User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
A great book
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ এক উপন্যাস। কালের পুনর্নির্মাণ।
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাসের গলিতে নিয়ে যাবে
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
আমার পড়া প্রিয় কয়েকটি বইয়ের একটি। শব্দচয়ন ও ভাষা শৈলী এতো চমৎকার যে; না পড়লে বুঝতেই পারতাম না, এতো মনোমুগ্ধকর বইও আমাদের সাহিত্যিকরা রেখ গেছেন!
Was this review helpful to you?
or
good service
Was this review helpful to you?
or
highly recommended
Was this review helpful to you?
or
খুবই চমৎকার একটি ইতিহাস ভিত্তিক উপন্যাস
Was this review helpful to you?
or
১৩ শতকের বাংলার ভাগিরথী নদীর পাড়ের মানুষের আখ্যান। ইতিহাসকে এমনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যেন এই বইয়ে আপনি সেই সময়ে ঘুরে আসতে পারবেন।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটি উপন্যাস
Was this review helpful to you?
or
ভালো
Was this review helpful to you?
or
এক কথায় অসাধারণ একটি উপন্যাস। পড়ার সময় মনে হচ্ছিল যেন প্রাচীন বাংলার পথ-প্রান্তরে হেঁটে চলেছি, যেন ঘটনা প্রবাহগুলো চোখের সামনে ঘটছে। কোন লেখককে অমরত্ব দিতে একটা বই যে যথেষ্ট-এটি তার জলন্ত উদাহরণ। পড়ার শেষে মনে হলো বইটা আরো কেন বড় হলো না!
Was this review helpful to you?
or
চমৎকার একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
সুন্দর
Was this review helpful to you?
or
পাঠ্য প্রতিক্রিয়া : প্রথমে লেখক সম্পর্কে বলি- শওকত আলী ছিলেন একজন বাঙালি কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও শিক্ষক। তিনি বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে গল্প ও উপন্যাস লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৯০ সালে সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। এই প্রথম তার লিখা পড়লাম, পড়ার শুরুতে সাধু ভাষা বুঝতে একটু সমস্যা হচ্ছিলো কিন্তু কয়েক পৃষ্ঠা পড়ার পর সমস্যা কেটে গিয়েছে। বাংলাদেশী সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসেবে ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’সমাদৃত। ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ উপন্যাস এর নামই উপন্যাসের প্রতিচ্ছবি। প্রদোষ অর্থ দুঃসময়, প্রাকৃতজন অর্থ অন্ত্যজ সাধারণ মানুষ অর্থাৎ সাধারণ মানুষ এর দুঃসময়। বাংলায় মুসলমানের আগমন ঘটে আরও প্রায় ৮০০ বছর পূর্বে। তৎকালীন বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের সাধারণ মানুষদের জন্য সময়টা ছিল প্রদোষকালের মতোই দ্বিধা-দ্বন্দ্বময়। সেন রাজাদের শাসনের অবসানকালে জনজীবনে একটা অচলাবস্থা নেমে এসেছিল। সমাজের সবকিছু বর্ণপ্রথার কট্টোর আর অমানবিক নিয়মে পরিচালিত ছিল, অব্রাহ্মণ শ্রেণির জীবনে সম্মান আর মূল্য, উন্নতির অথবা সুসম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কোনোটাই ছিল না। এর ওপর জীবনের নিত্যসঙ্গি ছিল সামন্তপ্রভুদের স্বেচ্ছাচার আর লুঠ। সনাতন ধর্ম আর সন্সকারের আবদ্ধে বিজ্ঞান, বুদ্ধিচর্চা, স্বাধীনচিন্তা, শিল্প, সব কিছুই স্তব্ধ হয়ে গেছিল, এই অবস্থায় আরেকটি নতুন বিপদের উদয় হয়, তুর্কি সেনাদের বাংলায় আবির্ভাব আর তাদের প্রায়সই লুঠ আর রক্তপাতের অভিজান। উপন্যাসটি বাংলার ইতিহাসের এই চরম সংকটজনক মুহূর্তের, যখন মানুষ, বিশেষত প্রাকৃতজনেরা নিজেদের খুবই আকস্মিক একটা অসীম অনিশ্চয়তার মধ্যে পেয়েছিল। সেন রাজত্বের প্রভুত্ব আর সনাতন রীতি মেনে তার ওপর আস্থা রাখা; অথবা তার থেকে মুক্তি পেতে তুর্কিদের হিংস্রতার সামনে নতিস্বিকার করে তাদের আশ্রয় প্রার্থনা; অথবা ভ্রাম্যমান বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সাথে সহযোগিতা করে কোনো গণ অভ্যুত্থানের চেষ্টা; এই তিনটির মধ্যে বেছে নিতে হতো মানুষকে। উপন্যাসের উল্লেখ্য যোগ্য চরিত্রগুলো হচ্ছে, শ্যামাঙ্গ, মায়াবতী, লীলাবতী এবং বসন্তদাস। চরিত্রগুলো ছিলো চমৎকার , অসময়ে সাধারণ মানুষ গুলো কেমন করে জীবন পার করে সেসব চরিত্র গুলোতে প্রকাশ পেয়েছে। লেখক এই উপন্যাসের মাধ্যমে ইতিহাসটি আমাদের কাছে পৌছাতে চেয়েছেন এবং বোঝাতে চেয়েছেন এতো এতো দ্বিধা-দণ্ডের মাঝে মানুষের বাঁচার আকুতি। যতই খারাপ সময় হোক না কেন ! পাখির মতো সুন্দর একটা পরিবার তৈরি করার স্বপ্ন মানুষ দেখতে ভুলে যায় না। যারা বাংলার পুরাতন ইতিহাস জানতে চান তারা অতিদ্রুত বইটি সংগ্রহ করে পড়ে ফেলুন। শুভ হোক আপনার পাঠ্য কার্যক্রম।
Was this review helpful to you?
or
This book is an excellent resource to students, educators, and aviation enthusiasts. In reviewing this book, the principal criteria included content, organization, and reference sources. While editing errors and organizational incongruities plague some of the latter chapters, many of the shortcomings of this first edition will likely be alleviated by later editions. These problems are only a minor distraction to the story being told.
Was this review helpful to you?
or
পড়ার শুরুতে সাধু ভাষা বুঝতে একটু সমস্যা হচ্ছিলো কিন্তু কয়েক পৃষ্ঠা পড়ার পর সমস্যা কেটে গিয়েছে। বাংলাদেশী সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসেবে ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’সমাদৃত। ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ উপন্যাস এর নামই উপন্যাসের প্রতিচ্ছবি। প্রদোষ অর্থ দুঃসময়, প্রাকৃতজন অর্থ অন্ত্যজ সাধারণ মানুষ অর্থাৎ সাধারণ মানুষ এর দুঃসময়। বাংলায় মুসলমানের আগমন ঘটে আরও প্রায় ৮০০ বছর পূর্বে। তৎকালীন বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের সাধারণ মানুষদের জন্য সময়টা ছিল প্রদোষকালের মতোই দ্বিধা-দ্বন্দ্বময়।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_মে উপন্যাসঃ "প্রদোষে প্রাকৃতজন" লেখকঃ শওকত আলী। "প্রদোষে প্রাকৃতজন" ইতিহাসের প্রদোষকালের জটিলতায় আবর্তিত প্রাকৃত নর-নারীর জীবণ কথারই চমৎকার চিত্রায়ন।শিল্পী তার শিল্প সত্তার মাঝেই প্রকাশ ঘটায় নিজস্ব ভাবানুভূতির।নীচ দস্যুর কাছে যে কৃপার পাত্র, তার শিল্পী হওয়ার সাধ পাপই বৈ-কি!তৎকালীন সামন্ততান্ত্রিক শাসকের প্রবল অত্যাচার,বৌদ্ধ সহজিয়াপন্থিদের প্রতি নিপীড়ন চরম পর্যায়ে পৌছায়।ধ্বংসস্তুপে দাড়িয়ে লাঞ্ছনা,অন্যায়ের বিরুদ্ধে একাকী বিচ্ছিন্ন প্রতিরোধ করে যায় প্রাকৃতজনেরা।পুনর্ভবার তীরে উজবুট গাঁ, 'মায়াবতী-বসন্তদাস',মিত্রানন্দ, সেবাদাসী কৃষ্ণা,গুরু বসুদেব,শ্যামাঙ্গ-লীলাবতির প্রেম,অভিমন্যুর লীলাবতীকে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা,তুর্কি যবন সৈনিকদের আক্রমণ,অত্যাচারিত সাধারণ মানুষের ধর্মান্তরিত হওয়া,সর্বোপরি চরিত্র আর সময়ের প্রেক্ষাপটে ব্রাত্যজনের অকথিত কাহিনীর প্রাঞ্জল উপস্থাপনই চিত্রায়িত হয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
সাহিত্যিক হিশেবে অমরত্মের জন্য শত শত বই লাগেনা; এরকম একটি বইই যথেষ্ট।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের প্রথমে এত কঠিন ভাষা ব্যবহার না করলে বইটি আরো বেশি সুখপাঠ্য হত। তবে বইটি যে সময়কাল নিয়ে রচিত তার মূল্যায়নে বইটা বাংলা সাহিত্যে অদ্বিতীয় ।
Was this review helpful to you?
