User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
এক কথয় অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ বই ❤️
Was this review helpful to you?
or
Hard
Was this review helpful to you?
or
'দুর্গেশনন্দিনী' বাংলা সাহিত্যের এক পরম বিস্ময়ের নাম। বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম সার্থক উপন্যাস এটি। এই উপন্যাসের রচনাকাল ১৮৬২-৬৩ এবং প্রকাশকাল ১৮৬৫। এই উপন্যাস রচনার সময় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বয়স ছিল চব্বিশ থেকে ছাব্বিশ বছর। শেষোক্ত তথ্যটা কি অবাক করার মত নয়? বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের বয়স আজ প্রায় ১৫০ বছর হতে চলল কিন্তু এখনো অনেক সাহিত্যিককে নিজের জীবনের সেরা লেখাটা লিখতে আজীবন মাথাকুটে মরতে হয়। সেখানে মাত্র চব্বিশ বছর বয়সী এক যুবক কি করে এত চমৎকার একটা উপন্যাস লিখে ফেললেন যা কিনা শুধু বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক উপন্যাসই নয় বরং আজো বিবেচিত হয় বাংলা ভাষায় রচিত অন্যতম সেরা উপন্যাস হিসেবে, তা ভাবতে গিয়ে শুধু গলদঘর্মই হতে হয়। সত্যি, বঙ্কিমচন্দ্র আসলেই একজন জিনিয়াস! 'দুর্গেশনন্দিনী' উপন্যাসের পটভূমি ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে উড়িষ্যার অধিকারকে কেন্দ্র করে মুঘল ও পাঠানের সংঘর্ষ। তারমানে যে উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল, সেটিরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল ইতিহাসেরই উর্বর জমিনে! দিল্লীশ্বরের সেনাপতি মানসিংহের পুত্র জগৎসিংহ মাত্র ৫ হাজার সৈন্য নিয়ে বাঙলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছিল পাঠানদের ওপর। এক পর্যায়ে মান্দারণ যাত্রাকালে ঝড়ের কবলে পড়ে এক মন্দিরে আশ্রয় নেয় সে। সেখানেই সে দেখা পায় দুই রমণীর, একজন যুবতি আর একজন সদ্য যৌবনা তরুণী। তরুণীর প্রেমে পড়ে যায় জগৎসিংহ। কিন্তু সেবারে তরুণী ও তার সখির পরিচয় জানতে ব্যর্থ হয় জগৎসিংহ। পরেরবার তরুণীর সেই সখি বিমলার কাছ থেকে সে জানতে পারে সেই তরুণী ছিল মান্দারণের দুর্গাধিপতি বীরেন্দ্র সিংহের কন্যা তিলোত্তমা। বিমলার সাথে জগৎসিংহ চলে তিলোত্তমার সাথে দেখা করতে। কিন্তু জগৎসিংহ সেখানে থাকাকালীনই, পাঠানরা দখল করে বীরেন্দ্রসিংহের দুর্গ। সকলের সাথে জগৎসিংহও বন্দি হয়। বন্দি অবস্থায় পাঠান সেনাপতি কতলু খাঁ'র কন্যা আয়েষা প্রেমে পড়ে জগৎসিংহের। তারপর কি হবে? জগৎসিংহ কি মুক্ত হতে পারবে? বিমলা, তিলোত্তমা, বীরেন্দ্রসিংহেরই বা কি হবে? আর শেষ পর্যন্ত জগৎসিংহের হৃদয় জয় করবে কে? আর বিজিতের কি পরিণতি হবে? এমন নাটকীয়ভাবেই আবর্তিত হয়েছে 'দুর্গেশনন্দিনী' উপন্যাসের কাহিনী। 'দুর্গেশনন্দিনী' পাঠের অভিজ্ঞতা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। বঙ্কিমচন্দ্রের লেখার ভাষা যেমন বেশ কঠিন, তেমনি লেখার ভাবও অনেক কঠিন। তাই তাঁর লেখা পড়তে আক্ষরিক অর্থে দাঁত ভাঙার জোগাড় না হলেও, বাংলা ভাষায় যাদের বেশ ভালো দখল আছে তাদেরও কখনো কখনো একটু হলেও হোঁচট খেতে হয়। কিন্তু তারপরও বঙ্কিমচন্দ্রের লেখায় কেমন যেন একটা কাব্যময়তা আছে যা পাঠকের মনে মাদকতার সৃষ্টি করতে বাধ্য। তাই একবার বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা পড়তে শুরু করলে যত কষ্টই হোক, শেষ না করে ওঠা অসম্ভব। পাশাপাশি 'দুর্গেশনন্দিনী' উপন্যাসের কাহিনীও এতই আকর্ষনীয় ও চির তরুণ যে, খুব সহজেই এই উপন্যাস পড়তে পড়তে ধরতে পারা যায় সেই ষোড়শ শতাব্দীর সময়কার আবহকে। আর বেশি কথা খরচ করব না এই উপন্যাস নিয়ে। কিন্তু একটা কথা না স্বীকার করে উপায় নেই যে লেখক উপন্যাসের প্রায় প্রতিটি চরিত্রকেই সমান মমতার সাথে নির্মাণ করেছেন তাই একটা পর্যায়ে এসে আমার কাছে প্রতিটি চরিত্রকেই অনেক বেশি আপন বলে মনে হয়েছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে জগৎসিংহ আর তিলোত্তমা অপেক্ষা বিমলা আর আয়েষা চরিত্র দুটি অধিক আকৃষ্ট করেছে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে যারা স্রেফ একটা প্রেমকাহিনীর চেয়েও অনেক বেশি কিছু পেতে চান, তারা অবশ্যই 'দুর্গেশনন্দিনী' উপন্যাসটি পড়ে দেখবেন।