User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
temon bhalo quality na . baki uponnas ta sei
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই:- পুতুল নাচের ইতিকথা লেখক:- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশনী:- ঝিনুক প্রকাশনী ধরন:- চিরায়ত উপন্যাস রকমারি মূল্যঃ১৫৬ টাকা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মূহুর্তে বাংলা সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তার রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম ইত্যাদি। পুতুল নাঁচের ইতিকথা এমনই একটি উপন্যাস। বাস্তবতার সমগ্রতাকে তুলে ধরার লক্ষে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় উপন্যাসটি রচনা করেন। উপন্যাসে শশী, কুসুম, যাদব প্রমুখ প্রতি মুহূর্তে যেন উপন্যাসের নামকরণকে সার্থক করে তোলে। গাওদিয়া গ্রামের সুদী মহাজনের ছেলে শশী। কলকাতা থেকে পাশ করা গ্রামের একমাত্র ডাক্তার।শশী গ্রামে আসে বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উন্নত জীবনের সন্ধ্যানে বেড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সে আর প্রথাগত জীবনের বাহিরে যেতে পারে না। গ্রামীণ জীবণের প্রতিবেশ আর বাস্তবতার ডালপালা এমন ভাবে তাকে আকড়ে ধরে; যা ছিড়ে বের হওয়া শশীর পক্ষে সম্ভব নয়। উপন্যাসের প্রধান নারী চরিত্র পরাণের স্ত্রী তেইশ বছরের কুসুম । প্রকৃ্তপক্ষে কুসুম এক অস্থির, বেপরোয়া গ্রাম্য রমণী । পুতুল নাচের ইতিকথা উপন্যাসে লেখক কুসুমের মৃতপ্রায় অস্তিত্বের এক ভিন্ন রূপ উন্মোচন করেছেন। যা নারী সম্পর্কে আমাদের আবহমান ধারনাকে ভেঙ্গে দিয়ে এক নতুন ধারনার জন্ম দিয়েছেন। গল্পে কুমুদ-মতির ছন্নছাড়া জীবন আর বিন্দু-নন্দলালের অস্বাভাবিক দাম্পত্যজীবন উপন্যাসটিতে নতুন করে প্রাণ দান করে। শশীকে ঘিরে রোমান্টিক সম্পর্কে আবদ্ধ কিশোরী মতি কৌতুহলী হয়ে শশীর বন্ধু কুমুদের সাথে প্রথমে প্রেম এবং পরে বিয়ে করেন। শশীর প্রেমে উন্মাদিনী চরিত্র কুসুম আছে । যার ভালোবাসায় একসময় শশী পোষ মানে কিন্তু শশীকি পারবে তার অবৈধ সম্পর্ককে কোন পরিনতি দিতে? #পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ যাদব চরিত্রটা নিয়ে কিছু লিখতে চেয়েছিলাম। রিভিউ ছোট করার জন্য বাদ দিতে হলো। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তার লেখনিতে কিছু অবৈধ সম্পর্কের সৃষ্টি করে যা পরিনতি পেলেও পিরাদায়ক আবার না পেলেও পিরাদায়ক। লেখকের অসাধারন লেখনিতে চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে গ্রামের সাধারণ মানুষগুলোর জীবন গাথা।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ পুতুল নাচের ইতিকথা লেখকঃমানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশনীঃঝিনুক প্রকাশনী ধরনঃচিরায়ত উপন্যাস মূল্যঃ১৮০ টাকা(রকমারি মূল্যঃ১৩৫ টাকা) . উপন্যাসের কাহিনীতে প্রথমে পাওয়া যায় শশীর অস্তিত্ব।