or
শওকত আলীর বড় দরদ দিয়ে ইতিহাসের পটভূমিতে বিনির্মান করছেন হাজার বছরের বাঙালি শাসক আর শাসিতের চরিত্র। সাথে আছে তুর্কি মুসলিমদের আগমন, ধর্মান্তরীকরন, অত্যাচার, লুণ্ঠন। উপন্যাসে প্রেম, কাম, ক্ষেত্রকরের করুন জীবন কাহিনীর সাথে সামন্ত ও মহাসামন্ত রাজাদের বিলাশবহুল এবং শ্রেণি স্বার্থের এক সুনিপুণ যোগসাদৃশ্য অংকন করা হয়েছে। মৃৎ শিল্পী শ্যামাঙ্গের সাথে তার শিল্পগুরু বসুদেবের মতপার্থক্য এবং অতঃপর তার নিরুদ্দেশ যাত্রা দিয়ে উপন্যাসের শুরু। শিল্প সব সময় বন্দী থেকেছে ক্ষমতাশীলদের হাতে এবং তাদের বিলাসব্যাসনেই ব্যবহৃত হয়েছে শিল্প। যা প্রকাশ পায় শ্যামাঙ্গর নিজের প্রতি করা প্রশ্নে, “শিল্পী কি ক্রীতদাস? রাজানুগ্রহ ব্যতিরেকে কি শিল্পীর কোন অস্তিত্ব নেই?” মন্দির গাত্রে নগ্ন নারীর মুর্তিতে ধর্মের কি ক্ষতি হয় সে বিষয়ে একটা প্রশ্ন করেছেন লেখক। দেবী যদি ঘড়ে থাকেন তাহলে মন্দিরের দরকার কি? আর স্রষ্টা যদি অন্তরে বাস করে তাহলে মন্দিরেরই বা দরকার কি? গাত্রের বিশুদ্ধতা নিয়ে আমাদের হাজারো অজুহাত অথচ নিজের মন মন্দিরের সংস্কারে আমাদের কোন উদ্যোগই নেই! এসব বিষয়েই গুরুদেবের সহিত বিতন্ডার শেষে শ্যামাঙ্গের নিরুদ্দেশ যাত্রার সুত্রপাত। বঙ্গ, পুন্ড্র, সহ বাংলার হিন্দু অধ্যুষিত জনপদে সামন্ত শাসকদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ ছিল বিপর্যস্ত। লীলাবতী, মায়াবতী, বসন্তদস, মিত্রানন্দ এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুরা উপন্যাসের চরিত্রকে একটি বহুমাত্রিক রূপ দিয়েছে। একদিকে যবন(মুসলিম) আগমনের ভয় অন্যদিকে সামন্ত রাজাদের অত্যাচার ক্ষেত্রকর বাঙ্গালির মনে বিপ্লব জাগালেও শেষ সম্বল রক্ষা হয় না নৃ-পতিতের ক্ষমতা আর বলের কাছে। পৃথিবীর সকল শাসকেরা তাদের ব্যক্তি স্বার্থের জন্য এক এবং অভিন্ন রীতি গ্রহন করে এবং তা চাপিয়ে দেয় সাধারণ মানুষের উপরে। সাধারণ মানুষেরা কখনোই মানুষ হয়ে ওঠেনি এসব শাসকের কাছে। যা প্রকাশ পায় সামন্তরাজ হরিসেনের একটি উক্তির মধ্য দিয়ে, “ওদের অনাহারে রাখুন, দেখবেন, ওরা বিনয়ী এবং শ্রমশীল দুই-ই হয়েছে, সুতারাং ওদের অনাহারে রাখুন”। চন্ডাল, শুদ্র, ডোমসহ সকল ক্ষেত্রকর নিচু মানুষেরা সেই প্রাচীনকাল থেকেই নিগৃহীত। ক্ষুদ্র বণিক থেকে বসন্তদাসের বিদ্রোহী হয়ে যাওয়া এমনকি মায়াবতীর মায়ার জালও যাকে আটকাতে পারে নি তার কারণও বিধৃত আছে উপন্যাসে। লীলাবতীর সাথে শ্যামাঙ্গের সাক্ষাৎ এবং যোগী জীবনের সুত্রপাত, কাম, প্রেমের এক অপুর্ব মিলনও আছে স্নেহের অক্ষরে লেখা। নারীর চির আবহমান মায়া, প্রেম, ছলনার সংমিশ্রণ ঘটেছে লীলাবতী চরিত্রের মধ্যে। যদিও যবন আক্রমন এবং আগমনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায় উপন্যাসটি তবুও একটি ছায়া থেকে যাবে পাঠকের মধ্যে চরিত্রগুলোর কি হলো শেষ পর্যন্ত। উত্তরটি আমাদের সবার জানা, হাজার বছর ধরেই রাজা, সামন্ত রাজা, মন্ত্রী সাধারণের চির শত্রুই হয়ে থেকেছে। উচু শ্রেণি স্বার্থগত কারণে নীচ শ্রেণিকে নিজেদের কাছে ডাকলেও সবসময়ই এরা থেকেছে সাধারণ থেকে অনেক দূরে। যে কারণে অত্যাচার এবং লুণ্ঠনের শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই। এ কারণেই যবন আক্রমন আসন্ন দেখে সোমজিৎ এক সামন্ত রাজাকে বলেছিলেন, “যবনরা যদি আসে, তখনো দেখবে তাদের উচ্চ শ্রেনির লোকেরা সদ্ভাব করছে আমাদের উচ্চ শ্রেণির লোকদের সাথে। নীচ যে, সে সর্ব অবস্থায় নীচ থাকবে”! যুগ বদলেছে কিন্ত অত্যাচার সেই তেমনই আছে। আধুনিক হয়েছি কিন্ত পশুত্ব ঠিক আগের মতোই রয়ে গেছে! এদেশের সাধারণের কাছে অল্পতে তুষ্ট থাকার সংস্কৃতিই হয়েছে বাণিজ্য বিকাশের সবচেয়ে প্রধান অন্তরায়। তাছারা সামন্ত রাজাদের লুণ্ঠনকারী মনভাবের কারণে সাধারনে সম্পত্তি সৃষ্টিতে কখনো আগ্রহ প্রকাশ করেনি। গরীবের সৃষ্ট সম্পদ তো গরীবের ব্যবহারের জন্য নয়। ওটাতো সামন্ত রাজদের বিলাসব্যসনের জন্য। তাদের গৃহ নগ্ন নারীর শরীরে সাজানোর জন্য আর গরীবের গৃহে নববিবাহিত পুরুষ চেয়ে দেখে তার স্ত্রীর সতীত্ব কিভাবে রাজপুরুষ দ্বারা লুণ্ঠিত হয়। এটাই কি তাহলে হাজার বছরের চিরায়িত বিধান? একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের সেই প্রাচীন সামন্ত বা আধা সামন্তবাদী সমাজের অস্তিত্ব নেই কিন্ত সামন্ত চরিত্র গুলো কিন্ত ঠিক-ই আছে। আমাদের রাজনীতিবিদ এবং তাদের সাঙ্গ পাঙ্গরা খুব সহজেই তাদের গুনটি আত্মস্থ করে নিয়েছে আর আমরা হলাম সেই প্রাকৃতজন। আমরা ধর্ষিত হই বনে বাদারে, বিচার চাইতে গেলে পুরুষরাও বলাৎকারের শিকার হয়ে ফিরে আসে মৃত ধর্ষিতার ছিন্ন শরীর নিয়ে! এখন আমার প্রশ্ন তাহলে সমাজ কি একটি নির্দিষ্ট ধারায় চলতে থাকে। সমাজ পরিবর্তন হয় ঠিক আছে কিন্তু সমাজের মৌলিক কাঠামো কি পরিবর্তিত হয়? গতিশীল সমাজের অবকাঠামোগত পরিবর্তন-ই কি সব কিছু? কিভাবে শাসক আর শোষিতের মধ্যকার সম্পর্ক এখনো আগের মতন আছে সে বিষয়ে আমার অনেক প্রশ্ন আছে।
Was this review helpful to you?
