন তিনি পেছন ফিরে তাকিয়ে ছিল তখন নিজের অজান্তেই চোখের কোণে অশ্রু এসেছিল কারণ তিনি না চাইতেও প্রকৃতি মাকে খণ্ডে খণ্ডে ভাগ করে এক বীভৎস রূপে সাজিয়ে ফেলেছিল কারণ সেটাই তার চাকুরীর কাজ ছিল। যদিওবা তারও ইচ্ছে হয়েছিল সাঁওতাল রাজকন্যা ভানুমতীকে জীবনসঙ্গী বানিয়ে তাদের সাথেই আরণ্যের গর্ভে ডুব দিতে কিন্তু তিনি পারেনি নিজের গণ্ডী পার হতে, পারেনি অজানা একটা শৃঙ্খল ভাঙতে। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আমি নিজেই সত্যচরণ হয়ে গেছি , আমি বনে-জঙ্গলে ঘোড়ায় চড়ে বেড়াচ্ছি -পাহাড়ি মানুষদের সাথে কথা বলছি-অবাক চোখে সব দেখছি; বইটা পড়া মুহূর্তের সময় গুলো আমার মুগ্ধতায় কেটেছে, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় খুব সূক্ষ্ম - সুনিপুণ ভাবে উপন্যাসটি রচনা করেছেন কারণ প্রকৃতির সৌন্দর্য কাগজে কলমে বর্ণনা করা বেশ কঠিন কাজ। 'আরণ্যক' বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর রচিত চতুর্থ উপন্যাস। ১৯৩৯ সালে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিহারে তার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে উপন্যাসটি রচনা করেন। উপন্যাস পড়া শেষ করে ভেবেছিলাম-অনেক সুন্দর করে অনেক কথায় অনেক গুছিয়ে একটা প্রতিক্রিয়া লিখবো কিন্তু এখন লিখতে বসে সেসব কিছুই লিখতে ইচ্ছে করছে না কারণ আমি চাচ্ছি যারা এখনো বইটি পড়েনি তারা যেন আমার প্রতিক্রিয়া পড়ে কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বা আমি যা বলেছি সেসবের সত্যতা খোঁজার জন্য হলেও বইটি পড়ে দেখে, আমি চাই সবাই বইটি পড়ুক আমার মতো মুগ্ধ না হোক অন্ততঃ জানুক আরণ্যক নামক উপন্যাসে আরণ্যের ছোঁয়া আছে। শুভ হোক আপনার পাঠ্য কার্যক্রম।
Was this review helpful to you?
or
বই : আরণ্যক জনরা : উপন্যাস লেখক : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় . কাহিনী শুরু হয় লেখকের অতীত স্মৃতি রোমন্থনের মাধ্যমে । কোলকাতার কোলাহলে বসে লেখক মাঝে মাঝে হারিয়ে যান সেই দিনগুলোতে । পনের ষোল বছর পূ্র্বে তরুণ লেখক কোলকাতায় চাকরী না পেয়ে কষ্টকর বেকার জীবন হতে মুক্তি পেতে তার এক বন্ধুর বাবার জমিদারিতে ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্ত হন যা ছিল সভ্য জগৎ এমনকি বঙ্গদেশ হতেও বহুদূরে । যেখানে এখনো প্রাগৈতিহাসিক যুগের সবুজ অরণ্য বিরাজ করছে । শহুরে জীবনে অভ্যস্ত তরুণ লেখক প্রথম কয়েকদিনেই হাপিয়ে ওঠেন সেই গভীর অরণ্যে । কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি মায়ায় জড়িয়ে পড়তে থাকেন । বিভূতিবাবুর লেখা এতটা জীবন্ত যে পড়তে পড়তে মনে হয়েছে লেখকের মত আমিই যেন সেই নাঢ়া , বইহার , লবটুলিয়ার গভীর