Our User Product Reviews

nice book

fine

জসীম উদদীন এর অন্যতম সাহিত্য নৈপুন্যের পরিচয়ক এই বইটি

Bhaloi pora jai

খুব ভাল বই,রিকমান্ডেড

.

Very good book

বইয়ের নামঃজীবন কথা লেখকের নামঃজসীম উদদীন প্রকাশনীঃপলাশ প্রকাশনী মূল্যঃ২৯৮টাকা কবি ও লেখক জসীম উদদীন ছেলেবেলায় যেসব মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন, যাদের জীবন লেখকের পরবর্তী জীবনে ছাপ রেখে গিয়েছে, সেসব মানুষের স্মৃতিচারণ নিয়ে করা এক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ জীবন কথা।জসীম উদ্‌দীনের জীবনকথা । এক পাঠক এই জীবনকথা পড়ে লিখেছিলেন, "জসীম উদ্‌দীনের জীবনকথা পড়িতেছি না মায়ের হাতে পিঠা খাইতেছি" ।এ বইটি পড়ার পর তা শতভাগ সত্যি বলেই মনে হয়েছে । এই জীবনকথা যেন এক অপূর্ব মহার্ঘ বলে মনে হয়েছে আমার কাছে । কবির ছেলেবেলায় বাংলাদেশের পল্লীগ্রামের বেড়ে ওঠার স্মৃতি পড়ে আবহমান বাংলার প্রকৃতি আর প্রকৃতির সন্তানদের ছবি চোখে ভেসে উঠল । এই বাংলা এখন অতীত । এর ছিটে ফোঁটার স্বাদও আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয় । সেই হারানো সময় আর প্রকৃতির অবশেষটুকুই এই সব লেখাতে খুঁজে পেয়েছি । আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবন, তাদের সমাজ, উৎসব এবং জীবনের সংগ্রাম জসীম উদ্‌ দীনের অভিজ্ঞতার হাত ধরে এই একবিংশ শতাব্দীতে আমার অভিজ্ঞতায় এসে পৌঁছুল শেষ পর্যন্ত । শুধু কি প্রকৃতি আর মানুষ।মানুষের প্রতি কবির অপত্য ভালবাসার আবেশ ছড়িয়ে আছে বই জুড়ে । বইটিতে কবি শুধু তাঁর বাল্যকালের ঘটনাবলি তুলে ধরলেও নির্দিষ্ট একটা টাইমলাইন ধরে এই 'জীবনকথা' এগোয়নি। মাঝে মাঝে তাই সময়কালের হিসেব করতে বেগ পেতে হচ্ছিল। উঠে এসেছে কতগুলো চরিত্র ধরে ধরে তাদের ঘিরে কবির স্মৃতিচারণা। শুরু নিজের পিতাকে দিয়ে, পরপরই আছেন মা-দাদা, আর শেষ হয়েছে গ্রামসম্পর্কীয় এক চাচাতো বোনকে নিয়ে (যার প্রতি তাঁর এক 'যে যাহারে চাই, সে তাহারে পাইনা' ধরণের অনুভূতি ছিল। বইটি পড়ার একমাত্র কারণ অসম্ভব সুন্দর গদ্য। অসম্ভব আদুরে অক্ষরে গড়া শব্দ আর বাক্য যা আমাকে মুগ্ধ করেছে প্রতিটি মুহূর্তে ।

জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, জসীম উদদীনের 'জীবন কথা'র মত বই বাংলা সাহিত্যে বিরল। এমন লেখা সচারাচর দেখা পাওয়া যায় না। জসীম উদদীনকে আমরা কবি পরিচয়েই জানি। কিন্তু তিনি কত ভালো গদ্য লিখতে পারতেন তার উদাহরণ এই বই। শ্রেষ্ঠ আত্মজীবনী ❤️ সবার একবার হলেও পড়া উচিত।