or
ছোটবেল ইতিহাসের বইতে পড়েছিলাম ১২০৫-৬ সালে তুর্কি সেনাপতি ইখতয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খলজি নদীয়া আক্রমন করেন এবং মাত্র ১৭ জন সৈন্য নিয়ে রাজ্য জয় করেন। রাজা লক্ষন সেন পলায়ন করেন। এটুকু প্রায় সবার জানা। কিন্তু শুধু এটুকু জানলে কিছুই জানা হয় না। সেই সময়টা এমন এক সঙ্কটকাল, যার সম্পর্কে আমরা খুব বেশি কিছু জানি না। ছোটবেলা যত সহজে ইতিহাস পড়েছি সময়টা এত সহজ ছিলো না। কিন্তু বাংলায় মুসলিম শাষন প্রতিষ্ঠায় কাদের সহযোগিতা ছিলো? দেশি শক্তির সাহায্য ছাড়া বিদেশি শক্তি একটি দেশ দখল করতে পারে না। কারা করলো বিশ্বাসঘাতকতা? কেন করলো? কোনো স্বার্থের লোভে নাকি নিরুপায় হয়ে? বইয়ের নাম শুনলেই জানতে ইচ্ছা করে এর অর্থ কি! প্রদোষকাল মানে সন্ধ্যা বা অন্ধকার হওয়ার ঠিক আগের সময়। আর প্রাকৃতজন বলতে লেখক সেই সময়ের নিচু শ্রেণির মানুষদের বুঝিয়েছেন। নামকরনের মধ্যেই কিছুটা ধারনা পাওয়া যায় উপন্যাসের পটভূমির। শ্যামাঙ্গের কথায় শুরু হয়েছিল গল্প। শ্যামাঙ্গ শিল্পী, আমাদের দেশের সেই সময়ের একান্তই নিজস্ব শিল্প, মাটি দিয়ে মূর্তি তৈরির কাজ করত সে। এক মন্দিরের জন্য কাজ করার সময় সে দেবদেবীর সাথে সাথে তৈরি করে কিছু মানবমূর্তি। কিন্তু মন্দির যার টাকায় হচ্ছিল, সে এসব মেনে নেয়নি, মেনে নেননি শ্যামাঙ্গের গুরুও। গুরুর সাথে বিবাদ করে নিজ গ্রামে ফিরতে গিয়ে ভুল করে চলে আসে উজবট নামক গ্রামে। এখানেই পরিচয় হয় মায়াবতী ও লীলাবতীর সাথে। দুই সখির স্বামী থাকলেও তারা একপ্রকার স্বামীহীনা। মায়াবতীর স্বামী বসন্তদাস বানিজ্য করার উদ্দেশ্যে গৃহছাড়া, লীলাবতীর স্বামী অভিমন্যুর কথা না হয় বইটা পড়াই জেনে নিবেন। মায়াবতীর পিতৃগৃহে এক রাত অতিথি থেকে নিজ গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় শ্যামাঙ্গ। অপরদিকে বহুদিন নিরুদ্দেশ থাকার পরে বাড়ি ফিরে আসে মায়াবতীর স্বামী বসন্তদাস। বসন্তদাসের ঘনঘন বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সাথে সাক্ষাৎ অনেকের মনেই সন্দেহ সৃষ্টি করে। অপরদিকে শ্যামাঙ্গ নিজ গ্রামে যাবার পথে রাজপুরুষ ও দস্যুদের দ্বারা সর্বস্বান্ত হয়ে আবার উজবটে ফিরে আসে। আসার পথেই সে লীলাবতীর প্রতি টান অনুভব করে। গ্রামে ফিরএ আসার পরেই সামন্ত অনুচর আর যবনদের (মুসলিম) আক্রমনে ধ্বংস হয়ে যায় উজবট গ্রাম। বসন্তদাস আগেই পালিয়ে যায়। আর আক্রমনের সময় শ্যামাঙ্গের হাত ধরে পালিয়ে আসে লীলাবতী। শুরু হয় শ্যামাঙ্গ আর লীলাবতীর অন্তহীন যাত্রা। শ্যামাঙ্গ, লীলাবতী, বসন্তদাস, মায়াবতী, অভিমন্যু সহ সকলের ভবিষ্যত তুলে রাখলাম আপনাদের জন্য। পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ কাহিনী সংক্ষেপ লেখা সহজ হলেও বইটার পাঠপ্রতিক্রিয়া লেখা বেশ কঠিন একটা কাজ। ঠিক কিভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করবো তা বোঝা মুশকিল। যদি প্রশ্ন করেন যে, এটা কি ইতিহাসের বই? তাহলে বলতে হবে, “না, এটা ইতিহাসের বই না”। ঐতিহাসিক উপন্যাস বলতেও অনেকের আপত্তি থাকবে। তবে নিশ্চয়ই বইয়ের উপজীব্য ইতিহাস। এমন একটা সময়ের ইতিহাস যা নিয়ে আমাদের খুব ঘোলাটে একটা ধারণা। তবে বাংলা মুসলমানদের আগমন কিংবা আগমনের ফলে এই যে এতো সংখ্যক মানুষ ক্রমাগত মুসলমান হয়ে গিয়েছিল, সেসব নিয়ে বেশ ভালো একটা ধারণা পাওয়া যায়। সাধারণ মানুষের যে একটা অদ্ভুত মনস্তাত্ত্বিক সঙ্কট কাজ করছিল সেই সময়টায়, সেটা বেশ অবাক করে দেবার মতন। দিকে দিকে রাজপুরুষদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। বনিকদের সম্পদ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। আর এই অত্যাচারের শিকার নিন্ম বর্ণের হিন্দু আর বৌদ্ধরা। তাদের একটা বিরাট অংশ ভাবছিল যবনদের (মুসলমান) আগমনে সামন্তদের অত্যাচারের সমাপ্তি ঘটবে। অনেকেই ধর্ম কিংবা দীর্ঘদিনের বিশ্বাসের বাইরে চিন্তা করতে পারছিল না, তারা অত্যাচারিত হলেও ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় দ্বারা শাসিত হতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিল। আর খুব সামান্য কিছু মানুষ ছিল, যারা কি না জানত যে, শাসক বদলালেও চরিত্র বদলাবে না। কী আছে ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন‘–এ? একে যদি শুধু ইতিহাসআশ্রিত উপন্যাস বলি, তাহলেও সত্য হয়। তবে আংশিক। ইতিহাসে ব্রাত্যজনের কথা থাকে না। ইতিহাস শুধু মনে রাখে সফল আর জয়ীদের। যে সমাজ ও সময়ের কথা শওকত আলী তাঁর ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন‘ উপন্যাসে লেখেন, যখন ব্যক্তির স্বাধীনতা আর অর্থনৈতিক মুক্তি দুটিই জরুরি; অথচ সমাজের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠীর শ্রম, মর্যাদা প্রতিনিয়ত লুণ্ঠিত হচ্ছে, অচ্ছুৎ সে প্রতিনিধিদের কথা তিনি বলে যান ইতিহাস সঙ্গে নিয়ে, ইতিহাসকে আভাসিত করে। মৃৎশিল্পী শ্যামাঙ্গ যখন ভাবে, ‘প্রজাকুল সুখী। ব্রাহ্মণ সুখী, কায়স্থ সুখী, বৈশ্য সুখী। কেবল ব্রাত্য শূদ্রদের গৃহে অন্ন নেই, দেহে বস্ত্র নেই, মস্তকোপরী গৃহের আচ্ছাদন থাকে না। তথাপি আজ যদি গ্রামপতি বসবাসের স্থান দিলেন তো কালই বলবেন, দূর হ, পামরের দল।’ তো এই অবস্থা বা তার চেয়েও ভয়াবহ চিরবাস্তবতার সত্যটি শওকত আলী আশ্রয় করেছেন ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন‘-এ। ইতিহাসের তিনটি ঘটনা-তুর্কিদের গৌড় ও বঙ্গবিজয়ের আগে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সনাতন ও ব্রাহ্মণ হিন্দুদের বিরোধ এবং রাজা লক্ষ্মণ সেনের শাসনামলের একেবারে শেষ দিকে সামন্তদের নিপীড়নের মুখে প্রান্তিক মানুষের অস্তিত্ব সংকট ও একই সঙ্গে যবনদের আগমনের সময়টা চিত্রিত আছে এখানে। প্রায় ৮০০ বছর আগের ইতিহাসের সেসব চরিত্র নিয়ে উপন্যাস লেখার আগ্রহ কিভাবে এলো শওকত আলীর মনে? এই বইটি লেখার পেছনের গল্পটি বলেছিলেন শওকত আলী। তিনি বলেন, “আমার চিন্তাটা এ কারণেই এসেছিল যে এখানকার সাধারণ মানুষ ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজ্যশাসনের যে প্রক্রিয়াটা ছিল-তা তো তারা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই প্রান্তে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা এত বেশি হওয়ার কারণ কী? এটা আমার একটা প্রশ্ন ছিল। আমি অনেকজনকে প্রশ্ন করেছি; কিন্তু কোনো সঠিক উত্তর পাইনি। মুসলমান যারা দিগ্বিজয় করতে এসেছে তারা তো ওই দিক দিয়ে এসেছে। তারপর মোগল-পাঠানরাও ওই দিক দিয়ে এসেছে। এটা কিন্তু অবাস্তব কৌতূহলের কিছু নয়। একসময় মুসলমানরা এখানে আধিপত্য করেছে, তারা শাসন করেছে ২০০-৪০০ বছর, তারা ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ওই সব অঞ্চলে মুসলমানের সংখ্যা বাড়েনি। এখানে মুসলমানের সংখ্যা বেশি। এটা সম্পর্কে আমি অনেককে জিজ্ঞাসা করেছি, বইপত্র পড়েছি। একসময় একটা সংস্কৃত বই হাতে আসে। বইটির নাম হচ্ছে শেখ শুভদয়া। কেউ বলেছে সেন রাজত্বের পরপরই ওটা লেখা হয়েছিল। শেখের শুভ উদয় এই অর্থে। শেখ মানে মুসলমান। ভালো সংস্কৃত আমি জানি না। মোটামুটি পড়তে পারি। কিন্তু হিন্দি ভালো পড়তে পারি। তো ওর মধ্যে কিছু কিছু গল্পের মতো পেয়েছি। যেমন একটা দৃশ্য ওখানে পেয়েছি যে অশ্ব বিক্রেতারা নৌকায় চড়ে অশ্ব বিক্রয় করতে এসেছে। অশ্ব বিক্রয় হয়ে গেছে। সন্ধ্যা সমাগম। তখন ছয়-সাতজনের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ যিনি, তিনি উন্মুক্ত প্রান্তরে দাঁড়িয়ে পশ্চিম দিকে, মানে সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে কানে হাত দিয়ে উচ্চস্বরে কাকে যেন ডাকছেন। তারপর এক জায়গায় গোল হয়ে বসে প্রভু-ভৃত্য সবাই একপাত্র থেকে আহার গ্রহণ করছেন। আহার শেষে একজন সামনে দাঁড়িয়ে মন্ত্র পাঠ করছে, তারপর উবু হয়ে থাকছে, অবশেষে প্রণাম করছে। তিনি যা যা করছেন পেছনের সবাই তাঁকে অনুসরণ করছে। সামনে যে ছিলেন সে কিন্তু প্রভু নন; ভৃত্য। তবু সবাই তাঁকে অনুসরণ করছে। এ রকম একটা দৃশ্য যদি দেখে সাধারণ মানুষ, যে মন্দিরের ছায়ায় অচ্ছুত নিম্নবর্গের সাধারণ মানুষের পা যেন না পড়ে সে জন্য সকালে মন্দিরের পশ্চিম পাশের এবং বিকালে মন্দিরের পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্গীয় মানুষের চলাচল বন্ধ, তাহলে তাদের মনে প্রতিক্রিয়া কী হবে? এ রকম একটা অবস্থা সেখানে ছিল। এরপর যখন যবনরা এল, তারা একসঙ্গে বসে, একসঙ্গে ওঠে, একসঙ্গে খায়, প্রভুর উপাসনা করে। আমার নিজের মনের থেকে ধারণা হলো এ অঞ্চলে নিম্নবর্গের মানুষ সবচেয়ে বেশি ছিল এবং এখানে সবাই যবন ধর্ম গ্রহণ করেছিল। এর কিন্তু কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ আমি দিতে পারব না। এটা আমার অনুমান। এই ভিত্তিতে আমি উপন্যাসে এই উপাদানগুলো ব্যবহার করেছি।“ মানুষ তার পরিবারে সুখি হতে চায়। একজন সাধারন মানুষের সারাদিনের কাজের কেন্দ্রে থাকে পরিবার। কিন্তু উপন্যাসে যে সময়ের কথা বলা তখন উচ্চশ্রেণির মানুষের কাছে ধুলিস্বাত হচ্ছিলো নিন্মশ্রেণির মানুষের পরিবার। ফলে বিদেশি শক্তির আগমন ছিলো সময়ের ব্যাপার। লেখক শওকত আলীর লেখা বই এই প্রথম পড়লাম। আর বইটা পড়া অবস্থায় লেখকের মৃত্যুর খবর পেলাম। এটা খুবই বেদনাদ্বায়ক ছিলো আমার জন্য। বারবার মুগ্ধ হয়েছি তার লেখনিতে। এত চমৎকার শব্দের ব্যবহার খুব কম পেয়েছি স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে। প্রথম দিকে কাটখোট্টা মনে হলেও পরে সেটাকেই সাবলীল মনে হয়েছে। টাইমলাইনের সাথে মিল রেখে ভাষার ব্যবহার বইটাকে দিয়েছে আলাদা মাত্রা। বইটা পড়ার পরে আমাদের দেশের পাঠকদের নিয়ে আহসোস হচ্ছে। আমরা গুটিকয়েক লেখকদের নিয়েই মাতামাতি করি। অনেককে পশ্চিম বঙ্গের লেখকদের বই পড়ে দেশি লেখকদের মুন্ডুপাত করতে দেখি। অথচ শওকত আলীর মত আরো অগণিত লেখকদের নিয়ে চর্চা করি না। সবশেষে লেখকের জন্য প্রার্থনা করি, সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে ওপারে শান্তি দেন!