গ্রামের নাম গাওদিয়া,সেখানকার সুদী মহাজন গোপালের ছেলে শশী কলকাতা থেকে পাশ করা একমাত্র ডাক্তার।শশী গ্রামে আসে বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভিন্নতর সংস্কৃতি কিংবা সহজ ভাষায় উন্নত জীবনের সন্ধ্যানে বেড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সে আর প্রথাগত জীবনের বাহিরে যেতে পারে না।গ্রামীণ জীবণের প্রতিবেশ, পরিবেশের বৈচিত্র্যতা আর বাস্তবতার ডালপালা এমন ভাবে তাকে আকড়ে ধরে; যা ছিড়ে বের হওয়া শশীবাবুদের সামর্থের বাহিরে। . উপন্যাসের প্রধান নারী চরিত্র পরাণের স্ত্রী তেইশ বছরের বাঁজা মেয়ে কুসুম । প্রকৃ্তপক্ষে কুসুম এক অস্থির, বেপরোয়া,ও দূর্বোধ্য গ্রাম্য রমণী । পুতুল নাচের ইতিকথা উপন্যাসে লেখক কুসুমের মৃতপ্রায় অস্তিত্বের এক ভিন্ন রূপ উন্মোচন করে নারী সম্পর্কে আমাদের আবহমান ধারনাকে ভেঙ্গে দিয়ে এক নতুন ধারনার জন্ম দেন । শশী-কুসুম ছাড়াও উপন্যাসে কুমুদ-মতির ছন্নছাড়া জীবন আর বিন্দু-নন্দলালের অস্বাভাবিক দাম্পত্যজীবনের কথকতাও উঠে এসেছে পুরোপুরি । এছাড়া উপন্যাস জুড়ে নির্বিকারভাবে ছড়িয়ে আছে অনেকগুলো মৃত্যু-বর্ণনা । আকাশের দেবতার কটাক্ষে (বজ্রপাতে) হারু ঘোষের মৃত্যু দিয়ে শুরু । গাছ হতে পড়ে ভুতো, সন্তান জন্মাতে গিয়ে সেনদিদি আর রথের দিন মরবেন এই কথা রাখতে গিয়ে যাদব- পাগলাদিদি- সবারই মৃত্যু যেন নিয়তির খেল । সবই যেন কোন এক বিরাট শিশুর পুতুল খেলা। . শশীকে ঘিরে রোমান্টিক সম্পর্কে আবদ্ধ কিশোরী মতি আছে , যে পুরাষাকারের প্রতি কৌতুহলী , পরবর্তী শশীর বন্ধু কুমুদের সাথে প্রেম আর পরিনয়ে আবদ্ধ হয় । শশীর প্রেমে উন্মাদিনী চরিত্র কুসুম আছে । যার ভালোবাসায় একসময় শশী পোষ মানে কিন্তু তাদের অবৈধ সম্পর্ককে তারা পরিনতি দিতে পারে না । পুতুল নাচের ইতিকথায় মতি আর ছন্নছাড়া যাত্রা দলে এক্টর কুমুদের প্রেম সংসারের বর্ননাও আছে । মতির গ্রামের সহজ সরল কিশোরী থেকে স্বামী সোহাগিনী প্রজাপতি হয়ে উঠার আখ্যান আছে । পুতুল নাচের ইতিকথায় আরো আছে বিকৃত যৌনতা আর সামাজিক অবক্ষয়ের বর্ণনা। #পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃমানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (মে ১৯, ১৯০৮ - ডিসেম্বর ৩, ১৯৫৬) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তার প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মূহুর্তে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তার রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি।পুতুল নাঁচের ইতিকথা তেমনি একটি উপন্যাস।চমৎকার বই।পড়তে পারেন আশা ভাল লাগবে। হাপি রিডিং....
