User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
❝আমি আজ যা করেছি, কাল সেটা করবেন মামুলী সার্জনরা।❞ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাফল্যের নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছে অহরহই। কিন্তু এতোটা পথ অতিক্রম করতে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের কতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে বা পথচলা কেমন ছিল, আমরা কতটুকুই বা জানি? ধরুন, সম্পূর্ণ আনকোরা নতুন একটা অস্ত্রোপচার বা গবেষণা মানবদেহে হবে যেটা উম্মুক্ত করে দিবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দ্বার কিন্তু শুধুমাত্র তখনই সম্ভব যখন সেটা সফল হবে এবং সে মানবদেহ আপনার! নিজের সম্পূর্ণ সুস্থ দেহে অন্যকে কি অনুমতি দিবেন এমন গবেষণার? কিন্তু যদি সেটা হয় অন্য কারো দেহ তখন? নতুন কোনো ওষুধ বা অস্ত্রোপচার বা গবেষণা যখন কারো শরীরে প্রথমবার করা হয় তখন সেই ব্যক্তির মনের অবস্থা কেমন হয়, কী চলে মনে, প্রশ্ন জাগে কিনা জানতে ইচ্ছে হয় না? লোকচক্ষুর আড়ালে বছরের পর বছর অমানবিক গবেষণা চলছে এবং হঠাৎ ফাঁস হয়ে গেল! কিন্তু দেখা গেল ১০ জনের জীবনের বদলে ১০ হাজার জনের জীবন বেঁচে গেল তখন কি গবেষককে মাফ করে দেওয়া যায়? বুয়েনাস-আইরেসে রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে প্রচলিত একটা বিশ্বাস ❝দরিয়ার দানো❞। অনেকের দাবী তারা দানোকে দেখেছে কিন্তু প্রমাণ নেই। সামুদ্রিক প্রাণীদের দোসর দরিয়ার দানো; জালমুক্ত করে মাছদের ছেড়ে দেয় পানিতে, ডলফিনদের জীবন বাঁচায়, মাঝেমধ্যে তো ডুবুরি ও জেলেদেরও রক্ষা করে। প্রতিদিনের মতো মুক্তা শিকারে নেমেছে একদল ডুবুরি। হঠাৎ পানিতে তোলপাড় শুরু হয়, রক্ত লাল হয়ে ওঠে পানি, জান বাঁচিয়ে নৌকায় ওঠে ডুবুরি কিন্তু ভয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে! ধীরস্থির হলে ডুবুরি যে গল্প শোনায় তাতেই শ্রোতারা দ্বিধায় পড়ে যায়। ডুবুরির ভাষ্যমতে দরিয়ার দানো বাঁচিয়েছে তাকে হাঙরের হাত থেকে! আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে দানোর কথা। শুরু হয় অভিযান, লেখালেখি, গবেষণা কিন্তু দানো যেন বেমালুম উবে গেছে! অন্য দিকে ❝জেলি মাছ❞ জাহাজের ক্যাপ্টেন পেদ্রো জুরিতা মনে মনে ফন্দি আঁটতে থাকে দানোকে বন্দী করার! বেশ কিছু দিন তুমুল খোঁজাখুঁজি করেও দানোর দেখা পায় না। সৌভাগ্যক্রমে একবার ধরতে পারলেও হাত ফসকে বেড়িয়ে যায়। দানোর খোঁজে সাদা পাথরের দেওয়ালে ঘেরা কেল্লার সামনে এসে উপস্থিত হয় জুরিতা ও বালতাজার। কেল্লার