অরণ্যে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি ! আমার গায়ে যেন বন্য লতার লকলকে ডগাগুলো আছড়ে পড়ছে ! যেন দু' একটি বুনোশিউলী ফুল কাঁধে বা মাথায় ঝড়ে পড়ছে টুপটাপ ! কখনো বা শাল, মহুয়া, পলাশ, কূলের বন , কখনোবা ক্ষূদ্র লোকালয় , কাশের বেড়ার ঘর , অতি দরিদ্র গাঙ্গোতা প্রজাদের মুখ ভেসে উঠেছে মনে ! কখনোবা হ্রদ 'সরস্বতী কুন্ডি'র ধারে স্পাইডারলিলির মাতাল গন্ধে আকুল হয়ে বা হংসলতার নীল ফুলের ডাল হাতে নিয়ে জোৎস্ন্যা বিলাস করেছি ! উপন্যাসের অনেকগুলো চরিত্রের মধ্যে বোহেমিয়ান 'যুগলপ্রসাদ'কে খুব ভাল লেগেছে । সংসারধর্মে মন নেই , এই লোকটার প্রিয় কাজ হল দূর পাহাড় বা লোকালয় হতে নানারকম বন্য ফুলের গাছ এনে সরস্বতী কুন্ডের আশেপাশে রোপন করা যে কাজে লেখক ও তাকে গোপনে সাহায্য করেছেন মাঝেমাঝে । সহজ সরল প্রকৃতিপ্রেমী এই লোকটকে আমার কাছে অসাধারণ এক ভালমানুষ মনে হয়েছে । বুড়ো নকছেদী , তার বউ মঞ্চী , দরিদ্র কুন্তা , পেটুক রাজু পাঁড়ে চরিত্রগুলো নানারকম অন্ধবিশ্বাস, ভালবাসা, আর গ্রামীন বাঁধনে আবদ্ধ কতগুলো জীবন । দূর পাহাড়ের বন্য রাজকন্যা ভানুমতি ও তার প্রপিতামহ রাজ্যহীন সাওঁতাল রাজা দবরু পান্না চরিত্রগুলোও অত্যন্ত ভাল লেখেছে । লবটুলিয়া অরণ্য ছেড়ে চলে আসার আগে লেখক ভানুমতির সাথে শেষবার দেখা করতে গিয়ে তার প্রেমে পড়েন । (লেখক এত বেরসিক কেন বুঝতে পারিনি । আমিতো লেখকের সাথে প্রথম দেখার বর্ণনাতেই ভানুমতির প্রেমে পড়ে গেছি ?) বারবার লেখকের মনে হয় তিনি একেবারে থেকে যান এই সবুজ সমুদ্রে , কোলকাতার সভ্য জীবনের চেয়ে এ যেন ঢেঁর ভাল ! ভানুমতিকে বিয়ে করে এই বন্য পাহাড়ে বসতি গড়েন ! কোন এক জোৎস্ন্যা রাতে ভানুমতির ছেলেমানুষি গল্প বা কাঁচের চুড়ির শব্দের মত হাসি শোনেন বসে ! কিন্তু বাস্তবে তা হয়ে ওঠেনা ! সব মায়ার জাল ছিঁড়ে একদিন লেখককে নিজের সভ্য সমাজে রওনা হতে হয় ! 'পথের পাঁচালি' পড়েই বিভূতিভূষণের লেখার প্রেমে পড়েছিলাম । কিন্তু এইটা একদম অন্যরকম ভাল লেগেছে । প্রথম কথা হল এটা এমন একটা উপন্যাস যা কারো কাছে খুবই ভালো লাগবে আবার কারো কাছে খুবই বাকোয়াস লাগতে পারে । অনেকে বলেছে যে এই উপন্যাস তারা কিছুটা পড়ার পরই পুরোটা পড়ার ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেছে - তার মূল কারণ উপন্যাসের প্রথমদিকে কাহিনী কিছুটা ধীর গতিতে আগাতে থাকে । তবে যেকোন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে অত্যন্ত উপভোগ্য লাগবে । গভীর অরণ্যের হাতছানিতে হারিয়ে যেতে চাইলে পড়ে ফেলতে পারেন বইটি ।