পল্লীকবি জসীমউদ্দিন যে কত ভালো গদ্য লেখতে পারেন, কত অসাধারন এবং সহজ, সাবলিল তার লেখা তা বুঝতে হলে এই বই পড়তে হবে। এটা মূলত কবির গ্রামে থাকা বাল্যকাল, কিশোর বা যৌবনকালের এক চিত্র। নিজের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা, প্রতিঘটনার বর্ননা করতে গিয়ে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন আবহমান পল্লীগ্রামের এক জীবন্ত চিত্র। যা এক ধরনের অপার্থিব সৌন্দর্য ও ভুবনভুলানো মাদকতাময়। এই বইয়ের গঠন বা বর্ননা অংশ অংশ করে আলাদা করা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতির মত। বিভিন্ন অংশের বর্ননায় গ্রাম জীবনের মানুষের জীবন যাপন, স্বপ্ন, বাস্তবতা, অসাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি উঠে এসেছে। আর বোধগম্য হয়েছেন আরো মানুষ জসীমউদ্দিন। তালগাছে বাবুই পাখিরা সারি সারি বাসা বানায় আপন মনের মাধূর্য মিশিয়ে। সেইসব শৈল্পিক বাসা গুলো দোল খায় প্রবল বাতাসে। তাল গাছের পাতায় তকন শো শো শব্দ হয়। আর বাবুই পাখি দম্পতি বসে থাকে বাসার উপরে। তারা এত সুন্দর বাসা তৈরী করলেও এর ভিতর থাকে না। দিনের বেলায় বাসার এক কোনে এনে রাখে কিছু গোবর। আর অন্যসময় সেই গোবরে গেঁথে রাখে এক জোনাক পোকা কে। রাত যখন নামে, যখন অন্ধকার নেমে আসে কালো আস্তরনে ঢেকে দেয় গ্রাম জনপদ, তখন বাসার ভিতরের গোবরে আটকে থাকা জোনাক পোকা জ্বলতে থাকে। বাতাসের সাথে দোল খায় বাবুই পাখির বাসা। ভিতরে জ্বলছে জোনাক পোকা। জ্বলছে আর নিভছে। একটা দুটা না। সারি সারি বাসা। সব কটা জোনাকির আলোয় আলোকজ্জ্বল। পল্লীকবি এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তার বর্ননা আছে তার এই জীবন কথায়। বাংলাদেশ যেহেতু গ্রামপূর্ন একটি দেশ তাই এদেশ কে চিনতে হলে এর গ্রামকে চিনতে হবে। গ্রামের মানুষ, তাদের সংস্কৃতি ইত্যাদির সাথে বোঝাপড়া থাকলে অনেক কিছুই বুঝা সহজ হবে। বাংলাদেশে যে প্রায় সময় সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায় আমার মনে হয় এর সমাধান লুকিয়ে আছে আমাদের গ্রাম বুঝতে পারার মধ্যে। গ্রাম গুলো অসাপ্রদায়িক ছিল। চরম সাম্প্রদায়িক ব্যাপারগুলোও মানুষ অসাম্প্রদায়িক ভাবে পালন করত। এই বইয়ে লেখক বলেছেন তখনকার পরিবেশে চৈত্র পুজা উৎসবে এক ধর্মের লোকেরা অন্য ধর্মের আচার নিয়ে কৌতুক করলে লোকে উপভোগ করত। কেই খড়গহস্ত হত না। এছাড়াও আরো অনেক ব্যাপারের উল্লেখ আছে। বাংলা সাহিত্য সম্পর্কেও কবির বিভিন্ন মন্তব্যে এখানে আছে। যেমন তিনি বলেছেন এদেশের সাহিত্য হবে হিন্দু মুসলমানের সাহিত্য। যিনি শুধু হিন্দু বা শুধু মুসলিমের সাহিত্য করবেন তিনি ঠিকবেন না।

বইটি আমার পড়া শ্রেষ্ঠ আত্মাজীবনী।