মালিক ডাক্তার সালভাতরকে ঈশ্বর হিসেবে মানে রেড ইন্ডিয়ানরা। যেকোনো অসুখ বা ক্ষত সারিয়ে তোলার ঐশ্বরিক ক্ষমতা রয়েছে তার! জুরিতার মতে দানোর সাথে সালভাতর কোনো যোগসূত্র রয়েছে। কিন্তু কী? ১৯২৮ সালে লেখা একটা সায়েন্স ফিকশন কিন্তু বইয়ে এমন কিছু চিকিৎসা পদ্ধতির কথা উল্লেখ আছে যা বর্তমানে আর ফিকশন নেই। দারুণ প্লট সাথে আকর্ষনীয় উপস্থাপনা, পড়ার সময় যেন হারিয়ে গেছিলাম অতল সমুদ্রে এক উভচর মানবের সাথে! সায়েন্স ফিকশন, মানবিক বোধ, যুক্তিতর্ক, প্রেম, ষড়যন্ত্রের মিশেলে অদ্ভুত সুন্দর একটা বই। ক্রিস্টো সালভাতরের কাছে কাজ শুরু করা দিয়েই মূলত আসল গল্পের শুরু। বাগানে অদ্ভুত ফুল, প্রাণীর বর্ণনা যেভাবে করা হয়েছে মনে হচ্ছিল অদ্ভুতদর্শন জীবগুলোকে মনের দৃশ্যপটে দেখতে পাচ্ছি! তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সমুদ্ররাজ্যের বর্ণনা। সমুদ্রের তলদেশের জীব, উদ্ভিদ, জগৎ মোহগ্রস্ত করে তুলেছিল। লোভ হচ্ছিল, ইশ যদি একবার ইকথিয়ান্ডরের মতো আমিও সমুদ্রের অপরুপ সৌন্দর্য্য দেখতে পারতাম...!!! গুত্তিয়েরে ও ইকথিয়ান্ডরের প্রণয়ে ইকথিয়ান্ডরের একাকিত্বই বেশি ফুটে উঠছিল। জাহাজ থেকে ইকথিয়ান্ডর যখন মুক্তি পায় তখন ভেবেছিলাম প্রায় শেষেই চলে এসেছি কিন্তু কোর্টের ঘটনাগুলো... বিশেষ করে আসামীর জবানবন্দি অংশটা সেরা। যুক্তিতর্ক, মানবিক বোধ, ধর্ম নিয়ে দারুণ এক নিরব যুদ্ধের খেলা! ❝যে কোনো সার্জনের মতোই ব্যর্থতাও সইতে হয়েছে তাঁকে। নৈপুণ্য অর্জনের আগে তাঁর ছুরির তলে, তার নিজস্ব ত্রুটির দরুন মানব জীবন নষ্ট হয়েছে কম নয়। কিন্তু তা নিয়ে তিনি কখনো ভারাক্রান্ত বোধ করেননি। কয়েক ডজন মরেছে, কিন্তু বেঁচে গিয়েছে কয়েক হাজার। এই অঙ্কটা তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছে।❞ সালভাতরকে আসলেও উন্মাদ বলা যায় না। স্বার্থপরও কি বলা যায় বা মানবিক বোধ বিবর্জিত? ইকথিয়ান্ডরকে আসলেই ভালোবেসেছে ডাক্তার। জটিল একটা চরিত্র। বালতাজারের জন্য খারাপই লেগেছে। শুরুতে চরিত্রটাকে যেভাবে দেখানো হয়েছে কিন্তু ছেলের খোঁজ পাওয়ার পর যেভাবে বদলে গেছে, সংগ্রাম করেছে... পরিণতি কষ্টদায়ক! অলসেনকে যেমন ভালো লেগেছে জুরিতাকে ততই বিরক্তিকর। লেখক যেভাবে ইতি টেনেছেন ভালো লেগেছে। কয়েকটা লাইনে অনুবাদ কিছুটা গোলমেলে মনে হয়েছে। এছাড়া সহজ ও সাবলীল বলা যায়। বই: উভচর মানুষ লেখক: আলেক্সান্দার বেলায়েভ অনুবাদক: ননী ভৌমিক জনরা: সায়েন্স ফিকশন প্রকাশনী: নিয়ন পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৯২ প্রকাশকাল: ১ম সংস্করণ, ২০২৪