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃপ্রদোষে প্রাকৃতজন লেখকঃশওকত আলী প্রকাশনীঃইউপিএল মূল্যঃ২৩৪টাকা 'প্রদোষে প্রাকৃতজন'— শওকত আলীর ইতিহাস ভিত্তিক একটি বই।বইয়ের নামটি ছন্দময় এবং নামটা শুনলেই কেমন যেন ইতিহাসের কথা অর্থাৎ প্রাকৃত জনদের কথা মনে পড়ে যায়।কঠিন সাধুভাষারও যে এক অসাধারণ সৌন্দর্য আছে, সেটা জানতে পেরেছিলাম বইটা পড়তে পড়তে। পুরো বইটাই কেমন যেন কাব্যিক, পুরো বইটাই যেন একটা কবিতা, যে কবিতায় বলা হয়েছে প্রাকৃতজনদের কথা।উপন্যাসটিতে দেখা গিয়েছে সেন রাজত্বকালে সাধারণ প্রজারা সামন্ত জমিদারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ । আর তখনই ঘোড়ায় চড়ে খলজি ও তার সৈন্য-সামন্তদের আগমন । যবনদের (মুসলিম) আগমন ও তান্ডব, সেন রাজার সামন্তদের অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের ও ক্ষমতা চর্চার অত্যাচারে জনকূল ছত্রছিন্ন । বহুমুখী অত্যাচারের প্রতিবাদ করে হিন্দু, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও সাধারণ ভুক্তভোগিরা । সে সময়কালে কয়েকজনের জীবন-সংগ্রাম ও প্রকৃত জনগোষ্ঠির ছুটে বেড়ানো পরিবার, আপন ও প্রিয়জনদের অসহায়বস্হার গল্প । চরিত্রগুলো তৈরি করতে ইতিহাসের শেকড় খুঁড়ে নৃতাত্বিক পর্যালোচনায় এই ভূখন্ডের অতীতকে তুলে এনেছেন লেখক। গদ্য ভাষণেও সে মত শব্দ ও শব্দের আদি অবস্হা কিছুটা লক্ষ্য করা যায় । একবার ডুবে গেলে মজে যাওয়া যায় । এ উপন্যাস পড়ে এক ঢিলে ইতিহাস ও গল্পের দুই পাখি মারা গেল ।
Was this review helpful to you?
or
বাংলা সাহিত্যের একটি অনন্য উপন্যাস! সেন বংশের শেষ সময়কালের নিম্নবর্গের কিছু মানুষের জীবনচিত্রের পটভূমিতে লেখা উপন্যাসটি সে সময়কালের ইতিহাসকেও জানার সুযোগ করে দেয়।
Was this review helpful to you?
or
বখতিয়ার খিলজির অতি অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে বাংলা জয়ের কাহিনী সবার জানা । অনেকটা বিনা বাধায় বাংলা জয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু কেন তিনি এত সহজে বাংলা জয় করতে পেরেছিলেন? তার উত্তর এই বইয়ে পাওয়া যাবে। সেই সময়ের সমাজের মানুষদের সাথে ততকালিন শাসকদের আচরণ, বিশেষকরে বরেন্দ্র অঞ্চলের সেই সময়ের সামাজিক অবস্থা, কষ্ট, ভালবাসা, শাসকদের নির্যাতন এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সেসময়ের রাজনীতিতে বিচরণ সবই বইটিতে অনেক সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ।
Was this review helpful to you?
or
:::রিভিউ::: আনুমানিক ১২০৫-০৬ সালে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজি মাত্র ১৭ জন ( ঐতিহাসিক মিনহাজের মতে ১৮ জন ) সৈন্য নিয়ে নদীয়া আক্রমণ করেন এবং রাজা লক্ষণ সেন পরাজিত হয়ে তার অন্য রাজধানী বিক্রমপুরে পলায়ন করেন, এই ইতিহাস সবর্জনবিদিত। কিন্তু তৎকালীন বৌদ্ধ ভিক্ষু আর যোগী সম্প্রদায়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় যে বাংলায় মুসলিম আগমণ ত্বরান্বিত হয়েছিলো সেই ইতিহাস আজও অনেকের অজানা। কিন্তু কেন তাঁদের এই বিশ্বাসঘাতকতা শাসক শক্তির সাথে? স্বদেশে বিদেশী শক্তি ঢেকে আনার পিছনে কি উদ্দেশ্য ছিল এইসব সংস্যারত্যাগী ভিক্ষু আর যোগীদের? সামন্তবাদী বাংলার পতন ঘটলে কি লাভ হতো তাঁদের? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন বাংলাদেশের বরেণ্য লেখক শওকত আলীর অনবদ্য সৃষ্টি প্রদোষে প্রাকৃতজন বইটিতে। বইয়ের নামঃ প্রদোষে প্রাকৃতজন লেখকঃ শওকত আলী প্রকাশনীঃ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৯৬ জনরাঃ ঐতিহাসিক প্রথম প্রকাশঃ ১৯৮৪ নামকরণের সার্থকতাঃ প্রদোষকালের অর্থ হলো সায়াহ্ন কিংবা সন্ধ্যাকাল। ঠিক আঁধার নামার পূর্বকাল হলো প্রদোষকাল। আর প্রাকৃতজনের বলতে লেখক বিশেষ করে তৎকালীন ( কিছু কিছু আজও বিদ্যমান ) হিন্দুদের দাসশ্রেণীকে অভিহিত করেছেন যেমনঃ ডোম, হডডি, ক্ষেত্রকর, কুম্ভকার প্রভৃতি। বাংলায় মুসলিম আক্রমণের মধ্য দিয়ে নেমে আসে এক গাঢ় আঁধার কাল। কারণ অন্য মুসলিমদের থেকে তুর্কিরা ছিল দুর্বিনীত। তারা কোণ কিছুর তোয়াক্কা করতো। অবাধে লুন্ঠন, নারী ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগ ইত্যাদী বাংলা ঐ অঞ্চলে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। আর সেই সাথে এই মহানিধনে যোগ দেয় সামন্তরা আর সেই উদ্বেগজনক সময়ে প্রাকৃতজনের বেঁচে থাকার লড়াই নিয়ে রচিত হয়েছে প্রদোষে প্রাকৃতজন বইটি। আর বইটির দ্বিতীয়ভাগের নাম দুষ্কালের দিবানিশি। মুসলিম আক্রমণ শুরু হবার পর বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষেরা যে দুষ্কালের অন্ধকার রূপ প্রত্যক্ষ করেছিল সেটা নিয়ে রচিত এই পরবর্তী অংশ। ভৌগলিক প্রেক্ষাপটঃ বাংলার প্রাচীন জনপদ গুলো মূলত বঙ্গ, গৌড়, বরেন্দ্র, পুন্ড্রু, রাঢ়, সমতট , হরিকেল, এই সাতটি ভাগে ভাগ ছিল। আর প্রদোষে প্রাকৃতজনের ঘটনা প্রবাদ আমরা মূলত দেখতে পাই বরেন্দ্র অঞ্চলে (বর্তমানে উত্তরাঞ্চল যেমন রাজশাহী, দিনাজপুর ) মূল প্রেক্ষাপট সংক্ষেপেঃ বাংলায় মুসলিম আক্রমণের ঠিক কয়েক দিবস পূর্বে এই গল্পের প্রারম্ভিকা। গল্পের শুরুতে আমরা দেখতে পাই, শ্যামাঙ্গ নামের এক কুম্ভকার (মৃৎশিল্পী) যুবক তার গুরুর সাথে কলহ করে আত্রেয়ী নদীর তীরে নিজ গ্রামে প্রত্যাবর্তন করতে চায়। কিন্তু পথ ভুল করে সে উজুবট নামক এক ক্ষেত্রকরের গ্রামে উপস্থিত হয়। আর এখানেই তার পরচিয় ঘটে দুই নারীর সাথে, মায়াবতী আর লীলাবতী। দুজনেই স্বামী থাকা