Our User Product Reviews

ভালো লেগেছে।

সুমন্ত আসলামের কিশোর উপন্যাস 'রোল নাম্বার ১৩'। উপন্যাসে অনতু নামের বিচিত্র চরিত্রের একটা ছেলে আছে। রোল নাম্বার তের তারই। ছেলেটা বেশ মজার। মাথায় অনেক বুদ্ধি। যে কারো সাথে, এমনকি বড়দের সাথে আলাপচারিতায়ও কথার পিঠে কথা বলার অসামান্য নৈপুণ্যতায় সে সবাইকে চমকে দেয়। তার চিন্তাধারা যে কতটা বৈচিত্র্যপূর্ণ, তা তার কথার মাধ্যমে বোঝা যায়। অন্যরা যা কখনো ভাবেও না, সেসব ব্যাপারেই অনতু এমন একেকটা কথা বলে বসে যা অন্যদের শুধু হাসায়ই না, ভাবতে বাধ্য করে এবং মেনে নিতেও বাধ্য করে যে অনতুর কথা আসলেই ঠিক। এভাবেই সকলে অনতুর ব্যবহারে চমৎকৃত হয়। মুগ্ধও হয়। কিন্তু অনতুর চরিত্রে কিছু নেতিবাচক এবং কিছু ধোঁয়াশা ব্যাপার স্যাপারও আছে। উপন্যাসের কাহিনী যেদিন থেকে শুরু, সেদিনই দেখা গেল অনতু কোন এক কারণে হেডস্যার কর্তৃক শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছে। পরে জানা গেল, অনতু নাকি সিগারেট খেতে গিয়ে ধরা খেয়েছে! এ ব্যাপারে হেডস্যার পরবর্তিতে তাকে আরও বড় শাস্তি দিতে উদ্যত হন। কিন্তু একইসাথে অনতুর জন্য হেডস্যারের চোখটাও কেমন যেন ছলছল করে ওঠে। সবাই বোঝে, অনতুর জন্য কোন কারণে স্যারের মনে অসীম মমত্ববোধ লুকিয়ে আছে। অনতুর বন্ধুরা কেউ তার কারণ জানে না। অপরদিকে, অনতুদের যে বন্ধুমহল, ক্লাসে তার একটা অপনেন্ট পার্টিও আছে। সেই অপনেন্ট পার্টির সাথে অনতুদের সবসময় ঝগড়াঝাটি লেগে থাকে। অনতুরা একদিন জানতে পারে, রাত্তিরবেলায় তাদের অপনেন্ট পার্টিরা কোথায় যেন যায়। কোথায় যায় ওরা? জানতে অধীর হয়ে ওঠে এবং জানার জন্য নিজস্ব মিশনে নামে অনতুরা। ওদিকে, এমন সময় অনতুদের স্কুলে আসে নতুন এক শিক্ষক। অনতুর ব্যবহারে সেই শিক্ষকও মুগ্ধ হন। কিন্তু অনতুরা দেখতে পেল, মাঝরাতে শুধু তাদের ক্লাসের প্রতিপক্ষরাই নয়, নতুন স্যারও স্কুলময় ঘুরে বেড়ান। কিন্তু কেন? এসব রহস্য তখনো রহস্যই রয়ে গেছে। এরই মধ্যে কাহিনী জমে ওঠে যখন স্কুলে একটা গরিব প্রতিবন্ধী শিশু ক্ষুধার তাড়নায় ঢুকে পড়ে আর সকলে তাকে চোর সাব্যস্ত করলে অনতু তাতে কষ্ট পায় এবং নিজে উদ্যোগি হয়ে ছেলেটাকে বাঁচায়। বোঝা যায়, গরিব দুঃখীদের জন্য দুষ্টু অন্তুর মনে অনেক দয়া। কিন্তু সেটারই বা কি কারণ, কেউ জানে না। বন্ধুদের জানাবার সুযোগ না দিয়ে অনতু প্যারেন্টস ডে'র দিন পালিয়ে গেল। অনতুর বন্ধুদের কাছে অনতুর রহস্য অজানাই রয়ে গেল। তবে উপন্যাসের শেষে বিশেষ কিছু ঘটনার অবতারণা ঘটল এবং অনতুর বন্ধুরা এমন কয়েকটি সত্যের সন্ধান পেল, যাতে ক্লাসের প্রতিপক্ষদের সাথে যেমন তাদের বিবাদ মিটে গিয়ে বন্ধুত্ব তৈরি হল, তেমনি অনতুকেও আবার ফিরে পেল তারা। অনতুর জীবনের অজানা কাহিনী অনতুর বন্ধুদের কাছে খুলে বলে এক নতুন অনতুকে তার বন্ধুদের সামনে উপস্থাপন করল নতুন সেই স্যার। সবমিলিয়ে কিশোরদের উপযোগি দারুণ জমজমাট এবং মেদহীন একটা উপন্যাস এই 'রোল নাম্বার ১৩' যা পড়ে কিশোরেরা শুধু বিনোদিতই হবে না বরং উপন্যাস পড়াকালীন কিছু বার্তাও তাদের কাছে পৌঁছে যাবে। উপন্যাসের চরিত্ররা কিশোর পাঠকের অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচন করবে। অনেক কিছু শিখতেও পারবে কিশোর পাঠকরা। আর যারা বয়সে একটু বড়, উপন্যাস পড়তে পড়তে তাদের মনে পড়ে যাবে স্কুল জীবনে তাদের নিজেদের সাথে ঘটা নানা ঘটনার কথাও। পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে হয়ে যাওয়া যাবে নস্টালজিক।