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_পাঠক_সমাগম_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_২ মাসঃ জুলাই সপ্তাহঃ চতুর্থ পর্বঃ ২ বই - আরণ্যক লেখক - বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় ঘরানা - চিরায়ত উপন্যাস প্রকাশনী - ঝিনুক পৃষ্ঠা সংখ্যা - ১৭৫ মুদ্রিত মূল্য - ২০০ টাকা। #সংক্ষেপে_লেখকের_পরিচয়: ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের জন্ম ১২ই সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ সালে।বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাচরাপাড়ার নিকটবর্তী ঘোষপাড়া-মুরারিপুর গ্রামে নিজ মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পথের পাঁচালী, অপরাজিত, আরণ্যক, আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি পাণ্ডিত্য এবং কথকতার জন্য তিনি শাস্ত্রী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। আরণ্যক তার রচিত চতুর্থ উপন্যাস। ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটি লেখক অকালে-লোকান্তরিতা তাঁর প্রথমা স্ত্রী গৌরী দেবীকে উৎসর্গ করেন। তাছাড়া ১৯৫১ সালে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন। ১৯৫০ সালের ১লা নভেম্বর লেখক ইহলোক ত্যাগ করেন। #কাহিনী_সংক্ষেপঃ সত্যচরণ, উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র।কলকাতার মাটিতেই তার বেড়ে ওঠা।শৈশবের পুরোটাই কেটেছে সেখানেই।আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। বর্তমান সময়ের একটা বড় সমস্যা ডিগ্রি আছে তো চাকরি নেই।সত্যচরনের ঠিক সেই দশা।উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেও চাকরি সে তো সোনার হরিণ।বি এ পাস করে বেকার, মেস এ খাওয়ার কিংবা ভাড়ার টাকা দেয়ার সামর্থ নাই। এদিকে বন্ধু অবিনাশ।কলকাতা থেকে বেশ কিছু দূরে পূর্ণিয়া জেলায় ভাগালপুর এর কাছাকাছি একটি জমিদার এর এস্টেট, অবিনাশদের রয়েছে বিশাল জঙ্গলময় জমি, যার তদারকির জন্য কোনো বিশ্বস্ত লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না।সেই দায়িত্বই এসে যায় সত্যচরণের উপর।প্রায় বিশ-ত্রিশ হাজার বিঘে জমি; বিশাল ব্যাপার সেপার।কিন্তু সেই অরণ্যের গভীরে যেতে ইতস্তত করে সত্যচরণ। হৃদয়ের গহীনে একটা কিন্তু অবশ্য ছিল তবুও অবশেষে ভাগ্যের খেলায় যেতেই হয় অরণ্যের ঠিক মাঝেই। শহরের মাটিতে বেড়ে ওঠা সত্যচরণের ভালো লাগে না জঙ্গলের গভীরে নির্জন লোকালয়শূন্য গহীন অরণ্যের চাকরি বাকরি।একরকম বিরক্তিকর।কিন্তু একসময় পরিস্থিতির সাথে খাপ খায়িয়ে মানিয়ে নিয়ে চলতে থাকে। কত বিচিত্র মানুষের কখনো প্রিয় পাত্র সে, কখনো চক্ষু শুল।কেউ হাতী পাঠিয়ে রাজকীয় দাওয়াত করে নিয়ে যায়। সত্যের পাতের ভাতের জন্য রোজ রাতে আসে কুন্তা।