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই-পুতুল নাচের ইতিকথা লেখক-মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ধরন-উপন্যাস মূল্য-১৮০ পৃষ্ঠা-১৬৫ ঝিনুক প্রকাশনী .... মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিসৃক্ষার শ্রেষ্ঠ ফসল তাঁর পুতুল নাচের ইতিকথা উপন্যাস।এই উপন্যাসের কেন্দ্রে রয়েছে গাওদিয়া গ্রাম। সেখান থেকে খাল পথে বাজিতপুর যাতায়ত চলে।উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র শশী ডাক্তার। উপন্যাসের কাহিনী শুরু হয়েছে হারু ঘোষ কে দিয়ে। আদরের মেয়ে মতির জন্য সে পাত্র দেখতে গিয়েছিল। ফেরার সময় বজ্রপাতে অপঘাতে মারা গেল। শশী শহর থেকে গোবর্ধনের নৌকায় ফিরছিল। নৌকা থেকে সে দেখতে পায় গাছের সাথে ভূতের মতো এক লোক ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে। সে ডাক দেয় কিন্তু সাড়া পায় না। কাছে গিয়ে দেখে হারু ঘোষ মৃত। গ্রামে লোক দিয়ে খবর পাঠায়। লোকজন এসে শ্মশানে নিয়ে যায়। হারু এর মেয়ে মতির জ্বর, শশী তাকে দেখতে বাড়ির পথে পা বাড়ায়। রসালো ফলের মতো রং প্রতিমার মতো নিখুত মুখ মতির।সে গ্রাম্য কুসংস্কারাচ্ছন্ন মেয়ে। তার খুব ইচ্ছা বড়লোক বাড়িতে শশীর মতো বরের সাথে তার বিয়ে হবে।যাত্রাদলের কুমুদের সাথে মতির প্রথম দেখা হয় তালপুকুরের ধারে। পরে যাত্রার মঞ্চে কুমুদ কে দেখে মতি বিস্মিত হয়। তার মনে হয় কুমুদ রক্ত মাংসে মানুষ নয় সে রাজপুত্র। গাওদিয়া ছেড়ে গেছে কুমুদ। শুধু মাত্র তাকে খুজতেই মতি শশীর সাথে কলকাতায় যায় কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় নি। হারু ঘোষের সাথে মারা যায় বাসুদেব বাড়ুজ্জের নাতি ভূতো। তার মৃত্যু হয় জামগাছের মগডাল থেকে পড়ে।শশীর বাড়ির আশ্রিতা মেয়ে ক্ষেমী আতুড় ঘরে ঢুকে নিউমোনিয়ায় মারা যায়। গোপাল হলো শশীর বাবা। গাওদিয়াতে প্রচুর জমিজমার মালিক তিনি। গ্রামে খুব শক্ত অবস্থান তার। অল্পবয়স্কা সেনদিদিকে সে বয়স্ক যাদবের কাছে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করেছে। তার নিজের মেয়ে বিন্দুকে বিয়ে দিয়েছে নন্দকে ফাঁদে ফেলে। পুত্রের সাথে তার বিরোধ। সেনদিদির সাথে তার অবৈধ সম্পর্কের কথা শোনা যায়। সূর্যবিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ যাদব পন্ডিত। তার মতে সে মারা যাবে রথের দিন।মারা গেলেন আত্নহত্যা করে । যামিনী বিখ্যাত কবিরাজ বহুদূর হতে তাকে চিকিৎসার জন্য ডাকে। শশী এ গল্পের নায়ক এটা ধরাই যায়। সে একজন কলকাতা ফেরত ডাক্তার । তার বাবা গোপাল। গাওদিয়া গ্রামের শক্ত ভিতে তার প্রতিষ্ঠা। শশীর বাবার বেশ বদনাম আছে, এমন কি সেনদিদির সাথে সম্পর্ক নিয়েও কানাঘুষা চলছে। কুমুদ শশীর বন্ধু সে গাওয়াদিয়া গ্রামে আসে যাত্রা দলের সাথে। এখানে এসে মতির সাথে তার কথা হয়। মতি কুমুদ কে আকৃষ্ট করে। কুমুদ গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। মতি কলকাতা শহরে যায় এবং ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। হারুর পুত্রবধু কুসুম হলেও তার দ্বিতীয় অস্তিত্ব হলো সে শশীর প্রেমিকা। সে শশীর মাঝে উত্তাপ খোঁজে। অনন্ত বাবুর তিন মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ে কসুম। সে হারুঘোষের পুত্র পরানের বৌ। তার সাথে শশীর দেখা হয় মতিকে দেখতে গিয়ে।