সত্ত্বেও স্বামীহীনা। মায়াবতীর স্বামী বসন্তদাস বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে নিরুদ্দেশ আর লীলাবতীর স্বামী অভিম্যনুদাস উন্মাদ এবং বর্বর। মায়াবতীদের গৃহে আতিথিয়তায় শ্যামাঙ্গ একটি রাত্রি যাপন করে পরের দিবসে নিজ গ্রামে যাত্রা শুরু করে । কিন্তু তার উদ্দেশ্য সফল হয়না। নবগ্রাম হাটের নিকট পিপ্পলীহাটের একটি ঘটনায় সৈন্য সমাবেশ দেখা যায়। এমন কি তারা শ্যামাঙ্গকেও বিপদগ্রস্ত করে তোলার চেষ্টা করে । অবশেষে কিছু উৎকোচ দিয়ে শ্যামাঙ্গ মুক্তিলাভ করে। তারপর সে নানা স্থান ভ্রমণ করে পুনরায় ফিরে আসে উজুবট গ্রামে আর এই প্রত্যাবর্তন তার জীবনে লীলাবতীকে এনে দেয়। ঠিক তখন সামন্ত অনুচর আর যবনদের (মুসলিম সৈনিকদের) আক্রমণে উজবুট গ্রামটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। গ্রামদের বাসিন্দারা প্রতিবেশী অঞ্চলে পয়ালন করে আর শ্যামাঙ্গ আর লীলাবতীর শুরু হয় গন্তব্যহীন এক যাত্রা। যেখানে প্রতিমুহুর্তে মৃত্যু নিঃশ্বাস ফেলে। পিপ্পলীহাটের একটি ঘটনা তৎকালীন শাসন ব্যবস্থা বুঝে নেবার জন্য পর্যাপ্ত। রাজার মন্ত্রী, সামন্ত, মহাসামন্তদের বিশাল পদাতিকবাহিনী, অশ্ববাহিনী, হস্তীবাহিনী সবই ছিল। কিন্তু সেগুলোর ব্যবহার ছিল শুধুমাত্র প্রজাপীড়নের জন্য কোন বহিঃশক্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য নয়। দস্যুরা ইচ্ছামত যাত্রীদের লুন্ঠন করতো, হত্যা করতো, বাঁধা দেবার কেউ ছিলনা। স্বয়ং রাজপুরুষেরাও বণিকদের বিপণী লুঠ করতো। আইন শৃঙ্গলা ছিল প্রহসন মাত্র। নিম্নশ্রেণীর মানুষদের পীড়ন করা ছিল যেন উচ্চবর্ণে মানুষের জন্মগত অধিকার। এই সময়কালে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হিন্দু সামন্তেরা অত্যাচারের সব সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিলো। চারিত্রিক বিশ্লেষণঃ শ্যামাঙ্গ চরিত্রটি স্বাতন্ত্র্য। শাসন ব্যবস্থার পালাবদল কিংবা রাজনীতির সাথে শ্যামাঙ্গের সম্পর্ক সবসময় ছিল শীতল। লীলাবতী তার জীবনে এলে নারীত্বের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে ক্লান্ত জীবনে শ্রান্তি অনুসন্ধানে তাকে অধিক আগ্রহী মনে হয়। তবে সে দক্ষ শিল্পী। মাটির কাঠামোয় নিজ প্রিয়তমা লীলাবতীকে জীবন্ত করে তুলেছে বার বার। আবার সে ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। যবনকেন্দ্রে তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে লীলাবতী অনুরোধ করলে সে প্রত্যাখান করে চলে আসে আর তার জন্য তাকে চরম মূল্য দিতে হয়। মায়াবতীর স্বামী বসন্তদাস এবং লীলাবতীর স্বামী অভিমন্যু দাস দুজনেই আমরা পরবর্তীতে দেখতে পাই। কিন্তু দুই রূপে। প্রথমজন লেবারেল চিন্তাধারা অধিকারী যে মানুষে মুক্তি চায় আরেকজন অসুস্থ মানসিকতা পোষণ করে যে মানুষের রক্ত চায়। লেখক বসন্তদাসকে অনেকটাই লেবারেল চিন্তাধারার ব্যক্তিত্ব হিসাবে উপস্থাপন করলেও স্বল্পশিক্ষিত একজন ক্ষেত্রকরেরে খোলসটা একেবারে খুলে দেননি। কখনো কখনো সে বলেছে নিম্ন জন্ম মানুষে ভবিতব্য, এটা মেনে নিয়ে নিজ নিজ কাজ করাই একমাত্র শান্তির পথ। আবার বসন্তদাস তার বন্ধু বৌদ্ধ ভিক্ষু মিত্রানন্দের সাথে সাধারণ মানুষের মুক্তির সুরে সুর মিলিয়েছে। উপন্যাসটতে বসন্তদাসের ব্যাপ্তি অনেক বেশী। মূল চরিত্র হিসাবে শুরুতে শ্যামাঙ্গকে মনে হলেও ধীরে ধীরে কখনো বসন্তদাস যে পাঠক হৃদয়ের দখল নেবে এরা উদ্ধার করা কঠিন। ব্যক্তিগত মতামতঃ একজন মানুষের সবথেকে বড় ধর্ম কি? যদি বস্তুনিষ্ঠতায় উত্তর হয় বলতে হবে পরিবার একজন পুরুষের সবথেকে বড় ধর্ম। পরিবারের সুখ, সন্তানের লালিত্য এইসবের জন্যই বেঁচে থাকা। কিন্তু তৎকালীন সামন্তবাদী সমাজে নিম্নশ্রেনীভুক্ত মানুষের সেই পরিবার ব্যবস্থা উচ্চবর্ণে হাতে বার বার লাঞ্ছিত হচ্ছিলো। উচ্চবর্ণের ছেলেরা পুত্রকে হত্যা করলে বিচার নেই, স্ত্রীকে অসম্মান করলে প্রতিবাদ করার অধিকার নেই। এমতাবস্থায় এই ভূমির প্রাকৃতজনের জন্য যবন আগমণ ছিল আশীর্বাদ। শত শত সমাজ পরিত্যাক্ত মানুষ দলে দলে শুধু নিজের পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে ইসলাম গ্রহন করে। কিন্তু শুরুতে পথ মসৃণ হয়নি। বর্ণ এবং জাত নির্বিশেষে হত্যা আর নারী ধর্ষণের, জোর করে ধর্মানন্তরে তৃপ্তি হয়ে তুর্কিরা শাসন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে কয়েক যুগ সময় ব্যয় করে। আর বৌদ্ধরা সে প্রত্যাশা নিয়ে যবনের এই দেশে আমন্ত্রন জানায় তাঁদের সেই প্রত্যাশা মুখ থুবড়ে পরে থাকে। গল্পের শেষে আমরা সেটি দেখতে পাই যখন যবনদের সঙ্গে মিশে অভিমন্যুদাস দুজন্য বৌদ্ধ ভিক্ষুকে তরকারি দিয়ে কবন্ধ করে দেয়। ইতিহাস কখনো নিরপেক্ষ নয়। তবে শওকত আলী নাকি লেখাটি এক যুগেরও অধিক সময় ধরে সম্পন্ন করেছেন। বইটি পড়ার পর আমার মনে হয়েছে সাধারণ ঐতিহাসিক উপন্যাস থেকে এর স্থান অনেক উপরে আর নিঃসন্দেহে বইটি ইতিহাসের দলিল স্বরূপ।
Was this review helpful to you?
or
শ্যামাঙ্গর মৃত্যু কি অনিবার্য ছিল? লেখক বলেছেন হ্যাঁ ছিল। শ্যামাঙ্গর মৃত্যু আমি মেনে নিতে পারিনি, বারবার লীলাবতীর কথা ভেবেছি, সে তো একটা পরিপূর্ণ জীবন চেয়েছিল।কিন্তু শ্যামাঙ্গকে ছাড়া লীলার জীবন কি পরিপূর্ণ হতে পারে? আমার কল্পনায় লীলাবতীকে খুব যত্নে রেখেছি। অভিমন্যুকে মেরে ফেলেছি। বসন্তদাস আর মায়াবতীকে গৃহকোনে বেঁধেছি।যদিওবা কেবল আমার কল্পনায়। উপন্যাসটি পড়ে শেষ করলে আপনিও আমার মত চরিত্রগুলো নিয়ে ভাববেন, আনমনা হবেন হয়তোবা আবেগাপ্লুত হবেন।
Was this review helpful to you?
