User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইটি তথ্যে ঠাসা। নানা জাতের প্রাণীর নাম (বিশেষ করে পাখি), জায়গার নাম, পথের বর্ণনা। এত তথ্য মনে থাকেনা। বিশেষ করে পাখিগুলো চোখে না দেখে শুধু নাম পড়ে লাভ নেই। কিছু গুরুত্বপূর্ণ “কী পয়েন্ট” আছে। সেগুলো উল্লেখ করে দিচ্ছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণীবৈচিত্র্য এবং তার ওপর পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আঘাতগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। কাসালংয়ের অজানা অরণ্যে : ২০০৭ সালে কাসালংয়ের অভয়ারণ্যে বাঘ, চিতাবাঘ, বন্য কুকুর থাকার উল্লেখ। (পৃষ্ঠা ২২) ১৯৭৪ সালে মান্দিছড়ায় বাঘ শিকার করা হয়েছিলো। (২৩) ১০ বছর আগে (২০০১) সাজেকে বিষটোপ দিয়ে বাঘ হত্যা এবং ৫৫ বছর আগে (১৯৫৬) সাজেক পাহাড়ের নীচে গন্ডার শিকার। (২৫) পাহাড়িরা রাতে টর্চ নিয়ে গাদাবন্দুকে চাল ভরে নাক্কন/হোয়াইট চিকড প্যার্টিজ শিকার করে। (২৮) ২০০৯ সালে কাসালংয়ের লালু কালুতে বাঘ দেখেছিলো একজন। (৩১) ভুলংতলির দিকে ছড়ার ধারে বিন্টুরং দর্শন। (৩৬) ২০২১ এর জুনে বাঘের কাসালং নদী পার হওয়া এবং ভুলংতলি পাহাড়ে গৌর (ইন্ডিয়ান বাইসন) থাকার উল্লেখ। (৪২) ওই দেখা যায় রাইংক্ষিয়ং : কেওক্রাডংয়ের নিকটবর্তী আনন্দপাড়া নামক মারমা গ্রামে মায়া হরিণের চামড়া শুকাতে দিয়েছে। (৯৪) সর্বোচ্চ পাহাড়চূড়া : বগা লেকের পার্শ্ববর্তী গ্রামপ্রধানের ছেলে সদ্য শিকার করা মায়া হরিণের চামড়া বিক্রি করতে এসেছে লেখকদের কাছে। এছাড়া বন্য শূকর শিকারের উল্লেখ। (১০৫) ম্রো গ্রাম বোর্ডিংপাড়ায় কোনো এক ঘরে সদ্য শিকার করে খাওয়া একটি বন্য শূকরের খুলি ঘিরে কয়েকজন বসে বাঁশি বাজাচ্ছে। (১১২) গয়াল ও গরুর সংকর টংগরু দর্শন। (১১৮) লেখক বাকলাইপাড়ায় দুটো কালো পাহাড়ি কাছিমের (এশিয়ান জায়ান্ট টরটয়েস) খোলস দেখলেন, যেগুলোর মাংস খাওয়া হয়েছে। (১২০) জুম চাষের কারণে নেপিউপাড়ায় প্রাচীন সমৃদ্ধ একটি বন জ্বলেপুড়ে ধ্বংস। (১২১) কয়েকটি ম্রো ছেলেমেয়ে দড়িতে বাঁধা একটি বিপন্ন প্রজাতির হলুদ পাহাড়ি কাছিম - ইলঙ্গেটেড টরটয়েস নিয়ে খেলা করছে। কমবয়সী কাছিম দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে নির্দিষ্ট দিনে ভক্ষণ করা হয়। (১২৩) জিনাপাড়ার গ্রামপ্রধান তাঁর শিকার করা বনছাগলের শিং দেখালেন। (১২৫) বাদুড়ের গুহা : পাহাড়িদের বাদুড় ধরা ও বাদুড়ের মাংস খাওয়ার বর্ণনা। (১২৯) গোরখোন্দক বা হগ ব্যাজার দেখার উল্লেখ। (১৩৬) তিনমাথা : ২০১১ সালে থাইক্যাংপাড়ার একটি ঘরে মাংসের জন্য শিকার করা লজ্জাবতী বানর/স্লো লরিসের চামড়া দর্শন। (১৪১) গৃহকর্তা আজ একটি মায়া হরিণ শিকার করেছেন। (১৪২) শেরকরপাড়ার লালসিয়াম বম তার সংগ্রহে থাকা বাঘের চর্বি ও ভাল্লুকের চারটি থাবা দেখালো। বাঘটি ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে তাজিংডং পাহাড়ের পূর্ব দিকের উপত্যকায় ফাঁদ পেতে শিকার করা হয়েছিলো। এরপর শিকারি বাঘের চামড়া, হাড়গোড় আর দাঁত ২০ হাজার টাকায় মিয়ানমারের পার্টির কাছে বিক্রি করেছে। সেই টাকা দিয়ে শিকারি তার ঘরে সোলার প্যানেল লাগিয়েছে। মিয়ানমারের পার্টি নাকি ওগুলো আরও বেশি দামে চীনের পার্টির কাছে বিক্রি করবে। তাদের টার্গেট হলো বাঘ ও চিতাবাঘের চামড়া, হাড় ও দাঁত, ভালুকের পিত্তথলি এবং বনরুই ও ভোঁদড়ের চামড়া। যে ভালুকের থাবা সংগৃহীত আছে, সেটি লালসিয়াম নিজেই সম্প্রতি বন্দুক দিয়ে শিকার করেছে। জুমে যখন ভুট্টা চাষ হয়, তখন রাতের বেলা ভালুক হানা দেয় ভুট্টা খাওয়ার জন্য। আর শিকারি তক্কে তক্কে থাকে ভালুক শিকার করার জন্য। (১৪২-১৪৩) কিরস তং যেন হারানো পৃথিবী : বুচিংপাড়ার গ্রামপ্রধান ২০০৯ সালে মিয়ানমার সীমান্তের দিকে একটি বাঘ দেখেছিলেন। (১৪৫) খ্যামচংপাড়ার গ্রামপ্রধানের ছেলে লেখককে রাজধনেশের মাথা আর তিনটি মহাবিপন্ন আরাকান ফরেস্ট টার্টলের খোলস দেখালো যা তারা জুমের আগুন দেয়ার সময় শিকার করে। (১৫২) কিরস তং যাওয়ার পথে নরম মাটিতে চিতাবাঘের পায়ের ছাপ। (১৫৫) কিরস তংয়ের বন পরিষ্কার করে জুম জমির বিস্তার। বনের ক্যানসার। (১৬১) সাঙ্গু মাতামুহুরির দূর্গম প্রান্তে : তিন্দুর পরে এক পাহাড়ে বনছাগল, উল্লুক ও মায়াহরিণ থাকার প্রমাণ। (১৬৬) গ্রামপ্রধান লেখকদের আপ্যায়নের জন্য ফাঁদ পেতে ধরা মথুরা নিয়ে এলো যা লেখকরা বিনীতভাবে ফিরিয়ে দেন। (১৬৬) দুজন পাহাড়ি লোক খাওয়ার জন্য একটি বিরল গোলবাহার অজগর (রেটিকুলেটেড পাইথন) শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। (১৬৯) চন্দইপাড়ার ম্রো ঘরগুলোতে গুঁজে রাখা হয়েছে রাজধনেশ ও কাওধনেশের ঠোঁট, বনছাগল, মায়াহরিণ ও সাম্বারের শিং, বানর, শূকর ও গুঁইসাপের মাথার খুলি। এরা ফাঁদ দিয়ে ধনেশ ধরে। (১৭০) ২০০৫ সালে লিক্রি পাহাড়ের গহীন বনে বাঘ, চিতাবাঘ, ভালুক ও গয়াল আছে। গ্রামপ্রধান নিজেই বাঘ ও কালো চিতাবাঘের মুখোমুখি হয়েছেন। (১৭০-১৭১) ২০২০ সালে পাহাড়ভাঙায় পাহাড়িদের আক্রমণে গয়ালের মৃত্যুর খবর। (১৭৮) আলীকদম আসার পথে স্থানীয় মানুষের শিকার করা গেছোবাঘের শ্বদন্ত দর্শন। (১৮২-১৮৩) এতসব উদাহরণ থেকে কী ডিসিশনে আসা যায় সেটা পাঠক ভেবে নিবেন। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হলো পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসে পাহাড়িদের অবশ্যই দায় আছে। সেই সাথে পাহাড়ের ক্যান্সার জুমের আগুনপোড়া তো আছেই। লেখার ফাঁকে ফাঁকে পাহাড়ের অশান্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কথাও এসেছে। দেউ হাঁস, রিথড হর্ণবিল আর নর্থ ইস্টার্ন ওয়াটার স্কিংক - এই প্রাণীগুলো নিয়ে লেখকের উৎসাহও চোখ এড়ানোর নয়। পুরো বইয়ের অজস্র পাখি আর জায়গার নাম মনে রাখা অসম্ভব। টুকে রাখা স্পেশাল ঘটনাগুলোই আপাতত মনে রাখি। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাণবৈচিত্র্যের সন্ধানে - মনিরুল খান। রেটিং ৪/৫।