কুসুমকে গায়ের লোকে পাগল মনে করে। আসলে কুসুম পাগল নয়। তার ননদ মতি কে যখন শশী দেখতে আসে, তখন তার খুব হিংসা হয়। পাগলামী করে শশীর জন্য। শশীকে ছোটবাবু সম্মোদন করে। শশীর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়লেও কুসুম তার জন্য অপেক্ষা করেছে। ভালবাসার উষ্ণ প্রবাহ একসময় কোনদিকে দাবিত হয়েছে তা পাঠকই ভালো বুঝবেন। পুতুল নাচের ইতিকথার মাঝে আক্ষরিক অর্থে পুতুল নাচের কোন কাহিনী নেই। কিন্তু মানুষ গুলো যে কি করে পুতুলের মতো নেচে বেড়ায়। আড়াল থেকে কেউ একজন কলকাটি নাড়ছেন। তার প্রকাশিত হয়।এখানে শুধু পুতুল দের কথা ব্যক্ত হয় নি, বরং মানুষ স্বত্বার মধ্য দিয়ে মানুষ ও পুতুলের দ্বৈরত নির্মান করেছেন।এই উপন্যাসের আর একটি দিক হলো, প্রতিটি চরিত্র একই সাথে দুটো জীবনযাপন করে। শশী কি কুসুম কে ভালোবাসে না? বাসে। তার চরিত্রের দুটো ভাগ -একটাতে তার আবেগ, কল্পনা। অন্য দিকে বাস্তবতা।কুসুম কে পুরোপুরি প্রশ্রয় দেয় না ঠিকই কিন্তু, সে একদিন না এলেই সে ব্যাকুল হয়।যুগ্ম অস্তিত্বের আরো উদাহারন আছে উপন্যাসে। তা ছাড়া শশীর সাথে কুসুম এর কথপকথন, অসাধান। বই শেষে ঠিক কার দিকে মন পড়ে থাকে তা বুঝা মুসকিল। উপন্যাসের যে কয়টা অংশ আছে তার প্রতিটাতে প্রধান হলো শশী। তারই অনুভবে অভিজ্ঞতায় ওগুলো দানা বেধেছে। কুসুম এর বাবা শশীকে বলেছেন, "সংসারে মানুষ চায় এক হয় আর, চিরকাল এমনি দেখে আসছি ডাক্তার বাবু। পুতল বৈ তো নই আমরা, একজন আড়ালে বসে খেলাচ্ছেন।" লেখক বোঝাতে চেয়েছেন, প্রতিটি মানুষই আত্নকাম, নিজের লোভ এবং আকাঙ্ক্ষার দ্বারাই সে পরিচালিত। এখানে মানুষ মানুষের শত্রু না হলেও বিরোধী।মানুষ এই আত্মকামনার কারনেই নিজেকে নিয়ে খেলে। যে খেলায় সে যেমন খেলনা, তেমনি খেলোয়াড়ও। মানুষ নিজেই নিজের নিয়ামক। এই নিজেকে নিয়ে খেলার ইতিহাসই পুতুল নাচের ইতিহাস। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম ঔপন্যাসিক। পুতুল নাচের ইতিকথা তার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস গুলোর মধ্যে অন্যতম।পুতুল নাচের ইতিকথা বৃহদায়তন উপন্যাস, মহাকাব্যের মতোই এর জৈবনিক বিস্তার, অসংখ্য মানুষ এবং অসংখ্য মানসিক গঠনের মানুষ এই উপন্যাসে ভিড় করেছে। এখানকার প্রতিটি মানুষ নিজেদের স্বার্থ আর নিজেদের আকাঙ্ক্ষা দ্বারা পরিচালিত। রেটিং:৪.৫ রকমারি লিংক https://www.rokomari.com/book/32490/পুতুল-নাচের-ইতিকথা
Was this review helpful to you?