or
সাহিত্য এবং ইতিহাসের সুন্দর বাগান শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন উপন্যাস। একটা বই যতি একজন পাঠককে সারাজীবনের ভাবনার খোরাক দিতে পারে। তাহলে এই বইটি পড়তে হবে। নেই সেনরাজ্যের পতনের কালে। ধর্ম বর্ন বিচারে যখন মনুষ্যত্বের বানী নিরবে কাঁদেছিলো। তখন শ্যামাঙ্গ তার শিল্পচর্চার কথা ভাবছিলো। শিল্পের টান শ্যামাঙ্গকে ঘর থেকে বের করে নিয়েছে। কিন্তু নৃপতি আর ধর্মবেত্তারা শিল্প চায়না তারা চায় গতানুগতিক ধারার মন্দিরে অংকন। সে যুগে যখন মানুষের ভাত কাপড়ের কথাই মূখ্য তখনকার শ্যামাঙ্গ একইসাথে জীবন জিবিকা ও শিল্পকে বাঁধতে চেয়েছিল। কিন্তু নিষ্ঠুর সময় তা হতে দেয়নি। সেন রাজাদের অত্যাচার ধর্ষণ এর মধ্যে এলো পশ্চিম দেশের যবনজাতি। যারা প্রার্থনার সময় পশ্চাদদেশ উপরে তুলে রাখে। আর মন্ত্রপাঠ করে। েএকজন নেতা যে অঙ্গভঙ্গি করে অন্যরা তার অনুসরণ করে সে বড়ো দেখার মতো দৃশ্য। স্থানীয়দের কাছে এর কারণ অজানা এর গুড় রহস্য অজানা। তবুও তাদের ব্যাপক কৌতুহল ওই শুশ্রুমন্ডিত পুরুষদের প্রতি। শেষপর্যন্ত শিল্প আর মানবতার প্রশ্ন অসমাপ্ত রেখে নতুন ধর্মমতের দিকে ধাবিত হওয়ার আওয়াজ দেখা যায়। শেষের দিকে। বসন্তদাস, মায়াবতী, লীলাবতিরাও গল্পকে বয়ে নিয়ে গেছে হাতে হাত ধরে। প্রাকৃতজনের জীবন জীবিকা তাদের ধর্মবিশ্বাস ও আচার জানা যাবে এই বই পাঠে। বাংলাসাহিত্যের সেরা উপন্যাসগুলোর একটি প্রদোষে প্রাকৃতজন।
Was this review helpful to you?
or
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল রাজাদের আমলে তৎকালীন বৃহত্তর দুটি ধর্ম, হিন্দু-বৌদ্ধদের সহাবস্থান ছিল প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু পাল রাজাদের পতনের পরে সেন রাজারা প্রজা পালনের থেকে বেশি মন দেন প্রজা শোষণ ও ভোগ বিলাসে, অবহেলা-অবজ্ঞা করতে থাকেন বৌদ্ধদের। ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়রা অত্যাচার করতে থাকে তথাকথিত নিচু জাতের হিন্দুদের। ফলে সব কিছু মিলিয়ে একটা বায়বীয় আক্রোশ দানা বাঁধতে থাকে প্রজাদের মনে। আর ঠিক এই সুযোগটাই গ্রহন করেন তুর্কির সাহসী যুদ্ধবাজরা। ফলশ্রুতিতে বাংলায় গোড়াপত্তন হয় মুসলমান শাসনের। এই উপন্যাসটি সম্পর্কে শওকত আলী বলছেন, "উপন্যাসটি লেখার চিন্তাটা এ কারণেই এসেছিল যে দক্ষিণ এশিয়ার এই প্রান্তে মুসলমানের সংখ্যা এত বেশি হওয়ার কারণ কী? এটা ছিল আমার একটা প্রশ্ন। মুসলমান যারা দিগ্বিজয় করতে এসেছে তারা তো ওইদিক দিয়ে এসেছে। তারপর মোগল-পাঠানরাও ওইদিক দিয়ে এসেছে। এটা কিন্তু অবাস্তব কৌতূহলের কিছু নয়। একসময় মুসলমানরা এখানে আধিপত্য করছে, তারা শাসন করেছে ৪০০ বছর। তারা ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ওইসব অঞ্চলে মুসলমানের সংখ্যা বাড়েনি। এখানে মুসলমানের সংখ্যা বেশি। এ সম্পর্কে আমি অনেককে জিজ্ঞেস করেছি, বইপত্র পড়েছি। একসময় শেখ শুভদয়া নামে একটি সংস্কৃত বই হাতে আসে। কেউ বলেছে সেন রাজত্বের পরপরই ওটা লেখা হয়েছিল। শেখের শুভ উদয়_এই অর্থে। শেখ মানে মুসলমান। ওই বইয়ের মধ্যে কিছু কিছু গল্পের মতো পেয়েছি। যেমন একটা দৃশ্য ওখানে পেয়েছি যে অশ্ব বিক্রেতারা নৌকায় চড়ে অশ্ব বিক্রি করতে এসেছে। অশ্ব বিক্রি হয়ে গেছে। সন্ধ্যা সমাগত। তখন ছয়-সাতজনের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ যিনি, তিনি উন্মুক্ত প্রান্তরে দাঁড়িয়ে পশ্চিম দিকে মানে সূর্য অস্তের দিকে তাকিয়ে কানে হাত দিয়ে উচ্চৈঃস্বরে কাকে যেন ডাকছেন। তারপর এক জায়গায় গোল হয়ে বসে প্রভু-ভৃত্য সবাই আহার গ্রহণ করছেন এক পাত্র থেকে। আহার শেষে একজন সামনে দাঁড়িয়ে মন্ত্র পাঠ করছেন, তারপর উবু হয়ে থাকছেন, অবশেষে প্রণাম করছেন, তিনি যা যা করছেন পেছনের সবাই তাঁকে অনুসরণ করছে। সামনে যিনি ছিলেন তিনি কিন্তু প্রভু নন; ভৃত্য। তবু সবাই তাঁকে অনুসরণ করছে। আমি এই দৃশ্যটা আমার প্রদোষে প্রাকৃতজন'র মধ্যে ইচ্ছে করেই দিয়েছি। এ ঘটনাগুলো পড়ে আমার মনে হয়েছিল এ উপাদানগুলো নিয়ে একটা উপন্যাস লিখলে কেমন হয়। এ রকম একটা দৃশ্য যদি দেখে সাধারণ মানুষ, যে মন্দিরের ছায়ায় অচ্ছুত নিম্নবর্গের সাধারণ মানুষের পা যেন না পড়ে সে জন্য সকালে মন্দিরের পশ্চিম পাশের এবং বিকালে মন্দিরের পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্গীয় মানুষের চলাচল বন্ধ, তাহলে তাদের মনে প্রতিক্রিয়া কী হবে? এ রকম একটা অবস্থা সেখানে ছিল। এরপর যখন যবনরা এল, তারা একসঙ্গে বসে, একসঙ্গে ওঠে, একসঙ্গে খায়, প্রভুর উপাসনা করে। আমার নিজের মনের থেকে ধারণা হলো এ অঞ্চলে নিম্নবর্গের মানুষ সবচেয়ে বেশি ছিল এবং এখানে সবাই যবন ধর্ম গ্রহণ করেছিল। এর কিন্তু কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ আমি দিতে পারব না। এটা আমার অনুমান। এই ভিত্তিতে আমি উপন্যাসে এই উপাদানগুলো ব্যবহার করেছি।"
Was this review helpful to you?
or
আমি বইটি পড়েছি অনেক আগে। প্রায়ই অন্য কিছু পড়ার না থাকলে বইটা নিয়ে আবার বসি। শেষ করি যতক্ষণ লাগুক না কেনো। ধন্যবাদ লেখককে সাবলীল লেখার জন্য। অনবদ্য.....