সবমিলিয়ে নিবিড় এক মায়ায় পড়ে গেছে যেন সে। সবুজ আর বন্য সৌন্দর্যে মুগ্ধতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা সত্যকে কি খুঁজে পায় সত্য? কুন্তার পরিচয় কি জানবে সে? প্রকৃতি যে ওপর দানে ভরিয়ে রেখেছে তাকে বিনিময়ে কি দিতে পেরেছি? দ্বন্দ্ব আর সংঘাতের মাঝে সত্যচরণ কি পরিবর্তন আনতে পেরেছিলো? এরূপ শত প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আজ দাঁড়িয়ে আছে বিভূতির 'আরণ্যক'। #উপন্যাসের_প্রিয়_উক্তি: ১) প্রকৃতিকে যখন চাহিব, তখন প্রকৃতিকে লইয়াই থাকিতে হইবে, অন্য কোন দিকে মন দিয়েছি যদি অভিমানিনী কিছুতেই তাঁর অবগুন্ঠন খুলিবেন না। ২) Blessed are the meek for theirs is the kingdom of Heaven ৩) কত রূপে কত সাজেই যে বন্যপ্রকৃতি আমার মুগ্ধ অনভস্ত্য দৃষ্টির সম্মুখে আসিয়া আমায় ভুলাইল! #প্রতিক্রিয়া: প্রথমেই বলে নেয়া ভালো যে বিভূতিভূষণের 'চাঁদের পাহাড় আমাকে প্রথম আকর্ষণ করেছিল।আর আরণ্যকের প্রতিটি শব্দ আমাকে করেছিল মোহাচ্ছন্ন, যার রেশ আজ কাটিয়ে উঠতেই পারি নি।নির্জনতাই প্রকৃতির আদিম বৈশিষ্ট্য।সবুজের সমারোহ, পাখিদের গুঞ্জন, পাহাড়-পর্বতের সারি, উঁচু উঁচু গাছেদের আকাশ ছোয়ার মিছিল, লেক-নদী-ঝর্ণার কলতান।আরণ্যক শব্দের আক্ষরিক অর্থ অরণ্যের বা বনের অংশভুক্ত হলেও এর ব্যাপক অর্থের পরিচয় পেয়েছি এই উপন্যাস পড়ে।সত্যচরণের হাত ধরে বিভূতির লালন করা একটা স্বপ্নপূরণ করতে ঘুরে বেড়িয়েছি অরণ্যে। বিভূতিভূষণ ঠিক যেমনটি ভাবতেন, '' একটা কঠিন শৌর্যপূর্ণ, গতিশীল, ব্রাত্য জীবনের ছবি। এই বন, নির্জনতা, ঘোড়ায় চড়া, পথ হারানো অন্ধকার - এই নির্জনে জঙ্গলের মধ্যে খুপরি বেঁধে থাকা।মাঝে মাঝে, যেমন আজ গভীর বনের নির্জনতা ভেদ করে যে শুড়ি পথটা ভিটে-টোলার বাথানের দিকে চলে গিয়েচে দেখা গেল, ঐ রকম শুড়ি পথ এক বাথান থেকে আর এক বাথানে যাচ্চে - পথ হারানো, রাত্রের অন্ধকারে জঙ্গলের মধ্যে ঘোড়া করে ঘোরা, এদেশের লোকের দারিদ্র, সরলতা, এই সন্ধ্যায় অন্ধকারে ভরা গভীর বন ঝাউবনের ছবি এই সব।''-- তার দিনলিপিতে লিখে যাওয়া প্রতিটি শব্দ যেন উপলব্ধি করেছি এই উপন্যাসের পাতায়। আরণ্যক বইটিকে অনেক বিশিষ্ট সাহিত্য-রসিক ও সমালোচক বিভূতিভূষণের শ্রেষ্ঠতম সাহিত্য-সৃষ্টি বলে মনে করেন।তার প্রমান উপন্যাসটি পড়েই আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি। চারদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন। ধোঁয়াশা। মানুষের কোলাহল নেই। সে জ্যোৎস্না, সে তিমিরময়ী স্তব্ধ রাত্রি, ধু-ধু বনঝাউ আর কাশবনের চর, ধূসর শৈলশ্রেণী, গভীর রাত্রে একদল বন্য নীলগাইয়ের দ্রুত পদধ্বনি, খররৌদ্র বহ্নিতাপে পাগলপারা মধ্যাহ্নে সরস্বতী কুন্ডীর জলের ধারে পিপাসার্ত বন্য মহিষ, সে এক অপূর্ব দৃশ্য যুক্ত হয় যখন মুক্ত শিলাস্তৃত প্রান্তরে রঙিন বনফুলের শোভা, ফুটন্ত রক্তপলাশের ঘন অরন্যের আছে বন্য জন্তুর হাঁক। আরো আছে ডাহুকের ডাক, হস্তির বৃংহিত, সিংহের গর্জন, ঘোড়ার ঊর্ধ্বশ্বাস, বাঘের হিংস্রতা আর হায়েনার কুৎসিত হাসি। ভূত-প্রেত-অশরীরী আত্মারা বুকে কাঁপন ধরে। খুব ভয়ঙ্কর ও ভীতিকর পরিবেশ।