or
সম্ভবত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ৩৭ টি উপন্যাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্থানটি দখল করে রেখেছে পুতুল নাচের ইতিকথা। ১৯৩৬ সালে উপন্যাসটি প্রকাশিত হবার পরে ইংরেজী (১৯৬৮),হিন্দী, কানাড়ি, চেক, সুইডিশ, গুজরাটি(১৯৫৩), তেলেগু প্রভৃতি ভাষায় রুপান্তরিত হয়। এছাড়া ১৯৪৯ সালে এটি অসিত বন্ধ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় চলচ্চিত্রে রুপায়িত হয়। বইয়ের নামঃ পুতুল নাচের ইতিকথা লেখকের নামঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘরানাঃ মনস্তাত্বিক পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৬০ প্রকাশনীঃ ঝিনুক প্রকাশনী প্রথম প্রকাশঃ ১৯৩৬ নামকরণের স্বার্থকতাঃ বিজ্ঞানমনষ্ক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন, “সত্যই তো আর পুতুল নয় মানুষ। অদৃশ্য শক্তি বা অন্য অন্য মানুষের আঙ্গুলে বাঁধা সুতোর টানে সত্যই তো মানুষ পুতুলের মত নাচে না।” কিন্তু তিনি যখন পুতুল নাচের ইতিকথা নামে উপন্যাস লিখলেন প্রশ্ন আসতেই পারে এই পুতুলের অদৃশ্য দড়ি কার হাতে? এর উত্তর পেতে হলে পাঠকদের উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র শশী এবং আবর্তনে থাকা গাওদিয়ার মানুষের জীবন সাদামাটা জীবন যাত্রার গভীরতাকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাহলে পাঠক বুঝতে পারবেন, লেখকের মতে সেই অদৃশ্য দড়ি কোন অদৃশ্য শক্তির কাছে বাঁধা পরে নেই। বাঁধা পরে আছে মানুষের নিজের হাতেই। মানুষ সব জেনেও পুতুল হয়ে থাকে, কখনো সমাজের কাছে, কখনো পরিবারের কাছে, কখনো ভালোবাসার মানুষের কাছে। যেমন কুসুম সাতটি বছর অবহেলার পুতুল হয়ে কাটিয়েছে গাওদিয়ায়। আবার নিজে থেকে সুতো টেনে গুটিয়ে চলে গেছে বাপের বাড়ি। এমন অনেক দৃষ্টান্ত লেখক মানুষের জীবন নামের পুতুল খেলাকে পাঠকের সামনে স্পষ্ট করেছেন। চারিত্রিক বিশ্লেষণঃ হিন্দু পুরাণে দৈত্যকুলের অত্যাচারী রাজা হিরণ্যকশ্যিপু এবং ঈশ্বরের আরাধ্য করূনাময় তাঁর পুত্র প্রহলাদের কাহিনী বর্ণিত আছে। পুতুল নাচের ইতিকথায় পিতা গোপাল আর পুত্র শশী সেই পুরাণের কাহিনীর সমকালীন চিত্ররূপ। গোপাল তেজারতির ব্যবসা করে, মানুষ ঠকিয়ে, সর্বনাশ করে গাওদিয়া গ্রামে নিজের ছোট অর্থের সম্রাজ্য স্থাপন করে কিন্তু শশী কলকাতা থেকে ডাক্তারী পাশ করেও নির্লোভ, পরোপকারী। গোপালের সহস্র চেষ্টাও শশীকে পুরোপুরি বিষয়ে বানাতে পারেনি। বয়সের সাথে