User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
'জ্যোৎস্নাজলে দন্ত্যন রুহমান' পড়তে শুরু করার আগেই শুনেছিলাম দন্ত্যন রুহমানের সাথে হুমায়ুন আহমেদের অমর সৃষ্টি 'হিমু'র মিল আছে। তখন কথাটা বিশ্বাস করি নাই। ভেবেছি এগুলো বুঝি অতি উৎসাহী কিছু পাঠকের ফ্যান্টাসিজম যে তারা মিছেমিছি একটা চরিত্রের ভিতর কোন কারণ ছাড়াই অন্য একটা বিখ্যাত চরিত্রের প্রভাব খুঁজে পাচ্ছে। কিন্তু না। আলোচ্য বইটির দশ পৃষ্ঠার মত পড়েই আমি বুঝলাম, যারা বলেছিল যে দন্ত্যন রুহমানের সাথে হিমুর মিল আছে তারা একেবারে সঠিক কথা বলেছিল। এখন বিবেচ্য বিষয় যেটি তা হল, প্রিয় চরিত্রটিকে নতুন একটি চরিত্রের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়ার বিষয়টিতে কি আমার উচ্ছ্বসিত হওয়া উচিৎ? না, তা একেবারেই উচিৎ না। হিমু এমনই এক রহস্যময় চরিত্র যাকে উপন্যাসের পাতায় ফুটিয়ে তোলার মত যোগ্যতা একমাত্র হুমায়ুন আহমেদেরই ছিল। অন্য কেউ সেই কাজটা করলে তার সেই কাজ যে শুধু ব্যর্থতায়ই পর্যবসিত হবে তা না। সে যে অখাদ্য ও অপাচ্য একটা লেখা তৈরি করবে হিমুর কাহিনিগুলোর আদলে, সে জন্য তার বড় ধরণের শাস্তি হওয়া উচিৎ। আক্ষরিক অর্থে হয়ত সেই কাজটা করা সম্ভব হবে না। কারণ প্রথমত এই বইটি লিখেছেন সুমন্ত আসলাম যিনি বর্তমান প্রজন্মের কাছে মোটামুটি নামজাদা একজন লেখক। দ্বিতীয়ত, এই বইটি প্রকাশ করেছে পার্ল পাবলিকেশন্সের মত একটা স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা আর তৃতীয়ত, সুমন্ত আসলাম সরাসরি দন্ত্যন রুহমানকে হিমুর সাথে তুলনা করেন নাই। যাইহোক, সরাসরি লেখক দন্ত্যন রুহমানকে হিমুর সাথে তুলনা করতে চান বা না চান সে বিষয়ে আর কথা বাড়াব না। মূল ব্যাপারটি হল, লেখক যেভাবে তার নিজের লেখায় দন্ত্যন রুহমানকে চিত্রায়িত করতে চেয়েছেন তা কতটা মানসম্মত হয়েছে বা আদৌ কি মানসম্মত হয়েছে? আমার কাছে মনে হয়, দন্ত্যন রুহমান চরিত্রটি এবং এই উপন্যাসটি, দুটোই total disaster! আর কিছু আসলে বলাও সম্ভব না। তবু তিনটা পয়েন্ট উল্লেখ করতে চাই। ১/ সুমন্ত আসলাম একজন সুলেখক। তিনি একটি দৃশ্যকে সুন্দরভাবে ব্যক্ত করতে পারেন। কিন্তু আলাদা আলাদা করে একেকটা দৃশ্য তৈরি করাই তো যথেষ্ট না যখন আপনি একটা উপন্যাস রচনা করছেন। এই উপন্যাসের প্রতিটা দৃশ্যেই নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে কিন্তু বড় ক্যানভাসে একটি উপন্যাসের অংশ হিসেবে যখন আপনি সেগুলোকে কল্পনা করবেন, তখন সেগুলোকে বড্ড দুর্বল মনে হতে পারে আপনার কাছে। এর কারণ হল, কয়েকটি সুন্দর ও সুখপাঠ্য দৃশ্যকে এক সুতায় বেধে উপন্যাসের উপযোগি একটি বাস্তবসম্মত ও বোধগম্য কাহিনি সৃষ্টি করতে সুমন্ত আসলাম ব্যর্থ। ২/ আমি জানি না সুমস্ত আসলামের প্রতিটি উপন্যাসের চরিত্ররা এত বেশি এবং এত বড় বড় কথা বলে কেন। বেশি কথা বলতে বাচালতাকেই নির্দেশ করছি। আর বড় বড় কথা বলতে প্রতিটা সংলাপের দীর্ঘতার কথা বলছি। বাস্তব জীবনে কি আমরা এক নিঃশ্বাসে দশ বারোটি বাক্য বলি কথা বলার সময়? শতকরা ৯৯ জন মানুষই যেকোন আলাপচারিতায় বড়জোর ৩টির বেশি বাক্য বলে না। তারপরও দুজন বা একাধিক ব্যক্তির কথার পিঠে কথা বলার মাধ্যমে একটি সুন্দর দৃশ্য তৈরি হয় এবং একটি দৃশ্যে প্রতিটি চরিত্রের প্রয়োজনমত কন্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে দৃশ্যটি প্রাণবন্ত ও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু এই সুমন্ত আসলামের অন্যান্য উপন্যাসের মত এই উপন্যাসেও দেখেছি, একটি দৃশ্যের প্রয়োজনে যে কথাগুলোকে নিয়ে আসার প্রয়োজন, রাজনীতিবিদদের বক্তৃতার মত করে লেখক একবারেই সেই সব কথা নির্দিষ্ট কোন চরিত্রের মুখ দিয়ে বলাচ্ছেন এবং বিপরীতজন তা শুধু শুনেই যাচ্ছে। কোন ইন্টারফেয়ার করছে না। ফলে দৃশ্যগুলো যেমন একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে ও ঝুলে পড়ছে, তেমনি বাস্তবের সাথে সামঞ্জস্যতাও হারাচ্ছে। এই ব্যাপারটা অন্য উপন্যাসের চেয়ে লেখকের 'জ্যোৎস্নাজলে দন্ত্যন রুহমান' উপন্যাসে একটু বেশি প্রকটতার সাথেই ধরা পড়েছে আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিতে। ৩/ এই উপন্যাসে লেখক প্রচুর চরিত্র নিয়ে এসেছেন। কিন্তু মুখ্য চরিত্র দন্ত্যন রুহমান বাদে আর কোন চরিত্রকেই ঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন নাই লেখক। এমনকি সেরকম কোন চেষ্টাও করেন নাই। পাশাপাশি কিছু চরিত্র ও তাদের কাজকর্ম একেবারেই হাস্যকর ও অবাস্তব বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। কথাটা খারাপ শোনালেও একটা প্রশ্ন না করে পারছি না, যে উপন্যাসের কোন কাহিনীই নেই সেই উপন্যাসে খামোকা এতগুলো চরিত্র এনে জগাখিচুড়ি পাকাবার কি কোন দরকার ছিল? আর কথা বাড়াব না। আসলে কোন বাস্তবসম্মত কাহিনীর প্রত্যাশা না করে, কাহিনীর কোন পরিণতি আশা না করে, স্রেফ প্রতিটা দৃশ্যকে একেকটি একক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করে যদি পাঠক শুধু সেগুলোকেই উপভোগ করতে চান তাহলে স্বীকার করতেই হবে যে 'জ্যোৎস্নাজলে দন্ত্যন রুহমান' উপন্যাসটি সেইসব পাঠকের কাছে বেশ ভালোই লাগবে।