অরণ্যকে ঘিরেই অরণ্যকের সংগ্রাম, বাঁচার আকুতি, আর্তনাদ। কত ছোট্ট একটা উপন্যাসের বই, কিন্তু কত গভীর এর বর্ণনা। যেন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। অসম্ভব সুন্দর উপন্যাস! অরণ্যের সেই ভয়ঙ্কর, বিস্ময়কর ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সাথে জীবনের প্রতিটি ধাপ মিলেমিশে যে রহস্যের সূচনা করেছিল তা শেষ হয়েছে এক বুক ভাবনার খোরাক হয়ে।ধীর লয়ে বয়ে যাওয়া কি অদ্ভুত শূন্যতার অনুভূতি! সত্যিই মুগ্ধ না হওয়ার কোনো উপায়ই লেখক রাখেন নি! “ হে অরণ্যানীর আদিম দেবতারা, ক্ষমা করিও আমায়!”---শুধু এই একটি মাত্র বাক্যেই কি অপরিসীম আবেগের বহিঃপ্রকাশ! অরণ্যের ঠিক কাছে! ঠিক গভীরে! কী অসাধারণ লেখনী! কি অপরিসীম মুগ্ধতা! অরণ্যকে যারা সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসেন তাদের জন্য এটি হতে পারে অবশ্যপাঠ্য একটি সর্বোৎকৃষ্ট উপন্যাস। #আমার_রেটিং ১০/১০ রিভিউ লিখেছেনঃ রুপন্তি শারমিন
Was this review helpful to you?
or
আরণ্যক শব্দের অর্থ অরণ্য সম্পর্কীয়। পুরো বইটি সর্বত্র ঘিরে ছিল প্রকৃতি। গহীণ অরণ্যে জীবণযাপন , বিভিন্ন ধরনের মানুষ , হরেক রকম গাছপালা , পশু-পাখি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তিনি তার রচনায় ফুটিয়ে তুলতেন সমাজের অতি সাধারণ মানুষের চিত্র, সাধারণ মানুষের দারিদ্রতার প্রতিচ্ছবি। আরণ্যক বইটিও তার ব্যাতিক্রম নয়। শুধু পার্থক্য হচ্ছে আরণ্যকের পটভূমি গড়ে ওঠেছে আমাদের গ্রাম – শহর হতে দূরে । সুদূর এক অরণ্যের গহীনে। ফুটে ওঠেছে পাহাড়ীদের জীবণ। সেখানের মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই । সেই লড়াই কখনো পাহাড়ী জন্তু জানোয়ারের সাথে, কখনোবা তীব্র ক্ষুধা মেটাতে দারিদ্রতার সাথে। “সত্যচরণ” নামক চরিত্র দিয়ে উপন্যাসের শুরু । কলকাতার আট-দশজন সাধারণ মানুষের মতো গ্রাজুয়েশন শেষ করে চাকরী খুজেছিল সে। টাকা পয়সার সঙ্কট ছিল অনেক। ঠিক এমনই এক সময় তার এক বন্ধু এক চাকরী দিল কিন্তু সে চাকরী করতে হলে তাকে থাকতে হবে শহর হতে দূরে এক অরণ্যে। আর্থিক সঙ্কটের জন্য সে রাজি হয়েছিল। তার পর সত্যচরণের চোখের মাধমে ফুটে ওঠেছে সেখানের মানুষদের দারিদ্রতা। আমরা ভাবি কলকাতার মানুষ দারিদ্র। কিন্তু সেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে একটি কড়াই পেলে মানুষ কত খুশি হতে পারে। সাঁওতাল রাজকন্যা ভানুমতীকে সঙ্গী বানানোর মনোবাসনাও ছিল তার। এভাবেই নানা প্রকার মায়ায় জড়িয়ে যায় সে , যেতে মন চায় না আর জনমানবপূর্ণ কলকাতায়।