সাথে লোভ কিংবা পরশ্রীকাতরতা নয় শশী যা অনুভব করে সেটা হলো একাকীত্ব। আর সেই একাকীত্বের বন্ধ দরজায় বন্ধু পরাণের স্ত্রী কুসুম বার বার কড়া নাড়ে। সমাজ, সংস্কার সবকিছুর ভয় ঠেলে কুসুম যখন বলে, "সইতে পারি না ছোটবাবু" সেগুলো যে শুধু কথা নয় গভীরে জমে থাকা আর্তনাদ সেটা শশী ঠিকই বুঝেছিলো। তবুও সাড়া দেয় না শশী। যখন সাড়া দিয়ে চায় তখন অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে। কুসুম নামের পূজারিণী দেবতার দেখা না পেয়ে ফিরে গেছে দুয়ার থেকে। সে আর ফিরবে না। শুরুর দিকে কুসুমের ননদ মতির মাঝেই হয়তো শেষ পর্যন্ত শশী তাঁর একাকীত্বকে নির্বাসন দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু কোথা থেকে কলকাতার বন্ধু কুমুদ এসে সব এলোমেলো করে মতিকে বিয়ে করে নিয়ে যায়। জীবন নিয়ে দুটি মানুষের ছেলেখেলার সে আরেক গল্প। তুচ্ছ মুখ থেকে বের হওয়া কয়েকটা কথার জন্য গাওদিয়ার সাধক যাদবের মৃত্যু শশীর জীবনে নতুন মোড় এনে দেয়। মৃত্যু পরবর্তী ইচ্ছা অনুযায়ী শশী যাদবের নামে হাসপাতাল স্থাপন করে নিজেই সকল দায়িত্ব পালন করে। হয়ে ওঠে দশ গ্রামের একজন। তবুও সেই অদৃশ্য কোন সুতোর টানে বার বার দূরে পাড়ি জমাতে ভেতর থেকে কে যেন বার বার তাড়া দেয়। কুসুমের গাওদিয়া ত্যাগ সেই ইচ্ছাকে যেন আরও উসকে দেয় শশীর ভেতর ভেতর। রাজা হিরণ্যকশ্যিপু ছিলেন দানব কিন্তু গোপাল এক তুচ্ছ মানব। তাই শশীর অনিশ্চিত যাত্রায় সে কঠোর থাকতে পারে না। একজন জোতদার সকল খাতকের সাথে সারা জীবন জিতে এলেও নিজের পুত্রের কাছে একজন বাবা প্রতিরাতে হারেন। কেন?? হয়তো সেই অদৃশ্য সুতোর টানে। শেষ পর্যন্ত কি শশী ওর গাওদিয়া গ্রাম, পরিবার ছেড়ে কল্পনার নির্বাসনে যেতে পেরেছিলো নাকি সেই অদৃশ্য সুতোর টানে এবার পুতুল হয়েছিলো অন্যকেউ? ব্যক্তিগত অভিমতঃ মানুষের কল্পনা আর জীবনের বাস্তবতা দুটো দুইধারায় বয়ে চলা নদী। মানুষের সব রঙিন কল্পনা ছাপিয়ে সাদাকালো একাকীত্ব যখন জীবনকে গ্রাস করে তখন মানুষ যাকে কাছে পায় তাকে ঘিরে বেঁচে থাকতে চায়। কখন যে একটা জড় পুতুলের মত জীবন অসহায় হয়ে যায় সে কথা কি কেউ জানে ? রং ধনু থেকে রঙ্গহীন হওয়া মানুষের স্বত্বা সব সময় বন্দী। কোন অদৃশ্য সুতো আর কোন দৃশ্যমান বাস্তবতা মানুষকে রোজ সকালে পুতুল বানিয়ে পৃথিবীর বুকে ঠেলে দেয় আর মানুষ সেই সেই সুতো নাচতে নাচতে কখনো ইতিরেখা স্পর্শ করে সে নিজেই জানতে পারে না। আর যখন জানে যখন অনেক বেশি দেরি হয়ে যায়।