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই: প্রদোষে প্রাকৃতজন লেখক: শওকত আলী মুল্য: 260 টাকা ধরন: চিরায়ত উপন্যাস প্রকাশনা: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড লক্ষণ সেন বা সেন বংশের শেষ সময়কাল কে কেন্দ্র করে এই উপন্যাস। প্রদোষ,যার অর্থ অন্ধকার এবং আলোর মাঝামাঝি। প্রাকৃত যার অর্থ সাধারণ মানুষ। আলো আঁধারি সেই ইতিহাসের ঘূর্ণাবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষ সংক্রান্ত যেই উপন্যাস, তাই "প্রদোষে প্রাকৃতজন"। আনিসুজ্জামান স্যার এই বই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেছেন, ঔপন্যাসিক অত্যন্ত যত্নের সাথে এই বই লিখেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, শওকত আলী তার সকল সৃজনশীল প্রতিভা এই বইয়ে ঢেলে দিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যের মুল্যবান সংযোজন এ বইয়ের রিভিউ: উপন্যাস শুরু হয় শ্যামাঙ্গ নামক এক যুবককে দিয়ে, কিন্তু ক্রমে ক্রমে শ্যামাঙ্গের মাধ্যমে আরো অসংখ্য চরিত্র উপন্যাসে এসে সংযুক্ত হয় এবং প্রত্যেকটা চরিত্রই প্রস্ফুটিত হয় নিজ নিজ স্বকীয় গুণে। শ্যামাঙ্গ ভাগ্যের ফেরে পথে পথে ভ্রমণ করার সময় একটি গৃহে রাত্রিযাপন করে। সেখানেই ভালোভাবে পরিচিত হয় গৃহী শুকদেব, তার কন্যা লীলাবতী, লীলাবতীর সখী মায়াবতী এবং তার পিতা দীনদাসের সাথে। মুলত এই সদস্যদের প্রত্যেকেরই এই উপন্যাসের কাহিনী বিনির্মাণে আলাদা আলাদা ভূমিকা থাকে। এরা প্রত্যেকেই সাধারণ মানুষ। কিন্তু বাংলার ইতিহাসে চলছে তখন ক্রান্তিকাল। যবন জাতি (উপন্যাস পুরোটাতেই এই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে) ছুটে আসছে ঘোড়সওয়ার হয়ে। অন্যদিকে সদ্ধর্মী বৌদ্ধ জাতি, অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দ্রোহের পরিকল্পনা করে, সামন্তপতিদের যথেচ্ছ অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যবন জাতির আগমনে ভালো কি মন্দ হবে- এই প্রশ্নে মানুষ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে থাকে। এই সব কিছুর আঁচ এসে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনে। বলা যায়,তাদের জীবনে সবচেয়ে বেশি এসে পড়েছে। এই সব যুদ্ধ বিগ্রহের সমান্তরালে চলেছে ভিন্ন আখ্যান, যে আখ্যানে প্রেম আছে, স্বপ্ন দেখার রসদ আছে। কিন্তু এই প্রেম কতটুকু পুর্ণতা পায়, শ্যামাঙ্গ কি কাওকে তার জীবনসঙ্গী হিসেবে বাছাই করে নিতে পারে? আচ্ছা লীলাবতী আর মায়াবতী উভয়ই তো বিবাহিত, তাহলে? এই উপন্যাসের নায়িকা কে? এই সব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য বাংলা সাহিত্যের এই অমূল্য সংযোজন উপন্যাস পড়া অবশ্যই জরুরী। পাঠপ্রতিক্রিয়া: বিশ্লেষকরা বলেছেন: এ উপন্যাসে সকল আবেগ যা একজন মানুষ তৈরী করতে পারেন তা ঢেলে দেওয়া হয়েছে। হয়েছেও তাই। লেখক ইসলাম ধর্মাবলম্বী, কিন্তু তার চরিত্র বর্ণন হয়েছে হিন্দু ধর্ম এবং তাদের জীবনী নিয়ে। তাই তার পুরো উপন্যাস লেখার সময় তিনি অত্যন্ত সচেতন এবং সাবধানী ছিলেন। যা উপন্যাস পড়ার সময় বুঝা যায়। লেখক একই সাথে অনেকগুলো সমান্তরাল আখ্যান তৈরী করতে সফলভাবে সক্ষম হয়েছিলেন। ইসলাম ধর্মাবলম্বী সুফি সাধকদের তুর্কি সেনাদের প্রতি ক্ষোভ, ব্রাহ্মণদের তীব্র অত্যাচারের মাঝখানেও কিছু ব্রাহ্মণের সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা গ্রহণের কথা, এসব কিছুই ইতিহাসের ঘুর্ণিয়মান সময়কে তুলে ধরে যথার্থ ভাবে। এ অসাধারণ উপন্যাসের রেটিং যদি ৫/৫ না হয়, তাহলে ৫ আর কোন উপন্যাসকেই বা দিব? এ উপন্যাসে অনেকগুলো হৃদয়গ্রাহী বিষয় আছে, এর মধ্যে একটা অনুচ্ছেদ বলা যায়, তা হুবহু তুলে দিচ্ছি: ইসলাম ধর্মালম্বীরা কিভাবে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করে তা নিয়ে কয়েকজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীর কথোপকথোন: 'সে এক বিরল অভিজ্ঞতা, এবং অভিনব দৃশ্য। আপনি দেখেছেন ধর্মপ্রচারকদের, কিন্তু আমি দেখেছি বণিকদের। বণিকদের দলটি ছিল ক্ষুদ্র, সং্খ্যায় তারা মাত্র চারজন। অপরাহ্নে তারা প্রথমে বস্ত্র আবৃত করে, তার মধ্যস্থলে রাখা হয় খাদ্যবস্তুগুলি, খণ্ড মিষ্টান্ন এবং কদলী। অত:পর একে একে তারা হস্তমুখ প্রক্ষালন সম্পন্ন করে। ঐ প্রক্ষালন ক্রিয়াও সম্ভবত তাদের উপাসনার অঙ্গ। কারণ হস্তমুখ প্রক্ষালনের সময় তারা মন্ত্র পাঠ করছিলো, নি:শব্দে। হস্তমুখ প্রক্ষালন শেষে তারা খাদ্যবস্তুগুলোর চারপাশে বৃত্তাকারে উপবেশন করল। দিবাবসানের মুহূর্তটিতে একজন দাড়িয়ে দুই কর্ণে অঙ্গুলি স্থাপন করে উচ্চ স্বরে আরম্ভ করলো মন্ত্রপাঠ- ভাষা বড় দুর্বোধ্য, তবে মনে হচ্ছিল কাওকে যেন আহ্বান করা হচ্ছে। মন্ত্রপাঠ শেষ হলে তারা একত্রে বসে আহার্য গ্রহণ করলো। এ এক অদ্ভুত জাতি। প্রভু ভৃত্য একত্রে বসে এবং একত্রে বসে আহার্য গ্রহণ করে আহার শেষ হলে সারিবদ্ধভাবে সকলে দাড়ালো। অগ্রভাগে দাড়ালো যে লোকটি, সে প্রায় বৃদ্ধ এবং দীর্ঘ শ্মশ্রুমণ্ডিত, সেই ছিল ওদের পুরোহিত। এবং এ ও এক আশ্চর্য কাণ্ড, ওরা সমবেতভাবে উপাসনা করে, পুরোহিত নেতৃত্বে থাকে, আর সকলে তাকে অনুসরণ করে.... ওদের মন্ত্রচ্চারণ সুললিত ও সঙ্গিতময়। মন্ত্রচ্চারণ শেষ হলে দু হাত হাটুতে সংবদ্ধ করে, শরীরের উচাংশ বিনত করে রাখল কয়েক মুহূর্ত, অত:পর পুনরায় দেহ ঋজু করে মুহুর্তকে দাড়িয়েই নতজানু হয়ে ভূমিষ্ঠ প্রমাণ করল।.......... ভেবে দেখুন, উপাসনার স্থল উন্মুক্ত প্রান্তর, কোনো দেবালয় নয়, সম্মুখে কোনো বিগ্রহ নেই নৈবদ্য নেই উৎসর্গ নেই- অথচ উপাসনা হয়ে যাচ্ছে।..... এছাড়াও আরো অনেক বিষয় আছে যা পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে অবশ্যই। এ উপন্যাসের ঐতিহাসিক মুল্য অনেক। পাঠক এ বই পড়ার মাধ্যমে নতুন কিছু জানবে এ প্রত্যাশায়। আনন্দিত বা শিহরিত হোন ইতিহাস ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে।